কাজল নদীর জলে পর্ব-২৩

0
1134

কাজল নদীর জলে
আফিয়া আপ্পিতা

২৩.
ডিনার শেষে চয়নকে পাঠানো হয় সুরলার রুমে। সুরলা বর দেখে কেমন রিয়েক্ট করবে এটা নিয়ে বসার রুমে হাসিঠাট্টায় মত্ত সবাই । নিতিকার দেখানো রুমে গিয়ে সুরলাকে পায় না চয়ন। পুরো রুমটায় চোখ বুলিয়ে দরজা লক করে বারান্দার দিকে এগোয়। নিতিকা বলেছে, সুরলাকে রুমে কিংবা বারান্দায় পাবে সে । বারান্দার দরজায় গিয়ে দেখে বারান্দার এককোণে থাকা হ্যাঙ্গিং চেয়ারে গুটি মেরে বসে আছে সুরলা । পা দুটো ভাজ করে, হাটুর উপর থিতুনী রেখে একমনে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে। পরনে নীল থ্রি-পিস। এত করে বলেও কেউ তাকে শাড়ি পরাতে পারেনি, চয়নের মায়ের দেয়া শাড়িও পরে নি সে। কাধ অবধি চুল গুলো এলোমেলো করে হাতখোপা করেছে, সামনের বব কাট চুলগুলো হেয়ার ব্যান্ড দিয়ে পেছনে নেয়া। রক্তিম চেহারা আর বেশভূষায় আজ আর বাচ্চা লাগছে না। বেশ বড় বড় লাগছে। সুরলার দিকে তাকিয়ে চয়ন মনে মনে বলে,
“আমাকে সবার সামনে খারাপ বানিয়ে নিজে ভালো থাকতে চাইছিলে? তা যে হবে না মিসেস। এই খারাপ মানুষটা তোমাকে ও খারাপ বানাবে। ”

পকেট থেকে একটা গোল্ড লিপ সিগারেটের প্যাকেট আর একটা লাইটার বের করে চয়ন । একটা সিগারেট নিয়ে অন্যদিকে ফিরে সিগারেট ধরায়।তারপর সিগারেটের প্যাকেট আর লাইটার পকেটে রেখে দেয়। সিগারেটটা ঠোঁটে চেপে এক টান দেয়। ধোঁয়া ছাড়ে না, নিঃশ্বাস ও ফেলে না। নিঃশ্বাস আটকে নিঃশব্দে সুরলার কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। সুরলা তখনো তাকে দেখেনি। আকস্মিক চয়ন সুরলার দিকে ঝুঁকে নিঃশ্বাস ফেলে, মুখ দিয়ে ধোঁয়া ছাড়ে। যা পুরোটায় গিয়ে পড়ে সুরলার মুখে। হঠাৎ নিকোটিনের ধোঁয়ায় নাকে যেতেই সুরলা কাশতে শুরু করে। চয়ন ফিরতি ধোঁয়া ছেড়ে হেসে বলে,
“হ্যালো মিসেস জুনায়েদ আরেফিন। চোর ডাকাত বখাটেদের থেকে ও খারাপ মানুষটার জীবনে আপনাকে স্বাগতম। ”

চয়নের কন্ঠ শুনে চমকায় সুরলা। কাশতে কাশতেই তাকায় আশেপাশে। ডার্ক মেরুন পাঞ্জাবির সাথে কালো প্যান্ট পরা চিরচেনা সেই সুদর্শন যুবককে দেখে বিস্ময়ের মাত্রা বাড়ে। অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে। বিস্ময়ের পাল্লা ভারি হয়ে কাশতে ভুলে যায় সে। তার বিস্মিত মুখভঙ্গির পরিবর্তে চয়ন বাঁকা হেসে বলে,
“এই ঘৃণিত মানুষটার উপর আবারো ক্রাশ খেয়ে গেলে নাকি! এটা কিন্তু তোমার নীতিবিরুদ্ধ। আমার মত খারাপ মানুষের উপর তোমার মত দুধে ধোয়া তুলসি পাতা টাইপ মানুষের ক্রাশ খাওয়া সাজে না। নিজেকে সংযত করো মিসেস।”

সুরলার ভাবনা, এই বদলোক এখানে কেন এসেছে? এ না কাল বিয়ে করেছে? তবে আজ এখানে এসেছে কেন? আমার বিয়ে খেতে? বিয়ে খেতে এলে আমাকে মিসেস জুবায়ের বলছে কেন। মিসেস জুবায়ের মানে তো?…এক মিনিট, আমার কী এই বদলোকের সাথে বিয়ে হয়েছে? আল্লাহ! তেমন যেন না হয়। এটা আমার শোনা ভুল কথা হোক। নিশ্চিত হতে সে তড়িঘড়ি ওঠে দাঁড়ায়। চোখ রাঙিয়ে বলে,
“এখানে কেন এসেছেন? কী চাই এখানে?”

