#চলো_রোদ্দুরে
#ফাতেমা_তুজ
#part_14
ইমরোজ হাসান নাম টি বড্ড বেশি জ্বালাতন ময়। পাঁচ টি বছর এই এক টা লোক প্রচুর প্যারা দিয়েছে রনিত কে।আজ সেই লোকের শরণাপন্ন হয়েছে পুরো পরিবার সমেত। কারন তাঁর মেয়ে কে বিয়ে করতে চায় ওহ।এসি রুমেই ঘেমে চলেছে রনিত। ওর ভয়ার্ত মুখ টা আজ বেশ ইনজয় করছে রাদ।এই প্রথম রনিতের করুন অবস্থা দেখে বেশ পৈশাচিক আনন্দ হচ্ছে। ছেলেটা আস্ত এক রাসকেল। ভোরের কথা বলার জন্য আর কোনো মানুষ পায় নি। আর সুপ্তি টা ও হচ্ছে এক প্যারা।
_তোমরা সবাই ছাঁদে যাও আমরা বড় রা কথা বলি।
নিজাম এর কথা শুনে লাফিয়ে উঠে যায় রনিত। ইমরোজ এর সুচালো দৃষ্টি হবু জামাতা কে দেখে চলেছে। মেকি হাসে রনিত। পরিস্থিতি অন্যরকম অনুভব করে রাদ ও উঠে দাঁড়ায়। রনিত এর হাত চেপে ধরে বলল
_স্যার আপনারা কথা বলুন আমরা বরং ওদের সাথে ছাঁদে আড্ডা দেই।
_হ্যাঁ বাবা যাও।
ইমরোজ এর সম্মতি পেয়ে চলে আসে দুজনে। রনিত বার কয়েক শ্বাস ফেলে বলে
_ভাই রে ভাই এই স্যার নাকি আমার শশুর হবে। একটা কথা বল তো রাদ এখনো কি জোড়া বেদ দিয়ে মারবে?
_মারতে ও পারে।
কথা টা রসিকতার ছলে বললে ও ভয় পায় রনিত। হেসে ফেলে রাদ। রনিতের কাঁধে হাত রেখে বলল
_স্যারের মেয়ের সাথে প্রেম করার আগে ভাবা উচিত ছিলো এটা।
_আগে যদি জানতাম বিশ্বাস কর প্রেম করতাম না। কে জানতো ইনায়া আমার স্কুল টিচারের মেয়ে।
_হুমম বুঝলাম। বাট এক বছর পর তো জানতে পেরেছিলি।
_ইয়ার তখন আমি ইনায়া কে খুব বেশি ভালোবেসে ফেলেছি।
মুখ টিপে হাসে রাদ। রনিতের বাহু তে হাত দিয়ে ঝাঁকিয়ে বলে
_তুই আমার বন্ধু। সাদা মূলা তুই, আর তুই কিনা ভয় পাচ্ছিস আমাদের স্কুল টিচার কে।
_সাদা মূলা কি?
_ তো লাল মূলা বলবো?
_রাদ, ভাই কি সাহস দিবি কিন্তু তুই আমার সাথে মজা করে যাচ্ছিস।
_আচ্ছা আর মজা করছি না। তুই ইনায়ার সাথে কথা বল।
_ওকে।
ছাঁদে বসে যে যাঁর মতো আড্ডা দিতে ব্যস্ত। বার বার ফোন দেখে চলেছে রাদ। ভোর তো কল করে নি। মেয়েটা ঠিক আছে কি না কে জানে। সেদিন সেভাবে ফ্যাচ ফ্যাচ করে কান্না জুরেছিলো।
ভোরের নাম্বার টা ডায়াল করবে তখনি সুপ্তি এসে হাজির। দাঁতে দাঁত চেপে চলে যায় রাদ। পেছন থেকে চেঁচিয়ে সুপ্তি বলল
_তোর রহস্য উদঘাটন করেই ছাড়বো আমি।
_করতে থাক তুই আর তোর রহস্য উদঘাটন।
ডয়িং রুমে আসতেই ইমরোজ বলেন
_একি রাদ কোথায় যাচ্ছো?
