চলো রোদ্দুরে পর্ব-১৯

0
1802

#চলো_রোদ্দুরে
#ফাতেমা_তুজ
#part_19

রনিত কে বকা ঝকা করছেন রেবা। ছেলেটা মুখে কুলুপ এঁটে রয়েছে। মাত্র ই ইনায়া কে হলুদ দিয়ে ফিরেছে ওহ। অবশ্য সেটার জন্য বকা খাচ্ছে না। বকা খাচ্ছে রূপ কে নেশা করিয়ে দিয়েছে ইনায়ার কাজিন। সেই থেকে ছেলে টা উল্টো পাল্টা বকে চলেছে। কখনো নেশা না করায় পাক্কা মাতাল হয়ে গেছে। রেবা চলে যান। রাদ এসে রনিত কে নিয়ে যায় গার্ডেনে। ওঁদের দুজন কে দেখেই একটু দূরে সরে যায় ভোর। রাদ দেখলে ও কিছু বলে না। রনিতের পিঠ চাপরে বলে
_তুই তো সাথেই ছিলি, রূপ কে ওয়াইন খাওয়ালো কি করে?

_আমি কি করবো। সবাই তো আমাকে ও চেপে ধরেছিলো। আর তুই তো জানিস রূপ কতো টা ফাজিল। মেয়ে দের সাথে ফ্লাটিং করছিলো। সেই সুযোগেই

_হুম বুঝলাম। তবে তুই যে কতো বড় গাঁধা সেটা ও বুঝেসি। যাহ কাউ কে দিয়ে লেবু পানি খাওয়া ছেলে টা কে। ইসসস ছেলেটা কি সব বলছিলো।

_যাচ্ছি।

রনিত চলে যায়। হেসে ভোর এর পাশে এসে দাঁড়ায় রাদ। ভোর কিছু বলছে না। তবে কেমন উসখুস করছে। কিছু টা ঝুকতেই পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে কেউ। বিস্ফোরিত চোখে তাকায় রাদ। সুপ্তি হেসে চলেছে। রাদ এর দু চোখে রাগের স্ফুলিঙ্গ। মেয়ে টার চুলের মুঠি ধরে কিছু টা দূরে নিয়ে আসে। বলে
_এটা কি হলো?

_আবার কি এটা টেস্ট করলাম জাস্ট।

_কিসের টেস্ট।

_এই যে ভোর তোকে লাভ করে কি না।

বিস্মিত চোখে তাকায় রাদ। সুপ্তির দুষ্টু দৃষ্টি অনেক কিছু ইঙ্গিত করে। তৎক্ষনাৎ মেয়েটার হাতে চিমটি কেঁটে রাদ বলল
_এসব কি বলছিস তুই? ওর আমার মাঝে সম্পর্ক টা আবার এক্সপ্লেইন করবো আমি?

_আরে দোস্ত রাগ করিস না। শোন বাঙালি মেয়েরা অন্য রকম হয়। তাই দেখলাম ওর মধ্যে কোনো ফিলিং আছে কি না।

_তো কি বুঝলি?

_শূন্য। বি কজ ওর চোখে কোনো প্রকার জেলাসি ছিলো না। একদম ই সহজ আর প্রজ্জ্বল দৃষ্টি। ভারী মিষ্টি মেয়ে টা।

হাসে রাদ। ভোর চার পাশ টা দেখে চলেছে। কাঁচা হলুদ এর গন্ধ নাকে এসে লাগে। সঙ্গে সঙ্গে চোখ বন্ধ করে ফেলে ছেলেটা। সেদিনের অনুভূতি টা কেমন জেগে উঠে। গাড়ি থেকে নেমে রাস্তায় পরে থাকা সেই মেয়েটির গাঁ থেকে কাঁচা হলুদের মিষ্টি সুবাস নাকে এসে লাগছিলো। ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় অব্দি জানান দিচ্ছিলো সেই সময় টুকু শুভ্র।
_এই রাদ।

সুপ্তির কন্ঠে ঘোর ভাঙে ওর। কিছু টা হতচকিয়ে যায়। মেয়েটা দারুন এক হাসি দিয়ে বলল
_ভোর কে ভালোবাসিস?

এক মুহুর্ত থমকে দাঁড়ায় ওহ। রাদ এর ভঙ্গিমা বুঝতে পেরে ছুট লাগায় সুপ্তি। চেঁচিয়ে বলল ছেলেটা
_কাজ টা ঠিক করলি না সুপ্তি। এর জন্য বেশ বড়সড় মার খাবি।

_আমাকে পেলে তো।

ততক্ষনে রাদ এর পাশে এসে দাঁড়ায় ভোর। হালকা হাতে স্পর্শ করতেই দু হাত পিছিয়ে যায় রাদ। অন্যমনস্ক থাকার কারনে ভয় পেয়েছে খুব। হেসে ফেলে ভোর।
_হাসছো কেন?

