কাননে_এত_ফুল (পর্ব-১০) লেখক– ইনশিয়াহ্ ইসলাম।

#কাননে_এত_ফুল (পর্ব-১০)
লেখক– ইনশিয়াহ্ ইসলাম।

১৭.
-‘তুই কীভাবে পারলি এমন করতে অর্নি? এই আমার প্রতি তোর ভালোবাসা!’

নিতুন আপুর এই কথা শুনে আমি চুপসে গেলাম। মনে হচ্ছে সব দোষ আমার! কিন্তু আমি তো কিছুই করিনি। এই যে, আমি খালামণির বাড়ি যাওয়া বন্ধ করেছি এতেও আমার দোষ। মানছি আমি স্বেচ্ছায় যাচ্ছিনা সেখানে তবে না যাওয়ার তো বড় কারণ আছে। সেই বড় কারণটা হলো আমার বিখ্যাত “লজ্জা”। সেইদিনের পর থেকে আমি নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছি নিছকই লজ্জার জন্য। এতেই নিতুন আপু রেগে বোম। তার বাসায় নাকি আবারও রেসলার মার্কা ডাক্তারের সাথে বিয়ের কথা উঠছে। এখনও আমি কেন কিছু করলাম না এই বলেই আমায় বকছে। আমি তো তাকে সবটা খুলে বললাম। সে তবুও কেন বুঝতে চায় না? ধুর! রাগ করে চলে আসতে নিলেই আমার হাতটা খপ করে ধরে নিতুন আপু। আমি ভ্রু কুঁচকে তাঁকাই। মুখে রাগ থাকলেও ভেতরে ভেতরে আমি চিন্তিত। কী করব বা কী হবে এই ভেবে কুল কিনারা পাচ্ছি না। নিতুন আপু একটু হাসলেন কেমন করে চেয়ে বললেন,
-‘শোন অর্নি! ছেলেদের কখন মেয়েদের প্রতি সবচেয়ে আকর্ষণ বোধ হয় জানিস?’
-‘কখন?’
-‘যখন একটা মেয়ে শাড়ি পড়ে। বাঙালী মেয়ে শাড়ি পড়েছে আর বাঙালী ছেলে তা দেখে ফিদা হবেনা এমন তো সম্ভব না! আর তুই তো মা শা আল্লাহ্! তোর লুকে মাঝে মাঝে আমিও ক্রাশ খেয়ে যাই। সেখানে শাড়িতে ওদের তীক্ষ্ণ নজর তো দুধভাত। আর আমরা তো চাই যে অভ্রর মাথা ঘুরে যাক।’

এই কথা শোনার পর আমি ভ্যাবাচ্যাকা খেলাম। অভ্রর মাথা ঘুরে যাক এটা আমি কখন চাইলাম? নিতুন আপুর কী মাথা গেল নাকি! আমাকে বিস্ময়ে তাঁকাতে দেখে সে আবারও হেসে বলল,
-‘আরে এই ঘুরা সেই ঘুরা না। এই ঘুরা হলো তোকে নিয়েই সে ভাববে শুধু। আমি তার চিন্তা লিস্টের থেকে আউট হয়ে যাব এর ফলে। শুধু আমি কেন? আর কেউই থাকবেনা বুঝলি!’
-‘তুমি কী বলছ!’
-‘অর্নি? তুই কি আমায় সাহায্য করবিনা?’

আমি নিতুন আপুর মুখের দিকে চেয়ে হ্যাঁ বলে দিলাম। আমিও না! ব্যপারটা বেশিই ভেবেছি। দরকার আছে এত? এত ভেবে হবে কী? আমার কাজ টা করে ফেলি। আমি তো আর ডাক্তারের সাথে পিরিতি করতে যাচ্ছিনা। হুহ!

———–
চাঁদ রাত!
আমি আর নিতুন আপু হাঁটছি খালামণিদের বাসার রোডে। গন্তব্য তাদের বাসা হলেও উদ্দেশ্য অভ্রকে জ্বালানো। চারিদিকে বাজি ফুটছে। আমার বাজি ফোটাতে দারুন লাগে। তবে এবার এইসব ঝামেলার কারণে আর সেইদিকে মন দিতে পারিনি। আমি মেহেদি লাগাতে পারিনা। নিতুন আপু পারে খুব সুন্দর করে মেহেদি লাগিয়ে দিতে। আমাকে বলেছে তার কাজটা করতে পারলে আমার দুইহাতে খুব গর্জিয়াস করে মেহেদি লাগিয়ে দিবে। আমিও খুশির ঠেলায় রাজি হয়ে গেলাম।

খালামণিদের বাড়ির সামনে আসতেই শুরু হলো বো’মা হা’মলা! মানে হঠাৎ করেই ককটেল বো’ম আমাদের সামনে এসে বিকট শব্দে ফুটেছে। আমি পুরো কেঁপে উঠলাম। নিতুন আপু ধপাস করে পড়ে গেছে। আর আমার কানে সিটি বাজছে। মনে হয় কানে আর শুনব না। দুইবার আঙুল দিয়ে গুতানোর পর বুঝলাম না কিছু হয়নি। তখনিই আমার ঠিক পেছনে আঠাশ বো’ম ফুটতে শুরু করল। নিতুন আপু ততক্ষণে দাঁড়িয়ে দিল দৌঁড়। আর আমি এই অতর্কিত হামলায় পড়ে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম। ঠুস ঠাস করে বো’ম ফুটছে আর আমি লাফাচ্ছি। ছিঃ কি লজ্জার ব্যাপার! আন্দাজ করছি এই কাজটা কে করতে পারে! যখন এই বো’মা হামলা থামে তখন দেখি মৃদুল ভাই আর মাহতিম হেসে কুটিকুটি হচ্ছে। আমি রেগে বো’ম হলাম। আর এই বো’মটা ভয়ানক! একদম সব ছাঁড়খার করে দেওয়ার মত। মৃদুল ভাইকে দৌঁড়ে গিয়ে পাশে রাখা নতুন বিল্ডিংয়ের উপকরণ অর্থাৎ ইটের কণা ছুঁড়তে লাগলাম। কিন্তু ব্যাটার গায়ে লাগছেই না। সে শুধু হা হা হি হি করছে। ইচ্ছে করছে ধরে ভালো করে চড়িয়ে দেই। বদমাইশ একটা!

