চন্দ্রপুকুর’ পর্ব-৪৯ শেষ পর্ব

0
2916

#চন্দ্রপুকুর
||শেষপর্ব|| (ইতি)
– ঈপ্সিতা শিকদার
বছরের সেরা সমাজকর্মীর পুরস্কার হাতে নিচ্ছে এক নারী। পরনে বোরখা ও হিজাব, কৃষ্ণাঙ্গ মুখমণ্ডল বৈকি কিছুই দৃশ্যমান নয়। উপস্থিত ভিনদেশী জনতা অবাক হয়ে দেখছে, এই পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে সাধারণত নারীদের সুনামধন্য কোনো ডিজাইনারের তৈরি গাউন এবং পুরুষদের স্যুটে দেখা যায়।

“কনগ্র‍্যাচুলেশন মিসেস. আকসা শাহ। what’s your feeling after getting this precious award?(এই মূল্যবান পুরস্কার পাওয়ার পর আপনার অনুভূতি কি?)”

“I just wanted to do something for the suffering people, especially for my people in my homeland. I am not as happy with this award as I am happy to be able to do something for them.

But yes this award, this stage has given me a platform to give a message to the whole world and I am thankful to the authorities for that. I just want to say Allah is the creator and owner of the world. We are all equal to him, rich and poor.

If God has given you money more then you need, then surely the poor, the destitute, the needy have a right to your money. Give it to them. Then one day no one will be found as poor.
(আমি শুধু দুঃখী মানুষের জন্য কিছু করতে চেয়েছিলাম, বিশেষ করে আমার জন্মভূমির মানুষের জন্য। আমি এই পুরস্কার পেয়ে যতটা খুশি নই, তাদের জন্য কিছু করতে পেরে আমি খুশি। তবে হ্যাঁ এই পুরস্কার, এই মঞ্চ আমাকে পুরো বিশ্বকে একটি বার্তা দেওয়ার একটি প্ল্যাটফর্ম দিয়েছে এবং এর জন্য আমি কর্তৃপক্ষের কাছে কৃতজ্ঞ। আমি শুধু বলতে চাই আল্লাহ পৃথিবীর স্রষ্টা ও মালিক। আমরা তার কাছে ধনী-গরীব সবাই সমান। আল্লাহ যদি আপনাকে টাকা বেশি দিয়ে থাকেন তাহলে আপনার প্রয়োজন, তাহলে অবশ্যই আপনার টাকায় গরীব, নিঃস্ব, অভাবী মানুষের অধিকার আছে। তাদের এটা দিন। তাহলে একদিন কাউকে গরীব হিসেবে পাওয়া যাবে না।)”

কৃষ্ণকায়ার নারীটির কথায় কড়তালির স্রোত বয়ে যায় বিশাল ঘরে। দূর থেকে একজন তা দর্শন করে মৃদু হাসে। মানুষটি আর কেউ নয়, জনাব আরহান করিম হকিংস।

উপস্থাপক প্রশ্ন করে উঠে,
“You are a very brave woman. We all know how you took the initiative to tell the world about the truth of Sherpur Zamindar or Zamindar Nawab Alivardi Shah of Bengal and also revealed the black truth of Shah Group & Company. But I really wanted to know if you felt any fear or suspicion before doing this?(আপনি খুব সাহসী মহিলা। আমরা সবাই জানি আপনি কীভাবে শেরপুরের জমিদার বা বাংলার জমিদার নবাব আলীবর্দী শাহের সত্যতা বিশ্বকে জানানোর উদ্যোগ নিয়েছিলেন এবং শাহ গ্রুপ অ্যান্ড কোম্পানির কালো সত্যও প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু আমি সত্যিই জানতে চেয়েছিলাম যে আপনি এই কাজ করার আগে কোন ভয় বা সন্দেহ অনুভব করেছিলেন?)”

“No, because I had, have and will have a person who supports me, believes in me more then anything.(না, কারণ আমার এমন একজন ব্যক্তি ছিল, আছে এবং থাকবে যে আমাকে সমর্থন করে, আমাকে যে কোনো কিছুর চেয়ে বেশি বিশ্বাস করে।)”

উত্তর দিতে দিতে দর্শকদের মাঝে বসে থাকা একজনের দিকে তাকিয়ে হাসে সে। তার দৃষ্টিতে শুধুই কৃতজ্ঞতা।

“But if you can be the most famous model of this era, then why not be a model? Why choose a full-time social worker and book writer?(কিন্তু আপনি যদি এই যুগের সবচেয়ে বিখ্যাত মডেল হতে পারেন, তাহলে মডেল হবেন না কেন? কেন একজন পূর্ণ-সময়ের সমাজকর্মী এবং বই লেখক বেছে নিবেন?)”

