#ক্যামেলিয়া
#সাদিয়া_খান(সুবাসিনী)
#পর্বঃ১৫
বিয়ের পর একজন মেয়ে তার স্বামীকে শারিরীক সম্পর্কের জন্য বলতে পারে না।এটা এই সমাজে ট্যাবু।স্বামীর ইচ্ছে হলে তাকে কাছে টেনে নিবে নইলে থাকুক না স্ত্রী পড়ে খাটের একটা পাশে।
অথচ প্রতিটি মানুষের কিছু চাহিদা থাকে, এসব নিয়ে যদি কোনো মেয়ে ভুলেও কিছু বলেছে তবে সমাজ তো পরের কথা নিজ পরিবার তাকে নিয়ে নানান ধরনের কথা বলা শুরু করে দেয়৷ বাড়ির অন্য বৌয়েরা আঁচলে মুখ ঢেকে তাকে নিয়ে তামাশা করে কিংবা শাশুড়ি ছি ছি।
পোড়া হাতটা নিয়ে জাফরিন বসে আছে তার বড় বোনের বাড়িতে। এই বাড়ির বড় বৌ তার বড় আপা জেমিয়ার বেশ কদর রয়েছে। এই কদরের কারণটাও জাফরিন বুঝতে পারে। জাফরিনের বাবা না চাইতেই তার মেয়ের শ্বশুর বাড়ির সবাইকে উপহারের নামে পাঠাতো অনেক কিছু।বাবার মৃত্যুর পর তার আপাও বেশ কিছু স্থাবর অস্থাবর জিনিসের মালিক হয়েছে। এজন্যও তার শাশুড়ি তাকে সমীহ করেই চলে, অপর দিকে তার বড় আপা যেন মাটির মানুষ। মাটি নয় কাঁদা মাটি,তাকে যে রূপ দেওয়া হয় সেভাবেই থাকে।তাই এবাড়িতে জাফরিনদের বেশ সম্মান দেওয়া হয়।ভাগ্নের সাথে বসে তাকে অংক বুঝিয়ে দিচ্ছিলো সে। এমন সময় পাশের ঘর থেকে এসব ছি মূলক কথা শুনতে পেল সে।
দুলাভাই সবে মাত্র অফিস থেকে ফিরেছে। জাফরিনের শরীর ভালো না হওয়া স্বত্বেও এক গ্লাস পানি এনে দিলো।
“তোমার কেন আনতে হবে? আমি নিজেই নিয়ে নিতাম।”
“পুরো দিন বসেই আছি ভাই। ভালো লাগছে না।”
“তবে একটু ছাদে যাও। কিছু খাবে? তোমার আপাকে বলি বানিয়ে দিতে?বাহিরের খাবার তো নিষেধ।”
“খেতে ইচ্ছে করলে আমি নিজেই বলবো ভাই।কিন্তু… ”
পুরো গ্লাসের পানি শেষ করে তার দুলাভাই জিজ্ঞেস করলেন,
“কী হয়েছে? কিছু জিজ্ঞেস করবে?”
“মেঝ ভাই না কী থানায় মামলা দিয়েছে?”
“স্বাভাবিক না কী?ইউভান আর তোমার মেঝ ভাই পর দিন সকালেই থানায় জানিয়েছে।আমি যেতে পারিনি কারণ তোমাকে নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম।”
“কী প্রয়োজন ছিল?”
“আমি বা ইয়াকুব তোমার আপন ভাই নই।আমরা তোমার বোন জামাই। কিন্তু তোমার আপন ভাই থাকলে কী করতো?সে বসে থাকতো?ইউভান বসে আছে? শুনো ঘটনাটা স্বাভাবিক নয়, তারা তোমাকে খুন করার চেষ্টা করেছে। এভাবে ছেড়ে দিতে পারি না।বাবা নেই, কিন্তু তোমার প্রতি আমার দায়িত্ব আছে।”
জাফরিন চুপ করে বসে রইল।এমন সময় পুনরায় ঘর থেকে রাগারাগি ভেসে আসছে।এবার তার দুলাভাই বলল,
“আমি অফিস যাওয়ার পর বাসায় কিছু হয়েছে?”
