#গোধূলী_আকাশ_লাজুক_লাজুক (পর্ব-২১ এবং শেষ)
সিজন ২
লেখনীতে— ইনশিয়াহ্ ইসলাম।
৪৫.
মেহজা বসে আছে ইরফানের পাশে। ইরফান ফোনে কথা বলছে, দেখেই বোঝা গেল বেশ দরকারি আলাপ সারছে। এদিকে মেহজার হাতও ছাড়ছেনা। মেহজা দুই তিন বার ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে তবে সফল হয়নি। তাই চুপচাপ বসে আছে ইরফানের ফোনে কথা শেষ হওয়ার অপেক্ষা নিয়ে। হয়তো সে তাকেও কিছু বলতে চায়, তাই হাত ধরে আ’ট’কে রেখেছে। দুই মিনিটের মধ্যেই ইরফানের কথা শেষ হয়। কল কেটে ফোনটা কান থেকে নামায়। তারপর মেহজার হাতটাও ছেড়ে দেয়। মেহজা বলল,
-‘হাত ধরে এভাবে আ’ট’কে রেখেছিলেন কেন? কিছু বলার থাকলে বলতে পারেন। খুব দ্রুত বলবেন। আমি বেশিক্ষণ এখানে থাকতে পারব না।’
-‘হ্যাঁ, কিছু তো বলার আছেই। তবে তুমি বেশিক্ষণ কেন থাকতে পারবেনা?’
-‘আমার কাজ আছে।’
-‘কী কাজ?’
-‘আপনাকে বলতে বাধ্য নই।’
-‘আচ্ছা বলো না। আমি আমি আমার কথা বলি তুমি শোনো।’
-‘বলুন। তবে জলদি!’
-‘জলদি হবে কিনা সেটা জানিনা। যাই হোক, শোনো!’
ইরফান একটু নড়ে মেহজার মুখোমুখি বসল ঠিক করে। তারপর বেশ শান্ত হয়েই বলল,
-‘বিয়েটা আমাদের যেভাবেই হোক, হয়ে তো গেছে। তুমি আমার উপর রা’গ করে আছো হয়তো। যার অবশ্য যথাযথ কারণ আছে। আমি সেই ব্যাপারে আর না বলি। মূল কথাটা হলো, তুমি আমার স্ত্রী। আমাদের পরিচয়টা, আমাদের সম্পর্কটা সবচেয়ে কাছের। তাই এখন আর কোনো রকম রা’গ জে’দ ধরে না রেখে তোমার আমার সাথে নরমাল হওয়া উচিত। আমি এতটা জোর দিয়ে কথাটা বলছি কারণ আমি জানি তুমি আমাকে ভালোবাসো। সেই প্রথম থেকে। আমাদের বিয়ের কথা চলার আগে থেকেই।’
মেহজা চকিতে তাকালো ইরফানের দিকে। তারপর রু’ক্ষ স্বরে বলল,
-‘অযথা এমন মি’থ্যে অ’প’বা’দ দিবেন না।’
-‘তুমি জানো এটা সম্পূর্ণ সত্যি। তোমার কী মনে হয়? একটা ছেলের সামনে একটা মেয়ে সাজগোজ করে, ভালো ঘ্রাণের পারফিউম ইউজ করে, কথার ধরনে স্মার্টনেস এনে কথা বললে ছেলেটা কী বুঝবেনা! অবশ্যই বুঝবে। আর যদি হয় আমার মতো প্রাপ্ত বয়স্ক যুবক তবে তো কথাই নেই। ভালোবাসার ব্যাপারটা মেয়েরা আঁচ করার বিশেষ ক্ষমতা রাখে বলে এমন কোথাও লিখা নেই যে ছেলেরা তা পারেনা। ছেলেরাও পারে সব ছেলে না হোক কিছু ছেলে পারে। তন্মধ্যে আমি একজন। তাছাড়া তোমার চোখ কথা বলত। জানো তো? চোখ যে মনের কথা বলে!’
মেহজার অ’প’মা’নিত বোধ হচ্ছিল। কেন যেন ব্যাপারটা স’হ্য করা যাচ্ছেনা। ইরফানের কথা বলার ধরনে মনে হচ্ছে সে খুব বড় একটা ভু’ল করে ফেলেছে ইরফানকে ভালোবেসে। ইরফানের কথা শুনে নিজেকে নি’চ মনে হচ্ছে। ইরফান এমন ভাবে বলছে যেন সে করুণা করছে। কিন্তু মেহজার তো করুণা চাইনা। ভালো। সে যখন বুঝতে পেরেছে তখন সেটা ভালো। তবে তাই বলে মেহজা ভালোবাসবে এই জন্যে তাকে একবার অ’প’মা’ন করে ছোট বাচ্চা বলে বিয়ে ভেঙে দিয়ে পরেরবার জো’র করে বিয়ে করে বলবে যে, “তুমি আমায় ভালোবাসো তাই তোমাকে এভাবে বিয়ে করাতে কিছু হবেনা। এটা কোনো ব্যাপারই না!’ কেন? দয়া কেন? সে কী ভেবেছে মেহজা পাত্র পাবেনা? তাই সে চাইল আর বিয়ে করে নিল! এমন হয় নাকি? সে প্রথম কয়দিন এমন ভাব করছিল যেন সে ভালোবাসে। সে ভালোবাসে বলে বিয়ে করতে চায়। তার পক্ষ থেকে কবে কখন হলো সেটা মেহজা জানেনা। তবে জানতে চায়। সত্যি কিনা সেটা বুঝতে চায়। আর এখন সে বলছে অন্য কথা। মেহজা ভালোবেসেছিল বলে তাকে বিয়ে করবে? তারমানে অন্য যে কোনো মেয়ে হলেই সে বিয়ে করত? সেটাও তো নয়! লোকটা মুখ ফুঁটে কেন বলছেনা ভালোবাসার কথা। সে কেন সব দা’য় মেহজার দিকেই ঠেলে দিচ্ছে?
