কৃষ্ণাবতী
২৯তম_পর্ব
কৃষ্ণার কথাটা শুনে মুচকি হাসি হাসে দেবব্রত। কোমড়টা আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে তাকে। ভেজা ঠোঁট গুলো কাঁপছে কৃষ্ণার। দেবব্রতের নজর তার কাঁপা ঠোঁটজোড়ার দিকে। একটু ঝুকে ঠোঁটগুলোকে নিজের আয়ত্তে নিয়ে নিলো দেবব্রত। কৃষ্ণা তখন পরম সুখে চোখজোড়া বন্ধ করে নেয়। হাতদুটো দেবব্রতের গলা জড়িয়ে ধরে। দেবব্রত কৃষ্ণাকে নিজের সাথে মিলিয়ে নেয়। বৃষ্টির বেগ বাড়ছে, ঝড় উঠছে। কিন্তু এই মানব মানবীর সেদিকে খেয়াল নেই। তারা নিজেদের তৃষ্ণা মেটাতে ব্যস্ত। দুটো ভেজা শরীর একে অপরের সাথে লেপ্টে রয়েছে। কৃষ্ণার হাত দেবব্রতের চুলে, শক্ত করে আকড়ে রয়েছে। বিদ্যুৎ চমকানোর আওয়াজে স্বম্ভিত ফেরে তাদের। কৃষ্ণার ঠোঁটজোড়া ছেড়ে দেয় দেবব্রত। কৃষ্ণার নিঃশ্বাস ঘন থেকে ঘন হচ্ছে। আজ বহুদিন পর তার মাষ্টারমশাই তার কাছে এসেছে। এই ভালোবাসার জন্য যেনো ব্যকুল হয়ে উঠেছিলো সে। দেবব্রত তার কপালে কপাল ঠেকিয়ে ধীর কন্ঠেবললো,
– ঠান্ডা লেগে যাবে ঘরে চল।
– আর একটু থাকি, মন্দ লাগছে না তো
– আর জিদ নয় ঘরে চল। গরম পানিতে স্নান করতে হবে, আবহাওয়া ভালো না।
বলেই দেবব্রত চলে যেতে নিলে পেছন থেকে হাতটা টেনে ধরে কৃষ্ণা। আকুল কন্ঠে বলে,
– আজ ভালোবাসা পেতে ইচ্ছে করছে মাষ্টারমশাই। আজ ফিরিয়ে দিও না।
কৃষ্ণার কথাটা যেনো হৃদয়ে গিয়ে লাগে দেবব্রতের, শেষ কবে তার কিশোরী বউ এর কাছে গিয়েছিলো সেটা তার মনে নেই। নিজেকে অনেক কষ্টে আকটে রেখেছে, ভালোবাসা তো কেবল দেহের নয় আত্নার। সে আত্না থেকে কৃষ্ণাকে ভালোবাসে। কিন্তু এই সময়টা কৃষ্ণার পড়াশোনার জন্য বেশি জরুরি বিধায় সে তার মনোযোগ নষ্ট করতে চায় না। কৃষ্ণার আজকের আকুলতায় ভেতরটা নড়ে উঠে দেবব্রতের। কৃষ্ণার চোখে চোখ রাখে দেবব্রত। তার চোখে আকুলতা স্পষ্ট, ধীর কন্ঠে বলে,
– তুই জানিস কি বলছিস?
– জানি, তুমি কি জানো আমি কতোটা একা? এখানে কতোটা শূন্যতা?
বলে দেবব্রতের হাতটা কৃষ্ণার বুকে রাখে, ধীর কন্ঠে বলে,
– তোমার শূন্যতা আমাকে গ্রাস করছে, একটু ভালোবাসবে আমায়?
দেবব্রত আর নিজেকে আটকে রাখতে পারে নি। কোলে তুলে নেয় কৃষ্ণাকে। কৃষ্ণাকে নিয়ে ঘরে চলে আসে সে। বাইরে ঝড় হচ্ছে, শো শো আওয়াজ ঘরে প্রতিটি দেওয়ালে আছড়ে পড়ছে। কৃষ্ণাকে বিছানায় বসায়, ভেজা চুল গুলো থেকে পানি পড়ছে। দেবব্রতের ঠোঁটে তার ঠোঁট, আস্তে করে ভেজা শাড়িটা সরিয়ে দেয় দেবব্রত। রাতটা স্তব্ধ, আর দেবব্রত কৃষ্ণাতে স্তব্ধ। ধীর কন্ঠে দেবব্রত বলে,
– আজকের রাতটা দেখেছিস?
