#চলো_রোদ্দুরে
#ফাতেমা_তুজ
#part_27
ভোর হলো দোর খোল
খুকুমনি ওঠে রে,
ঐ ডাকে জুঁই-শাখে
ফুল-খুকি ছোট রে।
খুলি হাল তুলি পাল
ঐ তরি চলল,
এইবার এইবার
খুকু চোখ খুলল।
আলসে নয় সে
ওঠে রোজ সকালে,
রোজ তাই চাঁদা ভাই
টিপ দেয় কপালে।
ভোরের কপালে হাত দিয়ে কথা টা বললো নাহিদ। বিস্ফোরিত চোখে তাকালো ভোর। যাঁর ফলে হেসে কুটি কুটি নাহিদ। মুখ দিয়ে চ এর মতো শব্দ করে ভোর বলল
_আপনি কি সবসময় এমন?
_কেমন বলো তো?
_ফ্লাটিং করেন সবসময়?
_অলোয়েজ না বাট প্রায় সময় করি।
_আশ্চর্য।
_আচ্ছা অনেক হয়েছে। এখন তোমার হাতের কি অবস্থা দেখি তো।
_এখনো ব্যথা হচ্ছে প্রচন্ড।
_চিন্তা করো না দ্রুত ঠিক হয়ে যাবে। তা তোমার ডাক্তার সাহেব কে পেলে?
_উহহু ফোন অফ বলছে।
_নিশ্চয়ই খুব টেনশনে আছেন তিনি? আফটার অল তিন দিন ধরে নিখোঁজ হয়েছো।
ক্ষন কালের জন্য হাসলো মেয়েটি। রাদ ওর প্রতি ভীষন সেনসেটিভ বটে।তবে কতো টা টেনশনে আছে এটা ও ভাবার বিষয়।
_আচ্ছা একটা কথা বলো তো ম্যানহলে পরলে কি করে?
_রাত ছিলো আমি খেয়াল করি নি হঠাৎ করেই পা ফসকে পরে যাই। চেঁচানোর সুযোগ ও পাই নি।
_হুম বুঝলাম। ভাগ্যিস ম্যানহল টা এখনো অন হয় নি। নতুন তৈরি করা হচ্ছিলো। তাই পানি দিয়ে ওয়াস করা হচ্ছিল। ভাগ্য ভালো ছিলো। তাই তো পানির সাথে অন্য ম্যানহলে এসে পরেছো।
_আপনি না থাকলে হয়তো আজ আমি বেঁচেই থাকতাম না।
_আরে ধ্যাত কি যে বলো না। আমি না থাকলে অন্য কেউ নিশ্চয়ই বাঁচিয়ে নিতো।
_তবু ও থ্যাংকস।
_নো থ্যাংকস ভোর। ভাই বলে সম্বোধন করেছো না?
কিছু টা হাসলো ভোর। মেয়ে টার হাতের স্যালাইন খুলে দিয়ে নাহিদ বলল
_আসো তোমাকে পৌছে দেই। ঠিকানা জানো তো?
নাহিদ এর এমন কথায় হেসে ফেললো ভোর। নাহিদ বলল
_আরে বুঝবে না। ডাক্তার রা সব রকম প্রশ্ন করে। অনেক সময় পেশেন্ট এর মেমোরি লস হয়ে যায় কি না।
_হুম বুঝলাম তো। আচ্ছা ভাইয়া একটা কথা বলুন তো আমি কি তিন দিন ই জ্ঞান হারিয়ে পরে ছিলাম?
_না। তবে পূর্ন জ্ঞানে ছিলে না। কথা বলার মতো পরিস্থিতি তে তো একদম ই ছিলে না।
_আসলে গত তিন দিনের কথা আমার কিছুই মনে নেই। আচ্ছা আপনার ফোন?
