কোনো_এক_শ্রাবণে পর্ব-১৩

কোনো_এক_শ্রাবণে

পর্ব-১৩

শাহাজাদী মাহাপারা (জোহুরা খাতুন)

সাদা রঙের শাড়িটা মাহাপারার গায়ে দারুণ মানিয়েছে। আজ তার জন্মদিন৷ জন্মদিন উপলক্ষে সে একটি শাড়ি কিনে এনেছিলো অনলাইন শপিং এর মাধ্যমে। শিপিং হয়েছে বাংলাদেশ থেকে। সাদা রঙের রাজশাহী সিল্ক।
শাড়ির সাথে রুপার কানের ঝুমকো আর রুপার কারুকাজ করা দুজোড়া বালা সাথে অফহোয়াইট রঙা পশমিনা শাল। এই শালটা নাফির দেয়া উপহার। বন্ধুরা মিলে যখন ইন্ডিয়ায় কাশ্মীর গিয়েছিলো ঘুরতে সেখান থেকে নিয়ে এসেছিলো তাদের তিন বোন আর মায়ের জন্য। শালটা মাহাপারার গায়ে মানিয়েছে সুন্দর। কিন্তু কি জেনো একটা নেই নেই। নেইই তো। যে জিনিসটার সবচেয়ে বেশি দরকার ছিলো তাইতো নেই। আজ মাহাপারা সারাদিন বেড়াবে। আজ তার ভ্রমণ দিন। প্রায় সামারের শেষের দিকে মাহাপারার মাস্টার্সের রেজাল্ট চলে আসবে। ততোদিনে এখানেই কিছু অড জবস করে কাজ চলে যাবে তার৷ যদিও বাবা টাকা পাঠায়। কিন্তু মাহাপারা খুব দরকার না পড়লে সে টাকার ব্যবহার কখনোই করেনা। আজ মাহাপারা একটা দারুণ লাঞ্চ আর ডিনার করবে। তাই ক্রেডিট কার্ডটা নিয়ে নিলো সাথে। শ্যালি তার বাবা মায়ের কাছে গিয়েছে কিছুদিন থাকবে বলে তাই আজ সে একাই ঘুরবে৷ সকালে যদিও দোলা -জাদিদ নাফিরা উইশ করেছে তাকে তবুও সামনে কেউই নেই। এর আগেও তার জন্মদিন একা কেটেছে তবে এবার বেশিই একাকিত্ব মনে হচ্ছে। ডোম থেকে বের হয়ে ট্যাক্সি নিলো মাহাপারা উদ্দেশ্য লেইকের কাছে যাবে৷ কিছুক্ষণ ওখানে ঘুরে লাঞ্চে যাবে। এবং তারপর অন্য কোথাও। রাতে ডিনার সেরে চলে আসবে ডোমে৷
মাহাপারা প্রথমে মেয়মন্ট পার্ক ঘুরলো এবং লাঞ্চের জন্য মেয়মন্ট থেকে কিছুটা দূরে সাহারা গ্রিল ক্যাফেতে গিয়ে বসলো। ক্যাফেতে গিয়ে খাবার অর্ডারের সময় নজর পড়লো ওয়েটারের দিকে। তার পূর্ব পরিচিতো বন্ধুও বলা যেতে পারে। মাহাপারার সাথে বেয়াজিদের বিয়ে ঠিক হবার কিছুদিন পরের ঘটনা। শপিং শেষে বাসায় ফিরে আসার সময় রাস্তায় এক্সিডেন্ট হয়। একজন মহিলা এক্সিডেন্ট করে। রাস্তায় বহু মানুষ জড়ো হলেও কাজের কাজ কেউই করছিলোনা। মোবাইল ফোনে ভিডিও করছে এমনকি ফেইসবুকে লাইভেও বসেছে। অথচ একটা এ্যাম্বুলেন্স কেউ ডাকছেনা। মাহাপারা দ্রুত মহিলাকে তার কাছে থাকা জিনিস সমেত কামালের সাহায্যে গাড়িতে উঠালো এবং সামনেই এসপি আরসি হাসপাতালে ভর্তি করলো। ইমার্জেন্সিতে নেয়া হলো মহিলাকে মাথায় বেশি আঘাত পেয়েছিলেন আর হাত ছড়ে গিয়েছিলো। তার ছেলেই রাকিব। তার সাথে তখনই পরিচয় মাহাপারার। আজ বহুদিন পর তাকে এখানে দেখবে এক্সপেক্ট করেনি মাহাপারা।

————————————————————
দোলার বাচ্চার আগমনে আর দুটো সপ্তাহই বাকি আছে৷ আজ মাহাপারার জন্মদিন সকালে ভিডিও কলে কথা বলে উইশ করেছে ঠিকিই কিন্তু তার মন মানছেনা৷ থেকে থেকে আজ একটু বেশিই মিস করছে মাহাপারাকে। জাদিদ কোকোয়া বাটারটা দোলার পেটে মালিশ করছে। দোলার পেটের ফাটা দাগ গুলোতে চুমু খাচ্ছে জাদিদ৷ আজ নতুন না৷ সে যখন বাসায় থাকবে তখনই এমনটা করবে। পেটের স্ট্রেচ মার্ক্স গুলো দেখে দোলার ভীষণ খারাপ লাগে। আগের থেকে একটু বেশিই মুটিয়ে গিয়েছে সে ১১ কেজির মতো ওজন বেড়েছে। পায়ে পানিও এসেছে। পা ফেলতে কষ্ট হয়। স্কুল থেকে ম্যাটার্নিটি লিভ নিয়েছে। জাদিদের প্রত্যেকটা চুমুতে দোলা কেঁপে উঠছে।
” হয়েছে ছাড়ো এবার সুরসুরি লাগছেতো” ” আমিতো তোমাকে কিছু করছিনা ” মুখ বাকিয়ে বললো জাদিদ। “আরে ধুর সরো” জাদিদ আর বেশি বিরক্ত করলোনা এমনিতেও ইদানিং দোলা কিছুটা বেশিই বিরক্ত থাকে। জাদিদ গোসলের জন্য তোয়ালে নিয়ে বাথরুমে ঢুকে গেলো। একবাটি স্যুপ হাতে হুমায়রা রুমে এলো। ” মামনি এটা তোমার জন্য।” ” লিটল মাস্টারশেফ আজ তাহলে দীদা এটা বানানো শিখিয়েছে তোমায়!” হুমায়রা হাসি মুখে মাথা দুলালো। দোলা তার হাত থেকে স্যুপের বাটিটা নিয়ে খেতে লাগলো। হুমায়রা এই ফাকে দোলার পেটের সাথে কান লাগিয়ে তার অনাগত ভাই কিংবা বোনের সাথে কথায় লিপ্ত। জাদিদ শেইভিং ফোম গালে লাগিয়েছে শেইভ করার উদ্দেশ্যে। ডান গালের দিক থেকে রেজারটা টেনে নামাতে নামাতেই দোলার চিৎকারের আওয়াজ ভেসে এলো তার কানে। ২য় বার চিৎকার করতেই জাদিদ অর্ধেক শেইভিং ফোম গালে লাগানো অবস্থাতেই দৌড়ে এলো রুমে দোলার অবস্থা দেখে তার কলিজা শুকিয়ে যাবার জোগার। দোলার পেইন বাড়ছে ধীরে ধীরে। এ কদিন ধরেই পেইন ছিলো তবে ডাক্তার বলেছে এরকম একটু আধটু ব্যথা হবেই এইসময়ে। অর্ধেক শেইভ করা অবস্থাতেই জাদিদ গেঞ্জি পরে নিলো। দোলাকে বললো এখনি বের হবে তারা হাসপাতালের জন্য। দোলার শাশুড়ী জাদিদকে বললো দোলাকে নিয়ে হাসপাতালে যেতে তিনি দোলার বাড়ির লোকদের জানিয়ে দিবেন। জাদিদ দোলাকে নিয়ে গাড়িতে বসালো। অর্ধেক রাস্তায় এসে দোলা লক্ষ্য করলো জাদিদ ঠিক মতো শেইভ হয় নি। এরকম পেইনের সময়েও তার হাসিই পেলো জাদিদকে দেখে। জাদিদ অবাক চোখে তাকালো দোলার দিকে? ” তুমি হাসছো কেনো পাগলের মতো? এটা হাসির সময়?”
” তাহলে কি করবো? ” ব্যথায় কুকড়ে যাওয়া মুখেই জিজ্ঞেস করলো দোলা। ” আরে আমিতো জানি এসময়ে মেয়েরা চিৎকার করে।” ” আচ্ছা! কিভাবে করে?” ” এইযে এইভাবে বলে জাদিদ নিজেই আ আ করে চিৎকার করতে লাগলো।” ওর কান্ডে দোলা নিজের ব্যথা ভুলে হাসতে লাগলো। দোলাকে হাসতে দেখে জাদিদ বুঝতে পারলো সে কি করছে। দ্রুত পরিস্থিতি সামাল দিতে সে বললো “আর কিছুক্ষণের মধ্যে পৌঁছে যাবো আমরা। হ্যাভ পেসেন্স।” বলতে বলতেই দোলার ওয়াটার ব্যাংক ব্রোক করলো৷ হাসপাতালের কাছে এসে দোলাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে জাদিদ তাকে নিয়ে ভিতরের দিকে গেলো।

