কৌমুদিনী পর্ব-১৭

0
1670

#কৌমুদিনী
#তাফসিয়া মেঘলা
#পর্ব ১৭

৩৩
শ্রেয়াস হতভম্ব হয়ে দাড়িয়েই রইলো সেখানে৷ কি হলো এটা? ওকে ধা’ক্কা দিয়ে মেয়েটার আবার কি হলো? ধা’ক্কা মারলো ওকে আর জ্ঞান হারালো এ নিজে? কি সাংঘাতিক ঘটনা৷ মেয়েটার মত সব কিছু কেমন অদ্ভুত অদ্ভুত ঘটছে৷ কবে যেন ও নিজেই অদ্ভুত হয়ে যায়৷
শ্রেয়াস ধাতস্থ হয়ে আকড়ে ধরলো চন্দ্রিকাকে৷ মেয়েটাকে ধরতেই অন্তঃকরণে হঠাৎ এক অদ্ভুত অনুভূতি আষ্টেপৃষ্টে ধরলো শ্রেয়াস কে কিন্তু এ কেমন অনুভূতি?

পাত্তা দিলো না নিজের এমন অদ্ভুত অনুভূতির মেয়টাকে পাজ কোলে তুলে নিলো৷ তখনি প্রিয়ম আর দুই জন দেহরক্ষী এসে হাজির হলো৷ শ্রেয়াসের কোলে চন্দ্রিকা কে দেখে সবাই থতমত খেলো ভরকালো৷ শ্রেয়াস একবার তাদের দিকে বিরক্ত নিয়ে তাকালো এমন ভাবে তাকিয়ে থাকার কারণ কি? পরক্ষণে নিজেই নিজের কাজের কথা মাথায় আসতে ভরকালো আজকাল ও কি করে না করে ওর নিজেরো বোধগম্য হয় না৷ মেয়েটার পাল্লায় পরে অদ্ভুত হচ্ছে নিজেও?
একজন দেহরক্ষী চন্দ্রিকার দিকে কেমন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে যা পছন্দ হলো না শ্রেয়াসের দাতে দাত চেপে বললো,
“দৃষ্টি নামাও৷ ”
যাকে বলেছে সে বুঝলো কিন্তু প্রিয়ম আর এক জন বুঝলো না৷
পরিস্থিতি সচল করার জন্য কাঠ কাঠ কন্ঠে বলে,
” এদের আমার চোখের সামনে থেকে যেতে বলো প্রিয়ম৷ এমন দাঁড়িয়ে আছো কেন?”
আদেশ পাওয়ার পরই চলে যেতে নিলেই শ্রেয়াস প্রিয়ম কে থামিয়ে দিয়ে বলে,
” তুমি কোথায় যাচ্ছো? তুমি আমার সাথে এসো৷”

প্রিয়ম থামলো দেহরক্ষী গুলো চলে গেলো৷ শ্রেয়াস হাটা দিলো চন্দ্রিকার বাড়ির অন্দরের দিকে৷
চন্দ্রিকাকে নিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করতেই চন্দ্রিকার মা রসুই ঘর থেকে দৌড়ে এসে অবাক কন্ঠে বলে,
” হায় আল্লাহ জনাব আপনি? আর চন্দ্র চন্দ্রের কি হয়েছে? ওকে তো আমি ঘরে আ’টকে রেখে এসেছিলাম৷ নিচে এলো কি করে আর কি হলো?”

শ্রেয়াস বিরক্ত হলো মহিলার এতো প্রশ্নে তবুও উত্তর না নিয়ে অন্দরে ঢুকে খাবার ঘরের সামনে ছোট্ট চৌকির উপরে চন্দ্রিকাকে শুইয়ে দিলো৷
চন্দ্রের মা নিজেও এগিয়ে এলো সে ফের প্রশ্ন করার জন্য মুখ খুলবে এর আগেই শ্রেয়াস গম্ভীর কন্ঠে বলে,
“আ’টকিয়ে রেখেছিলেন মানে?”

