গল্পঃ প্রেমমোহ লেখিকাঃ ফারজানা আফরোজ পর্বঃ ১১

গল্পঃ প্রেমমোহ
লেখিকাঃ ফারজানা আফরোজ
পর্বঃ ১১

সাদার মাঝেও বেশ গর্জিয়াস জামা রয়েছে। এখন থেকে ওইগুলো পড়বে। তোমাকে সাদা পোশাকে দেখলে মনে হয় আমি মারা গেছি। বিয়ের আগে আমাকেও মারতে চাও চাচাতো বোন?”

স্পন্দনের কথা শোনে রাজ্যর বিরক্তি নিয়ে স্পন্দনের চোখের দিকে তাকালো শুভ্রতা। এই প্রথম তাদের দু’চোখের মিলন ঘটলো। রাগে অভিমানের মিলন। শুভ্রতার চোখে রয়েছে আকাশ সমান রাগ, আর স্পন্দনের চোখে রয়েছে তীব্র অভিমান। চোখ না সরিয়েই তেজী গলায় বলে উঠলো শুভ্রতা,

–” আমার শরীর আমার ইচ্ছা। কোন কালার পড়বো কোন জামা পড়বো। আমার মন যা বলবে আমি তাই করবো আপনি প্লিজ নাক গলাবেন না।”

শুভ্রতার কথা শোনে মাথা ঝাঁকিয়ে হাসলো স্পন্দন। রাগী রাগী কণ্ঠস্বর তার কাছে শুনতে ভালোই লেগেছে। স্পন্দন ভাবছে, যাদের দেখতে মায়া মায়া মনে হয় তারা মায়াবতী, যাদের সূর্যের মত তেজ তাদের রৌদ্রানী, যাদের কথা ঝাল ঝাল তাদের লঙ্কাবতি, যারা সময় অনুযায়ী নিজেকে চেঞ্জ করতে পারে তাদের লীলাবতী। তাহলে শুভ্রতার নাম কি হওয়া উচিৎ? এইসব ভেবেই ঠোঁটের কোণায় হাসি ঝুলিয়ে রেখেছে স্পন্দন। সন্দিহান নজরে স্পন্দনের দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞাসা করলো শুভ্রতা,😒

–” এক্সকিউজ মি বড় চাচার ছেলে। কি এমন ভাবছেন যে মিটিমিটি হাসছেন? অবশ্য গার্লফ্রেন্ডের কথা ভাবছেন না। আপনার মত ছেলের জীবনেও গার্লফ্রেন্ড হবে না। নিশ্চয় আমাকে কষ্ট দেওয়ার কথা ভাবছেন? হ্যাঁ এইটাই হবে। জল্লাদ লোক একটা।”

এখনও ঠোঁটের কোণায় হাসি ঝুলিয়ে রাখলো স্পন্দন। শুভ্রতা যে তাকে বকা দিয়েছে তাতে ওর কিচ্ছু হয়নি। হাসি মাখা কন্ঠে বলতে লাগলো,

–” যেহেতু জানোই আমার কপালে গার্লফ্রেন্ড নেই তাহলে তুমি হয়ে যাও না আমার বউ। ওই আকাশ বাতাসকে ভুলে গিয়ে আমাকে স্থান দেও তোমার মনে। তাছাড়া আকাশ তো আর ফিরে আসবে না।”

–” গাড়ি থামান।”

–” কেন? সুইসাইড করবে আবার?”

–” আপনার সাথে যাবো না আমি। কেন এক কথা বলে বারবার কষ্ট দিচ্ছেন। ছোট থেকেই কষ্ট পেয়ে আসছি। মামা মামী তো কম কথা বলেনি। আমার জীবনে সুখ বলতে আকাশের সাথে যে কয়েকটি দিন আমি কাটিয়েছি তাই। কেন ওর কথা বলে আমাকে কষ্ট দিচ্ছেন? হ্যাঁ মানছি আমার আব্বু আম্মু আপনার সাথে হয়তো কিছু ভুল করেছে তার শাস্তি পেতেও আমি প্রস্তুত তাই বলে আমার হাজব্যান্ড এবং তার চলে যাওয়া নিয়ে আমাকে কষ্ট দিবেন না। আমার মনে আকাশ ছাড়া দ্বিতীয় কোনো পুরুষের ঠাঁই কোনোদিনও হবে না। আকাশের দেওয়া স্মৃতি নিয়েই আমি বাকিগুলো দিন বেঁচে থাকতে চাই।”

