গোধূলী_বেলার_স্মৃতি পর্ব-৩৯+৪০

0
3020

গোধূলী_বেলার_স্মৃতি
পর্ব-৩৯+৪০
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)

রুদ্রিকের সাথে কাজলকে দেখে যেনো ইশানি ও মাহির শকড হয়ে গেলো। তারা এইসময় কাজলকে
আশা করেনি। তার মানে কী রুদ্রিক সবকিছু জেনে গেছে। মাহির ইশানির দিকে চোখগরম করে তাঁকায়। যার অর্থ কাজল এখানে এলো কীভাবে? ইশানিও তাজ্জব বনে গেছে। সে ও ঠিক বুঝতে পারছে নাহ। রুদ্রিক ও কাজলকে দেখে সবাই যেনো নিশ্চিন্ত হলো।

মাহির রুদ্রিকের দিকে তীক্ন দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে বললো,

—-“তোমরা এখানে এসে কী ভেবেছো? তোমরা কী ভেবেছো আজকে আমাকে এই কম্পানির পাউয়ার নিতে আটকে দিবে?”

রুদ্রিক নিজের ব্লাক সানগ্লাস্টা খুলে, কিছুটা শান্ত গলায় বলে,
—“মাহির আহমেদ আমি কিছুক্ষন আগে একটা কথা বলেছিলাম। লাইফে ইজ আ গেম। এই গেমে প্রতিটা ধাপে টুইস্ট থাকে। এইবার আপনি দেখবেন রাফসিন শেখ রুদ্রিকের গেমের আসল টুইস্ট। প্রমাণগুলো পুড়িয়ে ফেললেই কী এতো সহজে অতীতের সব সত্য লুকানো যায় না। সো বি কেয়ারফুল। ”

রুদ্রিকের কথা শুনে ইশানি শেখ ও মাহির আহমেদ কুলকুল করে ঘামতে থাকে।

রুদ্রিক তাদের দিকে টিস্যু এগিয়ে দিয়ে বললো,

—“এখুনি ঘামছেন কেনো? এখনো তো অনেক কিছু বলার বাকি। ”

ইশানি ম্যাম ও মাহির আহমেদের অবস্হা বুঝতে পেরে আমি তাদের দিকে মুঁচকি হেঁসে বললাম,

—” এমন সময়ে আমাকে বোধহয় আপনারা আশা করেনিনি তাইনা? আহা ভূল টাইমে এসে গেছি আমরা রুদ্রিক। ”

আমার কথার প্রতিউত্তরে রুদ্রিক ও কিছুটা ঠাট্টার সুরে বললো,

—“একদম ঠিক বলেছিস কাজল, মাহির আহমেদ এবং ইশানি শেখ আমাদের এই মূহুর্তে একদম এক্সপেক্ট করেনি। তারা তো ভেবেছিলো খুব সহজেই আজকেই তারা শেখ গ্রুপ অফ কম্পানির পাউয়ার নিয়ে নিবে। বাট আমরা এসে বোধহয় সব প্ল্যানের বারোটা বাজালাম।
রাফসিন শেখ রুদ্রিক ও তার ওয়াইফ কাজলরেখা শেখ থাকতে এই কম্পানির পাউয়ার আপনি কীভাবে নিবেন? সবকিছু এতোটা সহজ? ”

সাদি ভাইয়া এইবার মুখ খুলে বললেন,

—“রুদ্রিক তুই কোথায় ছিলিস?”

সিথি আমার কাছে এসে বললো,

—“কাজল তোকেও ফোনে পাওয়া যাচ্ছিলো নাহ। জানিস কতটা চিন্তায় ছিলাম আমি। সারাদিন কোথায় ছিলিস তুই? ”

আমি ইশানি ম্যামকে উদ্দেশ্য করে বললাম,

—“ইশানি ম্যাম হয়তো ভালো করে বলতে পারবে। কেননা উনিই তো আমাকে সারারাত বদ্ধ ঘরে আমাকে আটকিয়ে রেখেছিলো।”

—-“কিন্তু ইশানি আপাই কেনো করেছিলো? ”

দিয়া পিপির প্রশ্নে বড় সাহেব ক্ষিপ্ত গলায় বললেন,

—“ইশানির মতো মানুষের কোনো বিশ্বাস নেই। ও নিজের স্বার্থের জন্যে সবকিছু করতে পারে।”

