#কৌমুদিনী
#তাফসিয়া মেঘলা
#পার্টঃ১৮
৩৬
শ্রেয়াস ততক্ষণে ব্যা’ন্ডেজ অর্ধেক খুলে ফেলেছে৷ ফারহান রাগে প্রিয়ম কে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো প্রিয়ম ছিটকে দূরে গিয়ে পরলো৷ প্রিয়ম হতভম্ব হয়ে রইলো ধাক্কা দিলো কেন? রাগ হলো কিছু বললো না আপাদত একে তো পরে দেখে নিবে৷ মারজিয়া বেগম ছেলের কন্ঠ পেয়ে এসেছিলো মারজিয়া বেগম আর চন্দ্রেয় মা হতবম্ভ হয়ে দাঁড়িয়েই আছে৷
হঠাৎ শ্রেয়াস বিস্মিত কন্ঠে বলে,
“গু’লির চিহ্ন?”
শ্রেয়াসের কথায় বিস্ময় চোখে সবাই তাকালো চন্দ্রিকার উন্মুক্ত ঘাড়ের দিকে৷ ঘাড়ের একে বারের শেষ প্রান্তে একটা চিহ্ন৷ সবাই বিস্মিত হলেও ফারহান ধাতস্থ হয়ে আছে৷ সবার চোখ তা না ধরতে পারলেও, শ্রেয়াস লক্ষ করেছে৷ এ চিহ্ন দেখে ফারহান অবাক, বা বিস্মিত হয়নি৷
শ্রেয়াস হাত দিয়ে ক্ষ’তটা দেখলো গু’লিটা পাশ ঘেঁষে গেছে বোঝাই যাচ্ছে৷ তাই বেশি ক্ষ’ত না কিন্তু ভাবনার বিষয় হলো চন্দ্রিকার গায়ে কোথ্যেকে গু’লি লাগবে?
হঠাৎই শ্রেয়াসের সে রাতের কথা মনে পরলো মেয়েটা সন্ধ্যে অবদি ঠিক ছিলো৷ অত রাতে কোথ্যেকে এসেছিলো চন্দ্রিকা? আর সে দিন ওই রহস্যময় হাসির মানে কি? এই মেয়ে এ ক্ষ’ত নিয়ে এতো দিন ঘুরছিলো? কি সাংঘাতিক৷
মেয়েটা সত্যি রহস্যময়ী!
কিন্তু গু’লি লাগলো কি করে এটাই শ্রেয়াসের মাথায় ঘুরছে শুধু৷
হঠাৎই শ্রেয়াস গম্ভীরর্য নিয়ে প্রশ্ন ছুড়ে দিলো ফারহানের দিকে,
“আপনি তো ওর ব্যা’ন্ডে’জ করেছিলেন আগে? আপনি কিছু জানাননি কেন কাউকে?”
ফারহান থতমত খেলো কি উত্তর দিবে বুঝতে পারলো না৷ এর আগেই শ্রেয়াস ফের বললো,
” উত্তর দিচ্ছেন না যে?”
ফারহান উত্তর দিলো না৷ চন্দ্রিকার মায়ের কি হলো কে যানে সে কিছুটা উচ্চ কান্নারত কন্ঠে বলে,
“আমার মেয়ের জ্ঞান ফিরেনি৷ আমার মেয়েকে সুস্থ করে দে ফারহান আগে ওর সুস্থ হওয়া দরকার৷”
শ্রেয়াসের হুস ফিরলো সত্যি মেয়েটা অচেতন সে ভুলেই গেছে জ্ঞান ফেরানো উচিত৷
ফারহান নিজের ডাক্তারি বক্সটা নিয়ে চন্দ্রিকার কাছে এলো অতঃপর ঝুকে চন্দ্রিকাকে ছুঁতে যাবে এর আগেই শ্রেয়াস শক্ত কন্ঠ বলে,
“স্পর্শ করতে না করেছিলাম তো? কেউ স্পর্শ করবে না চন্দ্রাবতীকে৷”
বলে হঠাৎই চন্দ্রিকাকে পাজ কোলে তুলে নিলো সেই অবস্থাতেই৷ ব্যা’ন্ডে’জ টা ও করা হয়নি এখনো শুধু র’ক্ত পরা বন্ধ করেছে৷ শ্রেয়াসের এহেন কান্ডে সবাই ভরকালো৷ শ্রেয়াস হুট হাট কি করে কারো বোধগম্যই হয় না৷ সে নিজে নিজের কাজ বুঝে কিনা সবার তাতেও সন্দেহ হয়৷ ফারহানের চোয়াল শক্ত হয়ে এলো! রাগ বাড়লো৷ ইচ্ছে করছে এখনি সব শেষ করে দিতে৷ তার চন্দ্রকে ছুঁয়েছে ওই রাজকুমার অন্য কেউ হলে এখানেই মেরে দিতো ফারহান৷ ফারহান ঘাড় এদিক ওদিক বাড়িয়ে নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা চালাচ্ছে কিন্তু রাগে ফেটে পরছে বারংবার৷ চোখ মুখ শক্ত হয়ে এলো৷ রক্তিম আকার ধারণ করলো নেত্র যুগোল৷
আর থাকতে পারলো না এবার খানিকটা রাগী কন্ঠেই প্রশ্ন ছুড়লো,
“কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন রাজকুমার? ও অসুস্থ ওকে সুস্থ করতে হবে৷ ”
শ্রেয়াস কিছু পথ এগিয়ে গিয়েও থেমে গেলো ক্ষানিকটা পিছনে ঘুরলো অতঃপর বললো,
“দৃষ্টি পল্লব নিচু করুন৷ আমার উচু কন্ঠ পছন্দ না৷
আপনি বোধহয় ভুলে গেছেন ডাক্তার ফারহান আমারো ওই ডাক্তারি সার্টিফিকেট আছে৷”
ফারহানের রাগ বাড়লেও ধাতস্ত রাখলো নিজেকে অতঃপর ফের বললো,
“আমি করে দিচ্ছি রাজকুমার৷ এখানে থেকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন ওকে?”
