চলো রোদ্দুরে পর্ব-১৫

0
1791

#চলো_রোদ্দুরে
#ফাতেমা_তুজ
#part_15

বেশ জমকালো আয়োজন করা হচ্ছে। বিয়ের এখনো সাত, সাত টা দিন বাকি। তবে দেখে মনে হচ্ছে উৎসব আজ থেকেই শুরু।এতো তাড়াহুড়ো করার একটাই কারন সে হলো রাদ। সবাই কে অনেক বুঝিয়েছে সেই কারনেই দ্রুত আয়োজন করা হয়েছে।এতে খুশি হয়েছে রনিত। সেই কারনে সবাই কে ট্রিট দিবে বলে প্রতিজ্ঞা করেছে। চার বন্ধুর আড্ডা চলছে। মুখ ভার করে আছে নাহিদ। পাশ থেকে দ্বীপ বলল
_মন খারাপ কেন তোর?

উত্তর করে না নাহিদ। রনিত এবার পূর্ন দৃষ্টি তে নাহিদের দিকে তাকালো। নাহিদের চোখ মুখ কেমন ফ্যাকাসে দেখাচ্ছে। সামান্য চিন্তিত হয়ে বলল
_কি রে কোনো কিছু নিয়ে টেনশনে আছিস?

_কথা বলছিস না কেন?

_ভালো লাগছে না ইয়ার।

পাশাপাশি বসে ছিলো রাদ। মাটি তে পা ঘষে চলেছে নাহিদ। রাদের ধারালো দৃষ্টি তে মুখ খুলে ছেলে টা। ব্যাথাতুর স্বরে বলে
_জাপান যেতে হচ্ছে আমাকে।

_জাপান!

_ইয়েস। ড্যাড যেতে বলেছে কি যেন দরকার আছে।

_এটা কি হলো?

রনিতের রাগ হয়। চাঁপা অভিমান নিয়ে বলে
_যাহহ আর আসতে হবে না। দুদিন আগে কেন বললি না? ইনভিটিশন কার্ড পাঠানো হয়ে গেছে। আমি এখনি ড্যাড কে ফোন করে সমস্ত টা ক্যানসেল করতে বলছি।

খপ করে রনিতের হাত থেকে ফোন নিয়ে নেয় নাহিদ। ঠোঁট দুটো প্রসারিত করে বলে
_এতো টা ব্যস্ত কেন হচ্ছিস? তোরা তো আমার বন্ধু ই। বিয়ের পর না হয় গেট টুগেদার করে দিবি।

_না তোকে ছাড়া বিয়ে করবোই না।

_উফফ রনিত।

_কি রনিত রনিত করছিস? তুই না থাকলে বিয়ে টাই পানসে লাগবে।

_এক্সাকলি

_আমার দিক টা বোঝার চেষ্টা কর রাদ, দ্বীপ তুই অন্তত বোঝ।

মুখ টা ঘুরিয়ে ফেলে দ্বীপ। রাদের মুখ টা ও ছোট হয়ে গেছে। দীর্ঘশ্বাস ফেলে ছেলে টা। রনিত এর কাঁধে হাত রেখে বলে
_স্যরি দোস্ত। তোরা প্লিজ মুড অফ করিস না ইয়ার। আমি দ্রুত ফেরার চেষ্টা করবো।

_যা তুই। আর আসা লাগবে না।

চলে যায় রনিত। দ্বীপ আর রাদ কাছে এসে বলে
_তোর ফ্লাইট কবে?

_ আজ রাত আট টায়।

_ওকে। আমি সবাই কে নিয়ে চলে যাবো। আর শোন এবার জাপান থেকে পুরো ফ্যামিলি টা তুলে নিয়ে আসবি। আঙ্কেল আন্টির সাথে দেখা হলো না আজ অব্দি।

মৃদু হাসে নাহিদ। রাদ কে জড়িয়ে পিঠ চাপরে বলে
_ওরা আসবে না রে দোস্ত। জানি না বিডি এর সাথে কোন শত্রুতা আছে।

_আচ্ছা মন খারাপ করিস না।

_হুমম আসছি রে দোস্ত। রনিত কে বুঝিয়ে নিয়ে আসবি কিন্তু।

_হ্যাঁ নিয়ে আসবো।

.

গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে বাদাম খাচ্ছে সুপ্তি। একটু দূরে ভ্রু কুঁচকে দাঁড়িয়ে নাহিদ। সুপ্তির খোলা চুল গুলো টেনে ছিঁড়ে ফেলতে পারলে শান্তি মিলতো। নাহিদের কুঁচকে রাখা নেত্র দৃষ্টিপাত হতেই সুপ্তি বলল
_বাদাম খাবি?

_তুই খা।

_আজব তাহলে তাকিয়ে আছিস কেন?

বিরক্তি তে মুখ দিয়ে চ এর মতো শব্দ উচ্চারন করে নাহিদ। রাদের সাথে রনিত কে আসতে দেখে ছুটে যায়। মুখ টা গোমড়া করে রাখে রনিত।ইশারায় রনিত কে জড়িয়ে ধরতে বলে রাদ। নাহিদ জড়িয়ে ধরতেই রনিতের অভিমান গলে জল। দুজনেই হেসে ফেলে।দ্বীপ , রায়া, ইনায়া, আর সুপ্তি এগিয়ে আসে। সকলে কিছুক্ষন কুশল বিনিময় করে এক সাথে কফির আড্ডা দেয়। ফ্লাইট এর সময় হতেই এয়ারপোর্ট এর ভেতরে চলে যায় নাহিদ। কিছু টা মন কষ্ট নিয়ে সকলে দাঁড়িয়ে থাকে। মাথার উপর দিয়ে প্লেন উড়ে যেতেই সবার বুক চিরে বেরিয়ে আসে এক ফালি দীর্ঘশ্বাস।

মিসেস কাজী আশা এসেছেন ভোরের রুমে। সেই থেকে মেয়েটা দাঁড়িয়ে উসখুস করে চলেছে বিরতিহীন ভাবে। প্রচন্ড ভয় পায় ওনাকে। ভদ্র মহিলার তরবারির মতো দৃষ্টি ওকে এলোমেলো করে দেয়। আশার সুচালো সুরে কেঁপে উঠে বলে
_জি ম্যাম।

_ভয় পাও আমাকে?

_ না মানে কিছু টা।

_কারন?

মাথা নিচু করে ফেলে ভোর। দারুন এক হাসি উপহার দেন আশা। ভোরের মাথায় আদুরে হাতের স্পর্শ দিয়ে বলেন
_ভয় পেও না। রাদ আর তোমার সম্পর্ক আমি জানি।

গোল গোল করে তাকায় ভোর। গলায় পানি শূন্য অনুভব হয়। আশা বলেন
_রিলাক্স। রাদ আমাকে সব টা বলেছে। আর সিক্রেট থাকবে এই বিষয় টা। ভালো থেকো, আসি।

চলে যান আশা। থম মেরে দাঁড়িয়ে থেকে বেডের উপর বসে পরে। এখনো বুক ধুকপুক ধুকপুক করছে। ফোনে ম্যাসেজ আসতেই নিচে নেমে যায় ওহ। হেসে বলে
_গুড মর্নিং ডাক্তার সাহেব।

_গুড মর্নিং।

_আজ একটু লেট করে ফেলেছি।

_সমস্যা নেই। নাস্তা করেছো তো?

_হ্যাঁ।

গেটের কাছে নামিয়ে দেয় রাদ। বেশি কিছু বলার সময় নেই ওর। রনিতের বিয়ের আয়োজনের বড় সড় দায়িত্ব পরেছে ওর উপর। বন্ধুর বিয়ে বলে কথা, না করার ও কোনো উপায় নেই।

চার পাশে চোখ বুলাতে থাকে ভোর।নুহাশ নামের সেই ছেলেটা ক্যাম্পাসে না থাকায় দ্রুত গতিতে চলে যায়। তবে ক্লাস রুমের কাছে এসে বিপত্তি ঘটে। একদম নাক বরাবর দাঁড়িয়ে আছে নুহাশ। ভোর কি করবে বুঝে উঠে না। হাতে থাকা ফোন টা শক্ত করে চেপে ধরে শ্বাস নেয়। রাদ কে কি ফোন করবে?
ভাবনার মাঝেই মুখের সামনে তুরি বাজায় নুহাশ। চমকে উঠে ওহ। বিগলিত হেসে নুহাশ বলে
_ওয়াও, ভয় পেলে দারুন লাগে তোমায়।

_পথ ছাড়ুন।

_আমি তোমার পথ আগলে আছি নাকি?