_একটু বাইরে থেকে আসি স্যার। ড্যাড এর বিজনেস এ জয়েন করেছি। দেখি কি অবস্থা, ওঁদের চেঁচামেচি তে শোনা যাচ্ছে না।
_ওহ আচ্ছা যাও।
দ্রুত গতিতে বের হয় রাদ। রাস্তায় এসে দম ফেলে। ভোরের নাম্বার টা ডায়াল করে। এক বার রিং হতেই ফোন রিসিভ করে ভোর। ফিস ফিস করে বলে
_ডাক্তার সাহেব আমি ক্লাসে আছি। একটু পরে কল করছি।
_ভোর শোনো আমার কথা।
কোনো কথাই শুনে না মেয়েটা। কল টা কেঁটে দেয়। ছাঁদে গেলে আর আসতে পারবে না। তাছাড়া মিনিট দশেক পর ই ক্লাস শেষ হয়ে যাবে। তাই এখানেই অপেক্ষা করতে থাকে। রাস্তার মোড়ে একটা বাচ্চা মেয়ে গোলাপ বিক্রি করছে। মন টা খারাপ। এগিয়ে যায় রাদ। মেয়েটা প্রশস্ত হেসে বলল
_ফুল নিবেন স্যার?
_মন খারাপ কেন তোমার?
_সকাল থেকে ফুল বিক্রি হয় নাই।
বাচ্চা মেয়েটির কথা শুনে মন খারাপ হয় ওর। আজ সমস্ত হাইজিনিং ভুলে গিয়ে রাস্তার ধারেই বসে পরে। মেয়েটি অবাক হয়। রাদ বলে
_তোমার ঝোলায় কতো গুলো গোলাপ আছে?
_জানি না।
_পড়াশোনা করো না?
দুদিকে মাথা কাত করে মেয়েটি বলে
_নাহ।
_আচ্ছা তাহলে আমি গুনে দেই।
ফুল গুলো রাদের দিকে এগিয়ে দেয়। এক , দুই , তিন করে পুরো সাতাশ টা গোলাপ গুনে ফেলে রাদ। মেয়েটির দিকে তাকাতেই ফোকলা দাঁত বের করে মেয়েটি হাসে। বেশ ভালো লাগে ওর। সাতাশ টি ফুলের দাম জানতে চাইলেই বাচ্চা মেয়েটি বলে
_একটা ফুল বিশ টাকা করে।
_মোট কতো হলো?
হিসেব মেলাতে পারে না মেয়েটা। টাকার সাথে পরিচিত হলে ও সংখ্যা টা ঠিক ঠাক বুঝতে পারে না। বার বার গুলিয়ে ফেলে। ধারাবাহিকতা শিখা হয় নি যে। অসহায় দৃষ্টি তে তাকায়। হেসে ফেলে রাদ। মেয়েটি যেন লজ্জা পায়।পকেট থেকে হাজার টাকা বের করে দেয় রাদ। বিস্মিত হয়ে মেয়েটি বলে
_এতো টাকা?
_হুমম এটা তোমার ফুলের দাম।
_সত্যি?
_হ্যাঁ।
চোখ দুটো কখন চক চক করে কে জানে। মেয়েটির হাসি মাখা মুখ ওকে মুগ্ধ করে। ফুলের গুচ্ছ দিয়ে মেয়েটি চলে যায়। ফুল গুলো তো নেওয়া হলো তবে কি করবে ওহ?
ভাবনার মাঝে কল আসে ভোরের। রিসিভ করেই বলে
_স্যরি স্যরি আসলে আমি ক্লাসে ছিলাম।
_আমার কথা টা শুনতে পারতে একটু।
_স্যরি।
_আচ্ছা হয়েছে। এবার বলো ঐ ছেলেটা বিরক্ত করেছিলো তোমায়?
_নাহ। আজ তো দেখলাম ই না।
_আচ্ছা ঠিক আছে। দেখলে তো, তুমি অতিরিক্ত ভয় পেয়েছিলে।
_হুম।
_আর কয় টা ক্লাস করবে?
