গোধূলির বেলায় তুমি’পর্ব-২৪

0
1379

#গল্প_গোধূলি_বেলায়_তুমি
#Writer_Ritu_Bonna
#অন্তিম_পর্ব(১ম অংশ)
.
.
আদ্রিজাও চুপ থেকে সব কিছু অনুভব করছে। এতক্ষন যেই যন্ত্রণা তার বুকের মাঝে হচ্ছিল আভিয়ানকে এভাবে জড়িয়ে ধরে তা প্রশান্তিতে পরিনত হয়েছে। সিগ্ধ এক আবেশে তাদের দুই জনের শরীর ও মন সব কিছু জুড়িয়ে গেছে৷ কয়েক সেকেন্ডের জন্য তারা সব কিছু ভুলে গেছে। হারিয়ে গেছে দুইজন দুইজনেতে। বিভোর হয়ে আছে তারা একে অপরের মাঝে। আজকের এই মুহূর্তটা দুইজনের জন্যই অনেক প্রতিক্ষার। পূর্ণতা পেতে চলেছে একটা প্রবিত্র সম্পর্ক।যেখানে দুইজনের মাঝে নেই কোন মান- অভিমান,নেই কোন ভুল বুঝাবুঝি শুধু আছে ভালোবাসা।

কেটে গেছে দুই দিন। আভিয়ান সকাল সকাল রেডি হয়ে বাহিরে যাচ্ছে। রেডি হওয়া শেষে সে আদ্রিজাকে ডাক দেয়।কয়েকবার ডাক দেওয়ার পরে আদ্রিজা বিরক্ত হয়ে রুমে ঢুকে রাগী দৃষ্টিতে আভিয়ানের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে? সব কিছু তো গুছিয়ে রেখে গেছি।

হুমম।কিন্তু শুধু একটা জিনিসের কম ছিল। সেটা রাখতে ভুলে গেছো। আদ্রিজা মনে করার চেষ্টা করে বলে কি ভুলে গেছি?

আভিয়ান মুচকি হেসে বলে,,, এদিকে আসো দেখিয়ে দিচ্ছি। আদ্রিজা আভিয়ানের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। আভিয়ান তার হাতে টান দিয়ে তাকে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়। একহাতে তার কুমোর জড়িয়ে ধরে। তার কপালে গভীর ভাবে স্পর্শ করে।লজ্জায় আদ্রিজার মুখ পুরো লাল হয়ে যায়। সে এখনো চোখ বন্ধ করে আছে। আভিয়ান তাকে দেখে আবারও মুচকি হাসে। তার কানে ফিসফিস করে বলে,, এভাবে লজ্জা পেলে তোমার মুখ একদম লাল টমেটোর মতো হয়ে যায় মন চায় খেয়ে ফেলি। তখন কিন্তু আমার কোন দোষ থাকবে না। বলে তার কুমোরে ধরে তাকে আরো নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়। আদ্রিজা যেন দাঁড়িয়ে থাকার শক্তিই হারিয়ে ফেলেছে।আভিয়ান নেশাক্ত কন্ঠে বলে,,, বিয়ের এত দিন হয়ে গেছে এখনো তোমার লজ্জা ভাঙে নি। আজ চলো সবার আগে তোমার লজ্জা দূর করি,, কি বল্।আদ্রিজা আস্তে করে বলে,,,, অসভ্য একটা।

আভিয়ান দুষ্ট হেসে বলে,,, তোমার সাথে অসভ্যতামি করবো না তো কি অন্য মেয়ের সাথে করবো?

আদ্রিজা কপট রাগ দেখিয়ে বলে,,, যান তাই করেন গিয়ে। হাত- পা ভেঙে রেখে দিবো একদম। সাহস কত অন্য মেয়ের কথা বলে।

আভিয়ান তাকে ছেড়ে বলে,,, মজা করছিলাম। আমার পুরো পৃথিবীই এখন তুমি। তুমি ছাড়া এই আমার কোন অস্তিত্বই নেই। বিকেলে রেডি থাকবে। আজকে আমরা ঘুরতে যাবো।আসি বন্যা,,,,,

