কুঞ্জলতা (পর্ব-২)

#কুঞ্জলতা (পর্ব-২)
লেখনীতে–ইনশিয়াহ্ ইসলাম।

“আপনার সাহস কী করে হয় আমাকে এভাবে টেনে আনার ঐশ্বর্য ভাই?”

ঐশ্বর্য রক্তবর্ণ চোখে কুঞ্জকে একবার পরখ করে নেয়। তারপর তার হাত ছেড়ে দিয়ে বলল,

“ছেলেটা কে হয় তোর?”

“ভবিষ্যৎে হবে আমার স্বামী।”

“প্রেম করিস?”

“না।”

“তাহলে?”

“প্রথম দেখাতেই প্রণয় হইয়া গিয়াছে। ইহাতে আমার হস্তক্ষেপ ছিল না।”

“তাই নাকি!”

“হ্যাঁ। ঐশ্বর্য ভাই? আমি এতদিন শুধুই আপনার পেছন ঘুরেছি। বেহায়া বেশরমের মতোন আচরণ করেছি। এসব করতে করতে আমি বড়ই ক্লান্ত অনুভব করছি। তাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কঠিন সিদ্ধান্ত!”

“যেমন?”

“আজ থেকে আপনি মুক্ত ঐশ্বর্য ভাই। আমি আর ছুটবনা মরিচিকার পিছে।”

“সত্যি বলছিস?”

“একদম।”

“আর ঘুরবিনা তো?”

“বললাম তো না।”

“যা! তাহলে আমিও আর তোকে অপমান করব না।”

“আপনার অপমানের ধার ধারিনা আমি। এখন সৌহার্দ্যই আমার সব।”

“ঐ ছেলেটা?”

“হুম।”

“ভালোই।”

ঐশ্বর্য চলে যায়। কুঞ্জর চোখ বেয়েও গড়িয়ে পড়ে অশ্রু। সে ভেবেছিল ঐশ্বর্য তাকে নিয়ে কিছু অনুভব করে তাইতো এভাবে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে আনে। কিন্তু তার ধারণা ভুল! ঐশ্বর্য তো খুশিই হয়েছে। তার কাছে কুঞ্জ আপদ ছাড়া আর কিছুই নয়। আসলেই ঐশ্বর্য নামক মরিচিকার পিছেই ছুটছিল সে।

হঠাৎ কেউ টিস্যু এগিয়ে দিতেই কুঞ্জ চমকে যায়। টিস্যুটি যে দিয়েছে সেই মালিকের মুখটা দেখে বিব্রত বোধ করে কুঞ্জ। তবুও মৃদু হেসে টিস্যুটি নিয়ে চোখ মুছে। সৌহার্দ্য মুঁচকি হেসে বলে,

“তা কাঁদছেন কেন আমার ভবিষ্যৎে হওয়া স্ত্রী!”

কুঞ্জ ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়। সৌহার্দ্য তার আর ঐশ্বর্যের কথপোকথন শুনেছে? কেন! পুরুষদের এমন বিশ্রী স্বভাব থাকবে কেন? এইরকম পুরুষ তার বরাবরই আপছন্দ। সৌহার্দ্য পুনরায় বলল,

“আপনি আমাকে অন্যভাবে নিবেন না। লোকটি জোর পূর্বক আপনাকে টেনে এনেছিলেন তাই আমি ভাবলাম আপনারা সাহায্যের প্রয়োজন। এসেই শুনে ফেললাম আমি কিন্তু শুনতে চাইনি। তবে আমাকে নিয়ে বলাতে কৌতূহল বশত শুনে নিয়েছি।”

“শুনেছেন তো কী হয়েছে! শোনা সব কথা সত্য হয়না।”

“সব তো মিথ্যেও হয়না। সে যাই হোক! আপনি একটা কথা মনে রাখবেন। আমি কিন্তু আপনাকেই বিয়ে করতে চলেছি।”

“কি!!!! মানে কি হ্যাঁ! আমাকে বিয়ে করবেন কেন? আমি করব না আপনাকে বিয়ে।”

“আমি তো আপনাকে করতে বলিনি। বলেছি আমি আপনাকে বিয়ে করব।”

“ঐ একই কথাই তো!”

“না এক নয়।”

“আপনি চাইছেন টা কি আসলে?”

