গোধূলীর_রঙিন_ছোঁয়া লেখায়_ফারহানা_ছবি পর্ব_৮

#গোধূলীর_রঙিন_ছোঁয়া
লেখায়_ফারহানা_ছবি
পর্ব_৮
.
.
🦋
প্রাণো কিছু বলবে তার আগে স্মরণ চলে যায়৷ ঐশী স্মিতা সাফা ড্রেস চেন্জ করে এসে প্রাণো নানা ধরনের প্রশ্ন করতে লাগলো ৷ স্মরণ কেন এখানে ছিলো? কেন কি বললো ব্লা ব্লা ব্লা ৷ প্রাণো কোন কথা না শুনে নিজের ফোন টা অন করে , অন করার দু’মিনিট পর দশটা মেসেজ সাথে চল্লিশ + মিসড কল ৷ প্রাণো নাম্বার টা ভালো করে দেখে দ্রুত সে নাম্বারে ডায়াল করে ৷ ওই নাম্বারে ডায়াল করতে ফোনের ওপাশের মানুষটা দ্রুত কল রিসিভ করে ৷

” হ্যালো প্রাণো তুমি ঠিক আছো তো?”

” হ্যাঁ, আমি ঠিক আছি ৷ তুমি চিন্তা করো না৷ ওই দিকটার কি খবর? আর সে বুঝতে পারেনি তো আমাদের প্লান টা?”

” না প্রাণো সে এখনো বুঝতে পারেনি আর না সন্ধেহ করেছে৷ ”

” আমি খুব তাড়াতাড়ি ফিরে আসবো ততোক্ষণ তুমি ওই দিকটা সামলে নিও প্লিজ ৷”

” এটা তোমাকে বলতে হবে না প্রাণো ৷ আমি এইদিকটা সামলে নিবো কিন্তু তুমিও নিজের দিকে খেয়াল রাখবে৷ তোমার চারিদিকে কিন্তু বিপদ অত পেতে আছে ৷ ”

” প্রিয়া কেমন আছে? ”

” ওকে নিয়ে ভাবতে হবে না তোমায়৷ প্রিয়া একাই সব টা সামলে নিয়েছে৷ আই থিং ও বাকি কাজটা করে দিতে পারবে৷ আর সাজিত প্রিয়াকে বর্তমানে তোয়াচ করে চলছে৷ মনে হয় ভয় ও পাচ্ছে কিন্তু কতোক্ষণ ওদের থামিয়ে রাখবে জানি না৷ তবে সাজিত আর ওর বোন মিহু প্রিয়ার ক্ষতি করতে চাইছে৷ ”

” প্রিয়াকে বলো আমার সাথে যোগাযোগ করতে , আমি প্রিয়ার সাথে কথা বলবো৷”

” কিন্তু ওরা যদি কেউ জানতে পারে তুমি প্রিয়ার সাথে যোগাযোগ করেছো তাহলে ওরা প্রিয়াকেও এট্যাক করতে পারে? ”

” আমি অন্য নাম্বার থেকে ফোন করবো তুমি প্লিজ ওর সাথে যোগাযোগ করিয়ে দিবে৷”

” ওকে ফাইন, আমি চেষ্টা করবো ৷ আর একটা কথা ওরা আমার ফোন নাম্বার ও ট্রেস করতে পারে বলে মনে হয় ৷ তাই আমার পার্সোনাল নাম্বার দিয়ে ফোন করছি৷”

” তাহলে তোমার ফোন থেকে প্রিয়ার সাথে কথা বলিয়ে দিও৷ আর হ্যাঁ আমি খুব তাড়াতাড়ি ফিরছি৷ অনেক হয়েছে চোর পুলিশ খেলা এবার যা হবে সামনাসামনি , নয় এস্পার নয় ওস্পার ৷”

” যেটা ভালো মনে করো তুমি , তবে একটা কথা সব সময় মনে রাখবে আমি অলয়েজ তোমার পাশে আছি৷ ”

