#কৌমুদিনী
#তাফসিয়া মেঘলা
#পর্বঃ সাত
১৩
” পাখি দুটো দিয়ে দিন আমায় রাজকুমার৷ ”
মুখি ফুলিয়ে কথা গুলো বললো চন্দ্রিকা৷ ভারাক্রান্ত মন তার৷ এইতো সাহসী মেয়েটা চুপসেছে৷ মেয়েটার দূর্বলতা বুঝি পাখি দুটো? মেয়েটার এহেন মুখশ্রী মন্দ লাগছে না৷ মেয়েটার মুখশ্রী দেখে ওষ্ঠ প্রসারিত হলো শ্রেয়াসের তবে নিজের উষ্ঠ কোণে লেগে থাকা হাসির রেশ দেখালো না চন্দ্রিকা কে৷ মেয়েটা তাহলে আর ভয় পাবে না৷ লুকালো হাসি৷ পাখি দুটো কে নিয়ে হন হন করে বেরিয়ে গেলো চন্দ্রিকার অলিন্দ ছেড়ে৷ বাড়ি ছেড়ে৷ অতঃপর মহলের দিকে এগোলো৷
চন্দ্রিকা অসুস্থ অবস্থায় ছুটলো শ্রেয়াসের পিছনে৷ মা ডাকলো চাচি ডাকলো শুনলো না পাখি দুটো তখনো ছোটাছুটি করে ‘চন্দ্র চন্দ্র’ বলছে৷
এবার প্রথম পাখি দুটোর কন্ঠে নিজের নাম শুনে অতিমাত্রায় বিরক্ত হলো৷ পাখি দুটো অবাধ্য কেন? শ্রেয়াস নামটা বলে দিলেই হয় তাহলেই তো চন্দ্রের কাছে থাকতে পারে৷
সেই তখন চন্দ্রিকার কক্ষ ছেড়ে যখন ছোট্ট অলিন্দে প্রবেশ করলো শ্রেয়াস তখন সর্ব প্রথমি তার ‘প্রাণ আর প্রণয়ের’ পানে নজর যায়৷ লোকটার প্রথম থেকে পাখি দুটোর উপর নজর৷
পাখি দুটো বড়ই অদ্ভুত অচেনা মানুষ দেখে ছোটাছুটি করে চন্দ্র চন্দ্র করে ডাকা শুরু করে৷
পাখি গুলোর মুখে ফের চন্দ্র নামটায় বিরক্ত হলো শ্রেয়াস৷ পাখি দুটোর সামনে গিয়ে রাম ধম দিয়ে বলে,
“পাখি শ্রেয়াস বল৷ ”
কিন্তু পাখি দুটো বললো না? রাজকুমার রৌজাফ শ্রেয়াসের মুখের উপর তাকে প্রত্যাখ্যান করে ‘চন্দ্র চন্দ্র’ বলে উঠলো৷ তখনই তো রাজকুমার রৌজাফ শ্রেয়াস পাখি দুটো কে নিজের সাথে নিয়ে চললো সে নাকি নিজের নাম বলতে শেখাবে৷
মহলের অন্দরে প্রবেশ করলো শ্রেয়াস “প্রণয় আর প্রাণ” কে নিয়ে৷ তার পিছু পিছু চন্দ্রিকাও প্রবেশ করলো মহলে প্রবেশ করতে পারলেও শ্রেয়াসের কক্ষে প্রবেশ করতে পারলো না৷ শ্রেয়াস তার কক্ষে ঢুকে নিজের এসিস্ট্যান্ট প্রিয়ম কে ইশারা করলো তখনি প্রিয়ম তখন রাজকুমারের ইশারা অনুযায়ী আটকালো চন্দ্রিকা কে৷ অতঃপর মিনমিনিয়ে বললো,
” দুঃখিত আজ আপনার জন্য কিছু করতে পারলাম না৷”
চন্দ্রিকা প্রিয়মের পানে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো প্রিয়ম যেন থতমত খেলো৷
এই প্রথম অবাদ্ধ মেয়েটাকে জব্দ করতে পারলো শ্রেয়াস৷ চুপসে থাকা পানসে মুখ খানা বেশ লাগলো তার৷ খুশি হলো শ্রেয়াস সে যেন এই মূহুর্তে কোন রাজ্য জয় করে ফেলেছে৷ প্রিয়ম আজকাল রাজকুমার শ্রেয়াসকে বুঝতে পারে না৷ সে তো এমন ছিলো না আজকাল আবার তার এ নারীর সাথে দেখা যায়৷
কিছু দিন গ্রামের বাইরে যেতে হয়েছিলো প্রিয়মের৷ সে শ্রেয়াসের সহকারী কর্মী শ্রেয়াসের সাথে থাকে সর্বদা৷ ছায়ার ন্যায়৷
মেয়েটা হঠাৎ করে তেজী কন্ঠি হয়ে গেলো৷ চৌকাঠের এপাশ থেকে রাগী ক্রুদ্ধ কন্ঠে বলে,
“প্রণয় আর প্রাণ কে দিন রাজকুমার৷ ”
শ্রেয়াস কুটিল হেসে বলে,
“যদি না দেই?