” আমার বিয়ে করা বউয়ের সাথে দেখা করতে এসেছি। অতিব ভদ্র আর উপচে পড়া ভালো গুন নাকি তার, যে নাকি নিজেকে ছাড়া জগতের সবাইকেই খারাপ ভাবে। তাই দেখতে এলাম সেই ভদ্রলেবাসী নারীকে। যদিও আমার আসার পেছনে আমার শ্বশুর শ্বাশুড়ির হাত আছে। তারাই বলেছেন বিয়ের পর স্বামী স্ত্রী একান্তে কিছু সময় কাটাতে। তাই চলে এলাম।” স্বাভাবিক গলায় বলে চয়ন। সুরলা রাগত স্বরে বলে,
“এতকিছুর পর আপনাকে আমার বাসায় কে ডুকতে দিয়েছে? এখানে এসে আবার তামাশা শুরু করেছেন। যান গিয়ে নিজের বউকে সময় দিন, আমাকে বিরক্ত করবেন না।”

চয়ন এবার শব্দযোগে হেসে ওঠে। যেন সে কোন মজার কথা শুনেছে। হাসতে হাসতেই বলে,
” তোমার অবগতির জন্য জানাই, আপনার সাথে যার বিয়ে হয়েছে সেই ব্যক্তিটা জুবায়ের আরেফিন চয়ন, অর্থাৎ আমি। আমার মত খারাপ মানুষটার সাথেই তোমার বিয়ে হয়েছে।”

” অসম্ভব! এটা হতেই পারেনা।” অবিশ্বাসের সুরে বলে সুরলা। চয়নে হাস্যরসের সাথে বলে,
” সম্ভব বলেই বিয়েটা হয়েছে। কিভাবে সম্ভব হয়েছে শুনবে?”

সুরলা কথা না বলে প্রশ্নবোধক চাহনি দেয়। চয়ন বলে,
“তোমার বাবা মাকে ছলে বলে কৌশলে ব্রেন ওয়াশ করেছি তাতেই সবাই আমার উপর ফিদা হয়ে মেয়ে বিয়ে দিয়ে দিল। তোমার বাসায় ফুল দিয়ে বরণ করেছে আমায়। আর নিজের বউকে সময় দিতেই এলাম। তোমাকে বিরক্ত করব না, শুধু টুকটাক একটু আধটু নিজের মাঝে ভিলেন ফিলিং আনাব, এই যা।” বলে সুরলার উপর আবারো ধোঁয়া ছাড়ে। সুরলা আবারো কাশতে শুরু করে। নিকোটিনের ধোঁয়া নাক দিয়ে পেটে ঢুকে গেছে। কাশতে কাশতে যেন দমবন্ধ হয়ে আসে । সুরলা না পারতে বলে,
“সিগারেট ফেলে দিন প্লিজ!”

সুরলার কথায় কান দেয় না চয়ন। নিকোটিনে চুমুক দিয়ে সুখটান মেরে ধোঁয়া ছাড়ে পূনরায়। তারপর তাচ্ছিল্যের সুরে বলে,
” বরের নাম না জেনেই আমার উপর জেদ ধরে বিয়ে করেছো। কী বলেছো? সে যেমনই হোক অন্তত আমার চেয়ে ভালো হবে? কিন্তু তোমার কপালে যে ভালো মানুষ লেখা নেই মিসেস । তোমার ঘৃণার পাত্র, চোর ডাকাত আর বখাটে থেকেও খারাপ মানুষটাই তোমার ভাগ্যে লেখা আছে। কী করবে এবার? খারাপ মানুষের খারাপ কাজ সহ্য তো করতেই হবে। স্বামী বলে কথা।”

বলে আবারো ধোঁয়া ছাড়ে। কাশতে কাশতে সুরলার প্রাণ ভোমরা বের হবার উপক্রম। চোখ দিয়ে অশ্রু গড়ায় অবিরত। নাকে মুখে ওড়নার কোণা চেপে কাশছে, যেন আর ধোঁয়া না ঢুকতে পারে । ধোঁয়া থেকে বাঁচতে বারান্দার অপরপ্রান্তে চলে যায় সে। চয়ন তার অবস্থানে থেকেই আরো কয়েক টান দিয়ে সিগারেট ফেলে দেয় । গাল ভর্তি ধোঁয়া ছেড়ে দেয় বাইরের দিকে। অতঃপর সুরলার দিকে এগিয়ে যায় । সুরলার মুখ থেকে কাপড় সরিয়ে বলে,
“আজ আর নিকোটিনের ধোঁয়ায় ভাসালাম না তোমায়। কাশতে কাশতে তুমি অক্কা টক্কা পেয়ে গেলে তোমার পরিবার আমার নামে মামলা দিবে। খবর জানাজানির পর টিভি আর ফেসবুকে শিরোনাম হবে, ‘বিয়ের পর স্বামীর সাথে প্রথম সাক্ষাতে নববধূর রহস্যজনক মৃত্যু, স্বামী গ্রেপ্তার।’ কমেন্ট সেকশনে ছেলেপেলেরা এডাল্ট মিনিং বের করে মজা নিবে। আমি এমনটা চাচ্ছি না বলেই আজকের মত রেহাই দিলাম। তবে তোমার উইকনেস জেনে নিলাম, মাঝে মাঝে কাজে লাগবে।”

চয়নের স্পর্শ পেতেই ছিটকে দূরে সরে যায় সুরলা। কাশতে কাশতেই রাগত স্বরে বলে,
“কেন বিয়ে করেছেন আমায়? প্রতিশোধ নিতে?”

