গল্পঃ অবশেষে তুমি
পর্ব – ৫
কলমেঃ Asma Aktar Urmi
– You are going to Bangladesh? great! (ক্রিস্টি)
– Yes
– You haven’t met your relatives for a long time. Go and meet them.
– I’ve no relative there.
– Then why are you going?
– Shimu’s wedding.
– Wow really? I wanna join with you. I’ve never seen Bangladeshi festivals specially wedding.
– সত্যি? চলো খুব মজা হবে। তুমি ওখানে গেলে আমারও খুব ভালো লাগবে। তারপর দু’জন একসাথে ফিরবো। তুমি যাবার জন্য রেডি হও।
– And then, it will be your turn.
– You mean?
– I mean after Shimu it’s your turn to get married. How sweet!
– (আমি কিছু বললাম না)
– Hey why are you silent?
ভাবছি কি বলবো। ক্রিস্টিকে সত্যিটা বলে দেবো? অবশ্য মিথ্যেও বলিনি কখনও। প্রয়োজন হয়নি তাই বলিনি। অতীতের কথা মনে করে কষ্ট পেতে চাইনি। তবে কষ্ট যে পাই না তা নয়। সবটুকু সময় আমাকে অতীতের স্মৃতি কুড়ে কুড়ে খায়। আচ্ছা, আমি কি নেহালকে এখনও ভালোবাসি? না না, তা হবে কেন? তাহলে ওর কথা মনে পড়লে কষ্ট হয় কেন? নাহ্ আর ভাবতে পারছি না।
– Say something Nisa(ক্রিস্টি)
– ক্রিস্টি আমি তোমাকে একটা কথা বলিনি নিজের সম্পর্কে।
– Come on you never say anything about yourself. Not only a topic.
– Today I’ll tell you everything.
– Then tell me.
– ক্রিস্টি আমি বিবাহিতা।
– I don’t understand.
– I mean I’m married. Or I can say, I was married.
– Where’s your husband?
– We got divorced long ago.
– খি বলচ? সে একন কোঠায়?
– বাংলাদেশে।
– Have you talked to him?
– No
– Since when?
– Since I’ve come here.
– Omg! খি হয়েচিল? আমাখে বলো।
ওকে সবকিছু বলতে শুরু করলাম। বাবা মাকে খুঁজতে গ্রামে গিয়েছিলাম সেটাও বললাম।
– Then what happened? Where are your parents? Did you find them in village?
নিজেকে ধরে রাখতে পারলাম না। কেঁদে ফেললাম।
– Hey honey don’t cry. We all have some tragedies in our life. But we have to overcome them.
– Yeah you’re right.
– একন বলো টোমার বাবা মা কোঠায়?
– They are no more. গ্রামে গিয়ে জানতে পারলাম আমার বিয়ের ৭ দিন পরই বাবা মারা গেছেন।
– So sad. Then what happened?
– চাচা চাচী আর আত্মীয়রা সবাই আমাকে দোষ দিতে লাগলো। আমি নাকি অশুভ।
– What is that?
– It means I was inauspicious.
– What? How can they say that?
– জানতে পারলাম বাবার মৃত্যুর পর মা-কে নানাবাড়ি নিয়ে গেছে আমার মামারা। মা না-কি ওখান থেকে আর আসেন নি। আমরা দ্রুত নানাবাড়ি গেলাম।
– What is Nanabari?
– My mom’s parent’s house.
– Okay. Then?
– ওখানে গিয়ে যা শুনলাম তার জন্য আমি প্রস্তুত ছিলাম না। সবাই বললো বাবা আর আমার শোক সামলাতে না পেরে বাবা মারা যাবার একমাস পর মা-ও আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন।
– You mean your mother also died?
– Yes. I lost my parents fot that scoundrel. I couldn’t forgive him. I was so shocked that I couldn’t even cry.
– আমি বেবেচিলাম টোমার খারাপ কোন কাহিনী আছে। বাট সেটা যে এট খারাপ ভাবটে পারি নি। টারপর কি হল?
– তারপর সুইসাইড করতে গিয়েছিলাম।
– What? Are you crazy?
