গল্পের_নাম_অনুভূতি পর্বঃ৩

#গল্পের_নাম_অনুভূতি পর্বঃ৩
#লেখনীতে_Alisha_Rahman_Fiza

ভাবি আর মায়ের কাজে সাহায্য করছে আরফি হঠাৎ করে আবরারদের আগমন সায়েদা খানম আর রুকাইয়াকে ব্যতিব্যস্ত করে তুলেছে।ছেলের অফিসের সিনিয়রের সাথে বসে কথায় ব্যস্ত কবির আহমেদ।তার সাথে আছে আরফান সবার সাথে তারা যথাযথ কথা বলে যাচ্ছেন।আবরার কথা বলছে আর আড়চোখে রান্নাঘরের দিকে তাকাচ্ছে সেই যে আরফি গেলো আর আসলো না।আবরারকে অন্যমনস্ক দেখে আফরান বললো,
~স্যার কিছু লাগবে?
আরফানের কথায় আবরার হকচকিয়ে বললো,
~নাহ আসলে তোমার বাসাটা অনেক সুন্দর করে সাজিয়ে রেখেছো তাই দেখছিলাম।
আবরারের কথা শুনে আরফান হেসে বললো,
~সবই আরফি করেছে ওর সাজানো গোছানোর অনেক শখ।
আবরার মনে মনে হাসলো তার প্রেয়সী যে সবদিক দিয়ে পারফেক্ট তা সে বুঝতে পারছে।অবনি আবরারের পাশে বসে আছে সেও আরফিকে দেখার জন্য মরমর অবস্থা তাই আর সহ্য করতে না পেরে আরফানকে বলে উঠলো,
~আপনার ছোট বোনকে একটু ডেকে দিবেন ওর সাথে কথা বলতাম আর কি।
অবনির কথা শুনে আবরারের চোখ চকচক করতে লাগলো রাব্বি তা বুঝতে পেরে আরফানকে বললো,
~আরফিকে তো সেই যে দেখলান আর তো সামনেই আসলো না।
আরফান ইতস্তত হয়ে বললো,
~আসলে আরফি অচেনা কারো সাথে এতো তাড়াতাড়ি মিশতে পারেনা তাই হয়তো।
অবনি বললো,
~তাহলে আমি যাই ওর কাছে।
অবনির কথা শুনে আবরারের মেজাজ টা খারাপ হয়ে গেলো কোথায় সে ভাবলো প্রেয়সীকে একটুখানি দেখবে।আর এই বজ্জাত মেয়ে একা যাবে অসভ্য মেয়েলোক একবার বাসায় চল তারপর বুঝাবো।আরফান অবনিকে বললো,
~অবশ্যই ম্যাডাম।
অবনি ভ্রুকুচকে বললো,
~কে ম্যাডাম?আমি আপনার বোনের মতো এইসব ম্যাডাম ডাকবেন না আমাকে অবনি বলবেন।
আরফান হেসে বললো,
~জ্বী ঠিক আছে।
অবনি বললো,
~তাহলে আমি যাই।মা তুমি আসবে?
জাবেদা বেগন এতোক্ষণ কবির আহমেদের সাথে কথায় ব্যস্ত ছিলেন তাই কোনো কথাই তার কর্ণপাত হয়নি।তাই সে বললেন,
~কোথায় যাবি?
অবনি বললো,
~আরফির কাছে।
জাবেদা বেগম বললেন,
~তুমি যাও আমি পরে আসছি।
অবনি আর এক মুর্হুত দেরি না করে রান্নাঘরের দিকে চলে গেলো।আর আবরার সবার সাথে কথায় ব্যস্ত হয়ে পরলো।
আরফি প্লেট সাজাতে ব্যস্ত রুকাইয়া নুডুলস বানাচ্ছে।সায়েদা বেগম এখন সোফার ঘরে চলে গেছেন।অবনি আরফির কাছে গিয়ে দাড়ালো আরফি অবনিকে দেখে বললো,
~আপু কিছু লাগবে?
অবনি আরফির দুইহাত নিজের হাতে নিয়ে বললো,
~তুমি দেখতে অনেক মিষ্টি।
অপ্রত্যাশিত প্রশংসা শুনে আরফি একটু বিচলিত হলো।সঙ্গে রুকাইয়াও তবুও রুকাইয়া মিষ্টি এক হাসি দিয়ে বললো,
~আমার ননদি দেখতে যেমন মিষ্টি তার কথাও তেমনই মিষ্টি।
রুকাইয়ার কথা শুনে অবনি ফিসফিস করে বললো,
~তাই তো কারো মন চুরি করে বসে আছে।
অবনির ঠোঁট নাড়ানো দেখে আরফি বললো,
~আপু কিছু বললেন আমি বুঝতে পারছিনা।
অবনি আমতা আমতা করে বললো,
~পানি দাও এক গ্লাস।
আরফি গ্লাসে পানি নিয়ে অবনি কে দিলো।অবনি গটগর করে পুরো গ্লাসের পানি পান করলো।
আরফির কাছে অবনি রহস্য ঘেরা জাল সে কিছুই বুঝতে পারছে না আজ তাদের বাসায় এসব কেন হচ্ছে কী চলছে এই অনাগত ব্যক্তিদের মনে।

