📚গল্পটা আমাদের
আপনিতেই আমরা
পর্ব-৯
#লেখনীতে-মারাজানা দীনা
একআনা…একআনা..এক
এইতো আমি এভাবে ডাকছেন কেনো?
উফফ কাজ আছে সেজন্যই তো ডাকছি তাই না। সারাদিন কিচেনে এত কাজ কিসের আপনার পড়ালেখা কি চান্দের দেশে??
আরেহ্.. চান্দের দেশে যাবে কেনো?কাল না ঐ বাড়িতে যাওয়ার কথা তাই মিয়ামির জন্য হালুয়া,বাবার জন্য ঝাল পিঠা আর মায়ের জন্য পায়েস বানাচ্ছিলাম ব্যাস এইতো।
ওওও কম হয়ে গেলো না!!! আল্লাহ্ মাত্র এইকয়টা আরো কিছু বানালে ভালো হতো না??
হাঁ খারাপ বলেন..একমিনিট একমিনিট আপনি কি আমাকে খোঁচা মারছেন?
কথায় বলে বুদ্ধিমানদের ওহ্ সরি বুদ্ধিমতীদের জন্য ইশারায় যথেষ্ট।বাহ্….
দুইআনাননননাা…..
আমার কান গেলো গেলো… এবার আমি কিভাবে শুনতে পারব একআনা আপনি এটা করতে পারলেন??
আরো বেশি পারি আমি।ধূররর ভাল্লাগে না। আগেই ভালো ছিলো।
আগে ভালো মানে…?
তা নয়তো কি? এত কথা তো আর শোনা লাগতো না। এখন তো কিছু হলে না হলেই একআনা একআনা…
কেনরে ভাই আমার কি আর কোনো কাজ নাই যে সারাক্ষণ আপনার সামনে বসে থাকব!!!!!
ঐ মাইয়া ঐ আমি আপনার কোন জামানার ভাই লাগি শুনি??
ইয়ে মানে… একমিনিট ঐ ঐ কি হাঁ??আম ইউর সিনিয়র সো হ্যাভ সাম রেসপেক্ট মিস্টার!!
আসছে আমার সিনিয়র আপু!! বেশি বকবক না করে পড়তে বসেন কত রাত হয়েছে খেয়াল আছে??
কিহহহহ্ আমি বকবক করছিলাম। শুরু তো আপনিই করলেন এখন আমাকে কথা শোনাচ্ছেন??
আপনি এতো ঝগড়ুটে জানা ছিলো না আমার সত্যিই বলছি একআনা।আজ সত্যি সত্যি নিজেকে বিবাহিত মনে হচ্ছে যার বউ আছে হাহ্…
কি বললেন ঝগড়ুটে!! আ আমি ঝগড়ুটে! আর কি যেনো বউ আছে তইলে এতদিন কি মনে হতো পাশের বাসার ভাবী???
বালাই ষাট ভাবী কেনো হবে কে যেনো বললো সিনিয়র আপু না!!!(মেয়েদের মত ঢং করে)
দুইআনা!! বলেই বেড ঝাড়ু নিয়ে তার পিছে দৌড়ানো শুরু করলাম পুরো ফ্ল্যাট জুড়ে।
হুম সেদিনের পর থেকে আজ অনেকগুলো দিনই পার হয়ে গেছে।যা বলেছিলাম মাঝে মাঝেই হঠাৎ করে মন খারাপ করে বসে থাকতেন, ক্ষমা চাইতেন। বেশ কিছুদিন লেগেছিলো উনাকে স্বাভাবিক করতে।আর এখন তো রীতিমতো মেয়েদের মত আমার সাথে ঐ যে বলে না পায়ে পা দিয়ে ঝগড়া তেমনই করেন।না হলে না কি শান্তি পান না।ঘরের কাজ সত্যিই কিছু করেন না শুধু আকাজ করেন।
