📚গল্পটা আমাদের
আপনিতেই আমরা
পর্ব-৩
#লেখনীতে-মারজানা দীনা
কেটে গেছে বেশ কয়েকদিন।এখন আমি সম্পূর্ণ সুস্থ।আগের মতই সবাই আবার কর্মব্যস্ত হয়ে পড়েছে।বুঝতেই পারলাম না সময়গুলো কীভাবে পার হয়ে গেলো।
এখন আমি আমার বাবার বাসায় আছি।আরো দুদিন থাকব।উনি সিলেট গিয়েছেন কি যেনো একটা প্রজেক্ট এর কাজ সাতদিন থাকতে হবে। এই সুযোগে আমিও এলাম বাবার বাসায় আম্মুর সাথে কিছু সময় কাটাব বলে।যদিও এখানে আপন বলতে মা আর বাবাই আছে আমার। আমাদের পরিবার কিন্তু ছোট না একান্নবর্তী বলা যায়।
আমার বাবারা তিন ভাই। আমার আব্বু সবার ছোট।আমার দাদাভাই নেই তবে দাদি এখনো আছেন।আর তার নির্দেশ মতই সবাই এখনো একসাথে আছি।আমার বড় দুই চাচা মানে আয়াজ রহমান(সবার বড়) তার দুজন ছেলে- ফারাজ ভাইয়া ( বিবাহিত+একটা প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করেন),ফারদিন ভাইয়া(মাস্টার্স দিবেন বিয়ে হয়নি এখনো আমার বছর দুই বড় হবেন),নিয়াজ রহমান তারও দুই ছেলে-জাহিদ ভাইয়া( ফারাজ ভাইয়ার একটু ছোট কিছুদিন হলো একটা ভার্সিটিতে লেকচারার হয়ে যোগ দিয়েছেন),জিহাদ( আমার চেয়ে এক বছরের ছোট অনার্স ফাইনাল দিবে)।আর আমি আমার বাবা মার একমাত্র সন্তান, কন্যা সন্তান।পরিবারের ছোট মেয়েরা নাকি খুব আদরের হয় ভাইদের আহ্লাদের হয়। কিন্তু সেই সৌভাগ্য আমার হয়ে উঠে নাই।যদিও ভাইয়ারা পরিবারের সবার আড়ালে যতটুকু পারেন খেয়াল রাখেন তাও নিরবে।জিহাদ আপু আপু বলে আমার পিছে পড়ে থাকে তাও সেটা আমার চাচিদের পছন্দনীয় না।বলতে গেলে আমি কারোরই তেমন পছন্দনীয় না।মা বাবাই আমার সাথে যতটুকু পারেন….তারপরও এসেছি আম্মুর সাথে কিছু সময় যেনো কাটাতে পারি বলে।হাহ্…
চারদিন হয়েছে তার দেখা পায় না। কথা বলা ঐ দিনে নিয়ম করে তিনবার তাও ৪০ থেকে ৫০ সেকেন্ডের মত।সে প্রশ্ন করবে খেয়েছি আমি বলব হুম তারপর নিরবতা তারপর লাইন কেটে যাওয়া।এই যেমন মাত্রই ফোন দিলেন দিয়ে শুধু এটুকুই বললেন_
দুপুর পেরিয়ে গেছে জানি, আসলে আজ একটু কাজটা বেশি ছিলো। তাই সময়মত কল দিতে পারিনি। তাই বলে আপনিও এতটা সময় না খেয়ে থাকবেন এটা কি ঠিক হচ্ছে? কিছুদিন আগেই জ্বর থেকে উঠেছেন এখন আবার অনিয়ম আপনি তো আর বাচ্চা না একটু তো নিজের দিকটা বুঝতে শিখুন!!
আপনি কি করে….