,,,,,,,,,,,,,,,

আভিয়ান আবারও সাফিনের কাছে চলে যায়। টানা তিন দিন কিছু না খাওয়ার ফলে ক্ষিদেয় ছটছট করছে সে। হাতের যন্ত্রণায় চোখ থেকে পানি পরছে। খুব পানি তৃষ্ণা পাচ্ছে তার। সে পানি পানি করে কান্ত স্বরে বলতে লাগলো। আভিয়ান তার লোককে ইশারায় পানি আনতে বললো। লোকটি স্টিলের একটি গ্রাসে পানি দিয়ে চলে গেলো৷ গ্রাসে পানি নিয়ে সাফিনের দিকে এগিয়ে দিল সে।সাফিন ব্যস্ত হয়ে গ্রাস নিতে গেলে আভিয়ান গ্রাস ছেড়ে দেয়। ফ্লোরে পানি পরে যায়। সে ফ্লোর থেকে পানি খাওয়ার বৃথা চেষ্টা করে কিন্তু তার আগেই পানি গড়িয়ে যায়।সাফিনের অবস্থা দেখে আভিয়ান বিদ্রুপত্নক হেসে বলে,,, তোর মতো জানোয়ারকে পানি খাওয়াবো আমি তা তুই ভাবলি কি করে?? তোকে তো পারলে এখনি আমি গুলি করে মারতে পারি কিন্তু তা তোর জন্য অনেক সহজ মৃত্যু হবে। কিন্তু তুই এত সহজে মরতে পারবি না। তোকে আমি বাঁচিয়ে রাখবো। তোর এমন অবস্থা করবো যে তুই মরতে চাইবি কিন্তু পারবি না,,,,, আভিয়ানের দৃষ্টি ক্রোধ। আভিয়ানের দিকে তাকিয়ে সাফিন সেদিনের ঘটনা মনে করে ঢোক গিললো। সে ভয়ে নিজেকে গুটিয়ে নিলো। সে বুঝতে পারলো আভিয়ান নিশ্চয়ই ঐ দিনের মতো হিংস্রাত্নক কিছু করবে। কিন্তু কি করবে তা বুঝতে পারছে না।

আভিয়ান আর কিছু না বলে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো,,,,কিছুক্ষন পরে পাঁচটি হিংস্র কুকুরকে রুমে ছেড়ে দিল। সাফিনের শরীরে এক টুকরো মাংস ছুঁড়ে দিয়ে লোকটা রুমের দরজা আটকিয়ে বেরিয়ে গেলো। ভয়ে সাফিনের আত্না কেঁপে উঠলো। কুকুর গুলো হিংস্রাত্নক ভাবে সাফিনের সারা শরীরে কামড় দিতে থাকে। ব্যাথায় সাফিন জোরে জোরে চিৎকার করতে থাকে। সাফিনের চিৎকারের শব্দ শুনে তার মনের ভিতরে প্রশান্তিতে ভরে গেছে। দশ মিনিট পরে আভিয়ান তার লোককে বললো কুকুর গুলোকে আবারও আগের জায়গায় বেঁধে রাখতে। আভিয়ানের কথা মতো লোকগুলো তাই করে। আভিয়ান আবারও ভিতরে ঢুকে সাফিনের অবস্থা দেখে জোরে জোরে হাসে। সাফিনের সারা শরীরে কামড়ের দাগ। শরীরের বিভিন্ন অংশ থেকে রক্ত পরছে।

সাফিন ব্যাথায় শরীরে লড়ার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে। সে অনেক কষ্টে কুঁকড়িয়ে কুকড়িয়ে আভিয়ানের পায়ে ধরে বলে,,, আমাকে মেরে ফেল প্লিজ ।আমি আর পারছি না। নাহলে আমাকে ছেড়ে দে্।আমি কথা দিচ্ছি আমি আর কোন অন্যায় করবো না।

আভিয়ান মুচকি হেসে বলে,,, তুই কিছু করার মতো অবস্থায় থাকলে তো করবি। আর কিছু না বলে আভিয়ান রুম থেকে বেরিয়ে যায়। সাফিন ব্যাথায় অজ্ঞান হয়ে যায়।

আভিয়ান রুম থেকে বেরিয়ে তার লোককে বলে,,, মাঝ রাতে একে গাড়িতে বসিয়ে হাইওয়েতে একা ছেড়ে দিতে।