ইরফান মেহজাকে চুপ থাকতে দেখে বলল,
-‘আই হোপ ব্যাপারটা নিয়ে তুমি ভাববে। এবার যেতে পারো। আর আ’ট’কে রাখব না।’
মেহজা বসা থেকে উঠল। চলে যাবে তখন ইরফান আবারও বলল,
-‘ঘন্টা দুই এক এর মধ্যে শপিং এ বের হবো। কালকের প্রোগ্রাম এর জন্য কেনাকাটা করতে হবে। তুমি বরং অন্য কোথাও না গিয়ে প্রথমে তৈরি হয়ে নাও আর লিস্ট করো কি কি লাগবে।’
মেহজা চুপ করে রইল। ইরফান আর কিছু বলল না। মৃদু পায়ে মেহজা রুম ত্যাগ করল। ইরফানের মনের অস্থিরতা কমছে না। সে বুঝতে পারছে আবারও একটা গ’ণ্ড’গো’ল সে বাঁধিয়ে ফেলেছে। তবে এটা যাতে এখানেই শে’ষ হয়ে যায় এই কামনা করে থাকে।
মেহজার বাবা-মা মেয়ের কাছে ক্ষ’মা চাইলেন আকস্মিক এমন ভাবে তার উপর বিয়ে নামক মস্ত বড় ব্যাপারটা চাপিয়ে দেওয়ার জন্যে। মেহজা এমন ভাব করল যেন সব ঠিক। তার কোনো অ’ভি’যো’গ নেই। সত্যিই তো নেই। করেও বা লাভ কী? সব তো আগের মতো হয়ে যাবেনা। মেহজার এই প্রথম উপলদ্ধি হলো যে, যাকে ভালোবাসি তাকে যে পেতেই হবে এমনটা ঠিক নয়। ভালোবাসার মানুষটা ভালোবাসার মানুষ হয়ে থাকার জন্যই অন্তত পক্ষে তাকে না পাওয়া উত্তম। কেননা হঠাৎ ভালোবাসাটা যখন বেদনার রঙ নিবে তখন সেই ভালোবাসার মানুষটা আর ভালোবাসার থাকবেনা। শুধু শুধু কেন একজন মানুষকে চরম ভালোবাসার থেকে ঘৃ’ণার দিকে নিয়ে যেতে হবে! ভাবতেও তো কেমন লাগবে যে এই মানুষকে এককালে ভালোবেসেছিল। তার চেয়ে বরং সে সারাজীবন দূরেই থাক। কেননা তার থেকে তখন কোনো আ’ঘা’ত পাওয়ার সম্ভাবনা থাকেনা তার মধ্যকার অন্য রূপটা দেখার দূ’র্ভাগ্য হয়না। তখন সব ঠিক থাকে। ভালোবাসার মানুষটি আজীবন ভালোবাসারই থেকে যায়। ঘৃ’ণার হয়ে ওঠেনা। ইরফান এখন কোন স্টেজে আছে মেহজা সেটা বুঝতে পারছেনা। এটা সত্য ইরফান তার হৃদয়ে এখনও বাস করে। হয়তো আগের মতো ওতটা গাঢ় অনুভূতি প্রকাশ করতে পারেনা তবে তার মানে এই নয় যে সেসব হারিয়ে গেছে। সবই আছে। মনের কোথাও কোনো গহীন কোণে লুকিয়ে আছে। থাকুক লুকিয়ে। খুঁজে বের করা লাগবেনা আর। সেখানেই থাকুক চুপটি করে।
কেনাকাটা দুপুরের মধ্যেই শেষ হয়ে গেল। যেহেতু অনুষ্ঠান একদিনের তাই একদিনের শপিং করতে সময় খুব কম লেগেছে। তাছাড়া মেহজার মধ্যে কী পরলে বেশি ভালো লাগবে, কোন পরলে মানাবে, কেমন স্টাইল করবে এসব চিন্তা চেতনা ছিল না তাই যেকোনো কিছুতে তাকে একবার বললেই সে পছন্দ করে নিল। ঘাটাঘাটি করল না। কোনটা বেস্ট, ডিজাইন কেমন সেটাও পরখ করল না। তার এই খাপছাড়া ভাব উপস্থিত একটা মানুষও লক্ষ্য করল না। তারা আছে আনন্দের এক অন্য সীমানায়। তাদের আর এত দিকে তাকানোর সময় কই?
