গল্পটা আমাদের আপনিতেই আমরা পর্ব -১১

📚 গল্পটা আমাদের
আপনিতেই আমরা
পর্ব -১১
#লেখনীতে-মারজানা দীনা

মাইমা,মাইমা,মাই…

হুমমমম… বল কি হয়েছে? এত অস্থিরতা কিসের শুনি?

আমার মাইমাটা কি করে?(আদুরে ভঙ্গিতে)

ওলে বাবা আমার বাচ্চাটা এতো আদুরে।

ধ্যাত..বলো না কি করছো?

এইতো বই পড়ছিলাম।

ওমা এ দেখি উপন্যাস।মাইমা তুমি উপন্যাসও পড়ো??

হুম।না পড়ার কি আছে।আর এই টাতো আমার ভীষণণণ পছন্দের।

মাইবা দিয়েছে তাই না!

হুম।জানিস তখন আমি সাতমাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলাম।ভরা পেট নিয়ে হাঁটাচলা করতেও কষ্ট হতো।তারওপর সারাদিন ঘরে বসে ভালোও লাগত না।তো একদিন দুআনা মানে তোর মাইবা অফিস থেকে ফিরার সময় হাতে একটা বড় প্যাকেট নিয়ে আসলেন।আমি তো সেই খুশি এই ভেবে যে গিফট পাব।কিন্তু তোর মাইবা বললেন ওটা নাকি গিফট না একটা পার্সেল।আমার যে কি ভীষণ মন খারাপ হয়েছিলো।সেই বিকেল থেকে মুখ ফুলিয়ে ছিলাম।একটা কথাও বলিনি তোর মাইবার সাথে।রাতে যখন তোর মাইবা ঘুমানোর সময় আমাকে জড়িয়ে নিয়েছিলেন তখনও মুখ ফুলিয়ে সরিয়ে দিয়েছিলাম।কোথায় ভাবলাম সে আমার মান ভাঙ্গাবে উল্টো তিনি হো হো করে হাসা শুরু করেছিলেন।রাগে দুঃখে অভিমানে আমিতো কান্নায় করে ফেলেছিলাম।অথচ তিনি বলেছিলেন-

একআনা জানেন আমার না একটা মানীনি আছে।

তার এমন কথা শুনে আমি নিজেই আবুল হয়ে গিয়েছিলাম।মানীনি আবার কি জিনিস? একটা দুটা হয় নাকি? এমন উদ্ভট চিন্তার মাঝে বুঝতেই পারিনি কখন যে আমার স্থান তার বক্ষে হয়ে গিয়েছিলো।
তবে সে খুব যত্নে আমার কপোলে হস্ত গলিয়ে বলেছিলেন_

হুমম একটাই মানীনি আমার।সে আমার অভিমানীনি।আপনি জানেন, সে যখন মুখ ফুলিয়ে বসে থাকে তখন কি ভীষণ স্নিগ্ধতা বিরাজ করে তার কায়ায়। আমি মুগ্ধ নয়নে তার পানেই চেয়ে রই।তাই তো ইচ্ছে করে আরো বেশি মান করায়।

আপনি ভীষণ বাজে দুআনা। খুব খুব বাজে।ভীষণ মন্দ।

আপনারই তো এই মন্দ আমিটা।ভালোবাসি..(বন্ধনে আবদ্ধ করে)

মন্দবাসি।(ঠোঁট ফুলিয়ে)

এতেই আমি তুষ্ট তিলবতী।আর শোনেন গিফটা আপনার জন্যেই।

লাগবে না হুহ্।আমার বাবাই আছে বললেই… পুরো কথাটা শেষ করতেই দেননি তিনি। সেই পথই বন্ধ করে দিয়েছিলেন।

ওওও…. কি প্রেম গো মাইমা..দেখো দেখো এখনো তুমি পুরাই স্ট্রবেরী হয়ে গেছো?

ধ্যাত কি যাতা বলছিস তুই। ভুলে যাচ্ছিস আমি তোর শাশুড়ী হই।এভাবে কেউ বলে নাকি!!

কেনো বলা যাবে না। তুমি আমার শাশুড়ী হওয়ার আগেই আমার বন্ধু বুঝলে মাইমা।আর তাছাড়া প্রেম করবা তোমরা আর আমি বললেই যাতা হু…

খুব পেকে গেছিস তুই বুঝলি বুড়ী।

শোনো আমি আর এখন এতটা ছোটও না হুহ্।আমি তোমার একমাত্র ননদিনী মিয়ামির মেয়েই না সাথে তোমার একমাত্র পুত্র পত্রের অর্ধাঙ্গিনীও হুম..