ইশানি শেখ কি বলবে বুঝতে পারছে না।

লাজুক বলে উঠলো,

—“রুদ্রিক তোমরা কিছু প্রমাণের কথা বলছিলি। কিসের প্রমাণ ছিলো? ”

রুদ্রিক ইশারা করে আমাকে চিঠিটা দিতে বলে। আমি রুদ্রিকের দিকে চিঠিটা দিয়ে বললাম,

—“এই চিঠিটা কুঞ্জ পিপির লেখা। যাতে স্পষ্ট লেখা রয়েছে কে তার সন্তানের পিতা এবং কে তাকে আত্বহত্যা করার জন্যে প্রতিনিয়ত বাধ্য করেছে। ”

আমার কথা শুনে বড় সাহেব কান্নামিশ্রিত গলায় বললেন,

—“রুদ্রিক তো তার ফুপিয়াম্মুর মৃত্যুর জন্যে আমাকে এবং জেসমিনকে দায়ী করে। যদিও আমাদের ও দোষ ছিলো, কিন্তু সেসময় আমাদের ও মাথা ঠিক ছিলো নাহ। কুঞ্জ কিছুতে-ই’ তার সন্তানের বাবার নাম বলছিলো নাহ। তার মধ্যে আবার সে সন্তানকে এভোয়েডও করতে চাইছিলো নাহ। তাই আমরা তখন হিতাহিতজ্ঞান শূন্য হয়ে কুঞ্জের প্রতি অমানবিক আচরণ করে ফেলেছিলাম। ”

কথাটি বলে আফজাল শেখ কেঁদে উঠে।

দিয়া আফজাল শেখকে ধরে বলে,

—“তুমি একটু শান্ত হও ভাইয়ূ। ”

আমি মাহির আহমেদের দিকে তাঁকিয়ে বললাম,

—-“এই লোকটাই হলো কুঞ্জ পিপির সন্তানের বাবা। কুঞ্জ পিপি দিনের পর দিন ঠকিয়েছে এই লোকটাই।”

ইশানি ও রুদ্রিক ছাড়া বাকি সবাই কথাটি শুনে থম মেরে রইলো।

রুদ্রিক চিঠিটাকে শক্ত করে চেপে ধরে। মাহির থমথমে গলায় বললো,

—“এইসব কি ছাইপাশ লেখা রয়েছে। এতে কীভাবে প্রমাণ হয় আমি কুঞ্জের সন্তানের বাবা ছিলাম? দেখো গিয়ে কত পুরুষের সাথে অবৈধ সম্পর্ক করে শেষে আমাকে ফাঁসানোর জন্যে এইসব চিঠি লিখে গেছে। চরিত্রহীন মেয়ে-ছেলে একটা। ”

রুদ্রিক কথাটি শুনেই রাগে মাহিরের নাকে জোড়ে ঘুষি দেয়। মাহির ছিটকে পড়ে যায়। রুদ্রিক নিজের শার্টের ফ্লড করে মাহিরের পেটে লাত্থি দিতে দিতে বললো,

—“তোর সাহস কী করে হলো? আমার ফুপিয়াম্মুকে চরিত্রহীন বলেছিস তুই? তোর যে জিহব্বা দিয়ে ‘ চরিত্রহীন ‘ শব্দটি উচ্চারণ করেছিস, সেই জিহব্বা আমি টেনে ছিড়ে ফেলবো। ”

রুদ্রিক ইচ্ছামতো মাহিরকে ঘুষি দিচ্ছে। মাহির ব্যাথায় আর্তনাদ করছে।

—-” রুদ্রিক কি করছিস কী মাহির তো মরে-ই’ যাবে.

