কাজল নদীর জলে
—-আফিয়া আপ্পিতা
৩৪.
সুরলা কাভার্ড থেকে নিজের কাপড়চোপড় নিয়ে এলোমেলো করে রাখছে ট্রলিতে । চোখ দিয়ে পানি পড়ছে অনবরত। বুক সেল্ফের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে চয়ন, তার দৃষ্টি সুরলার পানে। সকালে অফিস যাবার সময় দেখে গেছে চোখ পানি, সন্ধ্যায় এসেও দেখছে চোখজোড়া পানিতে টইটম্বুর। গাল ভিজে একাকার। সারাদিন কেঁদে পার করার ইঙ্গিত ছিল তাতে। অফিস থেকে ফেরার পর যখন বলে, ”দ্রুত ব্যাগ গুছিয়ে তৈরি হয়ে নাও। রাতের ফ্লাইট। আমরা একটু পরেই এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে বেরুব।”
এই কথা শোনার পর সুরলার কান্নার গতি বেড়েছে। খানিক পর পর চয়নের দিকে অনুরোধমাখা চোখে তাকিয়েছে, যেন তাকে আটকায়। প্রিয়তমাকে এভাবে কাঁদতে দেখতে চয়নের ভালো লাগছে না। সুরলার যাওয়ার তার ও পছন্দ হচ্ছে ইচ্ছে করছে কাছে টেনে নিয়ে বলতে, “কেঁদো না, কোথাও যেতে হবে না, তুমি এখানে থাকবে।” কিন্তু সুরলার পড়ালেখার কথা ভেবেই নিজের সব অনুভূতি চাপা দিয়ে সুরলাকে নিতে যেতে হচ্ছে। মাত্র মাসখানেকের ব্যাপার, দেখতে দেখতেই কেটে যাবে। এখন অনুভূতির থেকে সুরলার পড়াশোনা অতি গুরুত্বপূর্ণ। তাই নিজেকে যথেষ্ট গম্ভীর রাখছে যেন সুরলা তার অনুভূতি আঁচ করতে না পারে। সুরলার কান্না সইতে না পেরে দ্রুত বেগে আসে, সুরলার হাতে থেকে জামা কাপড় নিয়ে নিজেই গুছিয়ে দেয়। তারপর ড্রেসিংটেবিলের উপর থেকে সুরলার পার্স মোবাইল সুরলার হাতে দেয়। এক হাতে সুরলার হাত আর অন্য হাতে ট্রলির হাতল ধরে বলে,
“সাড়ে সাতটা বেজে গেছে, আমাদের দ্রুত যেতে হবে। চলো।”
সুরলাকে ড্রেস চেঞ্জ করার ও সুযোগ দেয় নি চয়ন। তার মনে একটা কথা, যত দ্রুত সম্ভব সুরলার চোখের আড়াল হতে হবে তাকে। সুরলা টু শব্দ না করে অপলক চেয়েছিল চয়নের দিকে। লোকটার কী একটু দয়ামায়া হচ্ছে না এখনো!
