চলো রোদ্দুরে পর্ব-২১

0
1600

#চলো_রোদ্দুরে
#ফাতেমা_তুজ
#part_21

একটু আগেই বিয়ে সম্পূর্ন হয়েছে। নব দম্পতির মাঝে চাঁপা লজ্জা কাজ করছে। কি একটা অবস্থা প্রেমের বিয়ে তাও লজ্জা। ইনায়ার দিকে তাকিয়ে হারিয়ে যায় ভোর। ওর বিয়ে টা এমন রাজকীয় ভাবে হয় নি। তবে ধর্ম মতে পুরো বিশ লক্ষ টাকা মোহরানা সমেত বিয়ে হয়েছে। রাদ কে কি বলবে ওর জানা নেই। মানুষ টা এতো টা করেছে আর করে চলেছে সত্যি বলতে এমন মানুষ ভোর এর চোখে পরে নি। এতোই বিভোর যে রাদ ওর পাশে দাঁড়িয়েছে ধ্যান ই নেই। একটু সরে আসতেই ছেলেটার বুকের সাথে ধাক্কা লাগে ওর। আনমনেই বলে উঠে ‘ স্যরি। ‘

_ রিলাক্স। বউ দেখে বউ সাজার ইচ্ছে হয়েছে?

_উহুহ।

_দেখি মাথায় ঘোমটা তুলো তো।

কথা টা ভোর কে মুখে বললে ও কাজে করে ফেলে রাদ। খলবিলিয়ে হেসে বলল
_বউ বউ ই লাগছে। একটু বাঙালি সাজ গোঁজ থাকলে বাঙালি বউ ই লাগতো।

লজ্জা পায় মেয়েটা। রাদ এর মুখ থেকে বউ শব্দ টা কেমন বুকের ভেতর টেউ তুলে দেয়। মেয়েটা অনুভব করে এক নতুন দুনিয়া। যেখানে কোনো আঁধার নেই। আছে শুধু রোদ্দুর আর রোদ্দুর।

বিদায় বেলায় এসে ইনায়া এভাবে কাঁদবে কেউ কল্পনা ও করতে পারে নি। হাউ মাউ করে কাঁদছে মেয়েটা। অথচ বিয়ের জন্য কতো টা পরিশ্রম করতে হয়েছে ওকে। সব থেকে আশ্চর্য মেয়েটার চোখের পানি দেখে রনিতের চোখে পানি চলে এসেছে। বড্ড বেশি ভালোবাসে কি না। লাজ লজ্জা ভুলে রনিত কে জড়িয়ে ধরে ইনায়া। কলার চেপে ধরে চিৎকার করে বলে
_ আমি কোথাও যাবো না রনিত , কোথাও যাবো না। আমার খুব কষ্ট হচ্ছে।মম ড্যাড কে ছাড়া আমি থাকতে পারবো না। প্লিজ রনিত

ছেলেটা ভাষাহীন। ঘর থেকে আরিফার আর্তনাদ শোনা যাচ্ছে। মেয়েটা কে এতো ভালোবাসা দিয়ে বড় করেছে আজ তাঁকে বিদায় দিতে হচ্ছে। শক্ত মন ধারী ইমরোজ আজ কেঁদে ফেললেন। স্টুডেন্ট দের সামনে নিজের দুর্বলতা প্রকাশ করেই দিলেন। রনিতের হাত ধরে ক্রন্দনরত অবস্থায় বললেন
_আমার মেয়ে টা কে দেখে রাখিস বাবা। এই রাগি স্যার এর উপর অভিমান করে ওকে কষ্ট দিছ না।

তিনি আর এক মুহুর্ত থাকতে পারলেন নাহ চলে গেলেন। ভোরের বুকের ভেতর অদ্ভুত শূন্যতা কাজ করছে। ওর বাবা মা ওকে এমন করে ভালোবাসলো না কেন? যখন রাদ এর সাথে বেরিয়ে আসছিলো তখন একটি বারের জন্য কেন আটকালো না ওকে? উল্টো দূর দূর করে তাড়িয়ে দিলো। কেন এমন নিষ্ঠুর নিয়তি ওর? এতো টাই বোঝা ওহ।

গার্ডেন এ এসে চোখের পানি ফেলেছিলো মেয়েটা। রাদ বুঝতে পেরেছে ভোর এর মন ভালো নয়। মেয়েটা অনেকক্ষন ধরে পাশ ফিরে রয়েছে। কাছে আসতেই বুক টা ধক করে উঠলো। নিচু হয়ে কাঁদছে ভোর।
_এই মেয়ে কাঁদছো কেন তুমি? এই সামান্য কারনে কাঁদে কেউ?

