কোনো_এক_শ্রাবণে
সূচনাপর্ব
-শাহাজাদী মাহাপারা (জোহুরা খাতুন)
গত তিনমিনিট ধরে দোলা বাসার কলিং বেল বাজিয়েই যাচ্ছে কেউ দরজা খুলছেনা।
চেহারায় একরাশ বিরিক্তি নিয়ে দরজার বাহিরে দাড়িয়ে আছে দোলা।এই মুহূর্তে তার একদলা থু থু ফেলতে মন চাইছে।হয়তো এতে বিরক্তিটা একটু কমতো।
এসব ভাবতে ভাবতেই দরজাটা খুলে গেলো।কিন্তু কাউকে দেখা যাচ্ছেনা। নসীমা দরজার আড়াল থেকে দোলাকে দেখছে ফুচকি দিয়ে।
দোলা ব্যাপারটা দেখেও না দেখার ভান করে বেসিনের কাছে গেলো ব্যাগ টা সোফার উপর ছুড়ে দিয়ে। পুচ্চু ঘাউ করে উঠলো। ব্যাগটা পুচ্চুর লেজের উপর ছুড়ে দিয়েছে দোলা।পুচ্চু দোলাদের একমাত্র কুকুর।বিশাল সাইবেরিয়ান হাসকি।নরম শরীরে পশম গুলো চকচক করে।মনে হয় রোজ তেল দেয়া হয় পশমে।যদিও তার নাম মেলেসা।তবুও সবাই তাকে পুচ্চু বলেই ডাকে।শুধু মাত্র একজন তাকে মেলেসা ডাকে।
“নসীমা….নসীমা…..”
দোলার চিৎকার শুনে নসীমা দৌড়ে বাথরুমের সামনে গিয়ে দাড়ায়।বাথরোব পরে দাড়িয়ে থাকা দোলার লাল চোখ দেখে আৎকে ওঠে নসীমা।
“তুমি আজকেও আমার ফেইসপ্যাক লাগিয়েছো?”
“নিশ্চুপ” নসীমা ঢোক গিললো।
“উত্তর দিচ্ছোনা কেনো?”
“আপনের ফেইসপেক টায় মেলা সুন্দর খুশবু।তাই একটু লাগাইছিলাম বড় আপা।”
“তোমাকেতো কিনে দিয়েছি নসীমা। কেনো আমার জিনিস ধরো?”
“আমারটার থিকা গন্ধ কয়।”
“উফফ নসীমা তোমার ফেইস অনুযায়ী কিনে দিয়েছিতো।”
“আর লাগাবোনা বড়াফা।”
“যাও এখান থেকে।”
বাথরুমের দরজাটা দরাম করে লাগিয়ে দিলো দোলা। নসীমা মুখটা বাঁকা করে ভেঙচি দিয়ে সরে এলো।
চুলায় চা চরিয়ে দিয়ে গুন গুন করে গান গাচ্ছে নসীমা।
“যদি সুন্দর একখান মুখ পাইতাম
সদর ঘাটের পান খিলি তারে বানাই খাওয়াইতাম….লা লা লা….”
___________________
নিপার ফোন বেজেই যাচ্ছে কিন্তু ধরছে না।নিপা বারান্দায় দাঁড়িয়ে বৃষ্টি দেখছে।একবার বৃষ্টি হাত দিয়ে ছুঁয়ে হাত সরিয়ে নিচ্ছে আবার হাত ভিজিয়ে তা গালে স্পর্শ করছে।কখনো মিটি মিটি হাসছে।
ফোনের রিংটোনে আর ভাইব্রেশনের জন্য ফোন টা লাফিয়ে লাফিয়ে এদিক থেকে ওদিকে চলে যাচ্ছে।রিংটোনের আওয়াজ সহ্য করতে না পেরে নসীমা ফোনটা তুললো।বেশ সুন্দর করে হ্যালো বলতেই ওপাশ থেকে পুরুষালী কন্ঠে কিছু কথা ভেসে এলো।নসীমা তার কিছুই বুঝতে পারলো না।কথাও বের হচ্ছেনা তার মুখ দিয়ে।পুরুষ মানুষের কন্ঠ এত সুন্দর হয়!
Love
Has a way of wilting
Or blossoming
At the strangest,
Most unpredictable hour.
This is how love is,
An uncontrollable beast
In the form of a flower.
The sun does not always shine on it.
Nor does the rain always pour on it
Nor should it always get beaten by a storm.
Love does not always emit the sweetest scents,
And sometimes it can sting with its thorns.
Water it.
Give it plenty of sunlight.
Nurture it,
And the flower of love will
Outlive you.
Neglect it or keep dissecting it,
And its petals will quickly curl up and die.
This is how love is,
Perfection is a delusional vision.