” থ্যান্কিউ, থ্যান্কিউ সো ম্যাচ RV , আই নো তুমি সব সময় আমার পাশে থাকবে৷ আচ্ছা এখন আমি রাখছি পরে কথা হবে ৷”

” বাই”

প্রাণো কল ডিসকানেক্ট করে ব্যালকনি থেকে রুমে এসে দেখে ঐশী, স্মিতা, সাফা তিন জনই মুখ ভার করে গালে হাত দিয়ে বসে বসে কি যেন ভাবছে৷ বাইরে এখনো তুমুল বৃষ্টি পড়ছে৷ বৃষ্টির শব্দে প্রাণোর ফোনে বলা কোন কথাই তিন জনের কেউ শুনতে পাইনি৷ কিন্তু ওদের এভাবে মুখ গোমড়া করে থাকতে দেখে প্রাণো সাফার পাশে বসে ভ্রু কুচকে জিজ্ঞাসা করে কি হয়েছে? তিন মূর্তিমানের কেউ জবাব দিলো না৷ প্রাণো এবার রেগে যাওয়ার ভান করে বালিশ ছুড়ে মেরে বলে, ” কি হয়েছে তোদের ? বলছিস না কেন ড্যাম ইট ”

প্রাণোর রাগ দেখে সাফা গড়গড় করে বলতে লাগলো, ” আসলে কিছু হয়নি আমরা তোর সাথে একটু অভিমান করার নাটক করছিলাম ৷ আমাদের একা রেখে স্মরণ ভাইয়ার সাথে গল্প করেছিস তাই!”

সাফার কথা শুনে প্রাণো জোরে জোরে হাসতে লাগলো৷ সাফা ঐশী স্মিতা প্রথমে প্রাণোর হাসির কারণ বুঝতে না পারলেও পড়ে বুঝতে পারে প্রাণো ও ওদের মতো রাগের অভিনয় করেছে৷ তখনি বালিশ নিয়ে প্রাণোকে মারতে লাগলো৷

” হারামি কুত্তি শাকচুন্নির দল আমাকে মারছিস কেন ? মারা তো উচিত তোদের,”(প্রাণো)

” কেন রে প্রাণো! আমরা কেন মার খাবো? মার তো তোর খাওয়া উচিত৷ হুট করে খেয়ে চলে আসলি আর তোর পিছু পিছু স্মরণ ভাইয়াও চলে গেল আর এখন এখানে এসে দেখি তোরা গল্প করছিস হাউ!”

” ইডিয়েট স্মরণ বৃষ্টির মধ্যে আটকে পড়েছিলো তাই কি করতাম আমি! এই ঝুম বৃষ্টির মধ্যে স্মরণকে বেড়িয়ে যেতে বলতাম? এতোটা কঠিন ভাবিস আমাকে?”

প্রাণোর কথা শুনে সাফা ঐশী স্মিতা মুখ কালো করে বললো, ” স্যরি প্রাণো তোকে ভুল বোঝার জন্য, ”

” ইট’স ওকে , ”

পুরোটা বিকেল মুষলধারে বৃষ্টি ঝড়বার পর রাত ন-টায় বৃষ্টি থেকে যায়৷ স্মরণের কথা মতো রেস্টুরেন্ট থেকে দু-জন লোক এসে ওদের খাবার টা পৌছে দেয়৷ প্রাণো বিল দিতে চাইলে তারা জানায় আগে তাদের বিল পরিশোধ করে দিয়েছে৷ প্রাণো আর কথা বাড়ালো না ৷ রুমে গিয়ে প্রাণো দেখে গরম গরম খিচুড়ি , বেগুন ভাজা, ইলিশ মাছ ভাজা , আর জলপাইয়ের আচার ৷ প্রাণো সহ বাকিরা খিচুড়ি খেয়ে নিয়ে প্লান করতে বসে কাল কোথায় কোথায় যাবে ৷

