গল্পঃবসন্ত এসে গেছে
লেখাঃনুশরাত জেরিন
১২.১৩.১৪
পর্বঃ১২
,
,
দেখতে দেখতে কেটে যায় বেশ কয়েকটা দিন।
অপুর সকালগুলো এখন একই বোরিং নিয়মে শুরু হয় আবার শেষও হয়।
কেমন বিষন্ন নিস্তব্ধ লাগে চারিদিক।
সারাদিন মিসেস রিচির ফরমায়েশ খাটতে খাটতে অপু হাঁপিয়ে ওঠে।
তবু কাজ করে যায়।
অন্য কোন মেয়ে হলে হয়তো এভাবে নাম মাত্র সংসারে টিকে থাকতো না।কিন্তু অপু আছে।
থাকতে বাধ্য সে।
এখানে না থাকলে কোথায় যাবে?ভাই ভাবির কাছে?
তারা তাদের বাড়িতে ঠায় দেবেতো?তারচেয়ে বরং নোমানের ফিরে আসার অপেক্ষা করা যাক।
আচ্ছা উনি অদৌ ফিরবেন তো?
নিজের মনে এই প্রশ্নের উত্তর খোজে অপু।
মনে মনে খুব করে চায় উত্তরটা যেনো হ্যাঁ হয়।
আজকের দিনটাও অন্য দিনের থেকে কোন অংশেই আলাদা মনে হয়না অপুর।
বেলকনিতে দাঁড়িয়ে সুর্যোদয় দেখে সে আপনমনে।
বাড়ির বাইরে বড় ফুলের বাগান আছে, সেখান থেকে নানাধরনের ফুলের মিশ্র মিষ্টি গন্ধ ভেসে আসে।
অপু নাক সিটকায়।
তার ইদানীং কোন কিছুই ভালো লাগেনা।
বাগানের গাছে বসা ওই পাখি,পাখির মিষ্টি স্বরধ্বনি।কিছুই ভালো লাগে না তার।
সবকিছু কেমন অসহ্য লাগে।
এতোসবকিছু ভাবার মাঝে আরমানের খানের গলা ভেসে আসে।
তিনি দরজার বাইরে দাড়িয়ে অপুকে ডাকে,
অপু উত্তর নেয়।ভেতরে আসতে বলে।
আরমান খান ধীরপায়ে এগিয়ে আসেন।
তার শরীর দিনকে দিন আরো খারাপের দিকে যাচ্ছে।
এইযে এতটুকু হাটাতেও তার শ্বাস জোরে জোরে উঠানামা করছে।
হাত পা অনবরত কাঁপছে।
আগেকার এতো এতো অনুতাপের মাঝে নতুন করে যুক্ত হয়েছে অপুর ব্যাপারটা।
কোন বিশেষ কারন ছাড়া অপুর সামনে আসেন না আরমান খান।
আসেন না বললে ভুল হবে,সামনে দাঁড়ানোর মুখ পাননা।
কোন মুখে দাড়াবেন অপুর সামনে তিনি?মেয়েটার জিবন যে নিজের হাতে নষ্ট করে ফেললেন আরমান খান।
এরই মাঝে অপু বলে ওঠে,
—আপনি এতো সকাল সকাল উঠলেন যে আজ?কোন দরকার?
আমায় বলতেন,আমি যেতাম আপনার ঘরে,আপনি কেনো কষ্ট করে আসতে গেলেন।
আরমান খান বলেন,
—এদিকে আয় তো মা,আমার পাশে বোস।
অপু খাটের পাশটায় বসে পরে।
আরমানের খানের মুখের দিকে তাকায়।লোকটার দিকে তাকালে তার মায়া হয়।
বৃদ্ধ বয়সে সন্তানকে কাছে পাবার কোন আশা তিনি করতে পারেননা।সন্তানকে ইচ্ছে হলেই বুকে জড়িয়ে নিতে পারেননা।
তার উপর কোন অধিকার খাটাতে পারেননা।
যৌবন বয়সে করা একটা ভুলের জন্য তিনি দিনরাত অনুতাপের আগুনে জ্বলেন। নিজের ভেতরটা তার নিয়মিত দগ্ধ হয়।
বাইরের শাস্তির চেয়ে এই অনুতাপের শাস্তি কি বেশি বড় নয়?
আরমান খান অপুর মাথায় হাত বুলান।
তার শ্বাস প্রশ্বাস কেমন টেনে টেনে চলে।
মনে হয় শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে।
—আমি জিবনে বহু অন্যায় করেছিরে মা।তবে সবচেয়ে শেষ অন্যায়টা হয়তো করলাম তোর সাথে।
—আপনি এভাবে কেনো বলছেন বাবা?
আরমান খান অপুর কথার প্রতুত্তর দেননা।
নিজের মতোই বলেন,
—আমাকে মাফ করে দিস মা।আমি ভেবেছিলাম বিয়ের পর নোমানটা ঠিক হবে,হয়তো তোকে মেনে নেবে।সুখের সংসার হবে তার।
বাবা হিসেবে এই চাওয়াটা কি আমার অন্যায় বল?
