গোধূলী_বেলার_স্মৃতি (Unexpected Story)
পর্ব- ১৬
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
উনি আমাকে কোলে নিয়ে,সাবধানতা সহাকারে নীচে নামিয়ে দেন।উনাকে দেখে-ই’ বুঝা যাচ্ছে আমার উপর রেগে আছেন। আমি পরিস্হিতি বুঝে মিনমিন সুরে বললাম,
“ছোট সাহেব! “।
সঙ্গে সঙ্গে উনি ধমকের সুরে বললেন,
” আগেও একবার পড়ে গিয়েছিলি। শিক্ষা হয়নি তোর? আমি এখন সঠিক সময় এসে না ধরলে কী হতো বুঝতে পারছিস? ”
আমি গলাটা উঁচু করে বললাম,
“কি আর হতো? বড়জোড় আমার কোমড় ভেঙে যেতো।”
ছোট সাহেব আমার দিকে ক্ষুদ্ধ দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে একটা টুল এনে, উপরে উঠে দাঁড়িয়ে আমার নোটস খু্ঁজতে শুরু করলেন। উনি জানেন আমাকে বলে কিচ্ছু হবেনা তাই হয়তো নিজের এনার্জি নষ্ট না করে বই খুঁজাতে মন দিলেন। ছোট সাহেব যথেষ্ট পরিমাণ লম্বা হওয়ায় খুব সহজে-ই’ আমার নোটস গুলো খুঁজে ফেললেন।
আমার কাছে এসে নোটস গুলো হাতে ধরিয়ে কিছুটা কড়া কন্ঠে বললেন,
“এগুলো নেয়ে এখুনি বেড়িয়ে যা। সাদি চলে আসার আগে। ”
আমি কিছুটা সিরিয়াস ভঙ্গিতে বললাম,
“আমি কেনো যাবো হুহ তাও আবার আপনার কথায়। ”
(লেখিকাঃ রিমি)
উনি কোমড়ে হাত দিয়ে বললেন,
“কাজল তুই আমার একটা কথাও শুনবি নাহ?”
আমিও উনার মতো স্টাইল করে আমার কোমরে হাত দিয়ে উনার নকল করে বলি,
“আমি আবার আপনার কথা কবে শুনলাম? তাছাড়া সাদি ভাইয়া এখানে আসলে কী হবে কী? ”
—-“তোকে বলবো কেন? ”
—“থাক আপনার মতো মাথামোটা আমি নই। আমি সব বুঝি। ”
—–“কি বললি তুই? ”
—–“না মানে আমি বুঝে গিয়েছি। ”
—-“কী বুঝেছিস? ”
ছোট সাহেবের প্রশ্নে আমি দাঁত কেলিয়ে বললাম,
“মানে আপনি সাদি ভাইয়াকে নিয়ে মারাত্মক জেলাস ফিল করছেন। ”
ছোট সাহেবের সোজা উত্তর,
“একদম -ই’ নাহ। ”
আমি উনার দিকে আরেকটু এগিয়ে বললাম,
—-“বলুন নাহ সাদি ভাইয়া আসলে কী হবে?
ছোট সাহেব দাঁত কটমট করে বললেন,
“অনেক কিছু হবে। তুই বুঝবি নাহ? ”
আমি উনার চোখের দিকে তাঁকিয়ে উনার আরেকটু কাছে এসে বললাম,
“আমি তো বুঝতে-ই’ চাই ছোটসাহেব। আপনি শুধু আমাকে বুঝিয়ে বললে-ই’ হবে।
হুট করে আমি উনার এতোটা কাছে আসায়। হয়তো উনি কিছুটা ভরকে গেলেন।
আমাদের দুজন দুজনের অনেকটা কাছে। আমি উনার শার্টের কলার নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে উনার মুখোমুখি হয়ে বললাম,
“স্বীকার করুন ছোটসাহেব! আপনি আমার জন্যে জেলাস ফিল করেন। ”
মানুষ কখন জেলাস ফিল করে জানেন ছোট সাহেব? ‘মানুষ যখন নিজের সব থেকে প্রিয় মানুষটিকে প্রতিনিয়ত হারানোর ভয় পায় তখনি তার মধ্যে জেলাসি কাজ করে। ‘ আমি কী আপনার সেই প্রিয় কোনো মানুষ?”
কাজলের এমন প্রশ্নে রুদ্রিক ঠিক কী উত্তর দিবে বুঝতে পারছেনা।
উনি হয়তো আমার কথার বিপরীতে কিছু বলতে চাইছিলেন,কিন্তু আমি তাড়াতাড়ি সেখান থেকে চলে এলাম। আমার যা বুঝার বুঝে গিয়েছি। এখন৷ শুধুমাত্র ছোটসাহেবকে উনার অনুভুতিগুলোর সাথে পরিচয় করার সময় চলে এসেছে।
অন্যদিকে রুদ্রিক লাইব্রেরির চেয়ারে বসে পড়ে,
রুদ্রিক তো সাদিকে নিয়ে কিছুটা চিন্তায় আছে বটে। কেননা সাদি নিজ মুখে স্বীকার করেছে সে কাজলকে ভালোবাসে, তাতে রুদ্রিকের কী? নিজের কাছে নিজে প্রশ্ন করে বসলো রুদ্রিক।
রুদ্রিক উঠে দাঁড়িয়ে আপনমনে বলল,
” নাহ নাহ। সাদি কাজলকে কিছুতে-ই’ ভালোবাসতে পারেনা। শুধু সাদি কেন? অন্য কেউ-ই’ কাজলকে ভালোবাসতে পারেনা। হুম হ্যা তার মানে কী?রাফসিন শেখ রুদ্রিক কাজলের জন্যে জেলাস ফিল করছে? ওহ শিট!”
