গল্পের_নাম_তুমি_আসবে_বলে পর্বঃ১৩

গল্পের_নাম_তুমি_আসবে_বলে পর্বঃ১৩
#লেখনীতে_Alisha_Rahman_Fiza

সকালে ঘুম থেকে উঠতেই রাতের সব কথা মনে পরে গেলো।কাল রাতে ফায়াজ ভাই আমাকে রুম পর্যন্ত দিয়ে তারপর সে তার রুমে চলে যায়।আমি রুমে এসে চুপচাপ শুয়ে পরলাম কখন যে ঘুমিয়ে পরলাম তা খেয়াল করিনি।বিছানা থেকে উঠে ওড়না শরীরে জড়িয়ে বারান্দায় চলে গেলাম সকাল ১০টা খালামণি হয়তো রান্নাঘরে আমি বারান্দায় দাড়িয়ে এটাই ভাবছি যে ফায়াজ ভাইয়ের সামনে কী করে?লজ্জায় মাথাকাটা যাচ্ছে ও সরি এখন তো ফায়াজ ভাই বলা যাবে না শুধু ফায়াজ বলতে হবে। এসব ভাবছি হঠাৎ খালামণি রুমে এসে আমাকে বললেন,
~ফিহা,ফায়াজের না অনেক জ্বর ছেলেটা দিন দিন কেয়ারলেস হয়ে যাচ্ছে।
ফায়াজ ভাইয়ের জ্বর এসেছে শুনে আমার বুকটা ধক করে উঠলো আমি দৌড়ে খালামণির সামনে গিয়ে বললাম,
~কাল রাতেও তো ঠিক ছিলেন সে এখন কীভাবে জ্বর আসলো।
খালামণি আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
~ওরে গাধী জ্বরতো যে কোনো সময় আসতে পারে।
আমি খালামণির কথা শুনে আসলেই বোকা হয়ে গেলাম তবুও কোনো কথা না বলে ওয়াশরুমে চলে গেলাম ফ্রেশ হতে। ফ্রেশ হয়ে বের হলাম তারপর বাহিরে চলে গেলাম ডাইনিং রুমে এসে দেখি খালামণি,প্রিয়া ভাবি আর ফাহাদ ভাই বসে আছে আমি গিয়ে চেয়ার টেনে বসে পরলান খালামণি বললেন,
~ফাহাদ তোর ভাইতো কিছুই খাবেনা বলে দিয়েছে। বলতো এখন কী করি?
আমি চট করে বললাম,
~আমি নিয়ে যাচ্ছি খাবার।
বলেই প্লেটে সব খাবার সাজিয়ে চলে আসলাম ফায়াজ ভাইয়ের রুমের সামনে।
অন্যদিকে ফিহার এতো কেয়ার দেখে ফায়াজের মা মুচকি মুচকি হাসছে ফাহাদ মায়ের হাসি দেখে বললো,
~মা হাসছো কেন?
ফায়াজের মা বললেন,
~তুই এতো জেনে কী করবি?প্রিয়া ওকে নাস্তা দেও।
বলেই সে রুমের দিকে চলে গেলেন।ফাহাদ প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে বললো,
~তুমি কিছু বুঝেছো?
প্রিয়া বললো,
~তুমি নাস্তা করো।