প্লেনে বসে ও পুরো পথ চয়নের কাধে মাথা রেখে নিঃশব্দে কাঁদেছে। চয়ন বারবার এটা সেটা বলে সান্ত্বনা দিয়ে গেছে। যদিও তাতেও লাভ হয়নি খুব একটা। চয়নরা মিরপুর গিয়ে পৌঁছেছে তখন প্রায় মাঝ রাত। চয়ন আগেই বলে রেখেছে তার শ্বশুরকে, তানভীর সাহেব এয়ারপোর্টে নিতে এসেছে মেয়ে আর মেয়ে জামাইকে। বাসায় পৌঁছে শ্বাশুড়ির সাথে কুশল বিনিময় শেষ চয়ন জানায় সে খানিক পরই চলে যাবে। কারণ জিজ্ঞেস করলে চয়ন সুরলার পড়ালেখা বন্ধের সিদ্ধান্তের কথা জানায়। তার মনে, সে এখানে থাকলে সকালে তার সাথে যাবার বায়না করবে সুরলা। এমনিতেই আজ সারাদিন কাঁদছে মেয়েটা। রাতের খাবার শেষে চয়ন নিজ বাসায় ফিরে আসে। বাসায় গিয়ে যে সুরলা দরজা বন্ধ করেছে আর খুলেনি, ফলে চয়নের সাথে তার দেখা হয় নি। এ ব্যাপারটায় চয়নের খারাপ লাগার কথা থাকলেও তার খারাপ লাগেনি।
বাসায় এসে বেশ কয়েকবার সুরলাকে কল দিয়ে পায় না চয়ন। ফোন হাতে রুমের এমাথায় ও মাথায় পায়চারি করছে। মনটা হুহু করে কাঁদছে সুরলার জন্য। কথা বললে একটু শান্তি লাগত, সেই পথ ও বন্ধ রেখেছে মেয়েটা। বিষন্নতায় ছেয়ে আছে পুরো মুখ। চরণ আসে ভাইয়ের রুমে। দরজা খোলা থাকায় ভাইয়ের অস্থিরতা চোখে পড়ে। সে ভ্রু কুঁচকায়। তার ভাই কী নিয়ে এত চিন্তিত! আবার সুরলার সাথে ঝামেলা হয়েছে! হুট হাট নিয়ে এলো, সুরলাকে বাসায় দিয়ে আবার নিজ বাসায় ফিরে এল কারণ কী? চরণের কৌতুহলী মন প্রশ্ন করে,
” কী হয়েছে ভাইয়া? তোমাকে চিন্তিত দেখাচ্ছে কেন!”
ভাইকে দেখে ফুস করে নিঃশ্বাস ছাড়ে চয়ন। তারপর অস্থির গলায় বলে,
“এই মেয়েটা আমাকে মেরে ফেলবে নির্ঘাত। এই টুকুনি আমাকে সারাক্ষণ চিন্তার সাগরে ডুবিয়ে রাখে। ভাবতে পারিস!”
“সুরলার সাথে ঝামেলা হয়েছে আবার!” রুমে ডুকতে ডুকতে প্রশ্ন করে চরণ।
চয়ন তেতে ওঠে বলে,
“ঝামেলা হওয়ার মতো কোন বিষয় না হলেও ওই পুচকি ঝামেলা ধার করে আনবে। তার সেমিস্টার ফাইনালের ডেট পড়েছে, আমাকে বলে নি পর্যন্ত। বাবার থেকে শুনে আমি জিজ্ঞেস করলাম। কী বলে জানিস? ও পড়ালেখা করবে না, পড়ালেখা বন্ধ করে সংসার করবে। গোঁ ধরে বসে আছে। কোনমতে মানিয়ে রাজি করালাম। আজ সকাল থেকে এক নাগাড়ে কেঁদেছে, পুরো ফ্লাইটেও কেঁদেছে। বাসায় দিয়ে আসলাম, রুমে দরজা দিয়ে কাঁদছে। এখন ফোনটা ও উঠাচ্ছে না। সারাদিন কিছু মুখেও নেয় নি। যা জেদি খাবে ও না। এসব পাগলামীর কোন মানে হয় বল! এই টুকুনি বিড়ালছানার মতো দেখতে মেয়েটা নিজের পাগলামী, আর রাগ দিয়ে আমাকে পাগল বানিয়ে দিচ্ছে। আমার মাথাটা কাজ করছে না। একে নিয়ে কী করব আমি? ”
নিজের চুল চেপে ধরে চয়ন। চরণ বিস্মিত নয়নে চেয়ে আছে তার ভাইয়ের দিকে। সুরলার জন্য চয়নের অস্থিরতা দেখে তার মনে একটাই কথা আসছে, ” এদের মাঝে ভাব ভালোবাসা হলো অবশেষে! আমার ক্যাবলাকান্ত ভাইটা মাস দুয়েকের ব্যবধানে ক্যাবলাকান্ত থেকে রোমিও হয়ে গিয়েছে। ভাবা যায়!” ভীষণ আনন্দ লাগছে চরণের। রীতিমতো নাচতে ইচ্ছে করছে। এরি মাঝে চয়ন তার শ্বাশুড়িকে কল দেয়। সাবিনা জানায় সুরলা এখনো বেরোয়নি রুম থেকে। চয়ন চিন্তিত গলায় বলে,
“সারাদিন কিছু মুখে নেয় নি, তারউপর কন্টিনিউসলি কেঁদে অসুস্থ হয়ে যাবে। আপনি দরজা নক করে দেখুন খোলে কি-না। না খুললে আমাকে জানান, আমি আসছি।”
ফোন রেখে চরণের বিস্মিত চেহারার দিকে তাকায়। ভ্রু কুঁচকে বলে,
“এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন!”