_হঠাৎ ভয় পেলেন ডাক্তার সাহেব। সাইন্স এর স্টুডেন্ট রা ও ভয় পায়?

_অবশ্যই পায়। আসলে একটু অন্যমনস্ক ছিলাম।

_ওহহ আচ্ছা।

_কিছু বলবে?

_হ্যাঁ হলুদ এর অনুষ্ঠান তো প্রায় শেষ।ভাইয়া তো হলুদে মাখামাখি। আর তো হলুদ দিবে না কেউ। এবার যাই আমরা? রাত দশটা বাজতে চললো যে।

_আজ কে তো তুমি হোস্টেল এ ফিরছো না।

_মানে? সমস্যা হবে না।

_ছুটি নিয়ে এসেছি।

_তাহলে আমি থাকবো কোথায়?

_আমার সাথে।

কথা টার উল্টো মানে বুঝে ভোর। দুটো শুকনো ঢোক গিলে তুতলানো স্বরে বলল
_কিহহ বলছেন কিহহ ডাক্তার সাহেব!
আমি আপনার সঙ্গে না মানে

_আরে বোকা মেয়ে পাশের রিসোর্ট টা নেওয়া হয়েছে অতিথি দের জন্য। আমরা ও সেখানেই থাকছি। একটা পার্ট আমাদের বন্ধু মহলের জন্য রাখা হয়েছে।

_কিন্তু আমি তো আপনাদের বন্ধু মহলের একজন নই।

_তো? তুমি আমার একজন। আর সেই কারনে ইনডাইরেক্ট হলে ও আমাদের বন্ধু মহলের একজন।

উজ্জ্বল হাসে মেয়েটা। সুশ্রী মুখে হালকা হালকা হাসি। ঠিক যেন স্বর্গ থেকে আসা কোনো রূপকুমারী।
.
আড্ডায় মাতোয়ারা পুরো রিসোর্ট। তবে বেশির ভাগ অতিথি রাই বেঘোরে ঘুমোচ্ছে। শুধু জেগে আছে ইয়ং জেনারেশন। আর তাঁদের মধ্যে ভোর ও একজন অন্যতম সদস্য। রাদ এর বন্ধু মহলের একটা সাইট খুব ভালো। এদের কাছে ধনী দরিদ্রের বিভেদ খুব ই কম। মেডিকেল এর স্টুডেন্ট কি না। এদের দায়িত্ব মানুষ কে সুস্থ করা সেই কারনেই বোধহয় সবার মধ্যে অন্য রকম ভাবনা। লুকোচুরি খেলবে বলে ঠিক করেছে সুপ্তি। এর মধ্যে ইনায়ার কল আসে। বেচারির বোকা বোকা চেহারা দেখে সবাই এক সুরেই বলে উঠলো ” ইসস “।

ক্রন্দনরত চেহারায় ইনায়া বলল
_আমি সবাই কে মিস করছি। তোরা আমাকে রেখে চলে গেলি হারামির দল।

_চিল। তোর বাসর রাতে ভাগ বসাবো আমরাই।

রায়ার দুষ্টুমি ভরা মুখে এমন কথা শুনে লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছে হয় ইনায়ার। তবু ও নিজেকে সামলে বলল
_আসিছ দিবো নে ভাগ।

_ভালোই তো ইনায়া। আমাদের দোস্ত কে কেড়ে নিয়ে একা একাই

কথা টা পরিপূর্ন করতে পারলো না সুপ্তি। তাঁর পূর্বেই ওর মুখ টা চেপে ধরলো দ্বীপ। ছেলেটার হাতে কামড় বসিয়ে বলল
_কথা টা শেষ করতে দে।

_ছিই সুপ্তি তুই অশ্লীল।

_একদম।

রায়া আর দ্বীপ জুটি বেঁধেছে। দুজনে পারে ও বটে। সুপ্তির ঠোঁটের কোনে ব্যঙ্গপূর্ন হাসি। কিছু বলবে তাঁর পূর্বেই রাদ চোখ পাকায়। মেয়েটা থেমে যায়। এঁদের ঝগড়ার সুযোগে ফোন নিয়ে আড়ালে চলে আসে রনিত। ইনায়ার সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে। এক অদ্ভুত অনুভূতি বিরাজ করছে। বিয়ের পূর্বে এটাই হয়তো শেষ কথা।