ইশানি ম্যাম কথাটি বলে এগোতে নিলে আমি উনার হাত ধরে বলললাম,

—“ওই লোকটার জন্যে আর কত নীচে নামবেন আপনি ইশানি ম্যাম? ভালোবাসাতে আপনি এতোটা অন্ধ হয়ে গেলেন? কীভাবে? ”

আমাদের কথার মাঝেই পুলিশ চলে আসে। অফিসার এসে কোনরকম রুদ্রিককে আটকিয়ে বলে,

—“কি করছেন কী মিঃ রুদ্রিক। আইন নিজের হাতে এইভাবে তুলে নিবেন নাহ। ”

রুদ্রিক জোড়ে জোড়ে নিঃশ্বাস নিতে থাকে। রাগে যেনো তার কান দিয়ে ধোঁয়া বের হচ্ছে। মাহিরকে খুন করে ফেলতে পারলে সে শান্ত হতো।

মাহির কোনরকম উঠে দাঁড়িয়ে অফিসের কাছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হেঁটে গিয়ে বললো,

—“দেখুন অফিসার কীভাবে আমার উপর মিথ্যে দায়ভার দিয়ে দিচ্ছে। কিসব চিঠি দিয়ে বলছে আমি নাকি কুঞ্জের আত্বহত্যার পিছনে দায়ী। এইসব চিঠি বানানো যায়, হাতের লেখা নকল করে। ”

রুদ্রিক উচ্চস্বরে হেঁসে উঠে।

মাহির অবাক হয় রুদ্রিকের কান্ডে। রুদ্রিক খানিক্টা হেঁসেই’ বললো,

—“আমি যশোরে গিয়ে সব ইনফরমেশন কালেক্ট করে এসেছি। ”

পুলিশ এগিয়ে এসে বলল,

—“মাহির আহমেদ আপনি যশোরের হোটলে প্রায় সময় মিস কুঞ্জের সাথে বসবাস করতেন। সবাই তাকে আপনার স্ত্রী বলেই জানতো। রিসেপশনিস্টের কাছে আপনার এবং মিস কুঞ্জের সাইন ও রয়েছে।”

মাহির ও ইশানি থমকে যায়।

রুদ্রিক মাহিরের কাছে গিয়ে মাহিরের শার্টের কলার ঠিক করতে করতে বললো,

—“রাফসিন শেখ রুদ্রিক আসলে তা তা তোর কল্পনার বাইরে। ”

আফজাল শেখ কোনোরকম উঠে দাঁড়িয়ে বললো,

—-“আমাকে পুরো ঘটনাটা খুলে বলো, রুদ্রিক। ”

রুদ্রিক এইবার শুরু থেকে বলা শুরু করে যা কুঞ্জ তার ডাইরিতে লিখে গিয়েছিলো।

রুদ্রিকের ভাষ্যমতে কুঞ্জ তার ডাইরিতে লিখে গিয়েছিলো,

মাহিরের সাথে তার পরিচয় যশোরের একটি ভার্সিটিতে হয়। কুঞ্জ যশোরের ভার্সিটিতে পড়াশোনা করতো।
মাহির সেখানে এমনি ঘুরতে গিয়েছিলো। কুঞ্জকে প্রথম দেখাতেই মাহিরের পছন্দ হয়ে যায়। সে কুঞ্জকে প্রপোজও করে বসে। কুঞ্জ তা এক্সপেক্টও করে ফেলে। মাহিরের তখন তার স্ত্রীর সাথে ঝামালা হচ্ছিলো বলে, সে কুঞ্জকে ব্যবহার করতে শুরু করে। মাহির জানে কুঞ্জ ইশানির বোন কিন্তু কুঞ্জ জানতো নাহ মাহির বিবাহিত এবং তার-ই’ বোনের স্বামী।

রুদ্রিক আবারোও বলে উঠে,

—“মাহির লোক টা ফুপিয়াম্মির.মিব্রেনওয়াশ এমনভাবে করছিলো যার কারণে, সে নিজের সর্বোচ্চ বিলিয়ে দিয়েছিলো। ফুপিয়াম্মুর তখন আবেগের বয়স ছিলো। ভালোবেসে ভূলকেও সঠিক মনে করতো। তার সুযোগ নিয়েছে মাহির আহমেদ। ফুপিয়াম্মু যখন তার সন্তানের কথায় মাহিরকে জানায়,তখন মাহির তা অস্বীকার করে এবং প্রতিনিয়ত মানষিক অত্যাচার করতো,যার ফলে ফুপিয়াম্মু আত্বহত্যার পথ বেঁচে নিয়েছিলো সেদিন।”

—-“ইশানি আপাই কী প্রথম থেকে সব জানতো? ”