“তোমাদের মাঝে ভাব ভালোবাসা হয়ে গেছে!” মুখ ফসকে বলে দেয় চরণ। চয়ন ভাইয়ের কথাকে এড়িয়ে ওয়ালেট হাতে নিয়ে বলে,
“দরজাটা লাগিয়ে দিস, আমি বেরুচ্ছি। সকালে ওখান থেকেই ফ্লাইট ধরব। মা বাবাকে বলিস।”
“ওই রাত তিনটায় তুমি খিলগাঁও থেকে মিরপুর যাবে?” বিস্মিত গলা চরণের।
“কিট্টিটা না খেয়ে আছে সারাদিন, এখনো কাঁদছে। আসার আগে দেখাও করেনি। অভিমানে ফোনটাও তুলছে না। এতসবের মূল কারণ আমি। কারণ যেহেতু আমি, তাই সমাধান ও আমিই হব। ”
চয়ন বেরিয়ে যায়। চরণ ভাইয়ের যাওয়ার পানে তাকিয়ে থাকে। ঠোঁটের কোণে ঝুলছে তৃপ্তির হাসি। সে বিড়বিড় করে বলে,
“ভালোবাসা মানুষকে বদলায়, ভালোবাসার মানুষটার অস্থিরতা যেন নিজেকে নিঃস্ব করে দেয়। ”
★
চয়ন সুরলার দেখা পেয়েছে ভোর ছ’টার দিকে। চয়নকে দেখেই ঝাপটে ধরে ভীষণ কান্না জুড়ে দিয়েছে। পরম যত্নে আগলে ধরে প্রিয়তমার মান অভিমানের পাল্লা শেষ করে চয়ন। এক বুক বিষন্নতা নিয়েই চয়ন চট্রগ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে। চয়নকে বিদায় জানাতে গিয়ে কান্নামাখা গলায় সুরলা সতর্ক করেছে,
“বাইরে বের হলে মাস্ক পরে থাকবে, এক্স ওয়াই জেডকে নিয়ে না ভেবে আমার কথা ভাববে। তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরবে। আমার সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখবে। একবার কল দিয়েই যেন তোমাকে পাই। মনে থাকবে?”