আমি তোর সাথে এমনটা হোক তা কোনদিন চায়নি মা।
আমাকে ক্ষমা করে দিস তুই।
বলতে বলতে কেঁদে ফেলেন আরমান খান।
অপু আরমান খানের হাত ধরে এক হাত দিয়ে।
আরেক হাত দিয়ে তার চোখের বিন্দু বিন্দু পানি মুছে দেয়।বলে,
—বাবারা সন্তানের জন্য কখনো খারাপ চায়?আপনি কেনো ক্ষমা চাইছেন বলুনতো?আমার ভাগ্যে এমনটা লেখা ছিলো তাই হয়েছে।
আরমান খান অপুকে বুকে জড়িয়ে নেন।
মাথায় হাত বুলান।একটু পরে ছেড়ে দিয়ে বলেন,
—তোকে একটা কথা বলবো মা?
—হ্যা,বলুন।
—তুই আবার পড়াশোনা শুরু কর।তোর ভার্সিটি থেকে কাগজপত্র তুলে নিয়ে আয়।এখানে একটা ভালো ভার্সিটিতে তোকে ভর্তি করাবো আমি।
অপু না বলতে যায় তার আগেই আরমান খান বাধা দেন।
—না বলবি না।তোকে নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে।
নোমানকে ফিরিয়ে আনতে হবে।
তোর যোগ্যতা দেখে যেন নোমান ফিরে আসতে বাধ্য হয়।
পারবিনা মা?
অপু মুচকি হাসে।
মুখে বলে পারবো।কিন্তু মনে মনে বলে,
—যোগ্যতা দেখিয়ে কি কাউকে ধরে রাখা যায় বাবা?ধরে রাখতে হয় ভালবাসা দিয়ে।
———————
তার পরেরদিনই অপু তার আগের ভার্সিটি থেকে কাগজপত্র তুলে আনে।
আরমান খান নতুন ভালো একটা ভার্সিটিতে অপুকে ভর্তি করিয়ে দিয়ে আসে।
অপুর এখানে বেশ কয়েকজনের সাথে পরিচয় হয় তবে সবচেয়ে ভাল বন্ধুত্ব হয় দুজনের সাথে।
পিহু আর রাহুল।
বড়লোক বাবা মায়ের আদুরে ছেলেমেয়ে তারা।
অপু তো ভেবেছিলো এতো হাই লেভেলের ভার্সিটিতে তার মতো মেয়ের কোন বন্ধুই হবেনা।
কিন্তু হয়।
রাহুল আর পিহু অন্য সবার চেয়ে আলাদা।অহংকারের ছিটেফোঁটাও নেই তাদের মাঝে।
অপুর বেশ ভাল লাগে তাদের।
তাদের সাথে হাসিমজায় দিন কাটে অপুর।
নিজের একাকিত্ব কে আড়ালে রেখে পড়াশোনায় ডুবে থাকে সারাবেলা।
তবে মাঝেমাঝে ভেতরের কষ্টটা গুমড়ে ওঠে।
চোখ ঝাপিয়ে বের হয়।
———–
নোমানের দিন কাটে কর্মব্যস্ততায়।
এরমাঝে কয়েকবার ব্যবসার কাজে বিদেশ থেকে ঘুরে আসে নোমান।
এতো এতো ব্যস্ততার মাঝে রাতে যখন ঘুমোতে আসে, অথবা সকালে নিরিবিলি পরিবেশে যখন কফিতে চুমুক দেয় তখন একটা মায়াবী মুখশ্রী চোখের সামনে ভেসে ওঠে।
মনের ভেতরকার সমস্ত রাগ জেদ ছুড়ে ফেলে ছুটে যেতে ইচ্ছে করে তার কাছে।
মাঝে মাঝে নিজের মনেই প্রশ্ন করে।আচ্ছা কেমন আছে সেই মায়াবতী?
সে কি সত্যিই মিসেস রিচির মতো লোভী?টাকার জন্য বিয়ে করেছে তাকে?
