📚গল্পটা আমাদের
আপনিতেই আমরা
পর্ব-২
#লেখনীতে- মারজানা দীনা
এখন কেমন আছো মা?( আমার শাশুড়ী)
জ্বী আলহামদুলিল্লাহ ভালো মা।আপনারা কেমন আছেন?
আমরাও ভালো মা।বলেই আমার কপোলে চুম্বন করলেন।ব্যস্ত হয়ে পড়লেন আমাকে নিজ হাতে রান্না করে নিয়ে আসা খাবার খাওয়াতে।একটু আগেই পেট ভরে খাওয়ার পরেও না করতে পারলাম না তাকে।মায়েদের তো আর না করা যায় না।যখন প্রথম শুনেছিলাম আমার শশুড়ের দ্বিতীয় স্ত্রী তিনি তখন সত্যিই বলতে একটু ভয় পেয়েছিলাম কিন্তু ধীরে ধীরে বুঝতে পারলাম তিনি মানুষটা মন্দ না।আমি যে তার স্বীয় পুত্রের স্ত্রী না হয়েও নিজ মেয়ের সমান স্নেহ পাই।এটাই তো অনেক।নিজ শাশুড়ীর সাথেও অনেকের ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠে না সেখানে তো আমি…আমার মায়ের পর যদি কারো থেকে মাতৃত্বের স্নেহ পেয়েছি তাহলে তিনিই সে।এই যেমন সাধারণ জ্বর আমার তাতেও উনি এত যত্নের সহিত নিজ হাতে রান্না করে নিয়ে আসছেন।সত্যিই আমি সৌভাগ্যবতী।আমি বুঝতে পারি তিনি আমার কাছ থেকে যেমন মা ডাক শুনতে পান তেমন আমার উনার থেকেও শুনতে চান।আচ্ছা উনি কই গেলেন? চোখ ঘুরাতেই চোখে পড়ল দরজার কাছেই বুকে হাত গুঁজে কিছুটা মাথা নুয়ে দাঁড়িয়ে আছেন।আমি বুঝতে পারি না উনি এমন কেনো?
একটু কথা বললে কি হতো মায়ের সাথে? হাহ্…
তবে এটাও বুঝতে পারি তিনি চান না এমন না একধরনের জড়তা কাজ করে।সময়ের সাথে সাথে দূরত্বটাও বৃদ্ধি পেয়েছে।নিজের কাছেই নিজে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম এদের জড়তা কাটাতে হবে।কিন্তু তার আগেই জ্বর আক্রমণ করল।তবে এখন আবার পরিকল্পনা শুরু করতে হবে হু…
এখন তো মনে হয় জ্বর কিছুটা কমেছে।কোনো সমস্যা হচ্ছে মা??
না মা। আমি একদম ঠিক আছি।আপনারা শুধু শুধুই এত তুলোতুলো করছেন।সামান্য জ্বরই তো!
চড় খাবি? বেশি বুঝিস তুই না? জ্বর সামান্য? যেদিন মা হবি সেদিন বুঝবি কেনো এমন হয়?
গাল ফুলিয়ে আপনি আমাকে মারতে পারবেন মা? কষ্ট হবে না বলেন? দুইমাত্র মেয়ে না??
দুই মাত্র মেয়ে বলেই তো যেমন স্নেহ করতে পারি তেমন মারতেও পারি।
হুম হুম।মিয়ামি কোথায় মা? আসলো না যে?
ওতো তোর বাবাকে নিয়ে তোর জন্য সারপ্রাইজ….
কি??? সত্যিই মা আমি সারপ্রাইজ পাবো।ইয়াহু…
ধ্যাৎ… কোনো কাজই হবে না আমাকে দিয়ে ওরা ঠিকই বলেছিলো। সেই তোকে বলেই দিলাম।আল্লাহ্ জানে ওরা কি বলে??