চয়ন হেসে বলেছিল, ” মনে থাকবে, করলাবেগম।”
অফিসে থাকায় অস্থিরতার মাত্রা সারাদিন কম থাকলেও বাসায় ফেরার পর তা যেন বেড়ে দশ গুন হলো। চারদিকে সুরলার স্মৃতিতে ভরা। বিষন্নমনে কল দিতে গিয়েও দেয় না। সে জানে এখন ফোন দিলে সুরলা কাঁদবে। এখন সুরলার কান্না দেখার শক্তি নেই তার। রাত আটটার দিকে সুরলাই কল দেয়। চয়ন তখন বিষন্ন মনে সোফায় বসে আছে। সুরলার কল দেখে কি যেন ভাবে। তারপর রুমে চলে যায়। মিনিট দশেক পর হাত দিয়ে ভেজা চুল ঝারতে ঝারতে রুম থেকে বেরোয়। বুঝাই যাচ্ছে শাওয়ার নিয়েছে। তারপর কিচেনে যায়, চুলোয় কফি বানানোর জন্য পানি বসায়। যা তা ভাবে কফি বানায়, তারপর ভুট্টা ভেজে পপকর্ণ করে। দুটো খাবার নিয়ে ফিরে ড্রয়িংরুমের সেন্টার টেবিলে রাখে। সোফায় গা এলিয়ে টিভি ছাড়ে। বেছে বেছে স্পোর্টস চ্যানেল দেয়। অবশেষে একটা শ্বাস ছেড়ে ভিডিও কল দেয় সুরলাকে। রিসিভ হতেই চমৎকার একটা হাসি উপহার দেয়। সুরলা স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে চয়নের পানে। চয়নের চেহারায় বিষন্নতার লেশমাত্র নেই। সে-কি উৎফুল্ল সে! যেন তার যাওয়াতে দুঃখ নয় বরং সুখে আছে চয়ন। সুরলা ভাঙা গলায় জিজ্ঞেস করে, “কী করছো?”
চয়ন ফোনটা ঘুরিয়ে নিজের অবস্থা দেখায়। তারপর কফিতে চুমুক দিয়ে হাস্যরসী জবাব দেয়,
” বিন্দাস আছি করলা বেগম। নিজেকে ব্যাচেলর ফিল হচ্ছে। অফিস থেকে ফিরে ফ্রেশ হলাম। কফি বানালাম, তারপর পপকর্ণ ভাজলাম। পিৎজা নিয়ে কিছুক্ষণপর একজন বন্ধু আসবে, দুজনে মিলে সারারাত খেলা দেখব। কী বিন্দাস লাইফ! আহ!”
চয়নের এই আনন্দ মেনে নিতে পারে না সুরলা। এদিকে সে কেঁদে মরছে অন্যদিকে চয়ন আনন্দে কাটাচ্ছে! ভাবতেই যেন কান্না পাচ্ছে। সুরলা অভিমানী গলায় বলে,
” আমাকে কি একটুও মিস করছো না?”
চয়নের দায়সারা জবাব,
” আজ সকাল থেকে এই নিয়ে দশবার ফোনে কথা হচ্ছে আমাদের। মিস করার সময় পেলাম কোথায়? আমরা যেহেতু একে অপেরের এটাচমেন্টে আছি, তাই মিস করার কোন প্রয়োজন আছে বলে আমার মনে হচ্ছে না। আর ক’টা দিনেরই তো ব্যাপার, দেখতে দেখতে কেটে যাবে। এ ক’টাদিন তুমি তোমার সব ধ্যান পড়ালেখা বন্ধুবান্ধবদের সাথে পার করবে। একদম আমার জন্য কাঁদবে না। তুমি কাঁদলে আমি কিন্তু আর কল দিব না বলে দিচ্ছি।”
সুরলা চোখে এবার পানি এসে গেছে। দুই এক ফোটা গড়িয়েও পড়ছে। চয়ন বিরক্তি চোখে তাকায়। এক ধমক দেয়,