হুমম… তা ঠিক।আমার তো ভাবতেও অবাক লাগে এই পুচকি মেয়েটাই নাকি সবার সামনেই ছেলেকে রেখে ছেলের মাকে প্রপোজ করে বলে যে_
ওহে ইয়াং লেডি তুমি কি আমার একমাত্র শাশুড়ী হবে?
হাহাহা

কি আর করব বলো তোমার যেই ছেলে পুরাই আহম্মক একটা।লুকিয়ে লুকিয়ে ভালোবাসবে ঠিকই অথচ মুখে বলতেই পারবে না।শুধু বয়সেই বুড়ো হয়েছে বুঝলে বুদ্ধি এখনো হাঁটুতে।

শোন আমার ছেলে যথেষ্ট ভালো বুঝলি।নাহলে কি আর বুড়োর প্রেমে পড়তি নাকি।

উফফ মাইমা আমার কথা রাখতো। তোমাদের গল্প বলো নাাাা!!!

আমাদের গল্প?

হুম।আরে ঐ যে ঝাড়ু নিয়ে তোমার দুআনার পিছনে দৌড় দিলে তারপর কি হলো?মাইবা নানীমুনিকেই কিভাবে মা বলে ডাকলেন?

তারপর…

হুম হুম…

সেদিন রাতে এমন মারামারি করেই কেটেছিলো।পরের দিন সকালেই আমরা পৌঁছে গিয়েছিলাম ও বাড়িতে।
কলিং বেল বাজার সাথে সাথেই মা দরজা খুলে দিয়েছিলেন_

ওহ্ এসে পড়েছিস তোরা? কোনো সমস্যা তো হয়নি না?

না মা। কোনো সমস্যায় হয় নি।এইযে একদম ঠিক আছি আমরা।(একআনা)

তোদের দেরি হচ্ছিল দেখে ভাবলাম কিছু হলো না কি আবার?তাই আরকি একটু আকটু চিন্তা..(মা)

না না সব ঠিকই আছে।কিন্তু কেউ যদি রেডি হতে গিয়ে ঘণ্টা পার করে দেই তাহলে তো দেরি হবেই তাই না?(দুআনা-খোঁচা মেরে)

এই এই কে দেরি করেছে হাঁ। আমি আপনার আগেই রেডি ছিলাম। আবার আমার কাছে আইসা দেইখেন কি করি!! সুন্দর সুন্দর বলে শেষে তো আপনিই আমার শাড়ীর ভাঁ… বলেই জিহ্বায় কামড় দিয়েছিলাম। ভুলেই গিয়েছিলাম যে এখানে মাও আছেন।আর উনি তো অপ্রস্তুত ভঙ্গিতে কাশতে কাশতেই ভিতরে গিয়েছিলেন আমাকে ফেলে।আর আমিতো লজ্জায় পারি না মাটিতেই ঢুকে যাই।
কি এক অবস্থা ভাবা যায়..

বাব্বাহ্ ছেলে দেখি বউকে ভালোবাসতেও জানে!!হয়েছে হয়েছে আর লজ্জায় লাল হতে হবে না আপনার সে চলে গিয়েছে।

মা আপনিও শুরু করলেন…

হাহাহা..তবে ভালোই লাগছে তোদের এভাবে দেখে।হাহ্ আমি তো আশায় ছেড়ে দিয়েছিলাম যে এই ছেলেও কোনোদিন এমন চঞ্চলতা ফিরে পাবে।তোর জন্যই সম্ভব হয়েছে।আমাদের এলোমেলো হয়ে যাওয়া সম্পর্কটা একটু একটু করে গুছিয়ে দেওয়ার জন্য কৃতজ্ঞতা শিকার করলেও কম পড়ে যাবে।

ছি ছি মা এভাবে বলবেন না।আপনারাই তো আমাকে আপন করে নিয়েছেন সেটাই আমার সৌভাগ্য। আর দোয়া করবেন যেটুকু বাকি আছে সেটাও যেনো খুব শীঘ্রই সম্পন্ন হয়।

ইনশাআল্লাহ। তবে তোকে দেখে আমার কেনো জানি মনে হচ্ছে খুব শীঘ্রই কোনো সংবাদ পাওয়া যাবে।দাদা-দাদি হবো নাকি?

