#চলো_ভিজি_বৃষ্টিতে
#Tanjima_Islam
১
.
.
.
রেস্টুরেন্টে বসে কফি খাচ্ছে আর আড্ডা দিচ্ছে রিয়া, আফসানা আর সুমাইয়া।
হটাৎ ফোনের রিংটোন পেয়ে রিসিভ করল রিয়া, কিছুক্ষণ কার সাথে ফোনে হু হা করে চকচকে চোখে তাকিয়ে বলল,” আমার জবটা কনফার্ম হয়ে গেছে!!
আফসা খুশিতে গদগদ হয়ে বলল ,” দেখেছিস আমার দোয়া কাজে লেগেছে!!
সুমু খুশি হলেও একটু ভাব নিয়ে বলল, ” আমিই তো জব সার্কুলারটা তোকে ইনফর্ম করেছিলাম।
আফসা মুখ ভেংচি কেটে রিয়াকে বলল,” যাইহোক, আমাদের ট্রিট কই!?
সুমুও সেইসাথে যোগ দিয়ে বলল, ” তাই তো! ওয়েট আমি ওয়েটার ডাকি।
রিয়া অবাক হয়ে বলল, ” আরে বান্দরের দল আমি জব পেয়েছি, কোনো লটারি না!!!
আফসা টিস্যু দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে বলল, ” আচ্ছা আচ্ছা ট্রিট বাদ, এবার কিন্ত আমরা সবাই মিলে সিলেট যাবো।
সুমু গলা খাকারি দিয়ে বলল, ” সিলেট যাবো ঠিকাছে, বাট রিয়াকে বাসা থেকে যেতে দেবে তো!?
রিয়া গাল ফুলিয়ে বলল, ” এভাবে বলিস না প্লিজ! আমি বাসায় ঠিক ম্যানেজ করে নেবো দেখিস!!
আফসা ভ্রু নাচিয়ে বলল, ” সে তো সময় হলেই জানতে পারবো।
.
.
.
.
.
.
জ্যামে আটকে আছে আরহামের গাড়ি, ঝিরিঝিরি বৃষ্টি নেমেছে, গাড়ির গ্লাস উঠিয়ে ল্যাপটপে কাজ করছে সে।
ড্রাইভার করিম বলল,” আপনি বসুন, আমি চা নিয়ে আসি স্যার!?
আরহাম না তাকিয়েই বলল, ” হুম নিয়ে এসো।
এদিকে জ্যামে বসে থাকতে থাকতে বোর হয়ে গেছে রিয়া, রিকসা থেকে নেমে দাড়ালো সে।
ঝিরিঝিরি বৃষ্টির ফোটা গায়ে পড়ে মাথায় বাধা নীল রঙের হিজাব আর সাদা শর্ট গাউনটা হালকা ভিজে গেছে।
দু’হাতে বৃষ্টির ফোটা নিয়ে খেলছে সে, আশেপাশে মানুষজন আছে নয়তো সে দু’হাত মেলে ধরে বৃষ্টিতে ভিজতো।
অনেকক্ষণ হয়ে গেছে করিম এখনও আসেনি দেখে আরহাম ল্যাপটপ রেখে গাড়ির গ্লাস নামিয়ে বাইরে তাকালো।
এদিক ওদিক তাকাতেই একটা মেয়েকে দেখে চোখ আটকে গেল তার।
মেয়েটার পরনে বৃষ্টিতে ভেজা সাদা শর্ট গাউন আর মাথায় বাধা নীল হিজাব, কেমন স্নিগ্ধ লাগছে মেয়েটাকে। যেন সদ্য ফোটা বেলি ফুল!!