চন্দ্রিকার মা পরলো বিপাকে৷ কি উত্তর দিবে এখন? ফারহান বার বার বলেছে বাড়ির ঘটনা জমিদার বাড়ির কারো কানে গেলে তাকে ছাড়বে না৷ ফারহানের কথা অমান্য করলে কপালে দুঃখ আছে তাই আমতা আমতা করে বলে,
” ও ব বরাবরই এ একটু চঞ্চল আর এক রুখে মেয়ে কারো কথা শুনে না অসুস্থ অবস্থায় ও বাইরে যাচ্ছিলো না পেরে আটকিয়ে র রেখেছিলাম৷”
শ্রেয়াসের ভ্রু কুঁচকে এলো৷ চন্দ্রিকার মায়ের মুখ দেখে তার সন্দেহ হলো৷ মনে তো হচ্ছে না সত্য কথা বলছে৷ কিন্তু মিথ্যেই বা বলবে কেন? হতেও তো পারে? এ মেয়ে যা ধরিবাজ কিন্তু একে আটকে রাখা মুশকিল দরজা দিয়ে ভেরোতে পারেনি তাই অলিন্দ দিয়ে লাফিয়ে নেমেছে কি সাংঘাতিক মেয়ে৷
শ্রেয়াস একবার অচেতন চন্দ্রিকার দিকে তাকালো অতঃপর বললো,
” এর পর থেকে আটকে রাখলে অলিন্দের দরজাটাও লাগিয়ে রাখবেন৷ নয়তো কোনো কাজ হবে না ব্যাঙের মত অলিন্দ টপকে নিচে নামবে৷ সাংঘাতিক মেয়েছেলে৷শেষের কথা গুলো বিরবিরিয়ে বললো শ্রেয়াস৷ ”ব্যাঙ’ উপাধি পেয়ে ও মেয়ে ঠিক থাকলে হয়তো তেঁতে উঠতো?

হঠাৎ শ্রেয়াসের মাথায় এলো, চন্দ্রিকা এমন আ’ঘাত পেয়েছে কোথ্যেকে? আঁড়চোখে একবার চন্দ্রিকার দিকে তাকালো শ্রেয়াস গলার দিকে তাকাতেই আঁতকে উঠলো কিছুটা গলার ব্যা’ন্ডে’জটা লাল হয়ে আছে র’ক্ত পরছে৷ তৎক্ষনাত চন্দ্রিকার পাশে বসে প্রিয়ম কে উদ্দেশ্য করে বলে,
” প্রিয়ম ফার্স্ট এইড বক্স নিয়ে এসো তাড়াতাড়ি৷ ”
প্রিয়ম যেতে নিয়েও থেমে গেলো অতঃপর বললো,
“ফার্স্ট এইড বক্স কেন জনাব? ডাক্তার ফারহান কে খবর দেই সে না হয়?”
চন্দ্রিকার মা ঘা’বড়ে গেলো মেয়েক দেখে হায় আল্লাহ আবার র’ক্ত পরছে৷
আর আবার ফারহান কে খবর দিবে? ফারহান জানলে রক্ষে নেই এ মেয়ে নিশ্চয়ই অলিন্দ নিয়ে নামার চেষ্টা করেছিলো?
চন্দ্রিকার মা ভীতি নিয়ে মিনমিনিয়ে বললো,
“ফারহান কে খবর দিবেন না জনাব৷ ”
কিন্তু এ কথা কর্ণপাত হলো না শ্রেয়াসের৷ প্রিয়মের কথায় শ্রেয়াস রে’গে দাতে দাত চেপে বলে,
” ফার্স্ট এইড বক্স এনে দিতে বলেছি৷ ফারহান কে খবর দিতে না চন্দ্রাবতী কে কেউ ছোঁবে না৷ ”
শেষের কথা খানা আস্তেই বললো শ্রেয়াস৷ প্রিয়ম ফের থতমত খেলো অতঃপর প্রাথমিক চিকিৎসার বাক্সখানা আনতে ছুটলো মহলের দিকে৷
শ্রেয়াস চন্দ্রিকার ব্যা’ন্ডে’জ দেখতে ব্যাস্ত তখন৷ কিসের আ’ঘাত যে এখনো র’ক্ত ক্ষরণ হচ্ছে?
শ্রেয়াস কৌতুহলতা নিয়ে গম্ভীর কন্ঠে এবার প্রশ্ন করেই বসলো,
“কি করে পেলো এ আ’ঘাত? আর কিসের আ’ঘাত এটা? দু দিন যাবত দেখছি কিন্তু এটা এখনো শুকায়নি?”
বলে ব্যা’ন্ডে’জ খোলার চেষ্টা করলো৷ চন্দ্রিকার মা ফের মিনমিনিয়ে বলে,
“জানি না, জানি না আমি কিচ্ছু জানি না৷ ”
বলে মেয়ের পায়ের কাছে বসে পরলো৷ শ্রেয়াস মহিলার ভাবভঙ্গি বুঝলো না৷ চন্দ্রিকার সাথে সাথে এ বাড়ির সবার চরিত্র কেমন রহস্যময় মনে হলো৷ হঠাৎ ঠোঁট বাঁ’কিয়ে হাসলো শ্রেয়াস৷ সে রহস্য প্রিয় জীবনে একটু আধতু এমন রহস্য থাকতে হয়ই৷