কি যে বলেন না মা।এমন কিছু না।

উহু তেমন কিছুই।তোকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে। কেমন জানি শরীর ভেঙ্গে গিয়েছে।ডেট কি স্কিপ হয়েছিলো না কি?

মায়ের কথাতে যেনো আমি আরো বেশি আড়ষ্ট হয়ে পড়ছিলাম।তবে এটা ঠিক আমার ডেট স্কিপ হয়েছে কিন্তু তেমন কোনো লক্ষণ তো প্রকাশ পায় নি তাই আর অতো ভাবিনি।হরমোনাল ইমব্যালেন্স ভেবেছি।

শোন একটা কথা বলি টেস্ট করিয়ে নিস।সবার সময় একরকম লক্ষন দেখা যায় না।অনেকের তো ব্লিডিং ও সময়মত হতে থাকে বুঝতে পারে না।তাই বলি কি একটু খেয়াল রাখিস।
কেনো জানিনা মায়ের কথাতে আমিও আশাবাদী হয়ে পড়লাম।সত্যিই কি তেমন কিছু। পরে আর ভাবার সময় হয়ে উঠে নাই।
কি গো মা তুমি কি আমার ভাবীপু কে দরজায়ই দাঁড় করিয়ে রাখবে নাকি।উফফ তোমরা পারোও বটে বলেই মিয়ামি আমাকে টেনে ভিতরে নিয়ে গিয়েছিলো।এরপর আর কি সারাদিন আনন্দের মধ্যেই কেটেছিলো।আমিও ভুলে গিয়েছিলাম সেসব।
দুদিন পর কি মনে করে জানি আমিও ভাবলাম একবার টেস্ট করেই দেখি।যেই ভাবা সেই কাজ।ভোরেই আমি টেস্ট করলাম।স্টিকটা হাতে নিয়ে রেজাল্টের আশায় বারান্দায় ছিলাম।ঠিক যেই মুহূর্তে ফলাফল টা দেখতে পেলাম ঠিক সেই মুহূর্তেই কাঁধে কারো স্পর্শও পেলাম।অতিপরিচিত কারো উপস্থিতি….

একআনা,কি হয়েছে আপনার? খারাপ লাগছে?এত ভোরে উঠলেন যে? এখনও তো আলোই ফোটে নি।
একআনা..

আমি তো নিজের মধ্যেই ছিলাম না। অদ্ভুত এক অনুভূতির সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েই থমকে গিয়েছিলাম।তার কোনো কথায় যেনো শুনতে পাচ্ছিলাম না।

একআনা… কি হয়েছে আপনার? কোনো সমস্যা…

হু… বলেই তার দিকে ফিরলাম।অশ্রুসিক্ত নয়নেই তার দিকে দৃষ্টিপাত করেছিলাম।দেখতে পেলাম তার কুঁচকানো ভ্রুটা শিথিল হচ্ছে আর তার নজরে অবিশ্বাস্য কোনো কিছু দেখার পরের অবাকতা।
সত্যি বলতে আমরা কেউই এমন কোনো পরিকল্পনা নিয়ে ছিলাম না।কিন্তু হঠাৎ করে হয়ে যাওয়া প্রণয় মুহূর্তের সুন্দরতম উপস্থিতির আগমনী বার্তাটা সুখকর ছিলো।
তবে কথা বলাটা আর হয়ে উঠে নাই।আমিও চুপ,সেও চুপ।শুধু আমার হাতে রাখা স্টিকটা ঠাঁই পেয়েছিলো ছোট্ট একটা বক্সে।আর আমি তার বক্ষে।কোনো কথা ছাড়াই আমাকে বিছানায় নিয়ে শুইয়ে দিয়ে নিজেও আমার পাশেই আমাকে জড়িয়েই ছিলেন।
ভোর কেটে গেলো, আলোর উজ্জ্বলতা বাড়লো, সময় গড়িয়ে গেলো কিন্তু কোনোরূপ প্রতিক্রিয়া ছিলো না আমাদের।কিছু কিছু মুহূর্তের মাধুর্য কিন্তু নিশ্চুপতাই বৃদ্ধি করে।
একান্তে নিভৃতে ছিলাম সে আর আমি।তার আমার পরিচয় থেকে শুরু করে জীবনের ভিন্ন ভিন্ন মোড়ে দেখা হয়ে যাওয়া, সম্পর্কের বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে পড়া অবশেষে সেই বন্ধনে আরো একটি সংযোজন।
সেদিন আর তার অফিস যাওয়া হয়ে উঠলো না।বেশ অনেকটা সময় পড় আনুমানিক সকাল ১০ টা বাজবে হয়ত তখন সে আমাকে ডেকে উঠলো_

একআনা?