“That was never my goal. I just liked the concept of Mr. Hawkins project so I agreed to work just for once.(সেটা কখনোই আমার লক্ষ্য ছিল না। আমি মিঃ হকিন্স প্রকল্পের ধারণাটি পছন্দ করেছি তাই আমি একবারের জন্য কাজ করতে রাজি হয়েছিলাম।)”

বিভিন্ন ধারার ও ধরনের প্রশ্নে প্রায় দেড় ঘণ্টার কথোপকথন হলো জনপ্রিয় উপস্থাপক এডিসন ডে এবং যামিনীর মাঝে। সমাপ্ত হতেই রমণী খেয়াল করলো দর্শক শ্রেণীতে আর প্রিয় পুরুষটি নেই। চিন্তিত ভঙ্গিমায় স্টেজ হতে নেমে পড়লো সে।

কারো দিকে তার দৃষ্টি স্থির হলো না, কারো ডাক শ্রবণগত হলো না। উৎসুক চাহনি সমৃদ্ধ চোখজোড়া চারদিকে বুলাতে বুলাতে বের হয়ে পড়লো বিশালাকার হল ঘরটি থেকে।

বাহিরে পার্কিং লটে নিজের গাড়িটির সামনে দাঁড়ালো। ভিতরে চোখ রাখলো সে। মানুষটি তো নেই। শুধু চালকের আসনে বসা আহিল।

“তোমার ভাই কোথায়? কতোক্ষণ পূর্বে তো বসে থাকতে দেখেছিলাম, এখন দেখছি না।”

“ভাই তো নিজের গাড়ি আনিয়ে চলে গেলেন বাড়িতে।”

হতাশ হলো কন্যা। এই পুরুষটিকে চোখে হারায় সে, দৃষ্টির আড়াল হওয়া সহ্য হয় না। তার কোনো উত্তরে রাগ করেনি তো আবার?

“বাসায় নিয়ে চলো আমায়, আহিল।”

“কিন্তু ম্যাম আপনার না অনুষ্ঠান আছে? আপনার বিজয় উপলক্ষে পার্টি তো আজ।” অবাক হয়ে প্রশ্ন করে আহিল।

“উফঃ আহিল! এতো প্রশ্ন কোরো না নিজের স্যার নামক ভাই আরহানের ন্যায়। পার্টি তুমি, দিনার সামলে নিয়ো। বোলো আমি অসুস্থ হয়ে পড়েছি। এখন চলো।”

গাড়িতে চড়ে বসে যামিনী। লন্ডনে ট্রাফিক জ্যাম খুব একটা দেখা যায় না। বাড়িও কাছে হওয়ায়, খুব তাড়াতাড়িই পৌঁছে গেল যামিনী। শুভ্র রঙার অট্টালিকার দ্বারে যেয়ে থামে গাড়ি।

রমণী নেমে যায়। অভ্যন্ত প্রবেশ করতে করতে জমিদারনির ন্যায় আদেশ করে,
“এক বিন্দু দাঁড়াবে না এখানে। সোজা পার্টিতে যাবে। আর কেউ আমার আর তোমার ভাইয়ের বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে আমি যেটা বলেছি সেটাই বলবে।”

আহিল ভেঙচি কাটে। বিড়বিড়ায়,
“এতো বছর লন্ডনে থেকেও জমিদারি এখনও ছাড়ে নাই।”

গোটা অট্টালিকায় গা ছমছম করা নীরবতা। আজ বাড়িতে কোনো মানুষ নেই। খানসামা এবং দুজন চাকরও ছুটিতে।

তরুণী জ্ঞাত তার প্রিয় মানুষটির এখন কোথায় থাকার কথা। কোনোদিকে না তাকিয়েই সে চলে যায় বাড়ির পিছনের আঙিনায়।

চোখ জুড়িয়ে যায় তার। পুকুরে ভাসছে গোলাপের পাপড়ি ও প্রদীপ। জলে জ্বলজ্বল করছে ভাসমান প্রদীপের জ্বলন্ত অগ্নি। মনোরম এক দৃশ্য। তবে তার তিনি কোথায়?

আঙিনার এক প্রান্তে উলটো দিকে ঘুরে আকাশ পানে তাকিয়ে পানীয় পান করছে। যামিনী ছুটে যেয়ে জড়িয়ে ধরে তাকে। উন্মুক্ত সদ্য ভেজা পিঠে মিশে যায় তার দেহ, ভিজে যায় পরনের বোরখাটি।

“আপনি চলে আসলেন ক্যানো? আমি ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম তো। এতো পোড়ান ক্যানো বলেন তো?”

পিছনে ঘুরে তরুণ। নিজের বাবু মশাইয়ের চেহারা হৃদয় উজাড় করে দর্শন করে সে।

মেহমাদ শাহ ব্যঙ্গ করে বলে উঠে,
“পুড়তে ভালোবাসো বলেই তো পোড়ো, দোষটা তবে ক্যানো শুধু আমার ললাটেই দেও?”

শব্দ করে হেসে দেয় যামিনী। মানুষটির এখনও এতোটা স্পষ্ট ভাবে মনে আছে তাকে জুড়ে থাকা সকল ঘটনা। গলা জড়িয়ে ধরে ললাটে চুমু খায়।

তখনই একদল চেঁচিয়ে উঠে,
“দেখে ফেলেছি! দেখে ফেলেছি!”