So love the person who loves you un……
এক পর্যায়ে বিরক্ত হয়ে গেলো নসীমা।এ ভাষার কিছুই সে বুঝতে পারছেনা।
-“আরে রাখেন মিয়া।কেডায় আপনে?
নিপা আপা অহনা ব্যস্ত পরে ফোন দিয়েন।বলেই লাইনটা কেটে দিলো।”
টু টু টু ….
“হ্যালো..নিপা?” “হ্যালো..!” ” হ্যালো…!”
নিলয়ের কন্ঠে স্পষ্ট বিরক্তি ঝরে পড়লো।মুখটা বাকিয়ে কিছুক্ষণ ফোনের দিকে চেয়ে থেকে আবার বইয়ে মুখ গুঁজলো।
__________________
রুবাবা হাতে বাটা মেহেদী লাগাচ্ছিলো শফিক সাহেব ওনার দিকে একবার তাকালেন আবার চোখ সরিয়ে পেপারের দিকে তাকাচ্ছেন।
” কিছু বলার থাকলে ভণিতা না করে বলে ফেলো।”
” না মানে তুমি চুলে মেহেদী দিলেই পারো।সুন্দরও লাগবে আর প্রতিমাসের রংএর খরচাটাও বাচঁবে।”
“আমি চুলে রং দেই আমার ছেলের পয়সায়।তাতে তোমার কানাকড়িও নেই।বয়সকালেতো কিছুই করতে পারিনি।দুধে আলতা গায়ের রংটা চুলার পিছনে খেটে খেটেতো ঝলসে গেলো।তাও তুমি আমার এই বয়সের শখ আহ্লাদ নিয়ে খোটা শোনাচ্ছো?”
আচঁলে মুখ ঢেকে বের হয়ে গেলেন রুম থেকে রুবাবা।
___________________
শ্রাবণের শুরু আজ থেকে।
ড্রয়িং রুমের সোফায় বসে চা পান করছেন শফিক সাহেব।রুবাবা একবার রান্নাঘরে যাচ্ছে আবার ডাইনিং টেবিলে আসছে।হঠাৎ চেয়ারের সাথে পা বেঝে ব্যথা পেলেন। শফিক সাহেব চায়ের কাপ রেখেই রুবাবাকে ধরলেন।
“এত তাড়াহুড়োর কি আছে? আস্তে করলেই পারো।ওদের আসতে দেরি আছে।”
“আকাশের অবস্থা ভালো না যদি আগেই এসে পরে? তখন কিভাবে করবো এত আয়োজন?”
নিপা দোলাদের ডাকো ওরাতো পারে তোমাকে সাহায্য করতে।নিপা! এই নিপা!
___________________
নিপা এতক্ষণ নিলয়ের সাথে কথা বলছিলো।
“নিপা সেদিন তোমায় যে কবিতাটা শোনাবার জন্য ফোন দিয়েছিলাম সেটা শোনাতে পারিনি।”
“হু।”
“তোমার ফোনটা অন্য কেউ ধরেছিলো।”
“হু।”
“তাকেই শুনিয়ে দিয়েছি কবিতাটা।তুমি শুনবে আজ?”
“হু।”
“কি হু হু করছো?”
“আচ্ছা শোনান।”
“ঠিকাছে।”
খানিকটা কেশে গলা পরিষ্কার করে নিলো নিলয় তারপর দরাজ গলায় শুরু করলো কবিতা –
Love
Has a way of wilting
Or blossoming
At the strangest,
Most unpredictable hour.
This is how love is,
An uncontrollable beast
In the form of…
বাবার চিৎকার শুনে ঘাবড়ে গেলো নিপা।
“নিলয় সাহেব আমি এখন ফোন রাখছি বাবা ডাকছেন।”
“নিপা শোনো? হ্যালো! নিপা ! হ্যালো?
ধ্যাত। ”
বিরক্ত হয়ে মোবাইলটা বিছানার উপর ছুড়ে দিলো নিলয়। আজও তার নিপাকে কবিতা শোনানো হলো না।
“নিলয় ভাই আপনের কফি।”
” কফি তোমার মাথায় ঢালো চান্দু।”
“জ্বি আচ্ছা।”
চান্দু মিয়া কফি নিয়ে চলে গেলেন।
মোবাইলটা রেখেই নিপা রান্নাঘরের দিকে এগুলো।
“বলো বাবা।”
“কোথায় থাকিস? তুই জানিস না আজ তোর বোন কে দেখতে আসবে? সারাক্ষন রুমের মধ্যে কি করিস। তোর মাকে সাহায্য করলেওতো পারিস।”
“করছি বাবা।”
নিপা রান্নাঘরে গিয়ে চুলায় ঢাকা দেয়া খাবার গুলো দেখে নিলো।পোলাও, মুরগির রোস্ট, গরুর মাংসের কালোভূনা।এই হলো ম্যানু।
সালাদ কাঁটা বাকি শুধু নিপা সালাদ কাটতে শুরু করলো।
________________
নসীমা গোছানো ঘর আবার গুছিয়ে রাখছে।একটা কিছু জেনো অগোছালো না থাকে সেদিকে খেয়াল দিচ্ছে।আজগর আলী সদর দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকেই বললো
“খালুজান আকাশের অবস্থা ভালো না।সাঁঝ করছে।ঝড় হইবো মনে হইতাছে।”
” চিন্তার বিষয় আসবে কিভাবে তারা?”
