#গল্প_গোধূলি_বেলায়_তুমি
#Writer_Ritu_Bonna
#পর্ব_১২
অতীত,,,,,,
সেদিন আদ্রিজার জীবনে সবচেয়ে খুশির দিন ছিল। আদ্রিজা আর আরিয়ানের বিয়ের দিন ছিল। আদ্রিজা বধূ সেজে বসে ছিল আরিয়ানের অপেক্ষায়। কিন্তু একটা ঝড় বদলে দেয় সবকিছু।
আভিয়ান সেদিন ঠিকই এসেছিল কিন্তু সে যা বলেছিল তাতে আদ্রিজার পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গেছিল। আভিয়ানের কথায় মুহূর্তের মধ্যেই তার সব সপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে যায়। তার চোখ দিয়ে অঝোরে পানি গড়িয়ে পরতে থাকে। যতটা খুশি ছিল সে এই বিয়ে নিয়ে তার থেকে হাজার গুণ বিষন্নতা তাকে ঘিরে ধরে।
,,,,,,,,,,,,,,,,
চারিদিকে খুশির আমেজ। আজ আদ্রিজার আর আভিয়ানের বিয়ে। সবাই মিলে আদ্রিজাকে বধূ বেশে সুন্দর করে সাজায়।
সাজানো শেষ হলে ইকরা আদ্রিজার দিকে হা করে তাকিয়ে থাকে। ইকরাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে আদ্রিজা লজ্জায় নিজের চোখ নামিয়ে নেয়।
আদ্রিজা লাল রঙের লেহেঙ্গা পড়ে। পুরো জমিন ভারি কাজ করা। সাথে ম্যাচিং জুয়েলারি। চোখে গাড় করে কাজল দেওয়া। ঠোঁটে গাড় লাল রঙের লিপস্টিক। মুখে হালকা মেকাপ। দেখতে অসম্ভব সুন্দর লাগছে।
ইকরা আদ্রিজার দিকে তাকিয়ে দুস্ত হেসে বলে,,,, ইশ আমি যদি ছেলে হতাম তবে এখনি তোকে বিয়ে করে নিতাম।তোর এই লজ্জা রাঙা গালে কামড় বসিয়ে দিতাম। উফফ,,,, এখন আমার আফসোস হচ্ছে কেন যে ছেলে হলাম না। ছেলে হলে তোকে টুক করে খেয়ে ফেলতাম।
ইকরার কথা গুলো আদ্রিজার ঠিক হজম হচ্ছে না। কিসব লাগাম ছাড়া কথা বার্তা। সে ভ্রু কুঁচকে চোখ বড় বড় করে ইকরার দিকে তাকায়। মনে হচ্ছে চোখ দিয়েই তাকে মেরে ফেলবে।
আদ্রিজাকে এভাবে তাকাতে দেখে ইকরা ভয়ে ঢোক গিলে। ইনোসেন্ট ফ্রেশ নিয়ে আদ্রিজার দিকে তাকায়।
ইকরার এমন করায় আদ্রিজা জোরে হেসে ফেলে। আদ্রিজাকে হাসতে দেখে ইকরাও হেসে ফেলে।
,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,
বাইরে থেকে বর আসছে বলে সবাই হইচই করতে লাগলো। বর আসছে কথা শুনে আদ্রিজার ঠোঁটের কোনায় হাসি ফোঁটে উঠলো। সারা শরীর বেয়ে শীতল একটা প্রশান্তি বয়ে যাচ্ছে।আজ সে একজন মেয়ে থেকে কারো ঘরের বউ হয়ে যাবে। তার আপন মানুষ গুলোকে ছেড়ে চলে যেতে হবে। এইসব ভেবেই মনটা হালকা খারাপ হয়ে গেলো। তবুও আজ সে খুশি কারণ সে এমন একজনকে বিয়ে করতে যাচ্ছে যাকে সে ভালোবাসে।আর ভালোবাসার মানুষ যদি পাশে থাকে তবে তার জন্য মানুষ সব কিছু করতে পারে। তাকে নিজের সবকিছু দিয়ে আগলে রাখতে চায়।