আঁতকে উঠে সরে আসে যামিনী। পিছনে তাকায়। বেগম লুৎফুন্নেসা, বেগম নূর বাহার, গুল বাহার খাতুন, শাহাজাদি জান্নাতুল, আরমান শাহ, জনাব আরহান, আহিল, মিনার, দিনার আপন সকলে দাঁড়িয়ে।

“আপনারা এখানে…?” আনমনেই মুখ থেকে নির্গত হয় যামিনীর।

তখন মেহমাদ শাহের সাথে সকলে একই সুরে গেয়ে উঠে,
“হ্যাপি বার্থডে টু ইউ,
হ্যাপি বার্থডে টু ইউ,
হ্যাপি বার্থডে টু ইউ
ডিয়ার চন্দ্রমল্লিকা।”

আরমান শাহ কেক নিয়ে এগিয়ে আসেন তার দিকে। যামিনী কেক একটু খানি কেটে খায়িয়ে দেয় বাবাকে। বাবাও আলতো ভাবে জড়িয়ে ধরে শুভেচ্ছা জানান জন্মদিনের।

“শুভ জন্মদিন আমার রাজকন্যা। বাবা তোমায় অনেক মনে করেছি।”

দাদীজান নিজ হাতে তার উদ্দেশ্যে ক্ষীর করে নিয়ে এসেছেন, তা-ই আগে আহার করানোর তাড়া তাঁর মাঝে।

“আরে সামনে থেকে সরো তো আরমান। মেয়েটাকে আগে একটু মিষ্টি মুখ করাই। কেমন শুকিয়ে কাঠ হয়ে গিয়েছে আমার জাহানের আলো, আমার আকসা।”

যামিনীর চোখে নোনাজল এসে ভিড় জমান। এতোটা সুখ বুঝি তার ললাটে ছিল! মনে মনে ভাবে সেদিন রাত্রিতে যদি ঝড়টা থামাতে নিজেকে না জাগ্রত করতো তবে এই সুখী পরিবার আজ কোথায় পেতো!

অতীত,

রাত প্রায় দেড়টা। হুট করে নিজের মধ্যে এক অন্যরকম স্ফূর্তি বোধ করে যামিনী। তার মনে হলো এভাবে হাতে হাত রেখে বসে ধ্বংসের অপেক্ষা করার কোনো অর্থ হয় না।

একটা প্রচেষ্টা তো করা উচিত নিজের প্রিয় ও আপন মানুষদের রক্ষার্থে। আর একটি বার একটি মাত্র সুযোগ তো নিজেকে দেওয়া উচিত। তবে এর জন্য সবার পূর্বে প্রয়োজন সেই আঁধার রহস্য উদঘাটন করার তথা নিজে জানার।

সে জানে কার নিকট এখন তার যাওয়া উচিত। কার নিকট গেলে এ তথ্য সে পাবে।

শাহাজাদি জান্নাতুল সালাতে বসে কাঁদছেন, আল্লাহর নিকট ভিক্ষে চাইছেন মার্জনার। যামিনী অনুমতি ব্যতীতই কক্ষের দ্বার খুলে প্রবেশ করে।

কোনোরকম ভূমিকা ব্যতীত জিজ্ঞেস করে,
“ঐ লাল চন্দ্রপুকুর ফাইলে কী ছিল?”

হুট করে মেয়েলি কণ্ঠে এ প্রশ্নে বিস্মিত হন মধ্যবয়স্ক নারী। দ্রুতো মোনাজাত সমাপ্ত করে উঠে দাঁড়ান।

“এখন আর এসব জেনে কী লাভ? বিনা কারণে অতীতের আবর্জনা ঘাটলে শুধু গন্ধই বের হবে।”

“আমি তবুও জানতে চাই ফুপিজান। আপনার কাছে এ প্রথম ভ্রাতুষ্পুত্রী রূপে কিছু চাইলাম। ফিরিয়ে দিবেন না দয়া করে।”

মাথা দুলিয়ে সায় জানায় শাহাজাদি। জায়নামাজ ও হিজাব ভাঁজ করে গুছিয়ে রাখতে রাখতে বলতে শুরু করেন লাল ফাইলটির কালো রহস্যের বিষয়ে।

“জমিদারের নিকট সবচেয়ে অধিক প্রাধন্য পায় জমিদারি, নবাবের নিকট রাজত্ব। যুগে যুগে এই জমিদারি, রাজত্ব বাঁচিয়ে রাখতে শুধু ত্যাগই করতে হয় না, নিতে হয় আশ্রয় কপটতার, ধূর্ততার, অনৈতিকতার। আমাদের নবাব বংশও তার ব্যতিক্রম নয়।

আমাদের পূর্ব পুরুষ নিজেদের শাসনকাল স্থায়ী রাখতে বহুবার কলুষিত করেছে আমাদের গা। ব্রিটিশ রাজত্বকাল, ১৭৯৩ সালে সূর্যাস্ত আইন প্রণয়ন হয়। সাত বছরের মধ্যেই দিতে হতো রাজস্ব কর। তখন জমিদারপ্রথাই কোনোরকম শেষ শ্বাস নিচ্ছে, রাজতন্ত্র প্রায় বিলুপ্ত।