———————————————————

বিকেলের দিকে নাস্তা করতে বসেছে বেয়াজিদ।এক সপ্তাহের ছুটিতে এসেছে সে। কারণ এরপর আগামী ৪ মাসে কোনো ছুটি নেই। সালেহার স্বামীও বিদেশে থেকে ফিরেছেন প্রায় এক মাসের মতো হলো। দোতলার ছোট ছাদটায় বসে বিকেলের চা নিচ্ছিলেন সবাই। সূচী পাকোরার ট্রে টা নিয়ে এলো কিচেন থেকে। সূচীকে দেখতেই বেয়াজিদের বাবা বলে উঠলেন -” বয়স তো কম হলো না আমাদের তোমরা বেবির জন্য প্ল্যানিং কবে শুরু করছো? কারণ বাকি সব বাবা মায়ের মতো আমি আর তোমার আম্মাও তোমার সন্তান দেখে মরতে চাই।”
শান্ত কন্ঠে বেয়াজিদ উত্তর দিলো ” আপনারা চাইলে আমি এখনি ফ্যামিলি প্ল্যানিং শুরু করতে পারি কোনো অসুবিধা নেই। তাছাড়া আপনাদের জন্য, আপনাদের কথাই তো সব করে এসেছি আজীবন। এটা খুব একটা বড় কিছু না এটাও করবো।” সূচী করুন দৃষ্টিতে একবার বেয়াজিদের দিকে তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নিলো। সালেহা আনন্দে গদগদ হয়ে বললো -” তুই সত্যিই ফ্যামিলি প্ল্যানিংশুরু করবি? ” তার কথায় সালেহার স্বামী বিরক্ত হয়েই বললেন “তুমি একটু থামবে?” সালেহার কথা থামলো। কিন্তু মনে মনে খুশিই হলেন এবার তার ছেলের জীবনটা হয়তো ট্র‍্যাকে ফিরবে। বেয়াজিদের চা শেষ হতেই সে উঠতে নিলো। সালেহার স্বামী তাকে জিজ্ঞেস করেই বসলেন -” আজকাল তুমি ঠ্যাস মেরে কথা বলাও শিখে গিয়েছো!” ” বেয়াজিদ চেয়ার ছেড়ে উঠতে উঠতেই বললো ” ঠ্যাস! কিসের? সত্যি কি বলি নি? তোমাদের ইচ্ছেতেই আমি আর্মি জয়েন করেছি। তোমরা চেয়েছিলে নেভিতে যাই গিয়েছি, তোমারা চেয়েছিলে মাহাপারাকে বিয়ে করি তাও করতে চেয়েছি, তোমারা চেয়েছিলে মাহাপারার সাথে সব সম্পর্ক শেষ করি করেছি, তোমরা চেয়েছিলে সূচী কে বিয়ে করি তাও করেছি। সুতরাং তোমরা চাইলে আমাদের সন্তানও হবে। তাহলে বলো বাবা এখানে আমার ইচ্ছেটা কোথায়? আমিতো তোমাদের গুড বয় হবার জন্য সব করেছি। আমার বোন পালিয়েছে তার দোষটাও তোমরা আমার ভালোবাসার মানুষকেই দিয়েছো আমি তাও মেনে নিয়েছি কারণ তোমাদের সমাজে মাথাকাটা যেতো। মা তো রীতিমতো থ্রেট দিয়েছিলেন আমি মাহাপারাকে বিয়ে করলে তিনি আত্মহত্যার মতো জঘন্য কাজটা করতেও দ্বিতীয়বার ভাববেন না। অথচ মাহাপারাতো কিছুই জানতো না এ ব্যাপারে। তারপরেও তোমাদের কথায় আমি ওকে ছেড়েছি। সূচী বাবার বন্ধুর মেয়ে তাকে বিয়ে করেছি। অথচ আমি তাকে কখনো ভালোইবাসতে পারবোনা যেভাবে আমি মাহাপারাকে বেসেছি। সূচী সব জেনে বুঝেও আমাকে বিয়ে করেছে কারণ তার ধারণা একটা সময় সব ঠিক হয়ে যাবে। আদৌতে তা কবে হবে আর হবে কি না আমার তাও জানা নেই। বাবা আমি তোমাদের কথাতেই তো সব করি তাহলে আজকে প্রকাশ করাতে তোমার কাছে ঠ্যাস কেনো মনে হচ্ছে? আমিতো তাই বলেছি যা সত্যি। নাকি মূখের উপর সত্যি বলাটা তোমরা মেনে নিতে পারো না? ” কথাটা বলেই উত্তরের অপেক্ষা না করেই বেয়াজিদ চলে গেলো। কিছুক্ষণ সেখানেই দাঁড়িয়ে থেকেই নিচে নেমে এলো সূচী৷
সত্যিই কি তাই? কোনোদিনই কি বেয়াজিদ আর তার সম্পর্ক স্বাভাবিক হবে না? এমন একটা যান্ত্রিক সম্পর্ক কতদিন বয়ে বেড়াবে সে জানা নেই।
—————————

