#চলো_রোদ্দুরে
#ফাতেমা_তুজ
#part_22
নুহাশ কে দেখেই পা টা থমকে গেল ভোর এর। আশে পাশে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করলো কেউ আছে কি না। উহুহ কেউ নেই। প্রচন্ড ভয় হচ্ছে মেয়েটার। আজ কোনো অঘটন ঘটবেই। আলগোছে সাইট ব্যাগ থেকে ছোট্ট নাইফ বের করলো। যদি নুহাশ কোনো ভাবে কাছে আসে তাহলেই পেট ফুঁটো করে দিবে। কিন্তু ওকে অবাক করে দিয়ে দশ হাত দূরে থেকেই বলল নুহাশ
_আপু স্যরি। আমাকে মাফ করে দিবেন। আমি জানতাম না আপনি রাদ ভাইয়ার রিলেটিভ।
কিছু টা বিক্ষিপ্ত হয় ভোর। নুহাশ নামক ছেলেটি নিসন্দেহে ফাজিল। সেই ছেলে ওকে আপু বলে সম্বোধন করছে? তা ও আপনি আপনি বলে।
বিষয় টা কি মজা করে করছে। ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকতে দেখে মাথা টা নিচু করে ফেলে নুহাশ। যথা সম্ভব শীতল কন্ঠে বলে
_এতো দিনে আপনার সাথে মজা করা টা আমার অন্যায় হয়েছে। পারলে আমাকে মাফ করে দিবেন। আমি আর কখনো আপনাকে বিরক্ত করবো না। কলেজে কোনো সমস্যা হলে অবশ্যই আমাকে জানাবেন। আমি যথা সম্ভব সলভ করে দিবো।
কথা টা শীতল কন্ঠে বললে ও স্থান প্রস্থান ছিলো ঝড়ের মতো। ভোরের ছোট্ট মাথা টা এতো টা স্ট্রেস নিতে পারে নি। তাই হয়তো মাথা টা ঘুরিয়ে গেল।
মিনিট বিশেক পর চোখ খুলে ভোর। দু চোখের পাতা তে সাদা ধবধবে দেয়াল পরিলক্ষিত হয়। ভয় পেয়ে চেঁচিয়ে উঠে ওহ। কোথা থেকে যেন ছুটে আসে রাদ। হালকা হাতে জড়িয়ে বলে
_রিলাক্স। কিচ্ছু হয় নি। আমি তোমাকে এখানে নিয়ে এসেছি।
_আমি তো গার্ডেন এ ছিলাম।
_হ্যাঁ।সকাল সকাল না খেয়ে বাইরে গেছো। কাল রাতে ও খাও নি কিছু।তাঁর উপর কালকের জার্নি।
দুর্বলতা থেকে মাথা ঘুরে গিয়েছিলো। ভাগ্যিস দারোয়ান দেখেছিলো, না হলে তোমায় কতোক্ষন ঐ ভাবে পরে থাকতে হতো কে জানে।
আশে পাশে চোখ বুলায় ভোর। বুঝতে পারে না জায়গা টা কোথায়। ওর দৃষ্টি লক্ষ্য করে বলল রাদ
_ রিলাক্স এটা কাঁচের তৈরি রুম। বাড়ির ডান পাশে লেকের ধারে এই রুম টা করা। তিন বছর আগে আমার বাসার ডিজাইন দেখে করেছিলো রনিত। কপি করতে পছন্দ করে রাসকেল টা।
_ওহহ আমি তাহলে রনিত ভাইয়ার বাসাতেই?
_হ্যাঁ। ভাবলাম এখানেই নিয়ে আসি। ভেতরে গেলে নানান জন নানান কথা বলবে।
মৃদু হাওয়া গাঁয়ে এসে লাগছে। দক্ষিন পাশে তাকাতেই পর্দা উড়তে দেখতে পেলো। ঐ দিকটায় বোধহয় ব্যলকনি রয়েছে। তাছাড়া রাদ ও ঐ দিক থেকেই এসেছিলো। প্রচন্ড আগ্রহ থেকে উঠে দাঁড়ায় ভোর। রাদ বলে
_কোথায় যাচ্ছো। একটু রেস্ট নাও, নাস্তা করে বাসায় যাবে।
_উহুহ ঠিক আছি আমি । ঐ দিকটায় ব্যলকনি?
