গোধূলীর_রঙিন_ছোঁয়া #লেখায়_ফারহানা_ছবি #পর্ব_৩৬

#গোধূলীর_রঙিন_ছোঁয়া
#লেখায়_ফারহানা_ছবি
#পর্ব_৩৬
.
.
🦋
” সব কিছু রেডি তো?”

“ইয়েস বস সব কিছু রেডি আছে আপনি শুধু শুরু করুন৷”

” গুড ” JM দামী সিগারেট এর ধোয়া ছাড়তে ছাড়তে রুমে এসে প্রবেশ করতে কণার চোখ দরজার দিকে পড়তেই কণা শক্টড ৷ এতোটাই কণা শক্টড হয়ে গেল যে গলা দিয়ে কোন আওয়াজ বের হচ্ছে না৷

JM কণার সামনা সামনি চেয়ারে বসে কণার দিকে তীক্ষ্ণ চাউনিতে তাকিয়ে বললো,” মিস কণা চুপ করে আর কতোক্ষণ থাকবে? মুখ তো খুলতেই হবে ৷ ”

” য,,যদি মুখ না খুলি কি করবেন মিস্টার JM?” কাঁপা কাঁপা গলায় বলে উঠলো কণা৷

” বাহ! মুখ দিয়ে দেখছি কথা বের হচ্ছে ৷ বেশ ভালো তো কিন্তু এখন যে তোমাকে তোমার দলের সম্পর্কে মুখ খুলতেই হবে নাহলে!”

” নাহলে কি ?”

কণার কথা শুনে বাঁকা হাসলো JM . JM হঠাৎ মুখে গম্ভীরতা এনে রানা বলে চিৎকার করে ডাকে সাথে সাথে রানা হাতে নানা রকম অস্ত্র নিয়ে হাজির হয়৷

” বস সব রেডি আছে আপনি বললে কাজ শুরু করতে পারি৷”

” অবশ্যই কি মিস কণা তাই তো?”

কণা কোন কথা বলছে না ৷ ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে JM কে দেখছে৷ মানুষ যে কতো রকমের মুখোশ পড়ে থাকতে পারে তাই ভেবে যাচ্ছে কণা৷ হঠাৎ আঙ্গুলে ব্যাথা অনুভব হতে কণা হাতের দিকে তাকিয়ে দেখে JM কণার আঙ্গুলে কেচি দিয়ে চাপ দিচ্ছে ৷ কণা দাঁতে দাঁত চেপে ব্যাথাটা হজম করার চেষ্টা করে যাচ্ছে কিন্তু কোন ভাবে আর সম্ভব হচ্ছে না বিধায় কণা শব্দ করে ফেললো৷ কণা চোখে মুখে কষ্টের ছাপ ফুটে উঠতে দেখে JM এর ঠোঁটের কোনে তৃপ্তির হাসি ফুটে উঠলো ৷

” টিমের সম্পর্কে সব ইনফরমেশন দিয়ে দেও কণা তাহলে তোমাকে আমি ছেড়ে দিবো নাহলে …” কথাটা বলতে বলতে আঙ্গুলে আরো জোরে চাপ দিলো JM…

” আমাকে মেরে পুতে ফেললেও আমার মুখ থেকে একটা ইনফরমেশন বের করতে পারবি না তোরা৷ কারণ আমি আমার দলের সাথে কখনো বেইমানি করবো না৷ ”

” ওয়াও আই লাইক ইট৷ দলের প্রতি এই লয়ারিটি টাই আমার ভিষণ পছন্দ মিস কণা তবে এটা আমার দলের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য ৷ অন্যদের ক্ষেত্রে আমার একটু সমস্যা আছে ৷”

” রাইট কিন্তু সমস্যাটা তোদের আমার নয় ৷ তাই আমার সাথে কথা বলে শুধু শুধু সময় নষ্ট করছিস তোরা , আমার পেট থেকে একটা শব্দ বের করতে পারবি না৷”

কণার কথা শুনে JM প্রচন্ড রেগে গেল৷ হাত থেকে কেচি টা ফেলে দিয়ে কণাকে কয়েকটা থাপ্পড় মেরে বসে৷ কণার ঠোঁটের কোন দিয়ে রক্ত পড়ছে ৷ গালে হাতের ছাপ পড়ে গেছে৷

” এই দুই আঙ্গুলের মেয়ে এভাবে মানবে না বস ৷ একে আমার হাতে তুলে দিন দেখুন কি করে পেট থেকে কথা বের করতে হয়৷ ”

” কি করবি তুই?”

