গোধূলী_বেলার_স্মৃতি
পর্ব- ৪১
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
রুদ্রিকের ফোনে হঠাৎ ‘পুলিশ স্টেশন’ নামটি দেখে আমরা দুজনেই কিছুটা চিন্তিত হলাম। রুদ্রিক ফোনটা রিসিভ করে আড়ালে চলে গেলো। আমার বড্ড চিন্তা হচ্ছে পুলিশ স্টেশন থেকে আবার কেন ফোন করলো? আমার ভাবনার মাঝেই রুদ্রিক শুকনো মুখ নিয়ে এসে বলল,
–“মাহির আহমেদকে কোর্টে নিয়ে যাওয়ার সময়;মাহির আহমেদ পালিয়েছে। ”
রুদ্রিকের কথা শুনে আমি ভীতু গলায় বললাম,
—“কি বলছো কী? কীভাবে হলো এইসব? ”
—-“এতো ভয় পাচ্ছিস কেন? ”
—“ভয় পাবো না? মাহির আহমেদ কি বলে গিয়েছিলো শুনো নি? সে নিশ্চই এইবার আমাদের পরিবারের ক্ষতি করতে চাইবে। ”
রুদ্রিক আমাকে চিন্তিত হতে দেখে শুকনো হেঁসে বলল,
—-“কাজল তুই এতো চিন্তা করিস না। পুলিশ মাহির আহমেদকে ঠিক ধরে ফেলবে। মাহিরকে তার যোগ্য শাস্তি পেতেই হবে। আমার ফুপিয়াম্মুর খুনিকে এতো সহজে আমি ছেড়ে দিবো নাহ। তাছাড়া তোর রুদ্রিক আছে নাহ? আমার উপর একটু ভরসা রাখ। ”
আমি রুদ্রিকের হাত ধরে চুমু খেয়ে বললাম,
—“তুমিই তো আমার সব রুদ্রিক। তোমার উপর আমি সবথেকে বেশি ভরসা করি এন্ড সবথেকে বড় কথা কী জানো? তোমাকে যতটা ভরসা করি হয়তো নিজেকেও এতোটা ভরসা করিনা। ”
রুদ্রিক আমার দিকে ঝুঁকে বলল,
—“ভালোবাসা এমনই। ভালোবাসলে মানুষ নিজের ভালোবাসার মানুষকে ভরসা করে।নিজের থেকে অনেক বিশ্বাস করে। নিজের সকল দায়িত্ব সেই ভালোবাসার মানুষটির হাতে তুলে দেয়। তাইতো ভালোবাসাটা সুন্দর। ”
রুদ্রিকের কথা শুনে আমি মুঁচকি হাঁসলাম। সত্যি ভালোবাসা সুন্দর।
_____
ইশানি চুল খামছে ধরে লকাপে বসে আছে। মাহির কী তাকে ছেড়ে পালিয়ে গেলো? নাহ নাহ মাহির ফিরে আসবেই। ইশানির জন্যে হলেও মাহির ঠিক ফিরবে। ইশানির মাথায় শুধু একটাই কথা ঘুড়ছে পুলিশ যদি মাহিরকে ধরে ফেলে তাহলে কী হবে?
___________
আমাদের কথার মাঝেই বড় মেমসাহেব নীচ থেকে ডেকে বললেন,
—“রুদ্রিক-কাজল, কোথায় তোরা? তাড়াতাড়ি নীচে আয় তো। ”
বড় মেমসাহেবের ডাক শুনে আমি ও রুদ্রিক দুজনেই নীচে গিয়ে দেখি, বড় ম্যামসাহেব দিয়া পিপির দিকে সরু চোখে তাঁকিয়ে আছে। সিথি মিটিমিটি হাঁসছে।
আমি বলে উঠলাম,
—“বড় ম্যামসাহেব কি হচ্ছে এখানে?