আদ্রিজাকে গভীর ভাবনায় ডুবে থাকতে দেখে ইকরা তাকে হালকা করে ধাক্কা দিয়ে বল,,,, চল্ বর এসে গেছে স্টেজে গিয়ে বসি।
আদ্রিজা কিছু বলে না,,,, ইকরা তাকে স্টেজে নিয়ে যায়। আভিয়ান আগেই স্টেজে বসে ছিল, ইকরা আদ্রিজাকে আভিয়ানের পাশে বসিয়ে দেয়। আভিয়ানের মুখে কোন হাসি নেই। আদ্রিজা কয়েকবার আভিয়ানের দিকে তাকালেও আভিয়ান একবারের জন্যও আদ্রিজার দিকে তাকায় না। তার চোখ মুখে বিষন্নতার ছাপ। তাকে দেখে এমন মনে হচ্ছে বিয়েটা তার ইচ্ছেতে হচ্ছে না। তাকে বাধ্য করছে কেউ বিয়েটে। আভিয়ানকে এই অবস্থায় দেখে আদ্রিজার বুকের ভিতরটা ছ্যাঁট করে উঠলো। এক অজানা ভয় বাসা বাঁধলো তার মনের ভিতরে। সে আভিয়ানের হাতে হাত রাখতেই আভিয়ান সাথে সাথে তার হাত সরিয়ে নেয়। এতে আদ্রিজা কিছুটা কষ্ট পায়। সে আভিয়ানের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে,,,,,
আভিয়ান চোখ- মুখ লাল করে,,, মুখ গম্ভীর করে বলে,,,, আমার আবার কি হবে?
আদ্রিজা আবার আভিয়ানের হাত ধরে শান্ত স্বরে বলে,,, কি হয়েছে আমাকে খোলে বলেন? আপনাকে এমন দেখাচ্ছে কেন?
এবার আভিয়ানের চোখে – মুখে রাগের ছাপ স্পষ্ট। সে রাগে কটমট করে গম্ভীর স্বরে বলে,,, এক কথা তুমি বুঝতে পারো না। বলছি তো আমার কিছু হয়নি। বারবার এক কথা বলে বিরক্ত করো না তো। বলেই আদ্রিজার হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নেয়।
আভিয়ানের এই আচরণে আদ্রিজা কথা বলার ভাষাই হারিয়ে ফেলেছে। ভালোবাসার মানুষের একটু অবহেলা কেউ সহ্য করতে পারে না।তার চোখ দিয়ে দুই ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়লো। সে সবার থেকে নিজেকে আড়াল করে তা মুছে নিলো।
আদ্রিজার সাথে এমন ব্যবহার করে আভিয়ানও অনেক কষ্ট পাচ্ছে। যার চোখের পানি সে সহ্য করতে পারে না তার চোখের পানির কারণ এখন সে নিজেই ভাবতেই একরাশ খারাপ লাগা কাজ করলো তার ভিতর। কিন্তু সেই বা কি করবে। সে যে বাধ্য। অভিনয় যে তাকে করতেই হবে।
,,,,,,,,,,,,,,
কবুল বলার ঠিক আগের মুহূর্তে একটি মেয়ে দৌঁড়ে বিয়ের আসরে এসে কান্না করতে করতে বলে,,,,, তুমি আমার সাথে এমনটা করতে পারো না আভিয়ান। আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি। তুমি আমার অনাগত সন্তানের বাবা। তুমি এতটা পাষান কি করে হলে,,,, কি করে পারলে আমাকে রেখে অন্য একটি মেয়েকে বিয়ে করতে আসতে? তোমার লজ্জা করলো না এমন একটি কাজ করতে?
