#চলো_ভিজি_বৃষ্টিতে
#Tanjima_Islam
৩
.
.
.
.
.
কল কেটে রুম থেকে বেরিয়ে ড্রয়িং এ গেল রিয়া, বাবা সোফায় বসে টিভি দেখছে, মা কিচেনে রান্নায় ব্যস্ত।
রিয়া ফ্রিজ খুলে ডালিমের শরবত নিয়ে খেতে খেতে কিচেনে গেল।
মিসেস ইরা হেসে বলল, ” কিরে! ঘুম ভাংলো!?
রিয়া শরবত খেতে খেতে বলল, ” হুম, আচ্ছা শোনো না। কালকে অফিস শেষে আফসানার বাসায় যাবো। ফিরতে লেট হবে, আব্বুকে তুমি ম্যানেজ করে নিও মাম্মাম প্লিজ।
মিসেস ইরা চোখমুখ শক্ত করে তাকালো মেয়ের দিকে।
রিয়া ঠিক বুঝতে পারছেনা তার মা রেগে যাচ্ছে নাকি এমনই ভয় দেখাচ্ছে।
তবে মনে হচ্ছে না ভয় দেখাচ্ছে, কারণ বাসায় লেট করে ফেরার কথা বলেছে সে!
মিসেস ইরা কটমট করে বলল, ” কোনো দেরি করা চলবেনা, আফসানার বাসায় যাওয়া জরুরি হলে অফিস টাইমের আগেই গিয়ে দেখা করে আসবি। সন্ধ্যা ছটার মধ্যে তোকে বাসায় দেখতে চাই!
রিয়া অসহায় চোখে তাকিয়ে আছে মায়ের দিকে।
মিসেস ইরা মুখে হাসি ফুটিয়ে মেয়ের গাল টেনে বলল,” বুঝেছো মাম্মাম!?
রিয়া জোর করে হেসে বলল, ” বুবুঝেছি মাম্মাম!!
মিসেস ইরা মেয়ের কপালে চুমু খেয়ে বলল, ” গুড গার্ল, এখন খাবার গুলো ডাইনিং এ নিয়ে যাও তো।
রিয়া লক্ষী মেয়ের মতো মাথা নাড়িয়ে খাবার নিয়ে ডাইনিং এ সাজাতে লাগল।
.
.
.
.
.
অ্যালার্মের শব্দে ঘুম ভেঙে গেল রিয়ার, ধড়ফড়িয়ে উঠে বসল সে।
গোসল করে একেবারে রেডি হয়ে বেরিয়ে পড়ল অফিসের উদ্দেশ্যে।
অফিসের গ্রাউন্ড ফ্লোরে এসে লিফটের সামনে দাড়াতেই গতকালের ঘটনা মনে পড়ল তার। খেয়াল করল একটা লিফট বাদে বাকি দুইটায় অফিসের স্টাফ উঠছে।
রিয়াও তাদের সাথে একটায় গিয়ে উঠল। লিফটে উঠে দেখল আরহামও এই লিফটে! রিয়া তাড়াতাড়ি লিফটের দরজা আটকে সবাইকে বলল,” আরে আপনারা এটাতে কেন উঠেছেন!? যান অন্যটাতে যান।
রিয়ার কথায় সবাই ভ্রু কুচকে তাকালো, আরহাম একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল, ” দরজা ছেড়ে দিন মিস।
রিয়া অগত্যা দরজা ছেড়ে বিড়বিড় করে বলল, ” সবাই উঠলে দোষ নেই, আমি উঠলেই যত দোষ! প্রাইভেট লিফট না ছাই, সবাইকে নিয়েই যদি উঠবি এতো ভাব নেওয়ার দরকার কি ছিলো!? হুহ!!
পাশ থেকে একটা ছেলে রিয়ার কথা শুনে বলল,” এটা আমাদের অফিস স্টাফদের লিফট, বসের প্রাইভেট লিফটে প্রবলেম হইছে তাই এটাতে আসছে।
রিয়া জোর করে হেসে বলল, ” ও আচ্ছা।
চারতলায় এসে একে একে সবাই নেমে গেল, রিয়া বের হতে গিয়ে আরহামের দিকে ঝুকে ভ্রু নাচিয়ে বলল, ” সেই তো আপনাকে স্টাফদের সাথেই লিফটে ওঠা লাগল। তাহলে শুধুশুধু প্রাইভেট লিফট রেখে কি লাভ!!?