স্পন্দন মনোযোগ সহকারে শুভ্রতার কথাগুলো শুনলো। এখন তারও বড্ড খারাপ লাগছে। প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য সে এত নিচে নেমে পড়বে ভাবেনি। ঠিকই তো সে ভুল করছে শুভ্রতার সাথে। নিজের মনের সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে শুভ্রতার মুখের দিকে তাকালো। উজ্জ্বল মায়াবী মুখটির দিকে এক নজরে তাকিয়ে আছে সে। কান্না নামক শব্দটি দ্বারাও মানুষকে এত সুন্দর লাগে? কিন্তু শুভ্রতার চোখের পানি গাল বেয়ে টপটপ করে নিচে পড়ছে। স্পন্দনের মন হঠাৎ করেই কেঁপে উঠলো। দুই হাত শুভ্রতার গালকে স্পর্শ করতেই শুভ্রতা কেঁপে উঠলো। কান্না মিশ্রিত কণ্ঠে বলে উঠলো,

–” এই এই কি করছেন।?”

ধমকের সুরে বলল স্পন্দন,

–” দেখতে পাচ্ছ না চোখের পানি মুছে দিচ্ছি। ভার্সিটিতে গিয়ে যদি ক্লাস প্লের বাচ্চাদের মত কান্নাকাটি করো তাহলে লোকে কি বলবে? তাছাড়া স্পন্দন আহমেদ তোমাকে ভার্সিটি ভর্তি করিয়ে দিয়েছে। তোমার কান্নাকাটিতে আমার সম্মান থাকবে? তাই চোখের পানি মুছে দিচ্ছি। চুপচাপ বসে থাকো।”

–” মামার বাড়ির আবদার পেয়েছেন নাকি?”

–” নাআআ চাচাতো বোনের আবদার পাইছি। বেশি কথা বললে এই কাগজপত্র সব ছিঁড়ে তোমাকে বাসায় নিয়ে যাবো তখন দেখবো কেমনে পড়ালেখা করো।”

শুভ্রতা কথা বাড়ালো না। সে চায় না তার পড়ালেখা শেষ হয়ে পড়ুক। এখন তার একটাই স্বপ্ন ভালো রেজাল্ট করে ভবিষ্যতে ভালো জব করা। নিজেকে সাবলম্বী করে তোলা।

ভর্তির যাবতীয় কার্যকলাপ শেষ করে স্পন্দন বের হতে যাবে তখনই কারো সাথে ধাক্কা খেয়ে রাগী সুরে বলতে লাগল,

–” ওহহ শিট। চোখে দেখতে পান না। ডাফর।”

লোকটির দিকে তাকিয়ে হতবাক হয়ে গেলো স্পন্দন। লোকটিও তাকে দেখে অবাক।

–” স্পন্দন তুই এইখানে? সেদিন তো পালিয়ে গেলি আজকেও কি চলে যাবি?”

জড়িয়ে ধরলো স্পন্দনকে। স্পন্দনের মুখে খুশির আভা। সেও লোকটিকে জড়িয়ে ধরে মিষ্টি সুরে বলল,

–” আমি ভুলে গেছি নাকি তুই ? জানিস কত ফোন দেই তোকে। শালা তুমি তো এখন অল টাইম বিজি থাকো আমাদের সাথে কথা বলার সময় আছে তোমার? বাই দা ওয়ে, অন্তু তুই এইখানে ? সেদিনও দেখলাম ব্যাপার কি? কোনো দরকার ছিল নাকি বউ কিংবা গার্লফ্রেন্ডকে নিয়ে আসছিস।”

স্পন্দন জানে অন্তু এইখানে প্রোফেসর পদে আছে তবুও একটু বাঁশ দেওয়ার জন্যে জিজ্ঞাসা করলো,

অন্তু স্পন্দনকে ছেড়ে দিয়ে পায়ে পারা দিয়ে বলল,

–” ঘোড়ার ডিম। পড়ালেখা শেষ করার পর তোদের প্রিয় স্যার অর্থাৎ আফজাল হোক ওরফে আমার প্রাণ প্রিয় আব্বা তাহার ভার্সিটিতে প্রোফেসর হিসেবে যোগ দিতে বললেন। ভাব একটু, বয়স যে বেড়ে যাচ্ছে সেইদিকে এখনও তার কোনো খবর নেই। কত ইঙ্গিতে বুঝানোর ট্রাই করি এই বলে যে, আব্বা দেখো বিয়ের বয়স হয়ে যাচ্ছে তাড়াতাড়ি পাত্রী দেখা শুরু করো। কই উনি তো কানেই তোলেন না কথা। উনার এক কথাই আমার ভার্সিটির ভবিষ্যত্ হেড তুই না হতে পারলে তোকে জীবনেও বিয়ে করাবো না। তুই বল এইটা কোন ধরনের কথা?”