দোলা ডাইনিং এর সামনে এসেই গ্লাসে পানি ঢালতে ঢালতে বললো
“আজগর ভাই চিন্তার কি আছে? তারাতো গাড়িতে আসবে।”
“হ তাইতো।যাকগা বড় আফা খালাম্মা এগুলা আনতে কইছিলো।”
” দোলা প্যাকেটগুলো হাতে নিয়ে দেখলো একটা সেভেন আপ আর একটা কোকাকোলার ২লিটারের বোতল।আর তিনটা ফ্যামিলি সাইজ আইসক্রীমের বাটি ,পিস্টাসীয়, ভ্যানিলা আর স্ট্রবেরী ফ্ল্যাভারের। দোলা সব নিয়ে ফিজে রাখলো।তারপর নিজের ঘরে বারান্দায় গিয়ে দোলনাটায় বসে দোল খেতে লাগলো।
নিপা রুমে গিয়ে তার ডিভিডি প্লেয়ারটায় গান ছেড়ে দিয়ে হাত পা দুলিয়ে ঘুরে ঘুরে নাচতে লাগলো আর গুন গুন করতে লাগলো –
“পাগলা হাওয়ার বাদল দিনে
পাগল আমার মন নেচে ওঠে….”
দোলার ঘর পর্যন্ত সেই গানের সুর ভেসে যাচ্ছে।দোলাও গুন গুন করছে। শফিক সাহেব দোলার রুমে এসেই তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতেই দোলা চমকে উঠলো।পিছনে ফিরেই দেখলো শফিক সাহেব দাঁড়িয়ে আছেন।
“বাবা কিছু বলবে?”
“তুই কি আমার উপর রাগ?”
” না বাবা আমি তুচ্ছ মানুষ মাত্র।এ জগতের কারো উপরই আমার কোনো রাগ নেই।”
“আমি বুঝিরে মা। আমার প্রথম সন্তান হিসেবে আমি সবসময় তোকে বাকিদের থেকে আলাদা দেখেছি। আমি সবসময় চেয়েছি তুই ভালো থাক। আমি জানি তুই আমার প্রতি অভিমান করে আছিস। আমি তোর প্রতি আমার দায়িত্ব পালনে ত্রুটি রেখেছি। আজ আফসোস হয় সেদিন যদি তোর কথা শুনে সায়েমের সাথেই তোর বিয়ে দিতাম তাহলে হয়তো তুই ভালো থাকতি। আমার আর বড় আপার সম্পর্কটাও নষ্ট হতো না।”
“আহ বাবা।তুমি এসব কথা ভেবে আর কষ্ট পেয়ো নাতো। আমি ঠিকাছি। আমার নিয়তিতে যা আছে তাই হবে।”
হঠাৎ করে বিদ্যুৎ চমকে উঠলো।
“বাবা চলো ভিজি।কতদিন ভিজি না আমরা।
তোমার মনে আছে ছোট থাকতে যখন ছুটির দিন তুমি বাসায় থাকতে আমরা সবাই কিভাবে ছাদে গিয়ে ভিজতাম।”
চশমা খুলে চোখটা মুছেই শফিক সাহেব বললেন মনে আছেরে মা।
“মা সেদিন খিচুড়ি রাঁধতো, ইলিশ মাছ ভাজতো।”
“হ্যাঁ ।আর ছোটো লুকিয়ে গিয়ে মাছ নিয়েই গায়েব হয়ে যেতো।আর তোর মা ভীষন রেগে যেতো।”
কথাটা বলেই শফিক সাহেব আর দোলা হো হো করে হেসে উঠলো।
দরজার আড়ালে দাঁড়িয়ে মুচকি হেসে উঠলেন রুবাবা। কিজানি ছোট মেয়েটা এখন কি করছে? কি খাচ্ছে? এই মেয়েটার জন্য তার বড্ড দুঃশ্চিন্তা হয়। দরজা থেকে সরেই নিজের ঘরের দিকে অগ্রসর হলেন রুবাবা।
চলবে…!
Shahazadi Mahapara’s Inscription