বলেই লিফট থেকে বেরিয়ে গেল রিয়া, আরহাম ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে রিয়ার দিকে।
আজ পর্যন্ত অফিসের কোনও স্টাফ রেস্পেক্ট দিয়ে ছাড়া তার সাথে কথা বলার সাহস করেনি। আর এই মেয়ের সাহস দেখে সে অবাক হয়ে যাচ্ছে।
.
.
.
.
.
.
অফিসে ঢুকে চিত্রাকে ডেকে পাঠালো আরহাম।
চিত্রা নক করে বলল, ” স্যার আসবো!?
আরহাম ভেতরে আসতে বলে জিজ্ঞেস করল ,” আমার কফি কোথায় চিত্রা!?
চিত্রা আমতাআমতা করে বলল, ” স্যার আমি কফি আনতে যাচ্ছিলাম, তখনই আপনই ডেকে পাঠালেন, তাই আমি!
চিত্রাকে আর কিছু বলতে না দিয়ে আরহাম বলল,” তুমি যাও তোমার কাজে মন দাও, তোমার এসিস্ট্যান্টকে বলো আমার জন্য কফি আনতে। গো ফাস্ট!
চিত্রা আর এক মুহুর্ত দেরি না করে রুম থেকে বেরিয়ে এল।
হন্তদন্ত হয়ে রিয়ার ডেস্কের ওপর এসে বলল, ” এসব রাখো, কফি নিয়ে এসো তাড়াতাড়ি।
.
.
.
.
.
রিয়া নিজের ডেস্কে বসে মন দিয়ে কাজ করছিলো।
চিত্রার কথায় সব গুলিয়ে ফেলেছে সে, বিরক্ত হলেও জোর করে হেসে বলল, ” কয় মগ খাবেন চিত্রা ম্যাম!?
চিত্রা শয়তানি হাসি দিয়ে বলল, ” কফি আমার জন্য নয়, আরহাম স্যারের জন্য। এখন দেরি না করে স্যারের রুমে কফি নিয়ে যাও তাড়াতাড়ি।
রিয়া চোখমুখ খিচে উঠে দাড়ালো, গটগট করে অফিসের কিচেনে গেল সে।
কোথায় ভেবেছিলো আজকে তাড়াতাড়ি কাজ কম্পলিট করে লাঞ্চ টাইমে আফসানার বাসায় যাবে সে।
অথচ এখন বসে বসে কফি বানাতে হচ্ছে!! তাও আবার ঐ খাটাশ আরহামের জন্য!!!
কফি নিয়ে দরজায় নক করল রিয়া, আরহাম কাম ইন বলে ল্যাপটপের দিকে তাকালো।
রিয়া গটগট করে ঢুকে টেবিলে কফির মগ রেখে চলে যেতে লাগল।
আরহাম থমথমে গলায় ডাকল,” এক্সকিউজ মি মিস!?
রিয়া ফিরে এসে জোর করে হেসে বলল, ” রিয়া।
আরহাম ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করল, ” ম্যালেরিয়া! নাকি ইউরিয়া!!?
রিয়া রেগেমেগে কিছু বলতে যাবে, আরহাম শয়তানি হাসি দিয়ে বলল, ” মানে, আগেপিছে কিছু নেই নাকি!?
রিয়া দাতে দাত চেপে বলল, ” তানজীমা ইসলাম রিয়া, আমার নাম।
আরহাম মাথা নাড়িয়ে কফির মগটা হাতে নিয়ে জিজ্ঞেস করল, ” তো, মিস রিয়া! কতদিন হল এখানে জব করছেন!?
রিয়ার এখন মন চাচ্ছে গরম কফির মগটাতে আরহামকে ডুবিয়ে মারতে।
ব্যাটা খাটাশ! এমনইতেই আজ কেন জানি কোনো কাজ ঠিকমতো হচ্ছেনা।
আর ইনি এসেছে খোশগল্প করতে!!
কিন্ত মুখে বলল, ” আজ তিনদিন হচ্ছে স্যার।
আরহাম মনেমনে বলল, ” তারমানে অফিসে জয়েন করার আগেই তোমাকে দেখেছি।
রিয়া ধৈর্য্য হারিয়ে বলল, ” আপনার আর কিছু লাগবে স্যার!?
আরহাম কফিতে চুমুক দিয়ে চোখমুখ কুচকে বলল, ” এটা কি বানিয়েছো!!? কফি নাকি করল্লার জ্যুস!!!?
রিয়া অবাক হয়ে বলল, ” কেন!? ভালো হয়নি!? কই দিন দেখি।
বলেই আরহামের হাত থেকে মগটা নিয়ে চুমুক দিয়ে বলল, ” কই! ভালোই তো হয়েছে!!
আরহাম থমথমে গলায় বলল, “বাট আমার ভালো লাগেনি, যাও আবার বানিয়ে আনো।
রিয়ার মন চাচ্ছে এই গরম কফির মধ্যে আরহামকে চুবিয়ে মারতে! আসলেই একে করল্লার জ্যুস খাওয়ানো উচিৎ।
রিয়াকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আরহাম বলল, ” দাঁড়িয়ে না থেকে যাও কফি বানাও।
রিয়া আর দেরি না করে রুম থেকে বেরিয়ে এল, আরহামকে মনেমনে হাজারটা গালি দিতে দিতে নিজের ডেস্কে গিয়ে বসল রিয়া।
রিয়া রুম থেকে বেরিয়ে যেতেই আরহাম কল দিল ড্রাইভার করিম কে, বাকা হেসে বলল, ” মেয়েটাকে খুজে পেয়েছি, তোমাকে আর খুজতে হবে না।
.
.
.
.
.
আফসানা গাল ফুলিয়ে বেডে বসে আছে, তার আব্বু আম্মু ব্যাগ গোছাতে ব্যস্ত।
আফসাকে বসে থাকতে দেখে তার আম্মু বলল,” কিরে! এখনও গোসলে গেলিনা!!? রাতে ট্রেন, এখনও কত প্যাকিং বাকি!!!
আফসা বিরক্তি মাখা মুখ করে বলল, ” আমি যেয়ে কি করবো বুঝিনা, বাড়ি করবে তো তোমরা যাও। আমি এখানে থাকি।
আফসার আম্মু অবাক হয়ে বলল,” এখানে থাকবি মানে!? আমরা সবাই চলে যাচ্ছি, তুই একা কিভাবে থাকবি!?
আফসা বেড থেকে নেমে মায়ের সামনে দাড়িয়ে বলল, “হোস্টেলে! আবার কোথায়!?
আফসার মা কিছুক্ষণ তাকিয়ে বলল, ” হোস্টেলে থাকার কথা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে গোসলে যা। আমাদের সাথে তুইও যাবি।
আফসা আর কিছু না বলে ড্রেস নিয়ে হনহন করে গোসলে ঢুকল।
সেই ক্লাস ফাইভ থেকে শহরেই মানুষ আফসানা। শুধু ছুটিতে গ্রামে দাদুবাড়ি বেড়াতে যেতো সে।
আফসার বাবা পেশায় সাংবাদিক, অবসরে আছেন এই দেড় মাস হল।
জমিজমা ভাগ হওয়ার পর সেখানে বাড়ি বানাতে চাচ্ছে আফসার বাবা।
তাই শহর ছেড়ে সপরিবারে গ্রামে যাচ্ছে তারা। কিন্ত আফসা যেতে নারাজ, তার কলেজ, ফ্রেন্ডস সবকিছুই এখানে।
এসব ছেড়ে কি না তাকে এখন গ্রামের এক কলেজে গিয়ে ভর্তি হতে হবে!
ভাবতেই মেজাজটা খারাপ হয়ে যাচ্ছে আফসার।
গোসল করে বেরিয়ে আলমারি খুলে নিজের সব কাপড়চোপড় বের করতে লাগল। না চাইতেও দাদুবাড়ি যাওয়ার জন্য ব্যাগ গোছাতে হচ্ছে তাকে।
বাবা-মায়ের কথা মানতে সে বাধ্য, বরাবরই বাবা-মাকে একটু বেশিই ভয় পায় আফসানা।
.
.
.
.
.
সুমু বসে আছে তার একমাত্র স্টুডেন্ট সিয়ামের বাসায়।
আজ মাসের বেতন পাবে সুমু, তাই সে বেজায় খুশি।
হটাৎ সুমুর স্টুডেন্ট সিয়াম এসে বলল, ” ম্যাম! ম্যাম!! আমার ভাইয়া আপনাকে ডাকছে!!!
সুমু ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করল, ” তোমার ভাইয়া!!! আমাকে কেন ডাকছে!!?
সিয়াম ক্লাস ওয়ানে পড়ে। কিন্ত তার কথাবার্তা, এটিটিউড দেখলে মনেই হবেনা যে, সে ক্লাস ওয়ানে পড়ে!
সিয়াম কিছু একটা ভেবে বলল, “খুব ইম্পর্ট্যান্ট কথা আছে বলল।
সুমু ভাবল নিশ্চয়ই বেতন দেবে তাই ডাকছে। খুশি মনে সিয়ামের সাথে গেল সুমু।
সুমুকে নিয়ে বাসার ছাদে গেল সিয়াম, সুমু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, ” আমাকে এখানে আনলে কেন!? আর তোমার ভাইয়া কোথায়!?
সিয়াম কিছু না বলে দৌড়ে ছাদ থেকে নেমে গেল। সিয়ামকে হটাৎ দৌড় দিতে দেখে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল সুমু।
সে সিয়ামকে ডাকতে যাবে, ঠিক তখনই কেউ তাকে ডেকে বলল, ” বেতন না নিয়ে কোথায় যাচ্ছেন ম্যাম!?
সুমু পেছনে ফিরে দেখল কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে আছে সিয়ামের বড় ভাই সায়ন।
সুমু স্মিত হেসে বলল, ” না, আসলে। সিয়াম বলল
সুমুকে আর কিছু বলতে না দিয়ে সায়ন বলল,” দেখুন আমি ঘুরিয়ে ফিরিয়ে কোনো কথা বলতে পারিনা। যা বলার ডিরেক্ট বলি।
সুমু ভ্রু কুচকে বলল, ” ঠিক বুঝিনি।
সায়ন সাথেসাথেই বলল,” আমি আপনাকে পছন্দ করি।
সুমু থ হয়ে গেল, কি বলবে ভেবে পাচ্ছেনা সে। আজ তার বেতন দেওয়ার কথা, বেতন না দিয়ে এ ব্যাটা কেমন ফাজলামো করছে!!
সায়ন আবার বলল,” জানি হটাৎ করে এসব শুনে বেশ অবাক হয়েছেন। প্রবলেম নাই, সময় নেন। আমি তো এখনও প্রোপোজ করিনি, আগে আমরা একে অপরকে জানবো। তারপর রিলেশনের ব্যাপারে ভাববো, সো এখনই এতো নার্ভাস হওয়ার কিছু নাই।
সুমু শুধু অবাক হয়ে সায়নের কথা শুনছে। সায়নের গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট, চাকরির পরীক্ষা দিচ্ছে।
সুমু লম্বাচওড়া শ্যামলা এই ছেলেটার চোখ ভর্তি মায়ায় পড়েছে অনেক আগেই।
সায়নকে প্রথম দেখেই ক্রাশ খেয়েছিলো সুমু। সে তো ভাবতেই পারেনি সায়নও তাকে পছন্দ করে! কিন্ত সায়ন কখনোই ঘুরেও দেখতো না সুমুকে, সে ভেবেছিলো সায়নের নিশ্চয়ই রিলেশন আছে।
সুমু নিজেকে সংযত করে বলল, “হুম, অবাক তো হয়েছিই। আরও অবাক হচ্ছি আপনার কথা শুনে। আমাদের মধ্যে কোনও রিলেশন নেই, তাহলে আমরা দুজন দুজনকে জানবো কিভাবে!?
সায়ন স্মিত হেসে বলল, ” সেটা নাহয় কাল জানবেন। আমি আপনাকে লোকেশন টেক্সট করে দিবো। আর এই নিন আপনার বেতন।
বলেই টাকা এগিয়ে দিল সুমুর দিকে, সুমু টাকাটা নিয়েই একরকম ছুটে নেমে গেল ছাদ থেকে।
সায়নের সামনে দাড়িয়ে থাকতে পারছেনা সে, মনেমনে অদ্ভুত উত্তেজনা অনুভব করছে সুমু।
সুমাইয়া ছাদ থেকে নেমে যেতেই স্মিত হাসল সায়ন। সুমু প্রায় তিনমাস ধরে সিয়ামকে পড়াচ্ছে। সুমু বিকালে পড়াতে আসে। এদিকে সায়ন দরজা লক করে সারারাত জেগে পড়ে আর সকাল বিকাল ছাদে হাটাহাটি করে।
সেদিন সিয়ামের পড়া হয়নি তাই ছাদের চিলেকোঠায় গিয়ে লুকিয়ে ছিলো সিয়াম। এদিকে সুমু পড়াতে এসে বসে আছে, সিয়ামের খবর নেই।
সিয়ামের আম্মু আর সুমু মিলে খুজতে লাগল সিয়ামকে। ছেলে হারিয়ে গেল নাতো! খুজতে খুজতে ছাদে গেল সুমু আর সিয়ামের মা!!
সায়ন তখন কানে হেডফোন গুঁজে বই পড়ছিলো। হটাৎ অচেনা এক মেয়েকে ছাদে কিছু খুজতে দেখে ডাক দিল সায়ন।
সুমুকে দেখেই থমকে যায় সায়ন, সুমু যে অসম্ভব সুন্দরী তা নয়। কিন্ত সায়নের কাছে সেদিন ঘনকালো পাপড়ি চোখের শ্যামবর্ণা সুমাইয়াকে, “কৃষ্ণকলী” এর মতোই সুন্দরী মনে হয়েছে।
সেদিনের পর থেকে সুমুকে আড়াল থেকে দেখতো সায়ন।
সুমু কোথায় থাকে, কি করে সব খোজ নিল সায়ন।
ধীরে ধীরে সুমুর প্রতি অজানা টান অনুভব হতে লাগল তার।
অবশেষে ঠিক করল, সুমুকে তার ভাললাগার ব্যাপারটা জানাবে। তাই ভাইয়ের টিউশনির টাকা দেওয়ার বাহানায় সুমুকে জানিয়ে দিল সায়ন।
খোলা আকাশে দিকে তাকিয়ে বলল, ” এখন শুধু তোমার উত্তরের অপেক্ষা!
.
.
.
.
.
অফিস শেষে সিএনজি এর জন্য দাঁড়িয়ে আছে রিয়া।
ভেবেছিলো লাঞ্চ টাইমে আফসার বাসায় যাবে, কিন্ত আরহামের জন্য কফি বানাতে বানাতেই কাজে দেরি হয়ে গেল!
এখন আফসার বাসায় যাবে তারপর সোজা নিজের বাসায়।
বাট একটা সিএনজিও আফসাদের বাসার দিকে যেতে চাচ্ছেনা।
রাগে মেজাজটা খারাপ হয়ে যাচ্ছে রিয়ার।
করিম পার্কিং লট থেকে গাড়ি আনতে গেছে, আরহাম ফোনে কথা বলতে বলতে রিয়ার পাশে এসে দাড়ালো।
রিয়ার সেদিকে খেয়াল নেই, একের পর এক সিএনজি ডাকছে সে।
আরহাম ফোন রেখে বলল, ” কোন এলাকায় থাকো যে, সিএনজি যেতে চায়না!!?
কথাটা শুনেই তেলে বেগুনে জ্বলে উঠল রিয়া। আরহামের দিকে কটমট করে তাকিয়ে বলল,” বুড়িগঙ্গার ওপরে থাকি, লঞ্চ পাইনি তাই প্লেন খুজছি।
রিয়ার কথা শুনে আরহাম হাসবে কি কাদবে বুঝতে পারছেনা। কিন্ত রিয়া যে এখন ভিষণ রেগে আছে বুঝতে পারছে।
বেচারি আজ তার জন্য কফি বানাতে বানাতে কাহিল হয়ে গেছে।
এতো কফি হয়তো সে তার সারাজীবনেও বানায়নি! রিয়া সিএনজি না পেয়ে ফুটপাত দিয়ে হাটতে লাগল।
এদিকে করিম গাড়ি এনে আরহামকে ডাকছে, আরহাম করিমকে বলল,” করিম তুমি বাসায় চলে যাও, আমি নিজে ড্রাইভ করে চলে যাবো।
রিয়া হাটছে আর আফসানার গুষ্টি উদ্ধার করছে।
কি হয়েছে ফোনে বললে কি হতো!? এখন ওর বাসায় যেতেই সন্ধ্যা হয়ে যাবে, বাসায় ফিরবো কখন!!?
আম্মু আজ বাসায় ঢুকতেই দেবেনা নিশ্চিত! হটাৎ গাড়ির হর্ন শুনে সরে দাড়ালো রিয়া!! কিন্ত হর্ন বেজেই চলেছে!!!
রিয়া দু’হাতে কান চেপে ধরে খেকিয়ে উঠে বলল,” ঐ! সমস্যা কি হ্যা!! কতবার হর্ন বাজানো লাগে!!!
গাড়ির গ্লাস খুলে আরহাম মুখ বের করল, আরহামকে দেখেই রিয়া কিছু বলতে যাবে। আরহাম এক গাল হেসে বলল, “বুড়িগঙ্গার ওপর আজ বোধহয় সব ফ্লাইট অফ। চাও তো ট্রাক্টর দিয়ে পৌছে দিই!!
রিয়া এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখল সন্ধ্যা নামার বেশি দেরি নেই।
একা একা এখন চলাও রিস্ক, কিন্ত তাই বলে এই খাটাশের সাথে যাবো!! নো ওয়ে!!!
রিয়া মুখ ভেংচি কেটে অন্য দিকে তাকালো, আরহাম ভ্রু উঁচিয়ে বলল, ” ওকে, একাই যাও। শুনেছি সেদিন নাকি এই রাস্তায় একটা মার্ডার হয়েছে! যাইহোক, কাল অফিসে দেখা হচ্ছে। বাই!!!
আরহামের বাই বলার দেরি, রিয়া তড়িঘড়ি করে গাড়িতে উঠে গেল।
আরহামের পাশে বসে সিটবেল্ট লাগাতে লাগাতে বলল,” আজ আমি আপনার জন্য লাখ লাখ মগ কফি বানিয়েছি, সো এখন আপনি আমাকে পৌছে দিবেন।
আরহাম অবাক হয়ে বলল, ” লাখ লাখ!
রিয়া আমতাআমতা করে বলল, ” উফফ চলুন তো, আমার দেরি হচ্ছে।
আরহাম বাকা হেসে ড্রাইভ করতে লাগল,
ছয়তলা এক বাসার সামনে এসেই নেমে গেল রিয়া। আরহাম জিজ্ঞেস করল, “এটা তোমার বাসা!?
রিয়া যেতে যেতে বলল, ” আমার ফ্রেন্ড ভাড়া থাকে এখানে।
আরহাম মনেমনে বলল, “বাসায় না গিয়ে, ফ্রেন্ডের বাসায় কি!? হয়তো মিথ্যে বলেছে, যেন ওর বাসা তা না জানি।
সাতপাঁচ না ভেবে গাড়ি নিয়ে বাসায় চলে গেল আরহাম।
.
.
.
.
.
আরশি ব্যালকনিতে বসে উপন্যাস পড়ছে, হটাৎ ফোনের রিংটোন পেয়ে ফোনের দিকে তাকালো।
আননোন নম্বর থেকে কল এসেছে, রিসিভ করে হ্যালো হ্যালো করতে লাগল আরশি।
কিন্ত কেউ কোনও কথা বলছেনা, বিরক্ত হয়ে কল কেটে দিল আরশি।
আজকাল প্রায়ই আননোন নম্বর থেকে কল আসে তার। কিন্ত রিসিভ করলে কেউ কথা বলেনা।
আরহাম এসে নক করল আরশির দরজায়, আরশি বই রেখে দরজা খুলে বলল,” কিরে! অফিস থেকে কখন ফিরলি!?
আরহাম ভেতরে ঢুকে সোফায় বসে বলল, ” এই তো কিছুক্ষণ আগে, শাওয়ার নিয়ে এখানে এলাম।
আরশি ভ্রু কুচকে বলল, “কি ব্যাপার বল তো, তোকে আজ ভিষণ খুশি খুশি লাগছে!?
আরহাম আমতাআমতা করে বলল, ” কেন! আমাকে দেখে কি তাই মনে হচ্ছে!?
আরশি মুখ ভেংচি কেটে বলল, ” থাক হয়েছে! তলেতলে তো ঠিকই ইকরার সাথে চলে!! আর আমার সামনে যত ঢং!!! হুহ।
আরশির কথা শুনে আরহাম ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বলল, ” মানে!!? ইকরার সাথে আমি!!? তোর কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে!!?
আরশি গাল ফুলিয়ে বলল,” তাহলে তুই আর ইকরা এক রুমে কি করছিলি শুনি!? তোর সাথে তাল মিলিয়ে ইকরাকে নিয়ে হাসাহাসি করেছি। এখন তাকেই! ইকরাকে কি দেখে পছন্দ করলি কে জানে!!যা পারিস কর, আমার কি!!?
আরহাম বুঝল গতকাল ইকরা তার রুমে যাওয়ায় আরশি ভেবেছে, ইকরার সাথে আরহামের রিলেশন হয়েছে! আরহাম হো হো করে হেসে সবটা খুলে বলল বোনকে।
আরশি সবশুনে বলল, ” ভাইরে ভাই! এ মেয়ে এতো ছ্যাচড়া কেন!!
.
.
.
.
.
(চলবে)