– কি করতাম আমি? সবকিছু হারিয়েছিলাম। নেহালকে যখন ক্ষমা করলাম, ভালোবাসতে শুরু করলাম তখনই ওর জন্য আমার বাবা-মা মারা গেলেন। বেঁচে থাকার কোনো ইচ্ছা ছিল না। ট্রেনের নিচে আত্মহত্যা করতে গেলাম। ট্রেন আসার ঠিক আগ মুহুর্তে ডিসিশন চেঞ্জ করলাম। যার জন্য আমার জীবনের সবকিছু হারিয়েছি তাকে শাস্তি না দিয়ে আমি মরলে কি হবে? বরং আমি বেঁচে থেকে ওকে শাস্তি দিতে হবে।
– That’s like a brave girl. What did you do that time?
– তারপর ফিরে এলাম নেহালের কাছে। কারণ আমার আত্মীয়রা সবাই বাবা মায়ের মৃত্যুর জন্য আমাকে দায়ী করতো। তারা কেউ আমার সাথে কোনো সম্পর্ক রাখে নি। তাই বাধ্য হয়ে নেহালের কাছে ফিরে এলাম। কিছুদিনের মধ্যে নিজেকে স্বাভাবিক করলাম। ভেতর থেকে ভেঙে পড়লেও নেহালের সামনে স্বাভাবিক থাকার অভিনয় করতাম।
– then?
– আমার ইউনিভার্সিটি এডমিশনের সময় চলে এলো। নিজেকে শক্ত করলাম। পড়াশোনা করে আমাদের দেশের নামকরা একটা ইউনিভার্সিটিতে এডমিশন নিলাম। নেহালকে বললাম আমি ওর সাথে থাকতে চাই না। ও কারণ জানতে চাইলে আমি বললাম আমার স্বপ্ন পূরণ করতে চাই। আর ওর সাথে থাকলে আমি মন দিয়ে পড়াশোনা করতে পারবো না। নেহাল রাজি হয়ে গেল। ভার্সিটির হলে উঠলাম। প্রথম কয়েকমাস নেহাল টাকা পাঠালে নিতাম। কিন্তু পরে মানা করে দিয়েছিলাম। ও অনেক সাধতো কিন্তু আমি ওর কাছ থেকে কোনো খরচ নিতাম না। ভার্সিটির বৃত্তির টাকা আর নিজে টিউশনি করে পড়ার খরচ চালাতাম। নেহাল দেখা করতে চাইলে মানা করে দিতাম। খুব কম দেখা করতাম ওর সাথে। পড়ার প্রেশার না থাকলেও মিথ্যে বলতাম।
– then what happened?
– পড়াশোনা শেষ করার পর এখানে মানে ইংল্যান্ডে স্কলারশিপের জন্য এপ্লাই করেছিলাম। পেয়েও গেলাম। আমি চাইলেই বাবা মায়ের মৃত্যু পরপরই ওকে ডিভোর্স দিতে পারতাম। কিন্তু ওকে আমি বিশ্বাস করিয়েছিলাম যে আমি ওকে ভালোবাসি। সম্পর্কের মেয়াদ দীর্ঘ করছিলাম। তারপর ওকে নিঃস্ব করে ছেড়ে চলে এসেছি।
– এটা কি টুমি ঠিক করলে? He really loved you!
– হ্যাঁ বাসতো। আর আমার জীবন থেকে আমার সব ভালোবাসা খুশি কেড়ে নিয়েছিল ও। শাস্তি ওকে পেতেই হতো। আমার যেটা ঠিক মনে হয়েছে আমি করেছি। যেটা করে আমার মন শান্ত হয়েছে আমি সেটাই করছি।
– Tell me a thing.
– What?
– Are you really happy after doing these? Can you say that You don’t miss him? You don’t love him?
ক্রিস্টির কথার উত্তর আমার কাছে নেই। আমি জানি না আমি ওকে ভালোবাসি কি-না। ওকে মিস করি কি-না। তবে ওর কথা মনে পড়লে বুকের মধ্যে কোথায় যেন কষ্ট হয়।
– I don’t know. I don’t want to find out Cristy.
– You should find out. রিভেঞ্জ নিটে গিয়ে টুমি সাড়াজীবন একা না হয়ে যাও।
– Let’s not discuss this. Take preparation for going Bangladesh.
– Okay dear.