” বেশি কিছু না ওর ওই সুন্দর শরীরটা একটু ছুঁয়ে দেখবো৷”

রানার কথা শুনে JM হেসে দিয়ে বলে উঠলো ,” তাহলে তো একে ছোঁয়ার প্রথম রাইট আমার , রানা মেয়েটাকে বেডে ফেলে হাত দুটো বেধে ফেল৷ ”

” ওকে বস”

কণা JM আর তার ডান হাত রানার কথা শুনে কণার পুরো শরীর গুলিয়ে উঠলো৷ এই নোংরা লোক গুলো যে ওকে ছুঁবে এটা ভাবতেই কণা শরীরে যেন রাগ টা হির হির করে বেড়ে গেল৷ রানা কণার হাতের বাধন খুলতেই কণা পা দিয়ে রানার অন্ডকোষে লাথি মেরে পালাতে নিলে পেছন থেকে JM কণার ঘাড়ে একটা ইনজেকশন পুশ করে দেয় সাথে সাথে কণা জ্ঞান হারিয়ে ফেলে…

___________

” আপু কি বলছিস এই সব কণা আপু কিডন্যাপ হয়েছে? কিন্তু এটা কি করে সম্ভব হলো? কণা আপুকে কি করে চিনলো তারা?”

” জানি না প্রিয়া তবে যেখানে কণাকে লুকিয়ে রাখুক না কেন আমি তো কণাকে খুজে বের করবোই কিন্তু এখন তোর সাহায্য চাই প্রিয়া৷”

” আপু আমাকে কি করতে হবে শুধু বলো ৷ বাকিটা আমি করে নিবো৷”

” আমাকে এখন বের হতে হবে৷ আমি বের হবার পর তুই এখানকার পরিস্থিতি সামলাবি ৷”

” ওকে আপু৷ কিন্তু এই পোশাকে তো তুই বের হতে পারবি না৷ চল তোকে চেন্জ করে দিতে হেল্প করছি৷”

” না আমাকে হেল্প করতে হবে না তুই স্মরণ আর বাকিদের সামলে নিস ৷”

” ঠিক আছে আপু ”

প্রিয়া বাইরে গিয়ে স্মরণ কে বলে প্রাণোর প্রচন্ড মাথা ব্যাথা করছে তাই মেডিসিন খেয়ে রেস্ট নিচ্ছে তাকে যেন কেউ বিরক্ত না করে৷ স্মরণ প্রাণোর মাথা ব্যাথা করছে এটা জেনে রুমে আসতে নিলে প্রিয়া স্মরণকে আটকে দেয় ৷

” ভাইয়া আপু আমাকে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে কেউ যেন তাকে ডিসটার্ব না করে ৷ এক ঘন্টা রেস্ট নিয়ে সে নিজে চলে আসবে৷”

” কিন্তু আমি একবার দেখি আসি প্রিয়া৷”

” নো মানে না ৷ একদম না ৷ আপু আমাকে এটাও বলেছে যাতে আপনাকেও রুমে যেতে না দি ৷ আপনি যদি রুমে যান তাহলে রেস্ট নেওয়া তো হবে না বরং আপনার দুষ্টুমি শুরু হয়ে যাবে৷”

” উফফ এই প্রাণটাও না ৷ শালীর সামনে প্রেস্টিজের চটপটি বানিয়ে দিলো ৷ ওকে ওকে আমি রুমে যাচ্ছি না কিন্তু কোন কিছুর যদি প্রয়োজন হয় আমাকে জানাবে ওকে?”

” ওকে এখন আপনি যান প্লিজ৷ আর আমি রুম বাইরে থেকে তালা মেরে যাচ্ছি৷”

“আবার তালা কেন?”