আমাদের বংশও নবাবী ত্যাগ করে জানা যেতো জমিদার হিসেবে। হুট করে এমন সংবাদ জেনে বাংলার অন্যান্য নবাবদের সহিত তৎকালীন শেরপুরের জমিদার আমাদের পূর্বপুরুষ তথা জমিদার মাহতাব শাহও কম্পিত হন।

গোটা শেরপুরের রাজস্ব কর, এতো অর্থ একত্রে জোগাড় করা সহজ কথা নয়। তবে সৌভাগ্যবশত আমার দাদাজান মাহতাব শাহের ব্যবসা বাংলা পর্যন্তই স্থির ছিল না, ছিল ব্রিটিশ অবধি। ইউরোপে ঢুকে গিয়েছিলেন, যদিও এর জন্য ব্রিটিশ কর্মকর্তাদের খুশি করতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে।

সেই ব্যবসার হাত ধরেই বিদেশী বাজার থেকে করের অর্থ তুলে সাত বছরে কর পরিশোধ করেন। কী যে ঋণের বোঝা তখন আমাদের বংশের উপর! ভাবতেই বুক খানা কম্পিত হয় আমার।

প্রায় পঞ্চাশ বছর এই ঋণের বোঝা সহ্য করে বেড়ায় আমাদের বংশধরেরা। আল্লাহর সহায়তায় অতঃপর ঋণ মুক্তি। ততোদিনে ভারত ভাগ হয়ে স্বাধীন হলো, পাকিস্তানি আমল। তখন জমিদার আলমগির শাহ জমিদার, আরও বিপদ।

সরকার না নিজের অধীনে নিতে চায় এসব জমি স্বল্প কিছু অর্থের বিনিময়ে। হলোও তাই। দুঃস্বপ্ন দেখলেন যেন আমাদের জমিদার। বহু ঝড়-ঝামেলার পর, সরকারি কর্মকর্তা মন্ত্রীদের অর্থ কোটি কোটি রুপি খাওয়াতে হয়।

আবারও ঋণের বোঝায় পড়ি আমরা। এই ঋণ শোধ করতে অধিক পরিমাণ কৃষকদের অল্প আয়ে খাটাতে হতো। তখনও কৃষকরা ও গ্রামবাসী আমাদের ভক্তি করতো প্রচুর। তাই শহুরে যায়নি ভালো সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার পরও। তবে এ ভরসা বেশি দিন টিকেনি। তারা শহুরে যাওয়া শুরু করে। দুইবার এতো অর্থের ঝড়ে আমাদের অর্থনৈতিক অবস্থা এমনিতেই শোচনীয়, তার উপর কৃষক হারা হয়ে পড়ায় আমাদের জন্য মরার দশা। ঐ সময় নিজেদের বাঁচাতে প্রচণ্ড জঘন্য এক কাজ করে নবাব।

আব্বাহুজুর শহুরে যাওয়া গ্রামবাসীদের ধরে ধরে অপহরণ করে হত্যা করে ফেলতেন। তখনকার গ্রামের মানুষজন প্রচণ্ড কুসংস্কারচ্ছন্ন ছিল, সুবিধাই হয় জমিদারের তথা আব্বাহুজুরের। এক মিথ্যে পীরের দ্বারা গুজব ছড়ালেন এক জ্বীন গোষ্ঠী অভিশাপ দিয়েছে এই শেরপুরের গ্রামবাসীরা শেরপুরের সীমানা হতে পেড়িয়ে গেলেই মারা যাবে।

এই হত্যাকাণ্ডে প্রায় শত খাণেক মানুষ মারা যায়। আব্বাহুজুর এ অপকর্মের জন্যই অদ্ভুৎ সব নিয়ম করেছিলেন। যেমন যোগাযোগ ব্যবস্থা এতো স্বল্প রাখা ও উন্নত ব্যবস্থা না গ্রহণ , শাহাজাদাদের সবার সামনে না আনা, শহরে এবং বিদেশ ও শেরপুরে নবাববংশের ভিন্ন ভিন্ন প্রতিনিধি রাখা, একাধিক স্ত্রী বা সঙ্গী না রাখা যেন রহস্য অধিক মানুষের নিকট না যায় ও ফাঁস না হয়। কারণ সাংবাদিকদের কানে বা উপরিমহলের কানে পুরোপুরি খবরটি গেলে, সত্য ঠিকই বেড়িয়ে আসতো।

কিন্তু আব্বাহুজুর যখন এই শাসন রক্ষা করতে নিজের পুত্রকেই ক্রোধে হত্যা করে ফেলেন তখন মাস না পেড়োতেই অপরাধবোধ পুরোপুরি কুড়ে কুড়ে খেতে শুরু করে তাঁকে। ঐ ফাইলে তাঁর স্বীকারোক্তি চিঠিই ছিল, সাক্ষর ও শিলমোহর সহ। মৃত্যু নিকটে বুঝতে পেরে হয়তো লিখেছিলেন। সেখানে তিনি আমাদের নিকট ও শেরপুর বাসীর নিকট ক্ষমা চেয়েছিলেন এবং বলেছিলেন এই চিঠি যেন কখনও না বিনষ্ট হয়। তাই কাগজটি চেয়েও নষ্ট করিনি আমরা তাঁর কথার সম্মানে।