মনের অজান্তেই মুখে হাসির রেখা ফুটল আরহামের।
হটাৎ গাড়ি চলতে থাকলে, বৃষ্টি ভেজা মেয়েটা ক্রমশ দূরে যেতে লাগল।
আরহাম হকচকিয়ে উঠল, কানে এলো ড্রাইভার করিমের গলা।
সামনে তাকাতেই দেখল করিম ড্রাইভ করছে আর বলছে,” স্যরি স্যার, এতক্ষণ ওয়েট করালাম। জ্যামের মধ্যে দিয়ে কোনোরকমে গিয়ে চা যদিও নিলাম, আর অমনি শুরু হল বৃষ্টি। চা হয়ে গেল পানি, এদিকে জ্যাম ছেড়ে দিয়েছে। তাই চা রেখেই চলে এলাম।
আরহামের মেজাজ বিগড়ে গেল, বারবার পেছনে তাকিয়ে মেয়েটাকে দেখার চেষ্টা করছে সে।
করিমকে বলল,” গাড়ি ঘুরিয়ে নাও, যেখানে গাড়ি দাড় করিয়েছিলে সেখানে চলো।
করিম কিছুক্ষণ হাবলার মতো তাকিয়ে থেকে, গাড়ি ঘুরিয়ে নিল।
যেখানে মেয়েটাকে দেখেছিল সেখানেই গিয়ে গাড়ি থামালো, কিন্ত আশেপাশে তাকিয়েও মেয়েটাকে দেখতে পেলনা।
মুহুর্তেই কেমন যেন খারাপ লাগা অনুভব হল আরহামের, অচেনা একটা মেয়ের জন্য কেন এমন হল সে জানেনা।
করিমের ওপর রাগ করতে গিয়েও পারল না, বেচারার তো কোনো দোষ নেই।
গাড়ি নিয়ে সোজা বাসায় চলে গেল আরহাম।
.
.
.
.
.
বাসার সামনে দাড়িয়ে কলিং বেল বাজাচ্ছে রিয়া, দরজা খুলে মিসেস ইরা কিছুটা বিরক্ত হয়ে বলল,” আজ আবার ভিজেছিস!?
রিয়া ইনোসেন্ট ফেস করে বলল,” ইচ্ছে করে ভিজিনি বিশ্বাস করো, হটাৎ ঝুমঝুম করে বৃষ্টি নামল।
মিসেস ইরা বলল,” আর হটাৎ করে তুমি ভিজে গেলে!!
একগাল হেসে ভেতরে ঢুকল রিয়া, শাওয়ার নিয়ে বের হয়ে দেখল মিসেস ইরা বসে আছে তার রুমে।
রিয়া তাকে জড়িয়ে ধরে বলল, ” জবটা হয়ে গেছে আম্মু।
মিসেস ইরা আনন্দিত হয়ে বলল,” সত্যিই!?
রিয়া মাথা নাড়িয়ে সায় দিল। মিসেস ইরা এক হাতে মেয়েকে জড়িয়ে ধরে বলল, “তো আমার ট্রিট কোথায়!?
রিয়া বলল,” চলো আমি আজ নিজ হাতে রান্না করে তোমাদের খাওয়াই।
মিসেস ইরা হাত দিয়ে থামিয়ে বলল, ” থাক, তোমার রান্না মানে এখন ইউটিউব দেখে বিভিন্ন আইটেম করতে করতে ঘন্টা পার করে দেওয়া। শেষে রাতে আর কারও খাওয়া হবেনা। তার চেয়ে বরং আমিই রান্না করি, আপনি আমাকে হেল্প করুন।
রিয়া সালাদ কাটতে কাটতে জিজ্ঞেস করল ,” আচ্ছা, আব্বু শুনলে রাগ করবে নাতো!?
মিসেস ইরা কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,” সেসব তোকে ভাবতে হবেনা। অফিসে জয়েন কবে থেকে তোর!?
রিয়া না তাকিয়েই বলল, “কাল থেকে।
মিসেস ইরা বলল, ” তাহলে তো বেশি রাত জাগা চলবেনা, তাড়াতাড়ি খেয়ে ঘুমিয়ে পড়। আর আব্বু যদি কিছু জিজ্ঞেস করে, ঠান্ডা মাথায় শান্ত মেয়ের মতো বলে দিস।
মায়ের কথায় রিয়া মাথা নাড়িয়ে সায় দিল।
.
.
.
.
.
রাতে ডাইনিং এ বসে ডিনার করছে রিয়ার ফ্যামিলি।
রিয়ার আব্বু শেখ সিরাজ একটা সরকারি ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার।
খেতে খেতে সিরাজ সাহেব বলল,” অনার্সে উঠে গেছো এবার তো বিয়ে করতে তোমার কোনো আপত্তি নেই নাকি!!
