#গল্প_গোধূলি_বেলায়_তুমি
#Writer_Ritu_Bonna
#পর্ব_৬
সাফিন ক্রোধের দৃষ্টিতে আভিয়ানের দিকে তাকিয়ে চলে যায়।
সাফিন চলে যেতেই আদ্রিজা ফ্লোরে বসে পরে। কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে তার জীবনটা পুরো ওলট-পালট হয়ে গেছে।
আদ্রিজাকে এই অবস্থায় দেখে আভিয়ানের বুকের ভেতরটা ছ্যাঁট করে উঠে। সে আদ্রিজাকে কোন ভাবেই এই অবস্থায় মেনে নিতে পারছে না। তারও যে খুব খারাপ লাগছে আদ্রিজার সাথে এমন ব্যবহার করে কিন্তু সে কি করে বলবে সে বাধ্য হয়ে এমনটা করছে। এছাড়া যে আর অন্য কোন উপায় নেই। এখন যদি আমি তোমাকে সত্যিটা বলি তবে তুমি কিছুতেই আমাকে বিশ্বাস করবে না। ভাববে আমি তোমাকে মিথ্যা বলছি। সে এক পা এক পা করে আদ্রিজার সামনে গিয়ে হাঁটু গেড়ে তার সামনে বসে। হাত দিয়ে আদ্রিজার চোখের পানি মুছতে নিলেই আদ্রিজা দূরে সরে যায়।
আভিয়ানকে তার সামনে এভাবে দেখে রাগে তার চোখ মুখ লাল হয়ে যায়। সে রুক্ষ স্বরে বলে,, আপনার সাহস কি করে হলো আপনার এই নোংরা হাতে আমাকে স্পর্শ করার। বলছি না আমাকে স্পর্শ করবেন না। দূরে থাকবেন আমার থেকে। আমার জীবন থেকে তো সব সুখ শান্তি কেড়েই নিয়েছেন আর কি চান আপনি। আপনি যদি এটা ভাবেন আমাকে বিয়ে করেছেন মানেই আমাকে পেয়ে গেছেন তবে ভুল ভাবছেন। আপনার মতো চরিত্রহীন কাউকে আমি মন থেকে কখনোই স্বামী হিসেবে মেনে নিতে পারবো না৷ আপনি যদি আমার সাথে কোন জোর করেন তবে আমি আত্নহত্যা করতে বাধ্য হবো। আদ্রিজা আর কিছু না বলে দৌঁড়ে রুমে চলে যায়।
আদ্রিজার কথায় আভিয়ান স্তব্ধ হয়ে ফ্লোরে বসে আছে। সে যেন কথা বলার ভাষাই হারিয়ে ফেলেছে। কিছুক্ষন একই দৃষ্টিতে শুধু আদ্রিজার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ছিল। আদ্রিজার প্রত্যেকটা কথা তার বুকে বিষাক্ত তীরের মতো বিঁধেছে। তার দুচোখের কোটরে পানি টলমল করছে৷ এই অবস্থার জন্য কাকে দোষ দিবে সে। সব দোষ তো তার ভাগ্যের। তাই তো সব পেয়েও আজ তার কিছুই নেই। যেই মানুষটা তার পুরোটা অস্তিত্ব জুড়ে আছে তার কাছে সে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি ঘৃণার মানুষ। নিজের ভালোবাসার মানুষের কাছে ঘৃণার মানুষ হয়ে বেঁচে থাকা যে কতটা কষ্টের তা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। “চরিত্রহীন ” একটি শব্দ তাকে ভিতর থেকে শেষ করে দিচ্ছে। সে আর এক মুহূর্ত এখানে না থেকে গাড়ি নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পরে। শহর থেকে অনেক দূরে একটি খোলো মাঠে এসে গাড়ি থামায়। রাত হয়ে গেছে। চারিদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার। প্রকৃতিও আজ বড্ড অশান্ত। কালো মেঘে চাঁদটা ঢেকে গেছে। কিছুক্ষন পর পর আকাশে বিদুৎ চমকাচ্ছে তার সাথে হালকা ঝড়ো হাওয়াও বইছে। যে কোন মুহূর্তেই হয়তো বৃষ্টি পরতে শুরু করবে। আভিয়ান নিজেকে শান্ত রাখার অনেক চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না। তার চোখ দিয়ে পানি পরছে। হঠাৎ করেই মুষলধারে বৃষ্টি পরা শুরু করে। আভিয়ান বৃষ্টির মাঝেই সেখানে বসে থাকে। নিজের চোখের পানি লুকাচ্ছে বৃষ্টির মাঝে। নিজেকে তার কেন জানি বড্ড অসহায় বলে মনে হচ্ছে। বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে সে ভাবতে থাকে আদ্রিজার সাথে তার প্রথম দেখা হওয়ার কথা,,,,,,,,
অতীত,,,,,,