সবাই নাস্তা সেড়ে একসাথে বসে আছে আরফি বাবা আর মায়ের কাছে বসেছে।আবরার আড়চোখে আরফিকে দেখছে আর সবার সাথে কথা বলছে।জাবেদা বেগম আরফিকে নিজের কাছে ডাকলেন আরফি গুটিগুটি পায়ে জাবেদা বেগমের পাশে গিয়ে বসে পরলেন।জাবেদা বেগম আরফির মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন।আরফান একটু অবাক হলো জাবেদা বেগমের কাজে তবুও সে প্রকাশ করলো না।জাবেদা বেগম আরফির দিক থেকে চোখ সরিয়ে সায়েদা খানম কে বললেন,
~আজ এই বাসায় আসার একটা কারণ আছে আপা।
সায়েদা খানম, কবির আহমেদ, আরফান একটু অবাক হলেন। সায়েদা বেগম বললেন,
~কী কারণ আপা?
জাবেদা বেগম মুচকি হেসে বললেন,
~মেয়ে নিতে চাই আমি আপনার।আপনার এই লক্ষ্মী মেয়েটাকে আমার ঘরের চাঁদ করে নিতে চাই।
আরফির হাত-পা ঠান্ডা হয়ে আসলো তার কানে কী সে ভুল শুনছে আরফি অবাক নয়নে আরফানের দিকে তাকালো কিন্তু কোনো কাজ হলোনা কারণ আরফান নিজেই অবাক হয়েছে।আরফি নিজেকে সামলে বললো,
~আমার এখানে ভালো লাগছে না আমি রুমে যাচ্ছি।
আরফি একদন্ডও সেখানে দাড়ালো না এক প্রকার দৌড়ে চলে যায়।তার পিছে পিছে রুকাইয়াও চলে আসলো।আবরার আরফির যাওয়ার পাণে তাকিয়ে হতাশ হলো রাব্বি তাকে স্বান্তনা দিয়ে বললো,
~আরে লজ্জা পেয়েছে তাই চলে গেছে।
রাব্বির কথায় মলিন হেসে বললো,
~হয়তো।
আরফান জাবেদা বেগমকে বললো,
~ম্যাডাম আপনি কী বলছেন তা যদি পরিষ্কার করে বলতেন?
জাবেদা বেগম আরফানের কথা বুঝতে পেরে বললেন,
~দেখো বাবা আমি সোজাসাপটা বলে দিচ্ছি আমার ছেলে আবরারের জন্য তোমার বোন আরফিকে আমি চাইছি।
জাবেদা বেগমের কথা শুনে সায়েদা খানমের চোখ চকচক করে উঠলো তার এতদিনের মনবাসনা হয়তো পূরণ হতে যাচ্ছে।আরফির একটা ব্যবস্থা হয়ে গেলে সে হাফ ছেড়ে বাঁচবে। আরফান এখনো বাকরুদ্ধ আরফির বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এসেছেন তারা তাও আবরার স্যারের জন্য তার মাথা কাজ করছে না যার ফলে আরফানের মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছে না।পরিস্থিতি সামলাতে কবির আহমেদ বললেন,
~আপা আমরা খুশি হয়েছি আপনার প্রস্তাব শুনে আবরার অবশ্যই পাত্র হিসেবে উত্তম কিন্তু আরফি মাত্র কলেজে উঠেছে সামনে তার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা। আমি চাই না এই মূর্হুতে তাকে কোনো ধরনের চাপ দিতে।আপনি নিশ্চই বুঝতে পেরেছেন।
কবির আহমেদের মুখ থেকে প্রতিটি কথা ধনুকের তীরের মতো আবরারের বুকে গিয়ে বিধলো।আবরার আহত হয়েছে এ ধরনের কথা শুনে এতোটা করুন কথা শোনার জন্য ৩ মাস অপেক্ষা করছিল।