হুম..

আপনার কিন্তু মাস্টার্স ফাইনাল পরীক্ষা আর চরমাস পর।

হু… জানি আমি।

আমি সর্বদা আপনার সাথে, আপনার পাশেই আছি।পিছন ফিরলেই আমাকে পাবেন।

হু…

আপনার সকল সিদ্ধান্তই আমি মেনে নিব।এবার বলেন আপনি কি চান?

আমার একটাই চাওয়া আপনার কাছে প্রকৌশলবাবু। রাখবেন তো?

বিশ্বাস রাখতে পারেন।

আমার না একটা পরিবার চায়।একটা সংসার চায়।ভরা একটা পরিবার।মা, বাবা, ছোট বোন, আপনি আমি আর আমাদের ছোট্ট সোনা।সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না,ভালো-মন্দ,
মান-অভিমান এসব নিয়ে ভরা একটা বাড়ী চায়।আপনার আমার একটা ঘর চায় প্রকৌশলবাবু।

হুমমম…
হঠাৎ করেই আমার ফোনটা বেজে উঠলো।তার হাতের কাছে থাকায় সেই নিলো।আমি বুঝতে পারলাম না ফোনের ওপাশে কে আছে।তবে এটুকু বুঝতে পারলাম আমি যাকে জড়িয়ে আছি সে মৃদু কাঁপছে।বড্ড অস্বাভাবিক লাগলো আমার কাছে।তার কম্পনের কারণ জিজ্ঞেস করতে নিতেই কানে এলো কিছু শব্দের…

আম্মা… হু.. আম্মা।জানো তোমার হতভাগা ছেলেটাও না বাবা হবে।তবে সে না খুব ভয় পাচ্ছে। প্রতিবার পরীক্ষার আগের রাতে আমি যখন ঘুমিয়ে গেলে তুমি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দোয়া করে দাও, উৎসাহ দাও,শুভকামনা জানাও এবারো একটু হাত বুলিয়ে দাও না।আমার যে ভীষণ ভয় করছে।দিবা না আম্মা?

বিপরীত পাশে কি বলেছিলো তা জানতে না পারলেও বুঝতে পেরেছিলাম।কোনো এক মা পূর্ণতা ঠিকই পেয়েছিলো।সবসময় স্বীয় গর্ভের সন্তানের মধ্য দিয়েই যে নারীরা পূর্ণতা পায় বা পাবে এটা জরুরি না।মা হতে হলে মাতৃত্ব প্রয়োজন।সন্তান জন্মদানের সক্ষমতা আছে নাকি নেই এটা দিয়ে বড়জোর বায়োলজিকালি মা হওয়া গেলেও মা হয়ে উঠা যায় না।
বিকেল হতে না হতেই সবাই চলে এলেন। ভালো লেগেছিলো যখন দেখলাম মায়ের কোলে মাথা দিয়ে চুপটি করে শুয়েছিলেন।একদম ছোট বাচ্চাদের মত করে।
এবার আর না করা হয়ে উঠেনি।ফিরে ছিলাম সে আর আমি বাবা মাদের সাথে তাদের বাড়িতে। উহু আমাদের বাড়িতে।
সবার আদর যত্ন ভালোবাসার মধ্য দিয়েই পত্র হলো।সবার আনন্দ যেনো আরো বৃদ্ধি পেলো।সবার সাপোর্ট আর ভালোবাসার মধ্য দিয়েই মা হলাম তার সাথে সাথে কর্মজীবনেও সফলতা পেলাম।শুরু হয়েছিলো কলেজের সামান্য একজন লেকচারার হিসেবে।ধীরে ধীরে বাবা অবসর হলেন, মিয়ামি বড় হলো, বিয়ে হলো, একসময় বাবা মা দুজনেরই বিয়োজন বেদনা কাটিয়ে উঠা, পুত্র-পুত্রবধূ থেকে কর্তা-কর্তি হয়ে উঠা। সামান্য লেকচারার থেকে ডিপার্টমেন্ট হেড আর জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার থেকে সিনিয়র ইঞ্জিনিয়ার হয়ে উঠা আমরা একসময় হয়ে উঠলাম ডাক্তার ছেলের বাবা মা।কেশের রং পাল্টালো, অবসর হলাম, শশুড়-শাশুড়ীও হয়ে উঠলাম।এইতো আর কিছুদিন পর দাদা-দাদি হবো।সময়টা যেনো খুব দ্রুতই চলে যায়।তারপরও কম না।
সুদীর্ঘ ত্রিশটা বছর কাটিয়ে দিলাম আমার দুআনার সাথে।
তার অর্ধাঙ্গিনী হওয়া, তার সিক্ত আদরে সোহাগী হওয়া এই আমি টা আজ তার সন্তানের জননী। এইতো অল্প থেকে শুরু হয়ে যাওয়া #গল্পটা আমাদের।হুম সময়ের সাথে যোজন-বিয়োজন এলেও পাল্টালাম না আমরা।আজো #আপনিতেই আমরা।