নিতে পারবেন আমার থেকে?”
সাথে সাথেই মুখটা চন্দ্রিকার ফের আগের ন্যায় হয়ে গেলো ঘন আঁধার ভির করলো চোখে মুখে৷ চন্দ্রিকা ফের বললো,
” কি করবেন আপনি এদের দিয়ে?”
” আমার দৃষ্টি যা দেখে আকর্ষিত হয় তা আমি নিজের করি চন্দ্রাবতী৷ তা মানুষ হোক বা প্রাণী৷ তবে আমি এতে আকর্ষিত হয়নি৷ এদের উপর আমি বিরক্ত অতি মাত্রায় বিরক্ত৷ এগুলো আপনার প্রিয় তাই না? কিন্তু আমার অপ্রিয়৷ ”
বলে ফের বাঁকা হেসে অলিন্দে নিয়ে গেলো প্রণয় আর প্রাণ কে৷ চন্দ্রিকার ভ্রু কুচকে এলো৷ কি করতে চাইছে লোকটা? প্রিয়ম বুঝলো তার মালিকের মাথায় কি চলছে আড় চোখে চন্দ্রিকার পানে তাকালো৷
হঠাৎ চন্দ্রিকার কি হলো বুঝলো না কেউ এক প্রকার দৌড়ে প্রস্থান করলো এখান থেকে৷ শ্রেয়াস তখন খাঁচা থেকে পাখি গুলো হাতে নিলো৷ পাখি গুলো বড্ড ছটফট করছে ছাড়া পেয়ে কি পালানোর ছটফট করছে? খাঁচা থেকে বেরিয়ে খুশি তারা? তাই ভাবলো শ্রেয়াস৷ কুটিল হেসে আকাশ পানে পাখি গুলো কে ছাড়বে ঠিক তখনই দেখে চন্দ্রিকা নামক অবাদ্ধ মেয়েটা মহল থেকে বেরিয়ে দুতলা বাড়িটিতে ঢুকছে৷ ওমা মেয়েটি এখান থেকে গেলো কখন? মেয়েটা তবে হার মেনে চলে গেলো? পৈচাশিক আনন্দ হলো শ্রেয়াসের৷ কিছুক্ষণের মাঝেই মেয়েটি নিজ অলিন্দে এসে দাঁড়ালো মেয়েটির উষ্ঠ কোণেও হাসি৷ মেয়েটা হাসছে কেন? হাশিটা পছন্দ হলো না৷ চন্দ্রিকাকে জ্বালানোর জন্য শ্রেয়াস এবার হাক ছেড়ে ডেকে বললো,
“চন্দ্রাবতী মুক্ত করে দিলাম আমার অপ্রিয় জিনিস গুলো৷ উপস না না আপনার প্রিয় প্রণয় আর প্রাণ কে৷”
বলে আকাশ পানে তাকিয়ে মুক্ত করে দিলো পাখি গুলো পাখি গুলো ছাড়া পেয়ে ছুটোছুটি করলো ক্ষানিক্ষণ আকাশে কিন্তু গেলো না কোথাও শ্রেয়াস কে অবাক করে দিয়ে প্রণয় আর প্রাণ চন্দ্র চন্দ্র বলে চন্দ্রিকার কাধে গিয়ে বসলো৷
এতে বিস্ময় চোখে তাকালো শ্রেয়াস তা দেখে চন্দ্রিকা এবার খিলখিলিয়ে শব্দ করে হেসে উঠলো৷ সে হাসি শব্দ বারংবার বাড়ি খেলো শ্রেয়াসে কর্ণদ্বয়ে৷
১৪
অন্ধকার ঘরে র’ক্তা’ক্ত অবস্থায় পরে আছে এস আই শাহনেওয়াজ৷জানালা দিয়ে আবছা আলোয় তার র’ক্তাবক্ত দেহটা ভয়ংকর দেখাচ্ছে৷ গলাটা মাঝি বরাবর কাটা আরেকটু হলে দু-ভাগ হয়ে যেতো চামড়ার সাথে ঝুলে আছে শুধু৷ মুখের মত মাথা থেকে শরীরটা হা করে আছে সেখান থেকে এখনো ফিনকি রক্ত পরছে৷ প্রিয় পুলিশের ইউনিফর্ম টা র’ক্তে চুপচুপে আছে৷ ইউনিফর্ম টায় কখনো কোন দাগ লাগায়নি সে৷ সর্বদা চকচকে ঝকঝকে রাখতো আজ সে ইউমিফর্ম নিজের র’ক্তেই মাখো মাখো হয়ে আছে৷ হাতের মাঝেই রিভলবার টা আটকে আছে নিজলে বাচানোর প্রাণ পান চেষ্টা করেছিলো কিন্তু পারেনি৷ ব্যার্থ হয়ে নিজের প্রাণ খোয়াতেই হলো৷ রাফসানের মৃত্যুর রহস্য উন্মোচন করতে গিয়ে নিজের প্রান টাই দিয়ে বসলো? নাকি অন্য কোন রহস্য আছে এর মাঝে? এলোমেলো অবস্থায় নিচে পরে আছে সে৷