আমি ফায়াজ ভাইয়ের রুমের ভিতরে ঢুকে পরি রুম অন্ধকার হয়ে আছে পর্দার ফাক দিয়ে রোদের আলো পরায় একটু একটু আলো আসছে। আমি পা টিপে টিপে ট্রেটা টেবিলে উপরের রেখে বিছানার দিকে তাকিয়ে দেখি ফায়াজ ভাই বিছানায় উপুর হয়ে শুয়ে আছে।শরীরে কোনো চাদর নেই না আছে শার্ট দেখেই রাগ লাগলো এই জ্বরে আবার খালি গায়ে শুয়ে আছে।আমি আস্তে আস্তে তার সামনে গিয়ে বসে পরলাম তার চুলগুলো আমার হাত দিয়ে ছুইয়ে দিলাম তার কপালে হাত দিয়ে দেখি পুরো গরম হয়ে আছে।আমি তাকে আস্তে করে ডাকতে লাগলাম
~ফায়াজ ভাই,উঠবেন না।নাস্তা করতে হবে তো
ফায়াজ ভাইয়ের কোনো হেলদোল নেই আমি আবার তাকে ডাকলাম এবার সে একটু নড়ে উঠলো।চোখ বন্ধ রেখেই বাচ্চাদের মতো বললেন,
~আমি খাবো না মা।পুরো মুখ আমার তিতা হয়ে আছে।বমি আসবে
তার এমন বাচ্চামো কথা শুনে হাসি আসলো।আমি মুখ টিপে হেসে বললাম,
~ফায়াজ ভাই, আমি ফিহা
ফায়াজ ভাই ভ্রুকুচকে বললেন,
~মা,তোমার কন্ঠ ফিহার মতো লাগছে কেন?
আমি এবার হো হো করে হেসে বললাম,
~ফায়াজ ভাই আমি খালামণি না ফিহা।চোখ খুলে দেখুন তো

সে চোখ খুলে ধপ করে উঠে বসলেন।তার এভাবে উঠে বসাতে আমি একটু বিচলিত হলাম কিন্তু পরক্ষনেই নিজেকে সামলে তাকে কঠিন গলায় বললাম,
~ফ্রেশ হয়ে এসে নাস্তা করবেন।কোনো কথা বলবেন না যদি আমার কথা না শুনেন তাহলে আমি আজই বাসায় চলে যাবো।
বলেই অন্যদিকে মুখ করে বসে রইলাম।ফায়াজ ভাই বললেন,
~তুই কী by any chance আমাকে blackmail করছিস?
আমি তার দিকে ঘুরে বললাম,
~যা ভাবার ভাবতে পারেন এতে আমার কোনো সমস্যা নেই।
ফায়াজ ভাই কিছু না বলে সেভাবেই বসে রইলেন কিছুক্ষন পর সে আমার কোলে মাথে রেখে বললেন,
~চুলগুলো একটু টেনে দে।
আমি আলতো হাতে চুল গুলো টেনে দিলাম।সে পরম আবেশে চোখ বন্ধ করে নিলেন
ফায়াজ ভাইকে নাস্তা করিয়ে ঔষধ খাইয়ে আমি রুমে এসে পরলাম তখনই আমার মোবাইল বেজে উঠে আমি মোবাইল হাতে নিয়ে দেখি রুপা আপুর ফোন।আমি রিসিভ করতেই রুপা আপু খুবই ক্ষোভ নিয়ে বললো,
~তুই ফায়াজ ভাইয়ের বাসায় এখন পর্যন্ত কেন রয়েছিস?তুই সব জেনে বুঝেও কেন এমন করছিস?
এ কথাটি বলে সে কেঁদে উঠলেন তার কান্না শুনে অনেক খারাপ লাগছে আমি নিজেকে সামলে রুপা আপুকে বললাম,
~আপু,এসব কথা বলে কোনো লাভ নেই ফায়াজ ভাই তো আপনাকে ভালোবাসে না তাহলে এসব কেন করছেন?
রুপা আপু বললো,
~প্লিজ ফিহা তুই কেন বুঝিস না আমি অনেক চেষ্টা করেছি ভুলে যাওয়ার হয় না তো।
আমি বললাম,
~এই বিষয়ে আমি কিছুই জানি না এটা তোমার আর ফায়াজ ভাইয়ের ব্যাপার তার সাথে কথা বলতে পারেন।
বলেই খট করে ফোন রেখে দিলাম