সত্যিই মাইমা তোমাদের গল্পটা অতি সাধারনের মধ্যেও অসাধারণ।কতজনই বা পারে বলো এভাবে একজন আরেক জনের পাশে দাঁড়াতে একে অপরের মনোভাব বুঝতে।সত্যিই অসাধারণ তোমরা।

পাগলি মেয়ে।

________________________________

আপনি কি এখনই হাসপাতালে যাবেন?(কথন)

হুম।একটা সার্জারী আছে।অবশ্য বেশি সময় লাগবে না।দুপুরের আগেই ফিরতে পারব ইনশাআল্লাহ।(পত্র)

ও আচ্ছা। সাবধানে যাবেন।

হুম…আচ্ছা শোন, কিছু লাগবে?না মানে প্রতিদিনই তো কিছু না কিছু বলিস। আনব কিছু?(পত্র)

উমম…না লাগবে না। সবই ঘরে আছে।শুধু আপনি সাবধানে ফিরলেই হবে।(কথন)

কি ব্যাপার আজ এতো ভালো হয়ে গেলি যে?অন্যদিন তো তোর কথার ফুলঝুরিই শেষ হয় না? (পত্র)

মাইমা গতকাল রাহেলা চাচীর সাথে মিলে চারবয়াম আচার বানিয়েছেন। আবার মাইবা সন্ধ্যার সময় চকলেট, পেস্ট্রি, ছানার মিষ্টি সাথে রসগোল্লাও নিয়ে এসেছেন।সবই আমার পছন্দের। মাঝে মাঝেই খেতে ইচ্ছে করে।তাই যেনো চাইলেই পাই সেই ব্যবস্থায় করে রেখেছেন মাইমা আর মাইবা।

কথন?

হুম

একটু এদিকে আয়তো।বস এখানে…
হাত জোড়া মুঠোয় নিয়ে…

আমি খুব খারাপ একজন স্বামী তাই না?

মানে?

না মানে এই সময়ে প্রতিটা স্ত্রীই তার স্বামীর সঙ্গ চায়।বেশি বেশি সময় কাটাতে চায়।নানান আবদারের বাহানায় আহ্লাদী হতে চায়।অথচ আমি তোকে সেই সময়ই দিতে পারি না।যদিও বা দুএকটা আবদার করিস তাও ভুলে যাই।
আচ্ছা আমি কি ভালো বাবা হতে পারবো না কথন? আমি কি বাবার মতো স্বামীও হতে পারবো না? আমি কিন্তু সত্যিই তোকে ভালোবাসি কথন।

আমি জানি পত্র আপনি আমাকে ভালোবাসেন। এতবার এতভাবে মন খারাপ করছেন কেনো।আর কে বলেছে আপনি ভালো বাবা হতে পারবেন না।আপনি নিঃসন্দেহে একজন ভালো স্বামী এবং বাবা।

তারপরও… অনেকে বলে না অবহেলায় সব শেষ হয়ে যায়।আমি কিন্তু তোকে মোটেও অবহেলা করি না।