” স্মরণ দোস্ত সত্যি করে বলতো প্রাণোকে কি তুই ভালোবেসে ফেলেছিস? দেখ রেগে যাবি না যাস্ট মনে হলো আমাদের তাই বললাম ৷” এতো টুকু বলে দম নিলো আকাশ৷ স্মরণের আঙুলে লেগে থাকা আচার টুকু মুখে পুড়ে বললো, ” আচার টা বেশ দারুণ খেতে তাই না আকাশ ?”

” স্মরণ সত্যিটা বলবি নাকি আমি প্রাণো কে জিজ্ঞাসা করবো?”

” মনের ভুলেও প্রাণো কে এই সব কথা জিজ্ঞাসা করতে যাবি না আকাশ কারণ প্রাণোর পক্ষ থেকে আমি ওর একজন ভালো বন্ধু ৷”

“আর তোর পক্ষ থেকে প্রাণো তোর কি?”

” প্রাণোর সামনে ওকে আপু বলে ডাকবি আকাশ৷”

” ধ্যুর শালা বলবি নাকি কথা ঘুড়াবি?”

” আমার কথা এখনো শেষ হয়নি আকাশ ৷ প্রাণোর সামনে ওকে আপু বলে ডাকবি কিন্তু আমার সামনে ভাবি বলবি কারণ কিছুদিন পর ও তোদের দোস্তের বউ হবে বুঝতে পেরেছিস?”

স্মরণের কথা শুনে নিলয় আকাশ সাগরের চোখ যেন কপালে উঠে গেল৷ স্মরণ এমন কিছু বলবে তার কোন ধারণা ছিলো না তাদের, নিলয় বড় বড় চোখ করে হতবিহ্বল হয়ে স্মরণকে বললো, ” দোস্ত তুই সত্যি আমাদের স্মরণ তো? নাকি বারন্দরবনে হাড়িয়ে যাওয়া স্মরণের কোন জমজ ভাই?”

” স্টুপিট আমি তোদের স্মরণ ৷ আমার কোন জমজ ভাই টাই নেই জানিস না?”

সাগর মেয়েদের মতো গালে হাত দিয়ে বলে উঠলো ,” রিয়েলি দোস্ত তুই আমাদের স্মরণ? যে ছেলে মেয়েদের থেকে একশ হাত দুরে থাকার চেষ্টা করে সব সময় , বলতে গেলে মেয়ে তে এলার্জি সে কিনা এই কথা বলছে! মানা যায় বল? যাই হোক নিরামিনিরামিশ জীবন থেকে বেড়িয়ে একটু আমিশ হওয়ার চেষ্টা করছিস এটা শুনে ভালো লাগলো ৷ আর হ্যাঁ ভাবি হিসেবে প্রাণো কিন্তু বেস্ট ৷ ”

” নাম ধরবি না সন্মান দিয়ে কথা বল৷”

” বাবাহ বিয়ে হয়নি প্রেম হয়নি আর এখনি এতো টান!”

কথাটা ব্যাঙ্গ করে বললো নিলয়, নিলয়ের কথা শুনে ধুরুম করে এক কিল নিলয়ের পিঠে বসিয়ে দেয় স্মরণ৷

” নিলয়ের বাচ্চা ফালতু কথা আর একটাও যদি শুনি তোর মুখে তাহলে তোকে পুরো রাত রুমে বাইরে দাড় করিয়ে রাখবো৷”

” এই না না আমি আর কিছু বলবো না স্যরি রে আমার ধারা এই ঠান্ডায় বাইরে দাড়িয়ে থাকা সম্ভব নয়৷”

” তাহলে দ্রুত ঘুমিয়ে পড় সবাই ৷ ”

” হু গুড নাইট”

” গুড নাইট”

