কৌমুদিনী পর্ব-১৩

0
1568

#কৌমুদিনী
#তাফসিয়া মেঘলা
#পর্ব ১৩

২৫
ফের সুন্দর প্রভাত দিয়ে নতুন এক দিনের সূচনা ঘটলো এ সুন্দর ভোরে নিজেদের প্রণয়ে মত্ব এক দম্পতি৷ দুজনের কাছে সব কিছু পুরনো হলেও নতুন রুপে পরিচিত হয় একে অন্যের সাথে প্রতিদিন৷ সম্পর্কের বাধণ পুরোনো হলেও সে সম্পর্কের প্রেম আর প্রণয় যেন নতুন ভাবে নতুন নিয়মে সূচনা হয় প্রগাঢ় নিবিড় হয়৷
কিছু কিছু সম্পর্ক পুরনো হলেও তারা নিজ থেকে সম্পর্ক টা নতুন করে তুলে৷ শক্ত হয় সম্পর্ক গুলো৷
তেমন রানী মেহনুবা আর নবাব আহসান মীরের সম্পর্ক দিন দিন যেন উন্নতি ঘটছে৷ প্রেম আর প্রণয় পাল্লা দিয়ে বাড়ছে৷
আজ ফজর নামাজ পরার পর হুট করে রানী মেহনুবা আবদার করে বসলো হাতে হাত রেখে হাটবে৷
এ আবদার নতুন নয় আহসান মীর এ সময় চাঁদ পায় হাতে৷ রাজ্য রাজত্ব সামলাতে সামলাতে মাঝে মাঝে শরীরে মরিচা পরে যায় সে মরিচা ঠিক করে দেয় রানী মেহনুবা৷ প্রেয়সীর সাথে সমিয় কাটানো যেন প্যারাসিটামল ঔষধ এর মত কাজ করে৷ সতেজ হয় মন মস্তিষ্ক শরীর৷

আঁধার থাকতে থাকতেই দুজন বেরিয়ে পরলো নিজেদের মত সময় কাটাতে৷ মহল থেকে দূরে আসতেই আশে পাশে চোখ বুলিয়ে নবাব আহসান মীর রসিকতা সুরে বলে,
” চৈত্রের ভোরে হাটতে বেরিয়েছি পেত্নিরা দেখে আবার তোমাকে তাদের দলের সদস্য ভেবে নিয়ে না যায় এ নিয়ে চিন্তায় আছি৷ আগে জানলে ওঝা বা কবিরাজ নিয়ে বের হতাম৷”

আহসান মীরের কথায় রানী মেহনুবা চোখ রাঙিয়ে বলে,
” আপনার আমাকে পেত্নি মনে হয় নাকি?”

আহসান মীর কেবলাকান্তের মত হাসি দিয়ে মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলে,
” এমা আমি তোমাকে কখন পেত্নি বললাম? আমি তো ওদের দলের সদস্য বলেছি৷”
বলেই হো হো করে হেসে দেয় আহসান মীর৷ আহসান মীরের এমন হাসি দেখে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে মেহনুবা৷ আহসান মীরের হাত ছেড়ে রাগ দেখিয়ে আগে আগে হাটতে থাকে৷ আহসান মীর পিছন পিছন যেতে নিলেই মেহনুবা চোখ রাঙিয়ে বলে,
” খবরদার পিছনে আসবেন না আমার৷”

আহসান মীর থামলো অতঃপর হেসে বললো,
” এভাবে তাকাবেন না রানী হৃদয়ের ব্যামো বাড়বে৷ পরে হয়তো হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মরেই যাবো? আসুন আমার কাছে রানী৷ আসুন আমার বক্ষপিঞ্জিরায়?”

মেহনুবা যেন দমে গেলো চোখ ভরে এলো এগিয়ে এসে ঝাপটে ধরলো অতঃপর বললো,
“আপনি খারাপ নবাব৷”
আহসান মীর মুচকি হেসে বলে,
“ভালোবাসি রানী৷ ”
মেহনুবা রাগচটা গলায় উত্তর দেয়,
“ভালোবাসি না আমি৷”
আহসান মীর হাসে৷ প্রান খোলা প্রাণবন্ত হাসি৷ কে বলে ভালোবাসি বললেই শুধু ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটে? ‘ভালোবাসি না ‘ কথার মাঝেও হাজার ভালোবাসি ভালোবাসি কথাটা লুকিয়ে থাকে৷
বয়স বারুকনা কি হয়েছে? প্রেম কি কমে নাকি? প্রেম ভালোবাসা তো শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত টিকে থাকে৷ তার চাওয়া শেষ নিশ্বাস যে দু’জন এক সাথেই ত্যাগ করে৷ একা কি বাঁচা যায় নাকি? সঠিক সঙ্গি থাকলে বাচার ইচ্ছা দ্বিগুণ বাড়ে৷ বাড়তে থাকুক প্রণয় পাল্লা ক্ষতি কি? বয়স তো প্রণয়ের কাছে তুচ্ছ৷

২৬

প্রভাত আজ রৌদ্রজ্বল নয় আঁধার মাখাই৷ নতুন এক প্রভাত দিয়ে যেমন দিনের সূচনা হয় ঝলমলে আলো মন কে আনন্দিত করে তুলে তেমন আজকের সকালটা নয়৷ শ্রেয়াসের প্রভাত আজ শুরু হলো উগ্র মেজাজ দিয়ে৷ কমিশনার আশরিফ কে বার বার ফোন করে যাচ্ছে কিন্তু ক্ষবর নেই৷
এদের এ রাজ্যের আইন রক্ষার্থে কেন দিয়েছে কে জানে?
গুনে গুনে পনেরো বার ফোন দিয়ে মুঠো ফোন ছুড়ে বিছানায় ফেললো৷ একে আর ফোনই করবে না এর চাকরির রফাদফা আজ করবে৷
মোবাইলটা ছুড়ে দিতেই হাতের ক্ষতর মধ্যে ব্যাথা লাগলো ক্ষানিকটা আর্তনাদ করে উঠলো৷ ক্ষত গুলোতে আঘাত লাগতেই রাগে শরীর ‘রি রি’ করে উঠলো৷ এই ক্ষত যে তৈরি করেছে তাকে তো পাতাল থেকে হলেও সে নিজে ধরবেই৷ আজ কাল এ রাজ্যের মানুষের সাহস বেড়েছে৷ রাজকুমার শ্রেয়াস এর কক্ষে প্রবেশ করে তাকেই অচেতন করে আঘাত করে?
যে করেছে তার সাহস আকাশ তুল্য৷ তার পাখনা তো শ্রেয়াসই কাটবে৷ এ নিয়ে আলোচনা না করার কারণ সে নিজের উপর আক্রমণ কারিকে নিজে দেখতে চায় মুখোমুখি হতে চায়৷ বাঘের খাঁচায় এসে বাঘকে আক্রমণ সে সাহসী মানুষ টা কে দেখার তীব্র ইচ্ছা আকাঙ্ক্ষা জেগেছে শ্রেয়াসের মনে৷
তবে আপাদত মানসিক বিশ্রামের প্রয়োজন৷ আজকাল মিফতার অভাব বোধ করছে ঘন ঘন৷ চড়ুই পাখির মত আর কিচিরমিচির শোনা যায় না এ গৃহে মিফতার৷

মানসিক শান্তির জন্য মাকে প্রয়োজন অনেক৷ মা বাবার কক্ষে গিয়েও বাবা মা কে পেলো না৷ সে নিশ্চিত বাবা মা নিজেদের মত সময় কাটাতে বেরিয়েছে৷ কক্ষ থেকে বের হতেই ধাক্কা খেলো কারো সাথে৷
কারো মাথা ঠেকলো তার বক্ষে সে মানবীটি ‘আহ’ করে উঠলো ক্ষানিকটা৷ এ পেয়েটা অবাদ্ধ পাষাণ জানতো কিন্তু ছটফটা তা আগে জানা ছিলো না তো৷ দেখে চলবে না মেয়েটা?
“দেখে চলবেন তো রাজকুমার৷ ”
মেয়েটির এহেন কথায় ভরকালো শ্রেয়াস মেয়েটা তাকে দেখে চলতে বলছে? তা ছাড়া আর এই মেয়ের কাছে কি শুনতে পারবে?
হঠাৎ চন্দ্রিকার দিকে পূর্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করতে চমকে গর্দানের দিকে তাকালো৷ চন্দ্রিকার গলায়ও সাদা ব্যান্ডেজ৷
কৌতুহল নিয়ে প্রশ্ন করেই বসলো শ্রেয়াস,
“মেয়ে আপনার গর্দানে কি হয়েছে?”
চন্দ্রিকা উরনা দিয়ে ঠিক মত ঢাকলো এবারো কথাটি এড়িয়ে গেলো উত্তর না দিয়ে হাটা দিলো চন্দ্রিকা৷
এবার শ্রেয়াসের রাগ হলো মেয়েটা এমন কেন? উত্তর দেয় না কেন? এত হেয়ালিপানা পছন্দ না শ্রেয়াসের৷ চন্দ্রিকার হাত চেপে বলে,
“মেয়ে আপনার সাহস দেখে হতবাক আমি৷ আমাকে এড়িয়ে যাচ্ছেন? উত্তর দিচ্ছেন না কেন কথার?”
চন্দ্রিকা এভাবেও স্বাভাবিক ভাবে হাত ছাড়াতে ছাড়াতে বলে,
“ছাড়ুন রাজকুমার ব্যাথা পাচ্ছি আমি৷”
“উত্তর দিন আমার প্রশ্নের৷”
রাগী কন্ঠে বললো শ্রেয়াস৷ তার প্রেক্ষিতে চন্দ্রিকা বলে,
“আমি কাউকে জবাবদিহি করতে বাধ্য নই৷ ”
চন্দ্রিকার কথায় তপ্ত শ্বাস টানলো শ্রেয়াস৷ আর প্রশ্ন করলো না এ মেয়েকে প্রশ্ন করে লাব নেই উত্তর দিবে না৷ শুধুই সময় নষ্ট৷ চন্দ্রিকার হাতে থাকা পাখির খাঁচার পাখি গুলো ‘চন্দ্র চন্দ্র ‘ করছে৷ বিরক্ত হলো এবারো প্রতিবারের মত এ পাখি গুলো শ্রেয়াসে পছন্দ না একটুও৷ পাখি দুটো বড্ড বাচাল৷ সারা দিন কিচিরমিচির করতেই থাকে৷ শ্রেয়াসের ইচ্ছে করে পাখি গুলো কে উরিয়ে দিতে কিন্তু এ পাখি গুলো এ মেয়ের মতই অবাধ্য৷