” আপনাকে বিশ্বাস নেই বলে৷ এখন নিচে যান আমি রুম তালা দিয়ে আসছি৷”

প্রিয়ার এমন ওভার প্রটেক্টটিভ কাজ টা স্মরণের একদম পছন্দ হয়নি৷ তবুও মুখের উপর কিছু বললো না৷ প্রিয়া রুম লক করে নিচে চলে যায়৷ এদিকে প্রাণো চেন্জ করে ব্যালকনিতে গিয়ে পানির পাইপ বেয়ে নিচে নেমে যায়৷ বাইরে কেউ না থাকায় প্রাণোকে কেউ দেখতে পাই নি৷ প্রাণো খুব সাবধানে দেয়াল টোপকে রাস্তায় এসে সিএনজি করে বেড়িয়ে যায়৷

” Rv কণার নাম্বার ট্রেস করতে পেরেছো?”(সিমি)

” হ্যাঁ কিন্তু কোন লাভ হয়নি ৷ কণার লোকেশন তো হাতিরঝিল পর্যন্ত দেখাচ্ছে ৷ কিন্তু ওখানে গিয়ে আমি কিছুই পাইনি শুধু কণার ব্যাগটা ছাড়া”

” প্রাণো কোথায়? আমার মনে হয় প্রাণোই পারবে কণাকে খুজে বের করতে৷”

” কিন্তু প্রাণো এখনো আসছে না কেন?”

RV কথা শেষ হতেই ঝড়ের গতিতে প্রাণো এসে হাজির হয়৷

” RV কণাকে ট্রেস করা গেল?”

” কিডন্যাপার ভিষণ চালাক প্রাণো৷ বুঝতে পেরেছিলো কণার ফোন দিয়ে ট্রেস করতে পারি তাই ব্যাগটা ফেলে দিয়েছে৷ ”

” ওহ বাট নো টেনশন আমি এখুনি জানতে পেরে যাবো কণাকে কোথায় রেখেছে ওরা৷”

” কিন্তু কি করে প্রাণো?”

” কি করে তা দেখতেই পাবে সিমি আপু৷ RV ওঠো আমি দেখছি৷ ”

RV কে সরিয়ে ল্যাপটপ নিয়ে প্রাণো দুমিনিট কিছু করার পর ল্যাপটপ অফ করে বলে , ” লোকেশণ পেয়ে গেছি ৷ দ্রুত আর্মস নিয়ে রেডি হও ৷ আর আপু তুমি এক্সট্রা রিভালবার নিজের কাছে রাখবে ৷”

” ঠিক আছে কিন্তু তুমি কি করে কণাকে ট্রেস করলে প্রাণো?” অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো সিমি৷

সিমির কথা শুনে রহস্যময় হাসি দিয়ে প্রাণো বলতে লাগলো,” আমাদের হাতে সময় খুব কম সিমি আপু ৷ এই নিয়ে আমরা পরেও কথা বলতে পারি রাইট?”

” হুম আমি রেডি হয়ে আসছি৷”

RV সিমি বেড়িয়ে যেতেই প্রাণো তার অপারেশনের লুকে ফিরে আসে যাতে কেউ চিনতে না পারে৷

প্রাণো সিমি RV কে নিয়ে বেড়িয়ে যায়৷ RV আরো লোক নিতে চাইলে প্রাণো বারণ করে দেয়৷ কারণ কণা কে উদ্ধার করা প্রাণোর উদ্দেশ্য থাকলেও প্রাণো খুব ভালো করে জানে আজ এক্সট্রা লোক সাথে নিলে তাদের কে বাঁচানো খুব টাফ হয়ে যেতে পারে কারণ যে সে কণাকে কিডন্যাপ করে নি এটা প্রাণোর ধারণা ৷ তাই দুজনকে নিয়ে বের হয় প্রাণো৷

প্রাণো গাড়ি ড্রাইভ করে একটা জঙ্গলের ভিতর ঢুকে যায় ৷ খুব সাবধানে গাড়ি চালিয়ে একটু আড়ালে গাড়ি থামায় প্রাণো৷

” RV সিমি আপু খুব সাবধান ৷ কিডন্যাপারের লোক কিন্তু পুরো জঙ্গলে ছড়িয়ে আছে৷ ”

“প্রাণো এই জঙ্গলে শুধু জঙ্গিরা সাধারণ আশ্রয় নেয়৷ কারণ জঙ্গলটা বেশ বড় আর এখানে একটা সুবিশাল বাড়ি ও আছে যেটা জঙ্গি দের সাথে মিশে এখান কার নাম করা গুন্ডা বদমাস বানিয়েছে নিজেদের বিশ্রাম আর লুকিয়ে থাকার জন্য ৷ তার মানে কোন জঙ্গি কণাকে!”