সুপ্তি বেশ কিছুক্ষণ রায়া আর দ্বীপের কথা শুনে। শেষ মেশ রেগে যায়। দ্বীপ আর রায়ার সাথে মারামারি করতে থাকে। মেয়েটা অদ্ভুত, একদম ই বাচ্চা সুলভ আচারন। হাসে ভোর, এখানে থাকা প্রতি টি সদস্য ওর খুব পছন্দের। আর অন্যতম সেরা হলো রাদ।
_কি ভাবছো।

চমকে উঠে মেয়েটা। গাঢ় কমলা রঙে সজ্জিত হয় ওর গাল। কিছু টা ফুলে ফেঁপে উঠেছে। ভরাট গালে শাহাদাত আঙুলের স্পর্শ দেয় রাদ। কেন এমন করলো ওর জানা নেই। ভোর বলল
_কিছু বলবেন।

_অনেক কিছু বলবো।

_বলুন।

_না মানে।

তুতলে যায় ছেলেটা। মাঝে সাজে কি সব ভঙ্গিমা করে বসে ভাবতে ও পারে না। নিজ ভাবনা কে সাইটে ফেলে ভোর কে নিয়ে ঝিল এর পাশে আসে। রিসোর্ট এর দক্ষিণ পাশে বিশাল ঝিল। একটা সাইটে একটা দোলনা রাখা। কিছু টা সি বিচ এ থাকা দোলনার মতো। কাঠের খাম এর উপর বেশ সুন্দর আর্টিফিশিয়াল ফুল আর বাতি দ্বারা সজ্জিত। মেয়েটা কে নিয়ে সেখানে বসে। হাত দুটো মেলে দিয়ে বুক ভরে শ্বাস নেয় ভোর। মুখে বলে
_এতোক্ষন পর এখানে নিয়ে আসলেন আমায়? ইসস কি সুন্দর জায়গা টা।

_খেয়াল ছিলো না।

_ ডাক্তার সাহেব শ্বেত পদ্ম।

কথা টা বলেই চলে যায় ভোর। ঝিলের পাড়ে এসে দাঁড়ায়। যেই না নামতে যাবে তখনি হেচকা টান মেরে কাছে নিয়ে আসে রাদ। সামান্য ভ্রু কুঁচকে বলে
_কি করছিলে কি?

_শ্বেত পদ্ম। আমার খুব ভালো লাগে। আমি নিবো ঐ টা।

_এই শীতের রাতে ঝিলে নামবে তুমি?

_কিছু হবে না আমার।

_একদম নয়।

মুখ টা বাংলার পাঁচের মতো করে ফেলে ভোর। প্রচন্ড খারাপ লাগে ছেলেটার। মিন মিনিয়ে বলল
_আমি নিয়ে আসছি।

_এই না। একদম যাওয়ার প্রয়োজন নেই।

কথা টা বলার সময় পাংশুটে বর্ণ ধারন করে ওর মুখ। বিষয় টা পরিলক্ষিত হতেই ঝিলে ঝাঁপ দেয় রাদ। বিষয় টা এতো টা দ্রুত ঘটে যে ভয় পেয়ে যায় ভোর। মৃদু কন্ঠ টা মুহুর্তেই চিৎকারে পরিণত হয়। ডাক্তার সাহেব বলে আর্তনাদ করে উঠে।

শ্বেত পদ্ম তুলে নিয়ে আসে রাদ। ভোরের দু চোখে পানি তে টুইটম্বুর।অভিযোগ করে বলে
_আমার চাই না শ্বেত পদ্ম। আপনি কেন এমন টা করলেন ডাক্তার সাহেব?

_আরে কাঁদছো কেন তুমি? আসো আমার সাথে।

_আসবো না।

_শ্বেত পদ্ম না তোমার খুব প্রিয়?

রাদ এর হাত থেকে ফুল টা ঝটকা মেরে নিয়ে নেয় ভোর। সর্বশক্তি দিয়ে দুমরে মুচরে ফেলে দেয় ফুল টা। অনাদরে পরে থাকে নেতিয়ে যাওয়া শ্বেত পদ্ম। হালকা স্বরে বলে
_চাই না আমার ফুল। এতো রাতে কেউ ঝাঁপ দেয়? যদি কিছু একটা হয়ে যেতো।

বাক শক্তি হারিয়েছে রাদ। ভোর কে কি বলবে বুঝতে পারে না। মেয়েটার মুড যখন তখন পরিবর্তন হয়। আচ্ছা বিপদ হলো তো। মাটি তে পরে থাকা ফুলের দিকে তাকায় রাদ। বড্ড খারাপ লাগছে ছেলেটার। বা হাতে কান টা ধরে ফিস ফিস কন্ঠে ফুল টার উদ্দেশ্য বলল
_স্যরি।

বি : দ্র : ভুল ত্রুটি মাফ করবেন।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here