পাশ কাঁটাতে যায় ভোর। তবে আবারো সেই পাশে চলে আসে নুহাশ। বিরক্তি তে লাল হয়ে আছে ভোরের দুই আঁখি। তাতে যেন বেশ আনন্দ হয় নুহাশের। লম্বা মাথা টা একটু ঝুঁকে নেয়। মুখ ফিরিয়ে নেয় ভোর। হাসে নুহাশ, পথ ছেঁড়ে দিতেই বাতাসের গতিতে প্রবেশ করে ভোর। কলেজে এসে একজন বান্ধবী ই হয়েছে ওর। মৌ এর পাশে এসে বসতেই মৌ বলে
_তোমার সাথে নুহাশ ভাইয়ার কি সম্পর্ক?

_কোনো সম্পর্ক নেই। শুধু শুধু পথ আটকানো টাই ওনার কাজ।

_তোমাকে পছন্দ করে?

_জানি না। তবে একদম ই ভালো লাগে না আমার।

_সেকি এতো সুন্দর ছেলে কে তোমার পছন্দ নয়?

মৌ এর দিকে গভীর দৃষ্টি তে তাকায় ভোর। কিছু বলবে কি না বুঝতে পারে না। তাই দ্বিধা নিয়ে কিছু বলে ও না। ক্লাসে স্যার আসতেই সমস্ত চিন্তা ফেলে পড়াশোনায় মনোযোগী হয়।
.

‘ তুমি বড্ড অধৈর্য হয়ে পরছো নীলাশা। ‘

রেড ওয়াইন এর গ্লাস টা খানিক টা উঁচু করে গভীর দৃষ্টি লেপন করে মেয়েটা। পাশে দাঁড়িয়ে আছে মিনিস্টার কাইসার আহমেদ। তাঁকে পাত্তা দিচ্ছে না নীলাশা। রেড ওয়াইন এই মুহুর্তে ওর কাছে বেশি মূল্যবান।
_আমার কথা কি শুনতে পাচ্ছো তুমি?

এবারো কোনো উত্তর করে না নীলাশা। এক পাশের গালে টোল এর সৃষ্টি হয়। ঠোঁট টা ও বেঁকে যায় অর্থাৎ ওনার কথা টা নিছক ই তুচ্ছ তাচ্ছিল্য ওর কাছে। ধপ করে বসে পড়েন কাইসার। রেড ওয়াইন ঢেলে নিয়ে নিমিষেই পান করে ফেলেন। কিছু টা তেজস্বী ভাব ফুঁটিয়ে বললেন
_ এতো টা পাগল হইয়ো না বেটা। তোমার জন্য কতো টা সেক্রিফাইস করে চলেছি তোমার মম , ভাই আর আমি। তারপর ও তুমি এমন আচারন করবে?

_সিক্স ইয়ার্স , অর্থাৎ সেভেন টি টু মান্থস, টু থাউজেন্ড ওয়ান হানড্রেড সিক্স টি ডেইস এটা কোনো ছোট সংখ্যা নয় ড্যাড। আর কতো অপেক্ষা করতে হবে। তুমি তো এখনো ওর ফ্যামিলির সাথে ভালো সম্পর্ক ই তৈরি করতে পারলে না। সারাক্ষন চিন্তা করো ওদের কি করে দেউলিয়া করবে। কিসের এতো রাগ তোমার?

_নীলাশা দেখো তোমার প্রয়োজন রাদ কে। সেই কারনে আমি ওদের কোনো ক্ষতি করছি না। বাট ভুলে যেও না ওদের সাথে আমার পূর্ব শত্রুতা রয়েছে।

_তো এর জন্য আমি কি করতে পারি? আমার শুধুই রাদ কে চাই। আর ওর যদি কোনো ক্ষতি হয় আই সয়ার আমি সব শেষ করে দিবো।

নীলাশার সাথে কথা বলে কোনো সুবিধা করতে পারলেন না কাইসার। মিনিট দুয়েক পর আসলেন রোজিনা। এক পলক তাকিয়ে মুখ ফিরিয়ে নেয় ওহ। ওনার আর সাহস হয় নি ঘরে প্রবেশ করার। দরজার কাছ থেকেই চলে যান। তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে দেয়ালে লাগিয়ে রাখা বিশাল মাপের ফটো তো ফ্লাইং কিস করে। রাদের হাস্যজ্জল মুখ দেখেই দিনের শুরু ও শেষ করে ওহ।

**কয়েক দিন গল্প না লেখায় আলসেমি তে ধরেছে। তাই ছোট বলে অভিযোগ করবেন না।

বি : দ্র : ভুল ত্রুটি মাফ করবেন।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here