চয়ন বাঁকা হেসে বলে,
” তোমার মতো সুশ্রী আর উত্তম গুনাবলীর অধিকারী মহান নারীকে নিজের জীবনে বরণ করে নিয়ে ভালো হওয়ার ট্রিকস জানতেই বিয়ে করেছি। তুমি তো আমার খারাপের মাত্রাটা জানোই। তোমাদের গলির মোড়ের বখাটেদের থেকেও বেশি খারাপ, তাই না? এই খারাপকেই ভালোতে রূপ দেয়ার জন্য তোমায় বিয়ে করেছি।”

চয়নকে মনে প্রাণে চেয়েছে সুরলা, আর সেটা বর্তমানে নয়, অতীতের কোন একসময়। চয়নের অপমানের পর থেকে আর চায় নি চয়নকে। চয়ন বিয়ে করেছে শুনে জেদের বশত নিজেও বিয়ে করেছে। যাতে সবটা ভুলে নতুন করে শুরু করতে পারে। কিন্তু চয়নের ভিন্ন ভাবনার কথা তার অজানাই ছিল। চয়ন যে তার কয়েকটা কথার জন্য সবাইকে নিজের ফাঁদে ফেলে প্রতিশোধ নিতে তাকে এভাবে বিয়ে করে ফেলবে সে কল্পনা ও করেনি। সেদিন মা বোনকে চয়ন সম্পর্কে বলা সব কথা ফোনে নাকি জোবায়েদা শুনে নিয়েছে। সেটা রাতেই রেহানা আফসোসের সুরে বলার সময় সে শুনে নিয়েছে। এই কথা নিয়ে হয়তো তাদের বাসায় কথা ওঠেছে। যার রেশ ধরে চয়ন এই প্রতিশোধের খেলা খেলেছে, ভাবতেই অবাক লাগে সুরলার। চয়নের সাথে তার বিয়ে হয়েছে শুনে যতটা না অবাক হয়েছে তারচেয়ে বেশি অবাক হয়েছে চয়নের করা কাজ দেখে। কিভাবে তাকে নিকোটিনের ধোঁয়ায় ডুবাচ্ছিল! এইসব ভাবনার মাঝে সুরলার কাশি থেমে যায় । সুরলা তেড়ে যায় চয়নের দিকে। উদ্দেশ্য, কয়েকটা কথা শুনিয়ে দিবে। চয়নের কাছাকাছি যেতেই চয়ন তার দিকে তাকায় সরাসরি। দুই জোড়া চোখের দৃষ্টি এক হয়। চয়নের দৃষ্টিতে সুরলা নিজের জন্য ঘৃণা, রাগ, ক্ষোভ দেখে। যেই দৃষ্টি একসময় মায়ার জালে তাকে ভাসাতো আজ সেই দৃষ্টি কতটা বদলে গেছে! সুরলা রাগত স্বরে বলে,

” সামান্য কয়েকটা কথার প্রতিশোধ নিতে এভাবে সবাইকে বোকা বানালেন! কিভাবে পারলেন এতগুলো মানুষকে বোকা বানাতে?”

প্যান্টের পকেটে দুই হাত গুজে চয়ন। শান্ত গলায় বলে,
“আমাকে বেশি কিছু করতে হয় নি , শুধু তোমার মাকে ফোন দিয়ে বলতে হয়েছে যে, তোমার আমার মাঝে প্রেমময় সম্পর্ক ছিল। আমার মেয়ে কলিগকে নিয়ে তুমি আমাকে সন্দেহ করে ব্রেকাপ করেছো। যা ছিল ভিত্তিহীন। প্রমাণ হিসেবে আমার কলিগের ফ্যামিলি ফটো, আমার কাজের এগ্রিমেন্ট এসব দেখিয়েছি। ব্যাস উনি বিশ্বাস করে ফেললেন। তোমার বাবা প্রথমে অমত করেছেন। তারপর আমি দেখাটেখা করে তোমার মায়ের মত তারও ব্রেন ওয়াশ করেছি অমনি উনি আমার উপর ফিদা। যার পরিণাম আজকের এই বিয়ে। খুবই সহজ নয় ব্যাপারটা? ”

চয়নের কথা শুনে চোখ মুখ কুঁচকে অনেকটা তাচ্ছিল্যের সুরে সুরলা বলে,
“আপনার মত অনুভূতিহীন মানুষের কাছে এসব সহজ হতে পারে, আমার কাছে নয়। প্রতিশোধ নিতে বিয়ে করে ফেললেন, বিয়ে মানে বুঝেন আপনি? ভালোবাসা মানে বুঝেন? যে অন্যের অনুভূতির মূল্য দিতে জানে না, মানুষের ভালোবাসাকে তাচ্ছিল্য করে কিনতে যায়। সে আর যাই হোক, কোন সম্পর্কে জড়ানোর যোগ্যতা রাখে না। আপনার মত মানুষ কোন এক সময় আমার হৃদয়ে ছিল ভাবতেই লজ্জা লাগছে আমার। সামান্য কয়েকটা কথার জন্য আপনার এমন পদক্ষেপ সত্যিই ঘৃণিত।”