জানি আমি।আচ্ছা কয়েকটা কথা বলি শোনেন_
এইযে বললেন না অবহেলায় শেষ হয়ে যাওয়া আসলে শুধু অবহেলা না একজন আরেকজনকে ঠিকভাবে বুঝে উঠতে না পারার কারণেও সব শেষ হয়ে যায়।তারপরও দেখবেন বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কগুলোই না চিরস্থায়ী হয় না।কারণ বিয়ের আগে সম্পর্ক কিন্তু সম্পূর্ণ হারাম।আর হারাম কাজ যে সবসময় পূর্ণতা পাবে এটা মানাটাই বোকামি।তারপরও যারা সেই হারামকে হালাল করে নিয়েও পথ চলতে পারে না তারা নিজেদের দোষেই শেষ হয়ে যায়।এতে অবশ্য একজন নয় ছেলেমেয়ে দুজনেরই ভুল-ত্রুটি থাকে।
যেমন ছেলেদের বেলায় কি হয়____তারা সম্পর্ক শুরুর আগে যতটা খেয়াল রাখে, কেয়ারিং হয়,মনখারাপের খবর রাখে,মন ভালো করার কারণ হয়ে যায় ঠিক তারাই না বিয়ে নামক বন্ধনে আবদ্ধ হলে ভুলে যেতে শুরু করে সেসব।তারা মনে করে তাকে তো আমি পেয়েই গিয়েছি এখন আবার কি।কিন্তু ভুলটা তো সেখানেই।আমরা ছোটবেলায় একটা ভাবসম্প্রসারণ পড়েছিলাম না স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে রক্ষা করা কঠিন তেমনই।তারা মনে করে মাস গেলে বেতন পায়, সংসার তো চলছে, সে তো আমারই, অফিসের কাজের বোঝা ব্লা ব্লা… এসবের মাঝে প্রিয় মানুষটাকে সময় দেওয়ার কথায় ভুলে যায়।ভুলে যায় যত্ন নিয়ে আগলে রাখতে অথচ ফিরতি পথে টংয়ের দোকান হোক বা ক্যাফে বন্ধু কলিগ এদের জন্য সময়টা ঠিকই হয়।স্ত্রীরা কিন্তু সারাদিনের সময়ও চায় না আর নাইবা চায় হীরে-জহরত। দিনশেষে দুটো মিনিট সময় দিয়ে কেমন কাটলো দিন জানতে চাইলে,কোনোএকদিন হুট করে ফিরতি পথে ২০ কি ৩০ টাকার বেলীফুলের গাজরা নিলে সেই স্ত্রীই কিন্তু তোমায় মাথায় তুলে রাখবে।
সবসময় নিজেকে পরিপাটি রাখতে কোনো মেয়েই পারে না।বিয়ের পরতো ভুলেও না।এই জিনিসটা একটু বুঝে যদি কোনো স্বামী বলতে পারে আজ নাহয় তোমার শাড়ীর কুঁচিটা আমি ধরে দেই, তুমি বরং কাজল রাঙাও তোমার অক্ষিতে আমি নয়ন ভরে দেখি। তাহলেই কিন্তু বিয়ের প্রথম ছয় মাসের গভীর প্রণয় বছর ঘুরতে না ঘুরতে ফিকে পরে যাবে না।আর নাই বা নিষিদ্ধ ইচ্ছের জন্ম নিবে।

আবার মেয়েদের বেলায় কি হয়_____তারা ভুলে যায় বিয়ের আগে তাদের পিছনে ঘুরঘুর করে ঘুরে বেড়ানো পাগলাটে প্রেমিকটাই বিয়ের পর তোমার স্বামী হয়ে যায়।যখন সে তোমার প্রেমিক ঠিক তখনও কিন্তু সে ততটা ম্যাচিওরড না। কিন্তু যখনই সে তোমার স্বামী ঠিক তখনই সে ম্যাচিওরড।কারণ তার কাঁধে তখন পরিবারের দায়িত্ব, কর্তব্য স্থান নেই।তার স্ত্রী সন্তানকে ভালো রাখা তার প্রধান উদ্দেশ্য হয়ে যায়।তাই হয়তো অফিসের কাজের শেষে ক্লান্ত শরীরে যখন ঘরে ফিরে তখন হয়ত ঠিক আগের মত পাগলামিগুলো করা হয়ে উঠে না। তার মানে এই না যে সে তোমাকে ভালোবাসে না।বা তুমি পুরনো হয়ে গেছো।সবাই কিন্তু এক হয় না।কারণ সারাদিন শেষে তুমিও ক্লান্ত হয়ে পড়ো। সে চায় তুমিও একটু তাকে বোঝ।বিশেষ করে তোমরা মেয়েরা একটা দুটা সন্তানের জননী হলে তখন মনে করো মা হয়ে গেছো, কর্তব্য বেড়েছে, শরীরের সৌন্দর্য হারিয়েছে তাই স্বামী রা বিমুখ হয়ে পড়ছে বিষয়টা তেমন না।সন্তানের জননী ঠিকই হয়েছো তুমি।কিন্তু এটা ভুলে যেয়ো না তুমি তোমার স্বামীরই সন্তানের জননী।তাই তাদেরও কিছুটা সময় পাওনা থাকে।স্বামীরা কিছুটা সময় চায় তারমানে শুধু শারীরিক চাহিদা না।মন খুলে নিজ প্রেয়সীর সাথে কিছুটা সময়।আগের মেদহীন শরীর হারিয়েছো তাতে কি মেদযুক্ত শরীরেও নাহয় একটু সাজালে দেখবে এতেই সে তোমাতে মুগ্ধ। কারণ তোমার বৃদ্ধ বয়সে ঝুলে যাওয়া চামড়ার সঙ্গী কিন্তু সেই হবে ঠিক যেমন তুমি তার।

