গল্পের_নাম_অনুভূতি পর্বঃ৬

গল্পের_নাম_অনুভূতি পর্বঃ৬
#লেখনীতে_Alisha_Rahman_Fiza

(গল্পের শুরুতে কিছুকথা বলে নিচ্ছি আবরারের বন্ধুর নাম রাব্বি থেকে রাতুল রাখা হলো)

আবরারের এমন আবেগীয় কথাশুনে আরফি পিছন ফিরে তাকালো আবরার তার হাত ধরে দাড়িয়ে আছে।আরফি হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করলো কিন্তু সে ব্যর্থ হলো তাই আরফি কঠিন চোখে তাকিয়ে বললো,
~কীসব অসভ্যতামি করছেন আপনি?
আবরার আরফির কথা শুনে বললো,
~যাক তোমার মুখে কথা তো ফুটলো।
আবরার আরফির হাত ছেড়ে দিলো আর বললো,
~আমি তোমার সাথে কথা বলতে চাই।
আরফি রেগে বললো,
~কোনো কথা শুনতে চাইনা কেন পিছে পরে আছেন?
আরফি পিছন ফিরে চলে আসতে নিবে তখনই আবরার বললো,
~যদি আমার কথা না শুনো তাহলে এর চেয়েও বেশি অসভ্যতামি করতে বাধ্য হবো।
আরফি নির্বাক আবরারের কথা শুনে লোকটা ভালো মনে করেছিল সে তো রাস্তার গুন্ডাদের মতো ব্যবহার করছে।মা এতো ভালো আর ছেলে গুন্ডাগিরি করছে। আরফি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,
~এসব আপনাকে মানায় না আপনি অবশ্যই ভালো একজন মানুষ এসব করে নিজেকে ছোট করবেন না।
আরফির কথা শুনে আবরার কিছু ভেবে বললো,
~তুমি এতো শান্ত-শিষ্ট মেয়ে কিন্তু কথা শুনলে মনে হয় তীর ছুড়ে মারছো এমন কেন তুমি?
আবরার কথাটা শেষ করে রেলিং এর সাথে হেলান দিয়ে দাড়ালো হাত দুটো বুকে গুজে আরফির দিকে তাকিয়ে রইলো।আরফি আবরারের দিকে তাকিয়ে বললো,
~নিজের মনের কথা বলতে আমার বরাবরই অনেক পছন্দ হ্যাঁ আমি কাউকে ছোট করতে পারিনা বা কাউকে না বলতেও পারিনা।কিন্তু এর মানে তো এটা না যে আমি আমার জীবনের এতো বড় সিদ্ধান্ত এভাবেই নিয়ে নিবো।আমারও কিছু মতামত আছে, ইচ্ছা আছে যা আমি মেনে চলতে চাই।আর মা যে ভাবনা নিয়ে বসে আছে সেটাকে ভুল প্রমাণ করতে চাই।
এক নাগাড়ে কথা গুলো বললো আরফি মুখে তার গাম্ভীর্যের ছাপ।আবরার একধ্যানে আরফির কথা গুলো শুনলো তারপর বললো,
~হ্যাঁ অবশ্যই তোমার ইচ্ছা আছপ,মতামত আছে তাইতো তোমাকে বুঝতে এসেছি।তোমার মনের অবস্থা জানতে এসেছি
আরফি চোখ তুলে তাকিয়ে বললো,
~আপনি আমার মনের অবস্থা বুঝতে এসেছেন তাহলে শুনুন আপনার জন্য আমার মন এখন প্রচুর খারাপ থাকে।আমার মা আর ভাইয়ের মধ্যে অশান্তি লেগে আছে এখন বলুন আমার মনের অবস্থা শুনে আপনার কেমন লাগছে?
আরফির প্রতিটি কথা আবরারের মনে দাগ কেটে গেলো।সে আরফির জীবনে যে ঝড় নিয়ে এসেছে তা সে বুঝতে পারলো আর সে সিদ্ধান্ত নিলো সে আর আরফির জীবনে কোনো ধরনের দখলদারি করবেনা।
আবরার নিজেকে গুটিয়ে নিবে যদি কোনো দিন আরফি তার #অনুভূতি বুঝতে পারে তাহলে অবশ্যই আরফিকে তার জীবনসঙ্গীনি করে নিয়ে যাবে।আবরার হেসে বললো,
~নিচে যাওয়া যাক সন্ধ্যা নেমে এসেছে এই ধরণীর আকাশে।
বলেই সে আরফির পাশ কেটে নিচে নেমে আসলো।আরফিও তার পিছে পিছে নেমে আসলো আবরার নিচে নেমেই সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আরফানকে বললো,
~তোমাদের অনেক কষ্ট দিয়েছি এ কয়েকদিন তাই ক্ষমা চাচ্ছি।আল্লাহ হাফেজ ভালো থেকো
আবরার চলে গেলো আরফান তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে অবাক হয়ে লোকটার কী হলো?তাই সে বুঝতে পারছেনা আরফান বাসার দরজা লাগিয়ে দিলো।