_দুটো।
_ওকে তাহলে আমি তোমায় দেড় টায় এসে পিক করবো। যদি টাইম এর হের ফের হয় তো গেটের কাছে ওয়েট করবে।
_আচ্ছা করবো।
_আর শোনো।
_হ্যাঁ বলুন।
_এক সাথে লাঞ্চ করবো আমরা।
_কিন্তু আপনি তো একটা ফাংশনে আছেন।
_ তো? লাঞ্চ তোমার সাথেই করবো।
ওপাশ থেকে হেসে ফেলে ভোর। ভ্রু কুটি করে ভোর বলে
_অতিরিক্ত কেয়ার।
_উহহু অনেক বেশি অতিরিক্ত কেয়ার।
আবারো হাসে ভোর। সেই ঝমঝমে হাসি কান পেতে শোনে রাদ। হাতে থাকা গোলাপ গুচ্ছ দেওয়ার মানুষ পেয়ে গেছে। তবে সমস্যা হচ্ছে ফুল গুলো দিলে বিষয় টা কেমন কেমন হয়ে যাবে না?
.
রনিত আর ইনায়া গোমড়া মুখে রাদের দিকে তাকিয়ে। মাথা চুলকিয়ে রাদ বলে
_অফিসের কাজ পরে গেছে। দেখ সব তো রেডি ই তাই না। লাঞ্চ করেই তো আমরা বের হতাম। প্লিজ ইয়ার আমাকে যেতেই হবে।
_কষ্ট পেলাম রাদ।
_ সব ঠিক ঠাক তো আমিই করে দিলাম। এখন কষ্ট পাওয়া হচ্ছে হুম? আমি যে এতো প্যারা নিলাম।
_ বসে থাক তুই। আমি বলে রাখলাম আমার বিয়ে তে ও এমন তাড়াহুড়ো করবি তুই।
_ইনায়া যাস না। শুনে যাহ আমার কথা।
ইনায়া চলে যায়। রনিতের মন টা খারাপ থাকলে ও রনিত কিছু বলে না। রাদ বিদায় জানিয়ে চলে যায়।
দশ মিনিটের জায়গায় বিশ মিনিট ধরে অপেক্ষা করছে ভোর। ফোন করবে তখনি রাদের গাড়ি এসে থামে। হনহনিয়ে নেমে যায় ছেলেটা। কানে হাত দিয়ে বলল
_স্যরি।
মুখ ঘুরিয়ে ফেলে মেয়েটা। হঠাৎ হঠাৎ ভোরের অভিমানী হয়ে যাওয়া টা বড্ড বেশি আকর্ষণীয়। রাদের মাথায় বুদ্ধি আসে। কোনো কিছু না ভেবে গাড়ি থেকে গোলাপ গুচ্ছ বের করে নেয়। ভোরের বাহু তে হালকা করে স্পর্শ করে। ভোর তাকায় না। এবার সামনে আসে রাদ। এক হাতে কান ধরে আরেক হাতে গোলাপ গুচ্ছ বের করে এগিয়ে দেয়। বড় বড় চোখে তাকিয়ে থাকে মেয়েটা। রাদ বলে
_ তোমার জন্য।
_গোলাপ আমার পছন্দ নয়।
_সত্যি!
_হুম।
গোলাপের দিকে তাকিয়ে আপসোসের স্বরে রাদ বলে
_তোর সমস্ত রূপ যৌবন ভোর কে ভোর দেখাতে অক্ষম। হায়রে এতো রূপ যৌবন দিয়ে কি হলো?
_আজব। গোলাপের সাথে কেউ কথা বলে?
_আমি বলি।
রাদের থেকে ঝটকা মেরে ফুল নিয়ে নেয় ভোর। অবাক হয়ে বলে
_নিলে কেন?
_গোলাপ আমার ভালো লাগে।
_একটু আগে যে বললে ভালো লাগে না।
_বলেছিলাম নাকি?
দাঁতে দাঁত চেপে রাখে রাদ। খিল খিল করে হাসে ভোর। রাদ বলে
_ওরে দুষ্টু।
_আমি অনেক ফাজিল। যতো দিন থাকবো শুধুই দেখে যাবেন।
_আচ্ছা দেখিও। এখন চলো অনেক ক্ষিদে পেয়েছে।
_হুমম।
_কাচ্চি?
