কাননে_এত_ফুল (পর্ব-৮) লেখক– ইনশিয়াহ্ ইসলাম।

#কাননে_এত_ফুল (পর্ব-৮)
লেখক– ইনশিয়াহ্ ইসলাম।

১২.
দরজার কড়া’ঘাতে ঘুম আলগা হলো। কিছুক্ষণ পরেই কান সচল হলো। শুনতে পারলাম মা ডাকছেন,
-“অর্নি খেতে আয়, জলদি! আযান দিয়ে দিবে।”

আমি কেবল উঠে দরজার ছিটকিনি খুলে দিলাম। দরজা মেললাম না। সোজা ওয়াশরুমে গিয়ে একেবারে দাঁত ব্রাশ, ওযু করে বের হলাম। তোয়ালেতে মুখ মুছছিলাম বলে সামনে কেউ আছে কিনা দেখেনি। মুখের সামনে থেকে তোয়ালে সরাতেই দেখি মিফতা ভাই বসে আছেন বিছানায়। তাকে দেখে হাসলাম একটু। বললাম,
-“খাওয়া শেষ?”
-“না, তোর বাবা আর মৃদুল খেয়েছে। বাকি কেউ বসেনি এখনো।”
-“তুমি খেলে না কেন?”
-“তোর জন্য অপেক্ষা করছিলাম। চল।”
-“তোমার সব কিছুতেই বেশি বেশি। খেয়ে নিলেই পারতে।”
-“তুই সাথে থাকলে কখনো তোকে ছাড়া খেয়েছি?”
-“আমার জানামতে তো না।”
-“না ই। না টা কখনো হ্যাঁ হয়নি আর হবেও না। তুই সাথে থাকলে তোর সাথেই খাই আমি।”
-“কেন কেন?”
-“ভালো লাগে।”
-“আমারও লাগে।”
মিফতা ভাই হাসেন। আমি খেয়াল করি তার চোখে মুখে সন্তুষ্টি। ব্যাপার কী? মিফতা ভাই এত খুশি কেন?

খেতে বসলেই শুনতে পেলাম দূর থেকে মাইকে ভেসে আসছে মুয়াজ্জিন এর গলা। তিনি বলছেন,
-“প্রিয় এলাকাবাসী! যারা এখনো সেহেরি খেতে উঠেন নি তারা তাড়াতাড়ি উঠে পড়ুন। আর মাত্র ১৪ মিনিট বাকি আছে।”
খালামণি শুনে বললেন,
-“হ্যাঁ চৌদ্দ মিনিটই থাকে। তাও রোজা রমজানের মাসেই। এমনিতে তো পাঁচটা বেজে আসলেও এদের হুশ থাকেনা আযান দেওয়ার।”
আমি আর আপুরা খালামণির কথা শুনে হেসে দিলাম ফিক করে। আমাদের হাসিতে খালামণিও হেসে দিলেন। মা ভাত বেড়ে দিলেন সবার প্লেটে। তারপর বললেন,
-“তাড়াতাড়ি কর। আযান দিলে তো আর খাবিনা। নে শুরু কর।”

মিফতা ভাই আমার প্লেটে তরকারি তুলে দিলেন। মৈত্রী আপু পানি এগিয়ে দিলেন। এরা আমার সবসময় এমন খেয়াল রাখে। আমার প্রিয় মানুষগুলো!

সেহেরী দ্রুত খেলাম আর পানি একগ্লাস খেতে না খেতেই হুজুর দিলেন আযান। আমার আর আরেকগ্লাস পানি খাওয়া হলো না। মিফতা ভাই তিন গ্লাস খেয়েছিলেন। মা আর খালামণি মগে পানি খায়। মগে খুব বেশি পানি ধরে আর একবার খেলেই হয়। কিন্তু আমি? হায়রে! কাল ডিহাইড্রেশনে আমার যা হাল হবে? ভাগ্যিস কলেজ বন্ধ পড়েছে। এবার শুধু ঘরেই বসে থাকব। দরকার পড়লে বাথটাবে শুয়ে থাকব। উফফ! আমিও কী পাগল! এখনো কিছুই হলো না আগাম ভেবে ফেলছি।

মিফতা ভাই আর বাবা নামায পড়তে মসজিদে গেলেন। মৃদুল ভাইকে একবারও দেখিনি। মা’কে বললাম,
-“মা মৃদুল ভাই কোথায়? দেখলাম না যে একবারও!”
-“মৃদুল খেয়েই চলে গেছে মসজিদের উদ্দেশ্যে। বন্ধুরা সব নাকি গেছে সে ও চলে গেল।”
-“ওহ!”

