#চলো_ভিজি_বৃষ্টিতে
#Tanjima_Islam
৩৬
.
.
.
.
.
রিয়ার মুখে সব শুনে হতভম্ব হয়ে গেছে আরহাম, যদিও গত রাতে মিসেস আয়েশা তাকে বলেছে এ ব্যাপারে।
কিন্ত ঠিক বিশ্বাস করে পারছিলো না সে। কিন্ত রিয়ার কাছে শুনে একেবারে নিশ্চিত এখন!!
প্রথমে সব শুনে মেজাজ খারাপ হয়ে গেছিলো আরহামের কিন্ত রিয়া তাকে বুঝিয়ে বলল,” দেখো আরহাম, ফাইয়ায কিন্ত খারাপ ছেলে না। যথেষ্ট দায়িত্বশীল আর সৎ, শুধু একটু জেদি এই যা!
আরহাম একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, ” সবকিছু কি এতই সহজ রিয়া!?
রিয়া ভাবছে আরহাম হয়তো আগের ঘটনার জন্য ফাইয়াযকে বোনের স্বামী হিসেবে মেনে নিতে চায়না।
রিয়া আরহামের হাত দুটো নিজের হাতে নিয়ে বলল,” প্রথমে আমিও তোমার মতই খুব অবাক হয়েছিলাম, কিন্ত ফাইয়াযের মুখে সব শোনার পর বিশ্বাস করতে বাধ্য হয়েছি। ফাইয়ায সত্যিই আরশি আপুকে খুব ভালবাসে আরহাম!
আরহাম থমথমে গলায় বলল, ” আপু দেশে ফেরার পর অনেক কিছুই ঘটেছে যা শোনার পর হয়তো ফাইয়ায কেন! কোনো ছেলেই সহজে এটা মেনে নিতে পারবেনা।
রিয়া বুঝতে পারছেনা আরহাম ঠিক কি বলতে চাচ্ছে, আরহাম একটু থেমে আবার বলল, ” ফাইয়ায যদি আপুর অতীত মেনে নিতে পারে, তবেই বিশ্বাস করবো সে সত্যিই আমার বোনকে ভালবাসে।
রিয়া জিজ্ঞাসুক দৃষ্টিতে তাকালো আরহামের দিকে, আরহাম একে একে সব খুলে বলল রিয়াকে।
সব শুনে রিয়া একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, ” জানিনা ফাইয়ায কি করবে কিন্ত আরশি আপুও তো জানেনা যে ফাইয়াযের সাথে আমার এনগেজমেন্ট ছিলো!
আরহাম হেসে বলল, ” ওদের ঝামেলা নাহয় ওরাই মেটাক, বাই দ্যা ওয়ে আমরা কবে বিয়ে করছি!? হুম!!
রিয়া সলজ্জ হেসে বলল, ” খুব তাড়াতাড়ি ইনশাআল্লাহ!
.
.
.
.
.
সেই থেকে আরশির দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে ফাইয়ায, আরশি ফাইয়াযের গলা পাওয়া মাত্রই সাফ জানিয়ে দিয়েছে,” দরজা খুলবোনা আমি! তুমি চলে যাও ফাইয়ায!!
ফাইয়ায বুঝতে পারছেনা আরশি হটাৎ এমন বিহেভ কেন করছে!
তাহলে কি আরশি সব জেনে গেছে!! নিশ্চয়ই আরহাম বলেছে!!!
ফাইয়ায গটগট করে সিড়ি বেয়ে নেমে এলো, ফাইয়াযকে আসতে দেখে রিয়া জিজ্ঞেস করল, ” আপুর সাথে কথা হয়েছে!?
ফাইয়ায আরহামের দিকে তাকিয়ে বলল, ” আমি বলার আগেই হয়তো কেউ তাকে বলে দিয়েছে!
আরহাম বুঝতে পারছেনা ফাইয়ায কি বলতে চাচ্ছে, রিয়া কিছু বলার আগেই ফাইয়ায বলল,” আরশি আমার সাথে কথা তো দূর দেখাই করতে চায়না।
বলেই দ্রুত পায়ে বাসা থেকে বেরিয়ে গেল ফাইয়ায, আরহাম আর রিয়া নিজেদের দিকে মুখ চাওয়াচাওয়ি করল।
পরক্ষণেই রিয়াও বাসা থেকে বেরিয়ে ফাইয়াযের সাথে গেল। এদিকে আরহাম ছুটে বোনের রুমের দিকে গেল।
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
জ্ঞান ফিরেছে শোভনের, পিটপিট করে তাকিয়ে দেখল সে তার মায়ের রুমে বেডে শুয়ে আছে!