দিয়ার প্রশ্নে রুদ্রিক বললো,

—“নাহ, ফুপিয়াম্মু মারা যাওয়ার পর ইশানি শেখ তা জানতে পারেন। তিনিও মাহির আহমেদের ভালোবাসায়ে এতোটা অন্ধ হয়ে গিয়েছিলেন যে,নিজের বোনের খুনিকে বাঁচানোর জন্যে সর্বোচ্চ চেস্টা করেছে। এমনকি ডির্ভোসের একটা নাটক করে মাহির আহমেদকে এইসবের থেকে দূরে পাঠিয়ে দিয়েছে, যেনো মাহিরের প্রতি কারো বিন্দুমাত্র সন্দেহ না হয়। ”

আফজাল শেখ আর কিছু সহ্য করতে পারছে নাহ। তিনি চেয়ারে বসে পড়েন। এতো কিছু হয়ে গেছে অতীতে।

পুলিশ অফিসার এইবার মাহিরের দিকে বন্ধুক তাঁক করে বলে,

—“আপনি যে মিস কুঞ্জকে আত্বহত্যার জন্যে প্রলোচন দেখিয়েছেন,তার প্রমানও মিঃ রুদ্রিক আমাদের দিয়েছেন। আপনার ও মিস কুঞ্জের ফোনআলাপের রেকর্ড মিস কুঞ্জের ফোনে ছিলো। যা মিঃ রুদ্রিক সংগ্রহ করেছেন। সো ইউ আর আন্ডার এ্যারেস্ট মিঃ আহমেদ। তা ছাড়াও শেখ গ্রুপ অফ কম্পানির পাউয়ার প্রতারণা করে নিতে চেয়েছেন। তাই আপনার ও ইশানি শেখের নামে ফ্রড কেস করা হয়েছে। ইউ আর আন্ডার এ্যারেস্ট মিঃ আহমেদ।”

মাহির এইবার সব দিক দিয়ে ফেঁসে গেছে। সে বুঝতে পারছে নাহ, এইবার সে কী করবে?

আমি এগিয়ে এসে বললাম,

—“আপনি এইবার কোথাও পালাতে পারবেন নাহ মিঃ আহমেদ। ”

তখনি ফায়ারিং করে। গুলির শব্দ কানে আসতেই…..

চলবে কী?

[কালকে থেকে আমার এক্সাম শুরু। জানি আজকের পার্ট ছোট এবং অগুছালো হয়ে গেছে। কি আর করবো? অনেক প্রেশারের মধ্যে আছি। ফোন ধরতেও পারছি নাহ। কোনোরকম পার্টটা লিখিছি। আশা করি সবাই বুঝবেন]

#গোধূলী_বেলার_স্মৃতি
#পর্ব-৪০
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)

গুলির শব্দ কানে আসতেই আমরা পিছনে তাঁকিয়ে দেখি, ইশানি ম্যাম রুদ্রিকের দিকে বন্ধুক তাক করে আছে। ইশানি ম্যাম উপরে ফায়ারিং করেছেন। গুলি গিয়ে সোজা ছাদের দেয়াল বেঁধ করে চলে গেছে। ইশানি রুদ্রিকের দিকে বন্ধুক তাক করেই বলল,
–“রুদ্রিক মাহিরকে ছেড়ে দে নাহলে কিন্তু আমার থেকে খারাপ কেউ হবে নাহ। ”

ইশানির কথা শুনে মাহির কিছুটা নিশ্চিন্ত হয়।
ইশানির কথায় সবাই ঘাবড়ে যায়। আমি রুদ্রিকের কাছে যেতে নিলে,রুদ্রিক আমাকে থামিয়ে দিয়ে, ইশানি শেখের দিকে তাঁকিয়ে বললো,

—“ইশানি শেখ আপনি কী ভেবেছেন? এইসব করে আপনি মাহির আহমেদকে বাঁচাতে পারবেন? তাহলে আপনি ভূল ভাবছেন। ”

আমি রুদ্রিককে উদ্দেশ্য করে কান্নামাখা গলায় বললাম,

—“রুদ্রিক উনার মাথা ঠিক নেই। তুমি সরে এসো। উনি তোমাকে গুলি করতেও একটিবার ভাব্বে নাহ।”

সিথিও ভয় পেয়ে বলে উঠলো,

—“ভাইয়ূ তুমি সরে এসো। ”

—-“রুদ্রিক আমি কিন্তু সত্যি গুলি করে দিবো যদি মাহিরকে ছেড়ে না দাও। ”

