কৌমুদিনী পর্ব-১৪

0
1812

#কৌমুদিনী
#তাফসিয়া মেঘলা
#পর্ব ১৪

২৭
আহসান মীরের সকালের শুরুটা সুন্দর ভাবে হলেও মহলে ফিরে খা’রা’প একটা খবর শুনে মনে হলো আজ দিনটাই খা’রা’প যাবে৷
মাথায় হাজার প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে তার৷
আচ্ছা আশরিফ পালালো কেন? আশরিফ কি শাহনেওয়াজ আর ইকবাল কে খু’ন করেছে? তা না হলে পা’লা’বে কেন? ইকবালের লা’শ পাওয়ার পর থেকেই আশরিফ কে ওমন দেখেছে আসহান মীর৷ কিছু নিয়ে চিন্তিত থাকতো,শাহনেওয়াজ এর নাম শুনলেই রে’গে যেতো৷ শাহনেওয়াজ কে নিয়ে কটু কথাও বলতো৷
হঠাৎ মনে হলো তার আশরিফ শাহনেওয়াজ এর লা’শে’র সামনে দাঁড়িয়ে শাহনেওয়াজ এর কোন কুকীর্তির কথা বলছিলো৷ শাহনেওয়াজ এমন কি করেছিলো যে বলছিলো আশরিফ? আশরিফ কি জানতো শাহনেওয়াজ এর ব্যপারে? ওনার জানা মতে শাহনেওয়াজ বেশ ভালো ছিলো৷ শ্রেয়াসের ভালো বন্ধু ছিলো সেই সুবাদে জমিদার বাড়িতে আসা যাওয়া লেগেই থাকতো শাহনেওয়াজ এর স্বভাব সম্পর্কে সেই থেকেই জানা৷ আশরিফ কি কিছু না জেনেই ওমন মন গড়ানো কথা বলবে?আশরিফ কে না পাওয়া গেলেতো জানাও যাবে না৷ আশরিফের সাথে কি কোন অন্যায় কাজ করেছে?
আশরিফ সে রাগ থেকেই শাহনেওয়াজ কে মে’রে’ছে? সে দিন শাহনেওয়াজ এর লা’শ দেখে আশরিফ কেমন অপ্রস্তুত হয়ে পরেছিলো বার বার ঘাম মুছছিলো, থতমত হয়ে ছিলো৷ এ ও বলেছিলো,
” যে মেরেছে বেশ করেছে পাপের শাস্তি পেয়েছে৷”
কথার ধরণে কেমন এক বার মনে হয় না খু’ন করেছে আবার মনে হয় না করেনি৷ শাহনেওয়াজ মা’রা যাওয়ায় সে খুশি ছিলো৷ ত’দ’ন্ত করতে রাজি হচ্ছিলো না তারপরের দিন কি এমন হলো যে পা’লা’লো? পা’লা’নোর কারণটা বেশি স’ন্দে’হ জনক৷
তার শুরু থেকে আশরিফের ভাব ভঙ্গি দেখে কিছুটা সন্দেহ হয়েছিলো৷ কিন্তু তা যদি প্রাধান্য দিতো তাহলে আজ হয়তো আশরিফ পা’লা’তো না?
কোথায় যেতে পারে আশরিফ? যেখানেই যাক খুঁজে বের করবেই আহসান মীর৷
আস্তে আস্তে সব কেমন অদ্ভুত হয়ে যাচ্ছে একের পর এক অদ্ভুত ঘটনা ঘটেই চলছে সে কিছুই করতে পারছে না৷ রাজনীতি আজকাল বেশ ক’ঠি’ন হয়ে দাঁড়িয়েছে তার কাছে৷ এমন হতে থাকলে ভরসা করবে না আর মানুষ তার উপর৷ আর মানুষের নিরাপত্তারো একটা ব্যাপার রয়েছে৷
কিন্তু সেই বা কি করবে? এতো কিছুর মাঝে মেয়েটার জন্য ভাবতে পারে না৷
এসবের সুত্র পাত কেন যেন মনে হচ্ছে মিফতার মা’রা যাওয়ার পর থেকে৷ প্রথম রাফসানের মৃ’ত্যু সুস্থ হওয়ার পরো রাফসানের মৃ’ত্যু হলো৷ না শাহনেওয়াজ তো বললো খু’ন অতঃপর সে মৃ’ত্যু’র তদন্ত করতে গিয়েই ইকবালের খু’ন তারপর শাহনেওয়াজ এর খু’ন কঠিন ভাবে৷
রাফসানের মৃ’ত্যু খু’ন কেন মনে হয়েছিলো শাহনেওয়াজ এর? সে কি কিছু জানতো? রাফসান কে নিয়েই কি সূত্রপাত? রাফসান কে বা কে মা’র’বে? আর কেন? আর কিভাবেই বা হলো খু’ন ভরা হসপিটালে কে মা’র’বে?
সে স্বাস্থ্য কেন্দ্রে সে দিন সারা রাত দেহরক্ষী, পুলিশ সহ গমগমে পরিবেশ ছিলো তা ছাড়া ডাক্তার নার্স এর যাওয়া আসা চলছিলো৷
মিফতার ঘটনার পর কিছুক্ষণ শুধু মিফতার কাছে প্রায় অনেকেই কিন্তু রাফসানের মৃ’ত্যু তো হয় শেষ রাতে৷
নতুন এস আই আয়াশ এর কথায় ভাবনার সুতো কাঁ’টে আহসান মীরের,
“জনাব আমরা কি আশরিফ এর বাড়িতে ঢুকে ত’ল্লা’শি চালিয়ে দেখবো কোনো প্রমান পাওয়া যায় কি না? যদি কিছু জানতে পারি? আপনি আদেশ দিলে ত’ল্লা’শি চালাবো আমরা৷”
আহসান মীর সম্মতি জানিয়ে বলে,
“সেখানেই কিছু পাওয়া গেলে যেতেও পারে৷ ”
আয়াশ আদেশ পাওয়ার সাথে সাথেই বেরিয়ে পরে৷ আয়াশ নামক ছেলেটা বেশ কাজের এখানে বদলি হয়ে আসার পর থেকেই দেখছে তার আগের কাজের সব কথা শুনেছে আহসান মীর৷
শাহনেওয়াজ ও এমনই ছিলো কাজের প্রতি বেশ পারদর্শী কিন্তু কার এমন কি ক্ষতি করলো যে খু’নই করে দিলো৷
আশরিফ কে সরাসরি খু’নি বলাও যাচ্ছে না প্রমান পর্যন্ত আবার ভালো ও বলা যাচ্ছে না যেহেতু প্রমাণ নেই কিছুই বলা যাচ্ছে না৷
সব কেমন জটিল হয়ে যাচ্ছে দিন দিন৷ তারাও নিরাপদ নেই সে দিন শ্রেয়াসের আক্রমণ এর ব্যাপার টা শ্রেয়াস কাউকে ভাবতে না বললেও সে বাবা হয়ে এ ব্যাপার এড়িয়ে যেতে পারছে না৷
সে যেমন এখানের জমিদার, তেমন দিন শেষে একজন বাবাও৷ যে এসব করছে তার উদ্দেশ্য কি? এমন করার কারণ কি? কি চাইছে সে? যেই হোক তার পরিনাম যে মোটেও ভালো না৷ কত দিনই বা আঁ’ড়া’লে থাকতে পারবে সে? খুব শীঘ্রই ধরবে তাকে৷