সুরলার কথার প্রতুত্তরে চয়ন সুরলার কাধ চেপে ধরে। অনেকটা ঝুকে রেগে বলে,
” তুমি জানো? তোমার ওই সামান্য কয়েকটা কথা আমাকে আমার পরিবারের সবার চোখে কতটা নিচে নামিয়েছে? আমি কী এমন করেছি যে তুমি সবার সামনে আমাকে এতটা খারাপ উপস্থাপন করছো? একটা মানুষ তার ভালোবাসা অন্যের কাছে প্রকাশ করার পর গ্রহন বা অগ্রাহ্য করার অধিকার বিপরীত মানুষটার থাকে। আমারও ছিল। আমি চিবার জন্মদিন পার্টির পর থেকে যখনই তোমার মনে কথা বুঝতে পেরেছি দূরে সরে গিয়েছি। তুমিই বেহায়ার মত বারবার আমার পেছনে পড়ছিলে, তারপর আমার বাসায় গিয়ে নির্লজ্জের পরিচয় দিলে। অতিষ্ঠ হয়ে আমি ও কয়েকটা কথা শুনিয়ে দিয়েছে। এতে খারাপের কিছু দেখি না , যার দরুন তুমি আমাকে চোর ডাকাত বখাটে থেকেও খারাপ বলতে পারো। বিনা দোষে যখন আমাকে এত খারাপ অপবাদ দিয়েছো, সবার চোখে খারাপ বানিয়েছো। বস্তুত আমি এখন খারাপ হয়ে গেছি। আর এই খারাপ মানুষকেই তোমার সহ্য করতে হবে। এছাড়া তোমার কাছে কোন অপশন নেই। ”

” কাউকে অগ্রাহ্য করার ও ধরণ থাকে। ভালোভাবে নিজের দিকটা তুলে ধরলে বিপরীত মানুষটা অপমানিত হয় না। আপনি অগ্রাহ্য করার নামে আপনি আমাকে যেইসব কথা বলেছেন, তাতে আপনাকে বখাটেদের সাথে তুলনা করতে ও বাধছিল আমার। আপনাকে আমি খারাপ বানাইনি, আপনি শুরু থেকেই খারাপ। ভদ্রতার লেবাস পড়ে চলেন বলে কেউ টের পায়নি। আর আপনার কী মনে হয়, আপনি আমাকে বিয়ে করে কোন বীরত্বের কাজ করেছেন? যদি ভেবে থাকেন তবে আমি বলব আপনার ভাবনা বদলান। কারণ এই বীরত্ব দেখাতে গিয়ে আপনি নিজেকেই ছোটো করছেন।আপনার পরিবার সত্যটা জানতে পারলে আপনাকে এর থেকেও বেশি নিচু মনমানসিকতার মনে করবে। ” তাচ্ছিল্যের সুরে বলে সুরলা। চয়ন সুরলার কাধ খামচে ধরে। দাঁত কটমট করে বলে,
” আমি বখাটে, চোর ডাকাত আরো হাজার অপরাধের অপরাধী। সব শুধুমাত্র তোমার চোখে। আমি খারাপ ছিলাম না, আমার নামে আজেবাজে কথা বলে মানুষের সামনে আমাকে খারাপ বানিয়েছো, আমার খারাপটা সহ্য করবেও তুমি। বাইরের সবাই আমাকে ভালো জানে। সবার চোখে সবসময় ভালোই থাকব। তুমি কাউকে কিছু জানাতে যেও না, কেউ তো বিশ্বাস করবে না উলটো তোমার কপালে শনি ভর করবে। তোমার মতো দুই ফুটের লিলিপুটকে মিনিট ছয়বার আছাড় মারতে আমার বাঁ হাতই যথেষ্ট। ”

সুরলা কিছু বলতে যায়, তার আগেই দরজায় নক করার আওয়াজ আসে। কেউ খুব জোরে রুমের দরজা নক করছে যার শব্দ বারান্দা অবধি এসে পৌঁছেছে। সুরলা থেমে যায়। চয়ন হাতে পরে থাকা ঘড়িতে সময় দেখে বলে,
“মিসেস জুবায়ের আরেফিন ওরফে খারাপ মানুষের স্ত্রী, আমাকে এবার যেতে হবে। বিয়ে করার ছিল করে ফেললাম। বাসর টাসরে ইন্টারেস্ট নেই আমার। আজ আমার মাঝে একটা ভিলেন ভিলেন ফিল আসছে, সম্ভবত আমি পরিপূর্ণভাবে খারাপের পথে পা বাড়িয়েছে। বাসায় গিয়ে নিজেকে নিয়ে ভাবনায় বসতে হবে, নিজেকে কিভাবে আরো খারাপ বানানো যায় সেই প্রসেস বের করতে হবে। অনেক কাজ। যাই হ্যাঁ? ভালো থেকো।”