বেডের দুইপাশে তার মা আর ভাবি বসে আছে। প্রথমে বুঝতে না পারলেও পরক্ষণেই সব মনে পড়ল শোভনের।
ধড়ফড়িয়ে উঠে বসল সে, মিসেস সানজিদা স্মিত হেসে বলল,” এখন কেমন লাগছে আব্বু!?
শোভন কোনো উত্তর দিলনা, তার ভিষণ অভিমান হয়েছে মায়ের ওপর।
সে তো ভেবেই নিয়েছিলো আফসাকে আর পাবেনা।
ইশি এক গ্লাস পানি এগিয়ে দিয়ে বলল, ” পানিটুকু খেয়ে নাও শোভন।
শোভন পানির গ্লাস নিয়ে ঢকঢক করে পুরো পানিটুকু খেয়ে নিল।
মিসেস সানজিদা বুঝতে পারছে ছেলে তার ওপর অভিমান করেছে!
ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে বলল, ” আফসানার বাসায় খবর দিয়েছি, আজ দুপুরে ওদের বাসায় যাবো।
কথাটা শুনে খুশি হলেও প্রকাশ করল না শোভন, মিসেস সানজিদা এবার অন্য পদ্ধতি অবলম্বন করে বলল, ” নাকি তুই আফসাকে বিয়ে করতে চাসনা! ঠিকাছে তাহলে লিলির বড় মেয়েকে
মাকে আর কিছু বলতে না দিয়ে শোভন চেচিয়ে উঠলো, ” না! আমি আফসাকে বিয়ে করবো!!
শোভনের আতংকিত চেহারা দেখে ফিক করে হেসে দিল তার মা আর ভাবি।
শোভন এবার বেশ লজ্জায় পড়ে গেল।
মিসেস সানজিদা ছেলের চুল এলোমেলো করে বলল,” নে এবার ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে নে। দুপুর হয়ে এলো প্রায়!
ইশি দেবরের গাল টিপে বলল,” আহা আমার লাজুক দেবরজী! আর লজ্জা পেতে হবে না, আর কদিন পর বিয়ে করবে!!
প্রতিত্তোরে শোভন শুধু হাসল।.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
বেডে হেলান দিয়ে বসে আছে আরহাম, আরশি নিজেকে একদম ঘরবন্দী করে রেখেছে।
শুধু খাবারের জন্য কেয়াকে রুমে ঢুকতে দিচ্ছে কিন্ত মিসেস আয়েশা বা আরহাম কারো সাথেই দেখা করবেনা জানিয়ে দিয়েছে।
হটাৎ ফোনের রিংটোন পেয়ে ভাবনায় ছেদ পড়ল আরহামের।
ফোন হাতে নিয়ে দেখল রিয়া কল দিচ্ছে, রিসিভ করতেই রিয়া বলল, ” কি করছো!?
আরহাম একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, ” রুমে আছি, তুমি!?
রিয়া স্মিত হেসে বলল, ” দোলনায় বসে আছি। আপুর সাথে কথা হয়েছে!?
আরহাম মাথা নাড়িয়ে না করে বলল, ” নাহ! আপু তো রুমেই ঢুকতে দিচ্ছে না। বুঝতে পারছিনা কি হয়েছে! যদি ফাইয়ায আর তোমার ব্যাপার নিয়েই আপসেট থাকে তাহলে আমি বা মিসেস আয়েশাকে কেন এভয়েড করছে বুঝতেছিনা!?
রিয়া ছোট্ট নিঃশ্বাস ফেলে বলল, ” আমিও বুঝতে পারছিনা আরহাম। আর ফাইয়াযও কিছু বলছেনা, সারারাস্তা একটাও কথা বলেনি আমার সাথে। আমাকে বাসায় নামিয়ে দিয়েই চলে গেছে! এমনকি আমার কলও রিসিভ করছে না!!
আরহাম হাতের তালুতে কপাল ঘষতে ঘষতে বলল, ” রিয়া আমি আর কিছু ভাবতে পারছিনা, সবকিছু কেমন যেন কমপ্লিকেটেড হয়ে যাচ্ছে!
রিয়া বুঝতে পারছে আরহাম খুব টেনশনে আছে, কিছু একটা ভেবে বলল, ” বাদ দাও ওসব, আমি আজই আব্বু আম্মুর সাথে আমাদের ব্যাপারে কথা বলবো। দোয়া কইরো!