কথাটি বলে ইশানি শেখ বন্ধুকের ট্রিগারটা আরো চেপে ধরে।

আমি বুঝে গেলাম আমাকেই কিছু একটা করতে হবে। আমি লুকিয়েই ইশানি শেখের পিছনে গিয়ে, উনার হাত থেকে বন্ধুকটা নিয়ে নিলাম। সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ মহিলারা ইশানি শেখকে ধরে ফেললো।

মাহির পালাতে নিলে, পুলিশরা ধরে ফেলে।

রুদ্রিক আমার কাছে এসে আমার গালে হাত রেখে বলে,

—“তুই ঠিক আছিস তো কাজল বল আমাকে? ”

আমি মাথা নাড়িয়ে রুদ্রিককে জড়িয়ে ধরলাম।

ইশানি শেখ নিজেকে ছাড়ানোর চেস্টা করলেই আফজাল শেখ এসে ইশানিকে ঠাটিয়ে চর বসিয়ে দেয়।

ইশানি শেখ নিজের গালে হাত দিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে।

আফজাল শেখ রাগে ফোস করে উঠলেন। ইচ্ছে করছে আরো কয়েকটা থাপ্পড় বসিয়ে দিতে। আফজাল শেখ রাগ নিয়েই বললেন,

–“এতোটা খারাপ হয়ে গেলে তুমি? এতোটা ভালোবাসয়ে অন্ধ হয়ে গেলে যে নিজের বোনের খুনিকেও পর্যন্ত বাঁচানোর জন্যে উঠেপড়ে লেগেছো। ছিহ ইশানি ছিহ। ”

ইশানি শেখ আফজাল শেখের চোখের দিকে চোখ রেখে বলল,

—“ভাইয়ূ তুই আগে বল কুঞ্জ কী আদোও আমার আপন বোন। ”

ইশানি শেখের কথায় অফিস রুমে যেনো আরেকদফা উত্তেজনা শুরু হয়ে গেলো।

রুদ্রিক বলে উঠলো,

—“মানে কী? ”

—-“তা ভাইয়ূকেই জিজ্ঞাসা করো। ”

ইশানি কথায় আফজাল শেখ নিজের চশমা খুলে আকাশপানে তাঁকিয়ে বললো,

—“হুম কেউ জানে নাহ কুঞ্জ আমাদের নিজের বোন নাহ। আমার বাবার বন্ধুর মেয়ে। কুঞ্জের মা মারা যাওয়ার পরে কুঞ্জের বাবা আমার বাবার কাছে তার মেয়ের দায়িত্ব দিয়ে দিয়েছিলো। কেননা কুঞ্জের সৎ মা কুঞ্জকে সহ্য করতে পারতো নাহ। ছোট্ট কুঞ্জ আমাদের বাড়িতে বড় হতে লাগলো। আমার বাবা কিংবা আমরা কুঞ্জকে কখনো বুঝতে দিতাম না যে সে এই বাড়ির সন্তান নাহ। আমরা তাকে সবসময় আগলে রাখলাম। খুবই ভালোবাসাতাম। বাবা মারা যাওয়ার আগে বাবা কুঞ্জের দায়িত্ব আমাকে এবং ইশানিকে দিয়ে গিয়েছিলো।আমি ভেবেছিলাম ইশানিও হয়তো কুঞ্জকে নিজের বোন মনে করে,কিন্তু ইশানি আমার ধারণা ভূল প্রমাণ করে দিলো। ”

সবাই নীরব হয়ে রইলো।

ইশানি ম্যাম বলে উঠলেন,

—“তো কী করবো? কুঞ্জ আমার আপন বোন নয়, কিন্তু মাহির আমার স্বামী যাকে আমি ভালোবাসি।”

আমি রুদ্রিককে ছেড়ে ইশানি ম্যামকে উদ্দেশ্য করে বললাম,

—“ভালোবাসা খারাপ নয় ইশানি ম্যাম, কিন্তু ভূল মানুষকে আকড়ে ধরা কিংবা ভালোবাসাটা অন্যায়।
ভূল মানুষকে ভালোবেসে শুধু জীবনের কষ্টটাই পাবেন। দেখুন নাহ সেই কষ্ট কিন্তু আপনি ঠিকই পাচ্ছেন। আজকে আপনার পরিবার আপনাকে ঘৃণা করছে। ”