বড় ম্যামসাহেব তেড়ে এসে বললেন,
—“তোর কি এখন থাপ্পড় খেতে ইচ্ছে করছে? একটা কথা বললে কানে যায়না? কতবার বলেছি মা বলে ডাকতে? ”
আমি কান ধরে কিছুটা কিউট ফেস করে বলে উঠলাম,
—“সরি মা। আর এমনটা হবে নাহ। ”
আমার কিউট ফেস দেখে মা এইবার হেঁসেই দিলো।
—“আচ্ছা আমাকে কেউ বলবে? এখানে আসলে হচ্ছে টা কী? ”
রুদ্রিকের প্রশ্নে সিথি দিয়া পিপিকে মৃদ্যু ধাক্কা দিয়ে বলল,
—“আমাদের দিয়া পিপি যে ডুবে ডুবে জল খায় সেই খবর রাখো তোমরা? ”
—“মানে? “( রুদ্রিক বলল)
মা হাঁসিমুখে এগিয়ে এসে বলল,
—” মানে আমাদের দিয়ার জন্যে লাজুকের মা বিয়ের প্রস্তাব পাঠিয়েছেন। কেননা লাজুক এবং দিয়া একে অপরকে ভালোবাসে।
তিনি চাইছেন অতিশ্রীগয় লাজুক এবং দিয়ার বিয়েটা দিয়ে দিতে।”
মায়ের কথা শুনে আমি ও রুদ্রিক দিয়া পিপির কাছে গিয়ে বলে উঠলাম,
–“কনগ্রাচুলেশন। ”
রুদ্রিকও দিয়া পিপিকে জড়িয়ে ধরে বলে,
—“দিয়া পিপি আজকে আমি সত্যি হ্যাপি। প্রথমেই একটা কথা বলে রাখি বিয়ের সব দায়িত্ব কিন্তু আমার। ”
রুদ্রিকের কথার মাঝেই বাবা নীচে নামতে নামতে বললেন,
—” তা বলতে? শুধু তুমি কেনো? কাজল মাকেও সব দায়িত্ব নিতে হবে। কি মা পারবে তো? ”
আমি মাত্র নাড়িয়ে বললাম,
—“একশোবার পারবো।”
সিথি দিয়া পিপিকে আবারো ধাক্কা দিয়ে বলল,
—“কি পিপি এই খুশিতে সেল্ফি তুলা হয়ে যাক? যত যাই হোক তোমার বিয়ে বলে কথা। ”
সিথির কথা শুনে দিয়াপিপি একপ্রকার লজ্জায় ছুটে পালিয়ে যায়। আমরা সকলে হেঁসে উঠি।
মা এসে সিথির মাথায় হাল্কা করে গাট্টা মেরে বলে,
—“সত্যি তোকে নিয়ে আমি পারিনা। দেখেছিস মেয়েটা কীভাবে লজ্জায় পড়ে গেলো। ”
সিথি মাথায় হাত বুলিয়ে রুদ্রিককে উদ্দেশ্য করে বলল,
—“ভাইয়ূ দেখো মা আমাকে মেরেছে। ”
রুদ্রিক সিথির মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,
—“বেশি লেগেছে তাইনা?
কথাটা বলে রুদ্রিক সিথির মাথায় আরো জোড়ে গাট্টা মেরে দিয়ে দৌড় দেয়।
সিথি ঠোট ফুলিয়ে বলে,
—“ভাইয়ূ তুই দাঁড়া আমি তোকে দেখাচ্ছি মজা।”
কথাটি বলে সিথিও রুদ্রিকের পিছনে ছুটতে থাকে।
মা বললেন,
—“এই দুইটোকে নিয়ে আমি সত্যি পারিনা। এই দুজনে থামবি একটু? ”
বাবা খবরের কাগজ পড়ে হাঁসছেন। মা বাবার দিকে তাঁকিয়ে বলে,
—“তুমি হাঁসছো? ”
—“হাঁসবো নাহ? মনে হচ্ছে বাড়িতে যেনো প্রান ফিরে আসছে। ”
মা ও বাবার কথা শুনে হেঁসে দিলেন।
আমার চোখ যেনো জুড়িয়ে যায়, এই পরিবারটিকে দেখলে। প্রায় ১মাস হতে চলল এই পরিবারে রয়েছি। কি হাঁসিখুশি মিষ্টি একটি পরিবার। আল্লাহর কাছে দোয়া করি আমার পরিবারের যেনো নজর না লাগে।
__________
রুদ্রিক আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে কিছু একটা ভেবে চলেছে। তার মাথায় শুধু ঘুরপাক খাচ্ছা মাহির কীভাবে পালালো? নাহ আজকেই পুলিস স্টেশনে যেতে হবে।
রান্নাঘর থেকে আমি এসে দেখি রুদ্রিক আয়নায় দাঁড়িয়ে টাইটা কোনোরকম পেঁচাচ্ছে।
আমি রুদ্রিকের কাছে গিয়ে, রুদ্রিকের টাইটা ভালো করে লাগিয়ে বললাম,
—“কি এতো ভাবছেন শুনি? ”
—-“তেমন কিছু নাহ। ”
—“আজকে তো তোমার জন্যে স্পেশাল দিন। শেখ গ্রুপ অফ ইন্ড্রাস্টির নিউ এমডি বলে কথা। বেস্ট ওফ লাক।”
রুদ্রিক কিছুটা দুষ্টু হেঁসে বললো,
—“আমার অন্যরকমভাবে বেস্ট অফ লাক চাই। ”
কথাটি বলে রুদ্রিক আমার কোমড় জড়িয়ে ধরে আমাকে কাছে টেনে নিয়ে,ঘোর লাগা কন্ঠে বলে,
—“জানিস কাজল? আই জাস্ট লাভ ইউর লিপস!”