আরহাম আচ্ছা বলে কল কেটে দিল, এতোকিছুর মাঝে রিয়া যে আংকেল আন্টির সাথে কথা বলবে এটা শুনেই একটু শান্তি পাচ্ছে সে।
রিয়া রুমে গিয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাড়ালো, আগে একটু প্রাক্টিস করে নেওয়া দরকার ঠিক কি কি বলবে আব্বু আম্মুকে।
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
মিষ্টি কালারের শাড়ি পরে বসে আছে সুমু, রাগে মেজাজ খারাপ হয়ে গেছে তার।
শাড়ির আচল দু’হাতে এমনভাবে টানাটানি করছে! পারে তো ছিড়ে সায়নের গলায় পেচিয়ে দেয় সুমু!!
মায়ের ডাকে লক্ষী মেয়ের মতো মাথায় ঘোমটা টেনে বারান্দায় গিয়েছিলো সে।
ছেলেপক্ষ বসে আছে তার সামনে, এদিকে মনের দুঃখে চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ার অবস্থা সুমুর।
হটাৎ কানে এলো পরিচিত সেই কন্ঠঃ! সচকিত হয়ে সামনে তাকালো সুমু!!
আকাশি কালারের শার্ট আর কালো প্যান্ট পরে বসে আছে সায়ন!!!
নিজের চোখকে বিশ্বাস হচ্ছেনা সুমুর! সে কি স্বপ্ন দেখছে!!?
হাত দিয়ে চোখ ডলে আবার তাকালো সে, না এটা সায়নই!!!
কিন্ত সায়ন খুব একটা তাকাচ্ছেনা সুমুর দিকে!!!! নাহলে দেখতে পেতো সুমুর রাগে অগ্নিমূর্তি হয়ে যাওয়া ভয়ংকর রূপটা!!!!
সায়ন আর সুমুকে আলাদা কথা বলতে দিতেই সুমু দাতে দাত পিষে সায়নকে বলল, ” আসুন আমার সাথে।
.
.
.
.
.
বাড়ির পেছনের বাগানে এসে দাড়ালো সুমু, সায়নও এসে দাড়ালো।
সুমু চেচিয়ে কিছু বলার আগেই সায়ন হাটু গেড়ে বসে পড়ল! সুমুর মুখের কথা মুখেই থেকে গেল!!
সায়ন লম্বা লম্বা শ্বাস নিয়ে বলতে লাগল,” জানি তোমার মাথায় অনেক প্রশ্ন ঘুরছে, সবকিছুই বুঝতে পারবে। কিন্ত এখন না, এখন আমি সব ডিটেইলস এ বলার অবস্থায় নেই। বহু খড়কুটো পুড়িয়ে বাবা মাকে আমায় বিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে রাজি করিয়েছি। তবে এক্ষেত্রে তোমার মা মানে আমার ভবিষ্যৎ শ্বাশুড়ি যথেষ্ট হেল্প করেছেন।
একনাগাড়ে বলে থামল সায়ন, এদিকে সুমু খুশিতে আত্নহারা হয়ে গেছে।
তার ইচ্ছে করছে এখনই কাজি ডেকে কবুল বলে দিতে!
সায়নের সাথে বিয়ে হবে ভাবতেই লজ্জায় আরক্তিম হয়ে যাচ্ছে সুমু।
সায়ন সেদিকে না তাকিয়ে প্যান্টের পকেট থেকে একটা রিং এর বক্স বের করে খুলে ধরল সুমুর দিকে!
সুমুর চোখে খুশিতে পানি টলমল করছে যেন টোকা দিলেই পড়ে যাবে!
সায়ন গলা খাঁকারি দিয়ে বলল, ” উইল ইউ ম্যা
বাকিটা বলার আগেই সুমু নাচতে নাচতে বলে উঠল, ” ইয়েস! ইয়েস!! ইয়েস!!!
সুমুর কান্ড দেখে সায়ন হেসে বলল, ” এখন বলেছো বলেছো! বিয়ের দিন আবার আগে থেকে কবুল বলে দিওনা যেন।
সুমু সলজ্জ হেসে মাথা দুলিয়ে বাম হাত এগিয়ে দিল সায়নের দিকে।
সুমুর রিং ফিংগারে রিংটা পরিয়ে রিং এ চুমু খেলো সায়ন!