_ঐ টার কথা বাদ দাও। ঐ ফোন জলে ভেসে গেছে। ঐ টা অলরেডি ডেথ। তোমাকে পৌছে দিয়ে নতুন ফোন কিনে নিবো। এবার আসো তো। তোমার ডাক্তার সাহেব টেনশনে টেনশনে পাগল না হয়ে যায়।
কথা টা বলেই হো হো করে হেসে উঠলো নাহিদ। আশ্চর্য হয় ভোর। একটা মানুষ কি করে এতো টা হাসে? প্রতি টা কথায় ফ্লাটিং থাকবেই।
হোস্টেলের বাইরে থেকেই চলে যায় নাহিদ। তিন দিন যাবত সকলের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে ওহ। ভোর কে নিয়েই কেঁটে গেছে প্রতি মূহুর্ত।মেয়েটা কে বাঁচাতে পেরে গর্ব বোধ হলো। ডাক্তার হিসেবে এই প্রথম এতো বড় কাজ করেছে ওহ। না হলে লাইসেন্স পেয়ে ও কাজে জয়েন করে নি ওহ।
মেয়েটা খোঁড়াতে খোঁড়াতে ভেতরে আসতেই ছুটে এলো তিন্নি। ভোরের বাহু ধরে বলল
_ম্যাম কি হয়েছে আপনার?
_তেমন কিছু নয় আপু।
ভোর কে ছেড়ে ছুটে গেল তিন্নি। মুহুর্তেই হাজির হলেন আশা। ভোর কে দেখে উদ্বিগ্ন হয়ে গেলেন তিনি। মেয়েটার মাথায় হাত রেখে বললেন
_কোথায় ছিলে তুমি? হাতে পায়ে ব্যান্ডেজ কেন? তিন্নি রাদ কে খবর দাও।
_ইয়েস ম্যাম।
মেয়েটা কে ধরে ঘরে নিয়ে গেলেন আশা। ভোর কিছু টা অসুস্থ। তাই তিনি একটা ও প্রশ্ন করলেন না। বরং একজন স্টাফ কে দিয়ে পাতলা খাবার নিয়ে আসলেন। মেয়েটা খেতে চাইলো না। তবে তিনি ও নাছোড়বান্দা সুরে বললেন
_এমন করলে তো হবে না। তুমি প্রচন্ড উইক। হাত টা কতো টা ফ্র্যাকচার হয়েছে কে জানে। আসো খাইয়ে দিচ্ছি আমি তুমি চুপটি করে বসো তো।
কেন যেন মা নামক ছায়া কে খুব বেশি মনে পরছে ওর। আশা কে মায়ের মতো ভালাবাসা দিতে দেখে কেঁদে উঠলো ওহ। আশা কে কিছু বুঝতে না দিয়েই এক হাতে ওনাকে জড়িয়ে নিলো মেয়েটা। হতভম্ব হয়ে গেলেন তিনি।তবে মেয়েটার মাথায় হালকা হাতে স্পর্শ করলেন। রাদ এর কাছ থেকে অনেক কিছু শুনেছেন ওনি।মেয়েটা কতো টা অসহায় সব ই জানেন। ভেতর থেকে এক ফালি দীর্ঘশ্বাস বের হয়ে আসলো। জীবন কতো অদ্ভুত তাই না?কেউ রাখে না আর কেউ পায় না।
.
কতো টা উচ্চ গতিতে গাড়ি চালিয়েছে রাদ তা নিজে ও জানে না। উত্তেজনায় শরীর কাঁপছে ছেলেটার। মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে নানান প্রশ্ন। হোস্টেল এর বাইরে গাড়ি টা রেখেই ছুটে গেল হোস্টলের ভেতর। উদভ্রান্তের মতো ছুটে চলেছে ওহ। সেভেন ফ্লোর এ ভোর এর রুম। লিফ্ট নিচে আসার সময় টুকু ও সহ্য হলো না ওর। এতো গুলো সিঁড়ি ভেঙে উপরে উঠতে লাগলো। আশে পাশে কে আছে না আছে তাঁতে যেন ধ্যান ই নেই । একদম ভোর এর রুমের ডোর এর কাছে এসে থামলো ছেলেটা। মেয়েটা কে বেডে আধশোয়া হয়ে শুয়ে থাকতে দেখে যেন ওর জ্বলন্ত চোখে শীতলতা নেমে এলো। মনের কোনে থাকা সকল ক্লান্তি মুহূর্তেই দূর হয়ে গেল। ছেলেটার পায়ের আওয়াজ শুনে পাশ ফিরে তাকালো ভোর। রাদ কে দেখে ভারী অবাক হলো। চুল গুলো এলো মেলো। পরনে টাউজার আর টি শার্ট। মনে হচ্ছে রাতের পোশাক পরেই চলে এসেছে। মেয়েটার পাশে বসলো না রাদ। গভীর দৃষ্টি লেপন করে বলল
_কেমন আছো ভোর?
_ভালো।আপনার এ অবস্থা কেন?
নিজের দিকে তাকালো ছেলেটা। এক মুহুর্তের জন্য থমকে গেল। পরক্ষনেই হাসি ফুঁটিয়ে বলল
_এই আর কি। হাতে কি হয়েছে?
_ভেঙে গেছে।
ঠোঁট উল্টিয়ে কথা টা বললো ভোর। ওর মুখের ভঙ্গিমা দেখে হেসে উঠলো রাদ। হঠাৎ করেই মেয়েটার কাছে চলে আসলো। বুকে জড়িয়ে ধরে ঘন ঘন শ্বাস নিলো। বিস্মিত হলো ভোর। তবে কিছু বললো না। শুধু চোখ থেকে দু ফোঁটা শীতল নোনা জল নেমে গেল।
_আই মিস ইউ ভোর। আই মিস ইউ। খুব বেশি মিস করেছি তোমায়। মনে হয়েছিলো আমি এই ধরা তে নেই। তোমাকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি ভাঙার আশংকায় আমি শেষ হয়ে যাচ্ছিলাম। আম স্যরি ভোর। তোমাকে দেখে রাখতে পারি নি আমি।
_শান্ত হোন ডাক্তার সাহেব। অসুস্থ হয়ে যাবেন আপনি।
_আমি ঠিক আছি মেয়ে। এখন বলো তো কি হয়েছিলো। আর এই শরীরের আঘাত গুলো। কোনো ভাবে খারাপ কিছু হয় নি তো? একদম ভয় পাবে না। আর কিছু হলে ও চিন্তা করবে না। লুক, তুমি সব থেকে পবিত্র। একদম নিষ্পাপ আর শুভ্র।
ছেলে টার এহেম কথা তে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো ভোর।অধর কোনে হাসি ফুঁটিয়ে বলল
_ আপনি থাকতে আমার ক্ষতি হতে পারে ডাক্তার সাহেব? তেমন কিছু হয় নি। আমি জানি আমার পাশে সব সময় আছেন তো আপনি, অন্ধকার থেকে রোদ্দুরে নিয়ে যাওয়ার জন্য।
_বড় হয়ে গেছো তুমি?
_হতেই হতো। আঠারো পূর্ন করে ফেলেছি কি না।
অদ্ভুত কোমল দৃষ্টি তে চেয়ে রইলো রাদ। মেয়েটা সত্যিই আঠারো পূর্ন করে ফেললো?
_ডাক্তার সাহেব। কোথায় হারিয়ে গেলেন?
_হ্যাঁ বলো।
_আপনাকে খুব টেনশনে ফেলে দিয়েছিলাম তাই না?
রাদ উত্তর করলো না। বা হাত টা উঁচু করে কানে হাত দিলো ভোর।বলল
_স্যরি।
_নো ফরমালিটিস ভোর। দেখি ডান হাতের অবস্থা। আর কোথায় ব্যথা পেয়েছো?
_পুরো শরীরেই ব্যথা আছে।
_কোথাও কেঁটে গেছে?
মাথা টা ঝাঁকালো ভোর। রাদ অনলাইনে কিছু ঔষধ পত্র অর্ডার করলো। মেয়ে টাকে ভালো করে চেক আপ করে নিলো। একটা মলম দিয়ে বলল যেখানে কেটেছে লাগিয়ে নিও।
_আচ্ছা।
মেয়েটার ঘাড়ে কয়েক টা দাগ দেখতে পেলো। মোটামুটি গভীর ই বটে। আলগোছে চুল গুলো সরিয়ে দিলো রাদ। মলম নিয়ে হালকা হাতে ঘাড়ে লাগিয়ে দিলো। তৎক্ষনাৎ কেঁপে উঠলো ভোর। পুরুষালি স্পর্শ যেন ওর বুকে ঝড় তুলে দিয়েছে। আগে তো কখনো এমন হয় নি। তবে এখন কেন এমন লাগছে?
** রাদ ভীষন আন রোমান্টিক 😒। **
বি : দ্র : ভুল ত্রুটি মাফ করবেন।
চলবে