_________________

” এই মেয়ে কি করছো এই সব? তোমাকে আমার রুমে আসতে কে পারমিশন দিয়েছে হাহ্ !” রেগে বললো মিহু…

” ননোদিনী আমি তোমার একমাত্র ভাবি আর ভাবির সাথে এহেতুক আচরন করছো ? আচ্ছা যাও প্রথমবার বলে ক্ষমা করে দিলাম কিন্তু দ্বিতীয় বার কিন্তু ক্ষমা করবো না বলে দিলাম ননোদিনী ৷”

প্রিয়ার কথা শুনে মিহুর মাথায় যেন আগুন জ্বলে উঠলো ৷ এতোটুকু মেয়ে কিনা ওকে চ্যাটাং চ্যাটাং করে কথা শুনাচ্ছে ভেবে রাগে থর থর করে কাঁপছে মিহু৷ মিহুর রাগ দেখে প্রিয়া মৃদু হেসে মিহুর হাত ধরে বিছানায় বসিয়ে দেয়৷ মিহু রেগে হাত ঝাড়া মেরে ছুটিয়ে নিয়ে বলে, ” আমার রুমে কেন এসেছো? যাও এখুনি বেড়িয়ে যাও ৷ তোমার মুখ আমি দেখতে চাই না৷”

” উপ’স কিন্তু কি করার ননোদিনী আমার এই চাঁদ পানা মুখটাই যে তোমাকে দেখতে হবে৷ আর তো কোন রাস্তা তোমাদের দু’ভাই বোনের নেই ননোদিনী ৷”

মিহু বুঝতে পারলো প্রিয়ার সাথে কথায় হোক বা তর্কে কোনটায় পেরে উঠবে না ৷ কারণ প্রিয়া ভিষণ ঘন কথা বলে ৷ সুস্থ মানুষকে অসুস্থ করার জন্য প্রিয়াকে এক বার কথা বলার সুযোগ করে দিলে হয়৷ প্রিয়া সম্পর্কে সব কথা সাজিতের কাছ থেকে শুনেছে মিহু৷ প্রিয়ার সাথে রিলেশন থাকা অবস্থায় কি ভাবে বক বক করে ফোনে হোক বা সামনা সামনি সাজিতের মাথা ব্যাথা উঠে যেত৷ তবে প্রিয়া মনের দিক থেকে যে ভিষণ ভালো মেয়ে এটাও বলে ছিলো সাজিত কিন্তু বর্তমানে সাজতের কথার সাথে প্রিয়ার কোন মিল-ই পাচ্ছে না মিহু ৷ মিহু জোরে জোরে দু-বার নিশ্বাস নিয়ে প্রিয়াকে বলে,” কাম টু দ্যা পয়েন্ট প্রিয়া ৷ তুমি ঠিক কি কারণে আমার রুমে এসেছো ? ”

” বাহ আমার ননোদিনী তো দেখছি বেশ বুদ্ধিমতি ৷ যাই হোক যেটা বলার জন্য এখানে আমার আসা তা হলো তোমাকে সাবধান করা৷”

” মানেহ! সাবধান কিসের জন্য?”

” আমার পেছনে লাগার জন্য, আমি জানি ননোদিনী তুমি তোমার ভাইকে ভিষণ ভালোবাসো বাট ট্রাস্ট মি এটা নিয়ে আমার কোন অসুবিধা নেই৷ কিন্তু আমার অসুবিধা অন্য যায়গায় এই ধরো আজ দুপুরে আমি বিরয়ানি রান্না করার সময় রান্না ঘড় থেকে একবার রুমে এসেছিলাম তুমি সেই ফাঁকে খুব সাবধানে রান্না ঘড়ে ঢুকে বিরয়ানিতে অনেকটা লবন ঢেলে দিয়েছিলে৷ কিন্তু আমার লাক টা দেখো , আমি ও বিরয়ানি তে লবন দিতে একদম ভুলে গিয়ে ছিলাম ৷ আমি যখন রান্না ঘড়ে আসছিলাম তখনি তোমাকে লবন দিতে দেখে ফেলি ইভেন তুমি ঠিক ততোটাই লবন বিরয়ানিতে দিয়েছো যতোটা দরকার ছিলো৷ তুমি আমার ক্ষতি করতে এসে উপকারই করলে, দেখলে তো সবাই কতো প্রশংসা করলো আমার!”