দুপুরবেলা ফায়াজ ভাইকে খাইয়ে আমি রুমে এসে বিছানায় শুয়ে পরলাম।খালামণি এসে আমার পাশে শুয়ে পরলেন আর বললেন,
~ফিহা,তুই কী বাসায় চলে যেতে চাস?
আমি বললাম,
~আর কিছুদিন থাকি তোমার সাথে।
খালামণি হেসে বললেন,
~আমার বাড়িতে একেবারেই থেকে যা না?
আমি খালামণির কথা শুনে বললাম,
~মানে?
খালামণি বললেন,
~ফায়াজকে বিয়ে করবি?
খালামণির কথা শুনে উঠে বসলাম আর বললাম,
~কী বলছো?
আমার অনেক লজ্জা লাগছে কীভাবে দিবো এই প্রশ্নের জবাব।খালামণি আমার পাশে বসলেন আমার হাত ধরে বললেন,
~তোর মাকে আসতে বলে দিয়েছি তোর ভাই আর বাবাও আসবে।আগামীকাল তোর আর ফায়াজের বিয়ের তারিখ ঠিক করতে।
এসব শুনে আমি অবাক এতো কিছু কীভাবে হয়ে গেলো।আমি খালামণিকে জড়িয়ে ধরলাম খালামণি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
~আমার পাগলকে সামলিয়ে রাখিস মা।আর শোন এসব ব্যাপারে ফায়াজকে কিছু বলিস না ওর জন্য সারপ্রাইজ।
আমি বললাম,
~ঠিক আছে।
বিকেলবেলা ফায়াজ ভাই আমার রুমে আসলেন আমি আর প্রিয়া ভাবি বসে আড্ডা দিচ্ছি আড়চোখে তাকে একবার দেখে আবার কথায় মনোযোগ দিলাম। প্রিয়া ভাবি ফায়াজ ভাইকে দেখে বললেন,
~ফায়াজ তোমার জ্বর কমেছে?
ফায়াজ ভাই বললেন,
~কমেছে।
প্রিয়া ভাবি আমার দিকে তাকিয়ে চোখ টিপ মেরে বললেন,
~ফিহা আগামীকাল তো তুমি চলে যাবে সবাই আসছে তোমার বাসা থেকে।
আমি একবার ফায়াজ ভাইয়ের দিকে তাকালাম সে ভাবলেশহীন ভাবে দাড়িয়ে আছে মনে হচ্ছে তিনি কিছুই শুনেনি।আমি মুখ ছোট করে বললাম,
~হ্যাঁ
তখনই ফায়াজ ভাই বললেন,
~ভাবি,ভাই এসেছে আপানাকে ডেকেছে।
প্রিয়া ভাবি খুব দূর্ত সেখান থেকে চলে গেলেন

আমি মুখ ফুলিয়ে বসে থাকলাম ফায়াজ ভাই আমার গা ঘেষে বসে পরলেন জ্বরটা আসলেই কমেছে সে আমার কাছে ফিসফিস করে বললেন,
~এইবার যখন এই বাসায় আসবি আমার বউ হয়ে আসবি।আমার বউ
তার মুখে আমার বউ কথাটা শুনে অন্য এক অনুভূতি জেগে উঠলো।সে আমার নাকে হাত দিয়ে বললেন,
~ঠিক এই জায়গাটায় আমার জন্য নাকফুল পরবি।তোকে অনেক সুন্দর লাগবে ফিহা অনেক সুন্দর।
তার প্রতিটি কথা আমার কাছে মনোমুগ্ধকর সে আমার মনে এমন এক জায়গা জুড়ে আছে যা কেউ কোনোদিন করে নিতে পারে নি।সে আমার মন জুড়ে বসবাস করছে ইশশ এই অনুভূতিটা এতো সুন্দর কেন?যদি এই ভালোবাসার আগুনে না পুরতাম তাহলে হয়তো এই মিষ্টি অনুভূতি পেতাম না।আমি ফায়াজ ভাইয়ের দিকে তাকাতেই সে বললেন,
~#তুমি_আসবে_বলে আজ আমি এই নিশ্বাস গ্রহণ করছি।
তার একথা শুনে আমার চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পরে গেলো আমি তাকে জড়িয়ে ধরলাম সেও আমাকে পরম আবেশে তার বাহুডরে আবদ্ধ করলেন।

চলবে

(বিদ্রঃকেমন হয়েছে জানাবেন।ভুলগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো🥰🥰।Happy Reading🤗🤗)

আগের পর্বের লিংক
https://www.facebook.com/groups/371586494563129/permalink/387659782955800/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here