ছেলেটার সাথে কথা বলার চেষ্টা করেও পারছেনা মাহাপারা। লাঞ্চ শেষ করেও কিছুক্ষণ বসে ছিলো সে। কিন্তু ছেলেটার ডিউটি অন্য টেবিলে পড়েছে তাই সে এ মুখো হতে পারছেনা। একসময় বিল পে করে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাড়ালো মাহাপারা চেয়ারের নিচের অংশের সাথে তার আচঁলের এক কোনা আটকে গেলো। টান লাগলে ছিড়ে যাবার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই জোড়া জুড়ি না করে নিচু হয়ে বসলো সে।কোনা থেকে আঁচল ছাড়িয়ে উঠতেই বেসামালে ধাক্কা লাগলো সামনে থাকা ওয়েটারের গায়ে তার হাতের গরম স্যুপের বোলটা সামনে থাকা লোকটার গায়ে গিয়ে ছিটকে পড়তেই সে চিৎকার করে উঠলো – হলি শিট
– আই এম সো সর‍্যি স্যার। আমি লক্ষ্য করিনি দুঃখিত। মাহাপারা দ্রুত সামনে ঘুরে দাড়ালো। তার সামনে প্রায় ৫’১০” লম্বা লোক দাড়ানো ৩ ইঞ্চির হিল পরেও মাহাপারা তার বুকের নিচে অবস্থান করছে। গাড় উঁচু করে উপরের দিকে তাকিয়ে আছে সে। চোখ দুটো আতঙ্কে বিস্ফোরিত।ভয়ংকর ঘাবড়ে গিয়েছে সে। লোকটাকে দেখেই যে কেউ বলবে আমেরিকান হিটলার। চাহুনিতেই বদমাইশি। এখন সে রুদ্রমূর্তি ধারণ করেছে জেনো কাঁচা খেয়ে ফেলবে ওয়েটারকে। মাহাপারা দ্রুত তার ব্যাগ থেকে ছোট নীল রঙের রুমালটা বের করে লোকটার দিকে বাড়িয়ে দিলো। কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলতে লাগলো – “আই এম সো স্যরি স্যার। ইট ওয়াজ কামপ্লিটলি মাই ফল্ট। প্লিজ ডোন্ট ব্লেইম হিম।” ওয়েটার কে চলে যেতে ইশারা করলো ছেলেটা। মাহাপারা দেখলো সাদা রঙের শার্টটার দফারফা হয়েছে। আর এখনো ওই জায়গাটা গরম তার খালি করে রাখা প্লেটেই সে গ্লাস থেকে পানি নিয়ে রুমালটা ভেজালো এবং লোকটার শার্ট পরিষ্কার করতে লাগলো।মাহাপারা চোখ ভিজে উঠলো আজকের দিনেই হবার ছিলো এইসব? লোকটা ইংলিশ এক্সেন্টেই কিছু বললো কিন্তু মাহাপারার সেদিকে খেয়াল নেই সে এখনো শার্ট থেকে স্যুপই পরিষ্কার করছে জেনো দাগ না হয়ে যায়৷ ফায়দা কিছুই হবেনা কারণ দাগ অলরেডি বসে গিয়েছে যেহেতু শার্টটা সাদা। মাহাপারার গাল গড়িয়ে পানি পানি পড়ছে। লোকটা অবাক দৃষ্টিতে দেখছে তাকে।