আমি ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলি। রুদ্রিক আমার আরেকটু কাছে আসবেই তখনি নীচ থেকে বাবা ডেকে উঠেন,
—“ভাইয়া কোথায় তুমি? আমাদের অফিসের জন্যে লেট হয়ে যাচ্ছে তো? ”
রুদ্রিক বিরক্ত নিয়েই আমাকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে বলল,
—“আমার বোন একটা বোন না। আমার রোমান্সের শত্রু। ”
আমি হেঁসে উঠলাম।
রুদ্রিক আমার দিকে চোখ পাঁকিয়ে বলল,
—“তোকে তো আমি পরে দেখে নিবো। ”
কথাটি বলে রুদ্রিক চলে যেতে নিলে আমি রুদ্রিকের হাত ধরে নিজের কাছে এনে, রুদ্রিকের কপালে আলতো করে চুমু খেয়ে বললাম,
—“অল দ্যা বেস্ট ডিয়ার। এখন থেকে বিসনেজ এন্ড নিজের স্টাডি দুটোই তোমাকে হ্যান্ডেল করতে হবে। আমি জানি তুমি পারবে। ”
রুদ্রিক মুঁচকি হেঁসে বলে,
—“তুই থাকলে আমি সবকিছুই পারবো। বায়। ”
কথাটি বলে রুদ্রিক বেড়িয়ে যায়।
রুদ্রিক বেড়িয়ে যেতেই আমি বিছানায় বসে পড়ি। কয়েকদিন ধরে শরীরটা বেশ খারাপ যাচ্ছে। রুদ্রিককে বললাম নাহ। শুধু শুধু টেনশন করবে। আমাকেও এখন ভার্সিটি যেতে হবে। নীচে সিথি ওয়েট করছি।
আমি ও সিথি ভার্সিটিতে প্রবেশ করতেই, কোথা থেকে সাদি ভাইয়া এসে বললেন,
—“সিথি তোমার সাথে একটা কথা আছে। ”
সিথি মুখ বেঁকিয়ে বলল,
—“আমার কোনো কথা নেই। হুহ। ”
সাদি ভাই এইবার সিথির হাত ধরেই টেনে নিজের সাথে একেবারে মিশিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বললেন,
—“তুমি আমার সাথে যাবে মানে যাবে। ”
সাদি ভাইয়া আমার দিকে একপলক তাঁকিয়ে বললেন,
—“কাজল,তোমার বান্ধুবিকে নিয়ে যাচ্ছি। আপাতত ক্লাসটা তুমি একাই করো। ”
আমি সিথির দিকে দাঁত কেলিয়ে বললাম,
—“নিয়ে যান ভাইয়া সমস্যা নেই। ”
সিথি আমার দিকে চোখ পাঁকিয়ে তাঁকালো। সাদি ভাইয়া সিথিকে একপ্রকার টেনেই নিয়ে গেলো।
বুঝলাম দুজনের মধ্যে মান-অভিমান এর পালা চলছে। এইসব আর নতুন কী? এই একমাসে আমি বুঝে গিয়েছি। সিথি ও সাদি ভাইয়া একে অপরকে ভালোবাসে,এখন শুধু প্রকাশ করাটাই বাকি।
হুট করে আমার কি হলো কে জানে? মাথাটা মনে হয় ঘুড়াচ্ছে আমার। আমি পড়ে যেতে নিবো, তখনি কেউ আমাকে আকড়ে ধরে। আমি কোনোরকম চোখ খুলে দেখি রুদ্রিক।
______
ডক্টরের চেম্বারে আমি ও রুদ্রিক বসে আছি। রুদ্রিক একপ্রকার আমার দিকে অগ্নিদৃষ্টিতে তাঁকিয়ে আছে। আমি ভিতু চোখে রুদ্রিকের দিকে তাঁকিয়ে আছি।
রুদ্রিক এইবার আমাকে ধমক দিয়ে বলল,
—“তোর শরীর খারাপ করছে আমাকে বলিস নি কেনো? ”
—“আসলে…
—“তোর ফালতু এক্সকিউজ রাখ তোর কাছে।
তুই বেশি বেশি করছিস কাজল। আজ যদি তোর কিছু হয়ে যেতো তাহলে কী হতো বুঝতে পারছিস? ”
রুদ্রিকের কথার মাঝেই একজন বয়স্ক ডক্টর মহিলা এসে বললেন,
—“আপনার স্ত্রীকে আমি ভালো করে চেকাপ করেছি। এইসময়ে এইরকম একটু-আকটু হবেই।”
রুদ্রিক ভ্রু কুচকে বলে,
—“এইরকম সময় মানে? ”
—“এমা আপনার বউ তো প্রেগন্যান্ট। ”
প্রেগন্যান্ট! কথাটি শুনে আমরা দুজনেই যেনো চোখ বড় বড় করে ফেললাম। যেনো আমরা প্রস্তুতই ছিলাম নাহ। এর মাঝে রুদ্রিক এমন কান্ড করে বসলো,যা ছিলো আমার কল্পনার বাহিরে।
বাকীটা আগামী পর্বে….
চলবে কী?
[এইযে কিপটামি না করে কমেন্ত করে ফেলুন ওকে?]