_হ্যাঁ।
এগিয়ে যায় ভোর। রাদ বুঝতে পারে ব্যলকনি তে যাচ্ছে মেয়েটা। চাঁপা শ্বাস টা লুকিয়ে বেরিয়ে আসে রুম থেকে। দারোয়ান কে দিয়ে খাবার আনিয়ে নেয়। রুমে এসে দেখে ভোর এখনো ব্যলকনি তে। খাবার টা রেখে সেই পথেই গমন করে রাদ। ছেলেটার পদধ্বনি শুনতে পেয়ে বিরক্ত হয় ভোর। ঠোঁটের কাছে আঙুল নিয়ে বলে
_হুসস।
অবাক হয় রাদ। ঐ স্থানেই ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে। চোখ বন্ধ করে কিছু একটা অনুভব করছে ভোর। সময় খুব বেশি নয় সাড়ে সাত টা হবে। ঘন্টা খানেক পূর্বেই ভোর হয়েছে। শীতের সকাল হওয়াতে এখন কাক ভোর বলাই চলে। রাদ ও চোখ টা বন্ধ করলো। শুনতে পায় পাখির কিচির মিচির আওয়াজ। সাথে হালকা হালকা পানির আওয়াজ। মৃদু শব্দে বেজে উঠে আরেক টি মারাত্মক শব্দ
‘ ডাক্তার সাহেব। ‘
চোখ মেলে তাকায় রাদ। ভোর অনুভব করছে শুভ্র সকাল। হঠাৎ ই গলায় পানি শূন্যতা অনুভব হয়। স্থান পরিত্যাগ করতে চাইলেই কেউ একজন হাত ধরে ফেলে। অনুনয়ের স্বরে বলে
_আশে পাশে কোথাও ঝর্না রয়েছে। আমি যাবো, প্লিজ। আমায় নিয়ে যাবেন তো ডাক্তার সাহেব?
.
পাহাড়ি এলাকা। শহর থেকে বেশ কিছু টা দূরেই রনিতের পারিবারিক বাড়ি। অবশ্য শহরে বেশ কয়েক টা দামি এপার্মেন্ট ও রয়েছে। তাঁর ই একটা তে থাকে ওরা। তবে রিসিপশন এর অনুষ্ঠান টা পারিবারিক বাড়িতেই করেছে।
সরু রাস্তা দিয়ে উপরে উঠে চলেছে দুই তরুন তরুনী। বিকেল হওয়া তে কুয়াশা জমেছে অনেক টা। ভারী জামাকাপড় পরেই চলে এসেছে ভোর। কোনো মতে
রিশিপন টা শেষ করেছে। রাদ এর পা কিছু টা ব্যথা করছে। তবে ভোর পুরো দমে উপরে উঠে চলেছে। যেন ঝর্না দেখার জন্য মন টা উথাল হয়ে রয়েছে। পেছনে তাকায় মেয়েটা। রাদ কে পিছু পরে থাকতে দেখে শুধায়
_একি ডাক্তার সাহেব আপনি এতো পিছু কেন? আসুন। এখনো অনেক টা পথ।
_ একটু অপেক্ষা করো ভোর।
_লেট হচ্ছে তো। আমার তো ছুটে যেতে ইচ্ছে করছে।
হাঁপাতে হাঁপাতে মেয়েটার কাছে আসে রাদ। কয়েক বার দম নেয়। ভোরের মুখ টা কেমন ভঙ্গিমা করে নিয়েছে। রাদ বলে
_এতো এনার্জি পেলে কোথায়? সকালে তো মাথা ঘুরিয়ে গার্ডেনে পরে ছিলে।
_যে মেডিসিন আর খাবার খাইয়েছেন মনে হচ্ছে আগামি তিন মাস না খেয়ে থাকতে পারবো।
হো হো করে হেসে উঠে রাদ। মাথা টা ঘুরিয়ে তাকায় ভোর। ঝর্নার কলকল ধ্বনি শোনা যাচ্ছে। মেয়েটা আর দমে থাকতে পারে না। ভারী লেহেঙ্গা টা দু হাতে একটু উঁচু করে ছুটতে থাকে। ভয় পেয়ে যায় রাদ। যেভাবে ছুটে চলেছে যখন তখন পা উল্টিয়ে পাহাড়ের বুকে পরবে মেয়েটা। অনেক টা এগিয়ে গেছে ভোর। চেঁচিয়ে বলল রাদ
_ সাবধানে ভোর, সাবধানে, এভাবে ছুটো না। উল্টিয়ে পরবে তুমি।
পা যেন থামছেই না। ভোর ছুটতে থাকে আগের গতিতেই। পাহাড়ি এলাকায় এই একটা সমস্যা। একবার ছুটতে থাকলে প্রায় সময় গতি হারাতে হয়। কয়েক টা দম নিয়ে রাদ ও দৌড়াতে থাকে। বেশ কিছু ক্ষন পর ভোরের নাগাল পায়। চেপে ধরে মেয়েটার হাত। হাঁপাতে হাঁপাতে ধমকের সুরে বলল
_থামছিলে না কেন? জানো কতো টা বিপদ হতে পারতো?