রাতে মেহজা নিজের বাসাতে থাকতে চাইছিল। যেহেতু অনা আর প্রথি আছে। সে অযুহাত দেখালো একটা রাত সে তার বান্ধবীদের সাথে মজা করে কা’টা’তে চায়। ইরফানদের পরিবারের কেউ কোনো আপত্তি করল না। একদিনেরই তো ব্যাপার!
রাতে তিন বান্ধবী মিলে বেশ গল্প করল। জমিয়ে আড্ডা দিয়ে একসময় সবাই ঘুমিয়ে পড়ল। তবে মেহজা ঘুমিয়ে পড়ার অভিনয় করল। অনা আর প্রথির ভারি নিঃশ্বাস পড়ার শব্দে সে সচেতনার সহিত শোয়া থেকে উঠে বসে। কাবার্ড থেকে নিজের দরকারি সব জিনিস ধীরে ধীরে বের করে একটা ব্যাগে ভরতে থাকল। আপাতত তার দরকারি বই আর দুই তিনটা জামা ছাড়া সে আর কিছু নিল না। কিছু টাকাও নিল সাথে। ব্যাগটা মোটামুটি মাঝারি ধরনের। কেউ স’ন্দে’হ করবেনা হয়তো। তবুও সাবধানতা বজায় রাখা দরকার। মেহজা ব্যাগটা তার পড়ার টেবিলের নিচে রেখে সামনে চেয়ার দিয়ে এমন ভাবে ঢেকে রাখল যে কেউ আর দেখতে পাবেনা।
যথাসময়ে পরদিন অনুষ্ঠান হলো বড় করে। একটা সোনালী আর ট’ক’ট’কে লাল রঙের লেহেঙ্গা পরে ছিল সে। আর ইরফান সোনালী রঙের শেরওয়ানী। বেশ কিছু মানুষ এলো তারা ছবি তুলল, কথা বলল, দিনটা বেশ ভালোভাবেই সেলিব্রেট করা হলো। মেহজা হাসিখুশি ছিল। ইরফান মেহজার হাসি খুশি মুখ দেখে চিন্তামুক্ত হলো। সেই সাথে দুই পরিবারের সবাই স্বস্তি পেল। যাক! সব ঠিক হতে চলল, এই ভেবে।
রাতে ইরফানের সাথেই মেহজা থাকল। ইরফান দুই তিনবার কাছে আসার চেষ্টা করলেও মেহজা তাকে কাছে আসতে দিল না। বলল,
-‘আমার একটু সময় প্রয়োজন। আশা করি আপনি বুঝতে পারছেন।’
-‘পারছি। তুমি ভেবো না। ঘুমাও।’
মেহজা সারারাত ছ’ট’ফ’ট করতে থাকল। সে যে কাজটা করতে যাচ্ছে তার জন্য বেশ সাহসের প্রয়োজন। সে একটু একটু করে সেই সাহস সঞ্চয় করছে। এদিকে ইরফান ঘুমিয়ে আছে গভীর ঘুমে। মেহজা কিছুতেই ঘুমাতে পারছেনা। বারবার মনে হচ্ছে ঘুমিয়ে পড়লেই সব শেষ! তাই দু’চোখের পাতা এক করতে পারছেনা।
মেহজা সর্বোচ্চ দেড় ঘন্টা ঘুমিয়েছিল। মস্তিষ্কের উপর সে এমন ভাবে নিয়ন্ত্রণ রেখেছিল যে মিনিটে মিনিটে তাকে মনে করিয়ে দিচ্ছিল তার কাজ। তাই সে কোনোরকম এলার্ম ছাড়াই যথাসময়ে ঘুম থেকে উঠতে পারল। ইরফানের রুম থেকে নিঃশব্দে সে বের হয়ে এলো। তারপর আশেপাশে চোখ বুলিয়ে কাউকে দেখতে পেল না। সাড়ে চারটা বাজছে এখন। কেউ এই সময়ে অবশ্যই জেগে থাকবেনা। তবুও সে ভ’য় পাচ্ছে। সদর দরজা পেরিয়ে এলো যখন তখনও তার মনে ভ’য়। তারপর সিঁড়ি বেয়েই নিজেদের ফ্ল্যাটের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। তারপর কল দিল রাদিফের নম্বরে। দুইবার রিং হতেই ওপাশ থেকে কলটা কেটে দেওয়া হলো। তারপর কিছু সময়ের মধ্যেই রাদিফ এসে দরজাটা খুলে দিল। মেহজাকে দেখে বলল,