“আপনাকে।”

“কেন? একটু আগেও তো কেমন ভাব দেখিয়েছেন।”

“একটু আগে তো আবার আপনিও বলেছেন আমায় ভালোবাসেন। এখন আমি চাইনা যে আমার বিরহে কেউ কষ্ট পাক।”

“উদ্ভট চিন্তা বাদ দিন। আমি মজা করেছি। আপনাকে আমি বিয়ে করতে যাব কোন দুঃখে?”

“এসব মজা আমার অপছন্দ। তাই আপনাকে বিয়ে করেই আমি শাস্তি দিব আপনাকে।”

“শাস্তি? কেন?”

“দমবন্ধ করে মারতে চেয়েছেন না আমায়!পুলিশ কেস করে দেব একদম। সোজা জেলে যাবেন আপনি কি জানেন? আপনার উপজেলায় আমি ইউএনও পদে যোগদান করেছি দুই সপ্তাহ আগে!”

কুঞ্জ চমকায়। সে জানতো নতুন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এসেছেন কিন্তু নাম জানতো না। এখন সে আসলেই ভয় পাচ্ছে। হাত পা কাঁপছে একপ্রকার। সে তো তাকে মারতে চায়নি। এটা যদি এখন কোনো বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়ায়! তখন কী হবে?

সৌহার্দ্য হুট করেই কুঞ্জর হাত ধরে টেনে নিয়ে যায়। এদিক ওদিক ভালো করে দেখে বলে,

“কুঞ্জলতা!”

কুঞ্জলতা অবাক নয়নে চেয়ে আছে সামনের সুদর্শন পুরুষটির দিকে। এতো সুন্দর করে কেউ তাকে কখনোই ডাকেনি। বাবা নামটি শখ করে রাখলেও সেই কুঞ্জ বলেই ডাকে আজ পর্যন্ত কুঞ্জলতা নামটা হাতে গোনা দু তিনজনের থেকে শুনলেও সে এমন চমৎকার অনুভূতির সঙ্গে পরিচিত হয়নি। বিমোহিত নজরে সে সৌহার্দ্যকে দেখতেই থাকে।

“রাইট নাও! তুমি আমার সাথে কাজী অফিস যাচ্ছো।”

“কী! উল্টা পাল্টা কথা বলবেন না খবরদার।”

“বেশি বকবক করলে একেবারে জেলে ঢুকিয়ে দিব। আমাকে তুমি এখনো চিনে উঠতে পারোনি। ধীরে ধীরে চিনবে আগে বিয়েটা সেড়ে ফেলি তারপর!”

“কখনোই না। আপনি আমাকে অবলা পেয়েছেন?”

“না আমি সেটা বলিনি। তবে! এখন তুমি যদি না যাও তাহলে আমি মিস্টার ঐশ্বর্যকে বলব তাকে মিথ্যে কথা বলেছ তুমি। আর লোকটাও মনে হয় তোমার জাতশত্রু! অপমান করতেও ছাড়বেনা।”

“আপনি কিন্তু!”

“তোমার স্বামী হবো।”

“হাত ছাঁড়ুন বলে দিচ্ছি। না ছাঁড়লে কেটে দিব একদম।”

“ওকেই! লেটস্ ট্রাই! পারলে করে দেখাও না, বাধা দিচ্ছিনা তো!”

“আমি বুঝছি আপনি কেন এমন করছেন। তখনকার ঘটনার জন্যই তাই না! আমি আপনার পা ধরে ক্ষমা চাইতে রাজি আছি তারপরেও আমার সর্বনাশ করবেন না।”

“এই মেয়ে! আমি তোমার সর্বনাশ করছি? এতবড় কথা বললা তুমি! আমি কি তোমার ইজ্জত লুট করতে চাইছি? আমি তো তোমাকে বিবাহ করে স্ত্রীর মর্যাদা দিতে চাচ্ছি। আফটার অল! উই লাভ ইচ্ আদার!”

“লাভ? ইচ্ আদার! কখন? কবে হলো এসব? আমিই তো জানিনা। দু মিনিট বসে কথা বললাম শুধু এতেই লাভ হয়ে যায়? এসব হাবিজাবি বকবেন না একদম।”

“আজ তোমাকে আমি বিয়ে করছিই। এই বলে রাখলাম।”

“আমি করবো না।”

সৌহার্দ্য শার্টের ভেতর থেকে হুট করেই পিস্তল বের করে….

#চলবে।

(আজ এতটুকুই।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here