এগুলোকে অবহেলা বলে না। সময়ের সাথে নিজেদেরকে গভীরভাবে মিশিয়ে নেওয়া বলে।আর পত্র আপনি তো শুধু আমার স্বামীই না সাথে একজন ডাক্তারও।তাহলে আমি কি করে অবুঝের মত বায়না করব বলেন, যেখানে আপনার অপেক্ষায় কত আহত, মৃত্যুপ্রায় মানুষ প্রহর গোনে।বরং এটাতো আমার গর্বের বিষয়।হ্যাঁ আপনি মনে রাখতে পারেন না তার মানে এই না যে ভুলে যান।কিছুটা সময় লাগলেও পূরণতো করেন।
আর আপনার এমন আপনিতেই আমি আসক্ত।

তুই অনেক বড় হয়ে গিয়েছিস রে কথন।কত কথা বুঝতে শিখেছিস।বাবার মতো আমিও ভাগ্যবান তোর মতো একজন অর্ধাঙ্গিনী পেয়ে।যে আমারে বুঝিবার পায় ভালো মন্দ মিলায়ে সকলি।

হা হা হা… আচ্ছা শোনেন না?

হুম বলেন মহারানীইইই!

মাইমা আর মাইবার ত্রিশতম বিবাহবার্ষিকী আসছে তো…

হুম।আর তাই আপনি কিছু পরিকল্পনা করেছেন যেটাতে আমার সাহায্য লাগবে এইতো?

একদম ঠিক।তাহলে শোনেন ফিরার পথে তাদের জন্য সাজেক ভ্যালি তে ঘোরাফিরা এককথায় মধুচন্দ্রিমার সকল ব্যবস্থা করে আসবেন।আর হ্যাঁ মাইমার জন্য একটা সিঁদুরে লাল শাড়ী আর মাইবার জন্য আকাশী পাঞ্জাবী নিয়েই আসবেন।

তা নাহয় ঠিক আছে। তবে শুধু শশুড়-শাশুড়ীর মধুচন্দ্রিমার কথা না ভেবে নিজের বরটার কথা ভাবলেও তো হয় নাকি!!

আপনি যাবেন না কি আমি ঝাড়ু নিব?

না না থাক লাগবে না যাচ্ছি আমি।

______________

পরিশেষে ___পাহাড়ের চূড়ায় মেঘবিলাসরত নবীন সব দম্পতিদের মাঝে একজোড়া প্রবীন দম্পতি।
…………………………………………………………………………………………………………………………….
……….

সমাপ্ত

কিছু কিছু গল্প আছে যার শেষ থাকে না। হয়ত শেষ থেকেই শুরু হয়ে যায় নতুন আরেক গল্প।আপাতত একআনা আর দুআনার গল্পটা এই পর্যন্তই।হয়ত আবারো দেখা হতে পারে একআনা-দুআনা অথবা পত্রকথন কে নিয়ে গল্পের এক ভিন্ন অধ্যায়ে।
জানি না শেষ পর্যন্ত কেমন হয়েছে। হয়ত কিছু ভুল-ভ্রান্তি রয়েছে। তারপরও বলিয়েন কেমন হয়েছে? কারণ গল্পের ইতি যে হয়ে গিয়েছে। আর অবশ্যই ভুল-ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইল।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here