-‘আসতে পারলি তবে! উফ! খুব টেনশন হচ্ছিল আমার। তুই ভেতরে আয়। ফ্রেশ হয়ে রেডী হয়ে নে তাড়াতাড়ি। আর সাবধানে থাকবি। তোর রুমে ছোট খালামণি শুয়েছে। টের পেয়ে যেতে পারে। ব্যাগটা নিয়ে আয়। আমার ওয়াশরুম ইউজ কর। আমার রুমে কেউ নেই এখন। অনেক ক’ষ্টে বাবাকে ছোট মামার রুমে পাঠিয়েছি। নইলে এখন বাবার জন্য আমি এখানে এসে দরজা খুলতে পারতাম কিনা স’ন্দে’হ আছে।’
মেহজা তার রুমে গিয়ে দেখল ছোট খালামণি শুয়ে আছে। তবে একটু নড়চড় করছে। মনে হচ্ছে এখনিই উঠে বসবে। মেহজা কোনো রকমে ব্যাগটা নিয়ে রুম ছেড়ে বের হয়ে এলো। রাদিফ ড্রয়িংরুমে বসে ছিল। মেহজা ভাইয়ের রুমে গিয়ে তাড়াতাড়ি চেঞ্জ করে এলো। তারপর রাদিফের সাথে বাসা থেকে বের হলো। লিফটে করেই নিচে নামল। রাদিফ তাড়াতাড়ি পার্কিং থেকে গাড়ি বের করল। দাঁড়োয়ানকে বলল গেইট খুলে দিতে। দাঁড়োয়ান গেইট খুলে দিতেই সে ছুট লাগায়। যত দ্রুত সম্ভব বোনকে এখান থেকে দূরে সরিয়ে দিতে হবে। তার মাথায় কেবল এই এক চিন্তা! এই মুহূর্তে ফ্লাইট পাওয়া গেল না। দুই ঘন্টা অপেক্ষা করতে হবে। তারা রি’স্ক ওঠালো। কারণ লঞ্চ এর ব্যাপারে সে সঠিক তথ্য জানেনা। ভাগ্য ভালো হওয়ার ফলে দেড় ঘন্টার মধ্যেই ফ্লাইটে উঠে গেল মেহজা। রাদিফ ভা’রা’ক্রা’ন্ত মনে তাকে বিদায় জানায়। মেহজা মনে মনে ভাই ছাড়া সবার সাথে সম্পর্ক ছি’ন্ন করার ইচ্ছা জ্ঞাপন করল। এই ভাবে চো’রের মতো পালিয়ে আসতে হবে তাকে সে কোনোদিন ভাবেনি। কোনোদিন ও না!
ইরফানের ঘুম থেকে উঠতে উঠতে ছয়টা বেজে গেল। আশেপাশে মেহজাকে দেখল না। ভাবল ওয়াশরুমে তবে সেখানেও তাকে পেল না। তারপর খেয়াল করে দেখে রুমের দরজা ফাঁক হয়ে আছে। সে রুম থেকে বের হলো। হাসনা ড্রয়িং রুমে কি কাজ করছিল আর তার মা আর চাচী সোফায় বসে আছে। তারা নিজেদের মধ্যে টুকটাক কথা বলছে। ইরফান তার মায়ের কাছে গেল। বলল,
-‘মা! মেহজা কোথায়?’
-‘ও কোথায় সেটা আমরা জানব কী করে! রুমে নেই?’
-‘না। রুমে, ওয়াশরুমে কোথাও নেই। দরজা খোলা ছিল। ভাবলাম এখানে হয়তো!’
-‘কই আমরা তো দেখলাম না। হাসনা! তুই দেখেছিস।’
হাসনা দেখেনি তাই মাথা নাড়ে। পরক্ষণেই বলল,
-‘দেহি নাই তয় বড় দরজা খোলা ছিল। আমি আইসা খোলা পাইছিলাম।’
মাহিমা বেগম বললেন,
-‘রাতে তো দরজা লাগানো ছিল। কী বলছিস! কে খুলবে?’
-‘ভাবি হয়তো দরজা খুইলা বাইর হইছে। হেগো বাসায় গেসে হয়তো।’
-‘অদ্ভুত! ও এখন এই সময়ে ওখানে যাবে কেন? বাসায় মেহমান আছে তারা কী ভাববে। যা তো ডেকে আন।’
-‘যাইতেছি।’
হাসনা ঝটফট দৌঁড়ে গেল। দশ মিনিট পর সে হাঁ’পা’তে হাঁ’পা’তে এলো। তার এই অবস্থা দেখে মাহিমা বেগম ধ’ম’কে বললেন,
-‘এত সময় লাগে ডেকে আনতে! আর এমন হাঁফাচ্ছিস কী কারণে? মেহজা কই?’
ইরফান সোফাতেই বসা ছিল মায়ের পাশে। সেও তাকিয়ে আছে হাসনার দিকে। হাসনা বলল,
-‘ভাবি পালাইছে। বাসাতেও নাই।’
এই কথা শুনে ইরফান স্তব্ধ হয়ে গেল। তার মুখ দিয়ে কথা বের হলো না! মনে হলো কেউ তার গলার স্বর কে’ড়ে নিয়ে গেছে।
৪৬.