নামায পড়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম। আপার চারমাসের ছেলে আছে। নাম হচ্ছে, ইয়াদ। আপা আর মৈত্রী আপা দুইজনে কোরআন শরীফ পড়ছেন ঐ রুমে। মেত্রী আপুর বাবু দুইজন ঘুমিয়ে, আপার বড়টাও ঘুমে কাঁদা হয়ে আছে আমার পাশেই। আপা এখন ছোটটাকে এনে দিয়ে গেলেন। বললেন,
-“ইয়াদ কে একটু রাখ। ঘুম পাড়িয়ে দিস। ও ঘুমালে গায়ে কাথা টেনে সাইডে বালিশ দিবি। আর হাত পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে একদম ঘুমাবি না। বাচ্চা মানুষ পরে ব্যাথা পেতে পারে।”
-“আচ্ছা।”

বাবুটা এত শান্ত! কাঁদেও খুব কম। আর কী ছোট! আমার ইচ্ছে করে জাপটে জড়িয়ে ধরি বুকের মাঝখানটায়। কিন্তু তা তো সম্ভব না। বাবুকে ঘুম পাড়াতে তিন মিনিটের মত লাগল। তারপর আপার বড়টা অর্থাৎ মেয়ে ঐন্দ্রিলাকে একটু পাশে টেনে নিয়ে ইয়াদকে মাঝখানে শুইয়ে দিলাম। আমি খুবই সাবধানে তার পাশে শুয়ে পড়লাম। নিজের মধ্যে কেমন একটা মা মা ফিলিংস আসছে। যদি সত্যি কখনো মা হই তখন না জানি আরো কত সুন্দর অনুভূতি হবে!

১৩.
সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে ইয়াদ কে পাশে দেখলাম না, ঐন্দ্রিলাও নেই। বেলা এগারোটা বাজে। আপা নিয়ে গেছেন ওদের। ওরা তো আর আমার মত রোজা না। এখন খাবে। ঐন্দ্রিলা ছয় বছরের। আমার বড় ভক্ত। যা বলব তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করবে। কোনো নড়চড় করবেনা আমার কথার। এত ভালো! মৈত্রী আপার বড়টা অর্থাৎ, মাহতিম! একটা বদমাইশ! মৃদুল ভাইয়ের সাথে মিলে আমাকে সর্বক্ষণ জ্বালাবে। আমার প্রধান শত্রু মৃদুল ভাই আর ঐন্দ্রিলার প্রধান শত্রু মাহতিম। আমি তো ওকে আদর করি তবুও আমার থেকে বেশি মৃদুল মামা, মৃদুল মামা করে। এমনিতে ঐন্দ্রিলাকে জ্বালিয়ে শেষ করবে। দুইজন সারাদিন অনেক ঝগড়াও করে।

একেবারে গোসল নিয়ে তারপর রুম থেকে বের হলাম। আপারা নাকি মার্কেটে যাচ্ছেন। আমাকে যেতে বললেন আমার মনে পড়ে গেল কাল রাতে করা প্রতিজ্ঞার কথা। এই রোদে গরমে, রোজা রেখে মার্কেটে ঘোরা আমার জন্য যেন খাল কেটে কুমির আনার মত। আমি স্ট্রেইটলি না বলে দিলাম। ওরা চলে যাওয়ার পর আমার মনে হলো এবার আমি একা হয়ে গেছি। মা ও নেই। খালামণি সহ পাশের বাসায় গেছেন নাকি। ঘরে কেবল বাবা আর ইয়াদ। বাবা ইয়াদের খুব যত্ন করতে পারেন। তাই আমরা বাবার কাছে তাকে রাখি বেশির ভাগ। আমি বাবাকে বলে নিতুন আপুদের বাসায় চললাম।