মাথা টা উঁচু করে ভোর। রাদ এর চিন্তিত মুখ দেখে চোখ মুছে। বেহায়া দু চোখ আবারো ডুবে যায় অশ্রু তে। ছেলেটার বুকের শার্ট টা খামচে ধরে চিৎকার করে বলে উঠে
_মা বাবা কে মনে পরছে ডাক্তার সাহেব। আমি সবাই কে খুব ভালোবাসি। আমি ওদের সাথে দেখা করতে চাই ডাক্তার সাহেব। দেখা করতে চাই। তাফিন টা আমাকে খুব ভালোবাসে। কতো দিন ধরে আমি ওকে জড়িয়ে ঘুমাই না। আমার খুব কষ্ট হচ্ছে ডাক্তার সাহেব।

কাঁদতে কাঁদতে মেয়েটা ঘাসে বসে পরলো। প্রচুর কষ্ট হচ্ছে। পরিবার কে ছাড়া বেঁচে থাকা সত্যিই খুব কষ্টসাধ্য।
.

_ ভাই একটু, একটু দরকার আমার।

_কাজের সময় এমন কথা কেন বলিস রূপ?

_আজকে সকাল থেকে কাজ করছি। বিয়ে টা অব্দি দেখি নি। ভাই এখন একটু প্লিজ।

_উফফ রূপ।

রাদের সাথে কথা বলছে আর উঁকি ঝুঁকি মারছে রূপ। ছেলেটার দৃষ্টি কাউ কে দেখছে। যেন চোখের আড়াল হয়ে যাবে এখনি। রাদের ভ্রু যুগল কেমন নড়ে উঠে। ছেলেটার দৃষ্টি লক্ষ্য করে তাকায়। এখানে তো তেমন কেউ নেই।
_এই রূপ।

_হ্যাঁ ভাই।

_কি দেখছিলি?

_চলে গেল।

_কে চলে গেল।

_না মানে দ্রুত বলো কি কাজ।

_ধ্যাত তোকে দিয়ে কোনো কাজ হবে না। যাহ তুই আমি গেস্ট দের থাকার ব্যবস্থা করে দিচ্ছি।

রাদের হাত টা মুঠো বন্দী করে ছেলেটা। হাসি মাখা মুখে উচ্চারন করে
_থ্যাংকস ভাই।

মুহুর্তেই হাওয়া হয়ে যায় রূপ। অবাক দৃষ্টি তে তাকিয়ে থাকে রাদ। এতো টা চঞ্চল কেন এই ছেলেটা?

সেলফি তুলছিলো সুপ্তি। এদিকে বাসর সাজাতে ব্যস্ত সকলে। কাউ কেই পাওয়া যাচ্ছে না। বাসরে ডুকতেই সকলে বাঁধা দেয়। ছেলে ও ছেলের বন্ধুদের যেতে দেওয়া হবে না। আশ্চর্য হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে রাদ। সুপ্তির নজর পরতেই ইশারা করে ছেলেটা। লেহেঙ্গা ধরে ধরে সবাই কে ঠেলে বাহিরে আসে সুপ্তি। হাঁপিয়ে গেছে একদম। রাদের চিন্তিত মুখ দেখে বলল
_এই মুখ টা এমন লাগছে কেন?

_ আরে শোন না। এখানে ভোর আছে?

_ভোর না তো। অনেক ক্ষন ধরে আমার সাথে নেই ওহ।

কপালে হাত রাখে রাদ। প্রায় তিন ঘন্টা যাবত মেয়ে টা কে দেখে নি ওহ। বিয়ে বাড়ির এতো এতো কাজ সব যেন জাপটে নিয়েছে। প্রচন্ড ভয় হয়। কলেজের সেই ছেলেটা রিসোর্ট এ এসেছিলো। সেই কারনে মেয়েটা ভীত গ্রস্ত। এবার রাদ এর ই ভয় হচ্ছে। মেয়ে টার কোনো ক্ষতি হবে না তো?

_রাদ আমার কথা শোন, কোথায় যাচ্ছিস?

