#গল্প_গোধূলি_বেলায়_তুমি
#Writer_Ritu_Bonna
#পর্ব_১১
সাফিন আদ্রিজার অবস্থা দেখে বাঁকা হেসে বলে, আমাকে পাগল করে এখন পালিয়ে গেলে হবে বেবি। তোমাকে তো এখন আমার চাই। এট এনি কস্ট,,,,,
আদ্রিজা অন্য পাশে এসে দাঁড়ায়। হঠাৎ করে নিজের সামনের দিকে তাকিয়ে সে থমকে যায়। ব্লু শার্টের সাথে ব্লাক সুট পরা। হাতে ব্যান্ডেড ওয়াচ। ম্যাচিং করা প্যান্ট আর সুজ। ধীরে ধীরে হেঁটে তার দিকে এগিয়ে আসছে। তার হাঁটা স্টাইলটাও যেন সবার থেকে আলাদা। যে কেউ দেখলেই অ্যাটেকটেড হয়ে যাবে। ছেলেটা ওর সামনে দাঁড়াতে সে তাকে চিনে ফেলে। ছেলেটাকে দেখেই সে ঢোক গিলে। সেদিন তো ছেলেটিকে অনেক ওল্টা – পাল্টা কথা শুনিয়েছে। আজ যদি ছেলেটি কিছু করে সে তার ভয় পাচ্ছে। সে পালাতে চাইলে ছেলেটি তার হাত ধরে তাকে থামিয়ে দেয়। নেশাক্ত কন্ঠে বলে,,, কোথায় পালাবে তুমি? আমার কাছ থেকে তুমি কিছুতেই পালাতে পারবে না।
আদ্রিজা যেন স্তব্ধ হয়ে যায় কিছু মুহূর্তের জন্য । কিছু একটা ছিল সেই কন্ঠে যা তার ভিতরটা উতালপাতাল করে দিয়েছে। তার কিছুর খেয়ালই ছিল না। খেয়াল হতেই সে আভিয়ানের হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিতে চেষ্টা করে কিন্তু কিছুতেই আভিয়ানের হাত থেকে নিজের হাত ছাড়াতে পারে না।
সে রেগে রুক্ষস্বরে বলে,,,, হাত ছাড়ুন। এটা কি ধরনের অসভ্যতামি?? অচেনা একটা মেয়ের হাত ধরে আছেন,,,,,
আভিয়ান আদ্রিজা কোন কথার উত্তর না দিয়ে বলে,,, আমি আপনার সাথে ডান্স করতে চাই,,,,,,
আদ্রিজা রাগে বলে,,, আমি তোমার সাথে ডান্স করতে চাই না। আমার ডান্স পছন্দ নয়।
আভিয়ান আদ্রিজার কোন কথা না শুনে ওকে ডান্স ফ্লোরে নিয়ে যায়।
আদ্রিজা রেগে বলে,,, কি করছেন? হাত ছাড়ুন বলছি। ভালো হবে না কিন্তু,,,,, আমার এইসব একদম পছন্দ না।
আভিয়ান নেশাক্ত কন্ঠে বলে,,, কিন্তু আমার তো তোমাকে অনেক পছন্দ। প্রথম দেখাই ভালোবেসে ফেলেছি তোমাকে। কি করে ছেড়ে দেবো তোমাকে । আমার যে শুধুই তোমাকেই চাই।
আদ্রিজা আরোও রেগে যায় আভিয়ানের কথায়। সে দাঁতে দাঁত চেপে রাগে কটমট করে বলে,,,, কি যা তা বলছেন আপনি,? আমাকে চাই মানে? আমি কি কোন পণ্য যে আপনি চাইলেন আর পেয়ে যাবেন।আচ্ছা অসভ্য তো আপনি,,, হাত ছাড়ছেন না কেন?
আভিয়ান আদ্রিজার দিকে একটু ঝুঁকে বলে,,,, তোমাকে পেতে যদি আমাকে অসভ্য হতে হয় তাতেই আমি রাজি। আমার যে তোমাকে চাই আর এই আভিয়ান চৌধুরীর যা চাই তা পেয়েই ছাড়ে। তোমাকে যে আমার হতেই হবে। আর কিছু না বলে সে আদ্রিজাকে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়।
আদ্রিজা নিজের থেকে আভিয়ানকে ছাড়িয়ে বলে,,, কি সব বলছেন আপনি? আপনার মাথায় নিশ্চয়ই পবলেম আছে,,,,
আভিয়ান শান্ত স্বরে বলে,,, হুমম।আমার মাথায় পবলেম আছে আর একমাত্র তুমিই পারো আমাকে ঠিক করতে। আমাকে ঠিক করার দ্বায়িত্বতা তুমি নিয়ে নাও তবেই হবে।
আদ্রিজার সাথে আভিয়ানকে দেখে সাফিন একদম সহ্য করতে পারছে না। তার পচন্ড রাগ হচ্ছে। সে এসে আদ্রিজা আর আভিয়ানের সামনে এসে দাঁড়ায়। আভিয়ান সাফিনকে দেখে অবাক হয়ে যায়। সে আদ্রিজার হাত ছেড়ে বলে,,, তুই?
সাফিনও আভিয়ানকে দেখে কিছুটা অবাক হয়ে বলে,,,, হুমম।কিন্তু তুই এখানে কিভাবে?