আরও একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের ট্যাক্স বা কর দেওয়ায় অনেক গাফলতি আছে। যা কিছু কর্মচারীদের দিয়ে টাকার জোরে চাপিয়ে রাখা হয়। আমাদের করা গড়মিল তথা প্রকৃত কাগজপত্রগুলো ঐ ফাইলে। যা কারো হাতে পড়লেই কোম্পানির চেয়ার পার্সন হিসেবে মেহমাদের এবং আরও কয়েকজনের জেল হতে সময় লাগবে না।”

“ছিঃ! দাদাজান এতো নিষ্ঠুর ছিল।”

মাথা নত করে ফেলেন শাহাজাদি জান্নাতুল। গোপনে দীর্ঘশ্বাস ফেলেন। সাধারণত পিতাকে নিয়ে একটি মন্দ মন্তব্যই ক্রোধ বাড়িয়ে দিতে পারে, তবে তাঁর এমন কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। তিনি যে বাস্তবতা জানার সাথে সাথে মানেনও।

অত্যন্ত তাড়াহুড়োর সহিত দৌড়ে কামরায় প্রবেশ করেন আয়েশা খাতুন। এতোটা উর্ধ্ব গতিতে তিনি দৌড়ে এসেছেন যে হাঁপানির জন্য ঠিক ভাবে কথাও বলতে পারছেন না।।

“কী হয়েছে আয়েশা খাতুন? আপনি এভাবে…? কোনো সমস্যা হয়েছে?”

“শাহাজাদি, আজ আপনাদের আকাশের সূর্য আবার ফিরেছেন। আরমান বাবু এসেছেন এতো বছর বাদে।”

শব্দহীন হয়ে পড়ে শাহাজাদি জান্নাতুল ও যামিনীর শব্দভাণ্ডার। যামিনী তো কিছুতেই বোধ করতে পারছে না তার বাবা এসেছেন। হ্যাঁ, কিছু কাল পূর্বেই সে জেনেছে নিজের পিতৃপরিচয়, যে পিতার পরিচয়ের জন্য সারা ছেলেবেলা সে মানুষের কথা শুনেছে আজ তাঁকে সচক্ষে দেখবে সে।

“তুমি কি মজা করছো? সত্যি আরমান ভাইজান এসেছেন?”

“নাউজুবিল্লাহ শাহাজাদি, আপনার সাথে দুষ্টুমি করার ত্রুটি আমি করতে পারি? কখনোই না।”

শাহাজাদি জান্নাতুন অতঃপর যামিনীত হাত ধরে বেগম লুৎফুন্নেসার কামরার উদ্দেশ্যে রওনা হয়। কারণ আয়েশা খাতুনের তথ্য মতে সেখানেই আরমান শাহ উপস্থিত।

গুলবাহার খাতুন, আরমান শাহ অপরাধীর ভঙ্গিমায় বসে আছেন। এখানে আসলে সর্বপ্রথম সাক্ষাৎ হয় গুলবাহার খাতুনের সাথে। কথা বলে বোধ করেন কতো বড়ো ত্রুটি করেছে তাঁরা।

আরমান শাহ সকলের সামনে হাতজোড় করে ক্ষমার অনুরোধ করে ভাঙা গলায়,

“শোকে অন্ধ হয়ে গিয়েছিলাম আমি। বারবার মনে হচ্ছিলো আমার, যামিনীর মায়ের, লোকমান ভাইজান ও ভাবীজানের অপরাধী আব্বাহুজুর, এই বংশের অনড় দম্ভ, আপনারাও। কারণ আমি জ্ঞাত ছিলাম না এই সবে চাল ছিল মোর্শেদার। আমি ভেবেছিলাম আব্বাহুজুরই সব ঘেঁটে বের করে তুলে এনেছিল আমার প্রিয়তমাকে মিথ্যে দম্ভের জন্য। প্রিয়তমা যে এসে হুমকি দিচ্ছিলো মোর্শেদার উলটোপালটো বোঝানোতে তা অজানা ছিল। লোকমান ভাইজানকে হত্যার সময় যখন আপনারা কেউ এগিয়ে আসেননি, তখন আপনাদের উপরও ক্রোধ জমা হয়ে গিয়েছিল। আর আম্মিজানের উপর তো ঘৃণাই। বিশেষ করে যখন সে আমি প্রতিবাদ করলে তা অগ্রাহ্য করে আমায় শাস্তি দেয়। গুলবাহার ভাবীজানও ভেবেছিলেন তার স্বামীর মৃত্যুতে আপনারা দায়ী। আমরা মোর্শেদার ফাঁদে পা রেখে এতো বড়ো অপকর্ম করে ফেলেছি।”

তাঁর আকুতি কারো কর্ণগোচর হয় না। সবাই বিবর্ণ মুখে বসে। যামিনী স্মিত হাসি দেয় বাবার দিকে তাকিয়ে।

“যা করেছেন, ভালোই করেছেন। আমার হাতে আমার স্বামীকে ধ্বংস করার ইতিহাস গড়তে চেয়েছেন।”

“আমাকে ক্ষমা করো মা। বাবা হিসেবে তোমার প্রতি কোনো কর্তব্য পালন করতে পারিনি। যখন তোমায় পেলাম, তখন কি না বোধ হলো অজান্তেই তোমার কত বড়ো ক্ষতি করে বসে আছি। তুমি যেভাবে বলবে আমি সেভাবে আমার অপরাধের শাস্তি পেতে রাজি, প্রায়শ্চিত্ত করতে রাজি। শুধু আমায় তুমি ক্ষমা করো।”

“সত্যি রাজি আব্বাজান?” তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকায় যামিনী।

বিচলিত হয় উপস্থিত সকলে যামিনীর এমন আচারণে। তবে আরমান শাহ চোখ-মুখ মুছে খুশি হয়ে কন্যার পানে তাকায়।

“অবশ্যই আমার আম্মিজান, তুমি যা বলবে।”

“তবে মাথা পেতে নিবেন সকলের সামনে যে মেহমাদের ভরসার ফয়দা উঠিয়ে মোর্শেদা খাতুনের ইশারায় ট্যাক্সে আপনি গরমিল করেছেন। সেই অর্থ মোর্শেদা খাতুনকে দিয়েছেন।”

বজ্রপাত হয় সকলের মাথায়। এ কী বলছে এই কন্যা! বেগম লুৎফুন্নেসা ভ্রু কুঁচকে ফেলেন।

“এসব কী বলছো তুমি আকসা? তোমার মাথা ঠিক আছে?”

“অবশ্যই ঠিক আছে দাদীজান।”

ধীর পদচারণায় মেহমাদ শাহের নিকটে যায় সে। ছেলেটা নির্লিপ্ত ভাবে মেঝেতে বসে। তার হস্ত খানা নিজের হাতের মুঠিতে নেয়।

“আমি জানি আমি আপনার বিশ্বাস খুব বাজেভাবে ভেঙেছি। তবে এই শেষবার বিশ্বাস করে দেখুন আমায়, আফসোস করার সু্যোগ দিব না।”

অন্যরকম কিছু একটা ছিল যামিনীর কণ্ঠে, যার আভাস আগে কখনও পায়নি, যা যুবককে বাধ্য করে প্রেয়সীর কথা মানতে।

অতঃপর যামিনীর কথা অনুযায়ী মেহমাদ শাহ, যামিনী এবং আরমান শাহ রওনা হয় জনাব আরহান করিম হকিংসের কার্ডে দেওয়া ঠিকানায়।

আরহান দারোয়ানের মুখে বেগম চন্দ্রমল্লিকার আগমনের তথ্য পেয়ে শীঘ্রই নিদ্রা হতে উঠে চলে আসে বসার ঘরে। সাথে আরও পরিচিত দু’টি মুখশ্রী দেখে অবাক হয়।

“আমি চাই না আপনি ঐ ফাইলটির রহস্য সবার সামনে উন্মোচন করুন।”

অকপট চাওয়া রমণীর। আঁধার রাতে তাদের সাক্ষাৎ পাওয়ার ধাক্কা সামলাতে সামলাতে এমন কথায় আরও অবাক যুবক। তার হাসি চলে আসে, ফিচেল হাসি।

“আপনার ক্যানো মনে হলো বেগম চন্দ্রমল্লিকা আমি আপনার কথা শুনবো? আর আশ্চর্য মানুষ তো আপনি! প্রথমে নিজেই হাতে তুলে দিলেন, এখন আবার বিড়ালের হাতে দুধ তুলে দিয়ে দুধ ফেরত চাচ্ছেন।”

“আমার বোঝায় ভুল ছিল।”

ফোঁস করে শ্বাস ফেলে উত্তর দেয় যামিনী। একে একে খুলে বলতে শুরু করে সকল ঘটনা কীভাবে তার জন্ম, কী করে লোকমান শাহের হত্যা, কী করে তার ও মেহমাদ শাহের বিবাহ হয় এবং কী করে তাকে ফাঁসানো হয়েছে।

সবকিছু শুনে জনাব আরহান করিমকে একটু নমনীয় হতে দেখা গেলেও খুব একটা ভাবান্তর তার মাঝে নেই।

“দেখুন, যতো যাই হোক বাস্তবতা তো এটাই জমিদার আলিবর্দি শাহ একজন খুনী ও দোষী। সত্য তো একসময় প্রকাশ হবেই। তাছাড়া আমি নিজের লাভ ছেড়ে তো আপনার লাভ দেখবো না। অযথা এখানে সময় নষ্ট না করে চলে যেতে পারেন।”

“হ্যাঁ, তিনি দোষী। সত্যি জানার হক দুনিয়া বাসীর আছে, আর তা আমরাই জানাবো। তবে এতে আমার বা বাবু মশাইয়ের তো কোনো ত্রুটি নেই। দেখুন, আমার বাবা-মায়ের অবৈধ সম্পর্ক ছিল কিন্তু শাস্তি পেয়েছি আমি ছেলেবেলা হতে, শ্বশুরালয়ে যেয়ে স্বামীসঙ্গ পেয়ে মনে হলো সুখের দেখা পেলাম কিন্তু লড়তেই হলো সারাটা সময়। মরণফাঁদে পা দিয়ে তা আর কোথায় সম্ভব হলো?”

যামিনী কথা শুনে শুধু আরহান নয়, মেহমাদ শাহ এবং আরমান শাহও অবাক। তাঁরা বোধগম্য করতে পারছে না এ কন্যা চাচ্ছেটা কী।

“আপনি একটু খোলাসা করে বলুন তো জনাবা। আপনারা সত্য জানাবেন অর্থ?”

“আগামীকাল একটা সাক্ষাৎকার নেওয়া হবে আমার ও বাবু মশাইয়ের। যেখানে আমরা বলবো যে আমরা দু-তিন ধরে দাদাজানের চিঠিটা আবিষ্কার করেছি মোর্শেদা খাতুনের কামরা হতে। হয়তো তিনিও জড়িত ছিলেন বা তিনিই শুধু জানতেন। তাই আমরা বিশ্ববাসীর নিকট সত্য জানাতে ও শেরপুর বাসীর নিকট ক্ষমা চাইতে এই সাক্ষাৎকারের আয়োজন করেছি৷ আমরা সত্যিই দুঃখিত এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাটি জেনে। এজন্য আমরা একটি মোটা অঙ্কের অর্থ গ্রামবাসীর মাঝে বিলিয়ে দিচ্ছি। আরও জানাবো আমাদের কোম্পানিতে এতোকাল ধরে ট্যাক্সে গরমিল হচ্ছিলো, যা করছিলেন জনাব আরমান শাহ, মোর্শেদা খাতুনের নির্দেশনায়। আমরা তাদের উভয়কেই পুলিশে ধরিয়ে দিব সেখানেই।

এতো বড়ো একটা ঘটনা ও রহস্য উন্মেচন করতে পেরে আপনি যেমন সাংবাদিক হিসেবে সফলতা পাবেন তেমনই আমাদের খুব একটা বদনামি হবে না। আর বাবু মশাই জেলে যাওয়া হতে বেঁচে যাবে।”

আরমান শাহ মুখ খুলেন এবার,
“এসব তুমি কী বলছো মা? মোর্শেদার বিরুদ্ধে প্রমাণ কোথায় পাবে তুমি?”

“প্রমাণ ক্যানো লাগবে? সে তো সোজা স্বীকারোক্তি দিবে। আসার পূর্বেই তাকে এসপি সাহেবের শরণাপন্ন করে এসেছি, বলেছি মেরে হোক, কেটে হোক, যেভাবেই হোক স্বীকারোক্তি লিখিয়ে নিতে।”

আরহান অবাক মেয়েটার সরল ভঙ্গিমা দেখে। মেহমাদ শাহও নির্বাক হয়ে দেখেই যাচ্ছে মেয়েটিকে।

“কিন্তু সাহেবা আপনার কেন মনে হলো আমি আপনার প্রস্তাবে রাজি হবো? আর আপনি নিজেই নিজের পিতাকে জেলে দিবেন?”

“আমার মাতাকে দিনের পর দিন মিথ্যে বলে ঠকিয়েছেন। এতোটুকু তাঁর প্রাপ্য। তাছাড়া বেশি দিনের জন্য না তো, স্বীকারোক্তিতে মোর্শেদা নিজেই বলবে তিনি প্রাণের ভয় দেখিয়ে ও ক্ষমতার জোর খাটিয়ে আরমান শাহকে ব্যবহার করেছেন, তিনি দোষী নন। আর বিচারক তো আমাদের ক্রয় করাই থাকবে। দ্বিতীয়ত আসার পূর্বে আপনার দেওয়া নম্বরে কল করেছিলাম আমি, দাদাজানের এই সত্য নিজে জানারও পূর্বে।

ভেবেছিলাম যদি আকুতি করে আপনাকে ফিরানো যায়। কিন্তু নম্বরটা হয়তো অফিসের ছিল তাই রিসিভ করে আপনার কর্মচারী আহিল। তিনি আমি চন্দ্রমল্লিকা জানতেই শুধান, আপনি না কি যেতে যেতে সারা পথ আমার কথা বলে আক্ষেপ করেছেন। বলেছেন আপনার ‘আঁধারিয়া সৌন্দর্য ‘প্রজেক্টের জন্য আমার চেয়ে অধিক ভালো কেউ হতেই পারে না। আমি ঐ প্রজেক্ট করতে রাজি, অবশ্যই ছবিগুলো আমার চাহিদা অনুযায়ী হবে।

আর এই প্রজেক্টটা আমি করলে আপনার আরেকটা লাভ হবে, শেরপুরের খবরটা শুধু এদেশেই সবার আকর্ষণে দৃষ্টিতে আসবে বাহিরে না। তবে আমি যদি আপনার ঐ প্রজেক্টটায় কাজ করি, তাহলে কিন্তু আমার সূত্র ধরে এই প্রজেক্টটাও প্রশংসা কুড়াবে সকলের। তাছাড়া আপনি এখন বাংলায়, ব্রিটেইনে না, এখানে মানুষের জীবনের গ্যারান্টি আরও নেই। ক্ষমতার জোরে যে কেউ যে কাউকে উপরে উঠাতে পারে। আল্লাহ না করুক এই ফাইল নিয়ে অফিসে যাওয়ার পূর্বেই আপনি উপরে… আমি আসলে শান্তিপূর্ণ চুক্তি চাচ্ছি।”