রিয়া খেতে খেতে ভিষম খেল বাবার কথা শুনে। মিসেস ইরা একগ্লাস পানি মেয়ের দিকে এগিয়ে দিয়ে, রিয়ার বাবার দিকে তাকিয়ে বলল, ” খাওয়ার সময় এসব কথা না বললেই কি নয়!!?
সিরাজ সাহেব তার মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল, “সারাদিন তো মামনিকে খুজে পাওয়া দায়, এই খাওয়ার সময় ছাড়া সময় কই তার আমাদের সাথে কথা বলার।
রিয়া ইনোসেন্ট ফেস করে বাবার দিকে তাকালো।
সিরাজ সাহেব হেসে বলল,” তাই ভাবছি বিয়ে দিয়ে শ্বশুর বাড়ি পাঠিয়ে দেই, তখন বাবা-মা কি বুঝবে। তখন আর খোজা লাগবেনা, নিজেই এসে গল্পের ঝুলি নিয়ে বসবে। নাকি মামনি!?
রিয়া একগাল হেঁসে বলল, ” আগে ও দেশে ফিরুক, তখন এসব ভেবো।
সিরাজ সাহেব হেসে দিলেন। রিয়া ভাবছে এখন কি জবের কথাটা বলবে! নাকি ব্যাপারটা আম্মুর ওপরেই ছেড়ে দেবে।
সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে বলে উঠল ,” তোমাদেরকে একটা গুড নিউজ দিতে চাই।
সিরাজ সাহেব জিজ্ঞাসুক দৃষ্টিতে মেয়ের দিকে তাকালো।
মিসেস ইরা কটমট করে তাকালো মেয়ের দিকে।
রিয়া থেমে থেমে বলল,” পড়াশোনার পাশাপাশি জব করতে চাচ্ছিলাম। জবটা পেয়েও গেছি, একটা টেক্সটাইল কোম্পানিতে।
সিরাজ সাহেব মেয়েকে কিছু না বলে মিসেস ইরার দিকে তাকিয়ে রইলো।
মিসেস ইরা মেয়ের কথায় অবাক হওয়ার ভান ধরলেন।
কেউ আর কোনো কথা বলল না। চুপচাপ খেয়ে যে যার রুমে চলে গেল।
.
.
.
.
.
ঘড়িতে রাত সাড়ে দশটা বাজে, রিয়ার রুমের দরজায় কেউ নক করল।
রিয়া ভাবল হয়তো আম্মু এসেছে, উঠে দরজা খুলে দিল।
কিন্ত না, তার বাবা এসেছে!! একটা শুকনো ঢোক গিলল রিয়া, না জানি বকা দেয় কিনা।
সিরাজ সাহেব রুমে ঢুকে সোজা ব্যালকনিতে গিয়ে রকিং চেয়ারে বসল, রিয়া ব্যালকনির দরজায় গিয়ে দাড়ালো।
সিরাজ সাহেব দোলনা দেখিয়ে বলল,” বসো।
রিয়া লক্ষী মেয়ের মতো দোলনায় গিয়ে বসে পড়ল, ভয়ে মুখ শুকিয়ে যাচ্ছে তার।
বেশ কিছুক্ষন নিরবতা কাটিয়ে সিরাজ সাহেব বাইরের দিকে তাকিয়ে বলল,” পৃথিবীতে নারী পুরুষ সকলেই নিজের ইচ্ছায় বা প্রয়োজনে বিভিন্ন জব করছে। আমাদের দেশও তার ব্যাতিক্রম নয়, কিন্ত সেসব জায়গায় বিশেষ করে নারীদেরকে বিভিন্নভাবে হ্যারাসমেন্টের শিকার হতে হয়। শুধু জব নয়, স্কুল কলেজেও হয় কিন্ত জব সাইডে তুলনামূলক বেশি।
এটুকু বলে রিয়ার দিকে তাকিয়ে বলল,” আমি চাই তুমি শিক্ষিত হও, কিন্ত বাবা হিসেবে নিজের মেয়েকে সেসব খারাপ পরিস্থিতিতে দেখতে চাইনা। তুমি জব করতে চাও ঠিকাছে কিন্ত নিজেকে নিজেই প্রোটেক্ট করবে। আশা করি আমার কথা গুলো বুঝতে পেরেছো।
রিয়া উঠে এসে বাবাকে জড়িয়ে ধরে বলল,” আমার জন্য দোয়া করো আব্বু।
সিরাজ সাহেব স্মিত হেসে মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল, ” সে তো সবসময়ই করি।
রিয়াকে রুমে এনে বেডে শুইয়ে দিয়ে সিরাজ সাহেব লাইট অফ করে বলল, ” অনেক রাত হয়েছে, ঘুমিয়ে পড়ো। সকালে অফিস আছে না!?