কৃষ্ণা লজ্জা মাখা চাহনীতে চোখ তুলে তাকায়, কৃষ্ণার লাজে রাঙ্গা মুখখানিতে এক অজানা মাদকতা বিরাজমান। এই মাদকতা দেবব্রতকে ধীরে ধীরে গ্রাস করছে। ধীর কন্ঠে বলে,
– রাতটা আমার সাথে একেবারেই মিলে গেছে।
– কিভাবে?
– রাতটাও স্তব্ধ আর আমিও তোর মাঝে স্তব্ধ।
– তোমার স্তব্ধতা আমার বুকে ঝড় তুলছে, মাষ্টারমশাই। এই ঝড় কালবৈশাখী থেকেও খারাপ।
– এই ঝড়ের মাঝেই আমি আমার প্রেমের তরী ভাসাতে চাই
– যদি তলিয়ে যাও?
– আমি ডুবতেও রাজী তোর নেশায়।
বলেই কৃষ্ণার ওষ্ঠদ্বয় তখন দেবব্রতের ওষ্ঠদ্বয়ের সাথে মিলে গেছে। বাহির থেকে ঠান্ডা আবহাওয়ার ঠান্ডা বাতাস তখন তাদের ছুঁয়ে দিচ্ছে। আবেগগুলো উম্মাদ হয়ে উঠেছে, নিঃশ্বাস ঘন থেকে ঘন হচ্ছে। ভালোবাসা বহুদিন পর আবারো পূর্ণতা পাচ্ছে। কৃষ্ণা বিছানার চাদর খামছে ধরেছে। তার খোলা শরীরে দেবব্রতের শরীর মাদকতা নিয়ে খেলা করছে। বৃষ্টির বেগ বাড়ছে সাথে রাতের নিরবতাও। তাদের ভালোবাসাও গভীর থেকে গভীর হচ্ছে। কিছুটা প্রহর নাহয় কাটুক অত্যন্ত ঘনিষ্ঠতায়, ক্ষতি কি!
সকাল ৬টা,
সূর্যের স্নিগ্ধ কিরণ জানালা ভেদ করে ঢুকছে ঘরে। কৃষ্ণার তখন দেবব্রতের শরীরে লেপ্টে রয়েছে। শেষ রাতের দিকে তারা ঘুমিয়েছে। সূর্যের কিরণ চোখে পড়তেই ঘুম ভেঙ্গে যায় দেবব্রতের। কৃষ্ণা তখন গভীর ঘুমে। চোখ খুলতেই দেখে তার কিশোরী বউ তার বুকে লেপ্টে রয়েছে। কি মায়াবী লাগছে কৃষ্ণাকে! প্রতি সকালে এই ঘুমন্ত মুখখানি দেখতে কি প্রশান্তি ই না লাগে, কিন্তু আফসোস তাদের বিরহের প্রহর বেশি দূরে নয়। কৃষ্ণার অনার্সটা শেষ হলেই তাকে বাহিরে লেখাপড়া করবার জন্য কথা ভাবছে দেবব্রত। কৃষ্ণা মোটেই যেতে চাইবে না এও তার জানা। কিন্তু সে চায় কৃষ্ণা অনেক প্রতিষ্ঠিত হোক। তার বাবাকে দেওয়া বাজী যে তার জেতা চাই। তাই মনের শত ইচ্ছে থাকা স্বত্তেও বাচ্চাটা নিচ্ছে না দেবব্রত। মন চায় কৃষ্ণাকে ভালোবাসতে কিন্তু নিজের মনকে আটকে রেখেছে সে। কৃষ্ণার কপালে একটা চুমু একে উঠে পড়ে দেবব্রত। এখন দূরত্ব রাখাটাই শ্রেয়। তাহলে অন্ততপক্ষে কৃষ্ণার যাবার বেলায় কোনো অজুহাত দিবে না। কৃষ্ণার মনে হতেই পারে দেবব্রত তাকে আগের মতো ভালোবাসে না কিন্তু তাতেই তার মঙ্গল।
কৃষ্ণার যখন চোখ খুললো সে পাশে তার মাষ্টারমশাইকে পেলো না। সারা ঘরে ঘর ঘোরালো কিন্তু সে সেখানেও নেই। মনটা বসে গেলো কৃষ্ণার। সে ভেবেছিলো মাষ্টারমশাই কে পাশে পাবে সে। কিন্তু সেটা হলো না। মাষ্টারমশাই এর বদলটা কৃষ্ণাকে ভেতর থেকে ভেঙ্গে ফেলছে। এটা কি তার মাষ্টারমশাই বুঝে, উহু সে এটা বুঝে না। বুঝলে হয়তো এমনধারা আচরণ করতো না। চোখ ফেরাতেই দেখলো পাশের সাইড টেবিলে একপাতা ঔষধ আর পানি। কৃষ্ণার বুঝতে বাকি রইলো না তার মাষ্টারমশাই কি চায় তার কাছ থেকে_______
২৩.