কলিং বেল একবার বাজিয়েছি। সেকেন্ডের মধ্যেই নিতুন আপু দরজা খুললেন। হাত ধরে টেনে ভেতরে নিয়ে গেলেন। বললেন,
-“এখন তো আসিস না ঠিকমত। সারাদিন কী করিস তুই?”
-“ভালো লাগেনা। ঘরেই এখন সময় কাটাতে ভালো লাগে।”
-“আচ্ছা যাই হোক! একটা কথা শুনেছিস?”
-“কী?”
-“আমার জন্য প্রস্তাব এসেছে।”
-“প্রেমের? নতুন কী! সবসময় আসে।”
-“আরে না!”
-“তবে? বিয়ের!”
-“হুম। আচ্ছা রুমে চল। ধীরে সুস্থে বলছি।”

আমি অবাক হলাম। বিয়ের প্রস্তাব এলো? মিফতা ভাই দিল নাকি! আসলে আমার মনে হয় তারা কঠিন প্রেমে আছে। আমি অবশ্য মিফতা ভাইয়ের ব্যাপারে তাকে কখনোই কিছু বলিনা। দরকার কী! সে যখন নিজে থেকে বলছেই না তখন আমি কেন নিজ থেকে জিজ্ঞেস করব। সে যেহেতু বলেনি তাই আমার মনে হয় সে বলতে চাচ্ছেনা। আমারও ওতোটা ইন্টারেস্ট নেই জানার। নিতুন আপুর রুমে এসে বিছানায় পা ভাজ করে বসলাম। সেও একই ভঙ্গিমায় বসলেন। তারপর বললেন,
-“বিয়ের প্রস্তাব কোন বাড়ি থেকে এসেছে জানিস?”
-“তুমি না বললে কী করে জানবো?”
-“ওহ হ্যাঁ! তাইতো।”
-“হু।”
-“অবন্তীর ঐ যে ভাই আছেনা ডাক্তার যেটা সেটার জন্য এসেছেন আমার বাবার কাছে।”
আমি বুঝলাম অভ্রর কথা বললেন। আমার তো শুনেই কষ্ট লাগল। তবুও এমন ভাব করলাম যেন কিছুই হয়নি। বললাম,
-“কে দিল প্রস্তাবটা?”
-“ওনার মা। কালকেই দিলেন।”
-“এখন তুমি কী বললে? রাজি!”
-“বাবা মা সবাই এক পায়ে খাঁড়া কিন্তু আমি মোটেও রাজিনা।”
-“বাসায় বলেছ?”
-“বলিনি।”
-“কেন? বললে না যে তুমি রাজিনা!”
-“পাগল নাকি? বাবা ভাব বে কোথাও সম্পর্ক আছে। এই নিয়ে এই সেই অযুহাতে কতজনকে সরালাম। কিন্তু এবারের টায় গন্ডগোল আছে। এবার ডাক্তার, বড় বাড়ির ছেলে, দেখতে সুন্দর, সুঠাম দেহী, লম্বা সবদিক দিয়েই পার্ফেক্ট। এমন ছেলে রিজেক্ট করলেই তো আর রিজেক্ট হয়না।”
-“তাহলে তুমি কী বলতে চাইছ বিয়ে করবে?”
-“উহু! একদমই না। আমি চাইছি বিয়েটা তার তরফ থেকেই ভাঙতে। মানে অভ্র নিজে ভাঙুক।”
-“সে এমন করবে কেন?”
-“কারণ সে তোকে পছন্দ করে।”
-“কী বলছ? আমাকে? তোমার মাথা ঠিক আছে?”
-“আরে বেকুব আমাদের ব্যাপারটা এমন সাজাতে হবে। মানে তুই তাকে ইম্প্রেস করবি।”
-“মানে কী? আমি কেন!”
-“তুই পারবি। তুই পারবি কেন বলছি? কারণ তুই মিফতাহুল ভাইয়ার বোন। আমি শুনেছি তারা দুইজন বেস্টফ্রেন্ড বাড়িও পাশাপাশি। তোর সুযোগ আছে। তাছাড়া সে কাল যেভাবে তোর হাত ধরে এলো মনে হচ্ছিল তুই তার বিশেষ কেউ।”
-“ধুর! ফালতু কথা কেন বলছ?”
-“সত্যি। তুই পরখ করে দেখ।”
-“এটা অসম্ভব।”
-“জানি। তবে তুই সম্ভব করে দে না! বোন এর মত ভাবিস না? একটু কিছু কর না আমার জন্য।”
-“কিন্তু..”
-“প্লিজ! কিছু কর তুই ছাড়া আর কেউ নেই আমার।”
-“সত্যিই কেউ নেই?”
-“কে থাকবে? যাকে চাই সে তো পাত্তা দেয়না।”
-“সে টা কে?”
-“তুই আমার কাজটা করে দে! তখন সব বলব প্রমিজ!”
-“আমি কীভাবে!”
-“পারবি। আমি শিখিয়ে দিব।”
-“সে আমাকে বলেছিল তার জিএফ আছে।”
-“মিথ্যা কথা। তিনি পিওর সিঙ্গেল।”
-“তুমি কী করে জানলে?”
-“কাল ট্রুথ ডেয়ার খেলেছিলাম আমরা। তুই ছিলিনা সেইসময়। তখনই ভাইয়া ট্রুথ পায়। আর আমি তখনই জেনেছি।”
-“তাহলে আমায় মিথ্যা বলল! কিন্তু কেন?”
-“সেটা তার থেকে জেনে নিস। সে হয়তো তোকে জ্বেলাস ফিল করাতে বলেছে।”
আমি ভ্রু কুঁচকে তাঁকালাম নিতুন আপুর দিকে, সে হেসে বলল,
-“দ্যাখ! সে তোকে একটা আমাদের আরেকটা কেন বলবে? নিশ্চয়ই তোকে পছন্দ করে।”
-“অসম্ভব! সে আমাকে দেখেছে মাত্র কয় দিন হলো এরই মাঝে পছন্দ হবে কীভাবে!”
আমি নিজে যে ক্রাশ খেয়ে বসে আছি সেটা জানালাম না। ভাবে থাকতে হবে যে!