বলে দরজার দিকে পা বাড়ায়। খানিক পথ এগিয়ে থেমে যায়। পকেট থেকে একটা সেন্টারফ্রেশ বের করে প্যাকেট খুলে মুখে দেয়। তারপর পেছন ফিরে সুরলার দিকে তাকায়। সুরলার অশ্রুমাখা চেহারা চোখে পড়ে। মুচকি হেসে সুরলার কাছে যায়। সুরলার নিচু করা রাখা মুখটা উপরে তুলে আলতো করে চোখে পানি মুছে দেয়। বলে,
“আমি যাওয়ার পর মা,বাবা চিবা,চরণ আসবে তোমার সাথে দেখা করতে। তারা এসে যদি দেখে নতুন বউ কাঁদছে তখন কী ভাববে বলো তো? ভাববে আমাদের আবারও আমার ঝগড়া হয়েছে। তারপর আমাকে কারণ জিজ্ঞেস করবে। আমি কিন্তু অস্বীকার যাব। হেসে বলব, ‘আরে তোমরা বুঝতে পারছো? এতদিন আমাদের মাঝে দ্বন্দ্ব ছিল, আজ তা মিটেছে বিয়ের মাধ্যমে। দ্বন্দ্ব মেটার পরপরই আমি চলে যাচ্ছি তাই ও কাঁদছে।’ তখন তুমি ভীষণ অস্বস্তিতে পড়বে। তারচেয়ে ভালো আগে থেকে স্বাভাবিক হও।”

সুরলা চয়নের হাত ঝেড়ে ফেলে দেয় মুখ থেকে। রাগত স্বরে বলে,
” স্টে আওয়ে ফ্রম মি, এন্ড গেট লস্ট রাইট নাও। ”
চয়ন হাসে খানিক শব্দ করেই। পকেট থেকে একটা গোলাপি রঙের সেন্টারফ্রুট বের করে। সুরলার কথা না শোনার ভান করে সুরলার ওড়না দিয়ে বড় করে ঘোমটা টেনে দেয়।
তারপর হাতে থাকা সেন্টারফ্রুট সুরলার হাতে দিয়ে বলে,
” আজ আমাদের ওয়েডিং নাইট। শুনেছি, ফার্স্ট নাইটে স্বামী তার স্ত্রীকে উপহার দেয়। আমি আবার খারাপ মানুষ, ভালো জিনিসপত্র নিজের কাছে রাখিনা যে সেগুলো উপহার হিসেবে দিব। আমার মত মানুষের কাছে থাকে প্যাকেটভর্তি সিগারেট আর পকেটভর্তি ভদ্র সাজার সেন্টারফ্রেশ আর সেন্টারফ্রুট। এখন সিগারেটের স্মেল তোমার সহ্য হয় না বলে সিগারেট দিতে পারলাম না। বাদবাকি এই সেন্টারফ্রুটই দিলাম উপহার হিসেবে। এটা আমাদের ফার্স্ট নাইটে আমার পক্ষ থেকে তোমার উপহার। যত্নে রেখো কিন্তু!”

মুচকি হেসে রুম থেকে বেরিয়ে যায় চয়ন। সুরলার চয়নের যাবার পানে চেয়ে থাকে। রাগ,ক্ষোভ আর কষ্টের সংমিশ্রণটা অশ্রু হয়ে ঝরে। চয়নের দেয়া ঘোমটা ফেলে দেয়। হাতে থাকা সেন্টারফ্রুটটার দিকে তাকায় এক পলক। তারপর ছুঁড়ে মারে। সেটি গিয়ে পড়ে মেঝেতে রাখা ফুলের টবগুলোর কোণায়। মেঝেতে বসতে যাবে তখনি রুমে আসে নিতু। এসে সুরলাকে জড়িয়ে ধরে।
খুশিতে গদগদ হয়ে বলে,
“জানো আপু? তুমি জীবনে যদি একটা ভালো কাজ করে থাকো তবে সেটা হলো চয়ন ভাইয়াকে ভালোবাসা। পরশু মায়ের কাছে শুনে তো আমি বিশ্বাসই করতে পারছিলাম না। আমাদের সবার অগোচরে দিব্বি প্রেম করে গেলে অথচ আমরা টের অবধি পেলাম না! যাক, শুনে আমি যে কী পরিমাণে খুশি হয়েছি বলে বুঝাতে পারব না। চয়ন ভাইয়ার মত মানুষ হয় না। তুমি খুব সৌভাগ্যবতী যে চয়ন ভাইয়ার মত প্রেমিক আর স্বামী পেয়েছো। ট্রিট চাই কিন্তু।”

নিতুর কথা শুনে সুরলার খানিক আগে চয়নের বলা কথা আর কান্ডগুলো মনে বলে। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে মনে মনে বলে, “আসোলেই আমি সৌভাগ্যবতী।” মনের কথা মনে রেখে দেয় মুখে আনতে পারে না। সুরলার থেকে উত্তর না পেয়ে নিতু সুরলাকে ছেড়ে দেয়। সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে সুরলার দিকে নজর দেয়। সুরলার চোখে পানি দেখে ভ্রু কুঁচকায়। বলে,
“আপু তুমি কাঁদছো কেন?”
সুরলা চুপ থাকে। নিতু নিজেই উত্তর দেয় হেসে।
“বুঝতে পেরেছি, এত রটনা ঘটনার পর তোমরা এক হয়েছো সেই খুশিতে কাঁদছো, তাই তো?”