বলে না- অনেকে আছে যারা স্ত্রীদের কাজে সাহায্য করে, উমম হাঁ যেসব দেখে আমরা বলি কত্ত ভালো কাপল কত্ত রোমান্টিক বা কত্ত ভালোবাসা বর কি ভালো কাজে সাহায্য করে…এমন কিছু তো উনি করেই না বরং আমার কাজ বাড়ায়।এই যেমন আমি যখন কিচেনে কাজ করি তখন এমন ভাব নিয়ে আসবে মনে হবে সেই পুরো রান্না সম্পন্ন করবে।অথচ কাজের বেলায় অষ্টরম্ভা। দুই মিনিট গড়িয়ে তিন না হলেও উনার ঘাম দিয়ে গোসল টা ঠিকই হয়ে যায়।আর তখনই শুরু করবে আমার ওরনা বা শাড়ীর আঁচল নিয়ে টানাটানি। কি পরিমাণ বিরক্ত লাগে তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো না।সবজি কাটার নাম করে চপিং বোর্ড নিয়ে বাচ্চাদের মত খেলা করে আর ভাব এমন যেনো কত বড় কার্য সম্পন্ন করছেন।কিন্তু কি হয় শেষে যদি উনিই সেই কাটা সবজি খেয়ে ফেলেন।ঘর ঝাড়ু দিয়ে ঝাড়ু রাখতে না রাখতেই উনি ময়লা ফালানো শুরু করেন, এককথায় জাস্ট অসহ্যকর।কিছু বলতেও পারি না। ক্যাবলাকান্তের মত মাথা চুলকানো শুরু করে আর আমতা আমতা করে।
তাও আমার ভালো লাগে।ভীষণরকম ভালো লাগে।স্বল্পভাষী গুরুগম্ভীর মানুষটা স্বল্পভাষী ছিলেন না। উনার আম্মুর হঠাৎ মৃত্যু উনাকে উলোটপালোট করে দিয়েছিলো।মানতে পারেন নি। সময়ের প্রবাহমানতাই এমন হয়ে গিয়েছিলেন।তবে এখন ভালো লাগে এই ভেবে যে উনার মধ্যে চঞ্চলতা প্রাণোচ্ছলতা ফিরে এসেছে।যোজন-বিয়োজন নিয়েই তো জীবন তাই নয়কি।সময়ের সাথে মানিয়ে নিয়েই তো আমরা সামনের দিনগুলোতে ধাবিত হই।
ওহ্ আরেকটা কথা এই কদিনে আরো একটা কাজ করতে পেরেছিলাম তা হলো মায়ের সাথে উনাকে স্বাভাবিক করতে।তবে তখনও মা বলে ডাকাটা শুরু করতে পারিনি তবে জড়তাটা অনেকাংশেই কমাতে পেরেছিলাম।কবে যেনো ও হ্যাঁ মনে পড়েছে সেদিনই সকালে যখন উনি ঘুম ভেঙ্গে দেখলেন আমি ভাবনায় মশগুল_
কি ভাবছেন একআনা?
কখন যে ভাবনার অতলে হারিয়ে গিয়েছিলাম খেয়ালই ছিলো না।
হু…
বলেছি কি ভাবছেন আপনি?
প্রেমসন্ধী!
প্রেমসন্ধী!!!!
হু…
সৃষ্টিকর্তার কাছে অসংখ্য শুকরিয়া যে আমার প্রেমসন্ধী আপনার সাথেই সূচিত হয়েছে।(আমার ললাটে অধর ছুঁয়ে)আমার বাবুই পাখি..
…..
একআনা…
শুনছি..
কিছু বলবেন না?
না…তবে চাইব। দিতে পারবেন যেটা চাইব,দুআনা?
আমার সাধ্যে থাকলে অবশ্যই চে..
উহু চেষ্টা না দিতেই হবে।আর আপনার সাধ্যেই আছে।দেওয়াটা বাধ্যতামূলক।
কেনো?
কারণ এটাই আপনার কাছে আমার প্রথম এবং শেষ চাওয়া।
এভাবে বলছেন কেনো আপনি?
এভাবেই বলছি কারণ বিষয়টাই এমন।
হাহ্..আচ্ছা বলুন..
মাকে মা বলে ডাকেন না কেনো? ভালোমতো কথাও বলেন না। আপনি জানেন মা কতটা কষ্ট পায় আপনার এমন…
আমি জানি। তাও আমি অপারগ। এত সহজে সহজ হতে পারি না আমি।
১৫ টা বছর বুঝি খুব কম সময়?এতগুলো বছরেও বুঝি পারছেন না সহজ হতে?
১৫ না ১৭ হবে।
মানে?????
আপনার সাথে দেখা হওয়ার আগেই বাবা উনাকে বিয়ে করেছিলেন।ততদিনে তো বুঝি মিয়ামিও ৭ কি ৮ মাসের নবজাতক ছিলো।
তাহলে এখনো কেনো…মিয়ামিকে তো খুব ভালোবাসেন তাহলে ঐ মানুষটাকেই কেনো..