“একদম ভ্যা ভ্যা করবে না, ভালো লাগে না এসব। ওখানে গেছো। পড়ালেখা করো। নিজেও ভালো থাকো, আমাকে ও এখানে ভালো থাকতে দাও। আমি যেহেতু তোমাকে মিস করছি না, তাই তুমিও আমায় মিস করো না। কাল সকাল থেকে কাঁদছো, এত কান্না আসে কোথা থেকে? আমি কী মরে গেছি? বারবার ফোন দিচ্ছি, ভিডিও কল দিচ্ছি এরপর ও কাঁদছো তুমি। এইসব কান্নাকাটা শেষ হলে কল দিও। আমার বন্ধু আসছে, তোমার কান্না দেখার সময় নেই। রাখলাম এখন। ” খট করে কল কেটে দেয় চয়ন।
সুরলা কান্নায় ভেঙে পড়ে। কান্না শেষে জেদ চাপে, এই বদলোকের জন্য আমি কাঁদব না। শুধু কষ্ট দেয় আমাকে, আমার ভালোবাসার মূল্য দেয় না। আমিও দিব না, তার কথা ভাবব না। কোন যোগাযোগ করব না। সে আমাকে ছাড়া বিন্দাজ থাকতে পারলে আমি ও পারব। সম্পূর্ণ ধ্যান পড়ালেখায় দিব, রেজাল্ট দিয়ে দেখিয়ে দিব, তাকে মাথা থেকে আমিও ঝেড়ে ফেলতে পারি। রাগে হিতাহিতজ্ঞানশূন্য হয়ে সব কিছু থেকে ব্লক দেয় চয়নকে। নাম্বার ব্লক দেয়ার আগে একটা টেক্সট পাঠায়,
” আপনি থাকুন আপনার বিন্দাস লাইফ নিয়ে। আমার সাথে কোন যোগাযোগ করার চেষ্টা করবেন না। আমার পরীক্ষা সামনে আমি চাই না আপনার মতো কেউ আমাকে বিরক্ত করুক। হার্টলেস পিপল। গুড বাই।”
ম্যাসেজ পেয়ে চয়নের ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে। বিশ্বজয়ের হাসি। অবশেষে তার পরিকল্পনা সার্থক হয়েছে, তার নিজেকে বিন্দাস দেখানোর অভিনয় সফল হয়েছে। চয়ন জানে সুরলা জেদী, একবার জেদ চাপলে সহজে ছাড়ে। সুরলাকে পড়ালেখায় মনোযোগী করতে এই জেদের আশ্রয় নিয়েছে সে। এবার মেয়েটা জেদের বশে পড়ালেখায় মনোযোগী হবে। পরে ঠিক মানিয়ে নেয়া যাবে। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে,
” তুমি যদি জানতে তোমার শূণ্যতা আমাকে কতটা পোড়াচ্ছে তবে তোমার ওখানে থাকা সম্ভব হতো না। তাই অভিনয়ের আশ্রয় নিতে হয়েছে। সর্যি কিট্টি। ”
অভিনয়ের জন্য বানানো খাবার আর খাওয়া হয়না চয়নের। টিভি বন্ধ করে বিষন্নমনে শুয়ে পড়ে সোফায়। তারপর স্থির দৃষ্টিতে ক্যালেন্ডারের দিকে তাকিয়ে থাকে। এই অস্থিরতার মাঝেই কেটে গেছে প্রায় মাস খানেক। সুরলার সেমিস্টার ফাইনাল শুরু হয়েছে। তিনটা পরীক্ষা চলে গেছে। জেদের বসে সুরলা কোন প্রকার যোগাযোগ করেনি চয়নের সাথে, চয়ন ও করে নি। সে শ্বাশুড়ি থেকে নিয়মিত খবর নেয়। সুরলার জেদ বাড়াতে ইন্সটা আর ফেসবুকে বন্ধুদের নিয়ে ঘুরাঘুরি হাসি আড্ডার ছবি আপলোড দেয়। সে জানে অন্য কারো আইডি থেকে সুরলা ঠিক তার আইডি চেক করবে। সে অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় থাকে কখন সুরলার পরীক্ষা শেষ হবে।
সুরলা জেদ নিয়ে তার সম্পূর্ণ ফোকাস ঢেলেছে পড়াশোনায়। চয়নের আপলোড দেয়া নতুন নতুন ছবি যেন তার জেদের আগুনে ঘি ঢেলেছে। সে তো রাগে অভিমানে ঠিক করেছে এই বদলোকের কাছে আর যাবেই না। তবে দুই দিন পরীক্ষার হল থেকে বেরিয়ে ভার্সিটির বাইরে যেতেই চয়নকে এক পলক চোখে পড়েছে, মূহুর্তেই আবার উধাও হয়ে গেছে। সুরলা সেটা সম্পূর্ণ মনের ভূল ধরে নিয়েছে।
আজ সুরলার শেষ পরীক্ষা। পরীক্ষা শেষে পিয়াম আর রাশনার সাথে পুরো বেলা ঘুরে সন্ধ্যায় বাসায় ফিরেছে। যাক অবশেষে ভালোয় ভালোয় এক্সাম শেষ হলো। কাল খালামণির বাসায় যাবে সে। ক’দিন বেড়িয়ে আসা যাবে। অনেকদিন যাওয়া হয়না। হুট করে চয়নের কথা মনে পড়ে তার। অভিমানে ছেয়ে যায় ভিতরটা। মানুষটা এত নিষ্ঠুর কেন! এতদিনে একটাবার যোগাযোগ করল না, চট্রগ্রাম থাকতে তো হাবভাবে মনে ভালোবাসা আছে মনে হয়েছে, তবে এতটা নির্দয় কীভাবে হতে পারল! তার রাগ ও ভাঙায় নি, উলটো বিন্দাস লাইফ লিড করছে। মনে মনে বেশ গাল মন্দ করে চয়নকে। ফ্রেশ হয়ে ক্লান্তিমাখা শরীরটা এলিয়ে দেয় খাটে, সারাদিনের ধকলে চোখে ঘুম নেমে এলো মুহুর্তেই। ঘুম ভাঙে রাত দশটায়। চোখ খুলতেই পাশে বড় আকারের একটা টেডিবিয়ার চোখে পড়ে। ভ্রু কুঁচকে নড়ে চড়ে দেখে। বিড়বিড় করে বলে,
“এটা কোথা থেকে এলো!”
টেডিবিয়ারের কোলে রাখা একটা বুকি। সেখানে একটা চিরকুট। তাতে একটা শব্দ লেখা, “sorry”
ফিরতি ভ্রু কুঁচকায় সুরলার। ঘটনা উদঘাটন করতে হাক ছাড়ে, ” মা?”
সাবিনার কোন সাড়া শব্দ আসে না। বিছানা ছেড়ে রুমের বাইরে যায় সুরলা। ‘মা, বাবা, সরল, বলে ডাকে। কারো শব্দ নেই। নিজের রুম বাদে বাকি রুম খুঁজে বুঝতে পারে বাসায় সে ছাড়া কেউ নেই।
“আমাকে ফেলে কোথায় গেল সবাই?” এই মনোউক্তিতে রুমের দিকে এগোয়? উদ্দেশ্য মাকে ফোন দিয়ে জানা,তারা কোথায় গেছে। রুমে এসে ফোন হাতে নিতে বেড়ের দিকে এগোয়। হঠাৎ খট করে দরজা লাগানোর আওয়াজ কানে আসে। মানুষটা বোধহয় দরজার আড়ালে লুকিয়ে ছিল। বাসায় কেউ নেই তবে দরজা লাগাল কে? ভূত প্রেত নয় তো! এই ভেবে ভয়ে কেঁপে ওঠে সুরলা। পেছু ফিরে তাকানোর সাহস হয় না। তবে বুঝতে পারে কেউ একটা পেছু থেকে তার দিকে এগিয়ে আসছে। ভয়ে সিটিয়ে যায় সুরলা। মানুষ সুরলার গা ঘেঁষে দাঁড়ায়। কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে, “সর্যি!”
চলবে…
রি-চেইক দেয়া হয় নি, ভুল ক্রুটি মার্জিত দৃষ্টিতে দেখবেন।