আজকে আইটেমের চক্করে বেশ সময় লেগে গেছে কলেজে। মেহজার স্ন্যাকস আইটেম শেষ। আজ কিছু কিনতে হবে। কাছেই একটা দোকান আছে সেখান থেকে সে কেনাকাটা করে সবসময়। আজও কলেজ শেষে বের হয়ে সেখানে গেল। টুকটাক এটা সেটা কিনে যখন দোকান থেকে বের হলো তখন সে সামনের দিকে তাকিয়ে চমকে গেল। হঠাৎ করেই তার শরীর কেঁ’পে উঠল।
ইরফান মেহজার দিকে তাকিয়ে দূর থেকে হাত নাড়ে। মেহজা তাড়াতাড়ি পা চালায়। হোস্টেলে গিয়ে ঢুকতে পারলেই সে বাঁচে। তবে তা আর সম্ভব হলো না। ইরফান বড় কদম ফেলে মেহজার সামনে এসে দাঁড়ালো। রোদে দাঁড়িয়ে থাকায় তার মুখটা লাল হয়ে আছে। নাকে বিন্দু বিন্দু ঘাম দেখা যাচ্ছে। মেহজা কি বলবে বুঝতে পারছেনা। সে ইরফানকে এই মুহূর্তে আশা করেনি। দুই বছরে সে আসেনি যখন তখন আজ তাকে এখানে আশা করাটা তো বোকামি ছাড়া কিছু না। ইরফান মৃদু হেসেই বলল,
-‘কোথাও বসে কথা বলি? এখানে বেশ গরম!’
—————————
শীততাপ নিয়ন্ত্রিত একটা রেস্টুরেন্টে বসে আছে ইরফান আর মেহজা। মেহজা ইরফানকে লক্ষ্য করছে বেশ কিছু সময় ধরে। মাথায় তো অনেক প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। তবে আপাতত সে ইরফানকে দেখছে। লোকটা বেশ শুকিয়ে গেছে। তবে বয়স বাড়ার সাথে সাথে অন্যরকম একটা সৌন্দর্যও বৃদ্ধি পেয়েছে। মনে হচ্ছে দুই বছর বাড়েনি উল্টো কমে গেছে। আর লম্বাও লাগছে বেশ। হয়তো অনেকদিন পর দেখার ফলেই এমন লাগছে। ইরফান বলল,
-‘কী খাবে!’
-‘কিছু না।’
-‘খেতে হবে। দুপুর হয়েছে সেই কখন। কলেজ থেকেও বের হয়েছিলে একটু আগে। আমি সারাদিন কলেজ ক্যাম্পাসেই ছিলাম। তোমাকে বের হতে দেখিনি। অর্থাৎ তুমি খাওয়ার অবকাশ পাওনি।’
-‘হলে গিয়ে খেয়ে নিব। আপনার এত না ভাবলেও চলবে। আর আপনি এখানে কেন এসেছেন? হঠাৎ এখানে কী দরকার!’
-‘দরকার তো তুমি। আর হঠাৎ নয় সবসময় থেকেই।’
মেহজা তাচ্ছিল্যের হাসি হাসল। সে ইরফানের দরকার? মানে একদিক দিয়ে প্রয়োজন। প্রিয়জন হতে পারলনা। ইরফান ওয়েটারকে ডাক দিল। নিজে থেকে অর্ডার দিল দুজনের জন্য। মেহজা বারণ করল সে শুনল না। মেহজা উঠে যেতে নিলে ইরফান হাত ধরে ফেলে। শক্ত করেই ধরে রাখে। মেহজা এত লোকের মাঝে সিনক্রিয়েট করতে চাইল না। সে হাত ছাড়িয়ে নিতে চেষ্টা করতে থাকে আর বলতে লাগল,
-‘হাত ছাড়ুন। এটা কোন ধরনের অ’স’ভ্যতা?’
-‘তুমি চুপচাপ বসে থাকো। তবে আর করবনা।’
মেহজা স্থীর হলো। ইরফানও আস্তে করে হাতটা ছাড়ল। ছাড়া পেয়ে মেহজা নড়ে চড়ে বসল। ইরফান বলল,
-‘লাঞ্চ কমপ্লিট করে যেও। প্লিজ! আমি তোমার থেকে কিছু ঘন্টা চাইছি। ‘
-‘কেন?’
-‘আমার অধিকার আছে।’
-‘কীসের অধিকার! আমার উপর কেবল আমারই অধিকার আছে।’
-‘মনগড়া কথা বললে কোনো লাভ নেই। স্ত্রীর উপর স্বামীর ঠিক ততটাই অধিকার থাকে যতটা তার নিজের।’
-‘আপনাকে আমি স্বামী মানলেই তো?’
-‘তোমার মানতে হবে না। আমি মানি এতেই হবে।’
-‘দুই বছর পর এসব বলছেন এসব কথা! না মানে, বউ যে আছে তা দুই বছর পর মনে পড়ল?’