সুরলা আবারো নিরবতার আশ্রয় নেয়। বোনকে দেয়ার মত উত্তর খুঁজে পায় না সে। নিতু সরলার চোখ মুছে দেয়। মাথায় ওড়না টেনে বলে,
“কেঁদো না, চিবারা সবাই আসছে তোমার সাথে দেখা করতে। হেসে কথা বলো। আজ তোমার কত আনন্দের দিন, শুধু হাসতে থাকো।”

সময়টা মাস কয়েক আগে হলে সুরলার জন্য আনন্দের দিন হতো। কিন্তু আজ তার জীবনের সবচেয়ে কালো দিন। ভেবেই নিরব দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে সে। না জানি চয়ন তার সাথে কী কী করবে সামনে! সুরলার ভাবনার মাঝেই চয়নের পরিবার এসে সুরলার সাথে দেখা করে যায়। সবাই হেসে কথা বলে দোয়া দেয়। চরণ দুই একটা কথা বলে শুধু। বাকিটা সময় গম্ভীরমুখে চেয়ে থাকে সুরলার দিকে। সুরলার চোখের কোণে অশ্রু বলে দিচ্ছে তার ভাই মেয়েটা আজও কথার আঘাত করেছে। সবার কথার জবাবে শুরু হু হা করে জবাব দিয়েছে। দেখা সাক্ষাৎ শেষে সবাই চলে যায়। মেহমান রুম থেকে বেরুবার পরই সুরলা দরজা আটকে দেয়। তারপর আর বের হয়না।


কাঁদতে কাঁদতে শেষরাতের দিকে ঘুমিয়ে যায় সুরলা। ঘুম ভাঙে পরদিন বেশ বেলা করেই। চোখ খুলতেই জানালা দিয়ে আসা এক পুলকি রোদ এসে চোখে লাগে। চোখের উপর হাত দিয়ে চোখ ডাকে। কয়টা বাজে দেখার জন্য পাশে ফোন হাতড়ায়। চোখ বন্ধ করেই হাতড়ে ফোন খুঁজে। এদিক ওদিক খুঁজে বালিশের নিচে আবিস্কার করে। হাতে নিয়ে আধো চোখ খুলে দেখে বেলা এগারোটা চৌদ্দ মিনিট বাজে। সাড়ে এগারোটা বাজতে চলল! অথচ মা তাকে আজ জাগাল না ভাবতেই অবাক লাগে তার। কাল রাতে না খাওয়ায় ক্ষিধের মাত্রাও বেড়েছে। সহ্য করা দায় । খাবার মুখে দেয়া বাধ্যতামূলক হয়ে ওঠে। ক্ষিদের তাড়ানায় আড়মোড়া ভেঙে ওঠে বসে সুরলা। চুলগুলোকে হাতখোঁপা করার চেষ্টায় মগ্ন হতে গিয়ে সামনে চোখ যেতেই চমকে ওঠে। খাটের পাশে রাখা কালো বিন ব্যাগে বেশ আয়েশ করে বসে আছে চয়ন। পরনে স্কাই ব্লু শার্ট আর সাদা প্যান্ট। হাতে ধরা ফোন। দৃষ্টি ফোনের স্ক্রিনে। একমনে কিছু একটা দেখছে। সুরলা থেমে যায়। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে চয়নের দিকে। একে একে গতকালের সব কথা মনে আওড়াতেই দৃষ্টি আরো তীক্ষ্ণ হয়। যেন চোখ দিয়েই গিলে খাবে। সুরলার তাকানোর মাঝেই চয়ন চোখ তুলে তাকায়। চোখাচোখি হয় আবারো। চয়নের শান্ত দৃষ্টি। সুরলার তীক্ষ্ণ দৃষ্টির জবাবে সে ভ্রু কুঁচকায়। যার অর্থ, এভাবে তাকিয়ে আছো কেন? সুরলা কোন উত্তর না দিয়ে চোখ ফেরায়। দ্রুতবেগে বিছানা থেকে নেমে ওয়াশরুমে চলে যায়।
ঘন্টাখানেক সময় নিয়ে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে আসে। চয়নকে তখনো আগের জায়গায় বসে থাকতে দেখে। চয়নকে না দেখার ভান করে ফোন হাতে নিয়ে বারান্দায় চলে যায়। হ্যাঙ্গিং চেয়ারে গুটি মেরে বসে ফোনে মনোযোগ দেয়। খানিক পরই রেহানা আসে বারান্দার দরজায়। বলে,
“সুরলা নাস্তা করতে আয়। রাতে ও কিছু খাসনি । তোর বাবা মা ডাকছে তোকে। ”

বারান্দা থেকেই হাক ছেড়ে জবাব দেয় সুরলা,
” ভালো লাগছে না, খাব না কিছু।”
“কাল রাতে ও তো কিছুই খেলি না। ক্ষিধে লাগে নি? আয় মা, কিছু একটু মুখে নে!” অনুরোধের সুরে বলেন রেহানা।
সুরলা মাথায় হাত দিয়ে বলে,
“বিশ্বাস করো খালামণি, মাইগ্রেনের ব্যাথায় মাথাটা ছিড়ে যাচ্ছে। এখন কিছুই ভালো লাগছে না।” কাল রাতে অধিক কান্না আর ভালো করে ঘুম না হওয়ায় মাইগ্রেনের ব্যাথা চেপেছে সুরলাকে। রেহানা রুমে ফিরে আসেন, সুরলা ড্রেসিংটেবিলের ড্রয়ার খুলে চশমার বক্স বের করেন। বারান্দায় নিয়ে গিয়ে বক্সের ভিতর থেকে চশমা বের করে সুরলার চোখে পরিয়ে দেন। বলেন,