শ্রেয়াস একবার চন্দ্রিকার পানে তাকিয়ে কাঠকাঠ গলায় উত্তর দিলো,
” যে বাড়িতে আপনারা একজন অসুস্থ মানুষ কে দেখে রাখতে পারেন না সে বাড়িতে ও থাকবে না৷ মহলে নিয়ে যাচ্ছি সুস্থ হওয়ার আগ পর্যন্ত ওখানেই থাকবে৷ ”
ফারহান আরো জ্বলে উঠলো সে আর নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারছে না নিজেকে৷ কিন্তু এদিকে চন্দ্রিকার মা যেন চাঁদ পেলো হাতে তার যা হয় হবে মেয়েটা তো কিছু দিনের জন্য স্বাভাবিক আতংক মুক্ত থাকতে পারবে এই অনেক তার কাছে৷ এখানে থাকলে সর্বদা আতংকে থাকতে হবে ছেলে আর মা মিলে আবার কি করে দেয়৷ তাই কিছু বললো না চুপ রইলো৷ চন্দ্রিকার মা জানে রানী মেহনুবা তার থেকে বেশি ভালো করে চন্দ্রিকার খেয়াল রাখবে৷
শ্রেয়াস একটু থেমে ফের বললো,
” মিফতা না থাকায় মা চন্দ্রাবতীর ভরসায় বেঁ’চে আছে আমি চাই না চন্দ্রাবতীর কিছু হোক৷ আমার মায়ের প্রাণ চন্দ্রাবতী৷”
“আর আপনার”
হঠাৎই ফারহান ক্রুদ্ধ কন্ঠে এহেন প্রশ্ন করে বসলো৷ ফারহানের প্রশ্নে সবাই থতমত খেলো৷ বুঝলো না এ প্রশ্নের মানে তবে শ্রেয়াস ফারহানের দিকে তাকিয়ে ক্ষানিকটা ঠোঁট এলিয়ে বাঁকা হেসে হাটা ধরলো মহলের উদ্দেশ্যে৷ প্রিয়ম ও পিছন পিছন ছুটলো শ্রেয়াসের৷ আজকাল তার নিজেকে অকর্মণ্য মনে হয়৷ দাম্ভিক রাগী শ্রেয়াসো কাউকে পেয়ে গেলো যদিও সে তার মতই গম্ভীর একজন পেয়েছে৷ কিন্তু সে তো তাও পারেনি কি করলো এ জীবনে ভাবলো প্রিয়ম৷ মনে মনে নিজেকে কয়েকটা চড় থাপ্পড় আর অকথ্য ভাষায় গালিও দিলো৷ শ্রেয়াস ঠিকই বলে তার ধারা কিছু সম্ভব না৷
এদিকে ফারহান যেন আরো রাগে ফেটে পড়লো৷ শ্রেয়াস বাড়ির বাইরে পা রাখার পরই বিকট এক শব্দ হলো তাতে যেন বাড়ির সকলে শিউরে উঠলো৷
৩৬
তখন মধ্যাহ্ন চলছে কাট ফাটা রোদ বাইরে সব কিছু খাঁখা করছে৷ আজ চৈত্রের শেষ দিন কাল থেকেই শুরু হবে বাংলার নতুন বছর৷ সব কিছুর নতুন সূচনা কিন্তু কাল সব কিছুর নতুন সূচনার সাথে সাথে কি রহস্য বাড়বে? না রহস্য উন্মোচন এর কোন পথ?