-‘তোমাকে কে বলল দুই বছর পর মনে পড়েছে? আমার তো প্রতিনিয়ত আমার বউকে মনে পড়ে। তার সাথে আমার বাসরটা কমপ্লিট হয়নি যে এখনো!’
মেহজা ল’জ্জা পেয়ে গেল ভীষণ। লোকটা এমন একটা কথা বলবে এই মুহূর্তে সে ভাবতেও পারেনি। সে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
-‘একদম বাজে কথা বলবেন না। খবরদার! আর একবার এমন কথা শুনি যদি তো আমি সাথে সাথে চলে যাবো।’
-‘তুমি খোঁচা মেরে কথা বলা বন্ধ করলেই আর বলব না।’
মেহজা বেশ রে’গে গেল। জোর গলায় বলতে গিয়েও পারিপ্বার্শিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে বলল,
-‘আমি খোঁচা মেরে কথা বলি?’
-‘হ্যাঁ এইতো একটু আগে বললে।’
-‘ভুল তো বলিনি। দুই বছর কোনো খবর নেই। দুই বছর পর এসে বলছেন অধিকারের কথা আর বাসরের কথা। ফালতু লোক একটা।’
-‘যত যা ইচ্ছা বলার বলো। আমি ছাড়া তোমার আর আছেই বা কে? তোমার রা’গ, অ’ভি’মা’ন, ক’ড়া কথার উপর আমারই তো অধিকার রয়েছে। বলো, আমি কিছু মনে করবনা।’
-‘চুপ করুন। আপনার কথা শুনতে ভালো লাগছেনা। আমি যাচ্ছি!’
মেহজাকে এবার ইরফান শক্ত গলায় বলল,
-‘বলেছি তো যাবে। আমি ধরে রাখব না তো। শুধু আমাকে কিছু ঘন্টা দাও। আমি তারপর চলে যাব।’
ওয়েটার খাবার দিয়ে গেল। ইরফান বলল,
-‘খাওয়া শুরু করো। আমার কিন্তু প্রচন্ড ক্ষুধা লেগেছে। কিন্তু আমি খাওয়া শুরু করতে পারবনা যতক্ষণ না তুমি শুরু করছ।’
-‘আপনার ক্ষুধা লাগলে আপনি খেয়ে নিন। আমি বারণ করেছি নাকি?’
-‘তুমি না খেলে আমি কিছুতেই খাব না।’
মেহজা কথা বললনা। সে বসে রইল আগের মতো। যখন দেখল ইরফান খাচ্ছে না তখন আর পারল না। ভদ্রতা করেই হোক আর যেভাবেই হোক সে নিজে ইরফানের প্লেটে খাবার তুলে দিল। তারপর বলল,
-‘এবার খাওয়া শুরু করুন।’
-‘তুমি নাওনি এখনো।’
-‘উফ! নিচ্ছি!’
মেহজা নিজের প্লেটেও খাবার নিল। তারপর সে খাবার মুখে দিতেই ইরফান খাওয়া শুরু করল। তার কথার কোনো নড়চড় হয়নি। মেহজা খেয়েছে বলেই সে খেল নয়তো বসেই থাকত। খাওয়া শেষে বিল পে করে ইরফান মেহজাকে নিয়ে বের হলো একটু ঘুরতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে। অবশ্য বেশ অনুনয় করে রাজি করাতে হয়েছিল।
একটা পার্কে গিয়ে দুইজন বসল। যদিও ইরফান এখানে বসতে চাইছিল না তবে মেহজার অন্য কোথাও যেতে আপত্তি থাকায় এইখানেই বসতে হলো। মেহজা বলল,
-‘আপনার হাতে আর এক ঘন্টা আছে। যত দ্রুত পারুন কিছু বলার থাকলে বলে ফেলুন।’
-‘আর একটু সময় বাড়ানো যায়না?’