পরক্ষনে নিজের দাম্ভীক সত্ত্বা কানের কাছে চিৎকার করে বলে,
—হ্যা হ্যা ওই মেয়েটাও রিচির মতো লোভী।নয়তো তার বাবাকে পটিয়ে নিজের ভাইকে এতো এতো টাকা দিতোনা।
বড়লোক বাবাকে দেখে হুটহাট করে বিয়ের জন্য রাজী হতোনা।
নোমানের এতো অপমানজনক কথা শুনেও ওই বাড়িতে টাকার লোভে পরে থাকতোনা।
বিশ্বাস করতে ইচ্ছে না হলেও জোর করে বিশ্বাস করে নোমান।
সব ভাবনা ফেলে কাজে মন দেয় সে।
,
,—————————
,
আজকের দিনটা অপুর একটুও ভাল লাগেনা।
সারারাত ভর বৃষ্টি হয়েছে।চারপাশে এখন কাঁদা জমে আছে।
রাস্তা ঘাট সব ভিজে চুপচুপ।কালো মেঘ এদিক ওদিক ছোটাছুটি করছে। মনে হচ্ছে যেকোনসময় আবার বৃষ্টি হবে।কেমন যেনো গুমোট পরিবেশ।
অপুর এইদিনে ভার্সিটি আসার একটুও ইচ্ছে ছিলোনা।
কিন্তু আসতে হলো।পিহু আর রাহুল নাছোড়বান্দা। অপু আসবেনা শুনে তারা ফোনের পর ফোন দিয়ে অপুকে জালিয়ে মারছে।
অপু যেমন তেমন ভাবে তৈরি হয়ে বাড়ি থেকে বের হয়।
আরমান খান অপুর যাওয়া আসার জন্য একটা গাড়ি নির্দিষ্ঠ করে রেখে দিয়েছে।তারপরও অপু রিকশায় চলাফেরা করে।
গাড়িতে অপুর দমবন্ধ লাগে।
তারচেয়ে খোলা রিকশায় মোহনীয় বাতাস গায়ে লাগিয়ে আসা যাওয়া করাটাই ভালো।
তবে আজ অপু রিকশাও পায়না।
হাটতে হাটতে রাস্তা দিয়ে এগোয়।
অর্ধেক রাস্তায় এসে অপু রিকশা পায়।
তবু উঠতে ইচ্ছে করেনা।
হাটতেই ভালো লাগে।
আরো খানিকটা পথ পেরোনোর পর অপু পেছন থেকে কারও চিৎকার করে ডাকার আওয়াজ শোনে।
তবে সেটা অন্য কাউকে ডাকছে ভেবে পাত্তা দেয়না।
নিজের মতো করে হাটে।
আরো একটু এগোনোর পর একেবারে খুব কাছ থেকে কেউ বলে ওঠে,
—-রুপা।
অপু থমকায়।পেছন ঘুরে তাকায়।
দেখে তার ভার্সিটির সিনিয়র ভাই।রায়হায় ভাই।কদাচিত দেখা হয়েছিলো তাদের।
কথাও হয়েছে দু’একটা তাও সৌজন্যমুলক কথা।
তাকিয়ে দেখে রায়হান ভাই দুহাত হাটুতে রেখে মাথা নিচু করে হাঁপাচ্ছে।
অপু আশেপাশে তাকায়।
নাহ অন্য কোন মেয়েতো নেই আশেপাশে? তাহলে রুপা বলে কাকে ডাকে উনি?
রায়হায় বলে ওঠে,
—ভার্সিটি যাচ্ছো রুপা?
অপু অবাক হয়ে বলে,
—রুপা কে?
—কেনো তুমি?
—কিন্তু আমার নাম তো রুপা নয়।
রায়হান মাথা নিচু করে হেসে বলে,
—অপরুপা তো নাম।সেখান থেকে অপ টুকু বাদ দিয়ে রুপা বানিয়ে দিয়েছি।
খারাপ হয়েছে নামটা?
অপু হেসে ফেলে।বলে,
—না।
রায়হান হাফ ছাড়ে।
—যাক বাঁচালে, ভাবলাম তোমার নামটা বোধহয় পছন্দ হয়নি।
তো কোথায় যাচ্ছো বললে নাতো?
—ভার্সিটিতে।
—ওহ,আমিও যাচ্ছি।
একসাথেই যাই কি বলো?কোন আপত্তি আছে নাকি?
—না না,আপত্তি কেনো থাকবে।
অপুর ভালোই লাগে হাটতে।
রায়হান খুব মজার মানুষ।হাসির হাসির কথা বলে অপুকে হাসিয়ে মারে।নিজেও হাসে।
অপুর অবাক লাগে,এতো প্রানোচ্ছল মানুষও হয়?
ভার্সিটিতে এসে রায়হান নিজের মতো করে হেটে চলে যায়।অপু তার ডিপার্টমেন্টের দিকে হাটে।
পথিমধ্যে পিহু এসে পথ আগলে দাঁড়ায়।
মুখ ফুলিয়ে বলে,
—এতোক্ষণ কেনো লাগলো তোর?
—হেঁটে এসেছি তাই।কিন্তু ঠিক টাইমেই এসেছি দেখ।
—কোথায় ঠিক টাইম,একঘন্টা লেট করেছিস।
—কিন্তু ক্লাস তো এখনো শুরু হয়নি।
পিহু আরেকটু রেগে বলে,
—গোল্লায় যাক তোর ক্লাস।
অপু অবাক হয়।রাহুল পাশ থেকে বলে,
—কিছু বুঝলি নাতো?
অপু মাথা নাড়ে সে কিচ্ছু বোঝেনি।
রাহুল বলে,
—আরে পিহু তো এখন কলেজ করবেনা,আমাদের নিয়ে রেস্টুরেন্টে যাবে।
ট্রিট দেবে আমাদের বুঝলি?
—হঠাৎ ট্রিট কেনো?
—ক্রাশকে দেখার খুশিতে?
—ক্রাশ?
রাহুল এবার যেন অধৈর্য হয়।বলে,
—আরে বাবা সামনের রেস্টুরেন্টে নাকি পিহুর ক্রাশ মিটিং করতে এসেছে।পিহু অনেক কষ্টে খোজ নিয়ে জেনেছে।
তাই সেই রেস্টুরেন্টে যাবে তাকে দেখতে।
সেই সুবাদে আমাদেরও খাওয়াবে।
নয়তো আমরা যাবো কেনো?