৩৪
সকালে খাবার খেয়ে ঘুমিয়েছিলো মারজিয়া বেগম৷ সে বরাবরই ঘুম প্রিয় ঘুমে ব্যাঘাত ঘটকে আপন মানুষকেও ছেড়ে কথা বলে না৷ গভীর মিষ্টি ঘুমে যখন আচ্ছন্ন সে হঠাৎই কারো কন্ঠে কানে এলো৷
ঘুমের মাঝেই নাক মুখ কুঁচকে এলো বিরক্তিতে৷ সে অবস্থাতেই কয়েকটা অকথ্য ভাষায় গালি দিলো চন্দ্রিকার মা কে৷ বাড়িতে মা মে ছাড়া আর কেউ নেই ঘুম কে ভা’ঙাবে? কিন্তু হঠাৎই পুরুষালি কন্ঠ পেয়ে উঠলো বিরক্ত নিয়ে ফারহান হলে আজ ওকেও বকবে আচ্ছামত কিন্তু না ফারহানের কন্ঠ না৷ শ্রেয়াসের কন্ঠ পেয়ে ধরফরিয়ে বিছানা ছেড়ে নামলো৷ রাজকুমার রৌজাফ শ্রেয়াস এসেছে? কেন? নালিশ করলো নাকি মা মেয়েতে মিলে? তার ভয়ে আত্মা শুকিয়ে এলো৷ আজকাল এমনি তার কেন যেন মনে হয় চন্দ্রিকার উপর রাজকুমারের নজর পরেছে আজ আবার বাড়িতে এনে নালিশ করে বসলো নাকি তার ছেলের নামে? তাহলে নিশ্চিত আজ মহলের গুম ঘরে নিয়ে ছেলেকে গুম করে দিবে৷ না তার ছেলেকে বাঁ’চা’তে হবে৷
তারাতারি বৈঠক খানা পেরিয়ে রসুই ঘরের সামনে খাবার ঘরে আসতেই চন্দ্রিকাকে চৌকিতে দেখতে পেলো৷ এ মেয়ের আবার কি হলো? নিশ্চই ঢং করছে রাজকুমার কে দেখে?
কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করলো না যা বুঝলো ছেলের নামে নালিশ করেনি৷ কিন্তু এই মেয়ের ঢং তার সহ্য হচ্ছে না তাই বলেই বসলো,
” রাজকুমার আপনি এই মেয়ে ঢংয়ে বিশ্বাস করবেন না ওর কিছু হয়নি আপনাকে দেখে এমন জ্ঞান হারিয়েছে৷ অসভ্য মেয়ে৷ ছেলে দেখলে হুস থাকে না৷ ”
বলে শ্রেয়াসের দিকে পূর্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করতেই দেখে শ্রেয়াস রোষক্ত নয়নে তাকিয়ে আছে৷
শ্রেয়াস রা’গ নিয়েই দাতে দাত চেপে শান্ত কন্ঠে বললো,
” মুখ সামলে কথা বলুন৷
আর আপনি আমার চোখের সামনে থেকে যান নয়তো খারাপ হয়ে যাবে৷ আপনি আমার বড় আপনি নিশ্চই চাননা এমন কিছু করি যাতে আপনার অসম্মান হবে?”

শ্রেয়াসের শান্ত কন্ঠে শক্ত কথায় দমে গেলো মারজিয়া বেগম সরে গেলো এখান থেকে৷ প্রিয়ম এলো শ্রেয়াস ব্যা’ন্ডে’জ খুলবে এর আগেই কেউ বিস্মিত কন্ঠে বলে,
” কি হয়েছে চন্দ্রের?”

ফারহান কে দেখে পাত্তা না দিয়ে শ্রেয়াস ফের ব্যা’ন্ডেজে হাত দিলো৷ যা দেখে ফারহানের রাগ হলো৷ শ্রেয়াস কেন ছুঁয়ে দিচ্ছে তার চন্দ্র কে? চন্দ্রকে ছোঁয়ার অধিকার শুধু ওর৷ রগে গিজগিজ করে উঠলো শরীর৷ কিন্তু ভুল জায়গায় রাগ দেখালে চলবে না শান্ত করলো নিজেকে উত্তপ্ত নিশ্বাস টানলো৷ অতঃপর শান্ত হয়ে এগিয়ে গিয়ে ধাতস্থ কন্ঠে বললো,
” কি হয়েছে ওর? এমন টা কি করে হলো? আমি তো রাতেই ব্যা’ন্ডে’জ করে দিয়ে ছিলাম৷ ”
শ্রেয়াস রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো অতঃপর বললো,
“একজন অসুস্থ মানুষের খেয়াল রাখতে পারেন না আপনারা? আ’টকে রেখেছিলেন তাই অলিন্দ দিয়ে লাফিয়ে নেমেছে৷ আর আ’ঘাত লাগলো কি করে? কিসের আ’ঘাত এটা?”
শ্রেয়াসের প্রশ্নে কেমন যেন চমকালো ফারহান৷ মুখভঙ্গি পালটে গেলো৷ কি উত্তর দিবে তা শব্দ ভান্ডার খুঁজেও পেলো না কোনো শব্দ৷
ফারহানের এমন মুখশ্রী খানা শ্রেয়াসের চোখ এড়ালো না৷ ফারহান উত্তর না দিয়ে এগিয়ে গিয়ে বলে,
” আমি করে দিচ্ছি ওর ব্যা’ন্ডেজ জনাব৷ ”
বলে প্রাথমিক চিকিৎসার বক্সটা খুলবে ঠিক তখনই
শ্রেয়াসের কি হলো কে যানে? সে ক্রুদ্ধ কন্ঠে বলে,
” ছোঁবেন না চন্দ্রাবতী কে৷”
চন্দ্রিকার মা ভয়ের সাথে থমকালো৷ কি হচ্ছে এখানে সব তার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে৷ শ্রেয়াস এমন করছে কেন?হায় আল্লাহ ফারহানের রাগ বারলে মেয়েটাকে আবার অত্যা’চার করবে৷
ফারহানের রাগ বারলো সে কিছু বলবে এর আগেই প্রিয়ম কে ইশারা করলো শ্রেয়াস৷ প্রিয়ম এসে বাধা দিলো৷ পথ আটকে ধরলো,
শ্রেয়াস নিজেই ব্যা’ন্ডে’জ খোলায় ব্যাস্ত হয়ে পরলো৷ ফারহান আর নিজেকে ঠিক রাখিতে পারছে না তার মুখে অদ্ভুত আ’তংক থাকলেও তার মাথায় ঘুরছে শুধু ‘তার চন্দ্রকে অন্য কেউ স্পর্শ করছে৷’ রাগে শরীর ‘রি রি’ করছে৷
শ্রেয়াস ততক্ষণে ব্যা’ন্ডেজ অর্ধেক খুলে ফেলেছে৷ ফারহান রাগে প্রিয়ম কে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো প্রিয়ম ছি’টকে দূরে গিয়ে পরলো৷ মারজিয়া বেগম ছেলের কন্ঠ পেয়ে এসেছিলো মারজিয়া বেগম আর চন্দ্রেয় মা হতবম্ভ হয়ে দাঁড়িয়েই আছে৷
হঠাৎ শ্রেয়াস বিস্মিত কন্ঠে বলে,
“গুলির চিহ্ন?”

চলবে,

[ সিট বেল্ট বেধে ঠিকঠাক হয়ে বসুন যে কোনো দিন যেকোনো ধামাকা হতে পারে৷ রহস্য খুলবে ধামাকা বাড়বে৷ বাই দ্যা রাস্তা চন্দ্রের কথা চিন্তা করে মাথা অর্ধ পাগল করবেন না আমি নিজেও জানিনা কি হচ্ছে৷ 🥱
নোটঃ ১৩০০ শব্দ ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here