-‘আর এক সেকেন্ডও বাড়ানো যাবেনা।’
-‘আচ্ছা! ঠিকা আছে।’
ইরফান বেশ কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,
-‘তুমি সেদিন চলা আসার পর অনেক কিছু ঘটে গেছে।’
-‘আমি জানতে চাইনা সেই কথা।’
-‘জানতে হবে। রিলেটিভসরা নানান কথা বলছিল। যদিও আমরা পাত্তা দেইনি তবে মা সেসব শুনে উত্তেজিত হয়ে পড়ে। সেখানেই অসুস্থ্য হয়ে তার অবস্থা খা’রা’প। তাকে হসপিটালাইজড করতে হয়েছিল। আমাদের তখন কী একটা পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছিল তা তোমাকে বলে বোঝাতে পারব না। হসপিটাল থেকে ফিরে মা অনুশোচনা করতে থাকল। তার বাড়াবাড়ির জন্য নাকি আমার জীবন ন’ষ্ট হলো। সে পুরো ব্যাপারটাতে তোমাকে দো’ষী করল। আমিও তোমাকেই তখন দো’ষা’রপ করেছিলাম রা’গের বশে। পরে যখন শান্ত হলাম তখন বুঝলাম আসলে দো’ষী তুমি নয় আমি। আমার জন্যই তোমার হাসি খুশি জীবনটা নড়বড়ে হয়ে গেল। তবুও কোথায় যেন একটু আটকে পড়তাম। তুমি তো অনুষ্ঠানের দিন নরমাল ছিলে। সবই ঠিক ছিল। পরবর্তীতে স্পষ্ট বুঝতে পারছিলাম যে সবই অভিনয় ছিল। নইলে তো আর ওইভাবে পালিয়ে…
মেহজা চোখ বন্ধ করে শ্বাস নিল। কথাটা শুনতে তার বি’র’ক্ত লাগে। ইরফান আবার বলা শুরু করল,
-‘আমি আরো আগেই আসতাম। মা বললেন আমি যেন তোমার কাছে আর না ফিরি। ডিভোর্সের চিন্তা করতে থাকল সে। আমি বহু ক’ষ্টে তাকে মানালাম। বাবাও বুঝিয়ে শুনিয়ে সেই চিন্তা মাথা থেকে সরালো। মা বললেন ডিভোর্স না হোক কিন্তু আমি নিজে থেকে যেন না আসি তোমার কাছে। তোমাকেই ফিরতে হবে। তারপর তো আর তুমিও গেলেনা। মায়ের মন ভেঙে আমিও আসতে পারলাম না।’
-‘আজ এলেন কেন তবে?’
-‘আমার শেষ কথাটা মি’থ্যে ছিল। আসলে আমার না আসার কারণটা মার কথা নয়। আমি নিজেই চাইনি। কারণ আমি বুঝেছি যে তুমি কেন চলে গিয়েছ। তুমি আমার ভালোবাসা বলে কিছু আছে কিনা পরীক্ষা করছিলে অবশ্য এখনও করছ। প্রথম প্রথম তুমি চাইতে আমি আসি যেন তোমার কাছে কিন্তু যখন দেখলে আমি আসছিনা তখন তুমি হয়তো ভেবেছ আমি আশা ছেড়ে দিব তোমার। কিন্তু আমি অন্য পরিকল্পনা করছিলাম। আমি ভেবেছিলাম তোমার কলেজের শেষ দিন এসে তোমাকে সারপ্রাইজ দিব। তখন আরো দুটো বছর বেশি পার হতো হয়তো। তবে তখন তুমি আমাকে কল্পনাও করতেনা। তখনকার সারপ্রাইজটা কিন্তু দারুন হতো! তবে আজ আসলাম অন্য এক কারণে। একপ্রকার মস্তিষ্কের সাথে যু’দ্ধ করেই আসলাম। একটা প্রশ্ন আমাকে এখনও ঘুমাতে দেয়না ঠিক মতো।’
-‘কোন প্রশ্ন?’
-‘তুমি সত্যিই কি আমাকে পরীক্ষা করার জন্য এমন করেছিলে? আমার প্রথম প্রথম এমনটা মনে হলেও পরবর্তীতে মনে হতো আরো কিছু কারণ আছে। আমাকে পরীক্ষা করার কারণটা অযৌক্তিক লাগে আমার নিজেরই কাছে।’
-‘আপনি বুদ্ধিমান। তাই ধরতে পেরেছেন। আপনি ঠিক বলেছেন। আসল কারণ আপনাকে পরীক্ষা করা ছিল না। বিয়ের পরদিন আপনার সাথে কথা বলে যখন নিজেদের বাসায় গিয়েছিলাম তখন আমি শুনতে পেয়েছিলাম আমার বাবা, জেঠামশাই আর আপনার বাবা মিলে ডিসকাস করছেন আমার ডাক্তারি পড়া বন্ধ করে দিবেন। তাদের কথা এখানে এতদূর আমাকে থাকতে দিবেন না। দরকার পড়লে প্রাইভেটে পড়াবে। অর্থাৎ, আমি আর কখনোই সেখান থেকে ফিরতে পারতাম না। এটা কত বড় অ’ন্যায় আবদার ভাবতে পারছেন?’
মেহজার গলা কেঁপে উঠল। কান্না সংবরণ করার চেষ্টা করে সে বলল,
-‘মেডিকেলে চান্স পাওয়া সোজা কথা নয়। এত ক’ষ্ট করে চান্স পেয়ে কয়েকমাস ক্লাস করে এখন নাকি আমাকে এখানেই থামতে হবে। এসবের কোনো মানে হয়? এটা কেমন স্বার্থপরতা?’
-‘তুমি আমাকে একটি বার বলতে।’
মেহজা চুপ করে থাকে। তা দেখে ইরফান মৃদু হাসে। বলল,
-‘তোমার পরীক্ষায় হয়তো আমি জিতে যাইনি। তবে তুমি নিজেও হেরে গিয়েছ। তুমি আমাকে একবার বিশ্বাস করলেনা। তুমি আমাকে ভালোবাসতে এখন বাসো কিনা সেটা আমি জানিনা তবে তখন তো বাসতে। ভালোবাসার মানুষকে কী একবার বিশ্বাস করা যেতনা?’