কফির মগটা হাতে নিয়ে বসে আছি। চিনি কম মনে হচ্ছে। আরেকটু চিনি মেশালাম। নাহ তবুও চিনি কম মনে হচ্ছে। কফিটা রেখে দিলাম। ক্রিস্টির সাথে কথা বলার পর থেকে মনটা হালকা লাগছে। তবে ওর কথাগুলো শুনে একটু কনফিউশনও লাগছে। আমি কি এখনও নেহালকে ভালোবাসি? এর উত্তর আমার কাছে নেই। আজ সন্ধ্যায় ফ্লাইট। ফিরে যাচ্ছি মাতৃভূমিতে। এতদিন পর! শিমু খুব খুশি। ও আমাকে নিয়ে কনফিউশনে ছিল যাবো কিনা। যাচ্ছি শুনে খুব খুশি হয়েছে।
১০ মিনিটের মধ্যে প্লেন ল্যান্ড করবে। বুকটা ধুকপুক করছে। অজানা একটা ভালো লাগা কাজ করছে।
শিমু এয়ারপোর্টে অপেক্ষা করছে। ওকে মানা করেছিলাম কিন্তু ও শোনেনি। আমাকে দেখেই জড়িয়ে ধরলো। সাথে শুভ আর ক্রিস্টিও আছে।
– কেমন আছিস?
– তোকে দেখে ভালো হয়ে গেলাম।
– ও কে? ক্রিস্টি?
– হ্যাঁ তোকে বলেছিলাম ও আসবে।
– Good to see you Cristy.
– Same here.
– আরে ইনি কে? তোদের সাথে এসেছেন?
– ও শুভ, আমাদের বন্ধু। আমরা একসাথে ইংল্যান্ডে পড়াশোনা করেছি।
– হ্যালো।
– হাই।
এর মধ্যে কোথা থেকে ৪-৫ জন আমাদের দিকে এগিয়ে এলো। শুভ সবাইকে দেখে হেসে দিলো।
– কেমন আছো মা?(শুভ)
– কেমন আর থাকবো বল। ঘরের ছেলে ঘরে ফিরেছিস এখন শান্তি।
শুভ আমাকে ওর পরিবারের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো। ওর বাবা, মা, দুই বোন, চাচী। একজনকে রিসিভ করতে এত মানুষ? আমি তো দেখে অজ্ঞান হবার মতো অবস্থা। শুভর বোন আমার কাছে এগিয়ে এলো।
– তাই তো বলি, ভাইয়া সারাক্ষণ তোমার কথা কেন বলে। তুমি এত সুন্দর তাই তো!
– শুভ আমার কথা বলে?
– হ্যাঁ। যখনই ভাইয়া বললো তোমরা একসাথে আসছো আমরা তোমাকে দেখতে চলে এলাম।
– আমাকে দেখতে এয়ারপোর্ট এসেছ তোমরা?
শুভ কথা ঘুরিয়ে দিলো।
– আরে ও যা নয় তাই বলছে। আমাকে রিসিভ করতেই এসেছে। তোমার সাথেও দেখা হয়ে গেল।
শিমু আমাকে কানে কানে বলল,
– ব্যাপার কি রে?
– জানি না। চল কেটে পড়ি। নয়তো ঝামেলা বাড়বে।
– আমাদের যাওয়া উচিত। দেরী হয়ে যাচ্ছে।
– নিসা, আবার কবে দেখা হচ্ছে?(শুভ)
– দেখি….(আমি)
– শিমু তোমার বিয়ের দাওয়াত শুধু বেস্ট ফ্রেন্ডকে দিলে আমাকে দিবে না?
– আরে এমন কিছু নয়। আমি তোমাকে ইনভাইট করতেই যাচ্ছিলাম তার আগেই তুমি বলে দিলে। তুমি কিন্তু অবশ্যই আসবে।
শিমু পার্স থেকে বিয়ের কার্ড বের করে শুভকে দিলো। আমার খুব রাগ হচ্ছে। ঝামেলাটা আমার সাথেই আসলো। আবার ওর পবিবারকেও আমাকে দেখালো। এখন আবার যেচে বিয়ের দাওয়াত নিচ্ছে। ওর থেকে যত সম্ভব দূরে থাকতে হবে।
শিমুর বাসার উদ্দেশ্যে ট্যাক্সিতে উঠলাম।
– তুই শুভকে দাওয়াত দিলি কেন?
– আমি কি ইচ্ছে করে দিয়েছি না-কি? দেখলি না কেমন করে নিজে নিজেই দাওয়াত নিলো। মনে হয় তোকে পছন্দ করে।
– মনে হয় মানে? ১০০% করে। তা নাহলে ওর ফ্যামিলিকে এখানে আসতে বলতো আমাকে দেখার জন্য? আপদ একটা!