আমাকে থামিয়ে রুদ্রিক এগিয়ে এসে বললো,

—“কাকে কি বলছিস কাজল? এদের কাছে নিজেদের স্বার্থ ছাড়া আর কোনো কিছু বড় নয়।
মানলাম ফুপিয়াম্মু ইশানি শেখের আপন বোন নয়,কিন্তু ফুপিয়াম্মু এই ইশানি শেখকে কী কম ভালোবাসতো? আমি তো সবকিছুই নিজের চোখে দেখেছি। ”

আফজাল শেখ ইশানি শেখের দিকে তাঁকিয়ে কঠোর
গলায় বললো,

—“ইন্সপেক্টর ইশানি ও মাহিরকে এখুন গ্রেফতার করুন এবং দেখবেন ওদের যেনো কঠোর থেকে কঠোরতম শাস্তি হয়। ”

আফজাল শেখের কথা শুনে পুলিশ ইশানি ও মাহিরকে ধরে নিয়ে যায়৷ যাওয়ার আগে মাহির সকলের দিকে তাঁকিয়ে বললো,

—“সবাইকে সে দেখে নিবে। ”

________________

আমরা শেখ বাড়িতে ঢুকতেই বড় ম্যাম সাহেব ছুটে এসে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,

—“কাজল মা তোরা ঠিক আছিস তো? ”

আমি হাঁসিমুখে বললাম,

—“আমরা একদম ঠিক আছি। ”

সাদি ভাইয়া ও লাজুক আংকেল ও ঢুকলো।

সাদি ভাইয়া রুদ্রিকের কাঁধে চাপড়ে বলল,

—“সত্যি তুই রুদ্রিক আজকে তুই কি করছিস বুঝতে পারছিস তো? তোর জন্যে আজকে মাহিরের মতো লোক ধরা পড়লো। ”

বড় সাহেব ও রুদ্রিকের কাছে গিয়ে বললো,

—“সত্যি রুদ্রিও তুমি না থাকলে কি যে হতো? তুমি আমাকে কিংবা তোমার মাকে তুমি যতই ঘৃণা করো নাহ কেনো? একটা কথা তো তুমিও মানবে রুদ্রিক। এই শেখ পরিবারের প্রতি তোমারাও ভালোবাসা রয়েছে। ”

রুদ্রিক ছলছল চোখে তার বাবা ও মায়ের দিকে তাঁকিয়ে বললো,

—“আপনারা আমার বাবা-মা। আপনাদের জন্যে আমি এই পৃথিবীর আলো দেখেছি। আপনাদের কী করে ঘৃণা করতে পারি আমি? আজ তো সবকিছুই আমার কাছে পরিষ্কার। আজ আমি বড় হয়েছি এবং বুঝতে শিখেছে যে আমি যদি আপনাদের জায়গা থাকতাম, তাহলে হয়তো আমিও হয়তো এইরকমই রিয়েক্ট করে ফেলতাম। ”

সিথির দিকে তাঁকিয়ে কথাটি বললো রুদ্রিক।

সাদি ভাইয়া সিথিকে উদ্দেশ্য করে বললো,

—“সিথি তুমি এখনো বুঝতে পারলে নাহ? রুদ্রিক বলতে চাইছে তুমি যদি কুঞ্জ পিপির মতো ভূল একটি কাজ করতে তাহলে হয়তো রুদ্রিকও এইরকম রিয়েক্ট করতো। ”

সিথি সাদির কথা শুনে কিছুটা তাচ্ছিল্যের সুরেই বলল,

—“আমাদের সম্পর্ক কী আর পাঁচটা ভাই-বোনের মতো? ভাইয়ূ তো আমাকে সহ্য করতে পারেই নাহ। ”

সিথির কন্ঠে তীব্র অভিমান প্রকাশ পাচ্ছে। যা রুদ্রিকের ভিতরের কষ্ট দ্বিগুন বাড়িয়ে দিচ্ছে।

সাদি খানিক্টা হেঁসেই বলল,

—“হাইরে পাগলি তুমি শুধু তোমরা ভাইয়ের বাইরেরটাই দেখলে? ভিতরে দেখার চেস্টা করলে নাহ? জানো তোমার ভাইয়ূ তোমাট ব্যাপার নিয়ে কতটা পসিসিভ ছিলো? ভার্সিটিতে কোন ছেলে তোমার দিকে চোখ তুলে তাঁকানোর সাহস পেতো না কেন? শুধুমাত্র রুদ্রিকের জন্যে। কেউ যদি ভূলেও তোমার দিকে চোখ তুলে তাঁকাতো তাহলে তো রুদ্রিক তাকে সোজা হসপিটালেই পাঁঠিয়ে দিতো। রুদ্রিক বেশিরভাগ সময় তোমার জন্যই মারামারি করতো,তাও তোমরাই চোখের আড়ালে। এরপরেও বলবে রুদ্রিক তোমাকে সহ্য করতে পারেনা?”