” নো Rv বিডিতে গত ছয় মাসে কোন জঙ্গি ঢুকতে পারেনি৷ আর এখানে কোন জঙ্গি নেই ৷ এখন কোন কথা না বলে আমার পিছু পিছু এসো ৷ ”

_______

বেডের উপর উর্ধ উলঙ্গ হয়ে সেন্সলেস অবস্থায় পড়ে আছে কণা৷ এখনো কণার জ্ঞান ফিরে নেই কিন্তু তার আগেই জীবনে মহা মূল্যবান সম্পদটাই হাড়িয়ে ফেলেছে কণা৷ কণাকে বেডে ফেলে একটু দুরে JM আর রানা বিদেশি মদ গিলছে৷

” বস মেয়েটা তো এখনো সেন্সলেস কোন ইনফরমেশন বের করতে পারলাম না৷”

” মেয়েটার জ্ঞান ফেরানোর ব্যাবস্থা কর রানা৷”

” ওকে বস”

রানা মদের বোতলটা সাথে নিয়ে কণার কাছে গিয়ে কণার মুখ ঢেলে দেয়৷ মুখে তরল জাতীয় কিছু পড়তে কণার ধিরে ধিরে জ্ঞান ফিরে আসে৷ চোখ মেলে তাকিয়ে দেখে রানা তার দিকে ললুপ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে৷ কণা ওঠার চেষ্টা করতে খেয়াল করে তার শরীরে কাপড় নেই ৷ শরীর এবং পেটে প্রচন্ড ব্যাথা অনুভব করলো কণা ৷ কণা বুঝতে পারলো তার সব কিছু শেষ৷ প্রচন্ড কান্না পাচ্ছে কণার , কিন্তু এখন কেঁদে যে লাভ নেই ৷ কণা তার জামা কাপড় ফ্লোর থেকে তুলে পড়ে নেয় দ্রুত ৷ তখনি রানা কণার কোমরে হাত দিয়ে বলে উঠলো , ” ট্রাস্ট মি কণা জীবনে প্রথমবার কোন মেয়ের শরীরের সাধ নিয়ে এতো মজা পেলাম ৷ তোমাকে ড্রেস ছাড়া যা দেখতে লাগে না মাইরি বলছি বস পযর্ন্ত ফিদা হয়ে গেছে৷ ”

কণা একদলা থু রানা মুখে ছুড়ে মেরে বলে, ” তোদের মতো জানোয়ারদের জন্য সে একদম ঠিক আছে ৷ তোরা কি ভেবে ছিস আমার সতীত্ব কেড়ে নিয়ে আমাকে দূর্বল করে টিমের সব ইনফরমেশন জেনে নিবি? হি হি হি পারবি না পারবি না তার আগেই সে এসে তোদের কে শেষ করে দিয়ে আমাকে এই নরকপুড়ি থেকে নিয়ে যাবে৷”

মুখে থু থু মারায় রানা প্রচন্ড রেগে কণার গালে কয়েকটা থাপ্পর মেরে গলা টিপে ধরে৷ JM মদের নেশায় বুদ হয়ে আছে বিধায় রানাকে বারণও করতে পারছে না৷ তখনি হঠাৎ বাইরে গুলির আওয়াজ শুনতে পায় রানা JM কণা …

গুলির আওয়াজে JM এর মদের নেশা যেন হাওয়ার গতিতে উড়ে গেল৷ রানাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে কণা আত্মবিশ্বাসের সাথে বলে উঠলো , ” তোদের জম এসে গেছে জানোয়ার ৷ এবার মরার জন্য প্রস্তত হ তোরা ৷”

JM এবার কোমর থেকে রিভলবার বের করে কণার উদ্দেশ্য বলে উঠলো,” এই JM কে শেষ করার মতো ক্ষমতা এখনো পৃথিবীতে কারোর জন্ম নেয় নি ৷ আজ যে আসুক না কেন আমার হাতেই তাকে মরতে হবে৷ রানা এটার হাত বেধে ফেলে রাখ আর তাকে খবর দে বল এখানে আর লোক পাঠাতে ৷ ”

” ওকে বস আমি এখুনি ওনাকে ফোন করে জানিয়ে দিচ্ছি৷”

JM বের হতে বের হতে গুলি আওয়াজ যেন আরো কাছাকাছি আসতে লাগলো৷ JM রুম থেকে বের হতে নিবে তখনি একটা গুলি এসে JM এর হাতে লাগে ৷ JM কিছু বুঝে ওঠার আগেই চারিদিক কালো ধোয়ায় ছেয়ে যায়৷
.
.
.
#চলবে…………….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here