আমি বুঝতে পারি! এমুহূর্তে মানে এখুনি খেয়ে নিন।৪ টা পার হয়ে গেছে।
আপনি খে…
বলতে হবে না আমিও এখন খাব।
হু অ্যনের বেলায় ঠিকই ঝারতে পারে আর নিজের বেলায় আস্ত একটা খাটাশ, সর্দার ওফ রাগীরাজ্য,আখরু ক্যাহিকা(বিড়বিড় করে)
আমি জানি আমি কেমন।আর বিশষণ না যোগ করলেও হবে। আপাতত আপনাকে যেটা বলা হয়েছে সেটা করলে ভালো হতো।
এটাও বুঝে ফেললো(মনেমনে)
জানেন হুমায়ুন আহমেদ একটা কথা বলেছেন_
” যে তোমার নিরবতার ভাষা বুঝেনা, সে তোমার চিৎকারের ভাষাও বুঝবে না।”
…….
তাহলে বিড়বিড় করে বলা আমার বাবুই পাখির কিচিরমিচির বুঝতে পারবো না?এতটাও অক্ষম না আমি।
বাবুই পাখি!(নিচুস্বরে)
হুমম
……..
……
আনু?? কি করিস মা?(আমার আম্মু)
এইতো তেমন কিছু না।
আনু!!
হুম..(আম্মু আমার হাত ধরে সোফায় বসিয়ে আমার পাশে বসলেন)
ভালো আছিস তো মা? মানে ওবাড়ির সবাই ভালো তো মা তোকে কি….
বুঝতে পেরেছি আম্মু তুমি কি জানতে চেয়েছো।ওনারা সবাই ভালো।সত্যি বলতে ভীষণ ভালো।আমাকে বাড়ীর বউ না মেয়ের মতই স্নেহ করেন।
আর জামাই?
উনিও ভালো।সত্যিই বলছি মা আমি অনেক ভাগ্যবতী জানো এমন একটা পরিবার পেয়ে।সবাই অনেক যত্ন করে আমার। খেয়াল রাখে।
হু..হু বুঝি আমরা কতটুকু খেয়াল রাখে।শুধু মিথ্যে সান্ত্বনা দিয়ে কি হবে রে? তোর মত মেয়ে কে কেই বা এত…শোন ঐ যে বললি না তোর সৌভাগ্য সত্যি বলতে এটা তোর না ওদের দূর্ভাগ্য!! আল্লাহ্ জানেন তারা কেনো তোকে মেনে নিলো শুধু শুধু নিজেদের বিপদ টানলো!!( আমার দাদী।হুম উনি শুদ্ধ ভাষাতেই কথা বলেন।ওনার কথায় কোনো গ্রাম্যটান বা আঞ্চলিকতা নেই।থাকবেই বা কেনো ওনাদের সময়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণী পর্যন্ত পড়ালেখা করেছেন বলে কথা।এটাই উনার গৌরব। উনার কথাগুলো এখন আর অতটা খারাপ লাগে না। সয়ে গেছে।বরাবরের মতই চুপ ছিলাম)
মা আপনি এভাবে বলছেন কেনো?(আমার মা)
তুমি চুপ করো ছোট বউ।ভুল কি বললাম বলো? ঠিকই তো বলেছি তারপর আবার শুনেছি ওর শাশুড়ি নাকি আপন না সৎ তাহলে ভালো কেমনে হয়? আবার দেখো না জামাই নিয়া আলাদা থাকে এই মাইয়াডা তো শুধু এটাই পারে।আর কি পারে শুনি।কত কইলাম এত পইড়া কি হবে সংসারের কাজে মন দে। পড়ালেখা তো আমরাও করেছি তাই বলে ওর মত এত না।
দাদী তারা এমন না।
ওমা মাইয়ার দেখি বুলি ফুটছে। তা এতোই যখন ভালো তাহলে তোরে রাইখা একলা কেনো গেছে জামাই তোরে নিয়া যাইতে পারলো না!!