মিয়ামিকে তিনি এই ধরাতে এনেছিলেনই আমার জন্য।আমি যখন নিশ্চুপতাকে নিরবতাকে আকড়ে ধরলাম তখন প্রতিবেশী এক ছোট্ট বাচ্চা মেয়ের সাথেই কিছু সময় কাটাতাম।আর আমি জানি উনি সেজন্যই বিয়ের বছর না ঘুরতেই নতুনত্ব না যেতেই…. উনার বয়স কিন্তু খুব কম ছিলো।মাত্র ২০ বছর বয়সী এক তরুণী যে কিনা আমার বাবার দ্বিতীয় স্ত্রী হয়ে এসেই আমার মা হয়ে উঠার জন্য মিয়ামির মা হলেন।কিন্তু তখন তো আর আমার ছোট্ট মস্তিষ্ক এত কিছু বুঝতে পারতো না। আশেপাশের অনেকেই বলতেন তিনি আমাকে ভালোবাসে না, কখনো বাসবে না,মায়ের মত আপন করবে না, নাহলে কি আর আরেকটা বাচ্চা নেই… এমন অনেক কিছুই। না চাইতেও কথাগুলো আমার কানের চতুর্দিকে ঘোরাফেরা করত।
যদিও তিনি সবসময় চেষ্টা করতেন আমার মনোভাব বোঝার, আপন করে নে… কিন্তু আমিই দূরত্ব সৃষ্টি করেছিলাম।কিন্তু…
হু…
সময়ের সাথে বুঝতে তো শিখলাম কিন্তু দূরত্ব টা যে পাহাড় ছুঁয়েছিল।পারতাম না এগোতে..মাঝে কিছু সময়ের সুখ হয়ে আপনিতো এসেছিলেন আবার পাখির মতো চলেও গিয়েছিলেন।
গিয়ে আর পারলাম কই সেইতো আপনার তীরেই ফিরলাম।আমার সুখনীড় যে আপনি দুআনা।তাই তো সৃষ্টিকর্তা আপনার কাছেই আমাকে ফিরিয়ে দিয়েছেন।
হু..ম।জানেন আমি না তাকে ভালোবাসি সত্যি বলছি মায়ের সমান না হলেও কোনো অংশে কম না।কিন্তু ঐ যে প্রকাশটাই করতে পারি না।যখন এসএসসি তে বৃত্তি পেলাম তখন বৃত্তির টাকার সাথে আগের কিছু এমনই জমানো ছিলো সেগুলো দিয়ে মিয়ামির জন্য একটা পুতুল বাবার জন্য শার্ট আর তার জন্য একটা শাড়ী কিনেছিলাম।
নিতান্তই নিম্ন দামের শাড়ী বৃত্তির টাকায় আর কতই হবে বলুন।আমার সিঁদুরে লাল শাড়ী ভীষণ ভালো লাগত।কারণ মাকে পড়তে দেখতাম।আমার চোখে তখন মাকে ভীষণ অপরূপ লাগত তাই আরকি উনার জন্যও নিয়েছিলাম।কোনো কাজ ছিলো না পুরোটাই এক রঙের।থান কাপড়ও বলতে পারেন কিন্তু তারপরও তিনি সেটাকেই যে এতটা আপনা কর নিবেন সেটা আমার প্রত্যাশিত ছিলো না।উনি এখনো সেই শাড়ী যত্ন করে রেখে দিয়েছেন।প্রতি ঈদে সেই শাড়ী পড়েন আর স্বগৌরবে বলেন উনার ছেলের দেওয়া প্রথম উপহার তাই আজও পড়তে ভালোবাসেন।আমি এটাও জানি তিনি বুঝতে পারেন যে আমি চাই কিন্তু পেরে উঠি না তাই হয়ত তিনিও মেনে নিয়েছেন।
না এটা আপনার ভুল ধারনা।মানিয়ে নিয়েছেন, মেনে নেননি।আজো উনি চান আপনার মুখে মা ডাকটা শুনতে।আমি যখন মা বলে ডাকি তখন তিনি প্রতিবার আপনার দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকান এই ভেবে যদি কোনোদিন আপনিও ডাকেন।
আমি যে পারি না একআনা। দেখেন না আপনার সাথেই স্বাভাবিক হতেও কতটা সময় পার হয়ে গেলো তাও…
আমি জানি আপনি পারবেন।একটু তো চেষ্টা করে দেখুন না তাহলেই পারবেন। বলেই তাকে আলিঙ্গনে বদ্ধ করলাম।
হু…
……….
তাহলে মাইমা মামা পরে কীভাবে নানীমুনিকে মা ডাকলেন?(কথন)
সেটাতো ঐ যে পরেরদিন বলেছিলাম না ঐ বাড়িতে যাওয়ার কথা রান্না করছিলাম যে..
হুম হুম তারপর মামার পিছনে ঝাড়ু নিয়েও দৌড়ানি দিয়েছিলেন হাহাহাহা( কথন)
হুম তা ঠিক।
কি রে তোর কোনো কাজ নাই যখন দেখি তখনই আমার একআনাকে নিয়ে টানাটানি করিস। একটাই একআনা আমার কাউকে ভাগ দেওয়া যাবে না। আমার জনকে আমি নিয়ে গেলাম।আর হ্যাঁ তোর জন্য তো তোর তিনআনাই আছে তাই না…
যা বাবা একটু খানি কথাও বলতে পারি না তোমার জন্য মামা।এতো জ্বলে কেনো তোমার হাঁ…..
#চলবে
ভুল-ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার জন্য অনুরোধ রইল