পাশ থেকে পিহু তাড়াহুড়ো দেখিয়ে বলে,
—হয়েছে বোঝানো নাকি আরও দেরি আছে?আমার ক্রাশ তো চলে যাবে নাকি?তাড়াতাড়ি চল।
রাহুল আর অপু পিহুর পাগলামি দেখে একযোগে হাসে।
পিহু তা দেখেও কিছু বলেনা।অন্য সময় হলে তাকে নিয়ে হাসার অভিযোগে বিরাট আকারের ঝগড়া বাধাতো সে।
কিন্তু এখন তার একটুও সময় নেই।
তার ক্রাশকে দেখার জন্য সে মরিয়া হয়ে আছে।
,
,
পিহু অপু আর রাহুল রেস্টুরেন্টে পৌছায়।
টেবিল বুক করে তিনজন চেয়ার টেনে বসে।
রাহুল তার মনমতো খাবার দাবার অর্ডার করে।আজ সে পিহুর পকেট খালি করবে এমনটাই যেনো তার ইচ্ছা।
অপু সেদিকে তাকিয়ে আবার হাসে।
দুটো পাগল কিভাবে যে তার বন্ধু হলো সেটা অপু ভেবে পায়না।
পিহু চাপা কন্ঠে বলে ওঠে,
–অপু পেছনে তাকা,ওই যে ওদিকে তাকা ওদিকে।
কালো কোর্ট পরা হ্যান্ডসাম লোকটাকে দেখ।
তুই ও যদি দেখে ক্রাশ না খাইছিস তো বলছি কি।
অপু পিহুর কথামতো পেছনে ঘোরে।
চার পাঁচজন লোকের মাঝে একজনকে দেখে সে স্তব্ধ হয়।
এতোদিনের চেপে রাখা কষ্টগুলো হুড়মুড় করে মাথা চাঁড়া দিয়ে ওঠে।
চোখ ঝাপসা হয়।
মাথাটা ঘুরে ওঠে।
,
গল্পঃবসন্ত এসে গেছে
লেখাঃনুশরাত জেরিন
পর্বঃ১৩
,
কাঁপা কাঁপা গলায় অপুর মুখ থেকে বের হয়,
—নোমান খান?
পিহু বলে,
—-তুই চিনিস নাকি?তুইতো কোন নায়ক নায়িকাকেই ঠিক মতো চিনিস না?
যাইহোক লোকটা কি হ্যান্ডসাম না?
তুইও ক্রাশ খাইছিস বল বল?
পাশে বসে রাহুল রোস্ট খাচ্ছিলো।
খাবার চিবাতে চিবাতে গমগম করে বলে,
—হ সবাইরে তো তুই নিজের মতো ভাবিস।অপুকি তোর মতো নাকি যে যারে তারে দেইখা ক্রাশ খাবে?
পিহু ক্ষেপে ওঠে,
—ওই ছেমড়া,যারে তারে কারে কস তুই?
রাহুলও দম বার পাত্র নয়।বলে,
—ওই বেটারে কই।
আসল হ্যান্ডসাম পোলা তো তোর পাশে বইসা আছে।দেখিস নাহ?চোখ নাই?
পিহু মিছেমিছি খোজার ভান করে বলে,
—কই কাউকে তো দেখিনা।
এক মিনিট দাঁড়া দাড়া, বাই এনি চান্স, তুই কি তোর কথা বলছিস?
রাহুল গর্বিত ভঙ্গিতে কলার ঝাকায়।
পিহু শব্দ করে হেসে ওঠে।রাহুল ভেবাচেকা খায়।
পিহু হাসতে হাসতে বলে,
—নিজের চেহারা কোনদিন আয়নায় দেখেছিস?
দেখতে তো মেয়ে মেয়ে দেখায়।তারউপর ঘুরিসও আমাদের সাথে।
মাথার চুল আর জামা কাপড়ের জন্য একটু আধটু ছেলে ছেলে লাগে।নয়তো কেউ তো বুঝতোই না তুই মেয়ে নাকি ছেলে?
আর হ্যান্ডসাম?
কথাটা বলতে বলতে পিহু আবার হাসে।একেবারে ঘর কাঁপানো হাসি হাসে।
রাহুল রেগে ফুলে ফেপে ওঠে।খাবার খাওয়া এটো হাত দিয়েই পিহুর চুল টেনে ধরে।
পিহু ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে উঠে।
অপু এসব দেখেও কিছু বলেনা,হাসে ও না।তার কেমন যেনো মাথা ঘুরছে।হাউ মাউ করে কান্না পাচ্ছে। চুপচাপ মাথা নিচু করে বসে থাকে।
পিহু রাহুলের এই পাগলামি দেখে আশেপাশের টেবিল থেকে অনেকেই উঁকি দিয়ে দেখে।
কেউ এসব দেখে হাসে আবার কেউ কেউ বিরক্ত হয়।
বিরক্ত হওয়া মানুষের মধ্যে নোমান একজন।
একজন ক্লায়েন্টের সাথে মিটিংয়ে এসেছে সে।
নামীদামী এই রেস্টুরেন্টটা খুব নিরিবিলি থাকে।
সব হাই সোসাইটির লোকজন আসা যাওয়া করে এখানে।
কিন্তু আজ এতো হইচই হচ্ছে কেনো সেটা নোমান বুঝতে পারছেনা।
উঁকি দিয়ে কোলাহলপূর্ণ টেবিলের দিকে তাকায় নোমান।
সেখানে তিনজন ছেলেমেয়েকে দেখে।
দুজনের মুখ দেখা যাচ্ছে কিন্তু আরেকজন পিছন মুখ করে বসে থাকায় তাকে দেখতে পায়না নোমান।
দেখার ইচ্ছে ও জাগেনা।
সেদিক থেকে মুখ ফিরিয়ে আবার নিজের কাজে মন দেয় সে।
অপু উশখুশ করে।
তার এখানে বসে থাকতে মোটেও ভাল লাগছেনা।
কেমন যেনো দম বন্ধ হয়ে আসছে তার।
মনে হচ্ছে এই বুঝি নোমান তাকে দেখে ফেলবে।আর দেখেই মনে হয় রাগী গলায় চিৎকার চেচামেচি করে অপুকে অপমান করবে।যদিও অপু ওড়না দিয়ে ভালকরে মুখ ঢেকে নোমানের দিকে পেছন ঘুরে বসেছে।
তবুও ভয় লাগছে অপুর।
অসস্তি হচ্ছে খুব।
এসি রেস্টুরেন্টে বসেও দরদর করে ঘামছে।একটু পর পর জামার ওড়না টেনে কপালের ঘাম মুছছে সে।
একেকটা সেকেন্ড অপুর কাছে যুগযুগ মনে হচ্ছে।
হঠাৎ করেই দড়াম করে চেয়ার ছেড়ে দাড়িয়ে পরলো অপু।
পিহু আর রাহুল তখন নিজেদের খাওয়া নিয়ে ব্যাস্ত ছিলো।
একজন খাবার খাচ্ছিলো আরেকজন চোখ দিয়ে তার ক্রাশকে গিলে খাচ্ছিলো।
অপুকে দাড়াতে দেখে দুজনার নজর অপুর উপর পরলো।
রাহুলের মুখ ভর্তি খাবার থাকার কারনে সে তৎক্ষনাৎ কিছু জিজ্ঞেস করতে পারলোনা।তাড়াতাড়ি মুখের খাবার চিবাতে লাগলো।
পিহু জিজ্ঞেস করলো,
—কি হলো অপু?দাঁড়িয়ে পরলি কেনো?
অপু আমতাআমতা করলো।
সে কি বলবে বুঝে উঠতে পারলোনা।
কি বলবে সে?তার না মানা স্বামীর সামনে রেস্টুরেন্টে বসে থাকতে তার অসস্তি হচ্ছে? নাকি বলবে অপুর এখানে থাকতে দমবন্ধ লাগছে?
পিহু আর রাহুল অপুর জিবনের সব ঘটনা জানলেও তার স্বামীর নামটা জানেনা।
চেনেওনা কে অপুর স্বামী।
এখন পিহু বা রাহুলকে ব্যাপারটা বলা মানে তুমুলযুদ্ধ বাধানো।দুজনেই অপুকে খুউউব ভালবাসে।অপুর স্বামীর সব কথা শুনে তাকে তো তারা দু’চোখে দেখতে পারেনা।এখন তাকে চিনিয়ে দিলে নোমানকে দুজনে আস্ত খেয়ে ফেলবে।
রেস্টুরেন্টে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ বেধে যাবে।
পিহু অপুর হাত ঝাকায়।বলে,
—কিরে অপু?
অপু ধপ করে আবার চেয়ারে বসে পরে।
কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে বসে থাকে।
সে কি করবে বুঝতে পারেনা।
কিছু কিছু কঠিন মুহূর্তে অপুর মাথা কাজ করেনা,কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগে।
পিহু আর রাহুল বুঝতে পারে কোন কারনে অপুর মন ভালো নেই।তারা রেস্টুরেন্টের বিল পরিশোধ করে উঠে দাড়ায়।
অপুর দিকে তাকিয়ে হাসে।
অপু বুঝতে না পেরে বোকার মতো তাকিয়ে থাকে।
রাহুল এগিয়ে এসে অপুর কাধে হাত রেখে বলে,
—তোর এখানে ভাল লাগছেনা বললেই পারতি?
অপু প্রতুত্তর করেনা।বিনিময়ে কৃতজ্ঞতাসূচক হাসে।
————-
বাড়ি ফিরে অপু হাফ ছাড়ে বাঁচে।
নোমানের সম্পর্কে দিনকে দিন অপুর ধারনা খারাপ থেকে খারাপতর হচ্ছে।
নোমানের ফিরে আসা নিয়ে যে বিশ্বাস অপুর ছিলো তা আস্তে আস্তে ফিকে হয়ে যাচ্ছে।
কেন যেনো মনে হচ্ছে নোমানের জন্য অপু মিছেমিছি অপেক্ষায় আছে।
নোমান তো ঠিকই ভালো আছে। অফিস করছে,মিটিং এটেন্ড করছে কিচ্ছু তো বদলায়নি তার জিবনে।
সে তো বোধহয় ভুলেই গেছে তার একটা বউ আছে।
বউ?কথাটা মনে পরতে অপু তাচ্ছিল্যের হাসি হাসে।
নোমান তো বউ হিসেবে মানেই না তাকে।
———-
পরদিন কলেজে যাওয়ার জন্য তরিঘরি করে তৈরি হয় অপু।
তার দেরি হয়ে গেছে আজ।
প্রায় দশটা বেজে গেছে।
রুজি খালা আর নয়না খালার সাথে গল্পে গল্পে কখন যে এতো দেরি হয়ে গেলো অপু একটু বোঝেনি।
যেমন তেমন করে রেডি হয়ে এক পিস ব্রেড হাতে নিয়ে অপু দৌড়ে বাইরে বেরোয়।
ভাগ্য ভালো থাকায় রিকশাও পেয়ে যায়।
রিকশায় উঠে অপু অবাক হয়।
রিকশায় রায়হান ভাই বসে আছে।
অপুকে দেখে একপাশে সরে বসে সে যাতে অপুর শরীরের সাথে স্পর্স না লাগে।
ব্যাপারটা ছোট হলেও অপুর ভালো লাগে।
রায়হান ভাইয়ের জায়গা অন্য কেউ হলে হয়তো আরও এগিয়ে এসে বসতো,বিনা কারনে গায়ে ধাক্কা দিতো।এমন অভিজ্ঞতা অপুর হয়েছে অনেকবার।
কিন্তু রায়হান ভাই অন্যরকম।
রায়হানই প্রথম কথা বললো।
—আজ দেরি হয়ে গেলো?
অপু মাথা নাড়ে।বলে,
—আপনারও দেরি হয়েছে?
—হ্যা।আর বলোনা ঘুম থেকে উঠতে গিয়ে দেরি হলো।
কিন্তু এখন মনে হচ্ছে দেরি হয়ে ভালোই হয়েছে।
—কেনো?
রায়হান থতমত খায়।সে মনের ভুলে কথাটা বলে ফেলেছে।
অপুর দিকে তাকিয়ে দেখে সে জিজ্ঞাসু চোখে তাকিয়ে আছে।
রায়হান বলে,
—আরে ছাড়ো তো ঐসব।সামনে যে ভার্সিটিতে ফাংশন আসছে সে কথা মনে আছে রুপা?
অপু সে কথার উত্তর দেয়না।
বলে,
—আমায় আপনি অপু বলে ডাকবেন প্লিজ।
—কেন?রুপা নামে খারাপ কি?
—না খারাপ না।আমি সেকথা বলিনি আসলে রুপা বলে ডাকলে আমি হঠাৎ করে বুঝতে পারিনা আপনি কাকে ডাকছেন,বা কার সাথে কথা বলছেন।
রায়হানের দিকে তাকিয়ে দেখে সে তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে আছে।
অপু মাথা নিচু করে বলে,
—না মানে অপু ডাক শুনে শুনেই অভ্যাস তো।
—রুপা ডাকটা শোনাও অভ্যাস হয়ে যাবে।
গাল ফুলিয়ে আবার বলে,
—-তুমি যাই বলো আমি কিন্তু রুপাই ডাকবো।
অপু ফিক করে হেসে দেয়,রায়হানও হাসে।
রায়হান অন্যমনস্ক হয়ে বলে,
—হাসলে তোমায়,দারুণ লাগে রুপা।
অপু ঠিকমতো শুনতে পায়না কথাটা।বলে,
—কি?
রায়হান থতমত খায়,মাথা চুলকে আমতাআমতা করে বলে,
—কিছুনা,কিছুনা।
,
গল্পঃবসন্ত এসে গেছে
লেখাঃনুশরাত জেরিন
পর্বঃ১৪
,
,
ভার্সিটিতে পৌছে অপু ক্লাসের সামনে ভিড় দেখতে পায়।
অপু কৌতুহল বশত সামনে এগোয়।
ভিড় ঠেলে সামনে এগোতেই অপুর চক্ষু চড়কগাছ হয়।
দেখে পিহু আর রাহুল একজন আরেকজনের চুল আর কান ধরে টানাটানি করছে।
মনে হচ্ছে ওয়ান টুতে পরা বাচ্চারা খেলনার জন্য মারামারি করছে।
অনেক ছাত্র ছাত্রী এই ফ্রিতে বিনোদন উপভোগ করছে।
অপু হাসবে না কাঁদবে বুঝে পায়না।
তাড়াতাড়ি দুজনকে দুজনার থেকে টেনে আলাদা করে।
টানতে টানতে ক্যান্টিনে নিয়ে আসে।
চেয়ার টেনে দুজনকে বসায়।নিজেও বসে।
পিহু রাহুলের দিকে তাকিয়ে মুখ ভেঙচে দেয়,রাহুলও পাল্টা ভেঙচায়।
অপু হু হা করে হেসে ওঠে।
হাসতে হাসতে একপ্রকার গড়াগড়ি খায়।পেট চেপে ধরে হাসে।
পিহু আর রাহুল প্রথমে অপুকে এইভাবে হাসতে দেখে ভুত দেখার মতো চমকে ওঠে।পরে ওরাও হাসিতে যোগ দেয়।
অপু অনেক কষ্টে হাসি থামিয়ে দুজনার দিকে তাকিয়ে বলে,
—তোরা সত্যিই কি বাচ্চা?নাকি বুদ্ধিতে অপরিপক্ক?
পিহু বলে,
—আমি না রাহুল।
রাহুল বলে,
—কি আমি?
অপু আবার হাসে।এ দুটোর সাথে থাকলে অপুর মন খারাপ থাকার জো নেই।এমন এমন ঘটনা ঘটায় দুটোতে মিলে যে না হেসে পারা যায়না।
অপু হাসতে হাসতেই বলে,
—এবার বলতো ক্লাসের সামনে ওভাবে মারামারি করছিলি কেনো?
পিহু লাফিয়ে উঠে বলে,
—আমি বলবো।
রাহুল পিহুর ঘার ধরে বসিয়ে দিয়ে বলে,
—না আমি বলবো।
দুজনার আবার লেগে যায় কথা কাটাকাটি।
একজন বলে, আমি আগে বলবো,তো আরেকজন বলে আমি বলবো।
অপু মাথায়,হাত দিয়ে বসে থাকে।
মনে মনে ভাবে,
—এরা তো বাচ্চা বা বয়সে অপরিপক্ক না।
এরা তো পাগল,বদ্ধ উন্মাদ।
এমন সময় রায়হায় আসে ক্যান্টিনে।
অপুকে দেখে অপুদের টেবিলের কাছে এগোয়।
একটা চেয়ার টেনে বসে পিহু আর রাহুলের দিকে দেখে।
বলে,
—কি হচ্ছে এখানে?
পিহু আর রাহুল সেদিকে কর্নপাত করেনা।
তারা নিজেদের নিয়ে এতোটাই ব্যাস্ত যে পাশে কেউ বসেছে সে খবরও রাখেনা।
রায়হান পিহু আর রাহুলের থেকে কোন উত্তর না পেয়ে অপুর দিকে তাকায়।বলে,
—এরা তোমার বন্ধু? রিয়েলি?
কেমনে সম্ভব?
অপু হাসে।
রায়হান আবার বলে,
—এদের সাথে তোমার একটুও মিল নেই,এরা কতো শান্তশিষ্ঠ আর তুমি কতো দুষ্টু।
কথাটা যে রায়হান দুষ্টুমি করে বলেছে সেকথা অপু বুঝতে পারে।অপু হাসতে হাসতে বলে,
—আপনি ও তো ওদের মতো শান্তশিষ্ট।
রায়হান হু হা করে হেসে ওঠে।
—আমার কথা আমাকেই ফেরত দিচ্ছো?
অপু আর রায়হানের কথা বলার মাঝে পিহু আর রাহুল থামে।
দুজন দুদিকে তাকিয়ে থাকে মুখ ফুলিয়ে।
হুট করে দুজনে একসাথে চেয়ার ছেড়ে দাড়িয়ে পরে।
পিহু অপুকে উদ্দেশ্য করে বলে,
—আমি বাড়ি গেলাম অপু।আজ ক্লাস করবোনা।
কথাটা বলেই পিহু হাঁটা শুরু করে।
রাহুল অপুকে চোখ দিয়ে ইশারায় বোঝায় যাওয়ার কথা।সেও পিহুর পিছু ধরে।
রায়হান অপুর দিকে তাকায়।বলে,
—আসো আমরা ক্লাসের দিকে এগোই।
—না,আমি আজ ক্লাস করবোনা।
—কেন?ওরা চলে গেছে তাই?
অপু হ্যা সূচক মাথা নাড়ে।
সত্যি পিহু আর রাহুলকে ছাড়া অপুর একা একা ক্লাস করতে ভালো লাগেনা।
অন্য কারো সাথে ঠিকমতো কথাও বলতে পারেনা অপু।
রায়হানের বলতে ইচ্ছে করে,
—চলো তাহলে আজ একসাথে হেটে হেঁটে বাড়ি ফিরি।
কিন্তু বলা হয়ে ওঠে না।পাছে অপু কিছু মনে করে বসে সেই ভয়ে।
অপু সৌজন্যমূলক হাসি হেসে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাড়ায়।বলে,
—আচ্ছা তাহলে আসি ভাইয়া।
রায়হানের হাসি হাসি মুখে বিষন্নতা ভর করে।
যাওয়ার সময় এমন কথা না বললে কি হতো না?
—–
আসেপাশে আজ প্রচুর গাড়ি,রিকশা আছে।
সবগুলো রিকশা অপুর পাশ দিয়ে সাঁই সাঁই করে চলে যায়।
অপু রিকশায় ওঠেনা।আজ তার হাঁটতে ইচ্ছা করছে।আগে তো মাইলের পর মাইল হেঁটেই যাওয়া আসা করতো অপু।
আজ না হয় শখের বশে একটু হাঁটা যাক।
হাঁটতে হাটতে প্রায় অর্ধেক পথ চলে আসে অপু।
সামনে দেখে ফুটপাতে এক বৃদ্ধ মহিলা পরে আছে।
অপু দৌড়ে গিয়ে তাকে তুলে দাড় করায়।
বৃদ্ধ মহিলার শরীর প্রচুর দুর্বল,হাত পা কাঁপছে তার।
অপু টেনে দাড় করানোর পরও মহিলাটি অপুর গায়ে হেলেদুলে পরছে।
অপু টেনে হিঁচড়ে যেমন তেমন করে পাশে একটি চায়ের দোকানে মহিলাকে নিয়ে আসে।
পাশে বাশের তৈরি বেন্ঞ্চটায় বসায়।
কপালে হাত দিয়ে দেখে শরীর গরম।
মহিলাটির বেশভূষা দেখলেই বোঝা যায় তিনি ভিক্ষুক। তাছাড়া ভার্সিটিতে যাতায়াতের পথে বেশ কয়েকবার তাকে ভিক্ষা করতেও দেখেছে অপু।
অপুর তাকে দেখে বেশ মায়া হয়।
কেমন মলিন জামা কাপড় গায়ে তার।কুঁচকানো, অসুস্থ শরীর নিয়েও এই বয়সে সে ভিক্ষা করে?
অপু তাকে জিজ্ঞেস করে,
—আপনি এতো অসুস্থ অবস্থায় ঘর থেকে বেরিয়েছেন কেনো?
মহিলাটি কান খাড়া করে সে কথা শোনে।
বয়সের ভারে হয়তো কানেও কম শুনতে শুরু করেছে।
খুব কষ্টে মুখ নেড়ে কিছু বলার চেষ্টা করে।
কিন্তু সে কথা অপুর কান পর্যন্ত পৌছায়না।
অপু বোঝে অসুস্থ শরীরে বৃদ্ধার কথা বলতে কষ্ট হচ্ছে।
তাছাড়া হাত পাও কাপছে ক্রমাগত।
অপু আরেকবার জিজ্ঞেস করে,
—সকালে কিছু খেয়েছেন?
বৃদ্ধা মাথা নাড়ে।সে খায়নি।
সকাল তো দুর তিনি কাল থেকে না খেয়ে আছেন।তবে মুখ ফুটে কিছু বলতে পারেননা।
অপু মাথা নাড়ানো দেখে দোকানের কাছে এগোয়।
ছোট্ট একটা চায়ের দোকান হওয়ায় ভাল কোন খাবার চোখে পরেনা।
এককাপ চা আর কিছু টোস্ট কিনে নেয় অপু।
এছাড়া আর কোন খাবার দেখতে পায়না সে।
খাবার কিনে আবার বৃদ্ধার পাশে বেন্ঞ্চটায় বসে সে।
বৃদ্ধার হাতে চায়ের কাপ দিতে চায়।
বৃদ্ধা ধরতে পারেনা।হাত অনবরত কাপে তার।
অপু নিজের হাতে কাপে টোস্ট ডুবিয়ে বৃদ্ধার গালে তুলে দেয়।
বৃদ্ধা অতিরিক্ত খুশিতে কেঁদে ফেলে।
টলমল চোখে হা করে।
রাস্তায় যাতায়াতরত অনেকে এসব খেয়াল করে আবার অনেকে করেনা।
রেড সিগনাল পরায় গাড়ি থামে নোমানের।
গাড়ির জানালার কাচ সচারাচর বন্ধই থাকে নোমানের।
বেশ কয়েকবার গাড়ির কাচে টোকা পরায় বিরক্ত হয়ে কাচ নামায় নোমান।
দেখে এক বাচ্চা মেয়ে ফুলের মালা বিক্রি করছে।
বেলি মুলের মালা।
নোমানের মায়ের বেলি ফুলের মালা খুব পছন্দ ছিলো।দামী দামী গহনা পেলে যে পরিমান খুশি হতো তার থেকে হাজার গুন বেশি খুশি হতো বেলি ফুলের মালা পেলে।
নোমানের রুমের দেয়ালে মায়ের যে ছবিটা টানানো আছে তাতেও তার মায়ের চুলে জড়ানো ছিলো বেলি ফুলের মালা।
নোমান কথাগুলো ভেবেই হাসে।
তার মায়ের মতো হয়তো অন্য কোন মেয়ে আর হয়না।
অল্পতেই সন্তুষ্ট হয় নাকি কেউ এখন?
নোমান মেয়েটাকে ইশারায় না বোঝায়।
সে নেবেনা।নিলেও কাকে দেবে?
দেওয়ার মতো কেউ আছে কি?
নোমান মনে মনে খোঁজে। পেয়েও যায়।
তার বউ আছে।
হঠাৎ নোমানের মনে হয়, ওহ হ্যা,তার একটা বউ আছে।
কিন্তু তার কি বেলি ফুলের মালা পছন্দ হবে?সে তো লোভী?
সবুজ সিগনাল দিতেই গাড়ি চলতে শুরু করে।
নোমান গাড়ির কাচ উঠাতে যায়।চোখ পরে রাস্তার পাশের চায়ের দোকানে।
ওই মেয়েটার মতো দেখতে কেউ।
মেয়েটার নাম কি ছিলো?
নোমানের নাম মনে পরেনা।
ভাল মতো দেখার জন্য চোখ তীক্ষ্ণ করে তাকায়।
দেখে একটা বৃদ্ধা ভিক্ষুককে নিজের হাতে খাওয়াচ্ছে সেই মেয়ে।
পরম যত্নে চোখের পানিও মুছে দিচ্ছে।
নোমান বড়সড় ধাক্কা খায়।
মেয়েটি তো লোভী? সার্থন্বেষী?
তাহলে এসব কেনো করছে?কেন একজন ভিক্ষুককে ঘৃনা না করে পাশে বসিয়ে নিজের হাতে যত্ন করছে?
এতে কি স্বার্থ আছে তার?
তাহলে কি নোমানের ধারনা ভুল?মেয়েটা তার মায়ের মতো?মিসেস রিচির মতো নয়?এতোদিন ভুল ভেবেছে নোমান?
চলবে……