গল্পটা আমাদের আপনিতেই আমরা পর্ব-১০

📚গল্পটা আমাদের
আপনিতেই আমরা
পর্ব-১০
#লেখনীতে-মারজানা দীনা

কি করলেন এটা আপনি হাঁ বলেন তো। বয়সের সাথে সাথে কী বুদ্ধিকেও বিদায় জানাচ্ছেন না কি??

কেনো আমি আবার কি করলাম?

কি করলাম মানে…কথন এর সামনে থেকে এভাবে টেনে নিয়ে আসার কোনো মানে হয়? কি মনে করবে ধূর!!

এতে মনে করার কি আছে সেটাইতো বুঝতে পারছি না। আপনি তো আমার তাই না নিয়ে আসতেই পারি।

হাহ্.. আপনার সাথে কথা বলা আর দেয়ালের সাথে কথা বলা এক। কোনো মানেই হয় না।

হু… বলেই আমাকে আলিঙ্গনে বদ্ধ করলেন।
একআনা…

হুম বলেন…

মেঘ ছুঁবেন…

মানে…

বলেছিলেন না আমার সাথে মেঘ ছুঁয়ে দেখতে চান। যাবেন আমার সাথে..

বুড়ো বয়সে কি ভীমরতি ধরেছে আপনাকে দুআনা?

উহু… তিলবতীর ইচ্ছে টাকে পূরণ করার শখ হয়েছে।

আপনার যেনো কত হলো এবার ৫৮ তাই না। তা এই বয়সে মধুচন্দ্রিমায় কোন পাগলে যায় শুনি!!!

শোনেন ৫৮ না এখনো হয় নি ঠিক আছে।still I’m a young man..হুহ্..

হ্যাঁ হ্যাঁ তাই তো। কদিন পর যখন নাতি-নাতনি দাদু বলে ডাকবে তখনও তো আপনি sweet sixteen তাই না?

সে ডাকলে ডাকবে।আর শোনেন আমি একা বুড়ো হয়নি আপনিও বুড়ী হয়েছেন।গতরাতে আপনার মাথায় আমি একটা পাকা চুল দেখেছিলাম বুড়ীবউ হাহাহা

হ্যাঁ তো। আপনার মতো তো আর রোজ রোজ ডাই করি না।

আমি মোটেই রোজ রোজ ডাই করি না। তবে একটা কথা কিন্তু আজো বদলায়নি বুঝলেন?

কি?

এতগুলো বছর পার করা, কেশের রং পাল্টে যাওয়া,এতবার কাছে আসার পরও আপনি ঠিক সেই প্রথম দিনের মতোই লালিমায় রক্তিম হয়ে যান।তখন আরো বেশি প্রেমে পড়ে যায়।তাই বয়সের কথা মাথাতেই থাকে না। আমার বাবুই পাখি..

ধ্যাত…

হা হা হা…

হয়েছে আপনার। এবার আমাকে ছাড়ুনতো।কথনকে খাওয়াতে হবে…

সেটা নিয়ে আপাতত না ভাবলেও চলবে।কথনের জন্য ওর আহম্মক আছে বুঝলেন।

পত্র কি এসে পড়েছে? কখন ফিরলো? বুঝতেই পারলাম না।

আপনি যখন কথনের সাথে গল্পের ঝুরি খুলে বসেছিলেন তখনই এসেছে।

ওহ্..

অনেকগুলো দিন পার করলাম।তাই না একআনা।

হুমমম।জানেন আমার না ভাবতেও অবাক লাগে আমাদের পুচকু এখন নিজেই বাবা হবে।আমরা দাদা-দাদী হব।

হুম।
________________

কথন!!! কথ…..

হুম বলেন। এমন ষাঁড়ের মত চেঁচাচ্ছেন কেনো?

ঐ কি বললি??আমি ষাড়ঁ!!!

ওমা দেখলেন আপনিও মানলেন যে আপনি ষাঁড়।

দেখ কথন বেশি হয়ে যাচ্ছে কিন্তু? আমি কিন্তু রেগে যাব?