সাদি ভাইয়ার কথা শুনে সিথি রুদ্রিকের কাছে ছুটে গিয়ে, রুদ্রিককে জড়িয়ে ধরে।

—-“ভাইয়া সরি।”

কান্নার সুরে কথাটি বললো সিথি।

—“ডোন্ট সরি। আম সরি। আমি আসলে বাবা-মায়ের প্রতি অভিমানের জন্যে তোকে সবসময়
দূরে সরিয়ে রেখেছি। আমি সত্যি সরিরে বোন। ”

রুদ্রিকের কথা শুনে সিথি এইবার কেঁদেই দিলো।

বড় মেমসাহেব এইবার বলে উঠলেন,

—“সব দোষ আমার। আমি সবসময় রুদ্রিককে অবহেলা করেছি। আমি ভেবেছি রুদ্রিক ছেলে ও নিজেকে ঠিক সামলাতে পারবে কিন্তু আমি ভূল
আমি ভেবেই দেখেছি আমার ছোট্ট ছেলেটারও তার মাকে প্রয়োজন। তার শাস্তি ও পেয়েছি আমি। ”

জেসমিন শেখ কেঁদে দিলেন। রুদ্রিক এইবার তার মাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে বলল,

—“মা আমিও খুব সরি৷ বাবা সরি৷ ”

নিজের ছেলের মুখে এতোবছর পর বাবা এবং মা ডাক শুনে, রুদ্রিকের বাব-মা তাকে জড়িয়ে ধরে। সিথিও জয়েন করে।

আমার চোখ যেনো জুড়িয়ে যাচ্ছে। এতোবছরের অভিমান অবশেষে শেষ হলো তবে।

দিয়া পিপি এইবার কোমড়ে হাত দিয়ে বলল,

—“আজকে এতোটা খুশির দিনে একদম কান্নাকাটি না ওকে? চলো আমরা সবাই মিলে একটা সেল্ফি তুলে। সাদি এন্ড নাঁকবোঁচা এ্যাসিস্টেন্ট তোমরাও আমাদের সাথে জয়েন হও। ”

দিয়া পিপির কথা শুনে সবাই হেঁসে উঠলো।

সবাই একসাথে অনেকগুলো সেল্ফি তুললাম।

🌼🌼🌼🌼🌼🌼🌼🌼🌼

________

আমি আয়নায় দাঁড়িয়ে চুল মুছে যাচ্ছি। তখনি পিছন থেকে রুদ্রিক আমাকে জড়িয়ে ধরে, আমার ঘাড়ে চুমু খায়। আমি কেঁপে উঠলাম। রুদ্রিক আমার আরো কাছে আসতে যাবে তখনি আমি তার পেটে গুতা মেরে বললাম,

—“সবসময় দুষ্টুমি তাইনা? রাতে তো কম দুষ্টুমি করোনা। ”

রুদ্রিক এইবার কিছুটা বিরক্ত হয়েই বলল,

—“কাজল তোর মনে হয় আমার রোমান্টিক মুডের বারোটা না বাজালে ভালো লাগে নাহ।”

আমি মুখ বেঁকিয়ে বললাম,

–“বেশ করেছি। ”

রুদ্রিক কিছু বলতে যাবে তার আগেই রুদ্রিকের ফোন বেজে উঠে। রুদ্রিক ফোনের স্ক্রিনে তাঁকিয়ে দেখে ‘পুলিশ স্টেশন ‘ নামটি।

বাকীটা আগামী পর্বে…

চলবে কী?

[জানি আজকের পার্ট বেশ অগাছালো হয়ে গেছে। আসলে সারাদিন এক্সাম দিয়ে আমি ভীষণ টায়ার্ড। তার মধ্যে ঘরভর্তি মেহমান]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here