আবরার রাস্তার দিকে তাকিয়ে আছে গাড়ি চলছে আপন গতিতে।আবরার নিজের মনকে বোঝানোর চেষ্টা করছে আরফি যদি চায় তাহলেই সব হবে নাহলে এই #অনুভূতি নিয়ে সে সারাজীবন কাটিয়ে দিবে।আরফির মুখের হাসি থাকলেই চলবে আর কোনো কিছুর প্রয়োজন নেই।বাসায় পৌছে সে রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলো তারপর বিছানায় গা এলিয়ে দিলো সিলিং ফ্যানের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো তার চোখের কোণ দিয়ে পানি গড়িয়ে পরলো।বুকের বা পাশটা ব্যাথা করছে।এতোটা কষ্ট সে অনুভব করছে যে সে কাউকে বুঝিয়ে বলতে পারবে না।তখনই ফোনের রিংটন শোনা গেলো আবরার উঠে বসলো ফোনটা হাতে নিয়ে দেখলো রাতুলের ফোন।আবরার ফোন রিসিভ করতেই রাতুল উদগ্রীব হয়ে বললো,
~কী খবর তোর?
আবরার ব্যাথীত কন্ঠে বললো,
~ভালোই আছি।
রাতুল বললো,
~দোস্ত তুই ঠিক আছিস?তোর গলা শুনে মনে হচ্ছে না তুই ঠিক আছিস?
আবরার নিজেকে সামলে বললো,
~আরে ধূর মিয়া আমিই ঠিক আছি।ভাগ্যে যা নেই তার পিছে দৌড়ালে কী লাভ হবে?
রাতুল বন্ধুর কথা শুনে বুঝতে পারলো ভীষন খারাপ অবস্থা সে আছে।মনের অবস্থা বেহাল হয়ে আছে রাতুল জানে আবরার শক্ত ছেলে এতো সহজে সে ভাঙ্গবেনা আর ভাঙ্গলেও সে কাউকে বুঝতে দেবে না।রাতুল শীতল কন্ঠে বললো,
~আজ রাত তোর বাসায় থাকবো আন্টিকে ভূনা খিচুরি রান্না করতে বলিস।
আরফি নিজের পড়া শেষ করে রান্নাঘরে চলে গেলো রুকাইয়া রাতের খাবার রান্না করছে।আরফি রুকাইয়াকে বললো,
~লোকটাকে অনেক কড়া কথা শুনিয়ে দিয়েছি।ভাইয়ার চাকরি নিয়ে আবার কোনো সমস্যা হবে না তো?
আরফির প্রশ্নে রুকাইয়ার ভ্রুযুগল কুঁচকে উঠলো সে আরফির দিকে তাকিয়ে বললো,
~আবরার সাহেব এমন ব্যক্তি না আর আমার মনে হয় তুমি তোমার মনের কথা বলেছো এতে কোনো খারাপ দিক আমি দেখছিনা।
আরফি বললো,
~আমার মনে হয় সে বুঝে গেছে আমার কথা সে যথেষ্ট বুদ্ধিমান ব্যক্তি।
আরফি সবার সাথে বসে রাতের খাবার খাচ্ছে।সায়েদা খানম বললেন,
~জাবেদা আপা ফোন করে বললো আবরার আরফিকে বিয়ে করতে চায় না। বিষয়টা ঠিক বুঝতে পারলাম না
সায়েদা খানমের কথায় কবির আহমেদ বললেন,
~এতো বুঝতে হবে না আর শোনো আরফির বিয়ের ব্যাপারে কেউ যাতে মাথা না ঘামায়।আমি এখন পর্যন্ত বেঁচে আছি আমার মেয়ের জীবনে কেউ যাতে হস্তক্ষেপ না করে।
কবির আহমেদের কথা শুনে সায়েদা খানম চুপসে গেলেন।সবাই রাতের খাবার শেষ করে যার যার রুমে চলে আসলো।রুকাইয়া হাতের কাজ শেষ করে রুমে চলে গেলো রুমের দরজা বন্ধ করতেই