কোনো উত্তর না করেই ছুটতে থাকে রাদ। এতো বড় বাসা, সাথে দুটো প্লে গ্রাউন্ড। সর্বত্র জমকালো আয়োজন। এই মুহূর্তে মেয়েটাকে কোথায় খুঁজবে ওহ?

পুরো বাসা তছনছ করে খুঁজে ও ভোর এর দেখা মিলে নি। এবার ছেলেটার বুক ধুকপুক শুরু হয়েছে। মেয়েটা কে অজানায় এভাবে ছেড়ে দেওয়া উচিত হয় নি। নিজ দায়িত্ব বোধের প্রতি লজ্জিত ওহ। সর্ব শক্তি দিয়ে গাছে বাকলে ঘুষি মারে রাদ। তখনি কানে আসে মৃদু চেঁচামেচি। হাতে কিছু টা ব্যথা পেয়েছে। বা হাতে ডান হাত টা কে শক্ত করে চেপে ধরে। ছনের ঘরের পাশ থেকে আওয়াজ টা আসছে। এক সেকেন্ড দেরি করে না ওহ। চলে যায় সেই দিকে। লাইট আর আর্টিফিশিয়াল ফুল দিয়ে সাজানো ঘর টা। কিছু শব্দ কানে আসে। থমকে যায় রাদ। মৃদু স্বরে উচ্চারন করে ‘ ভোর ‘।

মেয়েটা কখন ওর বুকে এসে পরেছে খেয়াল ই নি। ওর চোখ দু খানা সামনে নিমজ্জিত। অদ্ভুত ভাবে দেখছে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষ টি কে। মেয়েটার উপস্থিতি অনুভব করে হালকা হাতে মাথায় হাত বুলিয়ে বলল
_ কিচ্ছু হয় নি। কাঁদবে না একদম।

হেঁচকি তুলে কাঁদছে মেয়েটা। ধীর পায়ে এগিয়ে আসে সেই মানুষ টি। ভ্রু কুটি করে তাকায় রাদ এর দিকে। ছেলেটা কোনো প্রশ্ন করার সুযোগ পায় না তাঁর আগেই হাত দিয়ে থামিয়ে দেয় রাদ। ইশারায় চলে যেতে বলে। ওর মস্তিষ্ক যাহ বোঝার বুঝে গেছে। কতোক্ষন মেয়েটা কাঁদবে কে জানে।

কালো কুচকুচে আঁধারে পূর্ণিমার দেখা মিলেছে। চাঁদ টা ডুবে আছে আকাশের বুকে। নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখে চলেছে ভোর আর ওকে দেখছে রাদ। মেয়েটা বড্ড বেশি কাঁদে। অবশ্য অকারনে নয়। তবে ভীত গ্রস্ত হয়েই কাঁদে। এই বিষয় টি একদম ই মানতে পারছে না রাদ। মৌনতা ভেঙে কথার ছন্দ তুলে রাদ
_কান্নার প্রতিযোগিতা হলে নিঃসেন্দহে সেরা হতে তুমি।

কথা টা কানে প্রবেশ হতেই মেয়েটার নাকের ডগা লাল হয়ে উঠে। অভিমানে নাকি রাগে ঠিক ঠাওর হলো না। তবে সে সব কে সাইটে ফেলে এক পশলা প্রফুল্লতা নিয়ে এগিয়ে আসে রাদ। কোথায় যেন দেখেছিলো ভীত গ্রস্ত কাউ কে সান্ত্বনা বা সাহস দেওয়ার জন্য হাঁটু মুরে বসতে হয়। কথা টার কোনো যুক্তিকতা না থাকলে ও উক্ত কাজ টি করলো রাদ। মেয়েটার ভয়ঙ্কর রূপের পেছনে লুকিয়ে আছে এক আকাশ সমান অভিমান তা ঘুণাক্ষরেও টের পায় নি রাদ। মুহূর্তেই বিজলির মতো জ্বলে উঠে ওহ। বেঞ্চ থেকে উঠে যায়। আর সিনেমা স্টাইলে মেয়েটার হাত ধরতে গিয়ে, অসফলতায় ঘাসের উপর শুইয়ে পরে রাদ। এবার যেন মেয়েটা খুশি হয়। কোমরে হাত গুঁজে দিয়ে গগন বিহারী হাসি তে মেতে উঠে। বলে
_আমার সাথে মজা করা তাই না? একদম ঠিক হয়েছে এবার। ডাক্তার সাহেব লুজার।

বি : দ্র : ভুল ত্রুটি মাফ করবেন।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here