রান্নাঘরে অবন্তীকা দেবী কাজ করছেন, সংসার জীবনে বেশ বিরক্ত তিনি। বয়স তো কম হলো না, একটা নাতী বা নাতনীর মুখ দেখতে চাওয়াটা কি অপরাধ! দেবব্রতের সাথে এই সপ্তাহে এ নিয়ে কম বার তার কথা কাটাকাটি হয় নি। সেতো নিষেধ করে নি কৃষ্ণাকে উচ্চশিক্ষিত করতে। তাহলে দেবব্রতের এতো কিসের বাধা? একান্নবর্তী পরিবার ই বলা যায় তাদের পরিবারকে, এখানে তো কম লোক নেই। তবে কিসের বাধা, একতা বাচ্চা আসলে ঘরটা ভরা ভরা লাগবে। কিন্তু দেবব্রত সেটা বুঝতে নারাজ। কেনো বাপু! কিছুদিন পর অন্নার বিয়ে হয়ে গেলে ঘরটা একেবারেই ফাঁকা হয়ে যাবে। এই জিনিসটা তার জেদি ছেলেটা বুঝতে চায় না। তখন রান্নাঘরে কৃষ্ণা প্রবেশ করে। কৃষ্ণার সাথে একমাস হলো কথা বলেন না তিনি। কি কথা বলবেন? কেনো কথা বলবে? কম তো বুঝায় নি তাকে। এই বিগত একটা বছর ধরেই কৃষ্ণাকে তিনি বাচ্চার কথা কথা বলছেন। আরে ছেলেরা তো এমনই হয়, মেয়েটার নিজেরো গরজ নেই। তাই তো এমন হচ্ছে। সেও তো পারে দেবব্রতকে বুঝাতে। তা নয় সে আছে তার পড়াশোনা নিয়ে। আরে মেয়েদের এতো বিদ্যাবান হয়ে কি লাভ। বয়স তো কম হচ্ছে না দেবব্রতের। কিছুদিন পর যখন শারীরিক জটিলতা দেখা যাবে তখন বুঝবে মজা কতো প্রকার। কৃষ্ণা তার কাছে এগিয়ে এসে ধীর কন্ঠে বলে,
– মা, চা টা আমি করে দেই?
– ……
– মা আপনি কি এখনো আমার উপর রেগে আছেন?
কৃষ্ণার কথায় হিনহিনে গলায় বলেন,
– তাতে কি তোমার কিছু যায় আসে?
– মা এভাবে বলবেন না, আপনি রাগ করে থাকলে আমারো ভালো লাগে না।
– তাই? তাহলে আমার ইচ্ছার কেনো দাম নেই তোমার কাছে?
– মা আমি চেষ্টা তো কম করছি না, মাষ্টারমশাই না চাইলে আমি কিভাবে?
অবন্তীকা দেবী এবার চোখ কুচকেতার দিকে তাকান। কৃষ্ণার হাতে হাত রেখে বলে,
– মেয়েমানুষ চাইলে সব পারে, তুমি এটুকু পারছো না। এ কেমনধারা কথা?