জনাব আরহান করিম হকিংস শেষবাক্যের হুমকিটাও অতি সহজে অনুধাবন করে নিল। অনেক ক্ষণ ভাবলো, সে হিসাবী ও স্বার্থপর ধরনের মানুষ। নিজের লাভটাই প্রথমে বুঝে। আজকেও ভিন্ন পথে যাবে না। ঘণ্টা খাণেকের মাঝেই রাজি হয়ে গেল।

কিন্তু শর্ত জুড়ে দিলেন,
“আমি রাজি। কিন্তু আপনাকে আগামী মাসেই লন্ডন চলে আসতে হবে প্রজেক্টের কাজে।”

স্মিত হাসলো যামিনী। আর ভাবাভাবিতে যেতে হয়নি তাকে। যদিও তার প্রস্তাব নিয়ে বেগম লুৎফুন্নেসা কিছুটা সন্দিহান ছিলেন। তবে মেহমাদ শাহ তার উপর অনড় বিশ্বাস রেখেছিল। আর হয়েছিলও সব তার পরিকল্পনা মতে। প্রথম দিকে বেশ কয়েকজন ভৎসনা করলেও, অর্থ বিলিয়ে দিলে তাদের মুখ বন্ধ হয়। বাকিরা কালের পরিবর্তনের সাথে ভুলে যায়।

চুক্তি মোতাবেক একমাস পর যামিনী লন্ডন যায়। আরহানের ইচ্ছের বিরুদ্ধে সে ছবি তুলেছিল মডেল হিসেবে বোরখা-হিযাবে এবং রাণী বেশে রাজকীয় শাড়ি, মাথায় মোটা ওড়না ও নিকাবে। সেই সাথে যামিনীর জোরাজুরিতে মডেল হিসেবে নেওয়া হয় দুই জন আফ্রিকান নারীকেও। প্রজেক্টটি আশা হতেও অধিক সফলতা ও প্রশংসা কুড়ায়। এরপর হতে যামিনীকে বেশ শ্রদ্ধার চোখে দেখে আরহান।

লন্ডনে একমাস থেকে যামিনী জানতে পারে সে গর্ভিবতী। তার আর ঐ জমিদারির মারপ্যাঁচের দুনিয়ায় ফিরার ইচ্ছে হয় না। মেহমাদ শাহও ক্লান্ত, তাই শর্তহীন ভাবে মেনে নেয় তার ইচ্ছে। এখানে শাহ বংশের ব্যবসা ছিল পূর্ব হতেই তাই বাসিন্দা হতে কোনো সমস্যা হয়নি।

আর দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য সামলাতে মিনার, আরমান শাহ, দাদীজান সহ সকলে তো আছেনই।

বর্তমানে,
কানে আলতো ব্যথা অনুভব হওয়ায় ঘোর ভাঙে যামিনীর। খেয়াল করে দেখে তার বাবু মশাই ঠোঁট কামড়ে হাসছে। নিশ্চয়ই সুন্দর দাঁতগুলো তার কানে বসিয়েছিল। তাকিয়ে দেখে বাকিরা যে যার মতো সময় উপভোগ করতে ব্যস্ত। তার আদুরে দুই সন্তান পরিবারের সাথে খেলায় ব্যস্ত।

“এতো ক্যানো ভালোবাসেন? এতো ক্যানো বিশ্বাস করেন?”

নাক টেনে মেহমাদ শাহ শুধায়,
“এতো ক্যানো ভালোবাসা চাও? এতো ক্যানো বিশ্বাস চাও?”

হেসে দেয় যামিনী। শক্ত করে জড়িয়ে ধরে তার বাবু মশাইকে। “ভালোবাসি বাবু মশাই, অনেক ভালোবাসি” উচ্চারণ করে এক প্রেমাঘোরেই।

যামিনী তার চন্দ্রপুকুর পেয়ে গিয়েছে জীবনে। আর কিছু নেই চাওয়ার। চন্দ্রপুকুর হলো এক অবাস্তব কল্পনায় আঁকা স্থান, যেমনটি তার নিকট ছিল সুখ ও পরিবার৷ অবশেষে এ অবাস্তব কল্পনা, এখন প্রতিমুহূর্তে জীবনের বাস্তবতা৷

__সমাপ্ত__
অবশেষে গল্প শেষ হলো। থ্রিলার, ফ্যান্টাসি উপন্যাস লিখার প্রয়াস ছিল, ভুল-ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। আর আমার কোনো আচারণে কষ্ট পেলেও এত্ত এত্ত সরি। আর সকালে উঠে পড়ে ইডিট করে দিব। সেই চারটা থেকে একটানা লিখতে লিখতে আমি ক্লান্ত।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here