-“আরে হয়ে যায়। ছেলেদের পছন্দ হতে কম সময় লাগে।”
-“তাই?”
-“হ্যাঁ!”
-“তাহলে সে তোমায় বিয়ে করতে চায় কেন?”
-“আরে বোকা সে তো চায়নি। তার মা দিয়েছে প্রস্তাবটা। আর অবন্তীর মুখেই শুনেছি মায়ের বিপক্ষে সে একটা কথাও বলেনা।”
-“এত বাধ্য!”
-“অনেক।”
-“কিন্তু আমার মন সায় দিচ্ছেনা।”
-“আচ্ছা ব্যাপারটাকে তুই এইভাবে না নিয়ে অন্যভাবে নে।”
-“কেমন ভাবে?”
-“তুই তো প্রায় সময় ক্রাশ খাস তাই না?”
-“হুম।”
-“তাদের সাথে ফ্লার্টও করিস খুব!”
-“হুম তা একটু আধটু করে ফেলি।”
-“তেমনটা ডাক্তারের সাথেও কর।”
-“পাগল নাকি? ডাক্তার মিফতা ভাইকে জানিয়ে দিবে। বা দেখা যাবে সরাসরি মা’কেই বলবে।”
-“আরে বোকা বলবে না কিছু। এটা লজ্জার ব্যাপার তার জন্য। লজ্জা শরমেও কিছু বলবেনা। উল্টো দুদিন যেতে না যেতেই তোর প্রতি দুর্বল হয়ে যাবে।”
-“কী বলছ!”
-“আরে হ্যাঁ!”
-“সত্যিই এমন করব?”
-“ভয় পাচ্ছিস!”
এবার একটু লজ্জা পেলাম। আমি! আমি ভয় পাচ্ছি? ইশ! একটা মান সম্মান আছে না? ভাব নিয়ে বললাম,
-“একদম না। কাল থেকে মিশন স্টার্ট হবে। আজ প্ল্যানিং!”
-“বাহ! এটাকেই বলে সাহসের বাচ্চা।”
-“ছিঃ আমি আমার বাবা মায়ের বাচ্চা।”

তারপর দুজনে কিছুক্ষণ ছক কষলাম। আযান কানে আসতেই আমি বাসায় চলে আসি। এসে দেখি মা রান্নাঘরে টুং টাং করছেন। আমি রুমে গিয়ে অযু করলাম। তারপর নামায পড়ে বারান্দায় গেলাম। ভাবতে থাকলাম কী করব। আদৌ কী ঠিক হবে!