মাহাপারা জড়ানো কন্ঠে বললো – “আপনার কি ব্যথা করছে? আপনি কি ডাক্তারের কাছে যাবেন?”
“না মিস। আপনি কান্না থামান এমন কিছুই হয়নি আমি ঠিক আছি।” মাহাপারা দ্রুত নিজেকে সামলে নিলো।
“আপনার শার্টটা নষ্ট করবার জন্য আমি দুঃখিত” ” ইট’স ওকে। তবে আজ আমার ডেইট ছিলো যদিও সে এখনো আসেনি।” “আপনি প্লিজ আমার সাথে চলুন সামনেই একটা মল আছে আমি আপনাকে শার্ট কিনে দিচ্ছি। না ঠিক আছে আমার গাড়িতে এক্সট্রা পেয়ারস আছে। আপনি চিন্তা করবেন না।” লোকটার হাতের মোবাইলটা বেজে উঠলো কানে নিতেই ওপাশের কথা বলে উঠলো। লোকটার চেহারা ঝুলে গেলো আর সে অসন্তুষ্ট ভাবে ওকেই বলে কল কেঁটে দিলো। মাহাপারা জিজ্ঞেস করলো -“কোনো সমস্যা? আমি কি কিছু হেল্প করতে পারি?” লোকটা মাহাপারার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসি দিয়েই বললো- “শিওর। আপনি ফ্রি আছেন? তাহলে চলুন শার্ট কিনবো।” “আপনি তো বললেন আপনার কাছে এক্সট্রা আছে তাহলে?” ” আপনি ভুল করেছেন তাই আপনাকে শুধরানোর একটা সুযোগতো দেয়াই যায়। ” মাহাপারা অবাক হলেও দ্রুত সামলে নিলো পার্সটা নিয়েই এক্সিটের জন্য এগুলো। পিছন থেকে কেউ একজন ডেকে উঠলো মাহাপারা বলে। সে পিছনে ফিরতেই দেখতে পেলো সেই ছেলেটা তার বন্ধু রাকিব৷ মাহাপারা স্মিত হাসলো। ” আপনি কি একটু অপেক্ষা করবেন?” লোকটা হাসি ফিরিয়ে দিলো যার অর্থ আমি আছি। ” কেমন আছো রাকিব?” ভালো তুমি? আমি আসলে ব্যস্ত ছিলাম তাই তোমাকে দেখেও এদিকে আসতে পারিনি। ব্যাপার না আমি দেখেছি সেটা। তারপর বলো? এক মিনিট তোমার সাথে দাড়ানো লোকটা কে? আর তোমার হাজব্যান্ড কোথায় কি জেনো নাম তার! হ্যাঁ বেয়াজিদ। মাহাপারার চেহারাটায় একটা দুঃখ খেলে গেলো৷ পাশে দাড়ানো লোকটা কি বুঝলো কে জানে ওয়েটারের দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললো হেই আ’ম দ্যাস্তান হ্যারল্ড হার স্পাউস।রাকিব হ্যারল্ডের সাথে হ্যান্ডশেক করে মাহাপারার দিকে তাকালো আর মাহাপারার বিস্ফোরিতো দৃষ্টি দেখলো। মাহাপারার চোখ দুটো জেনো অক্ষি কোটর থেকে বেরিয়ে আসবে। “প্লেজার টু মিট ইউ।মেহপ্যারা আ’ম ওয়েটিং আউটসাইড।” মাহাপারা নিজের এমন নাম শুনে বিস্মিত হলো। রাকিবকে দ্রুত বললো-” বেয়াজিদের সাথে আমার বিয়েটা হয়নি। বেয়াজিদ আমার সাথে সব সম্পর্কের পাট চুকিয়ে এখন তার বাবার বন্ধুর মেয়েকে বিয়ে করেছে৷ তারা ভালো আছে। আজ আসি অন্য একদিন দেখা হবে।” বলতেই দ্রুত প্রস্থান করলো মাহাপারা।