মেহজার চোখের কোণে অশ্রু জমে। সে বলল,
-‘ভ’য় হচ্ছিল। নিজের বাবাই তখন অন্য সুরে কথা বলছিল। সেখানে কাউকে বিশ্বাস করার সাহস হয়নি। তবে আরেকটা ব্যাপারও এখানে আছে। আমি সেদিন নিজ থেকে সাহস করে আসিনি। আসতামও না হয়তো। আমার ভাই যদি সেদিন নিজে থেকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে না দিত তবে হয়তো!’
-‘আমি রাদিফের ব্যাপারটা জানি। যাই হোক! এটাই আমার জানার ছিল। তোমার দেওয়া টাইম শেষ হতে এখনও কিছু সময় আছে। তবে তুমি ফিরে যেতে পারো এবার।’
-‘আপনি কোথায় যাবেন?’
-‘আমার এক ঘন্টার মধ্যে ফ্লাইট আছে। সোজা ঢাকা যাব।’
-‘এতদূর এসেছেন শুধু এই কথা জানতে?’
-‘হুম।’
-‘আচ্ছা। আমি তবে ফিরে যাচ্ছি। ভালো থাকবেন।’
-‘তুমিও ভালো থেকো।’
মেহজা চলে আসছিল। তার মন ভার হয়ে আছে। সে চাইছে ইরফান তাকে একবার ডাকুক। তার ইচ্ছাটা পূরণ করে ইরফান ডাকল। ডেকে বলল,
-‘মেহজা! আমি তোমার অপেক্ষায় থাকব। আশা করি তুমি আমার কাছে ফিরে আসবে। আমি কথা দিচ্ছি আমি কখনোই নিজের দায়িত্বের অবহেলা করবনা। আমি আগামীতেও নিজের দায়িত্ব-কর্তব্য পালন করে যাবো।’
মেহজা পেছন ফিরে তাকায়না। সে চলে এলো সোজা হলে ফিরল। তবে হলে ঢোকার আগে সে রাদিফকে কল দিল। দুইবার রিং হতেই কল রিসিভ হলো। রাদিফ বলল,
-‘কীরে! কী খবর?’
-‘ভাইয়া একটা সত্যি কথা বলবে?’
-‘সত্যি কথা! আচ্ছা বল কী কথা।’
-‘আমার প্রতিমাসে খরচ মি. ইরফান ইয়াজিদ পাঠায় তোমার মাধ্যমে। তাই না?’
রাদিফ চমকে উঠল। এই কথা মেহজার জানার কথা নয়। এই কথা কেবল তার আর ইরফানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। তবে ইরফান ও বলবেনা। কারণ সে নিজেই তো ব্যাপারটা গোপন রেখেছিল। তবে মেহজা জানতে পারল কীভাবে!’
-‘কী বলছিস তুই! কে বলল তোকে এসব?’
-‘ভণিতা করবেনা ভাইয়া। সত্যি করে বলো। টাকাটা উনি পাঠায়?’
রাদিফ আর কথা ঘুরালো না। তারও ব্যাপারটা লু’কাতে ভালো লাগছিল না। মেহজা যখন বুঝেই গেছে তখন আর মি’থ্যে বলে কী লাভ!
-‘হ্যাঁ, সেই শুরু থেকে এখন পর্যন্ত সে তোর খরচ চালাচ্ছে। কোনোদিন হেরফের ঘটেনি।’
মেহজা চট করে কল কেটে দিল। ইরফান যখন বলেছিল আগামীতেও দায়িত্ব পালন করে যাব তখনিই যা বোঝার বুঝে গেছে। কারণ তার ভাই বাবার সহায়তা ছাড়া একা খরচ চালাতে হিমশিম খেত। খাওয়ার কথা কারণ বাবা তাদের দুজনের উপরে রা’গ করে বলেছেন নিজেদের নিজেরা করে নিতে। ভাইও বাবার মুখের উপর কথা দিয়েছে বোনের পড়াশোনার জন্য, চলার জন্য তাকে এক কড়িও খরচ করতে হবেনা। অবশ্য সে মন থেকেই বলেছিল। পরবর্তীতে ইরফানের জে’দের সাথে হার মানতে হয়।
মেহজা চুপ করে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে। আর মনে মনে ভাবে,
-‘ফিরতে তো আমাকে হবেই। দিনশেষে পাখি তো নীড়ে ফিরেই যায়। যতই উড়ুক আর যতই ছুটতে থাকুক। ফিরতে তো হয়! ফিরতে হয়।’
(সমাপ্ত)
অবশেষে #গোধূলী_আকাশ_লাজুক_লাজুক সিজন ২ এর জার্নি শেষ হলো। আপনারা আজ অবশ্যই রেসপন্স করবেন। নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করবেন। সবাইকে এতদিন পাশে থাকার জন্য ধন্যবাদ! ভালোবাসা নিবেন।