১৪.
আবহাওয়া একদম অন্যরকম। অন্যরকম বলতে রোজকার মত উত্তপ্ত না আজকের আবহাওয়া। আজ কালবৈশাখীর ঝড় উঠতে চলেছে নাকি। আকাশে কালো ঘন মেঘ, তীব্র বেগে বাতাস বইছে। গাছপালা এদিকটায় কম তাই ঢাল ভেঙে মাথায় পড়বেনা। তবুও! ভয় পেয়ে দ্রুত পা চালিয়ে যাচ্ছি। গন্তব্য খালামণির বাসা। আমি আজ না জানিয়েই যাচ্ছি। হঠাৎ গিয়ে চমকে দিব সবাইকে। তারপর ইফতার টাও একসাথে করব। আজ অবশ্য আমার রোজা ভেঙে গেছে। আগামী কিছুদিন ছুটিতে থাকছি। একদিক দিয়ে ভালো তো আরেকদিক দিয়ে ভীষণ বিরক্ত লাগছে।

কলিং বেল বাজালাম, এক মিনিট পার হতে চলেছে কেউ দরজা খুলেনি। আমি আবারও কলিং বেলে চাপ দিব ওমনি দরজা খুলে গেল। মৃদুল ভাই দরজা খুলেছেন। আমাকে দেখে খানিক চমকালেন। তবে কিছু বলল না। ভেতরে চলে গেলেন। আমি ধীরে সুস্থে ঢুকলাম। ড্রয়িং স্পেসে যেতেই খালামণির দেখা মিলে। আমাকে দেখে অবাক হলেন। বললেন,
-“কীরে! কী মনে করে? আমি তো ভেবেছি আমার বাড়ির ঠিকানা ভুলে গেছিস।”
খালামণি কন্ঠে রাগ এবং অভিমান দুইটাই স্পষ্ট। আমি তাকে জড়িয়ে ধরলাম। তারপর মৈত্রী আপুর সাথে দেখা করে বকবক শুরু করলাম। তারপর নিজের উদ্দেশ্যর কথাও মনে পড়ে। সোজা মিফতা ভাইয়ের রুমে ঢুকে পড়লাম। দেখি কাজ করছেন ল্যাপটপে। আমি যেতেই প্রশস্ত হাসলেন। বললেন,
-“কীরে! অবশেষে তোর পদধূলি পড়েছে এই বাড়িতে!”
-“হুম।”
-“তা কী মনে করে?”
-“এমনিই। আসতে পারিনা?”
-“পারিস তবে এমনে তো আসিস না আজ ঝড় বাদলের দিনে তোর হানা দেওয়াটা সুবিধার ঠেকছেনা।”
-“না আমি এমনেই এলাম। চলে যাব?”
-“না যাবিনা একদম।”
-“আচ্ছা।”

চুপ করে বসে রইলাম। মিফতা ভাই কাজ করছেন। আমি এবার রয়ে সয়ে বললাম,
-“ডাক্তার টার কী খবর?”
মিফতা ভাই কেমন করে তাঁকালেন। তারপর বললেন,
-“ও চট্টগ্রাম গিয়েছে।”
-“কী! কেন? কবে আসবে?”
-“কাজে গেছে। আজ বা কালের মধ্যে আসবে।”
-“এসেছে কীনা খবর নাও নি? তোমার বন্ধু না?”
-“হ্যাঁ তো! আমার বন্ধুর জন্য তুই উতলা হচ্ছিস কেন?”
-“এমনিই। আচ্ছা আমি নিচে যাই।”

————————
আযানের দশ মিনিট বাকি। খালামণির মনে হচ্ছে শরবতে তিনি চিনি দেয়নি আপু বললেন সে দেখেছে চিনি দিয়েছে। আমি এতক্ষণ মাহতিমের সাথে ছিলাম। তাদের সামনে আসতেই আপু বললেন,
-“অর্নিকে টেস্ট করতে দাও। ও টেস্ট করলেই তো বোঝা যাবে।”
-“ওমা! ও কেন টেস্ট করবে?”
-“অর্নি তো রোজা নেই।”

আপুর কথাটা বলার সাথে সাথেই পেছন থেকে খিলখিলিয়ে কিছু মানুষ হেসে দিলেন। আমিও তাজ্জব হয়ে গেলাম। দেখি মৃদুল ভাই, মাহতিম আর মিফতা ভাই। এবার এইপাশে দরজার দিকে কারো হাঁটার শব্দে সেদিকে ফিরলাম। দেখি অভ্র আসছে। এত জনের সামনে মৈত্রী আপু এমন একটা কথা বলল!

#চলবে।
(কেমন হয়েছে অবশ্যই জানাবেন। এই পর্ব ৫০০ ক্রস করে গেলে কাল আরেক পর্ব দিব ইন শা আল্লাহ!)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here