গোধূলির বেলায় তুমি’পর্ব-২২

0
686

#গল্প_গোধূলি_বেলায়_তুমি
#Writer_Ritu_Bonna
#পর্ব_২২
.
.
আভিয়ান আর নিজেকে সামলাতে পারলো না। তার চোখ দিয়ে দুই ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়লো। সে আদ্রিজার দিকে অশ্রু সিক্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,,,, আমি কি করতাম বলো? এটা করা ছাড়া যে তখন আমার হাতে কোন উপায় ছিল না। কি করে নিজের বোনের সম্মান নষ্ট হতে দিতাম বলো?আমি কেন পৃথিবীর কোন ভাই- ই পারবে না নিজের বোনের সম্মানের বিনিময়ে নিজের ভালোবাসাকে নিজের করে পেতে। তুমি বলো বন্যা আমি কি কোন ভুল করেছি এমনটা করে?একজন ভাই হিসেবে এমনটা করা আমার দ্বায়িত্ব। তখন আমি বাধ্য হয়ে তোমার সাথে এই জগন্য নাটকটা করি। তোমাকে বাধ্য করি আমাকে ঘৃণা করতে। নিজের থেকে তোমাকে দুরে যেতে। এমনটা করতে আমার অনেক কষ্ট হচ্ছিল। মনে হচ্ছিল কেউ যেন আমার আত্মাটা আমার থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে। কিন্তু এত কিছু করেও আমার বোনকে আমি ধরে রাখতে পারি নি। সে আত্নহত্যা করে। হারিয়ে যায় চিরতরে আমার কাছ থেকে।

সেদিন বিয়ে ভাঙার পরে আমি একদম ভেঙে পরি। নিজেকে সব কিছু থেকে গুটিয়ে নেই। এক রুমে সারাক্ষণ পরে থাকি।যেই আমি কোন নেশা দ্রব্যের ধারে কাছে কখনো যাই নি সেই আমি সিগারেটের নেশায় সব কিছু ভুলে থাকতে চাইতাম। নিজেকে পাগলের মতো মনে হতো। সিগারেট, মদ এসব খেয়েও কষ্ট কম হতো না। খাওয়া- দাওয়া একদম ছেড়ে দিছিলাম। আমি নিজের দঃখে এতটাই বিভোর হয়ে গেছিলাম যে বোনের কষ্টের কথা ভুলে গেছিলাম।আমি তাকে ধমক দিয়ে কথা বলে ফেলি। ছোট থেকে আমিই তার সব ছিলাম।তাকে মা- বা্বার অভাব আমি কোন দিনই বুঝতে দেই নি।বোন কান্না করতে করতে নিজের রুমের দিকে চলে যায়।

আমার এই অবস্থার জন্য বোন নিজেকে অপরাধী ভাবতে শুরু করে। তার মাথায় হয়তো একটি কথাই ঘুরছিল যে সবকিছু তার ভুলের জন্য হয়েছে। সবকিছুর জন্য সে দায়ি। সে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। প্রচন্ড হতাশায় ভুগতে থাকে। নিজেকে শেষ করে দেওয়া মতো সিদ্ধান্ত নেয়। আমি যখন বুঝতে পারি আমি কি করে ফেলেছি তখন দ্রুত বোনের রুমে যাই। কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে যায়৷ সারা ফ্লোর রক্তে ভেসে আছে। এক মুহূর্তের জন্য আমার পুরো পৃথিবীই যেন স্তব্ধ হয়ে যায়।হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। কি করবো কিছুই মাথায় আসছিল না।খেয়াল হতেই বোনকে নিয়ে দ্রুত হাসপাতালে চলে গেলাম কিন্তু ততক্ষণে বোন আর এই পৃথিবীতে ছিল না। সে মারা যায়। বোনের মৃত্যুর জন্য আমার নিজেকে দোষী মনে হতে লাগলো। আমি আমার কথা রাখতে পারি নি। খেয়াল রাখতে পারি নি নিজের কলিজার টুকরার।পারি নি তাকে আমি আগলে রাখতে। বোনের মৃত্যুর কথা শুনে বাবা হার্ট অ্যাটাক করেন। বাবার আগেই হাই প্রেসার ছিল আর হঠাৎ করে বোনের মৃত্যুর খবর তিনি মেনে নিতে পারেন নি। বাবার বয়স হয়েছিল। এত বড় ধাক্কা তিনি মেনে নিতে পারেন নি। তিনিও মারা যান হার্ট অ্যাটাকে। সরদিন একসাথে নিজের সবচেয়ে কাছের মানুষদের হারিয়ে আমার পুরো পৃথিবীই যেন মুহূর্তের মাঝেই ধ্বংস হয়ে গেছিল। কান্না করতে করতে চোখের পানিও তখন শুকিয়ে গেছিল। সবকিছু বিষাদময় হয়েগেছিল আমার কাছে৷ মনে শুধু একটাই কথা ঘুরছিল আমি কেন তবে বেঁচে আছি? এত কষ্ট নিয়ে আমি বেঁচে থাকতে পারবো না। আল্লাহ আমাকেও তুমি মেরে ফেলো। আমি আর পারছি না এইসব সহ্য করতে। হাঁপিয়ে গেছি আমি জীবনের সাথে লড়াই করতে করতে। আমিও এখন মুক্তি চাই এইসব থেকে,,,,,,