মিহু এতোক্ষণ চোখ বড় বড় করে প্রিয়ার কথা শুনছিলো ৷ এই জন্য দুপুরে সবার প্রশংসা শোনার পর মিহু কিছুটা বিরয়ানি খেয়ে টেস্ট করে দেখে একদম পার্ফেক্ট সব কিছু ইভেন দারুণ খেতে ছিলো৷ মিহু এখন মনে মনে নিজেকে দোষ দিতে লাগলো ” ইসস কেন যে তখন লবন দিতে গেলাম ৷ না দিলে হয়তো সবার কাছে অপমানিত হতো বিশেষ করে বাবার কাছে কারণ বাবা প্রিয়াকে ডে ওয়ান থেকে পছন্দ করে না৷ তার বরাবর প্রাণো কে পছন্দ ছিলো৷ অল্প ভাষী প্রাণো আর ভিষণ শান্ত এবং লক্ষি ৷ কিন্তু প্রিয়া প্রাণোর পুরো উলটো ,

“কি হলো ননোদিনী মনে মনে নিশ্চয়ই নিজেকে বকছো? থাক আর বকতে হবে না নিজেকে , শোন যেটা বলার জন্য আমার এখানে আসা , তোমার প্রথম ভুল তাই ক্ষমা করলাম নেক্সট টাইম এমন কিছু রিপিট হলে তোমাকে ভুগতে হবে ৷ আর আমি যে খুব ভালো মেয়ে না সেটা তুমি তোমার ভাইয়ের থেকে নিশ্চয়ই জেনে নিয়েছো? আমি যেমন ভালো আবার প্রয়োজন পড়লে তার থেকে দ্বিগুন খারাপ হতে পারি ৷ তাই বলছি আমার পেছনে লাগতে যেও না সুবিধা করতে পারবে না উলটো আরো বিপদে পড়বে৷ আমার কথাটা মাথায় ভালো করে ঢুকিয়ে নিও ননোদিনী ৷ গুড নাইট এন্ড এ্যাভ আ সুইট ড্রিম’স৷ ”

প্রিয়া কথা গুলো বলে গট গট করে রুম থেকে বেড়িয়ে গেল ৷ প্রিয়া যেতেই মিহু বিছানা উলট পালট করে রেগে বলতে লাগলো, ” আমাকে থ্রেট করে ঠিক করলে না প্রিয়া ৷ ইউ এ্যাভ টু পে ফর দিস প্রিয়া ইউ এ্যাভ টু পে ফর দিস৷”

__________________

প্রাণো আজ খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে বাইরে হাটতে বের হয়৷ রিসোর্ট টা বেশ বড় হলেও কটেজ মাত্র তিন টা ৷ প্রাণো একা একাই পুরো রিসোর্ট ৷ গতকাল সেই মুষলধারের বৃষ্টির পর আজকের এক নতুন সকাল টা প্রাণোর কাছে মনোমুগ্ধকর লাগছে ৷ সবুজ গাছ গুলোর পাতা থেকে এখনো বৃষ্টির কিছু থেকে যাওয়া পানি ঝড়ে পড়ছে প্রাণোর শরীরে,লাল টকটকে জবা ফুল ফুটে আছে ৷ ছোট ছোট নানা রঙের বন ফুল ফুটে আছে আসে পাশে৷ আঁকা বাঁকা রাস্তায় নিচু স্থানে এখনো পানি জমে আছে৷ গাছে গাছে পাখি উড়ে বেড়াচ্ছে৷ সকাল বেলার সূর্য মামার নরম রোদে গাছের পাতায় পানি চিকচিক করছে ৷ এমন মনোমুগ্ধ কর সিগ্ধ পরিবেশে এসে প্রাণো যেন নিজের মধ্যে নেই তার নীলমনির চোখ জোড়া প্রকৃতি দেখতে ব্যস্ত ৷