নো চিন্তা মা। ওদের আমি বলব না।তবে থ্যাংকু থ্যাংকু মা।আহা ভাবতেই ভালো লাগছে সারপ্রাইজ পাবো। হিহিহি
পাগলি মেয়ে।আচ্ছা তুই একটু বস আমি এগুলো কিচেনে রেখে আসি।
বলেই মা বাহিরে গেলেন। আমার চোখ পড়ল উনার উপর আজ কেনো জানি না মানুষটার চোখে হাসি দেখতে পাচ্ছি।কিছুটা মুগ্ধও হলাম…উনি তাকাতেই চোখ নামিয়ে নিলাম।বুঝতে পারলাম তিনি আমার দিকেই আসছেন।হলোও তাই কিছু সময় পর বসলেন আমার পাশে।
জোড় করে না খেলেও পারতেন। বলতেন একটু আগেই খাওয়া হয়েছে তাহলেই তো আর…
আমাদের জীবনে কিছু মানুষ থাকেন যাদের না বলা যায় না।আর তিনি তো মা উনার স্নেহ কে কি করে না করতাম?
হু…আমি বুঝি তেমন কেউ না!
হু..মানে?
কিছু না।
আরো একবার আমার ললাটে হাত ছুঁয়ে দিলেন।তবে এবার শুধু হাত ছুঁয়েই ক্ষান্ত হননি।চোখ বুজা অবস্থাতেও স্পষ্ট অনুভব করতে পারলাম তার অধরের স্পর্শ।
বুঝতে দেরি হলো না যে উনি এখন বাহিরে যাবেন।যেদিন প্রথম তার বৃষ্টিতে ভিজেছিলাম উষ্ণ আলিঙ্গনে সিক্ত হয়েছিলাম তারপরই হুট করেই একদিন এমন অধর ছুঁয়ে বাহিরে গিয়েছিলেন।ঠিক সেই থেকেই এই নতুন নিয়মের আবির্ভাব ঘটেছে।
উনি উঠে দাঁড়াতেই আমিও উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলাম
কিন্তু পরমুহূর্তেই বাধা প্রাপ্ত হলাম_
আজ উঠতে হবে না। আমি দাঁড়াবো না।চুপচাপ এখানেই থাকবেন।আশা করি কথা মান্য করবেন।
আপনি জানতেন…
নাহ্ বুঝতে পারি…
হু…
তার আদেশ টাই মেনে নেওয়া আবশ্যক মনে করলাম।তবে নিচু স্বরেই বললাম_
যার অবস্থান সবার উপরে সে কেনো গুটিকতক আপনদের মত স্বল্প স্থান খুঁজবে।পুরোটাই তো তার।তার সীমানাতেই তো আমার সমাপ্তি।
উহু সমাপ্তি না সূচনা আর প্রাপ্তি।
আশা করিনি প্রত্যুত্তর পাব। আর একমুহূর্তও সময় ব্যয় করলেন না। বেরিয়ে গেলেন তবে আমার অধরে এক চিলতে হাসিটুকু দিয়েই গেলেন।
কখনো ভাবতে পারিনি যে তিনি বুঝতে পারবেন আমি তার বের হওয়ার পর দরজা আটকালেও দাঁড়িয়ে থাকি।দরজার সেই ছোট্ট ছিদ্র দিয়ে বৃহৎ পরিধির একান্ত মানুষটাকে পর্যবেক্ষণ করি।তাহলে কি তিনিও সেই কারণেই বের হওয়ার পরেও দাঁড়িয়ে থাকেন…..
সত্যিই অন্যরকম আমরা।
#চলবে
আজ এটুকুই পরবর্তী পর্ব দিতে আরো দেরি হতে পারে। আজ আমার ভ্যাকসিনের ডেট ছিলো একটু আগেই নিলাম।বসে আছি ভাবলাম যতটুকু লিখেছি দিয়ে দেই বাসায়ও পৌঁছাতে পারিনি।প্লীজ কিছু মনে করবেন না।হাতে ব্যাথা তাই লিখতে দেরী হতে পারে দোয়া করিয়েন আমার জন্য।আর অবশ্যই ভুল-ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইল।