গল্পের_নাম_তুমি_আসবে_বলে পর্বঃ১২

গল্পের_নাম_তুমি_আসবে_বলে পর্বঃ১২
#লেখনীতে_Alisha_Rahman_Fiza

আমি দরজার দিকে তাকাতেই আমার কলিজার সব পানি শুকিয়ে যায় কারণ ফায়াজ ভাই তার দুহাত মুঠ করে দাড়িয়ে আছে।আমি শুকনো ঢোক গিলে প্রিয়া ভাবিকে বললাম,
~ভাবি,আমি বোরকাটা খুলে আসছি।
বলেই একপ্রকার দৌড়ে সেখান থেকে চলে আসি।সেখানে থাকা আমার জন্য ক্ষতিকর আমি রুমে এসে হাফ ছেড়ে বাঁচলাম বোরকা খুলে ফ্রেশ হয়ে নিচে যাবো তাই ওয়াশরুমে চলে গেলাম।
ফায়াজ বসে আছে তাসিফের একদম মুখোমুখি সবাই কথাতে ব্যস্ত কিন্তু ফায়াজ চুপচাপ বসে আছে।সে তীক্ষ্ণদৃষ্টিতে শুধু তাসিফের দিকে তাকিয়ে আছে প্রিয়া ফায়াজকে দেখে বললো,
~ফায়াজ তুমি চুপচাপ কেন বসে আছো?
ফায়াজ হালকা হেসে বললো,
~ফিহার সাথে এতো কথা বলে এখন আর কারো সাথে কথা বলতে মন চাইছে না।
ফায়াজের এহেন কথায় তাসিফের মুখটা চুপসে বেলুন হয়ে গেলো তাসিফ ফায়াজের দিকে তাকাতেই দেখতে পায় ফায়াজ তার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসছে।তাসিফ নড়েচড়ে বসে ফাহাদকে বললো,
~ফাহাদ আজ আমি আসি।
ফাহাদ বললো,
~না ভাইয়া কী বলছেন?আজ এখানেই থেকে যান।
তাসিফ বললেন,
~নাহ তোমাদের কষ্ট করতে হবে না আজ যাই আবার আসবো।
তাসিফ উঠতে যাবে তার আগেই ফায়াজের মা এসে বললেন,
~তাসিফ রাতের খাবার খেয়ে যাবে আমি কোনো কথা শুনছিনা।
তাসিফ বললো,
~আচ্ছা আন্টি আপনি যেহেতু বলছেন তাহলে খাওয়ার পরে চলে যাবো।

তাসিফের কথায় ফায়াজের মেজাজটা গরম হয়ে গেলো এতো আদ্যিখ্যাতা দেখানোর কী আছে?থাকতে মনচায় তো থাকবে এতো importance নেওয়ার কী আছে?যত্তসব ঢং এসব বিড়বিড় করছে তখনই প্রিয়া বললো,
~ফায়াজ,সবার জন্য আইসক্রিম নিয়ে আসতে পারবে?আসলে তোমার ভাই আনতে ভুল গেছে।
ফায়াজ বললো,
~আনছি।
বলেই সে তার মায়ের সামনে দাড়িয়ে ফিসফিস করে বললো,
~আমি যাচ্ছি আর আসছি তুমি ফিহাকে এই তাসিফের সাথে কথা বলতে দিবে না।নাহলে আমি কিন্তু এই ব্যাটাকে ছাড়বো না।
ছেলের কথায় ফায়াজের মা বললেন,
~ফিহা কথা বললে আমি কীভাবে আটকাবো আর তুই এমন গুন্ডাদের মতো কথা বলছিস কেন?যা এখান থেকে
শেষের কথাটা একটু জোরে বলায় সবাই ফায়াজের মায়ের দিকে তাকালেন ফায়াজ হেসে বললো,
~হ্যাঁ মা যাচ্ছি।
বলেই সে চলে গেলো রাস্তার উদ্দেশ্যে
আমি নিচে নেমে সোজা খালামণির কাছে চলে গেলাম সে রান্নাঘরে কাজ করছে আমিও তার সাহায্য করছি খালামণি বললেন,

~আমি একটু রুম থেকে আসছি তুই মুরগীটা একটু নাড়া দে।
বলেই সে আমার হাতে চামচ ধরিয়ে দিলেন আমি নাড়া দিতে লাগলাম।রান্নাঘরে চুলার তাপের কারণে ঘাম ঝড়তে শুরু করলো আমি ওড়না দিয়ে ঘাম মুছে মুরগী নাড়া দিয়ে আবার সালাতের জন্য টমেটো কাটতে লাগলাম তখনই কেউ পিছন থেকে শান্ত স্বরে বললেন,
~ওইসময় আমার সাথে কথা বলো নি কেন?
আমি টমেটো কাটা বন্ধ করে পিছন ফিরে দেখি তাসিফ দাড়িয়ে আছে তাকে দেখে অবাক হয়ে বললাম,
~আপনি রান্নাঘরে কী করছেন?
তাসিফ বললেন,
~প্রিয়া আর ফাহাদ রুমে গেছে তাই ভাবলাম তোমার খোঁজ করি।ওইসময় কথা কেন বললে না?
আমি আমতা আমতা করে টমেটো কাটতে কাটতে বললাম,
~খেয়াল করিনি বাহির থেকে এসেছিলাম তো তাই।
তাসিফ বললেন,
~আজ কোথাও যাওয়া হয়েছিল বুঝি।
আমি বললাম,
~হ্যাঁ।ফায়াজ ভাইয়ের সাথে গিয়েছিলাম।
তাসিফ বললেন,
~ভালোবাসো ফায়াজকে?
আমি অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে বললাম,
~আমার ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে প্রশ্ন করা আমার একদম পছন্দ না।
তাসিফ কিছু বলতে যাবে তার আগে খালামণি এসে পরলেন তাসিফ এক গ্লাস পানি নিয়ে সেখান থেকে চলে গেলেন।

তাসিফ রাতে খাওয়া দাওয়া করে চলে গেলেন আমরাও যে যার রুমে এসে শুয়ে পরলাম খালামণির সাথে অনেকক্ষন কথা বলে আমিও ঘুমিয়ে পরলাম।
রাত ১.১৫মিনিটে আমার ঘুম ভাঙ্গলো মোবাইলের ভাইব্রেশনে। আমি বালিশের নিচ হাতিয়ে নাম্বার না দেখে রিসিভ করে কানে ধরে বললাম,
~হ্যালো কে?
অপরপাশের ব্যক্তি ধমক দিয়ে বললেন,
~এই মেয়ে ফোনে কী আমার নাম্বারো সেভ করে রাখিসনি?
আমি ধমক খেয়ে উঠে বসলাম ঘুমের রেশ কেটে গেছে আমি বললাম,
~ফায়াজ ভাই এতো রাতে ফোন করেছেন কেন?
ফায়াজ ভাই বললেন,
~ছাদে আয় তাড়াতাড়ি তোর জন্য অপেক্ষা করছি।
বলেই খট করে ফোন রেখে দিলো আমাকে কিছু বলতে দিলো আমি বিরক্তি নিয়ে বিছানা থেকে নেমে ওড়না গায়ে জড়িয়ে পা টিপে টিপে রুম থেকে বের হয়ে সিড়ি বেয়ে উপরে চলে গেলাম ভাগ্যিস লাইট গুলো জ্বলছিল না হলে আমি শেষ হয়ে গেতাম।ছাদের গেট খোলা আমি তা দিয়ে ভিতরে ঢুকে দেখি ফায়াজ ভাই রেলিং ঘেষে আকাশ পাণে তাকিয়ে আছে।আমি ধীর পায়ে তার পাশে গিয়ে দাড়াতেই সে বললেন,
~ভয় করেছে আসতে এখানে?

আমি বললাম,
~তাহলে কী করবে? এতো রাতে তো আমি নাচতে নাচতে এখানে আসবো।
আমার কথা শুনে সে অট্টহাসিতে নিজেকে মাতিয়ে তুললো।আমি মুগ্ধ নয়নে তার দিকে তাকিয়ে রইলাম তার হাসির শব্দ আমার কানে সুমধুর ধ্বনির মতো লাগছে।তার হাসিমাখা মুখ দেখে আমার ভিতর এক অন্য শিহরণ বয়ে যাচ্ছে আমাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে সে বললেন,
~কী হয়েছে?এভাবে কী দেখছো?
আমি তার প্রশ্নে হকচকিয়ে উঠলাম নিজেকে ঠিক করে বললাম,
~এতো রাতে কেন ডেকেছেন?
ফায়াজ ভাই বললেন,
~বিয়ে করবি না আমায়?
তার প্রশ্ন শুনে আমি তার দিকে তাকালাম সে হালকা হেসে বললেন,
~এই ছেলেটাকে একটুও ভালোবাসা যায় না?
তার এমন অসহায় ভাব সহ্য হচ্ছে না মন চাইছে জাপটে ধরে তাকে বলি ভালোবাসি ভালোবাসি। কিন্তু কেমন জানি জড়তা কাজ করছে এই জড়তা কীসের?
ফায়াজ ভাই বললেন,
~তোর হাতটা ধরি?
আমি কিছু বললাম না সে কাঁপা কাঁপা হাতে আমার হাতটা ধরে সে তার বুকের মাঝে ধরলেন। আমি চোখ করে ফেললাম এই অনুভূতির নাম টা কী ভালোবাসা। হ্যাঁ আমি ভালোবাসি তাকে অনেক ভালোবাসি।

আমি তার থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিলাম। ফায়াজ ভাই বললেন,
~কী হয়েছে?
আমি ছলছল চোখে তার দিকে তাকিয়ে বললাম,
~সহ্য হচ্ছে না।
ফায়াজ ভাই বললেন,
~আমাকে সহ্য হচ্ছে না।
আমি বললাম,
~এই অনুভূতি সহ্য হচ্ছে না।
ফায়াজ ভাই মুচকি হেসে আমাকে জড়িয়ে ধরলেন।তার স্পর্শ পেয়ে আমার চোখ দিয়ে পানি এসে পরলো তাকে জড়িয়ে ধরলাম দুইহাত দিয়ে সে আমার কানে কানে বললেন,
~আজ থেকে ভাই বলা যাবে না।শুধু ফায়াজ আমি শুধু তোর ফায়াজ আর তুই আমার ফিহা।কাউকে আসতে দিবো না আমাদের মাঝে যে আসবে তার অস্বস্তিত আমি মিটিয়ে দিবো ফায়াজ হাসান তার ফিহাকে নিজের করে রাখবে।
তার কথা শুনে এতো খুশি লাগছে যার কোনো শেষ নেই।এই পাগল একরোখা মানুষটাকে ভালোবেসে ফেলেছি এই মানুষের পাগলামী গুলোকে ভালোবেসেছি।এতো সুখ সইবে তো তাকে কাছে পাবো তো আজীবন তাকে ছাড়া যে আমি অচল হয়ে পরবো।
ফায়াজ ফিহাকে জড়িয়ে ধরে বললো,
যদি আমি হাত বাড়িয়ে দেই তোমার পাণে
ধরবেতো আমার হাত
তোমায় নিয়ে পারি দিবো আমি জীবনের
সকল ধাপ
মৃত্যুর পর তোমায় পেতে চাই আমার সেই
অজানা পৃথিবীতে
থাকবে তো তুমি আমার অর্ধাঙ্গিনী হয়ে❤️❤️

চলবে

(বিদ্রঃকেমন হয়েছে জানাবেন।ভুলগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো🥰🥰।Happy Reading🤗🤗)

আগের পর্বের লিংক
https://www.facebook.com/groups/371586494563129/permalink/386974659690979/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here