এক সপ্তাহ আমি রুমের থেকে বাহির হয়ে বাহিরের আলো দেখি নি।বাবা আর বোনের ছবির দিকে তাকিয়ে থাকতাম। মাঝে মাঝে দুই – এক ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পরতো চোখ থেকে। সাফিনের উপর বড্ড বেশি রাগ হতে লাগলো। সাফিনকে তার অপরাধের শাস্তি দিতে হবে। এর মতো পাপী মানুষের বেঁচে থাকার কোন অধিকার নেই। আমি রাগে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাই।পাগলের মতো করে দ্রুত গাড়ি ড্রাইভ করতে থাকি। নিজেকে আমার পাগল বলে মনে হচ্ছিল। সব কিছু বিষাদময় লাগছিল আমার কাছে। আমার কোন হুশ ছিল না। বেসামাল হয়ে গাড়ি ড্রাইভ করছিলাম। হঠাৎ করে সামনে একটা টার্কের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। আমার মারাত্মক এক্সিডেন্ট হয়। মাথায় প্রচন্ড আঘাত পাই। সেখানেই আমি জ্ঞান হারাই। তিনদিন পরে আমার জ্ঞান ফিরে। নিজেকে হাসপাতালের বেডে দেখতে পাই। হাত ও পায়েও প্রচন্ড আঘাত পাই। কিন্তু মাথার আঘাতটা একটু বেশিই গুরুতর ছিল।আমার টেম্পোরারি মেমরি লস্ট হয়।ডাক্তার বলেছিল মাথায় বেশি পেশার দেওয়া যাবে না। আমার সম্পূর্ণ সুস্থ হতে প্রায় প্রায় তিন মাসের মতো সময় লেগেছিল। ম্যানেজার আঙ্কেল বাবার খুব ভালো বন্ধু ছিল৷ তিনিই ততদিন আমার খেয়াল রেখেছেন। পাশাপাশি বিজনেস ও দেখাশোনা করেছেন। ওনার ঋণ আমি কখনোই শোধ করতে পারবো না। ওনী আমাকে নিজের ছেলের মতো আগলে রাখে। মাঝে মাঝে আমার চোখের সামনে আগের দৃশ্য গুলো ঝাপসা দেখা যেতো। আমি ক্লিয়ার কিছুই বুঝতাম না। সব কিছু মনে করার জন্য মাথায় একটু পেসার দিলে প্রচন্ড মাথা ব্যাথা করতো।অসহ্য যন্ত্রণায় ছটফট করতাম আমি। ডাক্তারের কথা মতো আগের সব কিছু আমার থেকে দূরে রাখা হয়।

প্রায় একমাস আগে আমার আবারও এক্সিডেন্ট হতে নেই। সময় মতো ব্রেক করার ফলে তেমন আঘাত পাই নি। মাথায় সামান্য আঘাত পাই। মাথায় আঘাত পাওয়ার ফলে ধীরে ধীরে আমার চোখের সামনে সব কিছু ঝাপসা হতে শুরু করে। আমি জ্ঞান হারাই। কয়েকজন মিলে আমাকে হসপিটালের নিয়ে যায়। জ্ঞান ফিরার পরে আমার আগের সব কথা মনে পরে যায়।
…..
..
.
চলবে,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here