“আপনাদের পারিবারিক ব্যাপার।তবে ভাই আন্টির সাথে কথা বলুন।আর সূচনা আপু ভীষণ লজ্জায় আছেন। কিন্তু আপনি বুদ্ধিমান মানুষ, এই বিষয়ে আমার কথা বলা সমীচিন নয়।আপনি সবটা বুঝে তারপর আন্টিকে বুঝিয়ে বলুন।”
সূচনার বিয়ের বয়স প্রায় এক বছর। স্বামীর সাথে সম্পর্ক ভালোও না আবার খারাপ ও না।তার স্বামী তাকে মেনে নিয়েছে না মেনে নেওয়ার মতোন করে। একজন স্ত্রীর সকল চাহিদার কথা তার স্বামীর কাছেই বলবে কিন্তু এটা বলাই যেন তার কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। তার স্বামী সকালবেলা মায়ের কাছে এসে বলল তার স্ত্রীর চাহিদা একটু বেশিই। ব্যস এটা নিয়েই আজ তাদের বাড়ি দফায় দফায় মিটিং বসছে।ঘটনা এ অবধি সীমাবদ্ধ থাকলে কথা ছিল কিন্তু বাড়াবাড়ি হলো যখন সূচনার বাবার বাড়িতে জানানো হলো এবং জরুরী তরফে ডেকে আনা হলো তাদের।
উল্লেখ্য, সূচনার বিয়ে পূর্বে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। তার স্বামীর ধারণা নিশ্চয়ই প্রেমিকের সাথেও তার সম্পর্ক ছিল।
নিজ ঘরে মাথা নিচু করে বসে আছে মেয়েটা।এতোটা লজ্জা! তার এই মুহুর্তে মরে যেতে ইচ্ছে করছে, যখন পাশের ঘর থেকে বার বার ভেসে আসছে
“এতোটা শরীরের ক্ষুধা তো রাস্তায় নেমে গেলেই পারে।”
সূচনার সহ্যের সীমা অতিক্রম করে গেল যখন তার বাবা এবং মা চলে যাওয়ার আগে তার সাথে একটা বার কথা অবধি বলল না।রাত যত গভীর হলো আলোচনা ততই বাড়তে লাগলো।কেউ পক্ষে আবার কেউ বিপক্ষে কথা বলেই চলেছে।তার স্বামী রুমে এসে তাকে একবার তাকিয়ে দেখলো মাত্র। হাসতে হাসতে বিছানায় উঠে বসে বলল,
“তোমার এই বাড়িতে থাকার সময় শেষ হয়ে এলো।আমার সংসার জিনিসটাই ভালো লাগে না।মাকে আগেই বলেছিলাম বিয়ে দিও না।দিলো এবার তারাই বুঝুক।তুমি চলে যাওয়ার পর অন্তত আর জোর করতে পারবে না।”
সূচনা অবুঝ চোখে তাকিয়ে রইল বাইরের দিকে।গভীর রাতে তার মায়ের ফোনে কল দিয়ে বলল,
“আমাকে নিয়ে গেলে না মা?”
“বিয়ে দিয়েছি নিয়ে আসার জন্য?”
“ওরা যে আমাকে অসম্মান করছে।মা আমাকে নিয়ে যাও।”
“অসম্মানের কথা বলেছো তাই করছে৷ মেয়ে হয়ে কে এসব বলে? শরীরের ক্ষুধা এত কেন তোমার?”
“শেষ অবধি তুমিও?কেন বুঝতে পারছো না সে আমার স্বামী,আমি শুধু…….
” লজ্জা করো সূচনা, তুমি তোমার মায়ের সাথে কথা বলছো।”
“মা আমাকে নিয়ে যাও। পায়ে ধরছি,আমি পারছি না এসব নিতে।”
মায়ের শেষ কথাটা স্পষ্ট শোনা গেল না। তার বাবা নিশ্চয়ই কল কেটে দিয়েছে মায়ের হাত থেকে ফোন নিয়ে। সূচনা সেই অবুঝ দৃষ্টিতে বাইরের দিকেই তাকিয়ে রইল।একটি নতুন ভোরের আশায়। নতুন ভোর আসবে তো?