“পই পই করে বলি, চশমাটা পরে থাক। ডাক্তারের পরামর্শ মতে, কয়েকমাস চশমা লাগালে মাইগ্রেনের ব্যাথা লাঘব পাবে। তাই বলি চশমাটা পরে থাক। শুনিস না তো আমার কথা। এখন ব্যাথা তো তুই সহ্য করছিস নাকি! আয় নাস্তা করবি, নাস্তা সেরে মাইগ্রেন উপশমের মেডিসিন নিয়ে নিস একটা। সেরে যাবে।”

সুরলা বিরক্তিকর দৃষ্টিতে তাকায় খালার দিকে। চশমা পরতে ভালো লাগে না তার। চোখের উপরে ভার ভার লাগে। সে চশমা খুলে রেখে দেয় পাশে। এক রাশ বিরক্তি নিয়ে বলে,
“চশমা লাগবে না, লম্বা একটা ঘুম দিলে ঠিক হয়ে যাবে। কোন নাস্তা টাস্তা করব না আমি। পারলে এক কাপ কফি দাও আমায়। খেয়ে একটা ঘুম দিব। ”

রেহানা সুরলাকে খেতে জোর করেন অনেক। সুরলা যায় না। সাবিনাও এসে মেয়েকে সাধেন। নাস্তা এনে খাইয়ে দিতে চান। সুরলা খায় না। রুমে বসে সবটা পরখ করছে চয়ন। সবার জোরাজোরি বিফলে যেতে দেখে রুমে বসা চয়ন ধীর পায়ে এগিয়ে আসে বারান্দার দিকে। এসে নম্র কন্ঠে সাবিনাকে বলে,
“মা, আমি চেষ্টা করি?”

সাবিনার মুখে হাসি ফুটে। নাস্তার প্লেট চয়নের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলে,
“দেখো তুমি পারো কি-না!”

সরলের ডাক পড়লে চলে যায় সাবিনা। রেহানা চয়নকে উদ্দেশ্য করে বলেন,
” চয়ন তোমরা আজ যেয়ো না। মাইগ্রেনের পেইন নিয়ে এতঘন্টা জার্নি করলে মেয়েটা আরো অসুস্থ হয়ে যাবে। আজ থাকো এখানে, কাল বরং সকাল সকাল রওনা দিও? ”

চয়নের হাতে নাস্তার প্লেট,তাতে সাজানো চিকেন ক্যারি আর পরোটা। নাস্তা গুলো সুরলার। চয়ন দাঁড়িয়ে থেকে এক হাতে প্লেট নিয়ে আরেক হাত দিয়ে পরোটা ছিড়ছে তখন। খালা শ্বাশুড়ির কথা শুনে থেমে বলে,
“আজ আমার ছুটি শেষ। কাল থেকে অফিসে জয়েন করতে হবে। তাই কোনভাবেই আজ থাকা যাবে না। কাল সকালের আগে চট্টগ্রাম পৌঁছাতে হবে আমার। ওর যেহেতু খারাপ লাগছে, তাহলে এখন থাক আমরা নাহয় রাতে ফ্লাইটে যাব। নাস্তা খেয়ে মেডিসিন খেয়ে একটা লম্বা ঘুম দিলে বিকেল অবধি ঠিক হয়ে যাবে আশা করি। ”

বলে ছিড়ে নেয়া পরোটায় চিকেনের টুকরো নিয়ে সুরলার দিকে এগুলোয়। এসব কথা সুরলার কানে যাচ্ছে না। সে একমনে ভাবছে, কিভাবে চয়নের এই প্রতিশোধের ধাঁধা থেকে নিজেকে উদ্ধার করবে।
চয়ন গিয়ে হ্যাঙ্গিং চেয়ারে সুরলার পাশে বসে। সুরলার দিকে হাতটা বাড়িয়ে দিয়ে বলে,
“নাও হা করো, আমি খাইয়ে দিচ্ছি। ”

চয়নের কোমল কন্ঠ। সেই কন্ঠে সুরলার জন্য উপচে পড়া ভালোবাসা আছে যেন। সুরলার ধ্যান ভগ্ন হয়। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকায় চয়নের দিকে। চয়ন মুচকি হাসে। সুরলা চোখ ফিরিয়ে খালার দিকে তাকায়। খালার সামনে এই বদলোকের হাতে খাবার খাবে সে! অসম্ভব। সুরলার তাকানো দেখে রেহানা ভাবেন, সুরলার তার সামনে খেতে লজ্জিতবোধ করছে।তাই বাহানা দিয়ে বলেন,
“আমি যাই, নিতু ডাকছে সম্ভবত । আর বিকেল অবধি দেখো কী হয়, তারপর নাহয় যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিও।”