সে তো আপনি বারোমাসই রেগে থাকেন।লাইক সর্দার অফ রাগীরাজ্য!!(ভেংচি কেটে)

হোয়াট ডু ইউ মিন বাই সর্দার অফ রাগী রাজ্য?

হোয়াট ফোয়াট রাখেন তো মিয়া।এই কারণেই বলি যাওয়ার আগে আপনাকে কোন সুখে রেখে গেলো??

মানে কি এসব?(প্রশ্নাত্মক দৃষ্টিতে) কে রেখে গেলো কাকে রেখে গেলো?

দেখছেন দেখছেন আমার আন্দাজই ঠিক।আপনি নিশ্চিত টুকে পাশ করেছেন।এতো সিম্পল মানে আরকি দুধের মত পাতলা বিষয় তাও বুঝতে পারছেন না।

কি যাতা বকবক করছিস? আর বাই দ্যা ওয়ে হোয়াট ইজ টুকে পাশ হাঁ?

বকবক কি বললাম?? শোনেন এই কথনের কথা না চিরন্তন সত্য।বাসি হলেও খাঁটি। এই যে কথায় কথায় ইংরেজি ঝারেন আপনি নিশ্চিত বৃটিশদের বংশধর। তাই বৃটিশরা দেশ ত্যাগের সময় আপনাকে কেনো যে নিলো না ভাবা আমার নিষ্পাপ, বাচ্চা, কোমল হৃদয়ওয়ালা ছোট্ট মন হাহ্… কি দুঃখু কি দুঃখু!!

কি সব বলে যাচ্ছিস এসব?

এই যে এইযে ঠিক এই কারণেই বলি আপনে টুকেপাশ।আরে ভাই বিষয়টা তো ব্ল্যাকহোলের মতই ছোট্ট..

আই এম দ্য মাহাফ আনান পত্র, অ্যা কার্ডিওলজিস্ট অফ ডিএমসি.. তোর কাছে টুকে পাশ মনে হচ্ছে লাইক সিরিয়াসলি!!!

হুমমম সেই তো যেই দুধ সেই দধি এমন হয়ে গেলো না ব্যাপারটা।

উফফ কথন!!!

কি উফফ উফফ হাঁ।সত্যিই তো ডাক্তার মানেই তো মুখস্ত জিনিস খাতায় বমি করে পাশ।

কিহহহ্…. একমিনিট একমিনিট তাই না ডাক্তার মানে বমি করে পাশ তো কে জানি ঢামেকের ২য় প্রফের স্টুডেন্ট কার জানি স্বপ্ন নিউরোলজিস্ট হওয়ার?

কার আবার অবশ্যই আমা….

হ্যাঁ হ্যাঁ বল কার…

হে হে হে কই কিছু না তো। কিছু বলেছি না কি।আমার মতো ছোট বাচ্চা কিছু বলতে পারে নাকি।

হাহাহা।পাগলী আমার।(বলেই আমাকে বেডে বসিয়ে দিয়ে আমার সামনেই হাঁটু মুড়ে বসে আমার কোলে মাথা রাখলেন।উদ্দেশ্য তার ছোট্ট সোনার সাথে কথা বলা)

আসসালামু আলাইকুম ছোট্ট সোনা।কেমন আছেন আপনি? আমি আপনার বাবাই বলছিলাম। আজকে মাম্মামকে না কি খুব জালিয়েছেন? এটা কি ঠিক বলেন? আপনার মাম্মাম যে আপনার বাবাইয়ের হৃৎপিণ্ড। একটু তাড়াতাড়ি উপস্থিত হোন যাতে দুজন মিলে দলভারী করে একসাথে জালাতে পারি।

আহা শখ কত। আমার সামনে বসে আমারই বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন।এই দাবি মানি না মানব না,মানব না।
কিরে পুচ্চি শুনছিস আমিও কিন্তু মাম্মাম মনে রাখিস হাঁ।

কথন!!(তার আদুরে ডাকে কেঁপে উঠলাম।এতক্ষণ হাসিতামাশার কথা বললেও এখন তার এমন আদুরে ডাকে অদ্ভুত ভালোলাগার সৃষ্টিহলো)

হুম বলুন

আমি অনেক খারাপ তাই নারে।একটু বেশিই খারাপ..