_আমি থামতে পারছিলাম না।
মাথা টা নিচু করে ফেলে ভোর। যেন এখনি কেঁদে দিবে। প্রিয় মানুষরা বকা দিলে কান্না পায়। এমনি প্রচলিত কিছু কথা শুনেছিলো রাদ। অবশ্য প্রমান ও পেয়েছে। তবে ভোর কেন কাঁদছে? রাদ কি ওর প্রিয় মানুষ?
সন্ধ্যা হয়েছে অনেকক্ষণ। ভোর কিছুতেই যাবে না। এই পাহাড়েই বসে থাকবে আজ। ঘাসের উপর পা মেলে বসে আছে মেয়েটা। কখনো বা চোখ বন্ধ করে শুনে নিচ্ছে ঝর্নার আওয়াজ। কিছু কিছু পাখি উড়ে যাচ্ছে দুই পাখা ছড়িয়ে। ছোট বেলার মতো এখন আবারো দুর্ভেদ্য সেই ইচ্ছে হচ্ছে পাখি হয়ে উড়ে যেতে। চোখ বন্ধ করে হাসছে ভোর বিষয় টা পরিলক্ষিত হতেই কানের কাছে মুখ নিয়ে রাদ বলল
_কি ভাবছো?
চমকে তাকায় মেয়েটা। যাঁর ফলে ছেলেটার ঠোঁট স্পর্শ করে ওর গাল। দুজনেই বিব্রত বোধ করে তবে মুহূর্তেই সামলে নেয়। লাজুক রঙা গাল নিয়ে ভোর বলল
_ভাবছিলাম, যদি পাখি হতাম তবে উড়ে যেতাম বহু দূর। কতো রঙিন হতো জীবন?
_কেন এখন রঙিন নয়?
না করতে গিয়ে না করতে পারলো না ভোর। ঝটপট বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিলো। বলল
_রঙিন নয় তবে রোদ্দুরের ছায়া রয়েছে। জীবন সুন্দর।
মৃদু হাসে রাদ। ভোরের বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দেওয়া টা আগেই আঁচ করেছিলো ওহ। ওহ জানে না কতো টা ভালো রাখতে পেরেছে ভোর কে। তবে চেষ্টার কোনো খামতি কি আছে?
দায়িত্ব বোধের কোনো অবহেলা করেছে ওহ? দায়িত্ব শব্দ টা মাথায় আসতেই ভয়ার্ত চোখে মেয়েটা দিকে তাকায় ওহ। দায়িত্ব! সত্যিই তো একটি বিশেষ দায়িত্ব পালনে অবহেলা করছে ওহ। শুকনো ঢোক গিলে ভোরের থেকে কিছু টা দূরে অবস্থান করে। এতো সব কাহিনী তে ভুলেই গিয়েছেলো মেয়েটা পরিপূর্ন ভাবে ওর স্ত্রী।
বি : দ্র : ভুল ত্রুটি মাফ করবেন।
চলবে