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
লাঞ্চ করতে বসেছে রিয়া আর মিসেস ইরা, রিয়া আড়চোখে দেখছে তার মাকে।
মিসেস ইরা চুপচাপ খাচ্ছে আর ভাবছে খেয়ে উঠেই মেয়ের সাথে কথা বলতে হবে তাকে।
রিয়া ভাবল এটাই সময়, আরহামের ব্যাপারে বেলে দিই।
রিয়া কাচুমাচু করে ডাকল,” আম্মু!
মিসেস ইরা না তাকিয়েই বলল, ” হুম
রিয়া আদুরে গলায় ডাকল,” মাম্মাম!!
মিসেস ইরা খেতে বলল,” হুম বল
রিয়া ঠোঁট উলটে বলল,” ফাইয়ায আমাকে ভালবাসে না আম্মু, আমিও ফাইয়াযকে ভালবাসি না। ফাইয়ায আরশি আপুকে আর আমি
রিয়া আর কিছু বলার আগেই চমকে উঠল মিসেস ইরা! বিস্মিত হয়ে বলল,” কিসব বলছিস তুই!? তোর মাথা ঠিক আছে!!?
রিয়া বুঝল এভাবে বললে হবে না, এমনিতেও বাসায় কেউই তার কথা সিরিয়াসলি নেয় না।
ভাবে তাদের ছোট্ট রিয়া এখনও সেই বাচ্চাটাই আছে!!
রিয়া একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, ” আমার পক্ষে ফাইয়াযকে বিয়ে করা সম্ভব না। ফাইয়াযও আমাকে না অন্য কাউকে ভালবাসে।
মিসেস ইরা বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে আছে মেয়ের দিকে! পরশু তার মেয়ের গায়ে হলুদ!! আর সেই মেয়ে কিনা আজ বলছে “এই বিয়ে সম্ভব না”!!!
.
.
.
.
.
কলিংবেলের শব্দ পেয়ে রিয়া উঠে দরজা খুলে দিল, মাকে ব্যাপারটা বলার পর নিজেকে বেশ হালকা লাগছে তার।
দরজা খুলতেই একগাদা পরিচিত মুখ দেখতে পেলো রিয়া!
একে একে মামা, মামিরা, খালা, খালু আর কাজিনরা এসে ঢুকল ভেতরে!!
রিয়া সবার সাথে দেখা করে নিজের রুমে চলে গেল, সে তো ভুলেই গেছিলো পরশু তার গায়ে হলুদ!
সে কি বড্ড বেশি দেরি করে ফেলেছে!! কেন জানি কিচ্ছু ভালো লাগছেনা তার।
রুমের দরজা লক করে বসে থাকাও সম্ভব হচ্ছেনা। কাজিনরা মিলে তার রুমেই আড্ডা জমিয়েছে!! ছাদেও চলছে হলুদের জন্য নানান সাজ!!! সব মিলিয়ে দম বন্ধ হয়ে আসছে রিয়ার!!!!
.
.
.
.
.
ফাইয়ায বাসায় ফিরে দেখল বেশ জমজমাট পরিবেশ! তার নানুবাসা থেকে রিলেটিভসরা এসেছে!!
রাতের মধ্যেই নাকি দাদুবাসা থেকেও সবাই চলে আসবে!!!
আরশি আর রিয়ার ব্যাপার নিয়ে এতই ব্যস্ত ছিলো যে পরশু তার গায়ে হলুদ সেই খেয়ালও নেই ফাইয়াযের!!!!
নিজের রুমে ঢুকে দেখল কাজিনরা মিলে হৈ হুল্লোড় করছে!
এদেরকে সাথে নিয়েই বিয়েতে নাচতে নাচতে যাবে বলে কতো প্ল্যান করেছিলো ফাইয়ায!!
আজ তাদের দেখেই বিরক্ত লাগছে তার!!!! কি অদ্ভুত!!
কাজিনদের সাথে কথাবার্তা বলে ওয়াশরুমে ঢুকল ফাইয়ায।
এখন এটাই তার কাছে একটুখানি শান্তির জায়গা! শাওয়ার ছেড়ে ভিজতে লাগল সে, আরশির হটাৎ এমন বিহেভিয়ার দেখে বুঝতে বাকি নেই আরহামই আরশিকে সব বলে দিয়েছে!!
এই আরহামকে একটা শাস্তি দেওয়া দরকার!!!
শয়তানি হাসি দিয়ে মনেমনে বলল, ” হয় আরহাম আমাকে আরশির সাথে দেখা করিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করবে নাহলে আমি রিয়াকে বিয়ে করবো বলে আরহামকে থ্রেট দেবো!!!!
.
.
.
.
.
(চলবে)