কথাটি বলে জোড়ে জোড়ে নিঃশ্বাস ফেললো রুদ্রিক।
_______
ভার্সিটির হল রুমে তন্ময়, পলক, শোভন ও ইথান
রুদ্রিকের সাথে সাহায্য করছে, সব আয়োজনে। আজকে সাথে সাদিও রয়েছে। রুদ্রিক আজ প্রচন্ড ব্যস্ত কালকে ভার্সিটির অনুষ্ঠানে এত্তো বড় একটা ফাংশন বলে কথা।
রুদ্রিক সবাইকে সবার কাজ বুঝিয়ে দিচ্ছে।
আমিও হলরুমে দাঁড়িয়ে সব আয়োজন দেখে যাচ্ছি। ছোটসাহেবের কী ব্যস্ততা বাবা। আমার ভাববার মাঝে-ই’ প্রিন্সিপাল হল রুমে প্রবেশ করেন। স্যারকে দেখে আমরা সবাই দাঁড়িয়ে পড়ি। স্যার মুচকি হেঁসে রুদ্রিকের দিকে এগিয়ে গিয়ে বললেন,
“তা রুদ্রিক বাবা তোমার ফাংশনের আয়োজন কতদূর? ”
রুদ্রিক নিজের বাঁকা দাঁতের হাঁসি ঝুলিয়ে বলে,
“স্যার অলমস্ট সবকিছু-ই’ কম্পলিট। আপতত শুধু প্রতিযোগিদের ম্যাকাপ রুমের আয়োজনটা বাকি। সেইটাও আমি করিয়ে নিবো। ”
প্রিন্সিপালের কথার মাঝে-ই’ একজন মহিলা প্রফেসর এসে বললেন,
“সে কী রুদ্রিক?আমি তো সেই দায়িত্ব জেনিকে দিয়েছিলাম। জেনি কোথায়? তিন -চারদিন ধরে তাঁকে দেখা-ই’ যাচ্ছেনা। ”
রুদ্রিকের বন্ধুরা সবাই চুপ হয়ে যায়। রুদ্রিক কী বলবে বুঝতে পারছেনা। তার ফোন জেনি ধরছে-ই’ নাহ।
——“এইতো ম্যাম আমি এসে পড়েছি। ”
কথাটি বলে জেনি ও হাঁসিমুখে হলরুমে প্রবেশ করে। জেনিকে দেখে বুঝা যাচ্ছে সে যথেষ্ট স্বাভাবিক।
পলক এগিয়ে এসে বলে,
“জেনি তুই…”
পলককে থামিয়ে জেনি এগিয়ে এসে বলে,
“আর কাউকে কিচ্ছু বলতে হবেনা। এখন আমি এসে গিয়েছি। ফ্রেন্ডস কালকে এত্তো বড় ফাংশন আমাদের এখন ফাংশন নিয়ে কথা বলা প্রয়োজন। ”
ম্যাম খুশি হয়ে বললেন,
“তাহলে তোমরা নিজেদের মতো কাজ করো।
আমি বরং যাই”।
জ্যানি হাঁসিমুখে মাথা নাড়ায়। রুদ্রিক অবাক দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে আছে জেনির দিকে।
আমারাও কেনো জানি জেনি আপুর প্রতি বেশ সংদেহ হচ্ছে।
জেনি আপু ছোট সাহেবের দিকে এগিয়ে বললেন,
” রুদ্রিক ডার্লিং চলো আমাদের কথা কাজ বলোতো।”
ছোট সাহেব সাহেব বলে উঠেন,
“জেনি তোমার সাথে আমার কিছু বলার আছে। ”
জেনি আপু আমার দিকে তাঁকিয়ে ছোট সাহেবের হাত ধরে বললেন,
“রুদ্রিক ডার্লিং! আমারাও কিছু কথা রয়েছে কিন্তু এখানে নয় পারসোনালি। যত-ই’ গার্লফ্রেন্ড বয়ফ্রেন্ড
এর আলাদা কথা সবার সামনে বলা যায়না। ”
কথাটা বলে-ই’ জেনি আপু আবারো আমার দিকে শয়তানী হাঁসিতে তাঁকালো। হয়তো আমাকে মিন করে কথাটা বলেছেন।আমি এগিয়ে এসে হাঁসিমুখে বললাম,
“তা আমি যতটুকু জানি ছোট সাহেবের গার্লফ্রেন্ড এর অভাব নেই। ছোট সাহেব সবার সাথে-ই’ যদি পারসোনাল কথা বলে তাহলে তো মাসের পর মাস এইভাবে পারসোনাল কথা বলাতে-ই’ চলে যাবে। ”
আমার কথা শুনে সিথি ও সাদি ভাইয়াসহ সকলে-ই’ হেঁসে উঠে। ছোট সাহেব ও হেঁসে উঠেন।