হঠাৎ এমন কেনো মনে হলো?

মনে হওয়াটা কথা না বরং কথাটায় সত্য কথন।তুই সবেমাত্র ১৯ এ পা রাখলি।মেধাবী ছাত্রী এককথায় ভীষণ ভালো যে কি না টপ ওয়ানের স্থান অর্জন করে মেডিকেলে ১ম বর্ষ থেকে ২য় বর্ষে উঠলি। যেখানে মন প্রাণ দিয়ে পড়ালেখা করে নিজের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়ার কথা সেখানে এখন তুই পাঁচ মাসের প্রেগন্যান্ট।পড়ালেখাটাও ঠিকমত করতে পারিস না হয়ত ইয়ার ড্রপও দেওয়া লাগতে পারে।তোর বয়সী মেয়েরা যেখানে কোনো দায়বদ্ধতা ছাড়াই স্বাধীনচিত্তে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে সেখানে তুই এই সময়টাতেই ঘরবন্দী হয়ে পড়লি।নিজের থেকে প্রায় ১০ বছরের মত বড় এমন একটা বুড়ো লোকের সন্তানের মা হতে যাচ্ছিস।আসলে না আমারই ভুল হয়ে গিয়েছে। আরো একটু সতর্ক থাকা উচিত ছিলো।তুই তো ছোট কিন্তু আমার তো বোঝা উচিত ছিলো। বড্ড ভুল হয়ে গিয়েছে। পারলে ক্ষমা করে দিস এই অধমকে।আমিও না স্বার্থপর খুব বেশিই স্বার্থপর।তাই হয়ত নিজ সন্তানের কথা ভেবেই এবোরশনের কথাটাও বলতে পারছি না…

আল্লাহর দোহায় লাগে প্লিজ চুপ করেন।কি বলছেন এসব।মাথা ঠিক আছে আপনার? পাগল হয়ে গিয়েছেন আপনি হাঁ?আমার কাছে আমার ক্যারিয়ার আগে না আর নাই পড়াশোনা।এটা বলছি না যে সেগুলো অনর্থক।সবচেয়ে বড় কথা যেই মানুষটাই আমাকে স্বপ্ন দেখালো, নিজের প্রতি নিজের আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করালো,সেই মানুষটাকেই আমি ভীষণণণ ভালোবাসি।যার হাত ধরেই স্বপ্ন দেখার সূচনা শুধু কিছু সময়ের উচ্চমর্যাদা বা পদমর্যাদার জন্য আমি সেই মানুষটারই হাত ছেড়ে দিব এটা অসম্ভব। যেখানে আমি জানি মানুষটা সর্বদা আমার পাশে ছিলো আছে এবং থাকবে সেখানে আমি সেই হাতটাকে কিভাবে… আর বয়সের কথা কি বলছেন এসব হাঁ ভালোবাসি আমি। আমার বুড়ো মশাইকে এমন এভাবেই ভালোবাসি যেমন সে।ভালোটাতো আর একা আমি না আপনিও বাসেন।তাহলে কি করে বলতে পারলেন এভাবে?