ডান গালের চামড়া খানা ছিলে লাল মাংসটা স্পষ্ট৷ তার সামনেই বসে আছে কালো হুডি পরিহিত এক মধ্যবয়সী যুবক৷ মুখশ্রী তার কালো কাপড়ের আস্তরনে ঢাকা৷ চোখ দেখে বোঝা গেলো সে যেন মহা খুশি আজ৷ এমন নৃশংস ভাবে তকে নাশ করেও যুবকটি যেন ক্ষেন্ত হয় নি নিচে পরে থাকা র’ক্ত মাখা তলোয়ার টা নিয়ে বুক বরাবর কয়েকবার আঘাত করলো তাতে রক্ত ছিটকে ছেলেটির চোখ মুখ ভরে গেলো৷
ছেলেটি যেন এতে আনন্দ পেলো৷ মহা আনন্দ সেখান থেকে রক্ত নিয়ে কালো মুখের আস্তরনের উপরই পুরো মুখে রক্ত মাখলো সাথে সাথে পৈঁচাশিক হাসিতে মাতলো৷ রক্ত যেন তার প্রিয় বড্ড প্রিয়৷
হঠাৎই কি হলো যুবকটির কে যানে চুপ হয়ে গেলো ক্ষোভে ফেটে পড়লো বুক থেকে তরোয়াল টা তুলে চোখে বসিয়ে দিলো৷ দু-চোখে সর্ব শক্তি দিয়ে বার বার আঘাত করলো৷ পিছনে থাকা যুবকটির সহকারী কর্মী টি তা দেখে কেঁপে উঠলো৷
কি এমন তার এ লোকটির উপর ক্ষোভ যে নৃশংস ভাবে হত্যা করলো৷
ইস কি কঠিন মৃ’ত্যুই না দিলো লোকটিকে৷
অতঃপর উঠলো শাহনেওয়াজ এর লা’শের সামনে থেকে সহকর্মী টিকে ইশারা করে বের হওয়ার জন্য পা বারাবে এর আগেই সহকর্মী টি নির্বোধের মত একটা কথা বলে ফেললো,
“এমন করা টা কি ঠিক হলো? ”
কথাটি বলে নিজেই যেন থতমত খেলো৷ ঢোক গিললো শুকনো গলা তার শুকিয়ে আসছে ঘাম ছুটলো৷ এই বুঝি কলিজাটা টান দিয়ে ছিড়ে নিবে৷ বাঘ কে ক্ষেপিয়ে দিলো৷
লোকটিকে আরো ভয় বাড়িয়ে দিয়ে যুবকটি শান্ত কন্ঠে বললো,
“ঠিক? ঠিক ব্যাঠিক শিখতে হবে আমায়?”
লোকটি আর কিছু বললো না৷ মৃত্যু সময় কাল গুনতে শুরু করলো সে জানে আজ তার রক্ষে নেই৷ কিন্তু তাকে অবাক করে দিয়ে যুবকটি কুটিল হেসে ফের দরজার দিকে এগিয়ে গেলো৷ যাক ভাবলো এবারের মত জোর বাচা বেঁচে গেছে এর পর থেকে বুঝে শুনে কথা বলতে হবে৷
কিন্তু না তার ভাবনায় এবারো মাটি চাপা দিয়ে যুবকটি পকেট থেকে ছোট একটা ধারালো ছুরি বের করে উল্টো ঘুরা অবস্থায় ছুড়ে মারলো সহকর্মীটির দিকে তার নিশানা এতোই নিখুঁত ছিলো যে সহকারী কর্মীটির বুকের বা পাশে এসে অর্ধ গেথে গেলো ধারালো ছু’রি খানা৷ যুবকটি স্থান ত্যাগ করার আগে পিছন ফিরে কর্মীটির দিকে তাকিয়ে বললো শুধু,
“আমার অস্তিত্ব খুঁজতে যাবে যে নিজের অস্তিত্ব খোয়াবে সে৷”
চলবে,