প্রায় চার বছর আগে আদ্রিজার সাথে প্রথম দেখা হয় তার। কলেজের একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রথম বারের মতো তার গান শুনে মুগ্ধ হয়েছিল সে।
রনিতঃ চল্ বন্ধু এখন যাওয়া যাক। আমি আর অনুষ্ঠানে থাকতে পারছি না। এইসব দেশাত্মবোধক গান আমার ভালো লাগে না।
আরাফঃ তোর এই সব ভালো লাগবে কেন?? ডি.জে গান ছাড়া কিছু কি তোর ভালো লাগে।
রনিতঃ দেখ আরাফ একদম আমাকে অপমান করবি না।
সাফাতঃ চল্ আমরা অন্য কোথায় গিয়ে বসি। এত হইচই আমারও আর ভালো লাগছে না।
আরাফঃ তোদের যেতে হলে যা আমি অনুষ্ঠান শেষ করেই যাবো।
আভিয়ানঃ সবাই যখন যেতে চাইছে তুই আর না করিস্ না। চল্ আমাদের সাথে,,, ভালো লাগবে,,,
আরাফ রাগ করে বলে,,, তুই এদের সাথে মিলে গেছিস্।এদের মতো কথা বলছিস্। দেশের প্রতি কোন টান নেই তোদের।
আভিয়ান শান্ত স্বরে বলে,,, তুই যেমন ভাবছিস্ তেমনটা নয়। আচ্ছা আমরা না হয় অনুষ্ঠান শেষ হলেই যাবো। রনিত কিছু বলতে নিলে আভিয়ান তাকে ইশারায় চুপ থাকতে বলে। রনিত অভিমান করে অন্য দিকে ফিরে তাকায়। আসলে আরাফ একটু এরকমই।
আরাফ মনোযোগ দিয়ে অনুষ্ঠান দেখছ আর বাকি তিন জন বিরক্ত হয়ে তাকে সঙ্গ দিয়ে যাচ্ছে।তিনজন নিজেদের মাঝে গল্প করছে। হঠাৎ করে একটি মেয়ের কন্ঠে গান শুনে সে চমকে যায়। অবাক হয়ে সে মেয়েটির গান শুনতে থাকে। এই প্রথম কোন দেশাত্মবোধক গান শুনে সে এতটা মুগ্ধ হয়েছে।সে মানুষের ভিড় ঠেলে ধীরে ধীরে স্টেজের দিকে এগিয়ে যায়। মেয়েটির গাণের গলা শুনে সে যতটা মুগ্ধ হয়েছিল তাকে দেখে যেন তার মুগ্ধতা আরোও বেড়ে যায়। এমন নয় মেয়েটি অনেক সুন্দর। উজ্জ্বল শ্যামলা গায়ের রং। নীল রঙের শাড়ি পরনে। মাথায় কালো হিজাব বাঁধা। মুখে কোন মেকাপ নেই। কোন সাজ নেই কিন্তু মেয়েটিকে তার অপূর্ব লাগছে।
মেয়েটির গান গাওয়া শেষ হলে সে চলে যায় কিন্তু আভিয়ান ওইভাবেই স্টেজের দিকে তাকিয়ে থাকে। আভিয়ানকে এভাবে আসতে দেখে রনিতও তার টিছু পিছু আসে। সে পুরো বিষয়টা খেয়াল করে। রনিত তার পিঠে থাপ্পড় মেরে বলে,,, কিরে বন্ধু কোথায় হারিয়ে গেলি। প্রেমে-টেমে পড়েছিস্ নাকি।
আভিয়ান এখনো ঘোরের মাঝে আছে। সে ঘোরের মাঝেই বলে,, তার গাণের স্বরে আমি পাগল হয়ে গেছি। তার কাজল কালো চোখে আমি নিজের সর্বনাশ দেখিছি। তার গানের সুর আমাকে মুগ্ধ করেছে।
রনিত ব্যঙ্গ করে বলে,,, ওহ তাই বুঝি। আভিয়ান চৌধুরীও কারো প্রেমে পড়ে তাও আবার প্রথম দেখায়। বেরি ইন্টারিস্টিং,,,,,,
এতক্ষনে আভিয়ানের খেয়াল হয়। সে নিজের করা বোকামোতে নিজেই অবাক হয়ে যায়। মেয়ের নামটা পর্যন্ত সে জানে না সে তার প্রেমে পড়েছে। সে একটু হেসে বলে,,, আরে তেমন কিছু না।
থাক আর শাক দিয়ে মাছ ডাকতে হবে না। আমরা সবই বুঝি।
হুমম।তোরা একটু বেশিই বুঝিস্।এখন চল্,,,,,,,
সেদিন তারা আর অন্য কোথাও যায় না। অনুষ্ঠান শেষ হলে যার যার বাড়িতে চলে। সারারাত আভিয়ানের আর ঘুম আসে না। মেয়েটির চোখ, তার তাকানো, তার গান, তখনকার প্রত্যেকটি দৃশ্য শুধু তার চোখের সামনে ভেসে উঠে। এক প্রকার নির্ঘুম রাত পার করে সে।
,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,
এখন প্রায় মাঝরাত। বৃষ্টি থেমে গেছে অনেক আগেই। আভিয়ানের সারা শরীর কাঁপছে। সে আর বসে না থেকে গাড়িতে গিয়ে উঠে। জায়গাটা শহর থেকে অনেকটা দুরে। পৌঁছাটে পৌঁছাতে তার সকাল হয়ে যাবে।
.
.
চলবে,,,,,
(গল্পটা হয়তো ভালো লাগছে না। তাই ভাবছি তাড়াতাড়ি শেষ করে দিবো। সবাইকে ধন্যবাদ)