দাদী উনার কাজ তাই গেছে তাছাড়াতো বাবা চাচারাও তো কাজের সূত্রে এমন যান তাহলে…
চুপ কর মাইয়া। ওরা আর তোর জামাই এক হলো ওদের তো আর তোর মত এমন বয়সের বউ আছিলো না। জামাই তো ছেলেমানুষ সবাই তো অল্পবয়সী মাইয়া পছন্দ করে তোর মত বুড়ী কয়জন চাইব? কত করে বললাম আজাদকে এত বড় মাইয়া রাখিস না বয়স বাইরা যাইতেছে।কে শোনে? দেখ জামাইয়ের না কোনো কাহিনি বাহির হয়?
উনি এমন না দাদী।সবাই এক হয় না।
হো হো আমরা তো আর যুগ পার করি নাই। দিনে দিনে আর কত যে দেখতে হবে…
বলেই চলে গেলেন।
আনু তোর দাদীর কথায় কিছু..
না মা কিছু মনে করি নাই।আমি জানি উনারা কেমন।আমার উনি কেমন।দাদীর কথায় তো আর সব পরিবর্তন হয়ে যাবে না। জানো মা যখন আমার জ্বর হলো তখন সবাই আমার কত যত্ন নিয়েছে বিশেষ করে আমার শাশুড়ী। উনি তো আমার জন্য রান্নাও করে নিয়ে যেতেন।
বলতে বলতে মনে পড়লো সেদিনের কথা যেদিন আমি আমার জীবনের অন্যতম সারপ্রাইজ পেয়েছিলাম। প্রথমবারের মত নিজেকে বিশেষ ইংরেজীতে যাকে স্পেশাল বলা হয় এমন মনে হচ্ছিল।মাকেও বললাম।
সেদিন_
উনি বের হয়ে যাওয়ার পর আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। ঘুম ভেঙ্গেছিলো বেলুন ফাটানোর শব্দে।যখন উঠলাম তখন চারপাশে তাকিয়ে আমি বাকরুদ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। আমার জন্মদিন ছিলো আর আমিই জানতাম না। জানব কি করে এই দিনে তো আমাকে উইশ করা মানা। কেউ কখনো এমন করে উইশ করেনি।
শুভ জন্মদিন মামুনী(বাবা ও মা)
শুভ শুভ শুভভভভ জন্মদিন কিউতি কিউতি ভাবীমুনি(মিয়ামি)
হুম( কেঁদে ফেলেছিলাম কথায় বলতে পারছিলাম না)
দেখো আমার পাগলি মেয়ের কান্ড এভাবে কেউ কান্না করে হাঁ।দেখি মুখ তোল বলে নিজ হাতেই আমার ললাটে চুম্বন করেছিলেন আমার শাশুড়ী উহু আমার আরেক মা।
মা তোর হাতদুটো দে তো…এগুলো মানে এই বালা দুটো মেহরাবের আম্মু তার পুত্রবধূর জন্য নিজে শখ করে বানিয়েছিলেন।আপা তো নেই তাই আমিই দিলাম। দেখি পড়িয়ে দেই।কেমন হয়েছে?
ভীষণণ সুন্দর মা।
মাশা-আল্লাহ কারো নজর যেনো না লাগে।
আর আমিই বুঝি কেউ না তাই না (শশুড় বাবা)
কে বলেছে আপনি তো আমার বাবাই। সবার আগে।
একদম ঠিক।আর শোন এই নে তোর জন্য এই শাড়ীটাই এনেছি আমি।জানিস মেহরাব ছোট থাকতে যখন ওকে জিজ্ঞেস করা হতো তোর শখ কী? তখন বলত আমার শখ আমার বউকে লাল শাড়ী পড়ে সাজিয়ে রাখব।হাহাহা
তাই আনলাম এখন তো বউ হয়েছে তাহলে শখটাও পূরণ করা দরকার।কি বলিস?
লজ্জায় একেবারে নেতিয়ে গিয়েছিলাম।যখন তারউপর চোখ পড়ল বুঝতে পারলাম তিনিও আমার মত অপ্রস্তুত হয়ে পড়েছেন।ভাবতেও অবাক লাগে ছেলেরাও লজ্জা পায়!!!!