২৮

আজ অম্বরটা নিকষ কালো৷ সেই সকাল থেকে মেঘ করে আছে বৃষ্টি হওয়ার খবর নেই৷ সন্ধ্যে হয়ে গেলো তবুও বৃষ্টি আসবে বলেও আসছে না৷
চৈত্র মাসের শেষ সপ্তাহ চলছে মেঘ গুলো জমছে কাল বৈশাখী হয়ে তান্ডব করবে বলে৷
চন্দ্রিকা পুকুর পারে বসে আছে৷ এটাই আজকাল সময় কাটানোর জায়গা হয়ে গেছে বেশি সময়ই এখানে থাকে আজ কাল মহলে যেতে তার ইচ্ছা করে না৷
ফারহান সবে বাড়িতে প্রবেশ করবে কিন্তু এর আগেই চন্দ্রিকা কে একা পুকুর পারে পেয়ে যেন চাঁদ হাতে পেলো৷ আজ কাল তার চন্দ্রকে ছাড়া চলেই না৷ বাড়িতে না প্রবেশ করেই পুকুর পারে এলো ফারহান৷
উচু ইটের কাউচের উপর বসে কিছুর ভাবনায় মত্ত্ব তখন ফারহান এসে পাশ ঘেঁষে বসলো৷
তখনই ধ্যান ভাঙলো চন্দ্রিকা ভ্রু কুচকে তাকালো ফারহানের দিকে৷
অতঃপর প্রশ্ন ছুড়লো,
” আপনি এখানে কেন?”
“তোর সঙ্গ দিতে৷”
ফারহানের উত্তরে চন্দ্রিকা বিরক্ত নিয়ে বলে,
“প্রয়োজন নেই আপনার সঙ্গ আমার৷”
ফারহান আজ রাগলো না৷ এ মেয়ে তার মতই যে সে যানে যতই হোক চাচাতো বোন তো৷
ফারহান স্বভাব সুলভ কন্ঠে উত্তর দিলো,
“তোকে যে আমার প্রয়োজন৷ ”