ঘুম থেকে উঠে স্মরণ তার বন্ধুদের ঘুম থেকে তুলে ফ্রেস হয়ে একে বাড়ে রেডি হয়ে বের হয় ৷ স্মরণ প্রাণোদের কটেজে গিয়ে নক করে জানতে পারে প্রাণো ভোর বেলা হাটতে বের হয়েছে এখনো ফেরেনি৷ কথাটা শুনে স্মরণের বক্ষঃস্থল কেঁপে ওঠে প্রাণো কোন বিপদ হলো না তো এই ভয়ে, স্মরণ সবাইকে রেডি হতে বলে স্মরণ প্রাণো খুজতে যায়৷ স্মরণ কটেজ থেকে দুরে তাকাতে দেখে শুভ্র রঙের সালোয়ার কামিজ পড়া একটা মেয়ে দাড়িয়ে আছে ৷ স্মরণ আর একটু কাছে এগিয়ে গিয়ে শিওর হয় এটা আর কেউ নয় তার প্রাণ৷ প্রাণো কে দেখে স্বস্থির নিশ্বাস ফেলে প্রাণোর পাশে গিয়ে দাড়ায়৷ প্রাণো প্রকৃতি দেখায় এতোটাই ব্যস্ত যে পাশে স্মরণ দাড়িয়ে তাকে দেখছে এটা প্রাণোর খেয়াল নেই৷

প্রাণো খুব শুকনা না হলেও স্বাস্থ্য খুব একটা খারাপ না ৷ মিডিয়াম বলতে গেলে৷ প্রাণো হাইট স্মরণে বুক অবধি৷ স্মরণ প্রাণো কে দেখে যাচ্ছে৷ প্রাণো তার লম্বা চুল গুলো ঝুটি করে কানে বড় গোল ইয়ারিং পড়েছে৷ দু’হাতে মুঠো ভর্তি শুভ্র রঙের কাঁচের চুড়ি৷ চোখে গাঢ় করে কাজল দেওয়া ৷ প্রাণোর ঠোঁট জোড়া এমনিতেই গোলাপি তাই হয়তো প্রাণো কিছু ছোঁয়াই নি৷ প্রাণোর মুখে কোন আধুনিক ছোঁয়ার চিহ্ন মাত্র নেই৷ প্রাণো প্রকৃতি দেখতে দেখতে দু’পা সামনে এগোতে নূপুরের আওয়াজ স্মরণের কানে পৌছাতে স্মরণ প্রাণোর পায়ের দিকে তাকিয়ে দেখে প্রাণোর দু’পায়ে নূপুর জোড়া প্রাণোর হাটার তালে বেজে উঠছে৷ এই মুহূর্তে স্মরণের কাছে প্রাণোকে মনে হচ্ছে আকাশ থেকে নেমে আশা কোন শুভ্র পরী ৷ এই শুভ্রপরীকে একটু ছুঁয়ে দেখার জন্য ছটপট করছে স্মরণ৷ প্রাণো পেছনের দিকে না তাকিয়ে পেছনের দিকে দু’পা পিছিয়ে পেছনে ঘুড়ে তাকাতে স্মরণের বুকে ধাক্কা লেগে পড়ে যেতে নিলে প্রাণো স্মরণের শার্ট আকড়ে ধরে বুকে মাথা রেখে চোখ মুখ খিচে ফেলে৷ স্মরণের মনের ইচ্ছে এভাবে পূরণ হয়ে যাবে৷এটা স্মরণ ভাবতেও পারেনি৷ শক্ত করে জড়িয়ে ধরে স্মরণ প্রাণোকে ৷ প্রাণো স্মরণের বুকে মাথা রেখে হৃৎস্পন্দন শুনতে পারছে৷ এতো জোরে লাফাচ্ছে যে মনে হচ্ছে এখুনি হৃদয় টা বুক ছিড়ে বেড়িয়ে আসবে৷ প্রাণোর কেন যেন এই হৃৎস্পন্দনের শব্দটা শুনতে ভিষণ ভালো লাগছে৷ কিন্তু হঠাৎ করে প্রাণো বুঝতে পারে দু’টো শক্ত পক্ত বলিশ্ঠ হাত তাকে জড়িয়ে ধরে আছে ৷ প্রাণো হুট করে স্মরণ কে ছেড়ে দিতে আবার পড়ে যেতে নিলে স্মরণ প্রাণোর কোমড় জরিয়ে ধরে বলে , ” প্রাণ এতো ছটপট করছো কেন? আমি কি তোমায় খেয়ে ফেলছি? আর একটু হলে ওই কাঁদা পানিতে চিৎপটাং হয়ে পড়ে যাচ্ছিলে৷ ”