জেনি সকলের হাঁসির দিকে তাঁকিয়ে,মনে মনে নিজের ক্ষোভটুকু দমিয়ে বলে,
“যত হাঁসিহাঁসি করার করে নাও কাজল। কালকে বুঝবে আসল মজা৷ ”
____________
রুদ্রিক অফিসে নিজের কেবিনে বসে ল্যাপটপে কিছু কাজ করছে। তখনি মিঃ আশিয়াক রাইজাদা এসে বললেন,
“হেই ইয়াং ম্যান কি করছো? ”
আশিয়াক রাইজাদাকে দেখে রুদ্রিক দাঁড়িয়ে বলে,
“স্যার বসুন নাহ। ”
আশিয়াক মির্জা বলেন,
“এতো ব্যতিব্যস্ত হওয়ার কিছু-ই’ নেই। রুদ্রিক বসো।
তোমাকে যেসব ফাইল রেডি করতে বলেছিলাম করেছো? ”
রুদ্রিক বলে উঠেন,
“জ্বী স্যার সব ফাইল কম্পলিট। ”
মিঃ আশিয়াক রুদ্রিকের কাঁধে চাপড় মেরে বললেন,
“সত্যি রুদ্রিক আমি তোমাকে যত দেখি তত অবাক হই। শহরের এত্তো বড় বিসনেজম্যান মিঃ আফজাল শেখের ছেলে হয়েও তুমি আমাদের কম্পানিতে জয়েন হয়েছো৷ ”
—-“স্যার এর কারনটা তো আপনি জানেন। ”
—-” হুম। তুমি নিজের বাবার পয়সায় চলতে চাও না বলে। তুমি এখানে জুনিয়ার অফিসার হিসেবে জয়েন হয়েছো,নিজ যোগ্যতায়।। নিজের ভার্সিটি যেমনভাবে সামলাচ্ছো সেইভাবে অফিস ও করছো। অনেক উন্নতি করবে তুমি। ”
রুদ্রিক সৌজন্যতার হাঁসি দিয়ে বলেন,
“দোয়া করবেন স্যার। ”
—“অবশ্যই মায় বয়। ”
কথাটি বলে’ই আশিয়াক রাইজাদা চলে গেলেন। রুদ্রিক আবারো নিজের কাছে মন দিলো।
রুদ্রিক রাইজাদা কম্পানিতে জুনিয়ার অফিসার হিসেবে জয়েন করেছে। কেউ এই ব্যাপারে জানেনা।
রুদ্রিকের কাজের মাঝে-ই’ একটি মেসেজ আসে।
‘মায়া কুঞ্জ ‘থেকে। মুসকান নাকি বারবি ড্রেসের জন্যে বায়না করছে। রুদ্রিক মুচকি হেঁসে বলে,
“এইবার চল রুদ্রিক। নিজের পিচ্ছি গার্লফ্রেন্ড এর জন্যে এখন শপিং মলে যেতে হবে। ”
__________
শপিং মলে মূলত আমি ও সিথি এসেছি কালকের ফাংশনের জন্যে কিছু ড্রেস কিনতে। সিথি হয়তো কিছু বলতে চাইছে কিন্তু বলতে পারছে নাহ। আমি ওর কাঁধে হাত রেখে বলি,
“কিছু বলবি? ”
সিথি চমকে বলে,
“নাহ মানে। আসলে পরে বলবো।”
আমি বলে উঠলাম,
“তাহলে চল। শাড়ির স্টোরে যাই। ”
সিথি মাথা নাড়ায়।
এদিকে রুদ্রিককেও শপিং মলে এসেছে। সিথি ও কাজলকে দেখে রুদ্রিক থেমে যায়।
সিথি একের পর এক শাড়ি আমাকে দিয়ে চুজ করাচ্ছে কিন্তু আমার কোনোটাই পছন্দ হচ্ছে নাহ।
সিথি এইবার বিরক্ত হয়ে বলে,
“বাবা তুই বল তোর কোনটা পছন্দ? আমি বিরক্ত হয়ে গিয়েছি। ”
আমি ঠোট উল্টিয়ে বলি,
“পছন্দ না হলে কী করবো? ”
তখনি কেউ আমার গাঁয়ে পিছন থেকে শুভ্র রংয়ের একটা সাদা শাড়ি জড়িয়ে বলে,
“এই শাড়িতে তোকে অনেক ভালো লাগবে রে কাজল? ”
আমি আয়নায় তাঁকিয়ে দেখে ছোট সাহেব।
উনি আমার কানে ফিস্ফিস সুরে বললেন,
“একেবারে শুভ্ররাঙাপরী লাগবে তোকে। ”
চলবে কী?
বাকীটা আগামী পর্বে………
লেখিকাঃ জান্নাতুল ফেরদৌসি রিমি)
ঈদ মোবারক