চন্দ্রিকা এবার রেগে গেলো কিছু দিন ধরে ফারহানের স্বভাব গতি মোটেও ওর ভালো লাগছে না৷ একদন মানুষের এত রুপ কি করে? ও তো স্পষ্ট বুঝতো মিফতাকে পছন্দ করতো তাহলে ওর সাথে এমন করছে কেন? তাহলে কি মিফতাকে পছন্দ করতো না?
আর আগেই বা ওমন খারাপ ব্যাবহার করতো কেন?
চন্দ্রিকা দাতে দাত চেপে বলে,
“আপনার হাভ ভাব বুঝতে পারছি না আমি কি চাইছেন আপনি বলুন তো?”
ফারহান উত্তর দিলো না এ কথার কথা ঘুরালো বাঁকা হেসে প্রশ্ন ছুড়লো,
“তোর ঘাড়ে গলায় হাতে কি হয়েছে চন্দ্র?”
ফারহানের প্রশ্নে থতমত খেলো কেমন চন্দ্রিকা, কেমন বিমূঢ় হয়ে রইলো৷ চন্দ্রিকা আমতা আমতা করে বলে,
“কিছু না৷ এখান থেকে জান একা থাকতে দিন আমায়৷”
চন্দ্রিকার কথায় ফারহান ঠোঁট এলিয়ে হাসলো৷ বাঁকা হাসি সে যেন পৈচাশিক আনন্দ পেলো মেয়েটাকে জ্বালাতে মন্দ লাগে না৷ ওর মত সাহসী মেয়েকে এমন চুপসে থাকতে দেখে মন্দ লাগে না৷ ঠিকঠাক হয়ে বসে ধাতস্থ হয়ে অতঃপর ফের প্রশ্ন ছুড়লো ,
“উত্তর দিচ্ছিস না যে? এমন কিছু হয়েছে কি যা,,,৷ ”
ফারহান শেষ করার আগেই চন্দ্রিকা ক্রুদ্ধ কন্ঠে বলে,
” আমার ব্যাপারে বেশি কিছু জানতে আসবেন না ভালো হবে না আপনার জন্য৷”
ফারহান হেসে বলে,
“বাহ গলার জোর বেরে গেলো নাকি?”
চন্দ্রিকা হঠাৎ কি হলো কে জানে সে ও ঠোঁট কোনে বাকা হাসির রেশ ফুটিয়ে তুললো অতঃপর ফারহান কে চমকে দিয়ে বললো,
“আপনি তো মিফতাকে ভালোবাসেন ফারহান ভাই তাহলে আমাকে ভালোবাসি ভালোবাসি বলার মানে কি?”
দমে গেলো কেমন ফারহান৷ চন্দ্রিকার কথায় হাসি হাসি চেহারাটা আধার নেমে এলো ফারহানের রেগে গেলো নিমেষে৷ রাগে দাতে দাত পিষলো৷ দু বার কেমন অদ্ভুত কন্ঠে আওরালো ‘মিফতা, মিফতা’ চন্দ্রিকা আবার জিগ্যেস করলো,
“উত্তর দিচ্ছেন না যে তার মানে,,,৷ ”
চন্দ্রিকা শেষ করার আগেই ফারহান ক্রুদ্ধ কন্ঠে বলে,
“মিফতাকে ভালো বাসি না আমি তোকে বাসি বললাম তো তোকে ভালোবাসি৷ ”
চন্দ্রিকা বাঁকা হেসে বললো,
“মিফতা নেই বলে আমার থেকে সুযোগ নিচ্ছেন? মিফতাকে ভালোবাসেন আমি জানি৷ তাহলে আমাকে ভালোবাসি বলার কারণ কি ফারহান ভাই? ”
ফারহান রেগে চন্দ্রিকাকে ছিঁটকে ফেলে চন্দ্রিকার আ’হ’ত গলা হাত দিয়ে চেপে ধরলো তাতে চন্দ্রিকা তটস্থ হলো ছটফট করতে থাকলো নিজেকে বাঁ’চা’নোর তীব্র চেষ্টা চালালো এর আগেই ঘাড় থেকে তরল র’ক্ত বেরিয়ে ভিজে হয়ে আসলো৷ অতঃপর ছটফট বন্ধ হয়ে এলো নিভু নিভু হলো নেত্র পল্লব আসার হয়ে এলো দেহ চোখ বন্ধ করার আগেই ফারহানের কন্ঠে পেলো,
” ভালোবাসি আমি তোকে সুযোগ না ভালোবাসি আমি৷ কারণ আমার মিফতা ভালোবাসে তোকে মিফতা নেই না মিফতা আছে মিফতা আছে৷”

চলবে,

[রিচেক হয়নি অনেক ক্লান্ত পরিক্ষা দিয়ে এসে]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here