কথন আমি…

শসস.. আমার কথা এখনো শেষ হয় নি।সন্তানকে নিয়ে কি বলছিলেন যেনো,পাগল আপনি?? ও আমাদের দুজনেরই অংশ।আমাদের প্রণয়ের সুন্দরতম পূর্ণতা।শোনেন শুধু মা হলেই পূর্ণতা আসে না,আর নাই বা উচ্চপদাধিকারী হলে পূর্ণতা আসে।আর আমি তো সেখানে পরম সৌভাগ্যের অধিকারী।যার আপনার মতো একজন সে আছে।যে তাকে বোঝে।জানেন আমি নিজেকে পরিপূর্ণ একজন নারী মনে করি।কারণ আমি আজ যেমন আপনার সন্তানের জননী আগামীকাল ঠিক দেখবেন নামের আগে ডক্টর টাও লাগিয়ে ফেলতে পারব।কারণ আমি জানি আপনি আমার পাশে থাকবেন।

সে তো আমার শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্তই আছি। কিন্তু তারপরও তো…

এখানে তো আর কোনো কিন্তু নেই।আপনি হয়তো ভুলে গিয়েছেন মাইমাও কিন্তু গর্ববতী অবস্থাতেই মাস্টার্স ফাইনাল দিয়েছিলেন এবং ঈর্ষণীয় ফলাফলের সাথেই উত্তীর্ণ হয়েছিলেন।আজ কিন্তু তিনি শুধুই আনায়া আনান না বরং ইংরেজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর আনায়া আনান।ইনশাআল্লাহ আমিও পারব।
কারণ নারীরাই যেমন রাঁধতেও পারে তেমন চুল বাধতেও পারে।
জানেন মাইমা যখন গৌরবের সাথে মাইবার কথা বলেন, যে তিনি কিভাবে মাইমার পাশে দাঁড়িয়ে স্বপ্ন পূরণে ঢাল হয়েছিলেন। সংসার বা সন্তান নিয়ে চাপ না দিয়ে বরং সংসার আর সন্তান যেহেতু দুজনের তাই দুজন মিলিয়েই সামলিয়েছেন। যার ফলস্বরূপ আজ তারা পরস্পরের হাত ধরে বিবাহিত জীবনের সুদীর্ঘ ৩০ টা বসন্ত অতিক্রম করছেন।মাইমার চেহারায় যখন মাইবাকে নিয়ে ভালোবাসার উজ্জ্বলতা, প্রাপ্তির অহংকার ফুটে উঠে ঠিক তখন আমার নিজেকেও খুব সৌভাগ্যবতী মনে হয়।
কেনো জানেন? কারণ আপনি আমার অর্ধাঙ্গ। আমার একান্ত ব্যক্তিগত আপনি।এর চেয়ে বেশি আর কিই বা চায় একজন নারী।শোনেন নারীর কাছে সবচেয়ে সুন্দরতম প্রাপ্তি হচ্ছে তার পুরুষের চোখে নিজের জন্য সম্মান দেখা, নিজের স্বপ্নের জন্য উৎসাহ দেখা,হাতটা বাড়িয়ে বলা আমি আছি তো,সকল পরিস্থিতিতে তার সঙ্গ পাওয়া আর হাঁ তার সন্তানের জননী হওয়া।এইতো আরকি…

এতো কেনো ভালোবাসিস আমাকে?

আপনি যে আমার পত্রকথনের পত্র যাকে ছাড়া কথনকে কল্পনা করাটাও বোকামি।

হু….

#চলবে
আমি অত্যন্ত দুঃখিত দেরী হয়ে যাওয়ার জন্য।কিছু পারিবারিক সমস্যায় পরেছিলাম। সাথে আরো দুঃখের বিষয় হলো যেটা নোট করা ছিলো সেটা ডিলিট হয়ে যাওয়া।পুনরায় লিখতে গিয়ে বুঝতে পারছি না যেটা ফুটিয়ে তুলতে চেয়েছি সেটা হচ্ছে নাকি হচ্ছে না।কিছু কথা বাদও পড়ে গিয়েছে। তাই নিজেই দ্বিধায় আছি।কথাগুলোকে কিভাবে নিবেন সেটা সম্পূর্ণ আপনাদের নিজস্ব অভিমত।তারপরও বলছি লেখাটা আমার ব্যক্তিগত চিন্তাভাবনা থেকে লেখা তাই অবশ্যই ভুল-ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইল।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here