,,,,,,,,,,,,,

বিকেলে আদ্রিজা রেডি হয়ে আভিয়ানের জন্য অপেক্ষা করছে। কলিং বেলের আওয়াজ শুনে আদ্রিজা দ্রুত দরজা খোলে দেয়। আভিয়ানকে দেখেই বুঝা যায় সে অনেক কান্ত তাই আদ্রিজা তাকে রুমে গিয়ে ফ্রেস হতে বলে। আভিয়ান কিছু না বলে সুফা উপরে চলে যায়। আদ্রিজা দরজা লাগিয়ে তার পিছু পিছু যায়। আভিয়ান রুমে গিয়ে কোর্টটা খাটের উপরে রেখে ওয়াশরুমে চলে যায় ফ্রেস হতে। ফ্রেস হয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হতেই আদ্রিজা আভিয়ানকে দেখে তার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। আভিয়ানকে অনেকটা সিগ্ধ লাগছে। চুল থেকে পানি গড়িয়ে পরছে। আভিয়ান আদ্রিজার দিকে তাকিয়ে বলে,,, এভাবে দূর থেকে নজর না দিয়ে কাছে এসে দেখলেই তো পারো। আমি তো অন্য কেউ নই আমি তো তোমারই। আদ্রিজা লজ্জায় নিজের চোখ সরিয়ে নেয়। আভিয়ান রেডি হয়ে বলে চলো যাওয়া যাক,,,,

আভিয়ান আর আদ্রিজা কার গিয়ে বেরিয়ে যায়। রাস্তায় অনেকবার আদ্রিজা জিজ্ঞেস করে আমরা কোথায় যাচ্ছি,,,,

আভিয়ান মুচকি হেসে বলে এখন বলা যাবে না,,, ইট’স সারপ্রাইজ। এখন বলা যাবে না। সময় হলে জানতে পারবে। আদ্রিজা রাগ করে আর আভিয়ানের দিকে তাকায় নি। বাহিরে তাকিয়ে প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখতে থাকে। অনেকটা পথ আসার পরে বুঝতে পারে তারা কোথায় যাচ্ছে। খুশিতে তার চোখে পানি ছলছল করে উঠে।কতদিন পরে সে তার নিজের বাড়িতে আসছে। বাড়িতে আসতেই আভিয়ান গাড়ি থামায়। আদ্রিজা তার অপেক্ষা না করে দৌঁড়ে ভিতরে চলে যায়। আভিয়ান গাড়ি পার্ক করে মিষ্টি আর ফল নিয়ে ভিতরের দিকে যায়।

কলিং বেল বাজতেই আদ্রিজার মা দরজা খোলে দেয়। আদ্রিজাকে দেখা মাত্রই তার মা তাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দেয়। আদ্রিজাও ওনাকে জড়িয়ে ধরে। কিছুক্ষন পরে আদ্রিজা ওনাকে ছেড়ে বলে,,,, তুমি কাঁদছো কেন?এখন তো সব ঠিকই আছে। তুমি কাঁদবে না। বাবা আর ভাই কোথায়,,,,,

আদ্রিজার মা চোখের পানি মুছে বলে,,, আমি কাঁদছি কেন তা তুই এখন বুঝবি না। যখন নিজে মা হবি তখন বুঝবি। মার কথা শুনে আদ্রিজা লজ্জা মিশ্রিত হাসি দিয়ে বলে,,, থাক আর বলতে হবে না। বাবা আর ভাইকে ডাক দেও। আদ্রিজার মা সবাইকে ডাক দেয়। সবাই ওনার কথা শুনে বাহিরে বেরিয়ে আসে।

আভিয়ানকে ভিতরে ঢুকতে দেখেই আদ্রিজার বাবা ক্রোধের দৃষ্টিতে তার দিকে তাকায়। তিনি এখনো কিছুই জানেন না। তিনি গম্ভীর স্বরে বলেন,,,,তোমার সাহস কি করে হলো এই বাড়িতে ঢুকার।তোমাকে এখনি আমি পুলিশে দিবো। আমার মেয়েকে কিডন্যাপ করে তার পরে তাকে জোর করে বিয়ে করার জন্য সারাজীবন তোমাকে জেলের ভাত খাওয়াবো,,,,,,
…..
..
.
চলবে,,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here