(৩৭)
নিজ বিছানায় বার বার এপাশ ওপাশ করছে জাফরিন।একটা স্পর্শ যেন তাকে চূর্ণ বিচূর্ণ করে দিয়েছে। কিন্তু তার স্পষ্ট কিছুই মনে নেই। তার মনে আছে কালো শার্টের আড়ালে শুভ্র একটা বক্ষ। যেখানে হৃদপিন্ডটার স্পন্দন খুব দ্রুত।এক হাতে সে নিজেই জাফরিনের মাথাটা শক্ত করে চেপে ধরে রেখেছে তার বুকের সাথে অন্য হাত দিয়ে তাকে আগলে রেখেছে। আর বলছিল,
“ফাস্ট, ফাস্ট, ডুই ইট ফাস্ট ব্লাডি বুলশিট. ডু ইট ফাস্ট. ”
নিচের ঠোঁট কামড়ে সেই পুরুষের কথাটা ভাবছিল জাফরিন। জ্ঞান ফেরার পর সে দেখেনি কে নিয়ে এসেছিল তাকে। কিন্তু তার শরীরের গন্ধ যেন লেগেছিল তার চোখে, মুখে কিংবা চুলে। জাফরিনের বেশ ইচ্ছে করছে তাকে দেখতে কিন্তু যারা তাকে হাসপাতালে নিয়ে এসেছিল তারা জানিয়েছে এমন কেউই ছিল না। তবে কী সবটা ছিল তার জল্পনা কল্পনা?
শত শত চিন্তার মাঝে সেই ব্যক্তিটার কথা মনে হলে বেশ শান্তি শান্তি লাগছে তার। ফোনের দিকে তাকাতেই দেখতে পেল তার মেইল এসেছে।স্পেনে যাওয়ার প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। আগামী কয়েক দিনের মাঝেই তাকে চলে যেতে হবে। মেইল দেখার পরেই তার চোয়াল শক্ত হয়ে গেল।নিজের ক্ষণিকের আবেগ ভুলে সে প্রস্তুতি নেওয়ার পরিকল্পনা শুরু করলো।তার বাবার মৃত্যু কখনোই স্বাভাবিক ছিল না।আবার মনে করিয়ে দিলো বাবার লাশ কিংবা মায়ের সাদা শাড়িতে মুখটা।
সে বিড়বিড় করে বলল,
“ক্ষমা যতই মহৎ গুণ হোক না কেন,
আমি তো প্রতিশোধ নিতেই পছন্দ করবো।”
একই সময়ে মেইলটা এসেছে মাশহুদের কাছেও। সে নিজেও মেইলটা চেক করে স্মিত হাসলো।আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে শার্টের দুটো বোতাম খুলল। বুকের বা পাশের দুটো আঁচড় চিহ্নে মৃদু আঘাত করে বলল,
“দাদা বলে দেবদাসের দেওয়া আঘাত না কী পারো শুকাতে দিতো না।
আমি কী তবে সেই পথে হাঁটছি?তুমি আমার হয়েও হবে না এটা পূর্ব নির্ধারিত। তবুও না হয় এভাবেই তোমার স্পর্শ আমার সাথে থাকবে মিস.জাফরিন।অপেক্ষায় রইলাম তোমার প্রতিশোধের।”
(৩৮)
ভোরের আলো সবে মাত্র ফুটতে শুরু করেছে। কিন্তু লাশের নিচ থেকে বেয়ে আসা রক্তের ধারা জমে গেছে। সূচনা আত্মহত্যা করেছে। ছাদ থেকে লাফ দিয়ে। তার লাশ পড়ে আছে গেটের কাছে।
খবরটা পেয়েই বড় আপার শাশুড়ি আপার হাত ধরে বললেন,
“বৌমা, তুমি আমাকে কথা দেও তোমার বোনের সাথে আমার বাপের বিয়া দিবা।”
চলবে(এডিট ছাড়া। অনেক দিন পর গল্প দিলাম।অনেকেই জানেন কারণ গুলো কী কী।ফ্যামিলিতে অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু, বইমেলার প্রিপারেশন আবার অনার্স ফাইনাল ইয়ারের এক্সাম শুরু হয়েছে। আপনারা গল্পটাকে এতটা ভালোবাসেন আমি অবাক হয়ে যাই।তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি না পারলেও সপ্তাহে দুটো করে পর্ব দিবো।আর বেশি পারলে বেশি দিবো।
কিন্তু চেষ্টা করবো যাতে গ্যাপ না যায়। তাই আপনারা যারা গল্প পড়েন একটু রেসপন্স করবেন।কেনোনা অনেক দিন পর দিলাম,অনেকেই জানবেন না।এবং হ্যাঁ এটা বলবেন না যে গল্প দিতে দেরী করেন কেন?আশা করি বুঝতে পেরেছেন।)