প্রাণোর বেশ অস্বস্থি হচ্ছে ৷ স্মরণ প্রাণোর মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারলো প্রাণোর অস্বস্থি হচ্ছে তাই আস্তে করে তার হাতের বাধন আলগা হয়ে গেল ৷ প্রাণো এবার স্থির হয়ে ধিরে সুস্থে সাবধানে পা ফেলে স্মরণের থেকে দূরত্ব নিয়ে দাড়ায়৷ কারন গতকাল তুমুল বৃষ্টি হওয়ায় রাস্তা ঘাট বেশ কাঁদায় পিচ্ছিল হয়ে আছে৷ সাবধান না হলে পা পিচলে পড়ে যাবে৷

প্রাণো স্মরণের দিকে লজ্জায় তাকাতে পারছে না৷ তাই অন্য দিকে তাকিয়ে স্যরি বললো৷ স্মরণ সে সব কথা না শোনার ভান করে প্রাণো কে বলল,” আজ তো শৈলপ্রপাত আর স্বর্নমন্দিরে ঘুরতে যাওয়ার কথা ছিলো ৷”

প্রাণো এবার স্বাভাবিক হয়ে বললো, ” হ্যাঁ , আমরা সবাই নাস্তা করে বের হবো৷”

” ওকে তাহলে চলো ওরা সবাই আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে৷ ”

” হুম তার আগে আমাকে একবার রুমে যেতে হবে ৷ ফোন আর পার্সটা নিতে হবে৷”

” ওকে চলো তাহলে ”

“হুম”

___________

” হ্যালো ম্যাম মেয়েটার খবর পেয়েছি?”

” কোথায় আছে প্রাণো?”

” ম্যাম বান্দরবান একটা রিসোর্টে আছে তার বান্ধবীদের নিয়ে,”

” যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব প্রাণোকে নিয়ে এসো ৷ ”

” ইয়েস ম্যাম , আপনি চিন্তা করবেন না ৷ এবার আমরা সফল হবোই৷ আমরা মেয়েটাকে নিয়ে ফিরবো ম্যাম”

” ঠিক আছে ৷ আর যদি প্রাণো কে নিয়ে ফিরতে না পারো তাহলে নিজের জীবন হারাবে ৷”

” চিন্তা করবেন না ম্যাম এবার মেয়েটাকে ধরে আনবোই ৷”

লোকটার কথা শেষ হতে মেয়েটি ফোন টা বিছানার উপর ছুড়ে মেরে ল্যাপটপে প্রাণোর কল ডিটেইলস দেখতে লাগলো ৷
.
.
.
#চলবে…………..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here