পিছন থেকে আরফান তাকে জড়িয়ে ধরে বললো,
~এতক্ষনে আমার কথা মনে পরলো?
রুকাইয়া বললো,
~কাজ শেষ করতে হবে না?রান্নাঘরে কতো কাজ থাকে আপনি কী তা বুঝবেন সারাদিন তো ফাইল আর কলম নিয়ে বসে থাকেন।
শেষের কথাটা রুকাইয়া অভিমান নিয়েই বললো।আরফান বুঝতে পারলো অর্ধাঙ্গিনীর অভিমান হয়েছে কতোদিন যাবত কাজের প্রেসারটা একটু বেশি তাই সে ততোটাও রুকাইয়ার খবর নিতে পারে নি।আরফান রুকাইয়ার ঘাড়ে থুতনি রেখে বললো,
~রাগ করেছো?আসলে অফিসের কাজটা একটু বেশি তাই তোমাকে এতোটাও সময় দিতে পারিনি।সরি
রুকাইয়া আরফানের আকুতি ভরা সরি শুনে মন গলে যায় তার।রুকাইয়া নিজেকে ছাড়িয়ে আরফানের সামনে ঘুরে তার কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে বললো,
~সরি মঞ্জুর করা হলো।এভাবেও আপনার সাথে বেশিক্ষণ রাগ করে থাকা যায় না।
আরফান রুকাইয়ার কোমড় জড়িয়ে ধরে নিজের কাছে টেনে নিয়ে বললো,
~তো আমার সাথে রাগ করে থাকা যায় না কেন?
রুকাইয়া আরফানের নাক টেনে দিয়ে বললো,
~এতো কিউট একটা বরের সাথে রাগ করে থাকা যায়।
এখন আমাকে ছাড়ুন ঘুমাতে যান।
আরফান রুকাইয়াকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো,
~কাল অফিস থেকে ছুটি নিয়েছি তুমি,আমি আর আরফি শপিং এ যাবো।কতোদিন ঘুরাফেরা হয় না তাই কালকে একটু বাহিরে যাওয়া যাক।
রুকাইয়া বললো,
~অনেক ভালো করেছেন আমার মনে হয় আরফির মনটাও অনেক ভালো হয়ে যাবে।
আরফান বললো,
~হুমম।
রুকাইয়া বুঝতে পারলো আরফানের মনটা আবার খারাপ হয়ে গেছে তাই আরফানকে বললো,
~চলেন ঘুমাতে যাই।না হলে এখানে দাড়িয়ে দাড়িয়েই সকাল হয়ে যাবে।
রুকাইয়ার কথা শুনে আরফান মুচকি হেসে রুকাইয়াকে ছেড়ে দিলো তারা দুজনই শুয়ে পরলো।রুকাইয়া আরফানের বুকে মাথা রেখে শুয়ে পরলো
আবরার রাতের আকাশের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার পাশে রাতুল বসে আছে।আবরারের চেহারাটা বিষন্নতায় ভরা।রাতুল আবরার কে বললো,
~দেবদাস হয়ে ঘুরতে থাকবি নাকি ভাবিকে কীভাবে নিজের কাছে নিয়ে আসবি তা ভাববি?
রাতুলের কথায় ভ্রুকুচকে বললো,
~আরফি আমায় ভালোবাসেনা
রাতুল দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,
~ভালোবাসেনা তাই তো তুই চেষ্টা করবি যাতে তোর জন্য ভাবির মনে ভালোবাসা সৃষ্টি হোক।
আবরার বললো,
~কী করবো এখন ওর সাথে জোরজবরদস্তি করবো।
রাতুল আফসোস করে কপাল চাপড়ে বললো,
~আরে ভাই তুই বন্ধু তো হতেই পারিস তাই না?এতে তুই ভাবির আশেপাশেও থাকতে পারবি।
আবরার বললো,
~আরফি কী রাজি হবে?
রাতুল বললো,
~চেষ্টা তো করে দেখতে হবে।
আবরার বললো,
~কীভাবে শুরু করবো?
রাতুল বললো,
~সব কিছু আমিই বলবো তুই তো একটু ভাবতে পারিস।
আবরার ভাবতে শুরু করলো কিছুক্ষন পর আবরার বাঁকা হেঁসে বললো,
~চল ঘুমাতে যাই কালকে তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে
উঠতে হবে।
রাতুল বললো,
~তোর মাথায় কী চলছে?
আবরার বললো,
~দোস্ত আমি আরফির বন্ধু হতে চাই ওর আশেপাশে থাকতে চাই নিজের জন্য ওর মনে একটা জায়গা গড়তে চাই। যা কাল থেকে শুরু হবে তাই এখন ঘুমাতে চল কালকেই দেখতে পাবি আবরারের জাদু।
রাতুল অবাক হয়ে আবরারের দিকে তাকিয়ে রইলো তা দেখে আবরার বাঁকা হাসলো।