আয়াশ পুলিসস্টেশনে বসে আছে নিজের কালো গদিটায়৷ সামনেই সেই ব’ন্দুকের কাগজ পত্র৷ আর ড্রা’গসের শ’খানেক প্যাকেট৷ এ ড্রা’গস আশরিফের বাড়ির চিলেকোঠার এক সিন্দুক ভে’ঙে পেয়েছে৷ এটা দেখে বেশ চমকেছিলো সবাই৷ আশরিফ কি তাহলে ড্রা’গসের ব্যাবসা করছিলো? একজন আইন রক্ষক যখন আইন ভক্ষক ব্যাপার টা এমন হলো না? এর পর কি মানুষ বিশ্বাস করবে পুলিশকে?
আর সেই বন্দুকটা নাইন এমএম এপিএস স্টেচকিন বিশ রাউন্ডের আ’গ্নেয়াস্ত্র৷ এর নিশানা নিখুঁত! সব অফিসার দের কাছে দেখা যায় না এটা৷
আগ্নেয়াস্ত্রটার খোঁজ খবর নিয়ে জানতে পারলো এটা কোনো আন্ডার কভার অফিসারের আগ্নেয়াস্ত্র৷ অফিসারটির নাম জানায়নি কিন্তু অদ্ভুত বিষয় হলো এ আগ্নেয়াস্ত্রটি হাড়িয়েছে আরো মাস ক্ষানেক আগে৷ প্রশাসন এটা নিয়ে বেশি কছু বলেনি যেহেতু বন্দুকটা আন্ডারকভার অফিসারের আর বড় বিষয় হলো ব’ন্দুকটা মাস খানেক আগে হারিয়েছে৷
কিন্তু একজন সিকরেট অফিসারের বন্দুক কে চুরি করো? আর সেই বন্দুক আশরিফের কাছেই কেন? বন্দুকে শুধু আশরিফেরই হাতের ছাপ পাওয়া গেছে আর ওই ব’ন্দুক থেকে একটা গু’লি চলেছে৷
র’ক্ত গুলো আশরিফের না এবং তাদের রেকর্ডের কারো সাথে ম্যাচ করছে না তাহলে র’ক্ত কার?সব কিছুতে ঘাপলা আছেই কেমন৷
মোবাইলটা চার্জে দেওয়া হয়েছে খুলে গেলেই দেখবে কোনো তথ্য পাওয়া যায় কিনা৷
মোবাইলটা চালু হতেই তা নিয়ে বসলো৷ পাওয়ার বাটন চেপে ধরতেই মুঠোফোনের স্ক্রিনে আশরিফের হাস্যজ্বল ছবি ভেসে উঠলো৷ তাতে নিশ্চিত হলো মোবাইলটা আশরিফের৷ মোবাইলটা চালু হতেই প্রথমেই কল লিস্ট চেক করলো৷ কিন্তু তেমন কোন সন্দেহ ভাজন কিছু পায়নি৷ কিন্তু প্রায় মাস দু এক আগের লিস্ট চেক করলে দেখা যায় শাহনেওয়াজ এর সাথে তার প্রায় প্রতিদিনই ঘন্টা খানেক সময় কথা হতো৷ এমন কি শাহনেওয়াজ এর মৃত্যুর দু-এক দিন আগেও তার কথা হয় শাহনেওয়াজ এর সাথে৷ যখনে শাহনেওয়াজ কে পাওয়া যাচ্ছিলো না তখনো কথা হয়েছে৷
আগে কি এমন কথা বলতো প্রতিদিন? আর নিখোঁজ হওয়ার পর শাহনেওয়াজ এর সাথে আশরিফের কি করে কথা হলো? আশরিফ কাউকে বললো না কেন? শাহনেওয়াজ কি নিখোঁজ হয়েছিলো নাকি পা’লিয়ে ছিলো? কিন্তু ও তো জানতো রায়হানের মৃ’ত্যুর ত’দন্ত করতে গিয়ে নিখোঁজ হয়েছে৷ নিখোঁজ হওয়ার দু দিন পর কি করে কথা বললো?
তাহলে কি সত্যি আশরিফ শাহনেওয়াজ কে খু’ন করেছে? কিন্তু আশরিফ বা কোথায়? পুলিশ হন্যে হয়ে খুঁজছে আশরিফ কে তবুও কোনো খবর জানতে পারছে না৷ আশরিফ আদৌ আছে তো?
কল লিস্ট থেকে বেরিয়ে কি মনে করে যেন কল রেকোর্ড লিস্টে ঢুকলো ঠিক তখনই অনেক গুলো ভয়েস রেকর্ড দেখতে পেলো৷ কিন্তু সে রেকর্ড চালু করে যা শুনতে পেলো তার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলো না আয়াশ সে থমকালো চমকালো৷ এ যেন কেঁচো খুড়তে কেউটে বেড়িয়ে এলো?
চলবে,