দেখি দেখি সাইড পিনিজ সাইড পিনিজ এবার আমার পালা।এই নাও ভাবী এটা তোমার জন্য।দেখো বাবা আমি ছোট মানুষ আর তাদের মত বড়লোক্সও না তাই আমার পক্ষ থেকে এই ছোট্ট তফা আমার ভাবীমুনির জন্য।
বলেই আমার দিকে একটা হ্যান্ডমেইড ডিজাইনার কার্ড এগিয়ে দিলো।যেটাতে খুব সুন্দর করে লেখা-
Thanks for coming in our life.You are the bestestesttt gift from ALLAH.
তোমার গিফট সবচেয়ে সুন্দর মিয়ামি। সাধারণের মাঝেই অসাধারণ। আমার ভীষণণণণণণণণণ ভালো লেগেছে। খুব খুব খুবববববব খুশি হয়েছি।
এরপর আমার পছন্দের কেকও কেটেছিলাম।কেক খাওয়া শেষে সবাই বিদায় জানিয়ে চলেগিয়েছিলেন।ছিলাম শুধু সে আর আমি।আমি যখন দাঁড়িয়ে থেকে আমার পছন্দের সবুজ আর সাদা রং এর বেলুন দিয়ে সাজানো ঘরটা দেখছিলাম তখন অনুভব করলাম এক জোড়া হাত আমাকে তার বাহুডোরে আবদ্ধ করে নিচ্ছে। না ভয় পাইনি কারণ স্পর্শ টা অতি পরিচিত আমার।
শুভ জন্মদিন তিল।আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
হু..( উনিই বাকিছিলেন উইশ করার অপেক্ষায় ছিলাম তার মুখনিঃসৃত শব্দের জন্য) কিন্তু ধন্যবাদ কেনো…
সেটা নাহয় পরেই জানলেন কোনো একদিন।
হুম।
তিল!! এটা আপনার জন্য।
বলেই একটা প্যাকেট এগিয়ে দিলেন। প্রশ্নবিদ্ধ হয়েই সেটা হাতে নিলাম।খুলে দেখতেই আমি ভাষাহীন হয়ে গিয়েছিলাম। মাস্টার্সে ভর্তির আবেদন পত্র হাতে অশ্রুসিক্ত নয়নে তাকিয়ে ছিলাম আমার সামনের মানবটির দিকে।আর সে_
বেশ যত্নের সহিত আবারো আমাকে তার আলিঙ্গনে নিয়ে গড়িয়ে পরা অশ্রুকণা মুছে দিতে দিতে বলেছিলেন_
আপনার অক্ষিদুটোকে বলে দিবেন সেটা অশ্রুর স্থান নয়, অধরযুগল কে বলে দিবেন সেটা এক চিলতে হাসিটুকুরই স্থান আর কপোলে তো রক্তিম লালিমা যেটা আমার সান্নিধ্যে আপনি ধারণ করেন।
নিঃসংকোচে মুখ লুকিয়েছিলাম তার প্রশস্ত বুকে।এই অনিন্দ্য ধরাতে নিজেকেই সবচেয়ে সুখী রমণী মনে হচ্ছিল।প্রার্থনা এটাই প্রতিটি রমণীই যেনো এমন একটি প্রশস্ত হালাল একান্ত ব্যক্তিগত স্থান পায় মুখ লুকানোর জন্য সুখ বিলাসের জন্য।
#চলবে
অত্যন্ত দুঃখিত এতটা দেরি করার জন্য।তাই বোনাস স্বরূপ আজকের এই বৃহৎ আকৃতির পর্ব দিয়ে দিলাম।
থিমটা পরিবর্তন হবে না কিন্তু লেখাগুলো কেমন অগোছালো হয়ে গিয়েছে মানিয়ে নিয়েন প্লিজ। তারপরও বলিয়েন কেমন লেগেছে।আর অবশ্যই ভুল- ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইল।