চলো রোদ্দুরে পর্ব-২৬

0
1512

#চলো_রোদ্দুরে
#ফাতেমা_তুজ
#part_26

দুটো দিন পেরিয়ে গেল ভোর এর কোনো খোঁজ পেলো না রাদ। ছেলেটা বাড়ি তে ও ফিরে নি। ইফতিহার কে ফোন করে রনিত বলেছে একটা পার্টি তে যাবে ওরা। তাই বাসায় ফিরে নি। দুটো দিন এক বারের জন্য ও চোখ বুঁজে নি রাদ। রাত এক টা নেই দুটো নেই পাগলের মতো খুঁজে চলেছে শহরের অলি গলি। রনিত নিজে ও বিধ্বস্ত হয়ে পরেছে। ফুলের মতো সুন্দর মেয়েটি হারিয়ে গেল?
রাদের চোখ দুটো কেমন স্থির, লাল আর ব্যথিত। হঠাৎ করেই ছেলেটার মাথায় উদ্ভট কিছু চিন্তা মাথায় আসে। মুহুর্তেই স্থির চোখ হয়ে যায় অস্থির। পাগলের মতো চেঁচিয়ে উঠে বলল
_রনিত, রনিত ভোর এর কোনো ক্ষতি হয়ে যাবে না তো? ভোর, মেয়েটার ক্ষতি হবে না তো!

পাশ থেকে ছুটে আসে রনিত। রাদ কে জড়িয়ে ধরে বলল
_শান্ত হ তুই। কিচ্ছু হবে না ভোর এর।

_কি করে শান্ত হবো? পূর্ন মর্যাদা দিয়ে নিয়ে এসেছি আমি। যাতে ওর সম্মানের আঘাত না হয়। ওর কিছু হলে আমি নিজে কে ক্ষমা করতে পারবো না। কিছুতেই পারবো না।

_কিচ্ছু হবে না রাদ। চিন্তা করিস না। ভোর একদম ঠিক আছে। আল্লাহর উপর ভরসা রাখ ভাই।

রনিত কে জড়িয়ে ধরে কাঁপতে লাগলো রাদ। ছেলেটার চুল গুলো উলোট পালোট হয়ে আছে। দুদিন ধরে গোসল করে নি। অথচ এই ছেলেটা সব কিছু নিট এন্ড ক্লিন করে রাখতো।

একটু আগে রাদ কে ইনজেকশন পুশ করেছে রনিত। যাঁর ফলে ঘুমিয়ে আছে ছেলেটা। দৌড়া দৌড়ির সময় কয়েক বার হোচট খেয়েছে । শরীরের নানান জায়গায় ব্যথার ছাপ। খুব যত্ন নিয়ে মলম লাগিয়ে দিলো রনিত। থানা থেকে কল এসেছে তাই ইনায়া বলল
_তুমি যাও আমি ওর খেয়াল রাখছি।

_আচ্ছা।

এক পলক তাকিয়ে চলে গেল রনিত। রাদ এর পাশে এসে বসলো ইনায়া। মেয়েটার চোখ ঘোলাটে রূপ ধারন করেছে। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে মেয়েটা। রাদ এর মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলল
_একদম চিন্তা করবি না তুই।আমরা সবাই সব কিছু ঠিক করে দিবো। ভোর কে খুঁজে বের করবোই আমরা।

_ভাবি।

পেছন ঘুরে তাকালো ইনায়া। রূপ কে চোখ মুছলো। রূপ বলল
_ তোমরা সবাই আমার উপর রেগে আছো?

_এমন কেন বলছো রূপ?

_আম স্যরি ভাবি। ভাইয়া আমাকে সহ্য করতে পারছে না। একদম ই সহ্য করতে পারছে না।

_একি রূপ কাঁদছো কেন তুমি? কাঁদে না ভাই। তোমার ভাইয়া কে আমি বোঝাবো। বুঝতেই পারছো এখন পরিস্থিতি টা কেমন।

মাথা ঝাঁকায় রূপ। রাদ কে দেখে অবাক হয়। একজন মানুষ ঠিক কতো টা দায়িত্ববান হতে পারে তা রাদ কে না দেখলে বুঝতে পারতো না ওহ। ফোঁস করে শ্বাস ফেলে বেরিয়ে পরে ভোর কে খোঁজার উদ্দেশ্যে।
.

_ স্যুপ টা খেয়ে নে রাদ।

_খাবো না সুপ্তি।

_মার খাবি এখন। একটু খা প্লিজ।

_ভালো লাগছে না। প্লিজ একটু একা থাকতে দে আমায়।

_পাগলামি করার জন্য?

সরল চোখে তাকায় রাদ। সুপ্তির মুখ টা বরাবরের মতোই সহজ। মেয়েটা একদম ই সরল মনের। ইচ্ছে না থাকলে ও স্যুপ টা খেলো রাদ। হালকা হাসলো ইনায়া। বন্ধু মহলের সব থেকে ভালো মেয়ে সুপ্তি। এই রাগ করবে, অভিমান করবে আবার মিলে যাবে।মোট কথা সবাই কে নিয়ে মেতে থাকবে।

দ্বীপের কল আসতেই উঠে গেল সুপ্তি। দেশে নেই দুজনে। কিছু দিন পূর্বে রেজিস্ট্রি সম্পূর্ন করেছে দ্বীপ, রায়া। সেই সুবাদে হানিমুনে গেছে। কথা ছিলো হানিমুন থেকে ফিরে গেট টুগেদার করবে।
_একটু ভিডিও কল দে সুপ্তি। রাদ কে দেখবো এক পলক।

_ওকে দেখাচ্ছি।

দরজার আড়াল থেকে রাদ কে দেখালো সুপ্তি। রায়া আর দ্বীপ দীর্ঘশ্বাস ফেললো। এই বিধ্বস্ত রাদ যেন সকলের অচেনা।দ্বীপ বলল
_আজকে রাতের ফ্লাইটেই আসছি আমরা। কাল দুপুরের মধ্য পৌছে যাবো।

_হুম। আচ্ছা রাখছি।

পাশ দিয়ে যাচ্ছিলো রনিত। সুপ্তি বলল
_এই রনিত।

_হ্যাঁ বল।

_অফিসার কি বললেন?

_একটা লা/শ পাওয়া গেছে। চেনা যাচ্ছে না একদম ই। তবু ও শনাক্ত করার জন্য যেতে বলেছে।

কথা টা বলার সময় রনিত এর গাঁ ঝাঁকুনি দিয়ে উঠলো। দু পা পিছিয়ে গেল সুপ্তি। রনিত ঘরে প্রবেশ করতেই রাদ বলল
_থানায় গিয়েছিলি? পুলিশ কি বললো।

_তেমন কিছু না। তবে কিছু কাজের জন্য তোকে নিয়ে যেতে বলেছে।

_আচ্ছা চল।

_এখন না দুপুরে যাবো। আগে লাঞ্চ করে নে।

_এখন গেলে কি সমস্যা? আমি এখনি যাবো।

_এখন গেলে কাউ কে পাবি না। দুপুরেই যেতে বলছে।

_ওহ। আচ্ছা শোন আমি এখন কলেজের দিক টায় যাবো। ঐ দিকে খোঁজা হয় নি।

_বিকালে যাবো। এখন রেস্ট কর।

_আমি এখনি যাবো।

বেড থেকে উঠে বেরিয়ে পরলো রাদ। ইনায়ার দিকে অসহায় চোখে তাকিয়ে রনিত ওহ পিছু নিলো।

তিন টে ঘন্টা কলেজের আশে পাশে অলি গলি সব খুঁজলো রাদ। সবাই কে ছবি দেখালো কিন্তু কেউ মেয়েটার খোঁজ দিতে পারলো না। রাদ যেন হার মানার পাত্র নয়। মন কে শক্ত করে খুঁজে চলেছে ওহ। রনিত বলল
_বাসায় চল রাদ। লাঞ্চ করে পুলিশ স্টেশনে যাবো।

_না আমি এখন কোথাও যাবো না।

_কি হচ্ছে টা কি? আঙ্কেল আন্টি কয়েক বার কল করেছে। প্রতি বার ই আমি অজুহাত দিয়েছি। এখন যদি লাঞ্চ ও না করিস তাহলে কি করে চলবে?

শীতল চোখে তাকালো রাদ। মনে পরে গেল রামিসা আর ইফতিহারের কথা। ছেলে টা চোখ বন্ধ করে নিজ ব্যক্তিত্ব কে স্মরন করলো। কাঁপা হাতে রামিসার নাম্বার ডায়াল করলো। রিসিভ করতেই বকা ঝকা করলেন রামিসা। ওনার দু চোখে যেন অশ্রুর ধারা নেমেছে। শান্ত কন্ঠে রাদ বলল
_এমন করছো কেন মম? আমি তো ঠিক আছি। শুধু ক্লান্ত থাকায় কল করতে পারি নি।

_অজুহাত দেখাবে না রাদ। মম ড্যাড কে ভুলে গেছো তুমি।

_ভুলি নি মম।

_খেয়েছো?

_হ্যাঁ।

_রাতে ড্যাড কে কল করবে। আর দ্রুত তোমাদের বন্ধু মহলের পার্টি শেষ করো। তোমাকে ছাড়া ভালো লাগছে না আমার।
একা একা মনে হয় বেটা।

অধর কোনে ছোট করে হাসলো রাদ। মায়ের সাথে আর কিছু কথা বলে কল টা কেঁটে দিলো। ধপ করে রাস্তায় বসে পরলো। দৌড়ে এলো রনিত। রাদ কে উঠানোর ব্যর্থ চেষ্টা করলো।

পুলিশ স্টেশনে এসে রনিতের শরীর বেয়ে শীতল নোনা জল নেমে গেল। প্রতি টা লোমকূপ জেগে উঠেছে। রাদ বলল
_কোথায় অফিসার?

_আসবে ওয়েট কর।

কিছুক্ষন পর অফিসার এলেন। বললেন
_ওহ আপনারা এসে গেছেন। চলুন বডি শনাক্ত করতে হবে।

রাদের শরীর কেঁপে উঠলো। বিস্ফোরিত চোখে রনিতের দিকে তাকালো। রনিতের দৃষ্টি নত। ছেলেটা ব্যস্ত হয়ে বলল
_কি বললেন আপনি?

_বডি শনাক্ত করার কথা। আসলে বডি টা এমন ভাবে নষ্ট হয়ে গেছে যে ছবির সাথে মেলানো যাচ্ছে না।

অফিসার চলে গেলেন। রনিতের দিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্য হাসলো রাদ। এক মন কষ্ট নিয়ে রনিত বলল
_থিংক পজিটিভ রাদ।

_ ভোরের কিছু হতে পারে না রনিত। মেয়েটা আমার দায়িত্বে ছিলো। ওর কিছু হবে না। হতে পারে না।

বকবক করতে করতে অফিসারের পিছু গেল রাদ। লা/শ কাঁটার ঘরে এসে যেন পা থমকে গেল। একজন ডাক্তার হয়ে ও আজ প্রচন্ড অসহায় বোধ হচ্ছে। মনে হচ্ছে পৃথিবী টা ওর থেকে বহু দূর। কয়েক টা শুকনো ঢোক গিললো ছেলেটা। ধীর পায়ে এগিয়ে আসলো সাদা কাপড়ে জড়ানো লা/শ এর দিকে। একজন স্টাফ মুখ টা খুলে দিলেন। সঙ্গে সঙ্গে চোখ বন্ধ করে নিলো রাদ। মেয়েটার মুখের অবস্থা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত। মুখের চামড়া ঝলসে গেছে। সাদা মাংস দেখা যাচ্ছে। চোখ গেলে যা তা অবস্থা। যেকোনো সাধারন মানুষ জ্ঞান হারাবে।
হঠাৎ করেই কিছু একটা খেয়াল হলো। বডির পায়ের অংশ টা উঁচু করলো রাদ। নেই কোনো কাঁটা দাগ। ছেলেটার বুকের ভেতরে জমে থাকা পাথর টা নেমে গেল। জানালো বডি টা ভোর এর নয়। রনিতের চোখ চকচক করে উঠলো। রাদের বাহু তে হাত রেখে আশ্বস্ত করে বলল
_দেখবি কিচ্ছু হয় নি ভোর এর। সী ইজ ফাইন।

বি : দ্র : ভুল ত্রুটি মাফ করবেন।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here