বাহিরে আসতেই দেখতে পেলো লোকটা গাড়ির সামনে দাড়িয়ে আছে৷ মাহাপারাকে দেখতেই গাড়ির দরজা খুলে দিলো মাহাপারা গিয়ে বসতেই সে ড্রাইভিং সিটে উঠে বসলো। মাহাপারার দৃষ্টি সামনের দিকে। লোকটা একবার মাহাপারার দিকে তাকিয়ে ড্রাইভ করতে শুরু করলো।
” সো মেহপ্যারা দিস ইজ ইউর নেইম রাইট?” “হ্যাঁ।”
“তোমার হাজব্যান্ড কোথায় থাকে?”
“আমি অবিবাহিত।” ” অহ!ওকেই।”
“আপনি কি আমার কথায় আহত হয়েছেন? আমার ধারণা ছেলেটা আপনার আত্মীয়ের মাঝে। সে আপনাকে আপনার অতীত সম্পর্কিত কিছু বলতে চেয়েছিলো তাই হয়তো আপনি বিব্রতবোধ করছিলেন। তাই ওভাবে বলেছি। মাই আপোলজি।”
” দুঃখিত হবার কিছু নেই।ধন্যবাদ হেল্পের জন্য।”
“প্লেজার ম্যাম।”
” ব্যস সামনেই নামবো।আমি দাড়াচ্ছি আপনি পার্ক করে আসুন।”
মাহাপারা গাড়ি থেকে নামতেই দাস্তান গাড়ি পার্ক করতে চলে গেলো।
———————————————————-

দোলা একবার জাদিদের দিকে তাকাচ্ছে একবার মেয়ের দিকে৷ দুজনের মাঝে সিমিলারিটি দেখা যাচ্ছে এখন।দুজনই কান্না করছে৷ জাদিদ এখনো তার অর্ধেক গালের দাড়ি সেইভ করে নি। ক্লান্ত চোখে চেয়ে আছে দোলা।
“শুনছো?”
” হ্যাঁ বলো। ” “কান্না কেনো করছো? দেখো আমরা দুজনই সুস্থ আছি।” ” মেয়ের নাম রাখবে না?”
জাদিদ গেঞ্জির হাতায় চোখ মুছে বললো “তুমিই নাম রাখো।” “আচ্ছা। ওর নাম রাখলাম জারওয়া। জাদিদ আর দোলার ভালোবাসা৷ জারওয়া।” জাদিদ হাসলো। “সুন্দর নাম। তোমার পরিবারের সবাই এসেছে দোলা। দেখা করবে না?”দোলার চোখ ভিজে উঠলো। সে জারওয়ার সাথে কথা বলায় ব্যস্ত হয়ে গেলো। জাদিদ বুঝে গিয়েছে তার নিশ্চুপ সম্মতি। কেবিনের বাহিরে চলে গেলো সে সবাইকে ডাকতে। দোলা এক দৃষ্টিতে জারওয়ার দিকে চেয়ে রইলো।
———————————————————–

নিপার ফোন থেকে থেকে বেজে উঠছে। বাথরুমে থাকায় ধরতেও পারছেনা। বাথরুম থেকে বেড়িয়ে ফোন নাম্বারটায় চোখ আটকে গেলো। মায়ের নাম্বার।মায়ের নাম্বার দেখতেই নিপার চোখ ভিজে উঠলো। কাঁপা হাতে ঝাপসা চোখে কল রিসিভ করলো।
” হ্যালো আম্মু”
” দোলার মেয়ে হয়েছে।কেউ যদি দেখতে চায় সে জেনো আজ রাতের মধ্যে ঢাকায় চলে আসে। ” নিপা কপট রাগ দেখিয়ে বললো “আমি ফিরবো না।”
” আমি কাউকে জোর করিনি। আমি শুধু বলেছি আসতে চাইলে আসবে। তাছাড়া কেউতো আর তার মা বাবাকে মনে করেনা।” বলেই রুবাবা কল কেঁটে দিলো।