_উহুহ। ভাত খাবো আমি।
_আচ্ছা তাই চলো।
পেট পুরে খায় দুজনেই। ভোর অনেক টা সহজ হয়ে গেছে। ভেতর থেকে ভালো লাগা কাজ করে। যদি ও রাদ মানুষ টাই অন্য রকম। ওর সাথে সহজ হতে বাধ্য সকলে। ফুল গুলো তে হাত বুলাতে থাকে ভোর। শীতে কিছু টা কালচে হয়ে যাচ্ছে গোলাপ গুলো। মুহিতো এর গ্লাসে চুমুক দিয়ে রাদ প্রশ্ন করলো
_ কি দেখছো?
_ফুল গুলো নেতিয়ে যাচ্ছে কেমন।
_এদের সময় সীমা যে এতো টুকুই।
_অদ্ভুত তাই না? একটা ভোর দেখার পর কেউ যদি ওদের তুলে নিয়ে আসে তাহলেই আর কোনো সুযোগ নেই পথ চলার। ঠিক আমার মতো। তবে আমি লাকি যে কেউ একজন আমাকে সুযোগ করে দিয়েছে। নিজ হাতে রোদ্দুরে নিয়ে যাওয়ার আশ্বাস দিয়েছে।
_ইমোশনাল হচ্ছো কেন? একটু আগেই তো হাসছিলে।
চোখের কোন থেকে পানি টুকু মুছে ফেলে ভোর। মৃদু হাসে তবে সে হাসি টা প্লাস্টিকের হাসি। ফুল গুলো নিয়ে নেয় রাদ। ভোর বলল
_দিন আমায়।
_একদম নয়। এই ফুল গুলোর জন্যই কাঁদছো তুমি।
_আরে দিন না।
_দিবো না।
_প্লিজ ডাক্তার সাহেব।
_উহহু। এখন এগুলো পাশের পার্কে থাকা বাচ্চা দের হাতে চলে যাবে।
ঠোঁট উল্টিয়ে ফেলে ভোর। তাঁর ফুল নিয়ে গেল রাদ। বিষয় টা মানতে পারছে না। পার্কে এসে সবার হাতে ফুল তুলে দেয় রাদ। একে একে সব গুলো বাচ্চা হামি দেয় ওকে। আর ভোর ঠোঁট বাকিয়ে তাকিয়ে থাকে। কাছে এসে রাদ বলে
_ওরা খুব সুইট। ফুল গুলো দিতেই হামি দিয়ে দিলো। আর তুমি ফুল পেয়ে কান্না শুরু করে দিলে। পুরোই করলার জুস।
_তো এখন আমি আপনাকে হামি দিবো?
_দিতে চাচ্ছো? সমস্যা নেই সাতাশ টা বাচ্চা তো হামি দিয়েছেই তুমি দিলে না হয় আটাশ টা বাচ্চার হামি হবে।
ফিচেল হেসে কথা টা বলে রাদ। পর পর থাপ্পড় বসিয়ে দেয় ভোর। রাদের কলার চেপে বলে
_আমি বাচ্চা না ওকে।
_হুম বুঝলাম গাঁয়ে শক্তি অনেক। আঠারো তে পা রাখবে এর প্রমান দিচ্ছো। পিঠে জখম হয়ে গেছে একদম।
একটু আগে করা ঘটনা মনে হতেই দু হাত দূরে সরে যায় ভোর। কি করলো এটা? রাদ কে থাপ্পড় মেরে আবার কলার ও চেপে ধরেছিল। এখন কি হবে? রাদের দিকে তাকানো দুষ্কর হয়ে গেল। এক গ্লাস পানি দিলে ভোর নিশ্চয়ই সেই পানি তে ডুবে প্রান ত্যাগ করতো। আর পত্রিকায় ছাপা হতো ডাক্তার সাহেব কে মেরে লজ্জা গ্রস্ত হয়ে এক গ্লাস পানির মধ্যে ডুবে আত্মহত্যা করেছে ভোর। ইসস কি লজ্জা!
**সবার এক প্রশ্ন। গল্প কেন দিচ্ছি না। ভাই পোস্ট ব্লক খেয়েছিলাম আমি।পোস্ট করাই যাচ্ছিলো না। রিচ কমে গেছে একদম। সবাই বেশি বেশি কমেন্ট করুন।
বি : দ্র : ভুল ত্রুটি মাফ করবেন।
চলবে