আবরার নিজেকে সামলে নিলো রাব্বি তার হাত শক্ত করে ধরলো।জাবেদা বেগম কবির আহমেদের এমন কথা শোনার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিল না সে বললো,
~দেখেন ভাই সাহেব আমি আপনাকে নিশ্চয়তা দিচ্ছি আরফির পড়া শোনায় কোনো রকমের ক্ষতি আমরা হতে দিবো না।আর আবরারও চায় আরফি পড়া শোনা করুক এতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই।
কবির আহমেদ কিছু বলবেন তার আগে সায়েদা খানম বললেন,
~আপা আমরা অবশ্যই এই ব্যাপারে ভাববো।আপনাদের পরিবারে আমাদের মেয়ে যাবে এটা তো সৌভাগ্যের কথা।
সায়েদা খানমের কথা শুনে আবরারের মনটা স্বস্তিতে ভরে গেলো যাক একজন তার পক্ষে আছে। কিন্তু একজন একদমই এ কথা গুলো পছন্দ করছে না সে হলো আরফান।আরফানের প্রচন্ড রাগ হচ্ছে কিন্তু নিজেকে সামলে আরফান বললো,
~আমরা ভেবে জানাচ্ছি আপনাদের আর আরফির মতামত জানতে হবে তাই একটু সময় প্রয়োজন।
জাবেদা বেগম বললেন,
~অবশ্যই আজ আমরা যাই তবে।আপনারা আমাদের বাসায় যাবেন একদিন।
জাবেদা বেগম সবাইকে নিয়ে বাসা থেকে বের হলেন।আবরার একবার ভিতরের দিকে চোখ বুলালো যদি তার প্রেয়সীকে দেখতে পেতো কিন্তু আফসোস সে বাহিরে আসেনি একবারও।আবরাররা রওনা হলো বাসার উদ্দেশ্যে।
আরফি সেই যে রুমের দরজা বন্ধ করে বসেছে খোলার নাম নেই তার রুকাইয়া তার দরজার সামনে দাড়িয়ে আছে।একবারও খোলেনি আরফি রুকাইয়া এবার হাল ছেড়ে দিয়ে যেই না চলে যেতে নিবে তখনই আরফি দরজা খুলে দিলো।রুকাইয়া তড়িঘড়ি করে রুমের ভিতরে ঢুকে পরলে আরফিকে স্বাভাবিক লাগছে আরফি তার রুন গুচ্ছাছে।রুকাইয়াকে আরফি জিজ্ঞেস করলো,
~চলে গেছে তারা?
রুকাইয়া দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,
~হ্যাঁ।
আরফি বললো,
~মা আজ খুশিতে হয়তো সব ভুলে যাবে।আমাকে যে সে বিদায় করার একটা ফন্দি পেয়েছে।
রুকাইয়া মলিন মুখে তাকালো তারপর বললো,
~এভাবে বলো না মা তোমার ভালোর জন্যই বলছে।
রুকাইয়ার কথা শুনে আরফি কিছু বলে না গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে যায় বারান্দায় সেখানে গিয়ে বিশাল আকাশটার দিকে তাকিয়ে থাকে সে।আরফি মনে মনে ভাবে আর হয়তো অনেক কম সময় আছে তার কাছে এভাবে হয়তো আর কোনোদিন মুক্ত আকাশ দেখতে পারবেনা।কারণ সে নিজেই হয়তো বন্দি খাচার পাখি হয়ে যাবে।রুকাইয়া আর আরফিকে বিরক্ত করে না সে চলে যায় তার রুমে আরফি এখনো একধ্যানে আকাশ দেখছে।
আরফির ভাবনা কী আদৌ ঠিক আবরার কী তাকে বন্দি খাঁচার পাখি করে রাখবে নাকি এই বিশাল আকাশে মুক্ত পাখির মতো ছেড়ে দিবে।আরফি তো জানে না তার জন্য কেউ সুপ্ত ভালোবাসার ঘর বুনে রেখেছে।কতো স্বপ্ন গড়ে রেখেছে যে স্বপ্নে আরফি রাণীর সিংহাসনে বসে আছে।

আরবার বাসায় পৌছে সরাসরি তার রুমে চলে যায় রাব্বি তাকে অনেক বুঝিয়েছে এসব ব্যাপার এতো তাড়াতাড়ি হয় না।একটু সময় লাগে আর সঠিক সময়ে সব হবে।তবুও আবরারের মন কু ডাকছে আরফি কী রাজী হবে?বুঝবে তার মনের অবস্থা কীভাবে বুঝবে সে তো বলেই দেখেনি তার মনের কথা। আবরার কী একবার চেষ্টা করবে? আবরার আর ভাবতে পারছেনা তার মাথা ভো ভো করছে।সে ফ্লোরে বসে পরলো তার মনটা বেশ আনচান করছে আবরারের নিজেকে পাগল পাগল মনে হচ্ছে। আবরার শার্টের হাতা গুটিয়ে চুল গুলো পিছন দিকে ঠেলে দিয়ে চলে গেলো ওয়াশরুমে।তার মনের অবস্থা এখন নাজেহাল সে আর এভাবে থাকতে পারবেনা তার এই বুকে আরফিকে প্রয়োজন।
জাবেদা বেগন রুমে বসে হিসাব কষছেন এ মাসের তাকে দেখে কেউ চিন্তিত মনে করবে না কিন্তু তার মনে এক ঝড় বয়ে যাচ্ছে।ছেলের অবস্থা করুন আবরারের চোখে কিছু হারানোর ভয় সে দেখে। ছোট থেকে তার ছেলেটা কিছুই পাইনি বাবা হারা ছেলেদের কাঁধে যে কত দায়িত্ব থাকে। আবরার নিজেকে সামলিয়ে নিতে পারবেনা এবার হয়তো ঘুরিয়ে যাবে।আবরারকে সামলে রাখার জন্য আরফির প্রয়োজন তাকে এখন সায়েদা খানমে সাথে কথা বলতে হবে।এই মানুষটি তার ছেলের জীবনে সুখ বয়ে আনবে আরফি এনে দিবে।
অবনি আরফিকে ফোন করছে হ্যাঁ সে আরফির নাম্বারটা নিয়ে এসেছে।আরফিকে তার অনেক পছন্দ হয়েছে বয়সে ছোট হলেও মেয়েটার মধ্যে মিচিউরিটি আছে।দুবার ফোন রিং হতেই আরফি ফোন রিসিভ করেই সালাম দিয়ে জিজ্ঞেস করে,
~কে বলছেন?
অবনি বললো,
~অবনি বলছি।
অবনি নামটা শুনে আরফির মনে বিষাদের রঙ্গটা আরো বেড়ে গেলো।অবনি ফোন দেওয়াটা সে স্বাভাবিক ভাবে নিতে পারছে না।
অবনি এরকম নিরবতা দেখে বললো,
~আমি কী তোমায় ডিস্টার্ব করছি?
আরফি বললো,
~নাহ।
অবনি খুশি হয়ে বললো,
~তাহলে কথা বলা যাবে।
আরফি বললো,
~জ্বী।
অবনি বললো,
~আরফি আমার ভাইটা অনেক ভালো তোমাকে অনেক ভালোবাসবে একটু ভেবে দেখতে পারো।
আবরার বোনের রুমের পাশ দিয়ে যাচ্ছিল তখন আরফি নামটা শুনে থেমে যায় পুরো কথা শুনে তার রাগ উঠে যায়।আরফিকে কেন বার বার এসব কথা বলা হচ্ছে ওরা তে সময় চেয়েছে তাই ওদের সে সময়টা দেওয়া উচিত। আবরার অবনির কাছে গিয়ে কান থেকে ফোন নিয়ে কেটে দিলো ঘটনার আকস্মিকতায় অবনি বুঝে উঠতে পারলোনা কী হলো?আরফিও অবাক হলো ফোন কেটে যাওয়ায়। তাই সে আবার ফোন দিলো কিন্তু ফোন কেউ রিসিভ করলোনা।

চলবে

(বিদ্রঃকেমন হয়েছে জানাবেন।ভুলগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো 🥰🥰।Happy Reading 🤗🤗)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here