মেয়েটির কথা শুনে বিষ্ময়ে আমার মুখ হা হয়ে গেছে। আমি অবাক হয়ে আভিয়ানের মুখের দিকে তাকিয়ে আছি কিন্তু সেদিকে তার কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। আগেই মতো করেই বসে আছে যেন সব কিছু স্বাভাবিক। কোন প্রতিক্রিয়া নেই তার কোন কিছুতেই। সে আগের মতোই মুখে গম্ভীর্যতা রেখে বসে আছে।
চারিদিকে থমথমে পরিবেশ হয়ে উঠেছে। মেহমানরা কানাঘুষা করা শুরু করে দিয়েছে। আমি কিছু বুঝতে পারছি না। হঠাৎ করে কি হচ্ছে তা আমার মস্তিষ্ক যেন কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না।
বাবা আভিয়ানের সামনে গিয়ে বলে,,, এইসব কি শুনছি আভিয়ান? তুমি চুপ করে আছো কেন? কিছু বলো,,,,,
মেয়েটি গম্ভীর স্বরে বললো,,,, ওর কি বলার কোন ভাষা আছে যে বলবে! আপনাদের যদি আমার কথা বিশ্বাস না হয় তবে এই রিপোর্ট দেখতে পারেন।এখানে লেখা আছে আমি দুই মাসের প্যাগনেন্ট। একটি মেয়ে কখনোই নিজের সন্তানকে নিয়ে মিথ্যা কথা বলতে পারে না। আর আমার অনাগত সন্তানের বাবা আভিয়ান।
আমার কিছুতেই মেয়েটির কথা বিশ্বাস হচ্ছে না। আমি আভিয়ানকে ভরসা দিয়ে বললাম,,,, আপনি চিন্তা করবেন না।যে যাই বলুক না কেন,,, আমি বিশ্বাস করি আপনাকে। আপনি কখনোই এমনটা করতে পারেন না। আমি জানি আপনি শুধুই আমাকেই ভালোবাসেন। আপনি শুধু নিজের মুখে একবার বলেন মেয়েটা যা বলছে সব মিথ্যা তবেই হবে।
আমার কথা শুনে আভিয়ান শান্ত দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালেন। কয়েক মুহূর্ত নিরব থেকে পরে গভীর স্বরে বললেন,,,, নয়না যা বলছে সব সত্যি। আমি ওর সন্তানের বাবা।তোমাকে আমি কখনো মন থেকে ভালোবাসি নি। আমি শুধু তোমাকে ভালোবাসার নাটক করেছি। মেয়েরা আমার শুধু নেশা। তাদের শরীরটাই আমার কাছে সব। তা পাওয়ার জন্য আমি তোমার সাথে অভিনয় করেছি। কিন্তু আমি কখনোই কাউকে জোর করে ভোগ করি না। সবাই নিজের ইচ্ছেতেই আমার সাথে সম্পর্ক করে। আরোও অনেক মেয়ের সাথে আমার সম্পর্ক আছে। নয়নাকেও আমি শুধু ব্যবহার করেছি। তাকে ভোগ করে ছোঁড়ে ফেলেছি। তোমার সাথে এতদিন ভালোবাসার অভিনয় করে যা বুঝেছি তাতে এটা বুঝতে পারি তুমি কখনোই বিয়ের আগে আমার সাথে শরীরিক সম্পর্ক করবে না। এই প্রথম কোন মেয়ের সাথে আমি এতদিন অভিনয় করেছি তাকে কিন্তু কিছুতেই তোমাকে ভোগ করতে পারছিলাম না। তাই বাধ্য হয়েই তোমাকে বিয়ে করতে হচ্ছিল। আমি শুধু তোমার এই নরম, তুলতুলে শরীরকেই ভালোবেসেছি তোমাকে নয়। পরে একটু বাঁকা হেসে বলে,,,, শুধু একবারের জন্য তোমার শরীরের স্বাদ পাওয়ার জন্য এত কিছু করা। ইউ নো বেবি,,,, ইউ আর যাস্ট সো হট। আমি অনেক কষ্টে এতদিন নিজেকে কন্ট্রোল করেছি,,,,
আভিয়ানের কথা শুনে আমার সারা শরীর কাঁপতে লাগলো । রাগে আর ঘৃণায় আমার সারা শরীর রি রি করছে। আমি আর নিজেকে ঠিক রাখতে পারি নি,,,,নিজের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে আভিয়ানের শরীরে চর মারলাম,,,,,,,
…
..
.
চলবে,,,,
( এতদিন পরে গল্পটি দেওয়ার জন্য আমি দুঃখিত। গল্প লিখার মতো অবস্থায় ছিলাম না তাই গল্পটি লিখতে পারি নি। এতদিন সবাইকে ওয়েট করানোর জন্য আবারও সরি)