📚গল্পটা আমাদের
আপনিতেই আমরা
পর্ব-৮
#লেখনীতে- মারজানা দীনা
সকাল হয়েছে বহু আগেই।কথা বলার শেষ প্রহরেই সকালের আযানের মিষ্টি সুর শুনেছিলাম আমরা।কিছু সময় পর দুজনে সালাত আদায় করে বিশ্রামের উদ্দেশ্যে ঘুমাতে গিয়েছিলাম।সে অনেক ক্লান্ত ছিলো বিধায় ঘুমিয়ে পড়েছিলো।আমার আর ঘুমটা হয়ে উঠেনি তখন।আমি শুধু নির্বাক তাকিয়ে দেখছিলাম ঘুমন্ত তাকে।
এখন অবশ্য আমাকে জড়িয়েই ঘুমোচ্ছেন।যতটুকু তাকে চিনি তা থেকে অনায়সে বলতে পারছি আগামী বেশ কিছুদিন হঠাৎ হঠাৎ মাথা নুয়েই ক্ষমা চাইবেন।কিন্তু তাকে আমি এটাই বোঝাতে পারছি না যে যেহেতু তার কোনো অপরাধই নেই তাহলে ক্ষমা কিসের কিন্তু সে তো সেই বুঝলে তো হাহ্….
তার উষ্ণ শ্বাস আমার স্কন্ধে আলোড়ন তৈরী করছে অথচ তাকে দেখ কেমন নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে আছেন।কিছুদিন আগে সে নিজেই বলেছিলেন-
আমি আজও বুঝতে পারি না আপনি কি আমার স্পর্শ গ্রহণ করতে
পারেন না বলেই কেঁপে উঠে চোখ বুজেন না কি আবে…
উত্তরটা দিতে পারিনি।আসলে ঠিক বলা হয়ে উঠেনি আরকি।বলতামই বা কি করে তার ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্র স্পর্শ গুলোও যে আমার জন্য শ্বাসরুদ্ধকর। হাজার চেষ্টা করলেও কোনো প্রকার শব্দ উচ্চারণই করতে পারি না।
আজো তার স্পর্শে নতুনত্বের মতই কেঁপে উঠি।
নতুনত্ব হুম… হ্যাঁ নতুনত্ব। জীবনের ভিন্ন মোড়ে দেখা হওয়া, অতি পরিচিত দুটো মানুষের নতুন করে সৃষ্টি হওয়া সম্পর্কের বন্ধনে আরো একটি নতুন মোড় এসেছিলো শরৎকালে।সাধারণত প্রণয়ের আগমন মানেই বসন্ত বা ফাল্গুন কে নির্দেশ করে সেখানে তার আমার প্রণয়সন্ধী ঘটেছিলো শরৎ এ।
ছুটির দিন ছিলো। খুব সম্ভবত শরৎ এর ১৫ তম দিন।এমনিতে আকাশ আমার ভীষণ প্রিয়। আর সেখানে শরৎ এর আকাশ আর ভেসে বেড়ানো তুলোর মত উড়তে থাকা মেঘ সব মিলিয়ে ভাষায় প্রকাশ করার মত না কতটা মুগ্ধতা বিরাজ করে আমার মুখশ্রীতে।বিকেলের শেষ প্রহরে আমি মুগ্ধ দৃষ্টিতে আকাশের দিকে তাকিয়ে আনমনেই আবৃত্তি শুরু করেছিলাম।ভালো লাগে উদাসীনতার মাঝে কাব্যের দু চারটা চরণ পাঠ করতে।বরাবরই কবিতা আমার ভীষণ প্রিয়।কেনো জানি না হুট করেই আমার অতি প্রিয় একটি কবিতার চরণ বিড়বিড় করতে নিলাম..…..
পরের জন্মে বয়স যখন ষোলই সঠিক
আমরা তখন প্রেমে পড়বো
মনে থাকবে?
(শেষ না করতেই কানে আসলো)
এই জন্মের দূরত্বটা পরের জন্মে চুকিয়ে দিব
এই জন্মের চুলের গন্ধ পরের জন্মে থাকে যেন
এই জন্মের মাতাল চাওয়া পরের জন্মে থাকে যেনো
মনে থাকবে?