আসলে আমার এক ফ্রেন্ডের সাথে এখানে এসেছি কিন্তু তোকে এখানে দেখবো তা কল্পনাও করতে পারি নি।
ওহ। আজ আমার বোনের জন্মদিন। আমি তো থাকবোই। ( সাফিন আর আভিয়ান বন্ধু। কলেজেই তাদের পরিচয় হয় কিন্তু সাফিন লেখাপড়া শেষ করার জন্য বিদেশে চলে যায়। তার পর থেকে তাদের আর যোগাযোগ হয় না। আর হঠাৎ করে একে অপরকে দেখে তারা কিছুটা অবাক হয়ে যায়)
আদ্রিজা কিছু না বলে চুপ করে তাদের দেখতে থাকে। আভিয়ান সাফিনকে আদ্রিজাকে দেখিয়ে বলে,,,, মিট মাই লাভ এন্ড মাই ওড বি ওয়াইফ মিস্ আদ্রিজা।
আভিয়ানের কথায় আদ্রিজা আর সাফিন দুইজনই অবাকের শেষ সীমানায় পৌঁছে যায়। আদ্রিজা বড় বড় চোখ করে আভিয়ানের দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে নিলেই হঠাৎ মিউজিক বেজে উঠে,,,,,
আভিয়ান জোর করে আদ্রিজার সাথে ডান্স করতে থাকে। প্রথমে আভিয়ান জোর করলেও পরে আদ্রিজা নিজের ইচ্ছায় -ই আভিয়ানের সাথে ডান্স করে।
তাদের একসাথে দেখে রাগে সাফিনের সারা শরীর রি রি করছে। সে কিছুতেই নিজের রাগ কন্ট্রোল করতে পারছে না। সে ভ্রু কুঁচকে বলে,,, এটা তুই ঠিক করলি না। আদ্রিজা শুধুই আমার। ওকে আমি কখনোই অন্য কারো হতে দিবো না।
ডান্স শেষ হতেই সবাই কেক কাটা শুরু হয়। ইকরা সবার আগে আদ্রিজাকে কেক খায়িয়ে দেয়। পরে সবাইকে কেক খায়িয়ে দেয়। অনুষ্ঠান শেষ হতেই সবাই চলে যায়। এর মাঝে আদ্রিজা আর আভিয়ানকে দেখে নি। সে না চাইতেও তার চোখ বারবার আভিয়ানকে খোঁজে যাচ্ছিল।
এরই মাঝে কেটে যায় একমাস। এই একমাসে আভিয়ানের পাগলামি যেন আরোও বেড়ে যায়। প্রথম প্রথম আদ্রিজার এইসব অসহ্য লাগলেও ধীরে ধীরে সেও আভিয়ানের এই পাগলামিতে অভ্যস্ত হয়ে উঠে। তার মনেও আভিয়ানের জন্য ভালোবাসা তৈরি হয়। সেও আভিয়ানকে বলে দেয় সে তাকে ভালোবাসে।
এতদিনে ইকরাও আয়ানকে ভালোবেসে ফেলে। আর আয়ান তো প্রথম দেখাই ইকরাকে মন দিয়ে বসে আছে। দুইজন দুইজনকে নিজের মনের কথা বলে দেয়।
আদ্রিজা মাঝে মাঝে ইকরাকে ভাবি বলে ডাকে। তার সাথে মজা করে। ইকরাও আদ্রিজা আর আভিয়ানের বিষয়ে সব জানে। কিন্তু সে এটা জানে না যে তার ভাইও আদ্রিজাকে পছন্দ করে।
দিনগুলো চাওয়া চেয়েও ভালো কাটছিল। সবাই খুশি ছিল একে অপরকে পেয়। তাদের পরিবারও সব কিছু জানতো। কারোই কোন আপত্তি ছিল না কিছুতে।
কিন্তু একদিন সব কিছু বদলে যায়। পরিস্থিতি বাধ্য করে তাদের আলাদা হতে। তখন আভিয়ানেরও যে কিছুই করার ছিল না।
,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,
আদ্রিজা বেলকনিতে গিয়ে কান্না করতে থাকে। অতীতরে স্মৃতি গুলো তার ভিতরটা ভেঙে চুরমার করে দিচ্ছে। খুব কি বেশি চেয়েছিল সে। শুধু ভালোবেসে সারাজীবন একসাথে ঘর বাঁধতে চেয়েছিল কিন্তু তাদের ভাগ্যে তাও ছিল না। যাকে নিজের থেকে বেশি ভালোবেসেছে দিন শেষে সেই তাকে খুব নিষ্ঠুর ভাবে ঠকিয়েছে। তার বেঁচে থাকার ইচ্ছাকেই শেষ করে দিয়েছে। তাকে জীবন্ত লাশ বানিয়ে রেখেছে,,,,,
অতীত,,,,,,
সেদিন আদ্রিজার জীবনে সবচেয়ে খুশির দিন ছিল। আদ্রিজা আর আরিয়ানের বিয়ের দিন ছিল। আদ্রিজা বধূ সেজে বসে ছিল আরিয়ানের অপেক্ষায়। কিন্তু একটা ঝড় বদলে দেয় সবকিছু।
আভিয়ান সেদিন ঠিকই এসেছিল কিন্তু সে যা বলেছিল তাতে আদ্রিজার পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গেছিল। আভিয়ানের কথায় মুহূর্তের মধ্যেই তার সব সপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে যায়। তার চোখ দিয়ে অঝোরে পানি গড়িয়ে পরতে থাকে। যতটা খুশি ছিল সে এই বিয়ে নিয়ে তার থেকে হাজার গুণ বিষন্নতা তাকে ঘিরে ধরে।
…
..
.
চলবে,,,,