শ্রেয়াসে কি হলো কে জানে কিছু না বলে হাত ধরে টানতে টানতে নিজের কক্ষে আনলো চন্দ্রিকাকে৷ চন্দ্রিকা প্রশ্ন সূচক কন্ঠে বলে,
“এখানে আনলেন কেন?”
এবারো উত্তর দিলো না৷ দিবে না এ মেয়ের কথার উত্তর৷ সে তো দেয় না ও দিবে কেন? ও মেয়ে অবাধ্য হতে পারে ক্ষানিকটা অবাধ্য পানা না হয় সে ও করলো?
পাখির খাঁচাটা কাঁচের ছোট্ট টেবিলটার উপর রেখে চন্দ্রিকার হাত ধরে বিছানার এক কোণে বসালো চন্দ্রিকাকে৷ অতঃপর শুভ্র সাদা পাঞ্জাবির হাতা খানা উপরে তুলে চন্দ্রিকার পায়ে মাথা রেখে সটান হয়ে শুয়ে রইলো৷
তা দেখে চন্দ্রিকা থমকালো, চমকালো, ক্ষানিকটা ভরকালো৷ অতঃপর হুস ফিরতে হাসফাস করতে করতে চন্দ্রিকা বলে,
“হায় আল্লাহ কি করছেন?”
বলে উঠতে নিলেই শ্রেয়াস চন্দ্রিকার হাত খানা নিজের মাথায় চেপে ধরে শান্ত কন্ঠে বলে,
“উঠবেন না চন্দ্রিকা চুল গুলো টেনে দিন৷ ক্ষানিকটা শান্তি দরকার আমার মানসিক শান্তি৷ আপিনাকে প্রয়োজন এখন আমার৷”
শ্রেয়াসে অকুল আবদারে চন্দ্রিকা নামক পাষাণ মেয়েটা শীতল হয়ে গেলো, গললো ক্ষানিকটা৷ উঠলো না মিনমিনিয়ে বললো,
“আমার মায়ার পরবেন না রাজকুমার৷ এ মায়া জ্বাল তীব্র৷ ”
বলেই সে রাতের মত রহস্যময় হাসলো৷
শ্রেয়াস একই ভাবে উত্তর দিলো,
“রহস্যময়ীর মায়া জ্বাল যতই তীব্র হোক সে মায়াজালে নিজেকে হারাতে রাজি চন্দ্রাবতী৷ ”
অতঃপর থেমে গেলো দুজনই নিস্থব্দতা সঙ্গি হলো দুজনেরই শব্দ ভান্ডার ফুরালো পিনপতন নিরবতায় ঘিরে দরলো৷ ঠিক তখনই নিরবতা ভেঙে কড়া নাড়লো কেউ৷
শ্রেয়াস ক্ষানিকটা বিরক্ত হলো বিরক্তের রেশ মুখশ্রীতে ফুটলো চন্দ্রিকারো হাসফাস বাড়লো৷ শ্রেয়াস বিরক্ত কন্ঠে প্রশ্ন ছুড়লো,
“কে? কি প্রয়োজন? ”
ওপাশ থেকে রাজ প্রহরীর কন্ঠ ভেসে এলো,
“জনাব আমি৷ কনস্টেবল রফিক এসেছে কমিশনার আশরিফ গায়েব কাল রাত থেকে৷ পাওয়া যাচ্ছে না তাকে৷ তার বাড়ির বাইরে বড় একটা তালা ঝুলছে৷”

চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here