নিপা দ্রুত আবরারকে ফোন করলো।
ওপাশ থেকে কল রিসিভ করতেই নিপা কাপা কন্ঠে বললো “তুমি দ্রুত বাসায় আসো৷ আমরা ঢাকার জন্য রওনা হবো।বাসায় এলে কারণ বলবো।”

———————————————————–
খালি বারান্দায় বেয়াজিদ হেলান দিয়ে বসে আছে৷ ছুটি গুলো তার এভাবেই কাটবে। এর চেয়ে ভালো ফিরে যাওয়া।
বেয়াজিদের বন্ধুরা সবাই ট্রিপে যাওয়ার কথা বলেছিলো তাকে কিন্তু সবাই কাপল যাচ্ছে। সে একা যেতে চাইছেনা।
সূচী রুমে ঢুকতেই দেখলো বেয়াজিদের হাতে বারবুনের একটা গ্লাস। বর্ষার শুরু তাই বেশ ঠান্ডা পড়েছে। সূচী বেয়াজিদের সামনে এসে দাড়ালো। কিছুক্ষণ সামনে থাকা অর্ধমৃত লোকটার দিকে চেয়ে থেকে সূচী রুমে চলে গেলো। ফিরে এলো হাতে পাসপোর্ট নিয়ে। বেয়াজিদ পাসপোর্টের দিকে একবার দেখলো এরপর সূচীর দিকে তাকালো।
“আপনার পাসপোর্ট। বাবাকে বলে ভিসার ব্যবস্থা আমি করে ফেলেছি। আর টিকিট ও পেয়ে যাবেন। আপনি ঘুরে আসুন বন্ধুদের সাথে৷”
” তুমি কি করে জানলে?”
” গত সপ্তাহে জেনেছি। আপনার এক বন্ধুর বউ অনুরোধ করেছিলেন আমাকে যেতে। যদিও ভিসা দুটোই পাঠিয়েছি। কিন্তু আমি যাবো না। আপনি যান ঘুরে আসুন।”
” ব্যাগ গুছিয়ে নাও। আমরা দুজনই যাচ্ছি। টিকিট ইকোনমি ক্লাসের করিও। আমি এত টাকা দিতে পারবোনা বিজনেস ক্লাসের জন্য।”
সূচী চুপচাপ বারান্দা থেকে বের হলো বাথরুমে গিয়ে দরজা আটকে দিলো।
প্ল্যান কাজ করেছে৷ এই দমবন্ধ করা বাড়ি থেকে কিছুদিনের জন্য হলেও ছুটি পাওয়া যাবে৷ আশা করা যায় এই রিফ্রেশমেন্ট বেয়াজিদ আর তার সম্পর্কে নতুন অধ্যায় শুরু করতে সাহায্য করবে৷ সূচীর কারো সাথে কোনো বিবাদ নেই৷ সে জীবনে শুধু একবার মাহাপারা নামের মহীয়সীর সাথে দেখা করতে চায় যার জন্য তার সব থেকেও নেই।সে মাহাপারার অবস্থানের খোজ নিয়ে নিয়েছে ইতোমধ্যে। এখন শুধু যাবার পালা। বেয়াজিদ নিজেও জানেনা মাহাপারা কোথায় আছে। তাই ব্যাপারটা ইজি হয়েছে তার জন্য। সে শুধু একবার মাহাপারার মুখোমুখি হতে চায়।দেখতে চায় তাকে যার জন্য তার স্বামী তাকে একবার চেয়ে দেখেনা৷ একবার তাকে ভালোবাসে না৷ যে কিনা তার স্বামী সংসার থেকে যোজন দূরে থেকেও তার সংসারে আগুণ জ্বালিয়ে রেখেছে। যা তাকে রোজ পুড়িয়ে মারছে৷ সময় এসে পড়েছে।

চলবে…!

Shahazadi Mahapara’s Inscription

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here