“আরণ্যক বসু”
প্রিয় কবিতার চরণগুলি শ্রবণের সাথে সাথে মুগ্ধতা যেনো কিভাবে বৃদ্ধি পেলো বুঝতেই পারলাম না।কতদিন পর আবারো কাব্যপাঠ তাও ঠিক মনে নেই। তাই তো ঘোরেই চলে গিয়েছিলাম।তার কণ্ঠে প্রথম কাব্যপাঠ যেনো নিশ্চুপ মুহূর্ত গুলোকে সরব করে তুলছিলো।
এরপর… (দুআনা)
নয়ন তোমারে পায় না দেখিতে
রয়েছ নয়নে নয়নে
হৃদয় তোমারে পায়না জানিতে
হৃদয়ে রয়েছ গোপনে
“রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর”(একআনা)
সকল দুয়ার খোলা আছে
নিমন্ত্রণ-লিপি গাছে গাছে
গাঢ় চুম্বনের মত আকাশ নদীর খুব কাছে
রোদে ঝলোমলো
কখন আসছো তুমি বলো?
“পূর্ণেন্দু পত্রী”(দুআনা)
আমিতো শুধু আমার নয়
আমিতো শুধু তোর
দূরে ঠেললে রাত্রী হবো
কাছে ডাকলে ভোর
“অনিরুদ্ধ কিরণ”(একআনা)
আবার যখনই দেখা হবে, আমি প্রথম সুযোগেই
বলে দেবো স্ট্রেটকাটঃ’ভালোবাসি’
এরকম সত্য-ভাষণে যদি কেঁপে উঠে
অথবা ঠোঁটের কাছে উচ্চারিত শব্দ থেমে যায়,
আমি নখাগ্রে দেখাব প্রেম
ভালোবসা,বক্ষ চিরে
তোমার প্রতিমা
” নির্মলেন্দু গুণ”(দুআনা)
তোমার জন্যে এই বুকে বেঁধেছি
ছোট্ট একটি বাসা
মনের মাঝে সারাক্ষণ
শুধু তোমায় দেখার আশা
তুমি যে শুধু আমারই হবে
এইতো আমার প্রত্যাশা
“সোকিক আহম্মেদ রুবেল”(একআনা)
তিল!!!
কবিতার মাঝে এতটাই হারিয়ে গিয়েছিলাম যে কখন সে আমাকে তার বাহুবন্ধনে আবদ্ধ করেছে জানতেই পারলাম না।বিয়ের পর থেকে আজ পর্যন্ত প্রথম বারের মত পেলাম তার স্পর্শ। তার ডাকে যখন চেতনা পেলাম ঠিক তখনই মনে হলো সমগ্র ধরার লাজুকতা বুঝি শুধু আমাকেই পেয়েছে আকড়ে ধরার জন্য।উচ্চারণ করতে পারিনি কোনো শব্দ।
তিল আপনি যে এতো ভালো কবিতা বলতে পারেন জানাছিলো না আমার।অবশ্য জানার মত সময়টাই হয়ে উঠেনি।আমি যদি নিজের সীমা লঙ্ঘন করি তাহলে কি খুব খারাপ কিছু হয়ে যাবে তিইইল!!
গোছালো আপনিটাকে একটু অগোছালো করে দেওয়ার আর্জি পেশ করছি আপনার সম্মুখে–অনুমতিটা কি দেওয়া যাবে?? আপনার বিন্যস্ত শাড়ীর ভাঁজটাকে অবিন্যস্ত করার হু… may i til!!
জবাবে মুখ লুকিয়েছিলাম তার মাঝেই।বলেনা নিরবতা সম্মতির লক্ষণ। কিন্তু আমার কাছে সম্মতিসূচক নিরবতাই সম্মতির লক্ষণ। তাই হয়ত দৃঢ় করেছিলাম হস্ত বন্ধন।সেও বুঝি বুঝতে পেরেছিলো তাই তো সূচনা হয়েছিলো প্রেমসন্ধী।
………….
কি ভাবছেন একআনা?
কখন যে ভাবনার অতলে হারিয়ে গিয়েছিলাম খেয়ালই ছিলো না।
হু…
বলেছি কি ভাবছেন আপনি?
প্রেমসন্ধী!
প্রেমসন্ধী!!!!
হু…
#চলবে
লেখিকার নিজেরও কাব্যপাঠ ভীষণ প্রিয়। তাই কিছুটা ঠাঁই পেলো লেখাতে। কেমন লেগেছে জানাবেন।আর অবশ্যই ভুল-ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইল।