চলো ভিজি বৃষ্টিতে পর্ব-৩৪

0
900

#চলো_ভিজি_বৃষ্টিতে
#Tanjima_Islam
৩৪
.
.
.
.
.
ফাইয়ায মাথা দুলিয়ে বলল, ” ওকে, তুমি টাইম আর লোকেশন টেক্সট করে দিও।

রিয়া আচ্ছা বলে কল কেটে দিল, ফাইয়াযের কন্ঠ শুনে কেমন যেন অস্থির মনে হচ্ছিলো।

ফাইয়ায কি কিছু নিয়ে টেনশন করছে!? আমার আর আরহামের ব্যাপারটা জেনে গেছে নাকি! উফফ আর ভাবতে পারছিনা!!
.
.
.
রুমের দরজা লক করে বেডে উলটে পড়ে আছে ইকরা।
সারাদিন নিজেকে ঘরবন্দী করে রেখেছে সে, ইকরার বাবা ইকবাল হাসান বেশ কয়েকবার ডেকে গেছেন মেয়েকে।

কিন্তু মেয়ের জেদের সাথে পেরে ওঠেনি সে, মেয়েটা তার ছোট থেকেই খুব জেদি।

ইকরার মা মারা যাওয়ার পর থেকে ইকবাল হাসান মেয়ের কোনো চাওয়াই অপূর্ণ রাখেননি।

এই প্রথম সে মেয়ের জেদের সামনে নিজের সিদ্ধান্তকে অটল রেখেছেন।
কারণ এতেই সবার ভালো, ইকরার জেদ একদিন কেটে যাবে।
কিন্ত আরহামের সাথে জোরপূর্বক বিয়ে দিতে চাইলে আরহাম ইকরাকে বিয়ে তো করতো না উল্টো ঝামেলা বাড়তো।
.
.
.
এদিকে ক্ষিদের জ্বালায় ছটফট করছে ইকরা, রুমে এক জগ পানি ছাড়া খাওয়ার কিছুই নেই!
সেই সকাল থেকে কিচ্ছু খায়নি সে, পা টিপে টিপে রুম থেকে বেরিয়ে এলো ইকরা। নাহ আশেপাশে কেউ নেই!

সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে সোজা কিচেনে গিয়ে ঢুকল সে, বিকেলের এই টাইমে বাড়ির কাজের লোক দুটো ঘুমিয়ে কাটায় নাহয় বাগানে কাজ করে। সো কারো সামনে পড়ার চান্স নেই!

কিন্ত বিপাকে পড়ল খাবার নিয়ে, দুপুরের খাবার শেষ!
আবার সন্ধ্যায় রান্না হবে রাতের জন্য!! ততক্ষণে তো পেটের নাড়ি শুকিয়ে দড়ি হয়ে যাবে ইকরার!!!

পরক্ষণেই ভাবল ফ্রিজে ফ্রুটস আছে নিশ্চয়ই! ওগুলো হলেই চলবে, ফ্রিজ খুলে ফ্রোজেন চিকেন মিটবল গুলো দেখে চকচক করে উঠল ইকরার চোখ জোড়া!!

মিটবল গুলো বের করে ভাজতে লাগল সে, ভেজে বাটিতে রাখার সময় নেই তার।
গপাগপ মুখে পুরে চলেছে গরম গরম মিটবল!!!

খেয়েদেয়ে স্টোভ অফ করে কিচেন থেকে বেরিয়ে এলো ইকরা।

ডাইনিং এ এসে চুপিচুপি পানি খেতে গিয়ে দেখল এক প্লেট ফ্রাইড রাইস আর চিকেন ফ্রাই রাখা!

পাশেই একটা চিরকুট, খাবার রেখে চিরকুট কে লিখবে!!

ইকরা নিজ মনেই বলে উঠল, ” নিশ্চয়ই আব্বুর কাজ!

রাগ করে নিজের রুমে চলে যেতে গিয়ে কি ভেবে প্লেট আর চিরকুটটাও নিয়ে নিল।

রুমে এসে আগে চিরকুট খুলে দেখল লেখা আছে, ” জানি খুব রেগে আছিস প্রিন্সেস, কিন্ত কি করবো বল! সব বাবার কাছে তার সন্তানের সুখটাই মুখ্য! তোর সুখের কথা ভেবেই আরহামকে আর জোর করিনি! তোকে কারও বিরক্তির কারণ নয়, কারোর সবটুকু ভালবাসা হিসেবে দেখতে চাই! যে তোকে আমার মতই আগলে রাখবে আজীবন!! আব্বুর এই আবদারটুকু রাখিস মা!!!

চিরকুটটা পড়ে ডুকরে কেঁদে উঠল ইকরা, কাদতে কাদতে পুরো এক প্লেট ফ্রাইড রাইস খেয়ে ফেলল সে!

দরজার আড়াল থেকে মেয়ের কান্ড দেখে ফিক করে হেসে দিল ইকবাল হাসান!!
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
ঘড়িতে রাত সাড়ে দশটা বাজে, আরহাম ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে রিয়ার সাথে কথা বলছে।

রিয়ার সাথে কথা বলে রাখতেই কেউ নক করল দরজায়, আরহাম দরজা খুলে দেখল মুখে মিষ্টি হাসি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে মিসেস আয়েশা।

আরহাম জিজ্ঞেস করল, ” কিছু বলবেন!?

মিসেস আয়েশা স্মিত হেসে বলল, ” হুম বলবো তো অনেক কিছুই। ভেতরে আসতে বলবেনা!?

আরহাম না চাইতেও দরজা থেকে সরে দাড়ালো, মিসেস আয়েশা ভেতরে ঢুকে বেডের পাশের সিংগেল সোফায় গিয়ে বসল।

আরহাম বুঝতে পারছেনা এই মহিলার হটাৎ হয়েছেটা কি!
তখন রিয়ার সাথেও যেচে পড়ে কথা বলল!! এখন আবার আমার রুমে!!!
আর দেশে এসেছে তো এসেছে, এখনও যাওয়ার নামই নিচ্ছে না!!

মিসেস আয়েশা গলা খাঁকারি দিয়ে বলল, ” আরশির লাইফে যা কিছু ঘটেছে তারপর ও যে এতো তাড়াতাড়ি রিকভার করবে ভাবতেই পারিনি। ও হ্যাপি আছে দেখেই শান্তি লাগছে, কিন্ত

আরহাম ব্যালকনির দরজায় হেলান দিয়ে বলল, ” কিন্ত! কি?

মিসেস আয়েশা বলল,” রিয়ার বাবার বন্ধুর একটা ছেলে আছেনা, কি যেন নাম!

আরহাম কিছুটা অবাক হলেও বলল, ” ফাইয়ায!

মিসেস আয়েশা মাথা দুলিয়ে বলল, ” হুম হুম ফাইয়ায। আরশি আর ফাইয়ায দুজন দু’জনকে

মিসেস আয়েশা বাকিটা বলার আগেই আরহাম চমকে উঠে বলল,” দুজন দু’জনকে কি!

আরহামের এমন রিয়াকশন দেখে ভড়কে গেল মিসেস আয়েশা, ইতস্ততভাবে বলল,” ওরা দুজন দু’জনকে ভালবাসে!

আরহামের মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছে না! বাকশক্তি লোপ পেয়েছে নাকি তার!!

মিসেস আয়েশা বুঝতে পারছেনা আরহাম এতটা রিয়াক্ট কেন করছে!!!
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
ফোনের রিংটোন পেয়ে ঘুম ভেঙে গেল রিয়ার, ফোন হাতে নিয়ে দেখল তিনটা মিসডকল উঠে আছে!

এই সাতসকালে কে কল দিচ্ছে!! ট্যাপ করে দেখল ফাইয়াযের কল!!!
এই রে আজ না ওর সাথে দেখা করার কথা!!!

রিয়া তড়িঘড়ি করে বেড থেকে নামতে নামতে টেক্সট দিল ফাইয়াযকে।

লোকেশন টেক্সট করে সোজা ওয়াশরুমে ঢুকে ফ্রেশ হতে লাগল রিয়া।

মিসেস ইরা মেয়েকে ব্রেকফাস্টের জন্য ডাকতে এসে দেখল রিয়া রুমে নেই।

নিশ্চয়ই ওয়াশরুমে গেছে। মেয়ের সাথে অনেক কথা আছে তার, কিন্ত সময় করে পাচ্ছেনা!

আজ যেভাবেই হোক কথা বলতেই হবে, এছাড়া আজ তো ওর অফ ডে!!

রিয়া ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে দেখল তার মা বেডে বসে আছে।
রিয়া তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে বলল,” কিছু বলবে!? আম্মু!

মিসেস ইরা থমথমে গলায় বলল, ” হুম বলবো তো, কিন্ত বলার টাইম পাচ্ছি কই!

রিয়া মুচকি হেসে মায়ের গলা জড়িয়ে ধরে বলল, ” আম্মু! তোমার জন্য তো আমার সময় আর সময়!!

মিসেস ইরা অভিমানী স্বরে বলে উঠল, ” হয়েছে থাক! কেমন সময় তোর দেখবো তো আজ!!

রিয়া জোর করে হেসে বলল, “আম্মু! আজকে তো আমি সারাদিনই ফ্রি, শুধু কিছুক্ষণের জন্য একটু বাইরে যেতে হবে।

মিসেস ইরা মেয়ের দিকে কটমট করে তাকাতেই রিয়া আমতাআমতা করে বলল, ” বেশি না দুয়েক ঘন্টার মধ্যে বাসায় চলে আসবো।

মিসেস ইরা না চাইতেও বলল,” আচ্ছা আচ্ছা ঠিকাছে। জাস্ট দুই ঘন্টা, এর হেরফের হলে

বাকিটা বলার আগেই রিয়া মায়ের গালে চুমু দিয়ে বলল, ” নাহলে আমাকে করল্লার জ্যুস বানিয়ে দিও!

বলেই রেডি হয়ে বেরিয়ে পড়ল রিয়া। এদিকে ফাইয়ায অপরাধীর মতো মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে মায়ের সামনে।

মিসেস ফাতেমা কটমট করে তাকিয়ে বলল, ” পরশু তোর আর রিয়ার গায়ে হলুদ, আর এখন বলছিস বিয়ের ডেট পেছানোর কথা! আত্নীয়স্বজন সবাইকে ইনভাইট করা হয়ে গেছে, কালকের মধ্যেই সবাই চলে আসবে!! বলি, তোর কি মাথা ঠিক আছে না গেছে!!!

ফাইয়ায কাচুমাচু করে বলল,” মনে তো হচ্ছে পুরাটাই গেছে!

মিসেস ফাতেমা হালকা চেচিয়ে উঠলো, ” কোনো ডেট পেছাবে না, তোদের এই বিয়ে নিয়ে আমাদের মাথা আউলায় যাওয়ার মতো অবস্থা!!! আবার আসছে ডেট পেছাতে!!!

বলেই হনহন করে নিজের রুমে চলে গেল মিসেস ফাতেমা।
ফাইয়ায একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বাসা থেকে বেরিয়ে এলো, এখন তাকে রিয়ার সাথে দেখা করতে হবে।
.
.
.
.
.
(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here