এক পর্যায়ে সেখানে মিফতা ভাই উপস্থিত। দেখি ডাক্তারও আছে। থাকবে না কেন? গলায় গলায় খাতির। বেস্টফ্রেন্ড বলে কথা! আমি এবার থামলাম। মিফতা ভাই বললেন,
-‘অর্নি, মৃদুল! তোরা কী দিনদিন ছোট হচ্ছিস? এসব কেন করছিস?’

মৃদুল ভাই বলল,
-‘আরে একটু চাঁদরাত টা ইঞ্জয় করছি।’
আমি ঝারি দিয়ে বললাম,
-‘এভাবে নির্দয়ের মত বো’মা হামলা করা কিসের ইঞ্জয়! অসভ্যের দল!’
-‘এই! তুই আমার বড় নাকি? আমাকে অসভ্য বলছিস? আয় এদিকে আয়! তোর গালে দুইটা থাপ্পড় দেই।’
-‘শখ কত? থাপ্পড় দেওয়া এত সহজ?’
-‘হুম সহজ তুই আয় আমি দিয়ে দেখাই।’
-‘আমাকে পাগল পেয়েছেন? বেটা বদ! যা তোদের বাসায় যাব না।’
-‘যাইস না। তোরে কে যেতে বলছে? কিন্তু তুই আমারে তুই তুকারি করস! এত স্পর্ধা?’
-‘স্পর্ধার এখনো দেখছেন কী? আরো আছে। দেখাবো!’
-‘হ্যাঁ দেখা। এদিকে আয়।’
-‘দেখাবো সময় হোক।’

মৃদুল ভাই দাঁত দিয়ে নিচের ঠোঁট কামড়ে হাসলেন। বললেন,
-‘কোন সময়ের কথা বলছিস? আর দেখাবি কী?’
আমি এত ছোট না যে তার ইঙ্গিত বুঝব না। তার কথার ধরণে বুঝে গেলাম সে কি বলতে চাইছে। আমি তার দিকে রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে নিতুন আপুর হাত ধরে হাঁটা ধরলাম। আসার সময় ডাক্তারের দিকে তাঁকিয়ে দেখি সেও এদিকেই তাঁকিয়ে আছে। আমি তখন তার চোখে চোখ রেখেই চোখ টিপ দিয়ে চলে এলাম। পেছন থেকে শুনলাম মৃদুল ভাই চেঁচাচ্ছেন,
-‘অর্নি! বেয়াদব! দাঁড়া আমি খালামণি কে গিয়ে বলছি তুই কি করেছিস। লাজ হীন মেয়ে!’

আমি কোনো প্রতিক্রিয়া দেখালাম না। সে নিজে মনে হয় কত ভালো? বললে বলুক। মা তো আর আমায় মারবেনা। হয় একটু বকবে। আর আমি আজ রাতে আর বাসায় ফিরব না। নিতুন আপুর বাসায় থাকব। ঈদের দিন তো মা আর আমায় বকাবকি করবেন না!

১৮.
ঈদের দিন আমি মায়ের থেকে বকুনি খেলাম। মৃদুলটাকে চটকে দিতে ইচ্ছে করছে। আমারও সুযোগ আসবে। প্রতিশোধ তো নিব ঠিকই। ঈদে বান্ধবীরা মিলে ঘুরতে গিয়ে দেখা পেলাম ডাক্তারের। সে সেজেগুজে মানে পাঞ্জাবি পড়ে সানগ্লাস চোখে দিয়ে কোথায় যেন যাচ্ছে। আমিও সুযোগ বুঝে তাকে গিয়ে বললাম,
-‘আরে ডাক্তার যে! কি খবর? ওহ ভুলে গেছি সালাম দিতে। আসসলামুআলাইকুম। ঈদ মোবারক। এবার সালামি দিন।’
আমি বেশরমের মত হাত পেতে দিলাম। সে তব্দা খেয়ে গেল। আমি ভ্রু কুঁচকাতেই সে আমার হাতে দুই হাজার টাকা দিয়ে বলল,
-‘ওয়ালাইকুম আসসালাম।’
তারপর সে উল্টো পথে হাঁটা ধরল। আমি বান্ধবীদের বিদায় জানিয়ে আবারও তার পিছু নিলাম। বললাম,
-‘বাসায় যাচ্ছেন?’
-‘হ্যাঁ।’
-‘আমিও খালামণি দের বাসায় যাব। আমাকে সাথে নিন।’
তিনি বিরক্ত হয়েছিলেন বোধ হয়। তবুও মানা করলেন না। তার গাড়িতে উঠতে বললেন। আমি সে যে কী খুশি হলাম!
গাড়িতে রোমান্টিক গান চালু করে তার কাশি উঠিয়ে দিয়েছিলাম। বেচারা সইতে না পেরে বলল,
-‘অর্নি? গানটা ভালো লাগছেনা বদলাও।’
ওহ হ্যাঁ! গানটা ছিল আশিক বানায়া আপনে!

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here