রিয়া মুচকি হেসে বলল, “হুম, গুড নাইট আব্বু।
সিরাজ সাহেব গুড নাইট জানিয়ে মেয়ের রুমের দরজা ভেজিয়ে দিয়ে নিজেদের বেডরুমে চলে গেল।
.
.
.
.
.
আরহামের ঘুম ভাংলো অ্যালার্মের শব্দে। উঠে ফ্রেশ হয়ে জগিং এ গেল সে, ফিরে এসে দেখল আরহামের বোন আরশি ব্রেকফাস্ট রেডি করে বসে আছে।
আরহাম ব্রেকফাস্ট করে আরশির কপালে চুমু দিয়ে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে গেল অফিসের উদ্দেশ্যে।
এদিকে রিয়া পড়েপড়ে ঘুমোচ্ছে, মিসেস ইরা এসে ডাকতেই ধড়ফড়িয়ে উঠে বসল রিয়া।
মিসেস ইরা রেগে বলল,” ফোনে অ্যালার্ম দিয়ে আবার ফোন অফ করে রেখেছিস!!?
রিয়া ইনোসেন্ট ফেস করে বলল, ” উমমম, ঘুম পাচ্ছে!!
মিসেস ইরা মেয়েকে টেনে বেড থেকে নামাতে নামাতে বলল, ” তাহলে জব করার কি দরকার!! পড়েপড়ে ঘুমোলেই তো পারেন!!
রিয়া ঢুলতে ঢুলতে ড্রেস নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকল, শাওয়ার নিয়ে বের হল।
ব্লু কালারের শর্ট গাউন পরেছে সে, ভেজা চুল গুলো হাফ বান করে নিল।
চোখে আইলাইনার আর ঠোঁটে রেড কালারের লিপস্টিক, গালের বা পাশে আর ঠোঁটের নিচের তিল দুটোয় একটু কাজল ছুইয়ে দিল।
রেডি হয়ে বেরিয়ে পড়ল অফিসের উদ্দেশ্যে।
.
.
.
.
.
“এ.আর” টেক্সটাইল কোম্পানির অফিসের সামনে দাড়িয়ে আছে রিয়া।
গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে চলল সে। লিফটে উঠে চারতলায় গিয়ে নামল, এখানেই তার অফিস।
একটু সামনে যেতেই সেদিন ইন্টারভিউ নিয়েছিল সেই ম্যামের সাথে দেখা।
রিয়া গিয়ে ডাকল,” চিত্রা ম্যাম!
মেয়েটা রিয়ার দিকে তাকিয়ে বলল, ” ওহ, তুমি এসে গেছো!? এসো, এটা তোমার ডেস্ক। তোমার কি কাজ মনে আছে তো!?
রিয়া মাথা নাড়িয়ে বলল, ” জি ম্যাম, আমি আপনার এসিস্ট্যান্ট, আমার কাজ হচ্ছে আপনাকে এসিস্ট করা।
চিত্রা কিছু পেপার এনে রিয়াকে দিয়ে বলল,” দুইতলায় যাও, সেখানে গিয়ে এগুলো দেখালে তোমাকে ওরা কাজ বুঝিয়ে দেবে।
রিয়া পেপার্স গুলো নিয়ে লিফটে উঠল।
.
.
.
.
.
আরহাম অফিসে ঢুকে তার এসিস্ট্যান্ট চিত্রাকে জিজ্ঞেস করল,” আজকে যে মিটিং ছিল, ক্লায়েন্টরা এসে গেছে!?
চিত্রা বলল,” না স্যার, ওনাদের আসতে আধ ঘন্টা লেইট হবে।
আরহাম রেগে গেল, সে সময়ের কাজ সময়ে করতে পছন্দ করে।
চিত্রাকে বলল,” ওনারা এলে আমাকে ডাকার প্রয়োজন নেই।
চিত্রা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, ” তাহলে কাকে ডাকব স্যার!?
আরহাম বিরক্ত হলেও শান্ত গলায় বলল, ” ওনারা এলে ওনাদের বলবে, মিটিং ক্যান্সেল!!
চিত্রা বুঝল বস রেগে আছে, মাথা নাড়িয়ে সায় দিয়ে বলল, ” ওকে স্যার।
আরহাম বলল,” এক কাপ কফি পাঠাও আমার রুমে।
বলেই চলে গেল আরহাম, “এ.আর. টেক্সটাইল কোম্পানির “মালিকের ছেলে সে। তার বাবা এক বছর হল মারা গেছে।
.
.
.
.
.
চিত্রা কফি নিয়ে ভয়ে ভয়ে আরহামের রুমের দিকে যাচ্ছে আর মনেমনে বলছে,” আজ তো তুই শেষ চিত্রা, বস আজ বেশ রেগে আছে। নির্ঘাত সব রাগ তোর ওপরই ঝাড়বে!! ইয়াল্লাহ আমাকে বাচাও!!
হটাৎ রিয়াকে দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ছেড়ে রিয়াকে ডাক দিল চিত্রা।
রিয়া কাছে আসতেই চিত্রা ট্রে এগিয়ে দিয়ে বলল,” এটা স্যারের রুমে নিয়ে যাও।
রিয়া জিজ্ঞেস করল, ” কোন স্যার!?
চিত্রা অবাক হয়ে বলল, ” কোন স্যার মানে!? কোম্পানির বস!! আরহাম রহমান!!
রিয়া জিজ্ঞেস করল,” ওহ, তা ওনার রুম কোন দিকে!?
চিত্রা হাত দিয়ে দেখিয়ে বলল,” সোজা গিয়ে ডান দিকে।
.
.
.
.
.
রিয়া ট্রে নিয়ে দরজায় নক করল।
ভেতর থেকে আরহাম ল্যাপটপে কাজ করতে বলল,” কাম ইন।
রিয়া ভেতরে ঢুকে দেখল, আরহাম ল্যাপটপে কাজ করছে, ডিপ ব্লু কালারের স্যুট প্যান্ট পরেছে, চুল গুলো স্টাইল করে একসাইড করে রাখা, লুকটাও জোস!
রিয়া মনে মনে বলল,” এতো দেখছি পুরাই হিরো!! আমিতো ভেবেছিলাম কোম্পানির মালিক হয়তো বুইড়া টাইপ হবে।
টেবিলে ট্রে রাখতেই সামনে তাকালো আরহাম। অবাক হয়ে গেল রিয়াকে তার অফিসে দেখে। আরহাম মুগ্ধ হয়ে দেখছে তাকে।
রিয়া কফি এগিয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করল, ” আর কিছু লাগবে স্যার!?
আরহাম নিজেকে সংযত করে বলল, ” না, লাগলে বলব।
রিয়া মুচকি হেসে বেরিয়ে গেল, আরহাম এখনও তাকিয়ে আছে রিয়ার যাওয়ার পথে।
আরহাম মনেমনে বলল, “এ তো সেই বৃষ্টিভেজা মেয়েটা!! এখানে জব করে!? কই! আগে তো কখনও দেখিনি।
রিয়া নিজের ডেস্কে এসে বসতেই চিত্রা তীক্ষ্ণ চোখে দেখছে তাকে।
রিয়া ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করলেন, ” এনি প্রবলেম চিত্রা ম্যাম!?
চিত্রা জোর করে হেসে বলল, ” নাহ কিছুনা।
মনেমনে বলল, ” রিয়াকে দেখে তো মনে হচ্ছেনা যে, সে বসের ঝাড়ি খেয়েছে!
.
.
.
.
.
কানাডার রাজধানী অটোয়ায় ঝিরিঝিরি বৃষ্টি নেমেছে।
গ্লাসের বাইরে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ফাইয়ায।
গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট তার, নেক্সট মান্থে দেশে ফিরবে সে।
ফোনস্ক্রিনে রিয়ার ছবির দিকে তাকিয়ে আছে ফাইয়ায।
রিয়ার ছবিতে কিস করে বলল, ” খুব শীঘ্রই আমাদের দেখা হবে রিয়া, আমি আসছি।
হটাৎ ফোনের রিংটোন পেয়ে তাকালো ফাইয়ায, তার আম্মু মিসেস ফাতেমা কল দিয়েছে।
ফাইয়ায কল রিসিভ করতেই মিসেস ফাতেমা বলল,” কেমন আছো আব্বু!?
ফাইয়ায হেসে বলল, ” ভালো আছি আম্মু, তুমি কেমন আছো!?
মিসেস ফাতেমা রকিং চেয়ারে বসে আছে, হাতে রাখা উপন্যাসের বইটা বন্ধ করে বলল, “ঐ আছি কোনোরকম।
ফাইয়ায উত্তেজিত হয়ে বলল, “কেন!! কি হয়েছে তোমার!? শরীর খারাপ!? মেডিসিন নাওনি!?
মিসেস ফাতেমা স্মিত হেসে বলল, ” মেডিসিন কি আর মনের প্রশান্তি দিতে পারে!? আমার ছেলেটা যেদিন আমার বুকে ফিরবে সেদিন পাবো প্রশান্তি।
ফাইয়ায একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, ” খুব শীঘ্রই ফিরে আসবো আম্মু, আর মাত্র একটা মাস।
মায়ের সাথে কথা বলে বাগদত্তা রিয়াকে কল দিল ফাইয়ায, কানাডায় স্টাডি করতে আসার আগেই দুজনের ফ্যামিলির সম্মতিতে এনগেজমেন্ট হয়েছে রিয়ার সাথে তার।
কয়েকবার রিং বাজতেই রিসিভ করল রিয়া, ফাইয়ায বলল,” কি ব্যাপার মিসেস!! কোনো খোজ খবর নাই আপনার!?
রিয়া জোর করে হেসে বলল,” এইতো আছি মোটামুটি, নতুন জবে জয়েন করেছিতো প্রচুর প্রেশার বুঝলে!!
বলেই ক্লান্ত হওয়ার ভান ধরে আঙুল দিয়ে কপাল মুছল রিয়া।
চিত্রা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে রিয়ার দিকে , মনেমনে বলল, ” আহা!! কতো কাজ করেন আপনি!! রিয়া ম্যাম!!
ফাইয়ায ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করল,” ও আচ্ছা, তা জবে কবে জয়েন করলে!! আমাকে বলোনিতো!?
রিয়া ক্লান্ত গলায় বলল, ” আজই জয়েন করেছি, বাদ দাও ওসব। তুমি কবে ফিরবে!?
ফাইয়ায কফির মগে চুমুক দিয়ে বলল, ” বিয়ের প্রিপারেশন নিতে থাকো মিসেস। একদিন হুট করেই বর বেশে চলে আসবো তোমায় বউ করে নিতে।
রিয়া বিরক্ত হলেও জোর করে হেসে বলল, ” ফাইয়ায!! তুমি তো জানো আমার চয়েজ কত বিশ্রি!! বরং তুমি এলে আমরা একসাথে শপিং করবো, কেমন!?
ফাইয়ায কিছু বলার আগেই রিয়া তড়িঘড়ি করে বলল, ” আমার বস আসছে এখন রাখি, পরে কথা বলব বাই।
বলেই কল কেটে দিল রিয়া, একটা বড় নিঃশ্বাস নিয়ে আবার কাজে মনোযোগ দিল সে।
চিত্রার চোখ দুটো মার্বেলের মতো ঘুরছে, কি বলল রিয়া এতক্ষণ!! আর বস!! বস কখন এলো!!
.
.
.
.
.
(চলবে)
বিঃদ্রঃ গল্পটা একদিন পর পর দিবো, সময় পেলে প্রতিদিন দেওয়ার চেষ্টা করবো😇
#happyreading ♥️