স্পন্দন পেটে হাত দিয়ে হাসছে। অন্তু তার বেস্ট ফ্রেন্ড। কলেজ থেকে শুরু তাদের ফ্রেন্ডশীপ। তবে অনেকদিন ধরে তাদের মাঝে যোগাযোগ খুব কম ছিল। তবে অন্তুর এইখানে প্রোফেসর হিসেবে থাকার কথা হৃদয়ের কাছ থেকে জেনেছে।

অন্তু সন্দিহান নজরে তাকিয়ে বলল স্পন্দনকে,

–” একটা মেয়েকে দেখলাম ভর্তি করিয়েছিস। আব্বুকে জিজ্ঞাসা করলাম কি হয় মেয়েটা তোর তখন উনি চশমার ফাঁক দিয়ে আমাকে দেখে বিরক্তি নিয়ে বললেন, তোমার কি এতে? যাও পরীক্ষার খাতাগুলো দেখে আসো।”

স্পন্দন জোরে জোরে হাসতে লাগলো। অন্তর ঘাড়ে হাত রেখে হাসি থামিয়ে বলল,

–” চল কোথাও গিয়ে বসি আর তোকে সব বুঝিয়ে বলি।”

–” হুম চল।”

দুই বন্ধু চলে গেলো। শুভ্রতা ক্লাসের ভিতর গিয়ে দেখলো মেয়ে থেকে ছেলে বেশি। যেহেতু গার্লস স্কুল,কলেজ থেকে পড়ালেখা করেছে তার ফলে অস্বস্তি লাগাটা স্বাভাবিক। দুইটা মেয়ে চুপচাপ বসে আছে। তাদের পাশে গিয়ে বসল শুভ্রতা। মেয়েটির চশমা থেকে শুরু করে জামা কাপড় সব নীল। বেশ আশ্চর্য হলো শুভ্রতা। মেয়েটির দিকে অবাক চাহনি নিয়ে তাকাতেই মেয়েটি হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল,

–” হ্যায় আই অ্যাম নীলাভি। ”

শুভ্রতাও হাত বাড়িয়ে দিয়ে মুচকি হাসলো। নিজের নাম বলতে যাবে তার আগেই নীলাভি বলে উঠলো,

–” তোমার নাম মে বি শুভ্রতা।”

শুভ্রতা এইবার অবাক হওয়ার চরম পর্যায় চলে গেলো। মুখ হা করে তাকিয়ে থেকে বলল,

–” তুমি জানলে কিভাবে আমার নাম শুভ্রতা। আমি তো তোমাকে বলিনি।”

নীলাভি রহস্যময় হাসি দিয়ে বলল,

–” তোমার জামার রঙ দেখে বলছি। দেখো আমার নাম যেমন নীলাভি তাই আমি সব নীল রঙ পরে এসেছি। তোমার নাম শুভ্রতা বলেই তুমি শুভ্র রঙ অর্থাৎ সাদা রঙ পরে এসেছ।”

শুভ্রতা হাসলো। নীলাভির কথাগুলো তার ভীষণ ভালো লেগেছে।

–” তেমনটা নয়। নামের কারণেই সেম রঙের জামা পড়বে সবাই সম্পূর্ণ ভুল ধারণা তোমার। রঙ জিনিসটা মূলত পছন্দ।”

–” হুম হুম তাও ঠিক। শুনো আজকে থেকে আমরা ফ্রেন্ড সো তুই করে বলব। আমি তোমাকে শুভ নামে ডাকবো তুমি আমাকে নীলু নামে ডাকবে কেমন?”

–” ওকে নীলু। দেখছিস আমি কত ফাস্ট।”

নীলু জড়িয়ে ধরলো শুভ্রতাকে। নীলু মেয়েটা সহজেই সবাইকে আপন করে নিতে পারে সেই ধারণা হয়ে গেলো শুভ্রতার। নীলু তখন পাশের জনকে চিমটি মেরে বলল,

–” আকাশ তুই কেন চুপ করে আছিস। শুভর সাথে পরিচয় হ।”

চুপ মেরে ফেলো শুভ্রতা। আকাশ নামটি তার জীবনের সবচেয়ে ভালোবাসার একটি নাম। এই নামটা শুনলে তার বুকটা কেঁপে ওঠে। নিজেকে সামলাতে বড্ড কষ্ট হয় তার। না চাইতেও চোখ বেয়ে টপটপ পড়তে থাকে নোনা জল। সে নিজেকে সামলাতে আদো পারবে কি? নাকি একটা নামেই বরাবরের জন্য আটকে থাকবে? নিজেকে সুন্দর জীবন কি সে উপহার দিতে পারবে না।

–” শুভ তোর হঠাৎ কি হলো। শোন, ওর নাম আকাশ। আমার একমাত্র বেস্ট ফ্রেন্ড। আজকের পর থেকে তোরও।

চলবে,

বানান ভুল ক্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here