– আপনার ছেলের রাগ তো আপনার অজানা নয়। যেদিন থেকে বাচ্চার জন্য আমি কথা বলেছি। সেদিন থেকেই মাষ্টারমশাই আমাকে এড়িয়ে চলেন। সে নাকি বাচ্চার জন্য প্রস্তুত নন। আমি কি করবো মা?
অবন্তীকা দেবী এবার কথা বলেন না, এটা সত্যি তার ছেলের রাগ আকাশচুম্বি। কিন্তু ছেলের কাছে হার মানলে তো হবে না। তিনি ধীর কন্ঠে বলেন,
– আগে বলো তুমি কি বাচ্চা নিতে প্রস্তুত? তুমি যদি রাজী থাকো তবেই আমি একটা বুদ্ধি বের করতে পারি।
অবন্তীকা দেবীর চোখ চকচক করছে, তিনি মারাত্নক কিছু চিন্তা করছেন। কৃষ্ণা অবাক চোখে নিজের শাশুড়ি মা দেখে যাচ্ছে, মানুষটাকে মাঝে মাঝে বাংলা সিনেমার রিনা বেগমের থেকেও ভয়ংকর মনে হয় কৃষ্ণার কাছে। উনার মাথায় এতো কুটিল বুদ্ধি চলতে পারে সেটার আন্দাজ কৃষ্ণাও লাগাতে পারে না।
তিন সপ্তাহ পর,
ভট্টাচার্য মঞ্জিলে আজ আনন্দের সমাগম হয়েছে, আজ অন্না এবং অর্জুনের আশীর্বাদ। অন্নার ফাইনাল পরীক্ষার পর ই তাদের বিয়েটা সম্পন্ন হবে। প্রথমে যদিও দেবব্রতের খুব আপত্তি ছিলো, কিন্তু কৃষ্ণা তাকে ঠিক রাজী করিয়ে ফেলেছে। কৃষ্ণার আজকে শ্বাস নেবার ও সুযোগ হয়ে উঠছে না। বাড়ির বড় বউ এবং অন্নার বৌদি হিসেবে যা করার দরকার সে করে যাচ্ছে। দেবব্রত শুধু অবাক নয়নে তার কিশোরী বউকে দেখে যাচ্ছে। কি অপরুপ না লাগছে, একেবারে গিন্নি গিন্নি। এই রুপে দেবব্রত হাজারোবার মরতে রাজী। হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠে দেবব্রতের, ফোনের স্ক্রিনে তাকাতেই চোখজোড়া অবাক হয়ে যায়। স্ক্রিনের নাম্বারটি যে তার পরিচিত, ফোনটা রিসিভ করতেই
…………………
চলবে
[ আসসালামু আলাইকুম, কিছু কথা না বললেই নয়। এই পর্বটা গত শুক্রবার বিকেলে পোস্ট করার কথা ছিলো। আমার লেখাও হয়ে গিয়েছিলো। কিন্তু দুপুরের দিকে আমার বাবা ব্রেইন স্ট্রোক করেন। যার কারণে আমি আর পোস্ট দেই নি। যখন আব্বুর অবস্থার একটু ইম্প্রুভ দেখা যায় তখন বিকেলের দিকে শুধু দুটো লাইন পোস্ট করি যে আমার আব্বু স্ট্রোক করেছেন, দোয়ান করবেন। এই পোস্ট করার কারণ একটাই যেনো কেউ গল্পের অপেক্ষায় না থাকে। আজ আলহামদুলিল্লাহ আব্বুকে বাসায় নিয়ে এসেছি, এবং তিনি সুস্থ আছেন আলহামদুলিল্লাহ। তাই এই পুরোনো লেখাটা পোস্ট করে দিচ্ছি। তবে আমি আগামীকাল গল্প পোস্ট করবো না। আমি একদিন পর পর গল্প পোস্ট করবো। আশাকরি আমার অবস্থাটা আপনারা বুঝবেন, এবং পাশে থাকবেন। কার্টেসী ব্যাতীত দয়া করে কপি করবেন না]
মুশফিকা রহমান মৈথি