বলে চলে যান তিনি। রেহানা ঘর থেকে বেরুতেই চয়ন হাফ ছাড়ে। প্লেট হাতে নিয়ে রুমে যায়। দরজা লক করে এসে হাতে ধরা প্লেটটা সুরলার হাতে দিয়ে বলে,
” এসব আদিখ্যেতা আমার দ্বারা হবে না। তোমার মা খালাকে সামনে কত অভিনয় করতে হচ্ছে আমাকে! নিজের খাবার নিজে খাও। ”

সুরলা বিরক্তিমাখা গলায় বলে,
“এসব করতে আপনাকে কেউ বাধ্য করেছে? করছেন কেন! যত্তসব ঢং! আর এসেছেন কেন এখানে ? আবার আমার মুখে সিগারেটের ধোঁয়া ছাড়বার জন্য?”

জবাবে চয়ন প্যান্টের পকেটে হাত দিয়ে কিছু একটা খুঁজে। তারপর আফসোসের সুরে বলে,
” আজ সিগারেট আনতে ভুলে গেছি, নাহয় ধোঁয়া ছাড়তাম। সিগারেটের ধোঁয়া তোমার নাকে যাওয়ার পর কাশতে থাকা চেহারাটা দেখতে ভালো লাগে আমার। আজ কিভাবে যে মিস হয়ে গেল! ”

চয়ন থামে। তারপর সুরলার পাশে বসে বলে,
“এই যে আমাদের বিয়ে হলো। সবার জানামতে, আমাদের লাভ ম্যারেজ। আমাদের মধ্যকার ভালোবাসাটা সবার সামনে তুলে ধরতেই এইসব অভিনয় করতে হচ্ছে আমার। তাদের মনে যদি শঙ্কা থাকে, তবে তারা আমার সাথে তোমাকে যেতে দিবে না। এদিকে বিয়ে করে ব্যাচলর থাকতে আমি ইচ্ছুক নই। তাই এসব করতে হচ্ছে। যাতে তারা চোখ বন্ধ করে আমাকে বিশ্বাস করে আমার সংসারে তোমাকে পাঠিয়ে দেয়।”

চয়নের কথার অর্থ বুঝতে পারে না সুরলা। সে ভ্রু কুঁচকে বলে,
” কোথায় যেতে দিবে না আমায়? আর আপনার সংসার মানে কী?”

“আমার কর্মস্থল চট্রগ্রাম, কর্মসুত্রেই চট্রগ্রামের বন্দরটিলার একটা বাসায় একটা ব্যাচেলর সংসার গড়ে তুলেছি। আমার গড়া সেই সংসারে তুমি আমার সাথেই যাবে আজ। যেখানে শুধু তুমি আর আমার মতো জঘন্য একটা ছেলে থাকবে। একটা বাজে ছেলে আর একটা ভদ্রমেয়ের সংসার কেমন হবে? দারুণ হবে না?” বাঁকা হেসে বলে চয়ন।

চয়নের বাঁকা হাসি সুরলার মনে আঘাত হানে। সেটা ভালোবাসার নয়,আতঙ্কের। চট্রগ্রাম নিয়ে চয়ন তার সাথে ঠিক কী করবে ভাবতে পারছে না সে। ওখানে তো সে কিছুই চেনে না, মেরে গুম করে ফেললেও কারো সাহায্য পাবে না সে। সেই অচেনা শহরে প্রতিশোধ পরায়ন একটা মানুষের সাথে বাস করবে কিভাবে সে? নাহ, সে যাবে না। ভাবনা মতই কড়া গলায় বলে,
“আমি আপনার সাথে কোথাও যাব না।”

চয়ন আবারো বাঁকা হেসে বলে,
“যেতে তো হবেই তোমাকে।”
” আমি যাব না, কি করবেন আপনি?”
” আমি কিছুই করব না। আমার যা করার আমি কাল রাতেই পরিকল্পনা মাফিক কাজ করে নিয়েছি। এখন যা করার তোমার পরিবারই করবে।”
“কী করেছেন আপনি? কী বলেছেন আমার পরিবারকে। ” সন্দিহান চোখে চেয়ে বলে সুরলা।

চয়নের উত্তর,
“কাল রাতে তোমার রুম থেকে যাওয়ার পর নিতিকা আপুকে বলেছি, তুমি এখনো আমার উপর রেগে আছো। হাজারবার সরি বলেও তোমার রাগ ভাঙাতে পারিনি। তাই আমার মনে হয় চট্রগ্রাম গিয়ে কিছু একান্ত সময় কাটালে, তোমার রাগ ভুলে স্বাভাবিক হবে। এভাবে থাকলে তুমি ডিপ্রেশনে চলে যাবে। তাছাড়া এখন তোমার ভার্সিটি অফ আছে, কদিন পর খুলে গেলে তখন আর যেতে পারবে না। সম্পর্কের মাঝে দ্বন্দ্ব চলমান থেকে যাবে। এভাবে ব্রেন ওয়াশ করেছি ব্যাস বাকিটা নিতিকা আপু করেছে। আজ সকালে আসতেই শ্বশুর মসাই নিজেই বললেন, তোমাকে সাথে করে নিয়ে যেতে। ”

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here