সকালের সোনালী রোদ আশেপাশে ছড়িয়ে পরেছে আরফি কলেজের জন্য রেডি হচ্ছে।একটুপরই সে কলেজের জন্য বের হবে কিছুদিন পর পরীক্ষা তাই ক্লাস গুলো মনোযোগ সহকারে করতে হবে।আরফি রেডি হয়ে রুম থেকে বের হয়ে নাস্তার টেবিলে বসে পরলো প্লেটে খাবার তুলে দিলো রুকাইয়া আরফানও চেয়ার টেনে বসে পরলো আরফান আরফিকে দেখে বললো,
~আরফি আজ আমরা শপিংয়ে যাবো তুই রেডি হয়ে থাকিস কলেজ থেকে ফিরলেই আমরা রওনা দিবো।আজ আমি ছুটি নিয়েছি অফিস থেকে কিছু কাজ আছে আর তোদের নিয়ে ঘুরতে যাবো।
আরফি বললো,
~ঠিক আছে ভাইয়া।আমি ক্লাস শেষ করে বাসায় চলে আসবো।এখন আমি যাই লেট হচ্ছি।
এতটুকু বলে সে ব্যাগ নিয়ে ভো দৌড় রাস্তায় এসে রিক্সার খোজে নেমে পরলো আরফি তখনই তার সামনে চলে আসলো আবরার হাতে গোলাপ ফুল। আরফি আবরারের দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে আরফির চাহনি দেখে আবরার মুচকি হেসে বললো,
~তোমাকে ডিস্টার্ব করতে আসেনি আসলে তোমাকে সরি আর এই ফুল গুলো দিতে এসেছি।
আরফির দিকে ফুল গুলো এগিয়ে দিলো আরফি এখনো হতবাক।আবরার বললো,
~নিবে না?
আরফির ধ্যান ভাঙ্গে সে ফুল গুলো হাতে নিলো আবরার বললো,
~আমি জানি তোমার উপর একটা চাপ সৃষ্টি করেছিলাম আমি। তার জন্য সরি
আবরার কানে হাত দিয়ে আরফিকে সরি বললো আরফি ফিক করে হেসে উঠলো আরফি বললো,
~আপনার সরি গ্রহন করা হলো।
আবরার বললো,
~আমরা কী বন্ধু হতে পারি?
আরফি অবাক হয়ে বললো,
~আপনি আমার বন্ধু হতে চান?
আবরার বললো,
~হুম কেন কোনো সমস্যা?
আরফি বললো,
~না।আচ্ছা আজ থেকে আমরা বন্ধু।
তারপর দুজনই হাটতে শুরু করলো দুজনই কথা বলছে আরফি রিক্সার খোজ পেলে সে রিক্সায় উঠে বসে আরফির রিক্সা চলতে শুরু করলো আবরার রিক্সার পাণে তাকিয়ে রইলো আজ থেকে হয়তো তার জীবনে অনেক কিছুরই পরিবর্তন হয়ে যাবে।

চলবে

(বিদ্রঃকেমন হয়েছে জানাবেন।ভুলগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো🥰🥰।Happy Reading🤗🤗)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here