– তুই কিন্তু ওর থেকে দূরে দূরে থাকবি।
– সে আর বলতে!
খানিক দূর আসার পর সামনে অনেক গাড়ীর ভীড় দেখলাম। আশেপাশে সবাইকে জিজ্ঞেস করতে বললো গন্ডগোল হচ্ছে। আমাদের ট্যাক্সির পেছনেও অনেক গাড়ি এসে দাঁড়িয়েছে। ড্রাইভার বারবার হর্ণ বাজাচ্ছে। না পারছে সামনে এগোতে না পারছে পেছাতে। হর্ণ শুনে একটা ছেলে ভীড়ের মধ্যে থেকে বেরিয়ে আসলো। ড্রাইভারকে শাসাতে লাগলো,
– চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকা যাচ্ছে না?
– ভাই আমাদের দেরী হচ্ছে।
– তোদের একার দেরী হচ্ছে? এখানে কত মানুষ বসে আছে দেখেছিস?
কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে ছেলেটা ড্রাইভারকে ঘুষি মারার জন্য হাত তুলল। আমার দিকে চোখ পড়তেই থমকে গেল।
এ আর কেউ নয়, নেহাল।
ও বিশ্বাস করতে পারছে না যে এটা আমি-ই। পাশে শিমুকে দেখে চোখে ইশারা করলো। শিমু বলল যে হ্যাঁ এটা নিসা। ও কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। আমি তো কিছু বলতেই চাই না। সামনে পেছনে অনেক গাড়ি দাঁড়ানো। আমাদের ট্যাক্সি নড়বারও জায়গা নেই। অগত্যা ট্যাক্সি থেকে নেমে হাঁটা শুরু করলাম। নেহাল পেছনে থেকে ডাকতে থাকলো। আমি থামছি না। থামার প্রয়োজনও নেই। নেহালও পেছন পেছন আসতে লাগলো। কিন্তু কিছুদূর আসতেই ওর দলের কে যেন ডাক দিলো। তাই আর আসতে পারলো না। মানুষ কখনো শোধরায় না এটাই তার প্রমাণ।
– ওভাবে চলে আসলি কেন?(শিমু)
– তো কি করতাম? ওর সাথে গল্প করতাম বসে বসে? এত বছর পরেও গুন্ডামি ছাড়ে নি হাহাহা।
– যদি বলি ওকে গুন্ডা তুই বানিয়েছিস তাহলে?
– মানে কি?
– যতদিন তুই ওর সাথে ছিলি ততদিন তো ও ভালো ছিল। তুই চলে যাবার পর ও আবার আগের মতো হয়েছে।
– হ্যাঁ আবার হয়েছে। কারণ ও আগে থেকেই এমন ছিল। কিছুদিন গুন্ডামি বন্ধ রেখেছিল তার মানে এই নয় যে ও ভালো হয়ে গিয়েছিল। আমাকে দেখানোর জন্য ভালো হয়েছিল।
– নিসা তুই ভালোভাবে জানিস ও পরিস্থিতির শিকার ছিল। তোকে পেয়ে সব ছেড়ে দিয়েছিল। কিন্তু তুই ভালবাসার অভিনয় করে শেষ পর্যন্ত ওকেই ছেড়ে দিলি।
– ওর জন্য আমার বাবা-মা মারা গেছে।
– নেহাল তোর বাবা-মাকে হত্যা করেনি। হ্যাঁ, ও প্রথমে যা করেছিল তা অবশ্যই অন্যায়। তার জন্য অন্যভাবে শাস্তি দিতে পারতি। ভালোবাসার অভিনয় করে ছেড়ে দেওয়া কতটুকু যৌক্তিক ছিল? ও যদি জানতো এসবের কারণে তোর বাবা-মা মারা যাবেন তাহলে কখনোই এটা করতো না।
– তুই তো দেখছি ওর সম্পর্কে অনেক কিছু জানিস!
– আগে জানতাম না। তুই যাবার পর ও সব সময় আমার কাছে তোর খোঁজ খবর নিতো। তখনই এসব জেনেছি।
– দেখ আমি এসব নিয়ে কথা বলে মুড অফ করতে চাইনা। তোর বিয়েটা হয়ে গেলেই আমি চলে যাব।
– যা ভালো বুঝিস কর।
চলবে……